মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৭

অলোক কুন্ডুর কবিতা নিরিবিলি

অনেকটা নিরিবিলি / অলোক কুন্ডু

নদীর ধার দিয়ে আড়াআড়ি খানিকটা পথ
কোনোকালে এই পথ কেউ তৈরি করেনি
গাছগাছালি জলজঙ্গল উইঢিপি নদী একটা পথ
জলসিক্ত জমাট বনবাদাড় পাশাপাশি  নিরন্তর
মুঠো মুঠো বুনো ফুুল অনিবার্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে
কখনো জলবুদ্বুদ উঠে পড়ছে পাড়ে
ওরই মধ্যে একটা বসার মতো জায়গা দিব্যধাম
একটা লম্বা শিরিষ গাছ সঙ্গী আম গাছ
অনেকটা ছায়া ধরে রাখে দুজনে মিলে
অনেকক্ষণ বসে থাকতে কষ্ট হয়না
ওইটুকু স্বর্গভূমি নিষেধ করেনা কখনও কাউকে
জোড়ায় জোড়ায় আসে
এইখানে অনেকটা নিরিবিলি খেলা করে
এই যুগল একটু বেলাকরে  আসে
শুধুমাত্র একপাল গরু ছাগল চরানো
দুচারজন গাছ তলায় ঘুমোয় তখন
ওদের পায়ের ওপর দিয়ে জল খেলে যায়
একজন অন্যজনকে দেখতে থাকে
ছেলেটার নরম দাড়ি একটু একটু করে বাড়ে
চুল কোনোদিন আঁচড়ানো থাকেনা
মেয়েটা চুল ঘেঁটে দেয় কড়ে আঙুল ধরে
সর্বদা আড়ি আড়ি খেলে বিরক্ত করে
ছেলেটা শুধু জুলজুল করে দেখে
কখনো শুকনো পাতা জলে উড়িয়ে দেয়
কখনো দুজনে কথা বলা বন্ধ করে দেয়
এর মাঝে জল বাড়ে কমে
ওদের এসব মনে থাকার কথা নয়
তবু ছেলেটা মেয়েটার পা মুছিয়ে দেবে রোজ
ওড়নার বালি ঝেড়ে দেয়
মাথার চুল থেকে বুনো ফুলের মঞ্জরী বেছে দেয়
ছেলেটার জিনস্ ভিজিয়ে দেয় মেয়েটা
কেউ কাউকে বারণ করেনা
ক্ষীণ শব্দের প্রশ্ন উত্তর চলে কখনো
প্রথম প্রথম দূরে দূরেই বসতো মেয়েটা
দূরত্ব রেখে বসে দেখতো আপাদমস্তক
ছেলেটা অন্য দিকে চেয়ে সৌন্দর্য নির্মাণ করতো
আজকাল গা ঘেঁষে বসতে আপত্তি করেনা মেয়ে
বিশ্বাসগুলো সজীব হতে হতে শক্তিশালী এখন
একটা আঁকড়ানো মনোভাব বাড়তে থাকে
ছেলেটার হাত ,জামা , চুল অনায়াসে ধরতে পারে
মেয়েটা এখন ঘন করে কাজল দেয়
একটা কালো বিন্দু টিপ পরে সুগন্ধি মাখে
বাহারি ওড়না থেকে গোলাপি হলুদ সবুজাভ
ঝুলতে থাকা পমপম গুলো যেন এক একটা
অলৌকিক পরিপাটি সৌন্দর্যের উচ্চারণ
পনিটেলে নকল বেলকুঁড়ির মতো সোনালি টাসল্
ক্রমশ সৌন্দর্যগুলো টাটকা হয়ে উঠতে থাকে
নদীতে কখনো জলস্রোত তো কখনও চর
কখনও ডুবজল তো কখনও এইটুকু হাঁটুজল
কাকপেয় জল দেখে ওরাও চলে যায়
ছেলেটা বালির স্তূপ দিয়ে
মেয়েটার মুখ অবিকল গড়ে দেয়
মেয়েটা অবাক হয়ে তার নির্মিত হওয়া বুঝে নেয়
নদীর ওপারে গভীর জঙ্গল কাঠকুড়ুনিরা যায়
এক একদিন ওরাও চলে যায় সঙ্গে
সূর্য ডোবার মুখে এপারে এসে ওঠে
তারপর মেয়েটা মুখ ধোয়
ছেলেটা জল তুলে দেয় দু হাত ভর্তি
ছেলেটার জামায় মুখ মোছে চুল আঁচড়ায়
ছেলেটা মুখে ছোট আয়নাটাকে ধরে থাকে
তারপর ছেলেটা হাত ধরে তার
মেয়েটার কোমর দোল খায়
নদীর উঁচু জমির মরা কাদায় পা টলমল
করতে করতে পথে উঠে পড়ে
কোনো কাঠকুড়ুনির সঙ্গে
গল্প করতে করতে চলে গেলে
ছেলেটা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে
ততক্ষণে সূর্য ডুবে যায় কাছাকাছি বসতির
ওপারে
রাঙা আলোয় পোড়া রঙের
কাঠ কুড়ুনি বর বউ চলে যেতে থাকে
ছেলেটা ছবির মতো এইসব দেখতে থাকে
মনে হয় কাঠকুড়ুনি বউটা বাড়ি গিয়ে গা ধোবে
এক চিলতে ভাঙা তেকোনা আয়নাটায় সাজবে
ওর মরদ বাঁশি বাজাতে জানে
ওদের মাটির উঠোনে এক আকাশ চাঁদ আসে ।
এইসব কথা বউটা গল্প করেছে মেয়েটার কাছে
যেদিন জল কম থাকে আজকাল ওরা
সারাদিন জঙ্গলের ওদিকটায় কাটায়
ওদিকে আরো নিরিবিলি
ছেলেটা মেয়েটা এপারে এলে বোঝা যায়
গা ভর্তি করে নিয়ে আসে উলুঘাস ভাটুই তেকাঁটা
তুলসীমঞ্জরী বাঁশপাতা আলকুশি ।
কাঠকুড়ানিরা হেঁসে গড়িয়ে পড়ে এইসব দেখে
কখনও হাতভর্তি ভুঁইআমলা গুঞ্জা
লতাকরঞ্জ ফুল ছেলেটা নিয়ে আসে
মেয়েটার চুল থেকে বেছে দেয় তেকাঁটা
অন্যেরা দেখে আলোচনা করে হাসে
সবাই জানে আবার পরের দিন আসবে ওরা...

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...