একটি কাল্পনিক পতাকা উত্তোলন
অলোক কুন্ডু
এমন ভাবখানা দেখালেন যেন আপনি ও আপনারাই স্বাধীনতা এনেছেন
এমন বিরক্ত ভঙ্গিতে পতাকা তুললেন
যেন পতাকা নয় আপনারাই সিপাহি এদেশের ।
দড়িটা ঠিকমতো খুলছিল না বলে
প্রাইমারির মাষ্টারমশাই বেচারাকে
মনে করলেন আপনার বাড়ির চাকর
আপনার তাকানোয় স্বাধীনতা গুমরে উঠলো ।
কাদায় আপনার নতুন জুতো জোড়ায়
দাগ লেগে গেল বলে বেজায় বিরক্তিতে
ওদের দেওয়া চা মিষ্টি ছুঁয়েও দেখলেন না
ক্লাস ফোরের মেয়েটা ফিরিয়ে নিয়ে গেল ।
পতাকার মাঝে বাঁধা ফুলগুলো ছড়ায়নি কেন
এই কৈফিয়তে মাষ্টারের কান লাল তখন
মিহি গলায় তবু সম্মান দিতে কার্পণ্য ছিলনা কিছু
লা-ওপালার কাপ ডিস কিনে এনেছিলেন যত্নে ।
আপনার ধোপদুরস্ত পোশাক থেকে
সুগন্ধিগুলো ঠিকমতো ছড়াচ্ছিল কি না
আর সেই গন্ধে আশপাশ কেমন ম ম করছিল
তাও যাচাই করে নিচ্ছিলেন সুদক্ষ নিরিক্ষায় ।
জোড়হাত করে এতক্ষণ যে ছেলেমেয়েগুলো
দাঁড়িয়েছিল অবাক বিস্ময়ে গাইছিল গান
তাদের দিকে একবারও ফিরে তাকালেন না
আপনার বক্তৃতায় ১৯৪৭ থেকে ২০১৮ চলছে ।
তটস্থ দাঁড়িয়ে তখনও প্রাইমারির ছেলেমেয়েগুলো
আপনার বক্তব্যের উচ্চারণ ততক্ষণে
পেরিয়ে যাচ্ছে মাঠের পর মাঠ ধানক্ষেত
মাইক দেখে ঢুকে পড়া আগুন্তকদের কাছে ।
একটা তেরঙ্গা কাটা ঘুড়ি সভার কাছে আসতেই
ছেলেমেয়েগুলো লাইন ভেঙে দিল হুড়মুড় করে
উপস্থিত সকলকে অবাক করে কাটা ঘুড়ি তখন
পতাকার সাথে জড়িয়ে উড়তে শুরু করেছে ।
আপনি তবুও বলে চলেছেন স্বাধীনতার মানে
বলে চলেছেন সংবিধান থেকে শিক্ষা
স্বাস্থ্য থেকে সিয়াচেন সম্প্রীতি থেকে সততা
সভ্যতা না শৃঙ্খলা কোনটা বেশি দামি ।
প্রসঙ্গের অবতারণায় তালগোল পাকিয়ে দিচ্ছিল অভিভাবকদের মুখ থেকে মুখ
গোবেচারা মানুষ গুলো কীভাবে জানবে এইসব
আপনিও ঘেমে নেয়ে ততক্ষণে থামিয়ে দিয়েছেন
৭২ বছর ধরে শুনে যাওয়া সেইসব কথাগুলো
ততক্ষণে পতাকা থেকে ছিটকে বেরিয়ে যাওয়া কাটা ঘুড়ির মতো বাতাসে লাট খেতে লাগলো
ছেলের দল চিৎকার করে উঠলো--ভো কাট্টা ।
® অলোক কুন্ডু