বুধবার, ১ জুলাই, ২০২০

ভারত চীন যুদ্ধ কোথায় দাঁড়িয়ে

#অলাক_কুন্ডুর_স্পষ্টভাষণ
#চীন_ভারতের_যুদ্ধ_কোন_পথে
------------------------------------------------------
১■ আসুন "মুফত মে" নভেম্বর পর্যন্ত, ডালরোটি ফ্রিতে খাই । সংখ্যা খুব কম, মাত্র ৮০ কোটির জন্য ভারত সরকার বরাদ্দ করেছে। করোনা সারা বিশ্বে হয়েছে ভারতেও হয়েছে‌। বিরোধী পার্টির কুটুর কুটুর করে কামড়ানোকে জব্দ করতেই কি এইরকম পরের পর দানছত্রের বিপুল আয়োজন? মাপ করবেন, বলবেন বড় অমানবিক আপনি মশাই। প্রত্যেকের এখন কাজ কোথায়? খাবে কি ? জানিনা। তবে এত জনহিতকর কাজ যদি সব সময় চলতেই থাকে তখন অন্যান্য শ্রেণির মনেও একটা আশার আলো জাগতে পারে ব‌ইকি! যা দেশের পক্ষে ভালো নয়। তারাও বলবে,তবে তারা কি পেল ? যে পরিযায়ী শ্রমিকদের কেউ কেউ সচ্ছল ছিলেন, গ্রামে যার কোটা বাড়ি তৈরির ক্ষমতা ছিল সেও তো এই মুফত্ মে খানা জরুর মিলেগা-তে নাম লিখিয়েছেন। উনহে ভি বিলকুল মিলনা চাহিয়ে। কামকাজের আর দরকার নেই। শুধু বসে বসে খেয়ে যাও এখানে। আর বিশৃঙ্খলার সঙ্গে সকলে মিলেই করোনা ছড়িয়ে কিছু ভালো মানুষকে মেরে দাও। এ নীতি বহুৎ বড়িয়া, পলিশি ভি বহুৎ অচ্ছা হ্যায়। আর দেশের সমস্ত দলমিলে তা জুলজুল করে দেখতে থাকুক। কীভাবে দেশের আর্থিক দুরাবস্থা তৈরি করছে এই রাজনীতিকরা আমরা দর্শক হয়ে শুধুমাত্র তা গিলতে থাকি। প্রথমে তো ১০০ দিনের কাজ এনে দেশের মানুষের কাজ করার মানসিকতায় একটা বড় আঘাত এসেছিল। বলা যায় জাতির শিরদাঁড়া ভেঙে গিয়েছিল। তারপর নানা রাজ্যের যথেচ্ছ ভর্তুকি সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দিনকে দিন বছরের পর বছর। অনেকেই বলবেন বারে, নিজের সচ্ছলতা আছে বলে বাইরে ঢেরা পেটাচ্ছেন, তো বেশ। কিন্তু আমি ভাবছি অন্যান্য দেশের নাগরিকদের কথা। তারা করোনার সময় কীভাবে দিনগুজরান করেছিল। দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়ে রাজনীতি করে যাওয়া এদেশে সবসময়েই বড়রকম একটা ধান্দা। কিন্তু আজ পর্যন্ত দেখিনি কোনও দলের দেশ গড়ার কাজে তেমন করে গঠনমূলক কোনও কিছু জেগেছে বলে। সকলের নীতি হচ্ছে পুঁজি এনে দেশে সোনা ফলাবো। ৭৩ বছরের বেশিটা রাশিয়ানরা একচেটিয়া ভাবে 
কয়লাখনি উত্তোলনের যন্ত্রপাতি থেকে ভারি শিল্পের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে। নিয়ে গেছে চুক্তি অনুযায়ী ইস্পাত থেকে শুরু করে কয়লা, লৌহ‌আকরিক, বক্সাইট, তামা। আমাদের নিজেদের আর তেমন কিছু করে ওঠা হয়নি। তবু সঞ্জয় গান্ধীর দৌলতে প্রথম মেক ইন ইন্ডিয়া প্রজেক্টের শিল্প মারুতি হয়ে গেল জাপানি থেকে ভারতীয় গাড়ি ( তখন মেক ইন ইন্ডিয়া প্রজেক্টের জন্ম হয়নি ) গাড়ি শিল্পের ভারতে একটা জোয়ার এলো কংগ্রেসের হাত ধরে‌।

২■ ঠিক এই মুহূর্তে আমাদের গায়ে গা দিয়ে টক্কর দেওয়া,লাদাখের গাল‌ওয়ান উপত্যকার বহুচর্চিত নিষ্ঠুর চিন, এই জানুয়ারি মাসে, মাত্র ১০ দিনে ফাঁকা মাঠে একটা হাজার বেডের সমস্ত সুবিধা সহ বিশ্বমানের করোনা হাসপাতাল গড়ে দিল করোনা সংক্রমণের মধ্যেই। ( ভারতে যার সময় লাগতো অন্তত পাঁচ বছর, পশ্চিমবঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালের করোনা চিকিৎসার খরচ বেঁধে দিতে ১০০ দিন সময় লেগেছে)। যা বলতে চাইছিলাম, এই বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানোর নীতি কিন্তু চিনে একেবারেই বরদাস্ত নয়। এখানে বসিয়ে বসিয়ে রেশন না দিলে সমস্ত রাজনৈতিক দল এমন ভাবে হক্কাহুয়া ডাক দেবে যে দেশ রসাতলে যাওয়ার অবস্থা হবে। কোনও জাতীয়তাবোধ নেই, শৃঙ্খলাবোধ নেই, কাজ করে খাবার ইচ্ছা কোনও কালে আমাদের ছিলনা। এখন না হয় করোনা হয়েছে তাই। বামেদের ৩৪ বছরে নিজে দেখেছি একটা গ্রুপ-ডি স্টাফ‌ও একজন কো-অর্ডনেশনের বাম কর্মী হয়ে, শিক্ষকর পেনশন ফাইল নড়াতে পয়সা নিয়েছে। ক্লার্কদের তো পয়সা না দিয়ে কোনও কাজ হতো না। তার মধ্যে নিশ্চিতরূপে ভালো দু-চারজন ছিল বলেই না ৩৪ বছর চলেছিল তারা।

৩■ এখন না হয় সকলের কাজ নেই কিন্তু, ভারতের তো এটা চিরকালীন ব্যবস্থাপনা ভর্তুকি দিয়ে দেশ চালাও। যার সামর্থ্য আছে সেও তাই এখন বিনামূল্যে "রেশন লাও" চাইছে। যার নেই সেও তো নেবেই। আবার কতজনের সাজানো বাড়ি আছে কিন্তু কাজ কোনোদিন ছিল না, তাই তাদের‌ও কিছু নেই।তারাও অনেকেই খেতে পাচ্ছেননা, তাদের কেউ দেখছে না। নেই নেই করে এই করোনার সময় দান পেতে পেতে এক এক জনের ৩০/৪০ কেজি চাল ঘরে পচতে বসেছে এখন। আসলে শৃঙ্খলা না থাকায় সিস্টেম না থাকায় সমস্ত ক্ষেত্রে এইরকম হাল আমাদের। শৃঙ্খলা নেই, বোধ নেই, তাই নীতিহীন যেকোনও ক্ষতিকর কাজ আমরা করে ফেলতে  খুব সহজে পারি। করোনার বিগত ১০০ দিনের মধ্যে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়াকে বহুমুখীভাবে আটকানো যদি যেত, তাহলে এইসময় অনেকটাই সংক্রমণ কমে যেতে পারতো। তার জন্য আর‌ও কঠিন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ছিল কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার জন্য তা হয়ে ওঠেনি এবং সরকারের তা করারও সাহস হয়নি। কিছু করতে গেলে এখানে প্রধান সমস্যা হলো দলীয় ভোট কমে যাওয়া। এ যে ভারতবর্ষের কতবড় অভিশাপ তা বলে বোঝানো যাবে না।

৪■ চিনের সঙ্গে আমাদের তফাৎ এইখানে। চিন কিন্তু নিজেদের সঙ্গে আমাদের‌ও সমস্ত কিছু নখদর্পণে খবর রেখেছে‌। কি ব্যবসা নীতি কি অর্থনীতি কি সমরাস্ত্র নীতি সবেতেই ২০২৫-এর মধ্যে তারা আমেরিকাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। চিনের কাছে তাই ব্যবসা, অর্থনীতি, যুদ্ধের বিষয়ে ভারত অনেকটাই পিছিয়ে আছে। কূটনীতিতে চিনের সঙ্গে পারাটাও খুব সহজ নয়। গতকাল (৩০/৬/২০) ভারত বিমান পাঠিয়েছিল তার কূটনীতিকদের সে দেশ থেকে ফিরিয়ে নিতে, কিন্তু চিন তাদের ফিরে আসতে অনুমতি দেয়নি। সারা বিশ্বের কাছে চিন বোঝাতে চায় তারা ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ চায়না। তারা ভারতের এক ইঞ্চি জমিও দখল করেনি। এত তাদের প্রচারের কায়দা যে রন্ধ্রে রন্ধ্রে তারা বিজ্ঞাপন দিয়ে অর্থ দিয়ে ব্যবসার সুযোগ দিয়ে মিডিয়া,
কাগজ সমস্তটা কব্জা করে নিয়েছে। তাছাড়া ভারতকে কোনঠাসা করতেও চিন, কূটনীতিকদের আটকে দিল বলে মনে করা হচ্ছে। দেখা যাক এই নিয়ে দেশের প্যারালাল কূটনীতিকদের বচন কি হয়? ইতিপূর্বে চিন, ভারতে বসে প্রেস কন্ফারেন্স করেছে এবং গুড়মাখিয়ে বচন প্রকাশ করেছে যা আমাদের দেশের প্যারালাল কূটনীতিকদের মনে আলোড়ন সৃষ্টির দ্বারা আমাদের মগজ পর্যন্ত সেই বার্তা তারা সহজে পৌঁছে দিতে পেরেছে‌।

৫■ মোদি এতবার চিনে গিয়েছিলেন কেন? কেন এত মাখামাখি করা হয়েছিল চিনের সঙ্গে। এইসব তো প্রকাশ্যেই হয়েছে তাই সকলেই এই সমালোচনায় যে প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপিকে বিদ্ধ করবে, এটা জলের মতো সাফ। এই ঢলাঢলি করতে গিয়ে মোদিকে এখন শাঁখের করাত সামলাতে হচ্ছে। কেন চিনের আগ্রাসন নীতি ভারত বোঝেনি, প্রশ্ন উঠেছে। এই ঝাড়ে মোদিজি যারপরনাই কোনঠাসা। ২০-জন সৈন্য মারা যাওয়া এবং গাল‌ওয়ান উপত্যকা ও প্যানগঙ লেকের কিছু অংশ দখল নেওয়ায়
বিরোধীদের প্রশ্নবানে প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি জর্জরিত। কিন্তু এটাও তো সত্য, আমাদের দেশেও তো ভাই ভাই একসঙ্গে থাকতে পারেনা, "দোস্ত দোস্ত না রহা..." মাকেও উপযুক্ত ছেলে দেখেনা। " মেরা পাস মা হ্যায় " এইসব তো হবে আগে থাকতে কেউই বুঝতে পারেননা। নরসিমা রাওয়ের উদার অর্থনীতি ঘোষণার পর থেকে এবং বিশ্ববাজার খুলে যাওয়ায় ভারতে অন্যান্য পরিকাঠামো থাকলেও বড় বড় শিল্প গড়ায় তেমন কোনও উদ্যোগ আসেনি যা দিয়ে 
মোড় ঘোরানো যায়। মূলত মূলধনের অভাব ছিল। মোদিকে যতই গালাগালি দেওয়া হোক না কেন এই সময় চিনের দ্বারাই ভারতের বাজার চাঙ্গা হয়ে ওঠে। মূলধন দিয়ে পরিকাঠামো পরিকল্পনা দিয়ে এমনকি রাতারাতি সারা ভারতজুড়ে এটিএম মেশিন বদল করে অনলাইন সংস্থাগুলিতে পয়সা ঢেলে ভারতকেও মেক ইন ইন্ডিয়া গড়তে নানাভাবে সাহায্য করেছিল। যা গত ৭৩ বছরে ভারতে কখনও হয়নি। রাশিয়া, বিড়লা, গোয়েঙ্কা, টাটার বাইরে যাওয়ার ভারত সাহস করেনি। লতায়পাতায় বিড়লাদের আত্মীয় না হলে এদেশে শিল্প গড়াই যেত না। এর মধ্যে এদেশে ২জি ৩জি ও টেলিকম কেলেঙ্কারি বফর্স কেলেঙ্কারি নিয়ে হৈচৈ হয়েছে। ইদানিং নীরব মোদি, অনিল আম্বানির রিলায়েন্স, মেহুল, সাহার ইন্ডিয়া এইসব ছোটবড় কেলেঙ্কারি দেউলিয়া সাজার মতো কেলেঙ্কারি সমস্ত কিছু হয়ে গেছে। চিনের জন্য ভারতে ব্যবসার ভোল পাল্টে গেছে। কোনও মিত্র বা ভারতীয়দের মাথা থেকে রাজনৈতিক দলের মাথা থেকে ভারতের বাজারে কাজের সুযোগ তৈরি কেউ করে দেয়নি। এখন কেউ কেউ বলছেন এশিয়ার ক্ষমতা হাতে ধরে রাখতে চিন ভারতকে ব্যবসায় জড়িয়ে দিয়ে এতটাই পঙ্গু করে দিয়েছে যে সেখান থেকে উঠে পড়া খুব সহজ নয়। আর এই দোষে নরেন্দ্র মোদি ছাড়া আর কেউ দোষী নয়। তাহলে আগে থাকতে কি এমন উপায় ছিল যা দিয়ে একজন শত্রু হবে না বন্ধু হবে তা আগেই বুঝে নেওয়া যেত। বোঝার সহজ পাটিগণিত কোনও ছিল কি? কীভাবে বোঝা যেত তাহলে ? হ্যাঁ সত্যি কথা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আমলেই অথবা ২০০৬ থেকে গুজরাটে চৈনিক ক্যাপিটাল ভারতে মঞ্জুর হতে থাকে বেশি করে। এর সুবিধা বিজেপি যেমন নিয়েছে তার মসনদ বাঁচিয়ে রাখতে পেরে তেমনি চিনের পয়সায় এখানে ছোট দোকানদার পর্যন্ত অঢেল ব্যবসা করেছে, খুচরো টাকা বাজারজাত হয়েছে। তাবলে কি চিনের কিছু হয়নি ? এমনটা ভাবলে ভুল হবে।
চিনের লাভ প্রভূত হয়েছে‌। কম পয়সায় কোয়ালিটি জিনিস সরবরাহ করে চিন ভিরতের গৃহিণীদের পর্যন্ত মন জয় করে নিয়েছে।

৬■ এই কারণে ভারতের অর্থনীতিও তো ভালো জায়গায় পৌঁছেছিল। মানুষ মনেপ্রাণে আনন্দ পেয়েছে সস্তায় মোবাইল কম্পিউটার এটিএম টিভির ব্যবহার পেয়ে। সেকেন্ড হ্যান্ড ইলেকট্রনিক জিনিস‌ও ফেলা যায়নি। পাড়ায় পাড়ায় সারানোর জন্য স্টল হয়েছে। রোজগার বেড়েছে। গরীবদের পর্যন্ত স্মার্টফোন ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। অ্যাপের আনন্দ উৎসবে ব্যবসার মূলধন থেকে লাভালাভ চিন ও ভারতের সমস্ত পন্থীরাও লুটে নিতে কসুর করেনি। ঘরে ঘরে ৬/৮ টা মোবাইলের সুবিধা কে নেয়নি। এইসবই হয়েছে মেক ইন ইন্ডিয়ার জন্য। যুদ্ধ হলে এইসব কোম্পানি থাকবে না যাবে তা ভবিষ্যত বলবে। যুদ্ধ কিন্তু কিছুতেই কাম্য নয় চিনের থেকে ভারত বেশি বুঝেছে‌। শত শত অনলাইন
কোম্পানি, পণ্য সরবরাহ কোম্পানি এমনকি আর্থিক সংস্থা পর্যন্ত ভারতী অ্যাপ থেকে কারবারে গাড়ি পরিবহণ সংস্থা থেকে বড় বড় মলে পর্যন্ত চিনা অর্থনীতির সুফল দুহাতে লুটে নিয়েছে একদল মানুষ‌। তারা ব্যবসায়ী তারা ধান্দাবাজ‌ও। এই দল এখন কোনদিকে যাবে?
যুদ্ধ হলে এদের ভয় সব থেকে বেশি। এরা চিনা পণ্য থেকে পার্টস, অ্যাক্সেসারিজের বড় ব্যবসা করে থাকে। এরা কিন্তু পণ্য বয়কটের বিপক্ষে।
দেখবেন এরা প্রতিদিন ফেসবুকে হিং ছড়াচ্ছে।
বিদ্রুপ করছে এই বলে, " আব তেরা ক্যা হোগা কালিয়া " বলে। ভারতের জমি চলে গেলে এদের কিছু যায় আসেনা। যেনতেন প্রকারে যুদ্ধ না হয় এদের কাছে ফার্স্ট প্রায়োরিটি‌। যুদ্ধ কে চায় ? একটা ধুয়ো উঠেছে সেটা হলো বিজেপি যুদ্ধ চায়। কিন্তু আমাদের জেনে রাখা ভালো যুদ্ধ হলে বিজেপির গদি চলে যাবে। যুদ্ধ হলে ভারতের এত ক্ষয়ক্ষতি হবে তা আমাদের চিন্তার বাইরে। 

৭■ রাশিয়া যদি বলে থাকে তাদের কাছে ১২ ফুট সাইজের " বোমের বাপ রাখা আছে" আমেরিকার কাছে আর‌ও হাল্কা ধরনের ১০ ফুটের এমন বোমা আছে বাপের বাপ। কিন্তু চিন সম্প্রতি পরীক্ষা করে নিয়েছে যাকে ওরা বলেছে " মা বোমা " এবং বিশাল ভারি একটাই বহন করা যায়। একটা ফেলতে পারলে সমস্ত অস্ত্রের ভান্ডার ধুলিস্মাৎ হয়ে যাবে। আমেরিকার ইলেকট্রোম্যাগনেটিক প্রযুক্তির যে রকেট আছে তার কাছাকাছি তীব্র দক্ষতার রকেট মিশাইল চিন বানিয়েছে বলে পেন্টাগনের কাছে খবর আছে। তাছাড়া আছে প্রচণ্ড শক্তিশালী ডি-১৭ ডেস্ট্রয়ার মিশাইল, যা অক্লেশে ১৮০০ থেকে ২০০০ কিমি দূরের লক্ষ্যবস্তুতে ডেফিনিট আঘাত করবে। তাছাড়া পেন্টাগনের ধারণা হাইপারসনিক স্পিডি মিশাইল‌ও তাদের হাতে যা আমেরিকার মিশাইলের প্রায় সমকক্ষ‌ও। নিজস্ব ওয়েভরাইডার বিমান ৩২০ কিমি যার গতিবেগ। ৭৩৪৪ কিমি উঁচুতে উঠতে পারে যা।
আমেরিকার এয়ারব্লাস্টের সমতুল্য পিপুলস লিবারেশন আর্মির হাতে আছে। সম্প্রতি যে সমরাস্ত্র ভারত রাশিয়া থেকে পেল তা তিনমাস আগেই হাতে পেয়েছে চিন। তাছাড়া সেন্সরের যুদ্ধে যে চিন এগিয়ে থাকবে না এটাও বিরোধিতা করা যাবেনা বলেই মনে হয়। তাই বারুদের যুদ্ধ ভারতকে এড়িয়ে চিনের ভারতীয় বাজার ছোট করে দেওয়াই এখন বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ভারতের সমারাস্ত্র যে নেই, হেলিকপ্টার, মিশাইল যে নেই তা নয় কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে চীন কিন্তু মহাকাশ পাড়িতেও লক্ষ্য স্থির রাখতে পেরেছিল যা আমরা পারিনি। এখন যুদ্ধ হলে পরস্পরের বিমানঘাঁটি, সমরাস্ত্রের গোডাউন ধ্বংস‌ই হবে যুদ্ধের মূল লক্ষ্যবস্তু। তাছাড়াও চিন যেভাবে
বুদ্ধি খেলাতে জানে এবং একের ফর এক নতুন নতুন পথ আবিষ্কার ও আলোচনা চালাতে চালাতে সময় নষ্টের খেলায় ভারতকে জব্দ করে রেখেছে তাও যুদ্ধের নিরিখে তাদের এগিয়ে থাকারই ইঙ্গিত দেয়। ১৬-২৫ শে জুনের মধ্যে লাদাখের আর‌ও বেশ কিছু অংশ তারা কব্জা করে বসে রয়েছে এবং পাকা আস্থানা গড়ে ফেলেছে তাতে করে তাদের পিছিয়ে যাওয়ার কোনও ‌ইঙ্গিত নেই। তারা ভারতের ব্রিজ রাস্তাও আর নতুনভাবে করতে দেবে
বলে মনে হয় না। বড় জোর দু এক কিমি ছেড়ে দিতে পারে কিন্তু সেখানেও ভারতকে কোনও কিছু করতে দেবেনা। 

৮■ ২০-জন সৈনিকের মৃত্যুর জন্য কে দায়ি তা এখন লাখটাকার প্রশ্ন। যদিও আমাদের মিলিটারিদের গোয়েন্দা বিভাগের নড়বড়ে ভাব ছিল। ব্রিগেডিয়ার পর্যায়ে ছেলেখেলা অবশ্যই আছে। সবচেয়ে বড় দোষ ভারতীয় সেনাবাহিনীর বড় বড় অফিসাররা অশান্তির ভয়ে না দীর্ঘ দিন ধরে না দেখার একটা ভান যে করে আসছিল এই ঘটনা কিন্তু তার বড় প্রমাণ।
 টহলদারি ঠিক মতো হতো কিনা এটা নিয়েও
বিস্তর সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ফেসবুকে স্থানীয় মানুষ ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সতর্ক করলেও
স্থানীয় বিজেপি নেতারা সেনাবাহিনীকে নজর দিতে বললেও তারা চুপচাপ বসে ছিল। ঠিকমতো পাহারা না দেওয়া, চৌকি তৈরি না করা সেনাবাহিনী সর্বতোভাবে দায়ি এখন যার ফলে দাগহীন জায়গা দখল করে বসে গেলেও ভারতের কাছে তেমন কোনও জোরালো ছবি নেই। গতকাল বরং চিন সমস্ত জায়গায় বড় বড় প্রতীক টাঙিয়েছে যাতে উপগ্রহ থেকে ছবিতে তা বোঝা যায়। ভারতীয় বাহিনীর এই অপদার্থতা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায়না।
মারপিটের দিন পাঁচঘন্টা ধরে ধস্তাধস্তি চললেও ভারতের কোনও রিজার্ভ বাহিনী রাতেই উদ্ধার কাজে নামেনি। 

৯■ মেক ইন ইন্ডিয়া ব্যর্থ হয়েছে হয়তো। চারটি মোবাইল কোম্পানি যারা এদেশে কারখানা গড়ে চিনের মোবাইল তৈরি করছেন
সেই অপো,ভিভো,জাওমি ও রিয়েল মি-তে কিন্তু ভারতীয়রা কাজ করছে। তাই যতটা টিটকারি ভারতীয়রা করছেন, খেউড় করছেন তাদের যদি জিজ্ঞেস করা হয় আপনারা কি করতেন এই মুহুর্তে ক্ষমতায় থাকলে, দেখবেন তাদের‌ও কোনও উত্তর জানা নেই। কংগ্রেস এই দেশকে শাসন করেছে তাদের‌ও ভাবনা চিন্তা করে এইসব কাটিয়ে উঠতে হবে এবং স্পষ্ট না বললে দেশের লোক ভুল বুঝবেন। ফেসবুকে বামপন্থীরা একদিকে মোদির ঢোল ফাটিয়ে চলেছেন সেইসঙ্গে তাদের বিরোধিতাও হচ্ছে
বামেদের ৩৪ বছর নিয়ে, নন্দীগ্রাম নিয়ে, ইউ পিএ জমানায় সরকার ছেড়ে দেওয়া নিয়ে, জ্যোতি বসু, সোমনাথ লাহিড়ীকে টেনে ধরা ও যন্ত্রণা দেওয়া নিয়ে, কম্পিউটারের বিরোধিতা নিয়ে, বামেদের স্বজনপোষন নিয়ে চটুল পর্ব না মুষলপর্ব চলছে তা ভগবান‌ই জানেন। ফেসবুক চিনের সাধারণ মানুষের দেখার অধিকার নেই তাদের কিন্তু প্যারালাল প্লাটফর্ম আছে সেখানে তারা এইসব খেউড় দেখতে পাচ্ছে এবং বুঝতে পারছে। ভারতকে চেপে ধরার এই উপযুক্ত সময়ে তাদের জনগণের হাতে জিনফিং সাহেব
ভারতের খেউড় তুলে দিয়ে চিনের জনগণের কাছে জাতীয়তা জাগ্রত করছেন নিসন্দেহে। বেশকিছু বামপন্থীদের পোস্ট দেখলাম তারা বলছে, ভারতের সমস্ত জনগণের উদ্দেশ্যে বলছেন, তোমার আপাদমস্তক এখন চিনের তুমি যত‌ই মোবাইল ছোঁড়া ভাঙার চেষ্টা করো কিচ্ছুটি হবেনা, তোমাদের মোদিবাবাকে এবার জিজ্ঞেস করো আর কতবার জিনফিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবে, দোলনায় দুলবে? কংগ্রেস‌ও তার মতো করে বলতে ছাড়বে কেন?
বিশেষকরে সর্বদল বৈঠকে সোনিয়া গান্ধীজির প্রশ্নমালা এখন সারাদেশে ঘুরপাক খাচ্ছে। 
সারা ভারতটা যেন শুধুমাত্র বিজেপির তারাই পণ্য বয়কটে রাস্তায় নামছে তারাই পোড়াচ্ছে।
এটা বড় আশ্চর্য যে সমগ্র ভারতবাসী বিজেপির হাতে এই সুযোগ তুলে দিয়েছে।

১০■ এখন যদি চিন মনে করে কূটনৈতিক পর্যায়ে এমন কঠিন অবস্থায় ভারতকে ফেলে দেবে এবং গলা টিপে ধরবে ভারতের গোলাগুলি ছোঁড়া ছাড়া তখন আর উপায় থাকবে না। তাহলে বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রীর গদিও কিন্তু তখন বেমালুম টলে যেতে পারে, এটাও কিন্তু বড় ভাবনার একটা বিষয় প্রধানমন্ত্রীজির। যুদ্ধ কিন্তু খুব সহজ কথা নয়, ব্যবসা বন্ধ‌ করাও খুব শক্ত কাজ। চায়নার সমস্ত ব্যবসা বন্ধ করে দাও এই আভ্যন্তরীণ প্ররোচনায় প্ররোচিতজনের একটা আভ্যন্তরীণ আনন্দ নিশ্চিত হয়। কিন্তু এটা তো একটা সংসারের বিষয় নয়। আন্তর্জাতিক ও জাতীয়স্তরে ব্যবসা বন্ধ একেবারেই সহজ কথা নয়। যুদ্ধ সাজানো খানিকটা গণিকাবৃত্তির সাজের মতো। সেজে তোমাকে রাস্তায় দাঁড়াতে হবেই। এক পক্ষ যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করলে চার্লি চ্যাপলিনের মতো তো আর তখন একার খেল থাকেনা। সৈন্য সাজাতেই হয়। কিন্তু চীন যদি দখলকৃত জমি আর ফেরত না দেয়, তবে ধীরে ধীরে চিনা পণ্যের ওপর যুদ্ধ না করে ভারতের কোনও তখন আর উপায় থাকবে না। পণ্য বয়কটের এই যুদ্ধ জারি না রাখলে ভারতের সমূহ  অসম্মান ও বিপর্যয় হবে। ভারতের কাছে তো দ্বিতীয় কোনও পথ‌ও খোলা নাই। কারণ ভারত শুধু শুধু বিনা কারণে সৈন্য সাজাতে চায়নি। ব্রিগেডিয়ার স্তরে মিটমাটের আলোচনা পিছিয়ে যাওয়ার আলোচনা চলার মাঝেই নৃশংসভাবে চিনের সৈন্যরা দাঁড়িয়ে থাকা ভারতীয় সৈন্যদের হত্যা করে দেয় ও তারপর ৫/৬ ঘন্টা ধরে দুপক্ষের হাতাহাতি মারপিট এমনভাবে চলে যে আমাদের ২০-জন সৈন্য শহীদ হয়। এরপর যে ঘটনা নিয়ে সরে যেতে বলা সেই খানেই পাকাপোক্ত চৌকি স্থাপন করে বিপুল বাহিনী নিয়ে চিনারা ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় ঢুকে বসে পড়েছে এখন। তাই ভারতকেও অনিচ্ছাকৃতভাবে সৈন্য ও সরঞ্জাম সাজাতে হয়েছে। যুদ্ধ না করলেও
তাকে সমস্ত ব্যবস্থা সেরে ফেলতেই হবে। কিন্তু চিন হয়তো জানে ভারত সহজে যুদ্ধে যাবেনা
তাই যতরকমভাবে তারা ক্রমাগত খোঁচাবে এবং এই খোঁচাখুঁচিতে যে ভারতের একপক্ষের মানুষের কি পরিমাণ বিপুল আনন্দের সঞ্চার হচ্ছে তা খবর কাগজ থেকে নেটদুনিয়া দেখলেই পাত্তা মিলে যাবে। কে লিখছে ওষুধ পাওয়া যাবেনা , কে লিখছে এবার ভারত কি করবে । তবে কি চিন থেকে ওষুধের যৌগ আনবে না। সঙ্গে ফোড়ন, না আনাই উচিত। দ্বিতীয় ফোড়ন চিনা মোবাইল হাতে মোবাইল পোড়াচ্ছো পোড়াও তোমারটাও তো পোড়াতে পারতে। দেশের সর্বনাশ হয়ে গেল চিনা লগ্নির ইয়া ফিরিস্তি। যেন তিনি বিদেশী। খুব আনন্দ হয়েছে এই চিন-ভারত আকচাআকচি তে‌‌। ফেসবুকের আমার এক বামপন্থী বন্ধু বলেই ফেললেন, আরে চিনের বিরুদ্ধে কবিতা লিখলেন যুদ্ধে তো যাওয়া উচিত। কিন্তু যুদ্ধ এখন তো হবে স্যুইচ টিপে আর যুদ্ধের ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে প্রবেশ করলে একেবারে শ্রীঘরে দশ বছর জেল‌। কার‌ও জ্যাত্যাভিমান, স্বদেশ ভাবনা না থাকতে পারে তাই যারা মোবাইল পোড়াচ্ছেন, রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন, অ্যাপ বয়কট করছেন তাদের স্বাভিমানকে অপমান করার আগে আপনাকে আমার প্রশ্ন করা উচিত আপনি কোন দলে আছেন ? ধান্দাবাজ বা এদেল‌ওদলে। তাই আমি এতক্ষণে বোঝাতে পেরেছি এই যুদ্ধ চিনের কারণে চিনের জন্য চিনের দরকারে চাপানো হচ্ছে।

১১■ এটাও মনে রাখতে হবে, চিন কিন্তু আগে কখনও গোলাগুলি ছুড়বে না কারণ তা করলে চিন নিজেকে থামতে পারবে না। তবে আর‌ও ব্যাপক প্ররোচনা তারা দেবে এটা এখন ধরে নিতে হবে। চিন যুদ্ধ শুরু করলে ভারতের প্রভূত ক্ষতি করে তবেই তারা থামবে।
চোরাগোপ্তা মারেও যে আর‌ও ব্যাপক ক্ষতি করা যায় এহেন চতুরতাও তাদের কাছেই আমাদের শিখতে হলো। গোলাগুলি চললে তাদের কাছে ভারতের পরাজয়ের সম্ভাবনা‌ কিন্তু প্রবল। কেন প্রবল তা আলোচনার দরকার আছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ভয়াবহ হতে পারে। কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে চিন এক‌ই সঙ্গে চতুর্দিকে যুদ্ধ সাজিয়ে রেখেছে এবং বাজিয়ে রেখেছে। তারা যুদ্ধে অনেকটা পোক্ত। তারা এখন সবকিছুতে একটা পারফরমার জাতি। অন্তত দু-ডজন সেরা সমর বিশেষজ্ঞ ম্যানেজমেন্ট পাশ, তাদের ঘরে বসে সব সময় অঙ্ক কষে চলেছে। নির্ভুল হবে তাদের সেই যুদ্ধের পরিকল্পনা। যা হয়তো আমাদের ভাবার‌ও বেশি হবে। তবে হলপ করে কিছু বলা যায়না কতটা কীহবে। তাদের ক্যামেরা, লেন্স, সেন্সর, রেডার কিন্তু এমনিতেই ধুরন্ধর বিশ্বমানের। এই যুদ্ধ ডিজিটালি হবে এটা ধরে নিতে হবে। ট্যাঙ্ক, হেলিকপ্টার, রকেট লঞ্চার, কামানের গতিবেগ কতদূর আসবে সত্যিই আমাদের কোনও আন্দাজ নেই। স্যুইচ টিপে তারা যুদ্ধ করবে নাকি চিরাচরিত অস্ত্র সাজিয়ে পর পর এগোবে। শুধুমাত্র ক্ষতি করবে নাকি প্যানগঙটা পুরো এবং আর‌ও ভেতরে এগিয়ে আসবে। এসবই খুব অজানা। চিনের আক্রমণের ছবি ওরা খুব একটা প্রকাশ করেনা। তবে আন্দাজ করা যায় যুদ্ধে চিন খুব ডেঞ্জারাস হবে। ওদের সমর সরঞ্জাম‌ও কোনও হেলাফেলা হতে পারেনা কারণ পেন্টাগন পর্যন্ত ২০১৭-সালে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

১২■ চায়নার এই এগিয়ে আসা ও পরিযায়ী সমস্যা,করোনা মোকাবিলায়,যে রাজনৈতিক দলের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছে তারা বিজেপি ছাড়া আর দ্বিতীয় কোনও দল নয় এটা একদম পরিষ্কার কথা। চিন নড়াচড়া করলে ভারতের অবস্থার সঙ্গে সঙ্গে বিজেপি দলের অবস্থাও এখন আর‌ও খারাপ হবে, এটা না বললেও চলে। বলতে গেলে চিনের ঝড়ঝঞ্ঝায় তঠস্ত থাকার কথা সম্পূর্ণভাবে ক্ষমতাসীন দলের। মুখ দেগলেই বোঝা যায় প্রধানমন্ত্রীর ঘুম উড়ে গেছে। এটা কোনও তাচ্ছিল্যের কথা নয়। আমি দেখবো এই উদ্বেগ আমারও। যারা কাজে আছে, কাজ করছে, তাদেরকেই সমস্ত সমালোচনা সবচেয়ে বেশি সহ্য করতেও হয়, এটাই ভবিতব্য। এই রাতজাগা ও টেনশন আর কোনও দলকেই ভুগতে আপাতত হচ্ছেনা। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ছাড়াও আর‌ও কয়েকজনের ঘুম নেই এটাই স্বাভাবিক ঘটনা। এই দিক থেকে ভারতের বিরোধী দলগুলোর এখন তেমন ভূমিকা নেই, সমস্তটাই এখন বিরোধীদের লাভ। এমনকি চিন যত খেলবে বিজেপির‌ই বেশি রাজনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হব। এটা এখন ছবির মতো পরিষ্কার। চায়না এটা জানেনা এরকমটাও নয়। চিন এটাও বিলক্ষণ জানে, তারা যাকে কমিশন দেব সেই দল তাদের আবার ভারতে ব্যবসা করতে দেবে। দূধে আমে মিল হয়ে যাবে। তাদের কাছে বরং বিজেপিকে শিক্ষা দেওয়ার ফর্মূলা বেশি সহজতর। ইতিমধ্যে তারা দিল্লিতে বসে ভারতবিরোধী প্রেস কন্ফারেন্স করে তাদের সমস্ত বক্তব্য এদেশের মিডিয়া ও কাগজকে খাওয়াতে পেরেছে। প্রেসমিট যুদ্ধে প্রথমেই চিন ভারতেকে নাস্তানাবুদ করে নাড়িয়ে দিয়েছে।

১৩■ প্রকৃতপক্ষে রাস্তার পাগলকে পেছন থেকে খেপিয়ে দেওয়া ছাড়া ভারতবর্ষের কিছু নাগরিকের আর দ্বিতীয় কোনও কাজ‌ও নেই। আমরা মনে মনে যত না দেশকে ভালোবাসি তার থেকেও বেশি ভালোবাসি আমাদের রাজনৈতিক দলকে। মূলত রাজনৈতিক দলের ভুলভ্রান্তি আমরা দেখতে অভ্যস্ত ন‌ই। ভেতরে ভেতরে আমরা কিন্তু চিনা পণ্য বয়কটের পক্ষপাতী একদম‌ই ন‌ই। বরং বয়কট হলে ক্ষমতাসীন দল সমস্যায় পড়বে। এই মজার বিষয়টিও চিনাদের অজানা নয়। চিনাদের এই যুদ্ধে তাদের সঙ্গে তাদের গ্রাহকরাও যে রয়েছে যারা ভেতর থেকে রাস্তায় পাগল ক্ষেপাতে পারে, এটাও একনায়কতান্ত্রিক জিন ফিং ভালোই জানে।

১৪■ সমরসজ্জা হলো একপর্যায়ের কূটনৈতিক যুদ্ধ। সমর সজ্জা সাজিয়ে ভয় পাকিস্তানকে দেখানো গেলেও চিনকে দেখানো অত সহজ নয়। কারণ পাকিস্তান একটা নড়বড়ে ও হীন নেতার অধিনস্ত রাষ্ট্র। যাদের কখনও নিয়ম নীতি কোনোদিন ছিলনা। সেই দিক থেকে চিন ৭৫ বছর ধরে এক‌ই রকমভাবে এবং কম্যুনিস্ট দেশ হিসেবে নিজেদের নতুন ভাবে গড়ে তুলেছে। এমনকি তিয়েনানমেন স্কোয়ারে গণতন্ত্রকামী ছাত্রদের ওপর নির্বিচারে যুদ্ধ ট্যাঙ্ক চালিয়ে জনসমক্ষে হত্যা করে বুঝিয়েছিল খোলা গণতন্ত্র চিনে সম্ভব নয়।
এখন যত হুঙ্কার‌ই আমাদের প্রধানমন্ত্রী দিন না কেন যুদ্ধ করলে তাদের দলের মতো ক্ষতি ভারতবর্ষে আর‌ও কার‌ও হবেনা। সরকারের যুদ্ধ যত না চিনের সঙ্গে তার থেকেও বেশি যুদ্ধ করতে হবে তার নাগরিকদের সঙ্গে,দেশের বিরোধীদলের সঙ্গে। ফড়ে দালাল ধান্দাবাজ
সকলের সঙ্গে। এইসব চিন্তা চিনের একদম নেই। এক কঠোর বুননের প্রশাসন তাদের হাতে আছে। দ্বিতীয় রাজনৈতিক মতের সেখানে কোনও অস্তিত্ব নেই। তাই চিন আগে থাকতেই পেরেক লাগানো লোহার রড দিয়ে পরকে আঘাত করলেও সেখানে সমালোচনার জায়গা নেই। কিন্তু এরকমটা যদি ভারত করতো, তাহলে এখানে প্রধানমন্ত্রী থেকে সেনাবাহিনীর গুষ্টির তুষ্টি হয়ে যেত, এটা গণতন্ত্রের একটা ভীষণ খারাপ দিক। 

১৫ ■ আমাদের দেশের রাজনৈতিক দল যখন প্রশাসন হাতে নেয় তখন যতটা না তারা দেশভক্তির কাজে ব্যস্ত থাকে তার থেকেও দল গোছানোই তাদের মূল কাজ হয়ে দাঁড়ায়। তবুও বলতে হয় ৭০ বছরে বর্তমান সরকারের নির্দিষ্ট লক্ষ্য হয়েছে লাদাখ থেকে অরুণাচলের বিস্তীর্ণ সীমান্তকে মজবুত করতে রাস্তাঘাট ও সেতু নির্মাণে প্রয়োজনীয় ভূমিকা নেওয়া। কিন্তু এই সাজিয়ে তোলার মধ্যে যে সমরাস্ত্রের সঞ্চালনার দ্রুততা থাকে তাই চিনের গা ঘেমেছে এইসব দেখেশুনে। শুধুমাত্র তো যুদ্ধ নয়, সীমান্তের মানুষের কথাও অন্তত ভাবা গেছে। বিশেষ করে অরুণাচলে প্রচুর বাসভূমি আছে। সেই তুলনায় লাদাখ মরুভূমির রুক্ষতা থাকায় পশুচারণদলের কিছু মানুষেরা সেখানে বসবাস করেন,সীমান্ত এলাকায়।  হাজার হাজার পশুর খাদ্য সংগ্রহ ও পশুবিক্রয় করে জীবনধারণ করাই তাদের কাজ। জলের হ্রদ ও নদী থাকায় কিছু কাঁটাগাছ, লতাগুল্ম হয়। সত্যি বলতে কি স্বল্প অক্সিজেন থাকা এইসব জায়গায় মানুষের নতুন বসতি গড়ে উঠতেও শুরু করেছে কোথাও কোথাও। জলের যোগান থাকায় বৃক্ষরোপন হয়েছে  ইদানিং এবং খুব সামান্য চাষের জন্য মানুষ নতুন করে এলাকা তৈরি করছেও। তা ছাড়া রুক্ষ লাদাক দখল করে চিন যদি কিছু নতুন খনিজ আবিষ্কার করতে পারে তো ভালো তা না হলে ট্যুরিজম ছাড়া লাদাখ কেড়ে নিয়েও চিনের জমিজমার লাভ কিছু নেই। কিন্তু ভয় আছে যদি ভারত কখনও আমেরিকাকে জায়গা করে দেয়। চিনের ভয় অমূলক নয়। ভবিষ্যতে এইধরনের সহবস্থান গড়ে উঠতেও পারে। কিন্তু চিন জানে ভারত যতই অস্ত্র কিনুক, যতই পাঁয়তারা করুক একা যুদ্ধ করার সাহস ভারতের নেই। বরং ভারতীয় সরকারি দলের একশোভাগ ভয় আছে এতে। তাছাড়া ভারত এখনও পর্যন্ত নিজে থেকে যুদ্ধে কখনও যায়নি। যুদ্ধের মানসিকতা তাদের একমাত্র পাকিস্তানের জন্য চিনের জন্য নয়। কিন্তু আমাদের অনেকেরই ধারণা যুদ্ধ বুঝি শুধুমাত্র বিজেপির বিরুদ্ধে চিন করছে। এইসব নিম্নমানের ধারণা। সৈন্যসামন্ত, যুদ্ধসরঞ্জাম কোনও একটা দলের নয়। যুদ্ধ হলে ভারতবাসী কি বলতে পারে? না এতে আমি নেই। ওটা তো বিজেপির সরকারের সঙ্গে হচ্ছে। এরকম মাথামোটা চিন্তা ধারা কার‌ও কার‌ও আছে। সহজেই তারা বলেও দিচ্ছে দুম করে। প্রধানমন্ত্রী ঠিক মতো দেখেনি,
চিনের সঙ্গে মাখামাখির ফল। এর থেকে আর ভালো কি হবে ? তবে বিরোধী দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কথা দেশবাসীর বিশ্বাস হয়নি এটা স্পষ্ট করে বলতে পারাই যায়।

১৬■ চিন একটা মজবুত দেশ শুধুমাত্র নয়। অর্থনীতি ব্যবসা আর্থিক মজবুতি ও খানিকটা সমর সজ্জায় পৃথিবীর বৃহত্তর এবং দ্বিতীয় শক্তি। চিনের অর্থনৈতিক মজবুতি থেকে প্রশাসনিক মজবুতি,যুদ্ধের প্রস্তুতির মজবুতি, টেকনোলজি থেকে সমরাস্ত্রের মজবুতি সবেতেই চিন ভেতরে-বাইরে অখন্ড এক বিস্ময়কর শক্তি। শক্তি তার এখন বুদ্ধিতে, কূটনীতিতে। পৃথিবীর দ্বিতীয় শক্তিশালী দেশ হয়ে চিন,আমেরিকার সঙ্গে পায়ে পা দিয়ে ঝগড়ায় সামাল দিতেও জানে। করোনার সামাল‌ও কীভাবে যে ওরা দিয়েছে তাও দেখার মতো। যদিও যখন চীন যেদিন করোনায় তার জনগণের মৃতের সংখ্যা দেখিয়ে ছিল ৫০০ জন (৫.২.২০) তখন তাইওয়ানের একটি সংস্থার ওয়েবসাইটে চিনে মৃতের সংখ্যা তারা দেখিয়েছিল ২৫,০০০ হাজার। পরে ওই সংস্থা জানিয়েছিল ওটা ভুল হয়েছে। কিন্তু কেন এমন ভুল হলো তার কোনও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। যে ডাক্তার পিপিই কিট সম্পর্কে ডাক্তারদের প্রথম সতর্ক করেছিলেন তাকে চিন সরকার জেরা করে ও তার বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়েছিল বলে শোনা যায়। তার দশদিনের মাথায় ওই চিকিৎসকের করোনায় মৃত্যু হয়েছিল। আসলে চিনা লাল কম্যুনিস্ট পার্টির হাতে দেশের শাসনভার থাকলেও তার একনায়কতন্ত্রের একমাত্র মালিক সি জিন ফিং তিনি পরম মমতায় তার অনুচরদের মুড়ে রেখেছেন রাজকীয়ভাবে। সেখানে কড়া শাসন বেষ্টনীর দ্বারা যে প্রশাসন সেখানে চলে আসছে তা খুব‌ই আঁটোসাঁটো। সেখানে সরকারের অনুমতি ছাড়া মতামত প্রকাশ করা এক প্রকার যায়না। কিন্তু ওই চিকিৎসক যে চরম ভুল করেছেন তা তার মনে ড়য় জানা ছিলনা।

১৭■ গতবছর গেছে চায়নার স্বাধীনতার ৭৫ বছর। এই সময়ের কিছু আগে ১৯৯৭-এ চুক্তি মতো হংকংকে বৃটেন চিনের হাতে তুলে দিয়েছে সেখানকার নাগরিকদের তুমুল প্রতিবাদ সত্বেও। হংকংয়ে এখনও সমানে চলছে স্ব-স্বাধীন থাকার প্রচেষ্টা। যদিও হংকংয়ের নিজস্ব একটা প্রশাসন আছে কিন্তু সেই প্রশাসনকে কখন যে চিন সম্পূর্ণ কব্জা করে ফেলবে তার এক বিশ্বাস হীনতায় হংকং ডুবে রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন চলেছে ঘেরাও তিনমাস ধরে, ব্যারিকেড চিনের পতাকায় হিটলারের প্রতিক এঁকে প্রতিবাদ করেছে তারা, এইসব এখনও সামান্য জারি আছে। একদিকে চিনের পুলিশের জলকামানে নীলরঙ চিহ্নিত করে জল ছোঁড়া ( কারা কারা ওখানে উপস্থিত ছিল বুঝতে), রবার বুলেটের ঝাঁকে ঝাঁকে ব্যবহার থেকে ধড়পাকড় চলছে। চিন হংকং নিয়ে নাজেহাল একরকম কিন্তু তাদের হাতে আছে নিপীড়নের হাতিয়ার। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে হংকংয়ের অধিবাসীরা প্রতিবাদ করছে দূর থেকে, সারা বিশ্ব হংকং নিয়ে প্রতিবাদে মুখর হয়েছে। সবে মাত্র কালাকানুন চিন স্থগিত রেখেছে। আমেরিকার নেতৃত্বে চিনকে চাপে রেখেছে। তাইওয়ানকেও চিন নানাভাবে জব্দ করতে চাইছে। তাইওয়ানে আবার আমেরিকার বহু কোম্পানির মূলধন রয়েছে। তাইওয়ানে ল্যাপটপ, মোবাইল ও ইলেকট্রনিকস জিনিস তৈরি হয় এবং আগামী দিনে তাইওয়ান ভারতের ইলেকট্রনিকস ব্যবসায় নাম লেখাতে পারে। ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামের সঙ্গেও চিনের লড়াই অনেক দিনের। জাপানের সঙ্গে একটা দ্বীপ নিয়ে ঝামেলা যুদ্ধের পর্যায়ে। তবুও কিন্তু চিনের আভ্যন্তরীণ প্রশাসনে কোনও চাপ নেই। সরকারের অনুমতি ছাড়া পরিযায়ী শ্রমিকরা ধেই ধেই করে নিত্য করবে এই সাহস ছিল না। না খেতে পেলেও ওখানে কিছুই করা চলবেনা। কাজ করো খাও। উৎপাদন করো। সময়ে কাজে যাও। উৎকর্ষ বোঝাও। সময়ে কাজের পয়সা নাও বাড়ি গিয়ে গান নাচ করো, অপেরা দেখ। প্রয়োজনে অতিরিক্ত কাজ এবং দক্ষতা উজাড় করে দিতে হবে। চিন তার করোনার বিপর্যয় কাটিয়ে উঠেছে উদাহরণ যোগ্য শৃঙ্খলা দিয়ে।

১৮■ গ্রামে থেকে দীর্ঘদিন গ্রামীণ জীবন থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা সি জিনফিং এখন সেই দেশের একছত্র অধিনায়ক। দেশের আজীবন হেডস্যার। চিন তো আসলে একটা বিশাল স্কুলের মতো। যেখানে শৃঙ্খলাপরায়ণতা ছাড়া আর দ্বিতীয় কোনও কিছুর তেমন মূল্য নেই । কম্যুনিস্ট পার্টির একসময়ের আজ্ঞাবহ কর্মী থেকে দেশের সর্বময় কর্তা এখন জিনফিং এখন বুদ্ধি সরবরাহের পৃথিবীর একনম্বর মাষ্টার মশাই। যিনি নাকি মুখে হাসি লাগিয়ে রেখেছেন। একসময়ে তাদের পরিবারকে চিনের কম্যুনিস্ট পার্টি বন্দী করেছিল নির্মমভাবে তাদের হেয় করেছিল তবু জিনফিং দল ছেড়ে দেন নি। দল করাই সেই দেশের সকলের কর্তব্য। একটিই দল। এখন সেখানে একজন‌ই এখন দেশনেতা, তিনি জিনফিং। 
জিনফিং চায়নার তিনটি পদে একসঙ্গে রয়েছেন। চিনা মিলিটারির তিনি চেয়ারম্যান, গণতান্ত্রিক চিনা প্রজাতন্ত্রের তিনি প্রেসিডেন্ট
আজীবন এবং চিনা কম্যুনিস্ট পার্টির তিনি সাধারণ সম্পাদক। ধীরস্থিরভাবে চলাফেরা করেন ও কথাবার্তায় লাগাম দিতে জানা তার বড় গুণ। বাইরের দেশ থেকে ছাত্রদের পর্যন্ত চিনেতে নিয়ে আসছেন। অনেকেই জানেন, চিনে পড়াশোনা করলে অন্তত একজন উঁচুদরের ভালো ডাক্তার হবেন, একজন ভালো ম্যানুফ্যাকচারার হবেন, একজন ভালো ম্যানেজমেন্ট বিদ্যার মাষ্টার তৈরি হবেন যা দিয়ে আক্রমণ শানাতেও পারবেন ব্যবসা গড়ে দিতেও পারবেন। তেমনি পারবেন দয়াশীল হতেও। গরীব অনুন্নত দেশের পরিকাঠামো থেকে ব্যবসার উন্নয়ন কীভাবে একবছরের মধ্যে করে দিতে হয় তা চিনের কাছে শিখতে হবে বৈকি। দেশে কম্যুনিস্ট পার্টি থাকলেও জিনফিং যে এখন মাও জে দংয়ের থেকেও শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন এ কথা তো সারা বিশ্ব‌ও বোঝে। প্রশাসনের সর্বত্র বসে আছে দেশের জিনিয়াস ছাত্ররা যারা পলিটব্যুরোর সদস্য, ম্যানেজমেন্ট পাশের দুঁদে ছাত্ররা আজ দেশের শাসন ক্ষমতায়। তারা জানে চিন একটা বৃহত্তম কম্যুনিটি। তাকে গড়ে তুলতে ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে নজর দিতে হয়েছে মার্কেটিং, ব্যাঙ্কিং ও পরিকাঠামো ব্যবসাতেও। তাই আমরা দেখতে পাই খুব অল্প দিনেই করোনার মোকাবিলা করতে নতুন হসপিটাল তারা খেলাঘর ভেবে বানানোর মতো আহ্লাদে বানিয়ে ফেলতে পারেন মজবুত পরিকাঠামো। এই অহংকার তাদের একটা সম্পদ এবং এই ভাবনায় খানিকটা যে তাচ্ছিল্যের সুরে আছে যার মর্মবাণী চিনের সমস্ত গুণ আছে। সীমান্ত দখল করে নিয়েছে সেই তাচ্ছিল্যের মতো করে। 
যদিও বিহারী রেজিমেন্টের জ‌ওয়ানরা জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়ে আর‌ও ৪০ জনকে ছিঁড়ে খেয়েছে। সেই শোক কিন্তু চিন সাবলীল ভাবে গুপ্ত করে রেখেছে। কারণ তাদের চাই জমি। প্রাণ তুচ্ছ করে যে লড়াই দিয়ে কোনও বিদ্রোহ যখন নেই বুঝতে হবে আর‌ও বড় প্রস্তুতি তাদের চাপা আছে।

১৯■ লাদাখ নিয়ে সর্বদল বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্যে জট পাকিয়েছে সমগ্র পরিস্থিতি। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যটি গভীর সন্দেহজনক হয়েছে। বক্তব্যটি মোটেই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মুখে মানানসই নয়। চিন ভারতের জায়গায় ঢুকে নেই, এই বক্তব্যের মধ্যে একটা জটপাকানো ব্যাপার দেখা গেছে। কিন্তু তা বলে বিজেপির রাজনৈতিক উত্থানের জন্য প্রধানমন্ত্রী এই একটা যুদ্ধপাকিয়ে দিতে চাইছেন এটা কিন্তু মোটেও মানা যায়না। এটা একটা মেঠো গুজব। আসলে ভারতীয় মার্কেটে সবসময় অনেক গুজব চলে আসে। আদতে ভারতবর্ষকে শিক্ষা সংস্কৃতির এবং ঐতিহ্যবাহী দেশ বলা হলেও আমাদের দেশ হলো একটা বড় "গুজবখানা।" বহু গুজবের জন্ম দিয়েছে এই দেশ। বর্তমানে গুজব বেশিরভাগ একটি রাজনৈতিক দলের‌ই সৃষ্টি। গুজব তৈরির জন্য বিভিন্ন দলের আইটি সেল আছে। কিন্তু চিনকে দেখেও আমরা সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে শিক্ষার পরিকাঠামো বদলে দিতে আমাদের আজ‌ও কোনও ইচ্ছা জাগেনা। যুগ বদলের চেষ্টা আমাদের নেই। বরং সমস্ত দল আমরা বসে আছি, এই আশা নিয়ে যে, আমি কীভাবে ভারতের সিংহাসনে বসবো এবং কবে বসবো। আর চিনের সঙ্গে সদ্ভাব ফিরিয়ে এনে আবার চিনের বাণিজ্য বসতে লক্ষ্মীকে কীভাবে জাগরিত করবো।

২০■ রাজনৈতিক দলের কর্তাব্যক্তি থেকে সামান্য সমর্থক পর্যন্ত আজগুবি কথার খেউড় তৈরি করে তা প্রথমে চায়ের দোকানে ছেড়ে দিয়ে থাকেন আমাদের দেশে। কি সেই কথা? কথার মর্ম হলো নির্বাচন পর্যন্ত এইসব যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা চলবে তারপর থেমে যাবে। এইসব বানানো কথাবার্তা বাজারে কান পাতলে চিরকালের মতো এখনও শোনা যাবে। চীন যত হুঙ্কার ছাড়বে এরকম গুজব তত উড়তে থাকবে। এই দেশে, এ যে কতবড় ন্যাকামি, তা ব্যাখ্যা করে কূলকিনারা পাবেন না। শুনলে গা রিরি করে উঠবে কিন্তু কিছুই করা যাবেনা। চিনের মতো ব্যবসায়ী রাষ্ট্র যাদের আছে টানটান প্রশাসনিক দক্ষতা, যাদের আছে ম্যানেজমেন্ট পড়া একদল সমর বিশেষজ্ঞদের নিয়ে টেকনিক্যাল গোষ্ঠী তাদের নিয়ে কি কোনও খেউড় চলে ? আমাদের কি মনে হয় 
যারা আমেরিকাকে চমকাতে পারে তারা নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে হাত মিলিয়ে এখানে যুদ্ধের খেলা খেলবে ? ভারতের এইসব লোকেরা যদি রাজনীতি করে তবে বলতেই হবে এইসব চ্যাঙড়ার জাত আছে বলেই এদেশের দিশেহারা রাজনৈতিক দলগুলোর এত বাড়বাড়ন্ত।
এবড় বিষ্ময়কর প্রশ্ন আজ ভারতবাসীর কাছে।

২১■ আপনি যদি দু-দেশের সৈন্যদের ধাক্কাধাক্কির সময় লক্ষ্য করে একটু দেখেন। তবে দেখতে পাবেন ওদের রাইফেলে কোনো কাঠ নেই আমাদের রাইফেলে কাঠ আছে। আর ওই কাঠ খুব ভারি ওর ভেতরে আবার লোহার পাত আছে। কিন্তু চিনেদের রাইফেল ছিমছাম ও আর‌ও দুর্ভেদ্য তো বটেই। ওইখানেই আমাদের সৈন্যদের মনোবল ভেঙে তো যাবেই এবং  সৈন্যদের তার ভার‌ও তো বহন করতে হবে। এখন আমাদের সৈন্যদের ভারি মেশিনগান বহন করার জন্য আমাদের কোনও ত্যাগ স্বীকার নেই। আমরা এক একজনকে আর‌ও উচ্চমানের রাইফেল কিনে দান করার বা সমূহ অর্থ দেবার কখনও ব্যক্তিগত চিন্তা করিনি। আমরা ভারতবাসী কি তবে শুধুমাত্র দেশের খেতেই জানি। এরকম অদ্ভুত প্রশ্ন করার আমার কোনও অধিকার যে নেই তাও বুঝি। তবে চিনা সৈন্যদের জন্য ওদের একটা আত্মত্যাগ আছেই। হতে পারে সেই আত্মত্যাগের কারণ তাদের দেশের একনায়কতান্ত্রিক কম্যুনিস্ট পার্টির শাসনে 
মোড়া কিছু নিয়ম শৃঙ্খলা।

২২■ চীনের হাতে কাঁচা পয়সা থেকে ডলার কোনও কিছুর অভাব নেই। সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বড় দাদা বনতে আর বেশি দেরি নেই তাদের। একটা সময় ইউরোপীয় দেশগুলোর ছিল অন্য ধান্দা। অন্য দেশে গিয়ে খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাট করো এবং সেখানকার জনগণকে চাকর বানিয়ে খাটিয়ে নাও বিনিময়ে কিছু করণিক তৈরি করো। কিন্তু চিনের আগ্রাসন অন্যরকম। মেশিনারিজ তৈরি করার পর দক্ষ শ্রমিক সৃষ্টির পর তারা তৈরি করলো বিশ্বমানের সস্তার ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের দুনিয়া। যা সারা বিশ্ব গোগ্রাসে গিলছে। ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প‌ও তারা তিন চাররকম করে করছে। ধরুন আমাদের এখানে কবি,শিল্পীদের যে সমস্ত স্মারক দেওয়া হয় তার বড়জোর দাম চিনে ১০/২০/৫০ টাকা আর এখানে সেগুলো বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১০০/১৫০ টাকায়। কিন্তু গ্র্যান্ড হোটেলের অনুষ্ঠানে যে চাইনিজ মেড স্মারক একজন নামজাদা চলচ্চিত্রকারকে দেওয়া হচ্ছে তার দাম কিন্তু আবার ৫০০/১০০০/২০০০ টাকা এবং সেগুলোর ম্যানুফ্যাকচারিংও করছে সেই চায়না। তাহলে ওদের মার্কেট রিসার্চটা একবার বুঝুন। কোন দেশে কোন ক্রয় ক্ষমতার কত লোক বাস করে চীন সেটা উত্তম জানে। আর সেখানে কোনও গুজব নেই। গুজব ছড়ালে , আবোলতাবোল বকলে সেখানে সারাজীবন নিপীড়ন জেল জরিমানা অথবা মৃত্যুদন্ড। জিনফিংয়ের বাবাকে সন্দেহ করে এই রকম নির্বাসিত করাও হয়েছিল। আসলে দেশের শাসন কর্তা থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে হতে হবে অত্যন্ত কড়া প্রকৃতির, হতে হবে অত্যন্ত সুচিন্তিত মনের, হতে হবে দয়াশীল, দানছত্রের মানসিকতাও পরিপূর্ণ থাকতে হবে। গণতন্ত্রের দোষ এখানে উল্টো মানুষের প্রাদুর্ভাব খুব বেশি তাই সরকার এবং বিরোধীপক্ষ দুজনকেই চিনের প্রশাসক জিনফিং ভালো করে চেনেন এবং যুদ্ধের সাজঘরে কি করতে হবে তারাও তা জানে। 

২৩ ■ এই মুহূর্তে অর্থনৈতিক ভাবে চীনের কোনও দৈনতা বোঝা না গেলেও করোনার কারণে এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক কারণে চীন খানিকটা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। চীন প্রথমে শ্রমিক বানিয়েছে। দক্ষ করেছে তাদের। কীরকম ? এক একটা বিষয় নিয়ে দক্ষতার শীর্ষে পৌঁছতে হব। সময় ধরে কাজ কাজ শেষ করতে হবে। কাজের জায়গায় সময়ে পৌঁছতে হবে। দ্বিতীয় স্তর হলো শ্রমিকরাই উন্নয়ন করে দেখাচ্ছে নতুন নতুন মেশিন বানাতে হবে তাদের তবেই জুটবে প্রমোশন। নিরন্তর চলছে মেশিনের কারসাজিতে ফিনিস প্রোডাক্ট বানানো। প্রোডাক্ট এমন হবে তা যেন টেঁকস‌ই হয়, সৌন্দর্য যেন থাকে তার মধ্যে, ছিমছাম যেন হয় শিল্পসুষমামন্ডিত প্রোডাক্ট যেন হয়। এইসব করতে হলে যে সকল র-মেটিরিয়াল দরকার তা বাইরের দেশ থেকে বেশি বেশি করে কিনে দেশে জমা করছে তারা। মেটিরিয়ালগুলি মিশিয়ে কি কি শংকর মেটিরিয়াল বা খনিজ তৈরি করা যায় যা হবে হাল্কা এবং বহনযোগ্য। মানুষের ব্যবহারে কি কি জিনিস লাগে। নিত্য প্রয়োজনের বিষয়টি হাতেকলমে সেই দেশের নেতাদের জানতে হয়েছে। রান্নাঘরে আর কি কি অ্যাক্সিসারিজ দিলে গৃহিণীদের কাজ করতে সুবিধা হয়। ব্যায়ামাগারের অ্যাক্সিসারিজ কি কি তৈরি করলে শুধুমাত্র নয় একটা গোটা ব্যায়ামাগারের পট কীরকম হবে সৌন্দর্য কীরকম হবে। কোথায় কতবড় কি ধরনের আয়না থাকবে, মেঝেতে কি থাকলে ভালো হয়, এইসব খুঁটিনাটি বিষয়ে কোম্পানির কর্মকর্তাদের নাড়িনক্ষত্র জানতে হবে। তাই পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে একজন ভালো ছাত্র চিনে ম্যানেজমেন্ট পড়তে চলে যাচ্ছে। সে জানে চিন থেকে বের হতে পারলে সারা বিশ্বে লাখ পাঁচেকের একটা চাকরি জোটা কোনও ব্যাপার নয়। এখান থেকে ছাত্র যাচ্ছে ডাক্তারি পড়তে চিনে। চিন জানে তার লোকেরা দক্ষ বিজ্ঞানী, দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার দক্ষ শ্রমিক যথেষ্ট আছে তবু যদি বাইরে থেকে আর‌ও দক্ষতা সংগ্রহ করা যায়। আপনার বাড়িতে কিছু সারাবেন আপনাকে চীনের কর্পোরেট সংস্থায় জানাতে হবে। তাদের দক্ষ শ্রমিক নির্দিষ্ট দিনে আসবে সবকিছু নিয়ে আসবে, তার আগে একজন এসে জেনে যাবে আপনার অসুবিধা কোথায়। আপনাকে শিখতে হবে কীভাবে আপনি অনলাইনে নিজের ব্যক্তিগত কাজকারবার করবেন। টেকনোলজির শিক্ষা শুধুমাত্র শিখলেই হবেনা। হাতেকলমে তাকে সেই কাজ করে করে উঠে আসতে হবে। 

২৪■ চীন এখন আফ্রিকায় বিনা পয়সায় বড় বড় শহরে একটা করে বিজনেস সেন্টার তৈরি করে দিচ্ছে চেয়ার টেবিল থেকে বিশাল বিল্ডিং সব করে দিচ্ছে বিনা পয়সায়। কারণ কি ? আফ্রিকার খনিগুলির‌ও আধুনিক পরিকাঠামো ঢেলে সাজিয়ে দিচ্ছে। এমনকি আমি নিজে গিয়ে ঝাড়খণ্ডে দেখে এসেছি সেখানকার লৌহ‌আকরিক তোলার এক একটা ১৮/২০ লাখ টাকার বুলডোজার মেশিন স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে যা চীনের তৈরি। যা ডিজিটালি মেইনটেইন হবে। এমনকি সে কী কাজ করছে তাও সে লিখে রাখছে তার মগজে। যেখানে ২০০০ শ্রমিক লাগতো এবং প্রোডাকশন সেইভাবে হোতো না এখন একটা মেশিনেই তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। সেই মেশিন চালাবার জন্য একজন শিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ার আছে, স্তরে স্তরে আঠারোজন কর্মচারী আছে। একটি মেশিন লোহার পাহাড় থেকে লোহা নিচ্ছে। কতটা নেবে সে জানে। কোনও ব্যক্তি ছাড়াই বেলচা কোদাল ছাড়াই সেই লোহা বোঝাই করে দিচ্ছে ট্রাকে‌ এবং মেশিনটি সামান্য সামনে পেছেন করছে। হাতির শূঁড়ের ভাবনা মগজে এনে শুধুমাত্র স্যুইচ টিপে সব হচ্ছে। আমাদের হুগলী জেলার জাঙ্গিপাড়ায় তাঁতিদের ঘরে তাঁতবোনা দেখতে গেছি। কিছু তাঁতশাড়িতে জেল্লা কেন জিজ্ঞেস করলাম। সেগুলোর দাম‌ও বেশি এবং হাল্কা।
জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম মাঝে মাঝে হাল্কা চাইনিজ সুতো দেওয়ার ফলে দেখতে জেল্লা আসছে। এই যে আমাদের মহিলারা কটনশাড়ি পরছেন, হালের ফ্যাশনে চলছে। আসলে এইসব চিনের সুতো মিশিয়ে দেওয়ার ফলে হচ্ছে। আমরা দেখছি পমপম ঝুলছে বেশ তো তাঁতি বানিয়েছে। না চিন যখন সুতো দিচ্ছে তারাই এঁকে ডিজিটাল ডিজাইন করে শাড়িতে পমপম করে দিচ্ছে। তারাই রঙ ম্যাচিং করে দিচ্ছে এমনকি এখন শাড়িও চিন বানাচ্ছে। প্রয়োজনে আফ্রিকার মেয়েদের জন্য চ‌ওড়া শাড়ি। আসলে গোটা দেশে শ্রমিকশ্রেণিকে চিন এমন দক্ষতা দিয়েছে যারা এদেশের ইঞ্জিনিয়ারদের বাবা এক একজন। একটি জেমসক্লিপের যে সৌন্দর্য থাকতে হয় অনেকদিন যে তাকে ঝাঁ চকচকে থাকতে হয় এই বোধ চিনের ম্যানেজমেন্ট গড়ে দিয়েছে। ম্যানেজমেন্ট তৈরি করেই ক্ষান্ত নয় তদারকি করছে। কারা তদারকি করছে। ম্যানেজমেন্ট পড়া কম্যুনিস্ট পার্টির নেতারা। আমাদের মতো বক্তৃতা দেওয়া গুজব তৈরির দেশ নয়। আমাদের রাজনৈতিক দলের নেতারা সবসময়
এখানে বক্তৃতা দিয়ে টিঁকে থাকতে চায় তার ৯০% গুজব। হ্যাঁ পরিষ্কার বলছি এই গুজব বিজেপির লোকেজন‌ও তৈরি করতে সমান পারদর্শী। যে দল সরকারে থাকেনা কিংবা সরকারে থাকে তাদের একটাই কাজ গুজব তৈরি করা, গুজবে দক্ষ করে গড়ে তোলা, এক একজনকে গুজবমাষ্টার হিসেবে তৈরি করা।

২৫■ চিন তার ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পকে যে উচ্চস্তরে নিয়ে গেছে সেখানে কিছুমাত্র কমজোরি হলেই চীনের উৎপাদিত দ্রব্য দেশে পড়ে থাকবে। যদি তা হয়‌ও তাহলে চীনের অর্থনীতিতে তার ছায়া পড়বে। সেটা কিন্তু চিন হতে দেবেনা। সমস্ত জিনিস সেখানে কখনোই সরকার তৈরি করেনা। তদারকি করে। শিল্প সুষমা, সৌন্দর্য বোধ , তুল্যমূল্য বিচারে বাজারে কতটা তার গ্রহণযোগ্যতা আছে এবং পরিবর্তন হচ্ছে কিনা এইসব নিয়মিত দেখে তারা। পয়সা আসলেই হবেনা শুধুমাত্র গ্রাহক ড়লেই হবে না। গ্রাহক পর্যাপ্তভাবে নির্ভরশীল কিনা সেই ভাবনায় বিচ্যুতি ঘটালে খাটালে বাস নির্ঘাত।

২৬■ ইতিমধ্যে বলেছি এইসময় চীন নানাভাবে যুদ্ধে জর্জরিত হয়েছে। জাপানের সঙ্গে উপকূলীয় রক্ষায় চীন ও জাপানের সম্পর্ক ভালো নয়। চীন রাশিয়া সীমান্তে নাগরিকদের একটা পারাপারের সমস্যা রয়েছে চীনের সঙ্গে
তবুও রাশিয়ার যুদ্ধাস্ত্র কেনা ও চীনের গৃহস্থালির সরঞ্জামাদি রাশিয়ায় রপ্তানির সূত্রে একটা রফাসূত্র বজায় আছে। হংকং ও তাইওয়ান নিয়েও চীন এক প্রকার জেরবার। সেকারণে চীন কম ক্ষমতাশালী নেপাল, ভূটান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, মালদ্বীপ ও পাকিস্তানকে বিশাল সাহায্যের হাত বাড়িয়ে রেখেছে। নানা সাহায্য দিয়ে আমাদের‌ও  আমাদের দেশীয় প্রোডাক্টের ওপর নির্ভরতা কেড়ে নিয়েছে বেশ কিছুটা চীন। শুধুমাত্র টিকটক নয় আমরা শতভাগ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি চিনের ওপর। সেফটিপিন, জেমসক্লিপ,
মাঞ্জা, থালা বাটি গ্লাস, প্লাই, ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম, তালাচাবি, চাবির রিং, মানি ব্যাগ থেকে চটি জুতো বেল্ট, মেয়েদের বিভিন্ন দামের ব্যাগ, ইমিটেশন গয়না, ঘর সাজানোর শোপিস, উপহারের স্মারক, কাপ থেকে ঘর মোছার সরঞ্জাম, ঘর পরিষ্কার করার, গাড়িতে জল দেওয়া ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার সামগ্রী প্রায় সব কিছু আমাদের ওপর সস্তায় ছেড়ে দিয়েছে। এছাড়াও তো ওষুধের বেসিক যৌগ থেকে রেল এটিএম ইলেকট্রনিক ইলেকট্রিক বৃহত্তম সরঞ্জাম শৌখিন বস্তুর বিশাল সম্ভার ছুরি কাঁচি টর্চ কিছুই বাকি নেই আমাদের চিন দীর্ঘদিন ধরে দিয়ে চলেছে। ভারতের এই ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসনে নিজেদের এতটাই তারা এগিয়ে রেখেছে যে তাদের সমরাস্ত্রের সাংঘাতিক প্রতিঘাত যে কত বড় হবে এবং কত দূর পর্যন্ত হতে পারে তা আমরা এখনও কিছুই জানিনা। তারা কতটা বুদ্ধিধর হলে বোমাপিস্তল গুলিবন্দুক ছেড়ে দিয়ে শুধুমাত্র লোহার রডে পেরেক ওয়েল্ডিং করা একরকম মারণ অস্ত্রের আঘাতে আমাদের ২০ জনকে শহীদ করে দিতে পারে সেই আন্দাজ‌ও করতে পারিনি। 

২৭■ চিন যেভাবে ছোটখাটো দেশকে অর্থনৈতিক সাহায্য দিয়ে চলেছে তাতে এই মুহূর্তে ভারতের বিপদে কাউকে পাশে সহমর্মি হিসেবে আমরা পাবো কিনা খুব সন্দেহ আছে। তাছাড়া ১০ দিনে যারা হাসপাতাল গড়ে দিতে পারে সেই বিশ্বমানের পরিকাঠামো রচনা করতে পারার ক্ষমতায় তারা এই মুহূর্তে গাল‌ওয়ান উপত্যকায় স্থায়ী ঘরদোর বানিয়ে ফেলেছে এই কদিনে। যেখানে আমাদের ২০ জন সেনাকে নির্মমভাবে ওরা হত্যা করেছিল সেখানে ভেঙে পুড়িয়ে দেওয়া আস্থানাকে পুণরায় তারা গড়ে তুলেছে। ১৫/১৮ কিমি তারা এগিয়ে এসেছে যখন এবং দখলে রেখেছে যখন তখন এই মুহূর্তে পৃথিবীর কাছে নিজেদের বৃহত্তম শক্তি প্রমাণ করতে আর পিছিয়ে যাবে বলে মনে হয়না এটা এখন স্পষ্ট ইঙ্গিত।
আমার ধারণা ভারতের কিছু তৈরি রাস্তা ও ব্রিজ‌ও চিন দখলে রাখতে পারে। তারা বসে থাকবে এবং উঠবে না। চিন ভারতকেও পিছিয়ে আসতে বাধ্য করবে। চীনের সঙ্গে এই ঝঞ্ঝাটে সমরাস্ত্রের প্রয়োগ হলে ক্ষয়ক্ষতি ভারতের বেশি হবে। চিনা সেনাবাহিনী এই দিক থেকে মরিয়া। তাদের দেশে ফিরলেও সেখানে কোনও গণতন্ত্র নেই মৃত মানুষের মতো থাকতে হবে তার থেকে ভারতের সেনাবাহিনীকে শিক্ষা দিয়ে মরা তাদের কাছে অনেক বড় সাফল্য। এখন আমেরিকা রাশিয়া বৃটেন ফ্রান্সের এখানে নাক গলিয়ে কিছুমাত্র লাভ নেই। মার্কিনীরা বড় জোর তাইওয়ান ও হংকংয়ের জন্য সেখানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করবে। লাদাখে আমেরিকার সেনা এসে থাকলে তার জন্য আমরাই বেশি চেঁচাবো আমেরিকানরা তা ভালো করেই জানে। অত‌এব এই মুহূর্তে লাদাখে জমি ছেড়ে দেওয়াই হবে আমাদের ভবিতব্য। আর কোন আমলে কত জমি চিনের কাছে আমরা কতটা ছেড়ে দিয়েছি এই আলোচনায় আমরা এখন নরক গুলজার করতে থাকি কারণ এর বেশি করতে যাওয়া আমাদের বিপদের এখন।

২৮■ এই অবস্থায় ভারতের বৃহত্তম দায়িত্বশীল দল হিসেবে কংগ্রেসের উচিত হবে "মেকিং ইন্ডিয়া" এই নতুন শ্লোগান তুলে 
সরকারকে শিক্ষা নীতি বদলানোর দাবি তোলা ও চায়নায় উচ্চ পর্যায়ের ডেলিগেশন নিযুক্ত করে বিষয়টি বোঝার। ভারতবর্ষ তাদের‌ও দেশ‌। যুদ্ধ থেকে চিনকে নিরস্ত্র 
করাই সব থেকে বড় কাজ এখন।
২৯■ ভারত বরাবর শান্তির রাষ্ট্র। গান্ধীজি, শ্রীরামকৃষ্ণ স্বামীজি নেতাজির দেশ। বুদ্ধ গান্ধী বিবেকানন্দের দেশ হিসেবে বিখ্যাত। হিমালয় তো আসলে আদি ভারতীয় ভূখণ্ড। যুদ্ধের প্রস্তুতি তুঙ্গে হলেও যুদ্ধ বা শান্তির পক্ষে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক লোকেদের কোনও মতামত এখনও পাওয়া যায়নি। ধরে নিতে হবে কেউ আমরা যুদ্ধ চাইনা। কিন্তু ভারতের একাংশ চান যুদ্ধ হোক। যুদ্ধে ভারতের ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে বিজেপিও ভেগে যাবে এইরকম ক্ষতিকারক কামনায় মালা জপছেন রাতদিন এরকম মানুষের কিন্তু অভাব নেই। তারাই বলছেন চায়নার ওষুধের জন্য চায়নার মূলধনের জন্য ভারত শেষ হয়ে যাবে এবং চায়নার ব্যবসার তথ্য দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করছেন কিন্তু সেখানে তাদের নিজস্ব কোনও মত লিখছেন না। এটা এক ধরনের চালাকি। ভারত পারেনি যতটা তার ৭৩ বছরের অনেক ভুল আছে। কিন্তু যা পেরেছে তা যদি ভুল হয়ে থাকে তাহলে কীভাবে তার বদল হবে সেই কথা বলো রাজনীতি।

৩০■ যুদ্ধ মোটেও কাম্য নয়। কারণ ২০ জন ৪০/৪৩ জনকেও মেরেছে‌। ক্ষতি দুদলের। যুদ্ধের আগে চিনের ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে।
যারা বলেছিল ভারতের ব্যবসায় চিনকে হঠানো সম্ভব নয়। আমি ধন্যবাদ দেব মহারাষ্ট্র সরকার, রেল, টেলিফোন, রোড এমনকি গঙ্গা নিয়ে অ্যাকশন প্ল্যানে ভারত সরকার তড়িঘড়ি
সমস্ত মূলধন যুক্ত না করার টেন্ডার ফিরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা নিয়েছেন। ভারতের সামনে অর্থনৈতিক যুদ্ধে চিনকে গুটিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত আর‌ও নিতে হবে। বিশেষ করে যারা ভাবেনা এটা বিজেপির শুধুমাত্র দেশ তাদের স্বাভিমান জাগ্রত হয়েছে। জাতীয়তাবাদী জাত্যাভিনান জাগ্রত হলে ভারত সব পারবে
প্রাণের বিনিময়ে যুদ্ধ‌ও করবে। যতই চীন বলিয়ান হোক না কেন। শেষ বিন্দু রক্ত দেওয়ার কথা তো ইন্দিরাজি বলেই গিয়েছিলেন। ব্যবসা বন্ধ, পণ্য বয়কট, থেকেই ভারতবাসী ওদের কোনঠাসা করবে। ভারত মানে আয়তনে নাগরিক সংখ্যায় পৃথিবীর দশটা দেশের সমান। চিনকে জব্দ করতে তাই অর্থনৈতিক যুদ্ধ ভারতকে জারি রাখতে হবে। ভারতবাসী মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকলে আর প্রধানমন্ত্রীর দোষ তুলে কচু কাটা করতে থাকলে চিন আর‌ও পেয়ে বসবে। জমি চিন ছাড়বে কিনা এটা লাখ টাকার প্রশ্ন। ইতিপূর্বে
বহুবার চিন ভারতে আগ্রাসন করেছে। শুধুমাত্র ওই নিয়ে পড়ে থাকলে আজ চলবে না। ভারতকেও অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়াতে হবে‌।
©® অলোক কুন্ডু

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...