শুক্রবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

ভীম নাগের সন্দেশ

হাওড়ার ভীম নাগের সন্দেশ সবাই জানে
©® অলোক কুন্ডু ।

আজ থেকে ১৮২-৮৩ বছর আগে হুগলী জেলার জনাই থেকে বাঁকে করে মিষ্টির সাজিয়ে প্রতিদিন নিয়ে এসে বৌবাজারের ফুটপাতে বসতেন ভীম চন্দ্র নাগ ,মিষ্টি বিক্রি করতে । কালক্রমে ফুটপাতে খড়ের চালের নীচের সেই মিষ্টির পদের নাম ছড়িয়ে পড়লো কলকাতার বনেদি ঘরে । ধীরে ধীরে চাহিদায় সামাল দিতে ১৮৬ বছর আগে সাহেব আমলে প্রায় ১৮৩২-৩৩ সাল
নাগাদ ভীম চন্দ্র নাগ বৌবাজারে মিষ্টির দোকান দিলেন । এখনও সেই দোকানে বিলেত থেকে আনা সাহেবি ঘড়িটি টিক্ টিক্ করে চলছে ।কোনো এক সাহেব বাংলায় লিখিয়েছিলেন বিলেত থেকে আনার পর । ভীম চন্দ্র নাগের সন্দেশের সঙ্গে সেই ঘড়িও আজ বিখ্যাত
সাহেব ঘড়ি নামে । পরে বড়বাজারে ও বিবেকানন্দ রোডে দুটি দোকান খোলা হয়। বৌবাজারের ব্রাঞ্চ হিসেবে গণেশ টকিজের
কাছে । নাগ পরিবারের মিষ্টান্ন ব্যবসার ওই
দুটি দোকান চলে আসছে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে । পরে নিজেদের পরিবারের মধ্যে কারবার তিনভাগে বিভক্ত হয়ে যায় । ভবানীপুরেও ভীম চন্দ্র নাগের একটি দোকান খোলা হয় কিন্তু ওই পক্ষ সেই ব্যবসা চালায়নি । আজ থেকে ৬৬ বছর আগে বড়বাজারের ব্রাঞ্চ হিসেবে হাওড়ার কালীবাবুর বাজার ও মল্লিক ফটকের মাঝে গিরীশ জুয়েলার্সদের বাড়ি ভাড়া নিয়ে ১৯৫২ সাল নাগাদ হাওড়ায় একটি নতুন দোকান খোলা হয় । সবে তখন ওইখানে কালী কুন্ডু পরিবারের যতীন্দ্রকুমার কুন্ডুর ব্যাঙ্ক ব্যবসা লাটে উঠেছে তাই ব্যাঙ্কের জায়গাটি ফাঁকা পড়ে ছিল । তখন সেই সময় ভীম চন্দ্র নাগের দুই বংশধর দিলীপকুমার নাগ ও ভ্রাতা অনুপকুমার নাগ বড়বাজারের ব্রাঞ্চ হিসেবে মধ্য হাওড়ার ৩৩৯/১ নেতাজি সুভাষ রোডে ( হাওড়া-১)  ভীম চন্দ্র নাগের নামে দোকানটি খোলেন । তখন কিন্তু খুব কাছে কালীবাবুর বাজারে দুলাল চন্দ্র ঘোষের মিষ্টির দোকানটি ওই অঞ্চলের একটি জনপ্রিয় মিষ্টির দোকান হিসেবে বর্তমান ছিল । সাহিত্যিক শঙ্কর হাওড়ার এই অঞ্চলেই তখন বাস করতেন তার লেখায় ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার দিনে দুলাল ঘোষের মিষ্টির দোকানের নাম পাওয়া যায় । তবু সেই সময় কিছু দিনের মধ্যেই হাওড়ায় ভীম চন্দ্র নাগের মিষ্টির খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে । ধনীদের ঘরে  ভীম চন্দ্র নাগের চাহিদা বাড়তে থাকে কারণ
একেতো ভীম চন্দ্র নাগের মিষ্টির খ্যাতি ভারত জোড়া তার ওপর সুস্বাদু । সাহেবি আমলের সেই মিষ্টান্ন ব্যবসা ভীম চন্দ্র নাগের বংশধরেরা আজ‌ও সমানভাবে মধ্য হাওড়ায় ধরে রেখেছেন । বিশেষ করে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি মিষ্টি পাঠাতে এখন‌ও হাওড়ার মানুষদের মধ্যে ভীম নাগের মিষ্টির চাহিদা আছে । আত্মীয় বাড়ি গেলে হাওড়ার মানুষরা আজ‌ও ভরশা করেন
ভীম নাগ । টাটকা ও কোয়ালিটি জিনিস ছাড়াও
এঁদের গুড‌উইলকে অভিজাত শ্রেণি বিশেষ
ভাবে পাত্তা দেন । স্থানীয় অফিস কাছারির কথা মনে রেখে হাওড়ার এই দোকানে দুপুরের পর রাধাবল্লভি আলুর দম মেলে । বিকেলে ভীম নাগের সিঙ্গাড়া বিশেষ বিশেষ পরিবারের ও কিছু মানুষের নিত্য পছন্দ । এছাড়া হাওড়ার এই দোকানে আজ‌ও লবঙ্গ লতিকা ও দরবেশের
বাঁধা খদ্দের আছে । প্রতিদিনের বাঁধা খদ্দের আছে ৪০-৪৫ জন , এনারা নানারকম মিষ্টি নেন
কিন্তু কোনোদিন অন্য দোকানের সস্তা মিষ্টির দোকানে তারা যাননা । এই দোকানের মিষ্টির
দাম শুরু দশ টাকা থেকে পঁচিশ টাকা পর্যন্ত । সিজিনে দাম উঠে যায় ২০-৪০ টাকা পর্যন্ত । বড়বাজার ও হাওড়ার মালিকপক্ষ একটি দল হিসেবে পার্টনারশিপ ব্যবসা চালিয়ে আসছেন , পারিবারিক বন্ধনে। হাওড়ার ব্যবসাটি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে পরিবারের সকলকেই দেখতে হয় । বৌবাজারের বাড়ি থেকেই ব্যবসা চালানো হয়ে থাকে । এই প্রতিবেদক দোকানে আজ (২৮/৯/১৮) যখন গিয়েছিলেন তখন বর্তমান মালিকদের পক্ষে দোকানে উপস্থিত ছিলেন অজিত কুমার নাগ মহাশয় । এই ব্যবসা দেখাশোনা করতে বহুবছর ধরেই তিনি হাওড়ায় আসছেন , বলতে গেলে হাওড়ার বহু মানুষের সঙ্গেই সখ্যতা হয়ে গেছে । এই দোকানের ক্যাশবাক্স‌ থেকে মিষ্টি তৈরি সবেতেই
কর্মচারীরাই দোকানের সম্পদ । দোকানের
আড়ম্বর বলতে কিছু নেই । এই প্রতিবেদক
ছোট থেকে দোকানের সাজসজ্জা এক‌ই রকম দেখ আসছে । না এই দোকানে মিষ্টির ওপর আলাদা করে আলো দেওয়া নেই । লোকে জানে তাই কেনে, এটাই মূলধন হাওড়ার ভীম নাগের
মিষ্টির । শঙ্কর, শঙ্করীপ্রসাদ বসু , নিমাইসাধন
বসু, ডাঃ ভোলানাথ চক্রবর্তী, বিভূ ভট্টাচার্য
প্রায় সকলকেই এই দোকানের মিষ্টি ভালোবাসতেন । এঁদের হালুইকররা আসেন
হাওড়া ও হুগলীর গ্রাম থেকে তবে সমস্ত
রকম মিষ্টি পরম্পরা মেনে সেই একই নিয়মে
তৈরি হয়ে থাকে । এর‌ই মধ্যে যেটা বিখ্যাত তার হলো এঁদের সন্দেশ । কড়া পাকের রসগোল্লাও এদের বিখ্যাত । ৬৬ বছরের দোকানের সাইনবোর্ডে ও ভেতরের খুব একটা পরিবর্তন হয়নি । সিজিনে কোনো আলাদা করে অর্ডার
নেওয়া হয়না । বাসি মিষ্টি এই দোকানে থাকেনা ।
( সঙ্গে ছবিতে অজিত কুমার নাগ উপস্থিত আছেন )
All rights reserved by ® Alok Kundu
(28.9.2018 Blogger অলোক কুন্ডুর লেখালিখি
ও কবিতা )

বুধবার, ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

Sailen Manna Stadium,Howra

শৈলেন মান্না স্টেডিয়াম / অলোক কুন্ডু

পূর্বতন হাওড়া ময়দানের আয়তন ছিল বিশাল । দক্ষিণে এখন যেখানে রেল‌ওয়ে
হসপিটাল আছে তার গা থেকে নিয়ে একদিকে হাওড়া জেলা স্কুল পর্যন্ত । অন্যদিকে এখন যেখানে জেলা গ্রন্থাগার
সেখান থেকে বঙ্গবাসী সিনেমা পর্যন্ত ।
পরে যখন বিধান রায়ের মন্ত্রী সভার আমলে
হাওড়া ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট গঠিত হয় তখন
হাওড়া ময়দানকে দু টুকরো করে দক্ষিণ
প্রান্তে তৈরি হয় দুটি ফুটবল মাঠ নাম দেওয়া
হয় ডালমিয়া পরিবারের আর্থিক সাহায্যে
তৈরি ডালমিয়া পার্ক । হাওড়া স্টেট ব্যাংকের দিকে তৈরি হয় সিমেন্টের পাঁচ থাকের স্টেডিয়াম ও শ্রীমার্কেট । শ্রীমার্কেটে স্থান দেওয়া হয় পূর্ব বাংলা থেকে আগত উদ্বাস্তু পরিবারকে । পরে ডালমিয়া পরিবারের সাহায্যে পাঁচিল দেওয়া হয় ও পরের সংলগ্ন মাঠটিতে (পূর্ব প্রান্তিক )
লোহার শক্ত ব্যারিকেড করা হয় । দুটি টিকিট ঘর করা হয় । হাওড়া ডিস্ট্রিক্ট লিগ
প্রথম ও দ্বিতীয় ডিভিশন চালু হয় । মাঠের
মাঝে নতুন একটি রাস্তা হয় কদমতলার
দিকে যাওয়ার যেটি এখন চালু আছে ।
হাওড়া ময়দানের বাকি অংশ পড়ে থাকে
আদি হাওড়া ময়দান নাম নিয়ে । তখন
বঙ্কিম সেতু ছিলনা । এখন যেখানে হাওড়া
কোর্টের কাছে সেতুর একটি ভাগ নেমেছে ওই পর্যন্ত ছিল হাওড়া থেকে কলকাতা
যাওয়ার পুরাতন রেল‌ওয়ে বাকল্যান্ড ব্রিজ
যা সত্তরের দশকে চালু ছিল । বঙ্গবাসী
সিনেমার সামনে দিয়ে ট্রাম ও বাস রাস্তা
হাওড়া জেলা স্কুলের সামনে দিয়ে হাওড়া
জেনারেল পোস্ট অফিসের গা দিয়ে ব্রিজ
উঠে যেত কর্পোরেশন অফিসের সামনে দিয়ে । চার্চ রোডের পূর্ব দিকে কবরস্থান
ছিল । হাওড়া গার্লস কলেজের মূল দরজাটি
ও সেন্ট টমাস স্কুলের দুটি দরজাই লাগোয়া
ছিল হাওড়া কর্পোরেশন অফিসের পাশে ।
ডালমিয়া পার্কে শৈলেন মান্না চুনি বললাম
পিকে ব্যানার্জিরা খেলে গেছেন । হাওড়ার
লিগ ম্যাচে রবিবার টিকিট কেটে ঢুকতে হতো । তিনদিকে দাঁড়িয়ে ও একদিকে
ডালমিয়াদের করে দেওয়া খোলা
স্টেডিয়ামটি এখনও আছে মাঠের পশ্চিম
প্রান্তে । তখন বাগনান উলুবেড়িয়া ডোমজুড়
আমতা জুড়ে ফুটবল খেলা চালু ছিল ।
এমনকি হাওড়ার বড় বড় কারখানার ও
হাওড়া পুলিশের ফুটবল টিম ওই মাঠে
লিগ খেলতো । বছরের কয়েকটা রবিবার
হাওড়ার টিমের সঙ্গে মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গল হাওড়া ইউনিয়নের টিকিট কেটে
খেলা হতো । ব্যাপক ভিড় হতো । এছাড়া
ক্রিকেট লিগ‌ও হতো দুটি মাঠেই । পুরাতন
হাওড়া ময়দাননেও স্থানীয় ক্লাবের ও পাড়ার ছেলেরা নিয়মিত ফুটবল ও ক্রিকেট খেলতো । অনন্ত ১০/১২ টা টিম সেভেন সাইড খেলতে পারতো ইঁটের গোলপোস্ট
বানিয়ে । পুরাতন হাওড়া ময়দানে বঙ্গবাসীর
দিকে সার্কাস ও পরে হাওড়া ব‌ইমেলা চালু
হয় । তবে হাওড়ার বড় বড় রাজনৈতিক সভা সব‌ই হয়েছে ডালমিয়া পার্কে । ইন্দিরা
গান্ধী থেকে রাজীব গান্ধী ডালমিয়া পার্কে
সভা করে গেছেন । অমৃতবাজার পত্রিকার
শতবর্ষের একমাসব্যাপী অনুষ্ঠান হয়েছিল
ডালমিয়া পার্কের পশ্চিম প্রান্তের মাঠে ।
১৯৭৬ সালে প্রয়াত কংগ্রেস নেতা কুন্তল
ভৌমিকের উদ্যোগে শিবপুর হেলথ সেন্টারের যুব উৎসব হয়েছিল ডালমিয়া
পার্কের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত । ওই
সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন সিদ্ধার্থ শংকর
রায় মৃত্যুঞ্জয় ব্যানার্জি ও ধনঞ্জয় ব্যানার্জিরা । ডালমিয়া পার্ক বাম আমলে এটির সংস্কার হয়ে নাম হয় হাওড়া মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন স্টেডিয়াম । এই সময়ে
ডালমিয়া পার্কে অফিস দোকান ও স্টেডিয়ামর আরও দুই দিক গড়ে ওঠে ।
এই সময়ে ক্লাব হাউস ও আন্তর্জাতিক
খেলা শুরু হয় সাবেকি হাওড়া ময়দানে । এই মাঠে পঞ্চাশের দশক থেকে এখানে হাওড়া জেলা লিগ চালু হয় । আগে পূর্ব ও পশ্চিমে দুটি মাঠ একসাথে ছিল । প্রধান মাটটির গোল পোস্ট ছিল পূর্ব-পশ্চিমে ও সঙ্গের সাবেক লাগোয়া মাঠটি ছিল উত্তর-দক্ষিণে গোল পোস্ট । প্রতিদিন
লিগ খেলায় জমজমাট থাকতো । বর্তমান
সরকারের আমলে মোহনবাগান ও হাওড়া
একাদশের খেলার মধ্যে দিয়ে দু বছর আগে
পূর্বতন ডালমিয়া পার্কের নাম হয়েছে
শৈলেন মান্না স্টেডিয়াম । এই মাঠে খেলে
কলকাতা লিগ কাঁপিয় গেছেন অশোক চ্যাটার্জি সুদীপ চ্যাটার্জি অমিয় ব্যানার্জিরা ।
এখন সুদীপ চ্যাটার্জি ও অমিয় ব্যানার্জির
স্মরণে এইমাঠের দুটি ব্লকের নামকরণ
করা হয়েছে ।

বুধবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

ক্যালেন্ডার শিল্পী জে.পি.সিঙ্ঘল ©® অলোক কুন্ডু ভারতের এক অনন্য পেন্টারের নাম জে.পি. সিঙ্ঘল । হাইপার রিয়ালিস্টিক পেইন্টিংয়ের এক বিরল চিত্রভাবনার চিত্রকর । ভারতের চিত্রকলা শিল্পকে যিনি অনেক দিয়ে গেছেন । কোনো প্রথাগত শিল্প শিক্ষা যার হয়নি । তবু কিন্তু ইন্ডিয়ান গ্রেট আর্টিস্টের তালিকায় নিজের নাম সংযুক্ত করে গেছেন তিনি । মীরাটে ১৯৩৪ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন । স্বশিক্ষিত শিল্পীদের তালিকায় তিনি উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো । মুখ্যত ভারতবর্ষের ট্রাইবাল জনগণের জীবনযাত্রার সচল এক চিত্রপট তিনি সৃষ্টি করে গেছেন । এছাড়া দেব-দেবী ও গ্রামীণ নিসর্গ তার চিত্রকলার মূল বিষয় ছিল। মুখ্যত তিনি ক্যালেন্ডার শিল্পী হিসেবে উঠে এসেছেন এবং তার অসংখ্য ছবির বিষয়বস্তু অদলবদল করে সেই ছবি সারা পৃথিবীতে আজ‌ও দেদার বিক্রি হচ্ছে । কোনোটা তার নামে , কোনোটা বেনামে । পাইরেসি আটকাতে তার পুত্র -" জে পি সিঙ্ঘল ফাউন্ডেশন" খুলে তার পিতার ছবির সংরক্ষণ ও প্রদর্শনীর আয়োজনের মাধ্যমে সারা দেশের কাছে এক শিল্পীর আদর্শকে বাঁচাতে চাইছেন । রাজা রবি বর্মার পর‌ই ভারতের ক্যালেন্ডার শিল্পের বাজারে জে পি সিঙ্ঘলের ছবির চাহিদা চলে আসছে । যা তিনি দেখেছেন যা ভেবেছেন তাই অবিকল তুলে এনেছেন তার ক্যানভাসে । বিশেষ করে দেহাতি ও আদিবাসী রমনীর শরীর শৈলীতে তিনি যে কীর্তি রেখে গেছেন তার তুলনা পাওয়া মুশকিল । মোট ২,৭০০ ছবি তিনি ক্যালেন্ডার শিল্পের জন্য দিয়ে গেছেন যার ঘুরেফিরে বছর বছর প্রিন্ট হয়েছে প্রায় ৮০ কোটির বেশি । তিনি তার ৮০ বছর বয়সে প্রয়াত হন এবং ৩৫ বছর ধরে ছবি আঁকার জগতে প্রতিষ্ঠিত থেকে গেছেন । জীবনের ৭৮ বছর বয়সে প্রথম ও শেষ প্রদর্শনী হয় মুম্বাইয়ের জে জে স্কুল অফ্ আর্ট ও জাহাঙ্গীর আর্ট গ্যালারিতে ২০১২ তে । যেখানে তাকে আর্টিস্টের স্বীকৃতি দেওয়া হয় । কারণ তিনি জীবনে কারো কাছেই আঁকা শেখেননি । কলেজে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা । প্রথম জীবনে হিন্দি ম্যাগাজিন ধর্মযুগে স্কেচ আঁকিয়ে হিসেবে যোগদান । এরপর ১৯৫৯ থেকে ১৯৯০ মুম্বাই শহরে তার কর্মজীবন কাটে । কলা সমালোচক প্রিতিশ নন্দী বলেছিলেন ভারতে জে পি সিঙ্ঘল একমাত্র শিল্পী যিনি শিল্পে নারীত্বকে সঠিকভাবে আয়ত্ত করেছিলেন । ভাবলে অবাক লাগে তার সময়ে টিভির সীমিত প্রেক্ষাপট ছাড়া ডিজিটাল ও কম্পিউটার বা ফটোশপ টেকনোলজির সাহায্য ছাড়াই তার ছবিতে গ্রামের ধুলোবালি রোদ অবিকল ধরা পড়তো । এমনকি মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি তৈরি করে দিতে পারতেন অবিকল সেট-সেটিং । এমনকি সত্যম শিবম সুন্দরমের জিনত আমনকে কীভাবে চরিত্র অনুযায়ী মেক আপ হবে তার চালচলন কীরকম হবে সেই বিষয়ে রাজকাপূর পর্যন্ত জে.পি.সিঙ্ঘলের সরণাপন্ন হয়েছিলেন । সঞ্জয় দত্তর রকির মহরত যে প্রেক্ষাপটে হয়েছিল তার ডিজাইন থেকে ফটোগ্রাফি সবটাই ছিল এই বিখ্যাত শিল্পীর নৈপুণ্যের প্রকাশ । এম এফ হুসেন পর্যন্ত গজগামিনী ও মীনাক্ষীর সময় তার পরামর্শ নিয়েছিলেন । ক্যালেন্ডার শিল্পী হিসেবে ব্রুকবন্ড থেকে পার্লে , বাজাজ এইসব বড় বড় কোম্পানির ক্যালেন্ডার কখন‌ও অন্য শিল্পীর কাছে ছবি আঁকাতে যায়নি , আমৃত্যু জে.পি.সিঙ্ঘল ছিলেন তাদের প্রিয় মানুষ । কোনো আর্ট কলেজে না পড়ে নিজে নিজে যে এরকম ছবি আঁকা যায় ভারতে সিঙ্ঘল সেই হিসেবে এক ব্যতিক্রমী শিল্পী যা জন্ম জন্মান্তরেও মেলেনা । সাধনাতেও মেলা কঠিন । আদিবাসী রমনীর রূপ লাবণ্য যেন কোনো এক ঈশ্বরের অবদান । প্রচুর ছবি তার বেহাত হয়ে গেছে তবু তার ২৭০০ র কিছু বেশি ছবিতে সিগনেচার পাওয়া গেছে । এই শিল্পীকে প্রণাম আমার ।

রবিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

Poetry of alok Kumar Kundu

(ক্রোয়েশিয়ার প্রেসিডেন্ট )
হারের দুঃখ হাসিতেই অবিরল
অলোক কুন্ডু ©

আজকে জেতা সবার হৃদয় যেন
দলের জার্সি পরেই ছিলেন আগে
খেলোয়াড়ীর দিল দরিয়া হাতে
আদর দিলেন প্রতিটি পুরুষ কাঁধে ।

এই পৃথিবী দেখলো দুচোখ ভরে
দেশের প্রধান খেলার কাছে ছোট
স্নেহের হাতে মায়ের সান্ত্বনাকে
তুলে ধরলেন বিশ্বকাপের মাঠে ।

এই পৃথিবী দেখলো নতুন কিছু
হারের দুঃখ হাসির বিভিন্নতায়
জয় করলেন সারা পৃথিবীর মন
এই মহিলা শুধু প্রেসিডেন্ট নন ।

রাজকুমারদের মুষড়ে পড়া গালে
একে একে এঁকে দিলেন জিত
প্রেসিডেন্টের জলাঞ্জলি দিয়ে
ভূবনজুড়ে নামিয়ে দিলেন মেঘ ।

অঝোর ধারায় ফুটবল বুঝি কাব্য
দূরে বসেও আমাদের চোখে জল
বৃষ্টি ধারায় ফুটবল মাঠ‌ও ভাসছে
হারের দুঃখ হাসিতেই অবিরল ।

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...