#অলোককুন্ডুরলেখালিখিওকবিতা #kolkata #indianwriterscommunity #kolkatadiaries #writer #lekhak #blogger #Facebook #biography
■ অলোকের ঝর্নাধারায়: ( আমার টুকরো জীবন)
●পর্ব-৫
◆ভূবনেশ্বরের রামকৃষ্ণ মিশনের পাঁচ-ছটা বাড়ির পরই ছিল লাল রঙের 'যোগেশনিবাস' আমার মামারবাড়ি। এখন রাস্তার নাম হয়েছে বিবেকানন্দ মার্গ। যেখানে আমার মামাদের ঠাকুরদাদা মাত্র ১৫০/-টাকা দিয়ে ১৬০/১৭০ বছর আগে কিনেছিলেন ওই জমি। যা প্রচুর দামে ২০০৬ -এ বিক্রি হয়ে গেল অন্নপূর্ণা মেমোরিয়াল হসপিটালের মালিকের কাছে। ওদের হসপিটালের রাস্তা ছিল অনেকটা পেছনে, গলির মধ্যে। কিন্তু বড় রাস্তা আটকে বসে ছিল এই জমি। আমার মা মাসি মামা ওঁদের একজন শরিক, সকলে মিলে উপস্থিত হয়েছিল ভূবনেশ্বর কোর্টে বিক্রির দিনে। ভূবনেশ্বরের দুটো পার্ট। একটা ওল্ড ভূবনেশ্বর, যেখানে অবস্থিত " লিঙ্গরাজ টেম্পল" অন্যটা হলো নবনির্মিত ক্যাপিটাল, বিজু পট্টনায়ক পত্তন করেছিলেন যে ভূবনেশ্বর তার চেহারা ৭০ দশক থেকে নতুন করে পাল্টাতে শুরু করে। পূর্বভারতের রাজধানীর মতো গৌরবের স্থানে এখন ভূবনেশ্বর। আধুনিক শহর আরও দূরে বেড়ে উঠেছে ১৯৭৫ সাল থেকে দশটা সল্টলেক তৈরি হয়ে গেছে। আগে কটক ছিল উড়িষ্যার রাজধানী। স্বাধীনতার পরবর্তীকালে আমাদের দূর্গাপুর,কল্যাণী হয়েছিল এবং উড়িষ্যা পেয়েছিল ভূবনেশ্বর। পশ্চিমবঙ্গের সেই বাড় হয়নি যা হয়েছে ভূবনেশ্বরকে কেন্দ্র করে। শিল্পকারখানা, হসপিটাল, সরকারের পূর্বাঞ্চলীয় অফিস, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনা ভূবনেশ্বর কি নেই আজ। যেভাবে তৈরি হয়েছিল বিজু পট্টনায়কের আমলে, তা পুণরায় ভেঙেচুরে একেবারে নতুন হয়ে গেছে।
আমার ঠাকুরদাদা আমার বাবার বিয়ে দিয়েছিলেন যখন, তখন আমার বাবা চাকরি করতেন না। ভূবনেশ্বরে যখন আমরা প্রথম যাই তখন আমার দিদির, আমার, ছোট বোনের জন্মগ্রহণ হয়ে গেছে। তখনও আমার বাবা চাকরি করেন না। মামাদের সাহায্যে ও বাবার টুকটাক সমাজসেবার কাজের জন্য কেউ হয়তো ২/৫ টাকা গাড়িভাড়া দিতেন সেই থেকে আর কলুটোলা স্ট্রিটে আমাদের বাড়ি ছিল তার ভাড়ার সামান্য অংশ দিয়ে, নিজেদের বাড়িতে ভাড়াটে বসিয়ে যে এক অংশ পাওয়া যেত তাই দিয়ে কোনোক্রমে আমাদের সংসার চলতো, মায়ের বিয়ের গয়নাও ২/১ টা বিক্রি করতে হয়েছিল। আমার ঠাকুরদাদা একটা ব্যাঙ্ক খুলতে গিয়ে তাঁর সমস্ত পৈতৃক জমিজমা,বাড়ি মর্টগেজ দিয়ে দিলেন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছে, বৃটিশ আমলে, সেটা আমার জন্মের বহু আগের ঘটনা। এই ভূবনেশ্বরে গিয়ে আমার বাবার বিয়ের অনেক পরে কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসে চাকরি জোটে, পরে সেইসব আলোচনায় আসবে। গ্রাম ভূবনেশ্বর কীভাবে ধানজমি মাঠঘাট থেকে, একটা অপোড়ো জায়গা থেকে ক্রমশঃ সিটি গড়ে উঠলো ছোট থেকে গিয়ে গিয়ে দেখেছি বারেবারে। একবার ছোটমামার সঙ্গে ১০+১০ মানে ২০ কিমি হেঁটে, ভূবনেশ্বর তৈরি দেখতে গিয়ে বাড়ি ফিরে এসে কোমরের যন্ত্রণায় তিনদিন দিন শুয়ে পড়েছিলাম। আমার ছোটমামা কলকাতা মেডিকেল কলেজের ক্যানসার বোর্ডের ডাক্তার ছিলেন। গাড়ি কেনেন নি। হেঁটে হেঁটে বা ট্রামে করে কলকাতা ঘুরতেন। আমার সে অভ্যাস কখনও ছিলনা। যাইহোক ভূবনেশ্বর বিন্দু সরোবর কথা একটু বলি। লিঙ্গরাজ টেম্পল লাগোয়া জলের কুন্ড বা প্রস্রবণ এবং বিন্দু-সরোবর লেকের কাছে প্রায় ১২ কাঠা জমি ও দু-তলা বাড়ি বিক্রি করে দিতে হলো এই সেদিন, কেয়ারটেকারের আগ্রাসী মনোভাবের জন্য। সামনে দিয়ে দু লেনের স্টেট হাইওয়ে চলে গেছে। জমির দাম ব্যাঙ্কের টাকার থেকেও যে বহুমূল্য সেদিন বুঝতে পারলাম। ওই জমির জন্য কতলোক যে এখানে উৎপাত করতো তার ঠিক নেই। বহুবছর কোর্টকেস চলার পর জবরদস্তি দখলদারি হঠানো গিয়েছিল। যাইহোক জমি বিক্রির ভাগ আনতে আমিও গিয়েছিলাম মা মাসিদের সঙ্গে। বিন্দুসরোবরে ধারে কুন্ড থেকে ঔষধি জল বের হোতো। বৃটিশ আমলে স্বাধীনতার বহু পরেও কলকাতার বড় বড় ওষুধের দোকানে প্রসেসিং করে বিক্রি হতো ওই জল। বিশেষ করে ওই জলের কারণে তখনকার দিনে পেটের অসুখ ও টিবি রোগীও সেরে যেত। খিদে বেড়ে যেত হজম হোতো। এখন তো মনে হয় স্নান করতে ওই কুন্ডে টিকিট কাটতে হয়। জলও লাইন দিয়ে মাপমতো পাওয়া যায়। তখন দেখতাম বিকালবেলা, রোদ পড়ে গেলে দলে দলে স্থানীয় লোকেরা মাথায় করে কুন্ডের জল নিয়ে যাচ্ছে। স্নান করতে, জল খেতে দুবেলা কুন্ডে যেতাম আমরা। একটা চৌবাচ্চায় নেমে স্নান ও অপরটা থেকে পাণীয় জল পাওয়া যেত। অবশ্য অতিরিক্ত ওই জল গিয়ে পড়তো গায়ের বিন্দু সরোবর নামে বড় একটা লেকে। কথিত আছে একবার শিবের সঙ্গে পার্বতী যাচ্ছিলেন তখন পার্বতীর জলতেষ্টা পায়। মহাদেব ওইখানে ত্রিশূল দিয়ে গর্ত করতে, জল বেরিয়ে আসে। আজ পর্যন্ত ওই জলের প্রবাহ খুঁজে পাওয়া যায়নি। কখনও জলের অভাব হয়না ওখানে। তবে বড় বড় বাড়ি হয়ে যাওয়ায় অনেকে বলেন জল আসার প্রবাহ আগের থেকে কম। গ্রীষ্মেও টলটলে জল থাকে। তবে লিঙ্গরাজ মন্দিরের কাছে কুষ্ঠরোগীদের বসে থাকার ফলে কখনও ওখান থেকে আমরা কিছু কিনতাম না। আর ভূবনেশ্বরের লিঙ্গরাজ মন্দির তো হাঁটাপথেই ছিল। ছবিতে বিন্ন্প র্ণা হসপিটাল, যারা আমার মামারবাড়ির জমি কিনে নেয়।(ক্রমশঃ)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন