আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি ।
ডিজাইনার টালি আর মার্বেলের জৌলুস যেন চারদিকে লুটোপুটি খাচ্ছে ।
ছিলে কাটা হীরের মতো পরিচ্ছন্নতা
খেলছে এখানে ।
সোডিয়াম ভেপার ল্যাম্পের আলোয়
ভেসে যাচ্ছে চারিদিক ।
ডিজিটাল ডলবির মতো
দূরবর্তী কোন থেকে
সমস্বরে ভেসে আসছে
প্রাচীন শ্যাওলা বাঁধানো লিরিকস্ ।
যা আমি শুনতে শুনতে বড় হয়েছি ।
সেগুলো ক্রমশ বাড়তে বাড়তে
আমার কানের কাছে এসে থেমে গেল ।
শাঁক বাজানো সন্ধ্যার মুখেই
তিনটে লাশ এসে জড় হয়েছে এখানে ।
দেওয়ালে লেপটে থাকা
জানলার ডেস্ক বা কাউন্টারের ভেতরে
বসে আছে একটা লোক ।
ঝকঝকে প্যাডে লেখা একটা কাগজ
এগিয়ে দিল কেউ ।
জানলার ভেতরের লোকটা জিজ্ঞেস করলো - "লাশের নামের বানান ঠিক আছে তো ?
" কি আশ্চর্য ডাক্তারের শংসাপত্র না দেখেই
কেউ একজন চেঁচিয়ে পাশ থেকে
বলে উঠলো -" দীপঙ্কর নন্দী।
নিমেষেই দীপঙ্করকে লাশ হিসেবে
শনাক্তকরণ হয়ে গেল ।
পুরোহিত থেকে ডোম
করপোরেশনের কর্কশ লোকটা পর্যন্ত
একবারও কেউ দীপঙ্করবাবু বললো না ।
ডেথ- সার্টিফিকেটের নামটাও
ধীরে ধীরে পাল্টে যেতে থাকলো যেন । স্টিরিওফোনিক সাউন্ড সিস্টেম থেকে
আবার সেই চিৎকার শোনা যাচ্ছে ।
রাম নাম সত্ হ্যায়....
বল হরি হরি বল ।
আমার চোখের সামনে
ধীরে ধীরে দীপঙ্করকে
চুল্লির ভেতরের ছাই করা উত্তাপের মধ্যে
ঢুকিয়ে দেওয়া হলো ।
আমি ওদিকে আর দেখবো না ।
বেশ দেখতে পাচ্ছি
দীপঙ্কর " হাওড়ার বাঁশতলা শ্মশানের " মঞ্চটায় টানা পঁয়তাল্লিশ মিনিট ধরে
একটার পর একটা কবিতা আবৃত্তি করলো । আমি এতটা দূরে দাঁড়িয়ে আছি যে
ওখান থেকে
দীপঙ্কর আমাকে আর দেখতে পাচ্ছেনা ।
আবৃত্তি শেষ হতেই মঞ্চ থেকে দীপঙ্কর নামলো । আমি যেন স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি
সেই কর্কশ গলার লোকটা বলছে -
দীপঙ্করবাবু একটু চা খাবেন ?
(২৪.৮.২০১৬ / হাওড়া ) ॥
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন