দেখি কী আছে মুঠোয় / অলোক কুন্ডু
ফড়িং ওড়া একমাথা
উলুঘাসের মাঝখানে দেখা
সেই দেখা নিরন্তর নদীর মতো একবুক জল
আদিগন্ত যতদূর দেখা যায় শুধুই দুজন
মেয়েটা জিজ্ঞেস করেছিল --দেখি কী আছে মুঠোয়
উচ্চারণের ধ্বনি থেকে প্রতিধ্বনি
তরঙ্গের মতো শোনা যায়--দেখি কী আছে মুঠোয়
দেখি কী আছে মুঠোয় ।
কথাগুলো ঠিক যেন
তোতা চন্দনা শালিখ বুলবুলি কোকিলের সমস্বর
জলতরঙ্গ কোথাও বেজেছিল যেন
এ এক আশ্চর্য স্বর ঠিক পাখির মতোই বুঝি হবে
কখন যে উড়ে আসতো কখন যে চলে যেত
তার হিসেব মেলাতে পারেনি ছেলে ।
ইমিটেশনের হারটা লুকোনো বৃথাই ছিল
তবু মেয়েটা একবার হারটা দেখতে চাইতেই
প্রাণপণে সে মুঠো খুলে দিয়েছিল
কাশক্ষেতের ধারে প্রজাপতির দল
হাতের মুঠো থেকে বেরিয়ে
মেয়েটার মাথার চার পাশে ঘুরে ঘুরে উড়ছিল
মেয়েটা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছিল আর দেখছিল
চোখের তৃপ্তি কাকে বলে
সেই প্রথম দেখে ফেলেছিল
তুলোর মতো নরম গলায় মেয়েটা বলেছিল
--খুউব সুন্দর ।
ব্যস ওইখানে যদি শেষ হয়ে যেত !
এই দৃশ্য সত্যি সত্যি সে দেখেছিল
চোখ আর কানের ভুল হতেই পারেনা কখনো
সবুজ ক্ষেতজুড়ে এক আহ্লাদের ঢেউ আর ঢেউ
হলুদ বর্ণের সকালে মাথা সমান উলুঘাস
তার একপাশে সবুজ বরবটি ক্ষেতের মাচায়
দোল খাওয়া ঝিঙে ফুল
আর কী সুন্দর করে বলা -দেখি কী আছে মুঠোয়
সেইথেকে ছেলেটার মনে থাকে সব
তবু দিন যায় জল যায় কতভাবে যেন
যে গুণতে পারে সেই শুধু জানে
আকাশ পাতাল কত দূর হবে ।
আরও একদিন সরষে ক্ষেতের হলুদ রঙের বনে
আকাশ মেঘলা হয়ে এলে
মেয়েটার সঙ্গে আবার দেখা হয়েছিল
সেদিনও হারটা নিলনা কিছুতেই
মিহি গলায় বলেছিল --পরে নেব ।
সেই থেকে নদীপাড়ে বালি চাপা পড়ে থাকে দুবেলা
এইসব প্রজাপতি কৌটো ঝিঙে ফুলের দোলা
মাথা সমান উলুঘাস রোদ বৃষ্টি শীতে
মাঝে মাঝে এখনও ছেলেটা একা আসে
কৌটায় রাখা হারখানা দেখে রেখে দেয়
আর যতবার কৌটাটা খোলে
ঠিক ততবার প্রজাপতিগুলো
উড়তে উড়তে এপাশ ওপাশ ঘুরে আসে
কী আশ্চর্য
এইসব এখনও পরিষ্কার দেখতে পায় সে
একটু নির্জন হলেই
পুণরায় হার সহ কৌটোটা বালি চাপা দেয়
বালিগুলো হাতে মাখামাখি
কে যেন বলে ওঠে -- দেখি কী আছে মুঠোয়
শুধু নির্বিকার মুখ থেকে অস্ফুট স্বর শোনা যায়
হয়তো আবার পরশু ছেলেটা আসবে ।
© অলোক কুন্ডু