রবিবার, ৮ এপ্রিল, ২০১৮

Satyajit Ray written by Alok Kumar Kundu

কূপমন্ডুক হোয়োনা, শঙ্কু ও সত্যজিৎ রায়
--------------------------------------------------------
আগন্তুকে সত্যজিৎ রায় শেষ দৃশ্যে উৎপল
দত্তের মুখে দুটি ডায়লগ (কথা) ব্যবহার করেছিলেন (১) ছোট ছেলেটি অর্থাৎ নাতি
সমান শৈশবকে শুনিয়েছিলেন কূপমন্ডুক হোয়োনো । আসলে বাঙালিজাতির উদ্দেশ্য
বলেছিলেন কিন্তু বাঙালি তার আজ‌ও পাঠ
উদ্ধার করতে পারেননি । (২) আউফভিদার
জেহেন ( আবার দেখা হবে ) --জার্মানদের
বিদায়ী সৌজন্য বাক্য ( তার মানে কর্মঠ দেশ,
কূপমন্ডুকতার যেখানে কোনো স্থান হয়না,
পৃথিবীর পরিচ্ছন্ন, বোধ-বুদ্ধির দেশ
জার্মানিতেই তিনি আবার ফিরে যাচ্ছেন ।

সত্যজিৎ রায় কি সত্যিই পৃথিবীর ৬৯ টি
ভাষা জানতেন । আমি জানি তিনি একমাত্র
ভারতীয় তিনি ৬৯ টি ভাষা নিয়ে অল্পবিস্তর
পড়ালেখা করেছেন এবং বুঝতেন । তিনি কি
হায়ারোগ্লিফিক পড়তে পারতেন ? আমি
বলবো পারতেন । তিনি কি পদার্থ বিজ্ঞানী
না তবে বিজ্ঞানের সকল শাখায় তাঁর অবাধ
যাতায়াত ছিল । তিনি কি বিশ্বের সকল
দেশের ভৌগোলিক অবস্থান জানতেন ?
আমি বলবো জানতেন । বিশ্বের সমস্ত
ধর্ম , সামাজিক রীতি নীতি ও বিশ্বসাহিত্য
বিষয়ে সম্যক ধারণা কি তাঁর ছিল ? আমি
বলবো ছিল । তিনি কি তীক্ষ্ণ বুদ্ধিধর,
নির্লোভ, সৎ ও স্বদেশ প্রেমিক, ভারতের
সনাতন ইতিহাস সম্পর্কে তিনি শ্রদ্ধাবান
ছিলেন ? আমি বলবো হ্যাঁ ছিলেন । মন্ত্রী
যতীন চক্রবর্তী একবার শহীদ মিনারের
মাথায় লাল রঙ করেছিলেন ( সত্যজিৎ
রায়ের বন্ধুরা ছিলেন সকলেই কম্যুনিস্ট
এবং তাদের প্রায় নিত্য যাতায়াত ছিল তাঁর বাড়িতে) সর্ব প্রথম সত্যজিৎ রায় শহীদ
মিনারের লাল রঙে আপত্তি তুলেছিলেন । 
বারবার তিনি বলেছেন তাঁর বাংলা ভাষায়
ব‌ই লিখে, লেখালেখি করেই সংসার চলে ,
সিনেমা করে তিনি খ্যাতি পেয়েছেন মাত্র ।
বাংলা ভাষার স্ক্রিপ্ট নিয়ে সারা বিশ্বে এখনও
পিএইচডি করছেন অনেকে । বিশেষ করে
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বিষয়টো
অনেকটাই সত্যজিৎ কেন্দ্রিক । অথচ
প্রেসিডেন্সিতে যখন পড়তেন - প্রতাপ চন্দ্র
চন্দ্র , মৃত্যুঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায়দের সঙ্গে
তখন কলেজের ইংরেজি শিক্ষক চেয়েছিলেন
সত্যজিৎ ইংরেজি অনার্স করুক । সত্যজিৎ
রায় তার করেননি । তাঁর ইংরেজি অধ্যাপক
অভিমানে অনেক দিন কথা বলতেন না কারণ
পাশ সাবজেক্টে ইংরেজিতে সত্যজিৎ রায়
সব থেকে বেশি নম্বর পেতেন । তবু বাঙলা
ভাষার কোথায় কতখানি প্রয়োগ করবেন
তিনি ছাড়া আর কেউ বুঝি জানতেন না ।
প্রোফেসর ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কু বাংলা কল্পবিজ্ঞান
সাহিত্যের একটি জনপ্রিয় চরিত্র । এই চরিত্র
বাঙালিদের কাছে প্রোফেসর শঙ্কু নামেই
সমধিক পরিচিত । তিনি একজন বৈজ্ঞানিক
ও আবিষ্কারক । ভারতের সনাতন ইতিহাস
সম্পর্কে তিনি শ্রদ্ধাবান । ১৯৬১ সালে সত্যজিৎ
রায় এই চরিত্রটি সৃষ্টি করেন ।

এই লেখাটির মধ্যে আমি উপরের দিকে দ্বিতীয়
প্যারায় সত্যজিৎ রায়ের জানা ও জ্ঞান সম্পর্কে
যে সকল প্রশ্ন তুলেছি । সেগুলির সব কটি
প্রোফেসর শঙ্কুর চরিত্রের গুণ ---প্রোফেশর
ত্রিলোকেশ্বর শঙ্কুর চরিত্র অঙ্কন করতে গিয়ে
সত্যজিৎ রায়ের লেখা ওই গুণগুলি শঙ্কুর
কান্ডের মধ্যে পাওয়া যায় । আসলে শঙ্কু
কল্পবিজ্ঞানের চরিত্র হলেও তার আচার
আচরণ শিক্ষার প্রাচুর্য সবটাই সেইমতো
গল্পের মধ্যে রসদ হিসেবে আমরা তখন
পড়তে পড়তে শুধুই প্রোফেশর শঙ্কুর মধ্যেই
মজে যাই ---তখন আর মনে থাকেনা যিনি
এইসব লিখছেন তাঁর নিজের কথা তাঁর
নিজের গুণাবলীতে শঙ্কু জারিত হয়নি তো ?
তাই প্রোফেসর শঙ্কুর গুণাবলী সত্যজিৎ রায়ের
গুণাবলীকে আমি বাছাই করতে পারিনা ।
© অলোক কুন্ডু

মঙ্গলবার, ৩ এপ্রিল, ২০১৮

Poetry of Alok Kumar Kundu : অলোক কুন্ডুর কবিতা

অক্ষরের আজ কোনো দাম নেই
অলোক কুন্ডু

ভাষার কোনো অক্ষর হয় না গো
আসলে হাতেখড়ি একটা লোক দেখানো বিষয়
ভাইকে ফাঁকি দিয়ে দলিল তৈরি করতে শেখায়
খুন করে জেলের বাইরে থাকতে শেখায়
অক্ষর জানারা সহজেই দল ভারী করে নেবে
আসলে তোমরা যাকে অক্ষর বলো
তার সঙ্গে ভাষার কোনো যোগাসূত্র নেই
ভাষার একটা নাড়ি আছে
তার স্পর্শ স্পন্দন নড়াচড়া সব আছে
কেউ গান গাইলে বুঝতে পারি
ওই বুঝি প্রাণের ভাষা গো
এই তো হৃদয় যেন নড়ে উঠলো
সমস্ত শরীরে বিদ্যুতের ছবি
সমস্ত শরীরে বৃষ্টি পড়ছে যেন
গভীর দুঃখের সময় রবীন্দ্রনাথের গান
আমার দুঃখের প্রলেপ
কিন্তু অক্ষর তো বানানো
মেকি কতগুলো আঁচড় মাত্র
অক্ষরের সিংহভাগ এখন প্রাণহীনের দখলে
যাদের প্রাণ নেই তারা অক্ষরকে বেছে নেয়
কিন্তু ভাষার স্পর্শ স্পন্দন নড়াচড়া সব আছে
তবু কেউ কেউ শেখাবে সাক্ষরতার কথা
লিপির কথা হরফের কথা
একদল যারা অক্ষর বাগিয়ে নিয়েছে
তারা কতটা অহংকারী হয়েছে জানো কি
কথা বললেই বুঝতে পারবে ।
অথচ যারা শুনেছে তারা বলেন
স্বামীজি তার পোষ্য হাঁস ছাগল কুকুরের সঙ্গে
তাদের ভাষাতে অবিকল কথা বলতেন
আর তাই সারা পৃথিবীর মানুষ
তার একটি মাত্র বাক্যে
হ্যাঁ মাত্র একটি বাক্যে--বুঝে নিলেন সব ।
কিন্তু তুমি যদি সাধারণ হ‌ও
অক্ষর জানিয়েরা তোমাকে বলহীন করে দেবে
তোমাকে নিয়ে কানাকানি করবে
তোমাকে হেয় করবে তোমাকে অপমান করবে
হাততালি দেবে তোমার পেছনে
এখন অক্ষর‌ওলারা খেউড় জেনে গেছে
অথচ কটা মাত্র আঁচড়ে ভাষা ছিল বলে
অতুলপ্রসাদ শুনতে পেলে
আজ‌ও ঘরের আলো নিভিয়ে দিই
আজ‌ও কদম কদম বাড়ায়ে যা শুনলে
দরজার বাইরে ছুটে আসি
ওই বুঝি সুভাষচন্দ্র আসছেন ।
গতকাল জয়পুরের জঙ্গলে
জল ঢেলে ঢেলে চান করাতে করাতে
কুনকি হাতিকে মাহুত বললো--
আর‌ও চান করবি ?
হাতি আনন্দে শুয়ে পড়লো
আমার চোখের সামনে
ভাষা অবিকল বুঝে নিতে পারলো আহ্লাদ
অথচ মানুষ বড় কাঁদছে
তুমি মানুষের পাশে দাঁড়াও
কেউ সে ভাষা কানে নিচ্ছে না
শুনতেও চায়না আজকাল
অথচ অক্ষর জানতে কার‌ও বাকি নেই
কবির অক্ষরের আজ বুঝি কোনো দাম নেই
আজ কবিকে দরকার ছিল তার ভাষায়
রবীন্দ্রনাথ অতুলপ্রসাদ স্বামীজি সুভাষচন্দ্রকে
বড় দরকার ছিল আমার
ভাষার কাঙাল আমি আমার কাছে অক্ষরের আজ কোনো দাম নেই ।
© অলোক কুন্ডু

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...