শনিবার, ১৬ জুলাই, ২০২২

বাংলা থেকে দেশের উপরাষ্ট্রপতি/ অলোক কুন্ডু

বড় চমক, বাংলা থেকে এনডিএর-র উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী
●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●

গত তিন বছর বিভিন্ন ইস্যুতে মমতা সরকারকে নিশানা করেছেন বাংলার রাজ্যপাল। বাংলার আইন-শৃঙ্খলা ইস্যুতে সরব থেকেছেন তিনি। রাজভবন-নবান্ন তিক্ততার সম্পর্ককে সংবাদ জগতে আলোড়ন তুলেছে। বিশেষ করে আইনজীবী ধনকড় যেভাবে হাওড়া পুরসভার নির্বাচন আটকে দিয়ে বিজেপির কাছে আনন্দ সংবাদ পৌঁছে দিয়েছিলেন এবং তৃণমূল কংগ্রেসের বিরাগভাজন হয়েছেন, সেই বিতর্ক আজও মেটেনি। 

আজ ( ১৬.৭.২২) তৃণমূল কংগ্রেস দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সাংবাদিকদের কাছে বলেন, 'কোনও মন্তব্য করব না। এই বিষয়ে বিস্তারিত সিদ্ধান্ত নিতে আমাদের দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জি আগামী ২১ জুলাই বৈঠক ডেকেছেন।  যা বলার তিনি বলবেন।' 

এই সংবাদ চতুর্দিকে ছড়িয়ে যাওয়ার পর, মনে হচ্ছে বর্তমান রাজ্যপাল জগদীশ ধনকড়ের বিষয়ে আপাতত তৃণমূল কংগ্রেস নীরব থাকবে। অনেকেই মনে করছেন তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে প্রতি পদে পদে নিজের সাংবিধানিক ক্ষমতা মনে করিয়ে দিয়ে, তিনি নিজের সিরদাঁড়া সোজা রেখেছিলেন বলেই তাঁর এই পুরস্কার বিজেপির তরফে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পরেই উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে এনডিএ প্রার্থী হিসেবে জগদীশ ধনকড়ের নাম ঘোষিত হয়। ২০১৯-এর জুলাই মাসে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে জগদীশ ধনকড় দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর তাঁর সঙ্গে একাধিক বিতর্কে জড়িয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস দল। রাজ্যপালের করা বিভিন্ন মন্তব্য নিয়ে বারবার সমালোচনায় মুখর হয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তারা বারংবার  রাজ্যপালের অপসারণের দাবিও তুলেছে। উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে বাংলার রাজ্যপালের নাম ঘোষণার পর আপাতত নীরবতা বজায় রাখারই সিদ্ধান্ত নিলেন মুখপাত্র কুনাল ঘোষ। উপরাষ্ট্রপতি ভোটে তৃণমূলের অবস্থান কী হবে? সংবাদ মাধ্যমের কাছে তা স্পষ্ট করতে চাননি তৃণমূলের রাজ্যস্তরের মুখপাত্র তথা সাধারণ সম্পাদক কুনালবাবু। 

আজ শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে দেখা করেন তিনি। এরপরেই উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করেন বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। ঘোষণার পর থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। এরপরেই ওই দলের স্বঘোষিত নেতা তথাগত রায় বলেন, “এই খবর পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত এবং পুলকিত। তিনি এই মুহূর্তে অত্যন্ত ব্যস্ত। না হলে ফোনে শুভেচ্ছা জানাতাম। একটু অন্যভাবে শুভেচ্ছা জানিয়েছি। তিনি লড়াকু, শিরদাঁড়া সোজা রাখা এক ব্যক্তিত্ব।” বিভিন্ন সময় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিলেন জগদীপ ধনখড়। রাজ্যে গণতন্ত্র সংকটে, দাবি করেছিলেন তিনি। এদিকে নাড্ডা বলেন, 'আমি আশা করব, তিনি দলমত নির্বিশেষ সবার সমর্থন পাবেন।'

 এদিকে জানা যায় গতকাল পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে নিভৃতে বৈঠক বসেছিলেন। আজ এনডিএ-র উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী জগদীপ ধনকড়ের নাম ঘোষণা করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা৷ শনিবার সাংবাদিক বৈঠকে নাড্ডা বলেন, ‘‘কৃষক-পুত্র জগদীপ ধনকড় হবেন এনডিএ-র উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী৷’’  জগদীপ ধনকড়ের নাম ঘোষণার পর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর টুইট, 'কৃষকের ছেলে জগদীপ ধনকড় নম্র ও বিনয়ী স্বভাবের  জন্য পরিচিত। তিনি সংবিধান সম্পর্কে সচেতন। তিনি আমাদের ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ায় খুশি। আমি নিশ্চিত যে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি দেশকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে সংসদের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।' 

ইতিমধ্যে যা জানা গেছে তা হল জগদীশ ধনকড় সৈনিক স্কুলে লেখাপড়া করেছেন। তিনি কৃষক পরিবারের ফাস্ট জেনারেশনের হিসেবে ওকালতি পাশ করেন। খুব অল্প সময়ে রাজস্থান হাইকোর্টে নিজের কর্মদক্ষতার পরিচয় রেখেছেন তিনি। একইভাবে সুপ্রিম কোর্টেও তিনি নিজের কাজের জন্য খ্যাতি পেয়েছেন। অনেকেই মনে করেন ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপতি পদে দ্রৌপদী মুর্মুর নাম ঘোষণা করে বিজেপি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে খানিকটা এগিয়ে রয়েছেন। রাষ্ট্রপতি প্রার্থী নিয়ে শাসক-বিরোধী ঐক্যমত একেবারেই হয়নি। এনডিএর আদিবাসী প্রার্থীর বিপক্ষে বিরোধীরা লড়াইয়ের জন্য এগিয়ে দিয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, যশবন্ত সিনহাকে। সবচেয়ে বড় কথা প্রধানমন্ত্রী বলেছেন-- তিনি সুপন্ডিত ও কৃষক পুত্র। 

এই রাজ্যে বহুবার ভিন্ন ভিন্ন রাজ্যপালকে বিরোধীরা সরিয়ে দেওয়ার জন্য নালিশ জানালেও এই প্রথম সরকারি একটি দল, ধনকড়কে অপসারণের দাবি তুলেছিলেন। সেই দিক থেকে তৃণমূল সরকার খানিকটা স্বস্তি পেল বলা যায়। তবে অনেকেই মনে করেন আসলে দিল্লি দখলের লড়াইয়ে এখানে জাতপাতের ভোটের কারণে ধনকড়কে বেছে নেওয়া হল। ওদিকে ধনকড়ের ন্যায় আইনজ্ঞ রাজনৈতিক দলে ইদানিং বড় একটা দেখা যায় না। এছাড়া তিনি ইংরেজি শব্দ ভান্ডারটি গুলে খেয়েছেন। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে শাসকের বিরুদ্ধে বলতে উঠলেই চোখা চোখা বিশিষ্ট ইংরেজি শব্দ ভান্ডার থেকে শব্দের সৌন্দর্য তুলে আনা তাঁর স্বভাব ছিল।

উপরাষ্ট্রপতির মতো পদে বসানোর জন্য প্রার্থী করে রাজস্থানবাসীকে যেন বার্তা দিল বিজেপি। ধনকড় সংবিধানটি ভালো করে জানেন। প্রসানিক কাজেও অভিজ্ঞ ও দক্ষ তিনি। ফলে উপরাষ্ট্রপতি পদে তাঁর দক্ষতাকে কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি-দল।
উপরাষ্ট্রপতি পদে আগামী ৬ অগাস্ট নির্বাচন হবে৷
--অলোক কুন্ডু ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...