শনিবার, ১৪ জানুয়ারী, ২০১৭

অলোক কুন্ডুর লেখালিখি

ভাজা পিঠে
========
আমার মামাবাড়ি আগে ছিল জোড়াশাঁকোর
বলরাম দে স্ট্রীটে।  ঠিক এই সময় আমার দিদিমা
একরকম পিঠে বানাতো ।  এই পিঠে একমাত্র
উত্তর কলকাতার লোকেরাই ভালোভাবে বানাতে
পারে । পরে  আমার মাও ওরকম পিঠে না হলেও
প্রায় কাছাকাছি ওই রকম পিঠে বানাতেন, এই
পিঠের নাম ভাজা পিঠে । ওই  পিঠের কাছে
কোনো পিঠেই পাতে পড়েনা । দিদিমার পিঠে
বানানো এখনও কিছুটা মনে আছে । যেমন
খুব অল্প চালগুঁড়োর গরম জলে মিশিয়ে সঙ্গে
বেশিভাগ মুগডাল ভাজা সিদ্ধ করে কাদার
মতো করে গরম কড়াইতে ডালডা + চিনি +
অল্প পাটালি গুড় + লব্ণ + খোয়া খির + খুব
অল্প খাবার সোডা এক চিমটে + খেঁজুরগুড়
+ অল্প বনস্পতি দিয়ে অনেকক্ষণ অল্প অল্প
গরম জল ঢেলে ঢেলে মিশ্রণ / মন্ড তৈরি করা
হতো । খুব অল্প ভাজা গরম মশলা দেওয়া
হতো । আর অন‌্য দিকে তৈরি হতো ছাঁই অর্থাৎ
নারকলে কুরো আর খেঁজুড় গুড়ের মিশ্রণ
( যেটা পিঠের মধ‌্যে পুর হিসেবে ব‌্যবহার করা
হতো )। বাইরের অংশটি অর্থাৎ মুগ ডালের
মাখা মন্ডটি লেচি করা হতো পটলের মতো
বা পিঠের মতো করে । জলের ছোঁয়ায় পিঠে
জুড়ে দিয়ে শুকনো করতে দিতে হতো । উপরে
মুগের মন্ড ভেতরে ছাঁই থাকতো । বলতে ভুলে
গেছি গোবিন্দভোগ চালকে শিলে বেটে নিতে
হতো ।  চালের কার্যকারীতা কিন্তু সামান‌্য ।
এইবার সমস্ত পিঠে হাতে গড়ার পর
এককড়া ভাসানো সরষে তেলে ভাজা হতো ।
এরকম পিঠে আর জীবনে খাইনি । এখন
আমার ছোট বোন কিছুটা পারে ।  তবে এই
পিঠে শুধুই খাওয়ার নিয়ম । যত বাসি হতো
তত খেতে ভালো হতো ।  তবে বলে নি আর
দু-একটা কথা ।  এই পিঠের রঙ হবে পোড়া-
ব্রাউনিজ এবং গা হবে খুব ফাটা ফাটা ।
ভাজার পরও পিঠের গা বা উপরভাগ মসৃণ
হলে জানবেন মিশ্রণ ঠিক হয়নি কোথাও
নিশ্চিত কমবেশি হয়েছে । যে কেউ এটা নিজের
মতো করে বানিয়ে দেখতে পারেন । এই  ভাজা
পিঠের কাছে আর কোনো পিঠেই  দাঁড়াতে
পারবেনা । © অলোক কুন্ডু

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...