অক্ষরের আজ কোনো দাম নেই
অলোক কুন্ডু
ভাষার কোনো অক্ষর হয় না গো
আসলে হাতেখড়ি একটা লোক দেখানো বিষয়
ভাইকে ফাঁকি দিয়ে দলিল তৈরি করতে শেখায়
খুন করে জেলের বাইরে থাকতে শেখায়
অক্ষর জানারা সহজেই দল ভারী করে নেবে
আসলে তোমরা যাকে অক্ষর বলো
তার সঙ্গে ভাষার কোনো যোগাসূত্র নেই
ভাষার একটা নাড়ি আছে
তার স্পর্শ স্পন্দন নড়াচড়া সব আছে
কেউ গান গাইলে বুঝতে পারি
ওই বুঝি প্রাণের ভাষা গো
এই তো হৃদয় যেন নড়ে উঠলো
সমস্ত শরীরে বিদ্যুতের ছবি
সমস্ত শরীরে বৃষ্টি পড়ছে যেন
গভীর দুঃখের সময় রবীন্দ্রনাথের গান
আমার দুঃখের প্রলেপ
কিন্তু অক্ষর তো বানানো
মেকি কতগুলো আঁচড় মাত্র
অক্ষরের সিংহভাগ এখন প্রাণহীনের দখলে
যাদের প্রাণ নেই তারা অক্ষরকে বেছে নেয়
কিন্তু ভাষার স্পর্শ স্পন্দন নড়াচড়া সব আছে
তবু কেউ কেউ শেখাবে সাক্ষরতার কথা
লিপির কথা হরফের কথা
একদল যারা অক্ষর বাগিয়ে নিয়েছে
তারা কতটা অহংকারী হয়েছে জানো কি
কথা বললেই বুঝতে পারবে ।
অথচ যারা শুনেছে তারা বলেন
স্বামীজি তার পোষ্য হাঁস ছাগল কুকুরের সঙ্গে
তাদের ভাষাতে অবিকল কথা বলতেন
আর তাই সারা পৃথিবীর মানুষ
তার একটি মাত্র বাক্যে
হ্যাঁ মাত্র একটি বাক্যে--বুঝে নিলেন সব ।
কিন্তু তুমি যদি সাধারণ হও
অক্ষর জানিয়েরা তোমাকে বলহীন করে দেবে
তোমাকে নিয়ে কানাকানি করবে
তোমাকে হেয় করবে তোমাকে অপমান করবে
হাততালি দেবে তোমার পেছনে
এখন অক্ষরওলারা খেউড় জেনে গেছে
অথচ কটা মাত্র আঁচড়ে ভাষা ছিল বলে
অতুলপ্রসাদ শুনতে পেলে
আজও ঘরের আলো নিভিয়ে দিই
আজও কদম কদম বাড়ায়ে যা শুনলে
দরজার বাইরে ছুটে আসি
ওই বুঝি সুভাষচন্দ্র আসছেন ।
গতকাল জয়পুরের জঙ্গলে
জল ঢেলে ঢেলে চান করাতে করাতে
কুনকি হাতিকে মাহুত বললো--
আরও চান করবি ?
হাতি আনন্দে শুয়ে পড়লো
আমার চোখের সামনে
ভাষা অবিকল বুঝে নিতে পারলো আহ্লাদ
অথচ মানুষ বড় কাঁদছে
তুমি মানুষের পাশে দাঁড়াও
কেউ সে ভাষা কানে নিচ্ছে না
শুনতেও চায়না আজকাল
অথচ অক্ষর জানতে কারও বাকি নেই
কবির অক্ষরের আজ বুঝি কোনো দাম নেই
আজ কবিকে দরকার ছিল তার ভাষায়
রবীন্দ্রনাথ অতুলপ্রসাদ স্বামীজি সুভাষচন্দ্রকে
বড় দরকার ছিল আমার
ভাষার কাঙাল আমি আমার কাছে অক্ষরের আজ কোনো দাম নেই ।
© অলোক কুন্ডু
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন