বুধবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

ক্যালেন্ডার শিল্পী জে.পি.সিঙ্ঘল ©® অলোক কুন্ডু ভারতের এক অনন্য পেন্টারের নাম জে.পি. সিঙ্ঘল । হাইপার রিয়ালিস্টিক পেইন্টিংয়ের এক বিরল চিত্রভাবনার চিত্রকর । ভারতের চিত্রকলা শিল্পকে যিনি অনেক দিয়ে গেছেন । কোনো প্রথাগত শিল্প শিক্ষা যার হয়নি । তবু কিন্তু ইন্ডিয়ান গ্রেট আর্টিস্টের তালিকায় নিজের নাম সংযুক্ত করে গেছেন তিনি । মীরাটে ১৯৩৪ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন । স্বশিক্ষিত শিল্পীদের তালিকায় তিনি উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো । মুখ্যত ভারতবর্ষের ট্রাইবাল জনগণের জীবনযাত্রার সচল এক চিত্রপট তিনি সৃষ্টি করে গেছেন । এছাড়া দেব-দেবী ও গ্রামীণ নিসর্গ তার চিত্রকলার মূল বিষয় ছিল। মুখ্যত তিনি ক্যালেন্ডার শিল্পী হিসেবে উঠে এসেছেন এবং তার অসংখ্য ছবির বিষয়বস্তু অদলবদল করে সেই ছবি সারা পৃথিবীতে আজ‌ও দেদার বিক্রি হচ্ছে । কোনোটা তার নামে , কোনোটা বেনামে । পাইরেসি আটকাতে তার পুত্র -" জে পি সিঙ্ঘল ফাউন্ডেশন" খুলে তার পিতার ছবির সংরক্ষণ ও প্রদর্শনীর আয়োজনের মাধ্যমে সারা দেশের কাছে এক শিল্পীর আদর্শকে বাঁচাতে চাইছেন । রাজা রবি বর্মার পর‌ই ভারতের ক্যালেন্ডার শিল্পের বাজারে জে পি সিঙ্ঘলের ছবির চাহিদা চলে আসছে । যা তিনি দেখেছেন যা ভেবেছেন তাই অবিকল তুলে এনেছেন তার ক্যানভাসে । বিশেষ করে দেহাতি ও আদিবাসী রমনীর শরীর শৈলীতে তিনি যে কীর্তি রেখে গেছেন তার তুলনা পাওয়া মুশকিল । মোট ২,৭০০ ছবি তিনি ক্যালেন্ডার শিল্পের জন্য দিয়ে গেছেন যার ঘুরেফিরে বছর বছর প্রিন্ট হয়েছে প্রায় ৮০ কোটির বেশি । তিনি তার ৮০ বছর বয়সে প্রয়াত হন এবং ৩৫ বছর ধরে ছবি আঁকার জগতে প্রতিষ্ঠিত থেকে গেছেন । জীবনের ৭৮ বছর বয়সে প্রথম ও শেষ প্রদর্শনী হয় মুম্বাইয়ের জে জে স্কুল অফ্ আর্ট ও জাহাঙ্গীর আর্ট গ্যালারিতে ২০১২ তে । যেখানে তাকে আর্টিস্টের স্বীকৃতি দেওয়া হয় । কারণ তিনি জীবনে কারো কাছেই আঁকা শেখেননি । কলেজে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠেনা । প্রথম জীবনে হিন্দি ম্যাগাজিন ধর্মযুগে স্কেচ আঁকিয়ে হিসেবে যোগদান । এরপর ১৯৫৯ থেকে ১৯৯০ মুম্বাই শহরে তার কর্মজীবন কাটে । কলা সমালোচক প্রিতিশ নন্দী বলেছিলেন ভারতে জে পি সিঙ্ঘল একমাত্র শিল্পী যিনি শিল্পে নারীত্বকে সঠিকভাবে আয়ত্ত করেছিলেন । ভাবলে অবাক লাগে তার সময়ে টিভির সীমিত প্রেক্ষাপট ছাড়া ডিজিটাল ও কম্পিউটার বা ফটোশপ টেকনোলজির সাহায্য ছাড়াই তার ছবিতে গ্রামের ধুলোবালি রোদ অবিকল ধরা পড়তো । এমনকি মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তিনি তৈরি করে দিতে পারতেন অবিকল সেট-সেটিং । এমনকি সত্যম শিবম সুন্দরমের জিনত আমনকে কীভাবে চরিত্র অনুযায়ী মেক আপ হবে তার চালচলন কীরকম হবে সেই বিষয়ে রাজকাপূর পর্যন্ত জে.পি.সিঙ্ঘলের সরণাপন্ন হয়েছিলেন । সঞ্জয় দত্তর রকির মহরত যে প্রেক্ষাপটে হয়েছিল তার ডিজাইন থেকে ফটোগ্রাফি সবটাই ছিল এই বিখ্যাত শিল্পীর নৈপুণ্যের প্রকাশ । এম এফ হুসেন পর্যন্ত গজগামিনী ও মীনাক্ষীর সময় তার পরামর্শ নিয়েছিলেন । ক্যালেন্ডার শিল্পী হিসেবে ব্রুকবন্ড থেকে পার্লে , বাজাজ এইসব বড় বড় কোম্পানির ক্যালেন্ডার কখন‌ও অন্য শিল্পীর কাছে ছবি আঁকাতে যায়নি , আমৃত্যু জে.পি.সিঙ্ঘল ছিলেন তাদের প্রিয় মানুষ । কোনো আর্ট কলেজে না পড়ে নিজে নিজে যে এরকম ছবি আঁকা যায় ভারতে সিঙ্ঘল সেই হিসেবে এক ব্যতিক্রমী শিল্পী যা জন্ম জন্মান্তরেও মেলেনা । সাধনাতেও মেলা কঠিন । আদিবাসী রমনীর রূপ লাবণ্য যেন কোনো এক ঈশ্বরের অবদান । প্রচুর ছবি তার বেহাত হয়ে গেছে তবু তার ২৭০০ র কিছু বেশি ছবিতে সিগনেচার পাওয়া গেছে । এই শিল্পীকে প্রণাম আমার ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...