শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৯

দুটো স্থান থেকে অমরনাথ যাত্রা শুরু হয় (১) পহেলগাম (২) বালতাল । বালতাল থেকে কাছে হলেও খুব চড়া পথ , কষ্টকর । ঘোড়ারা সিধে ওঠে এবং যে বসে থাকে তার অবস্থা প্রাণান্তকর। জম্মু থেকে রেজিস্টার করাতে হয় কোন পথে বাস বা গাড়ি যাবে । প্রায় লক্ষাধিক জ‌ওয়ান পাহারায় একসঙ্গে বাস ও গাড়ি ছাড়ে । ৪/৫ টা গাড়ি প্রতি এসকর্ট ভ্যান । টোটাল বিষয়টি কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় । জম্মু থেকে পহেলগাম বা বালতালে আলাদা আলাদা করে মোড় পরবে যতগুলো গলি মোড় পরবে সেখানে বাড়ির ছাদ থেকে মোড়ে মোড়ে থিক থিক করছে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে জ‌ওয়ানরা ২৪ ঘন্টা ডিউটি পাহাড়ের উঁচু থেকে নীচে সর্বত্র ছয়লাপ সামরিক বাহিনীর জ‌ওয়ানে । বড় বড় মোড়ে কাশ্মীরী পুলিশ তার সঙ্গে । পথে হাজার হাজার স্থানীয় লোকজন আটকে , গাড়ি আটকে বাসস্ট্যান্ডে স্টপে শয়ে শয়ে লোক দাঁড়িয়ে । গলির মুখে উল্টোদিকে তাক করে জ‌ওয়ানদের প্রহরা একদম টানটান নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মোড়া । চোখে দেখে এলাম কারণ আমাদের তিনটি বাস‌ও ওই দলে চশমেশাই থেকে ঢুকে গিয়েছিল তাই নিস্তার পেয়েছিলাম আমরা । কিন্তু যখন মাঝপথে আমাদের তিনটি গাড়ি আমাদের খাওয়াদাওয়া করানোর জন্য একটা ধাবায় স্ট্যান্ড করলো সঙ্গে সঙ্গে জ‌ওয়ানরা এসে আমাদের গাড়ি ঘিরে ফেললো পুলিশ । ড্রাইভারকে অনেক বোঝাতে হলো যে তারা অমরনাথ যাত্রী নয় । শেষে স্থানীয় জনগণ বোঝাতে এবং গাড়িতে কোনও স্টিকার নেই পরীক্ষা করে তারপর ছাড় দিল । সদ্য দেখে এলাম কাশ্মীরকে । প্রথম দেখা অবশ্য যখন কাশ্মীরের সঙ্গে আমার বিয়ের দুবছর বাদে । তখন সবে কাশ্মীরকে দেখছি । ভয়ে কাশ্মীরের হোটেল ফাঁকা । আমরা দুজনে লোকাল বাসে করে ঘুরেছি । যখন যেমন মনে হয়েছে নেমে পড়েছি । চশমেশাইয়ের পথটা ডাল লেকে লোকাল বাসে নেমে হাঁটতে হাঁটতে গেছি । ট্যুরিস্ট বলতে আর‌ও দু চারজন । থেকেছি একেবারে মুসলমান হোটেলে । আন্তরিক ব্যবহার যা কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ দিয়েছিল তা আজ‌ও অম্লান । একমাত্র কাশ্মীরেই এরকমটা হয়েছিল ‌। শীতের জিনিস কিনে ঠকে গিয়ে অন্য দোকানদারদের প্রচেষ্টায় ঠকা টাকা ফেরত পেয়েছি । কোথায় ছিল তখন সিআরপিএফ নিরাপত্তা কেন নিতে হবে বুঝতে পারিনি । তখন সবে শুরু হচ্ছে কাশ্মীরে একটা থমথমে ভাব । ট্যুরপার্টি নেই । ট্যুরিষ্ট নেই । একঘন্টা ধরে হোটেল খুঁজে ফিরে এসে দেখি আমার স্ত্রী কেঁদে ভাসিয়ে ফেলেছে , অনেকটা দেরি করেছি ফিরতে । তার আগে ১২ ঘন্টার জম্মু থেকে শ্রীনগর বাস জার্নি হয়েছে । কিন্তু তার পরেই কদিন আমরা দিব্যি ঘুরেছি । এখনও টুকরো টুকরো কাশ্মীরী খেলনায় ভর্তি হয়ে আছে আমার আলমারি । শিকারাকে যেমন বলেছি তেমনি ঘুরিয়েছে । ডাল লেকের ধারে গিয়ে বসেছি দু তিন দিন । পথের ধারের মার্কেটে। এবারে বহুকাল পরে সেই কাশ্মীরে নিজের দ্বারায় আর যাওয়া সম্ভব হলোনা । গেলাম ডলফিন ট্রাভেলের সঙ্গে , ওদের মালিক তখন রক্তিমবাবু ডাললেকের হোটেল প্যারাডাইসে উপস্থিত ,অমরনাথ যাত্রায় ওনাদের সঙ্গে একটা দল গেছে । আজ দেখলাম আনন্দবাজার ওনাকে উল্লেখ করেছেন । আমি অমরনাথে যাইনি আমাদের যাত্রাপথ তো লাদাখ । লাদাখের পথে অমরনাথের একটি ৩০/৩২ টি বাসযাত্রীদের বিশাল কনভয়ের সঙ্গে আমাদের ড্রাইভাররা ডাললেকের কাছে যে বাইপাস আছে চশমেশাই যেতে ওখান থেকে একেবারে শেষে ঢুকিয়ে দেয় ,ওই দলের মধ্যে যদিও অমরনাথে যাওয়ার গাড়ি আসছে জম্মু থেকে বিভিন্ন ক্যাম্প পেরিয়ে । এইসব যাত্রীদের বাস উত্তর প্রদেশের দক্ষিণ ভারতের । তার মাঝে মাঝে বম ডিজপোজাল ভ্যান,জ্যামার লাগানো গাড়ি , আগেপিছে ১০/১২ খানা জিপে এস‌এল‌আর হাতে আধা সামরিক জ‌ওয়ানরা ও সঙ্গে কাশ্মীরী পুলিশ । দৌড়াদৌড়ি । সংবাদ সংস্থার গাড়ি । কোনও গাড়ি থেমে গেলে তাকে ঘিরে ফেলছে সামরিক বাহিনীর জ‌ওয়ানরা , ওই সময় কয়েকটি বাস টপকে আমাদের ড্রাইভারাও এগিয়ে যেতে থাকে ওভারটেক করে । থামলে তবেই বোঝা যাবে আমাদের গাড়ির সামনে পিছনে স্টিকার নেই , আমাদের পেছনেও ৪/৫ টা গাড়ি ঢুকে গেছে কারণ আগের গাড়ির ড্রাইভাররা চলেছে আধা সামরিক বাহিনীর নির্দেশে । আমরা চলেছি লোকাল ড্রাইভারদের চেনা রাস্তায় । পথে যেতে এই গাড়ির দল থেকে যেই তেল নেওয়ার জন্য একটা গাড়ি পাম্পের ভেতর ঢুকে গেছে তখনই তাকে নিরাপত্তায় মুড়ে দাঁড়িয়ে গেছে গাড়ির সারি । সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির ভিডিও তুলছে পুলিশের টিম । মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক আটকানো । বাড়ির মাথায় গলির লাগোয়া রাস্তায় থরে থরে অস্ত্র হাতে জ‌ওয়ান , স্যাটেলাইট ফোন , ব্যারিকেড দুধারে সাধারণ পথ চলতি মানুষকে প্রায় বন্দীর মতো করে আটকানো । ছবি ভিডিও তুললেও সেগুলো ভারতের নিরাপত্তার খাতিরে দেওয়া গেলনা । এমনকি আমাদের গাড়িও একবার ঘিরে ফেললো যখন মাঝপথে আমাদের গাড়ি একটা ধাবায় ঢুকলো । এই সব সারি সারি দৃশ্যের সামনাসামনি হ‌ওয়ায় অবাক হ‌ওয়ার মতো বিষয় থাকলেও ভয়ের একটা স্রোতের মধ্যে ততক্ষণ ছিলাম যতক্ষণ ওই অমরনাথ যাত্রীদের বাসের কনভয়ে ছিলাম। তারপরেও আমরা পরে বালতালের আগে পর্যন্ত সোনমার্গের হোটেলে যতক্ষণ পর্যন্ত না ঢুকলাম ততক্ষণ দেখতে দেখতে চলছি পথের দুপাশের নিরাপত্তা । কারণ ধীরে ধীরে ট্রাফিক কমে গেলেও সারসার দাঁড়িয়ে জ‌ওয়ানদের দল । এমনকি সন্ধ্যায় যখন একটু রাস্তায় বেরিয়েছি তখনও জ‌ওয়ানরা দূরে দাঁড়িয়ে । এই গার্ড সারাদিন সারারাত চলবে অমরনাথ যাত্রার জন্যে । ভারতবাসীর ধর্মীয় এহেন মাসাধিক ধরে এই আচরণ আমার খারাপ লেগেছে বৈকি । কারণ এইসব কারণে জ‌ওয়ানদের যে পরিমাণ কষ্টসাধ্য অবস্থায় কাটাতে হয় । পথ থেকে বনবাদাড়, মোড় থেকে বাড়ির মাথায় ২৪ ঘন্টা ধরে এই নিরন্তর পাহারা দিতে হয় তা মেনে নেওয়া যায় না । লক্ষ লক্ষ মানুষ অমরনাথের যাত্রী । এই ধর্মীয় আচরণ জুনের শেষ থেকে শুরু হয়ে মধ্য আগস্ট পর্যন্ত চলে অবশ্যই বড় বড় মঠ মিশনের ক্যাম্পগুলো মাসাধিক সময় শতশত ভলান্টিয়ার দিয়ে বালতাল ও পহেলগামের কাছে ক্যাম্প চালায় । লক্ষ লক্ষ মানুষ যায় হেলিকপ্টারে , ডান্ডিতে হেঁটেও যায় হাজার হাজার মানুষ । ঘোড়ায় যায় । প্রথম একমাস বড় বড় মঠ-মিশন এই যাত্রীদের সেবায় হাজার হাজার ক্যাম্প করে থাকেন । এই উপলক্ষে কাশ্মীরীদের একটা অর্থনৈতিক আয় বাড়ে । হোটেল ব্যবসা এই একটা সময়েই বিশাল লাভ ওঠায় । সত্যি যদি অমরনাথ যাত্রীদের জন্য নিরাপত্তা এক নম্বর কারণ হয়ে ওঠে তাহলে এটা কাশ্মীরের জনগণের কাছে এক বড় অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসবে ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...