মঙ্গলবার, ১১ আগস্ট, ২০২০

#করোনায় অনলাইন শিক্ষা

#ধান_ভানতে_শিবের_গীত নয় 
#অলোক_কুন্ডু

লকডাউন বা বাফারজোন রেখে দিয়ে বা এইসব পুরোপুরি উঠতে হয়তো জুন পেরিয়ে যেতেও পারে। যদিও স্কুল আপাতত ১০ জুন পর্যন্ত বন্ধ আছে। তবুও বিশেষ করে এই বছর ছেলেমেয়েদের স্কুল পাঠাতে অভিভাবকদের একপ্রকার অনীহা আছে। তীব্র আপত্তি আছে। বহু ছেলেমেয়েদের বাবা মা এবছর কেরিয়ার চান না। তারা অনলাইনে শিক্ষায় প্রচণ্ড খুশি হয়েছেন। এখন "ভয়াবহতা" এই বিষয়টা যদি মাথায় রাখা যায় তবে ছাত্রছাত্রীদের ঘরে বসে পড়াশোনা করাটাই সম্ভবত সঠিক সিদ্ধান্ত হবে। এছাড়া কোনোভাবে যদি একটি ছাত্রছাত্রী এই সংক্রমিত হয়ে পড়ে তবে একজন নয় হাজার হাজার ছাত্রছাত্রীরা সমূহ বিপদের মধ্যে পড়ে যাবে। সেক্ষেত্রে অনলাইন লেখাপড়ার গুরুত্ব এখন অপরিসীম। কোনও অবস্থাতেই এই ব্যবস্থাপনার বিরোধিতা করার সময় এখন নয়। শিক্ষক সংগঠন থেকে অনলাইনে শিক্ষা পৌঁছনোর হিসেবটি অনেক কমিয়ে দেখানো হচ্ছে। শিক্ষক সংগঠন গুলির সম্যক ধারণাই নেই গ্রাম সম্পর্কে। তারা জানেনা কতজন মানুষের হাতে স্মার্টফোন আছে। প্রকৃতপক্ষে এটি ৬০% ছাত্রছাত্রীরা অনলাইন ১০০% সুযোগ পাচ্ছেন 
যেটা তারা মাত্র ১৫% বলছেন ছাত্রছাত্রীর হিসেবে। সরকার চাইলে এই শিক্ষা আর‌ও প্রসারিত করতে পারে। পাড়ায় পাড়ায় যাদের কম্পিউটার আছে তাদের ব্রডব্যান্ড কনেকশন দিয়ে বা অন্য কোনও ভাবে ক্লাবের মাধ্যমে অনলাইন পৌঁছে দিয়ে অনলাইন শিক্ষা গরীব ও পিছিয়ে পড়াদের কাছে পৌঁছে দিয়ে শিক্ষার আদানপ্রদান 
চালু রাখা যেতে পারে এটা এমন কিছু কঠিন কাজ নয়। লোকাল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের, যাদের কম্পিউটার আছে  তাদের সাহায্য নিলে এই অনলাইন ব্যবস্থায় যে ফাঁকফোকর আছে তা ভরাট হয়ে যাবে। তারাও এখন অনলাইন শিক্ষা দেওয়া থেকে সাহায্য করার ব্যাপারে উদ্যোগী। উপযুক্ত পারিশ্রমিক দিয়ে সাময়িক তাদের কাজে লাগালে তারাও এক একজন গরীব ও পিছিয়ে পড়া ছাত্রছাত্রীদের তৎকালভাবে সাহায্য করতে পারবেন। শুধুমাত্র সরকারকে সঠিক পরিকল্পনা ও আয়োজন করতে হবে।  
এই নিয়েও জোর তর্ক শুরু হয়েছে যে, অনলাইনে প্রকৃত শিক্ষা হয় কিনা? যদিবা হয় তবে তা কি ক্লাস টিচিং মেথডের মতো কতখানি শিক্ষাশ্রয়ী হতে পারবে। প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসগুলি তবে কীভাবে হবে? যুক্তি পাল্টা যুক্তিতে ছাত্রছাত্রীদের গ্রহণযোগ্যতা চিরকাল‌ই চাপা দেওয়ার একটা চেষ্টা চলে থাকে। অনেকে এও বলছেন যে, গ্রামের ছেলেমেয়েদের কাছে অনলাইন শিক্ষা পৌঁছতে পারছে না। কিংবা প্রথম প্রজন্মের কাছে, শ্রমজীবী পরিবারেও ঠিক মতো পৌঁছনোর পথ নেই। আসলে আমাদের পশ্চিমবঙ্গ‌তেই সম্ভবত অনলাইন টোটাল ব্যবস্থাপনা সমূহ পিছিয়ে আছে। 
মুম্বাই, তামিলনাড়ু, কেরল, হায়দ্রাবাদ,
বেঙ্গালুরু অনেকটাই এগিয়ে গেছে এখানে। স্মার্টফোনের অভাব কিন্তু গ্রামেও নেই। কিন্তু শিক্ষার কাজে সেই ফোন ব্যবহারের কার‌ও কোনও উদ্যোগ তো নেই। বরং কিছু অবাস্তব নমুনা তুলে বন্ধ করার উদ্যোগ নিতে কিছু মানুষ চরম উদ্যোগী। স্মার্টফোন নেই বলে অনলাইন শিক্ষা নেওয়া যাচ্ছে না এই বার্তায় যথেষ্ট অবিবেচনা রয়েছে। এ বিষয়ে মান্ধাতা আমলের এক ভ্রান্তি রয়ে গেছে আমাদের মনে। এটাও নিশ্চিত যে যাকে হাতেকলমে বোঝানোর মতো কেউ নেই, এইরকম পরিবারে, শ্রমিক এবং আনপড় অভিভাবক যেখানে দর্শক, সেখানেও অনলাইন শিক্ষায় সমূহ পাঠক্রম পৌঁছনো সম্ভব নয়। তবুও এই আপতকালীন সময়ে ঘরে বসে শিক্ষা নেওয়ার কাছে আর দ্বিতীয় রাস্তা আর কিছু খোলা নেই। পারলে সেই ছাত্রছাত্রীদের সার্ভে করে তার নেটে কার্ড ভরে দিক সরকার। এখন যদি লকডাউন অগাস্টের আগে না খোলে তাহলে কি শিক্ষা যেভাবে চলছে তাতেই আমরা সন্তুষ্ট থাকবো ? নাকি অনলাইন নিয়ে তর্ক করে যাবো ? না, শিক্ষায় যেমন সন্তুষ্টির কোনও সীমা নেই তেমনি লকডাউন ভেঙে কবে সুস্থ জীবনে আমরা ফিরে আসবো, আগামী তিনমাসের আগে তার‌ কোনও আশা নেই। তাহলে প্রথমেই এখন আমাদের সিলেবাসকে কমপ্যাক্ট বা স্মার্ট করে নিয়ে বা ছোট করে নিয়ে আর একটি দ্বিতীয় পথ স্কুল শিক্ষায় আমরা অন্ততঃ খুলে ধরতে পারি। প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলিকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রেখে শিক্ষকদের তার বাড়ির কাছের মাধ্যমিক শিক্ষার কাজে লাগানো যেতে পারে। কারণ কনটেইনমেন্ট জোন থেকে বাইরে বেরিয়ে শিক্ষকদের স্কুলে যাওয়ার নিষেধাজ্ঞা আছে। তাহলে শিক্ষক অপ্রতুল হ‌ওয়ার আশংকা আছে। কীভাবে তা হবে তার ফর্মূলা জোগাড় করে নিতে সরকার উদ্যোগী হবে তার সরকারি ও বেসরকারি পরিকাঠামোর মধ্যে। সিলেবাসকে লকডাউনের উপযোগী করতে হবে। সেই ক্ষেত্রে কিছু ছাঁটাইয়ের প্রয়োজন হলে তাও করতে হবে। এখানে তৃতীয় পক্ষ হচ্ছে ছাত্রছাত্রী এবং মূলত তাদের উপস্থিতি নিয়েই প্রধান সমস্যা দেখা দিয়েছে। এখন যদি স্কুল খোলে তবে তাদের ক্লাসকে বিন্যস্ত করতে হবে। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি এবং নবম থেকে দ্বাদশ দুটি ক্লাস্টারে মাধ্যমিক শিক্ষাকে ২০২০ শিক্ষাবর্ষে ভাগ করে বিদ্যালয়গুলিকে অক্টোবরের পুজোর ছুটির আগে ৩০/৪০ দিনের ক্লাস্টার ক্লাস করানো যেতে পারে। সেক্ষেত্রে এক‌ই ক্লাসকে দুটি সিফ্টে ভাগ করা যেতে পারে। স্কুল সময়ের সামান্য পরিবর্তন করে দুটো সিফ্টেও স্কুল বসাতে পারা যায়। ক্লাসগুলিকে ২০/২৫ জনে ভাগ করে দিতে হবে। সকাল ৯.০০ টা থেকে ১১.৪০ পর্যন্ত ও ১২.২০ থেকে ৩.০০ পর্যন্ত। এখানেও রোজ ক্লাস করা যাবেনা সপ্তাহে দুই বা তিনদিন করে। তিনদিন স্কুল ছুটি থাকবে। সরকারি ভাবে ছেলেমেয়েদের টেস্ট করে একে একে স্কুলে ঢোকাতে হবে। স্কুলে কোনও টিফিন মিড ডে মিল হবে না। স্কুলে ও বাথরুম গুলিতে পর্যাপ্ত জল ও স্যানিটাইজার রাখতে হবে।
সেখানে যাওয়ার বিষয়ে কড়াকড়ি করতে হবে। অভিভাবকদের লিখিত জানাতে হবে বাড়ি যাওয়ার পর ছাত্রছাত্রীদের পোশাক পরিবর্তন গা ও হাত ধোয়ার প্রতি মনোযোগ দেওয়ার। স্কুলেও বেশ কিছু আপতকালীন মাস্ক রেডি রাখতে হবে। মাস্ক না পরলে স্কুলে আসা যাবে না। এই সামান্য সময়ে ছোট ছোট সাময়িক মূল্যায়ণ চালু রেখে পার্বিক মূল্যায়ণ বন্ধ রাখতে হবে। শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মূলত শিক্ষা নিয়েই আলোচনা চলবে। ভূগোল বিজ্ঞানের ছাত্রছাত্রীদের প্র্যাকটিক্যাল ক্লাসগুলি আপাতত স্থগিত রাখতে হবে। কিন্তু গণিতের জন্য ভালো ছেলেমেয়েদের জন্য আরও অনলাইন ব্যবস্থা করে শিক্ষাকে ফলপ্রসূ করতে হবে। পঠনপাঠন শেষ হলে অতিমারি কমে এলে সরকার ও বিদ্যালয়গুলির স্থগিত সিলেবাস ও পরীক্ষা এবং মূল্যায়ণ সূচি নতুন করে তৈরি করবে। যদি কনটেইনমেন্ট জোনের সংখ্যা কমতে থাকে তবে সেপ্টেম্বরে নভেম্বর ,ডিসেম্বর ও জানুয়ারি ২১ এই চারমাসে পাঠ্যসূচি সমাপ্ত করতে হবে। ফেব্রুয়ারিতে শেষ ও চূড়ান্ত মূল্যায়ণ ও টেস্টগুলি শেষ করে মার্চের গোড়ায় ক্লাসগুলি পুণরায় ২০২১ এর শিক্ষাবর্ষে প্রবেশের সম্ভাবনা ও আশা নিয়ে সরকারের তরফে একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা রচনা করতে হবে। এই প্রসঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের হস্টেলগুলিও যেমন স্কুল খুলবে সেইমতো ব্যবস্থা করবে। হস্টেল কর্তৃপক্ষ নিজে থেকে না চাইলেও স্কুল কলেজ খোলার সঙ্গে অবধারিত ভাবে ছাত্রছাত্রীদের হস্টেল‌ও খুলবে। হস্টেলে ঠিক মতো বাথরুম ও স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যবস্থা না থাকলে যারা হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করবে তাদের আলাদা কীভাবে স্থানীয় ধর্মশালায় বা হোটেলে রেখে পড়াশোনা করানো যায় তা নিয়েও সরকারকে চিন্তা করতে হবে। আর যদি এমন হয় কনটেইনমেন্ট জোনের সংখ্যা বেড়ে যায় তবে সাইবার কাফেগুলি খুলিয়ে অথবা সাময়িকভাবে সাইবার কাফে নতুনভাবে সৃষ্টি করিয়ে তাদের তিনমাসের জন্যে অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত করে অনলাইনেই শিক্ষা ব্যবস্থা চালু রাখা অনেক সাবধানতা অবলম্বন বলে ধরে নিতে হবে। বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের অনলাইনে শিক্ষায় আপত্তি থাকলেও এই অতিমারীর আবহাওয়ায় অনলাইন শিক্ষাই একমাত্র, নির্দিষ্ট ও বলিষ্ট ব্যবস্থা যা সাময়িক মনে হলেও আগামী দিনে ফলপ্রসূ হবে বলেই মনে করা যেতে পারে। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়স্তরে প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান শাখায় প্র্যাকটিসগুলি দেরি করে না হয় শেষ করা যাবে। হায়ার সেকেন্ডারির বাকি পরীক্ষা সেই স্কুলে অনলাইনে হলেও হতে পারে আর না হলে যেকটি পরীক্ষা হয়েছে তার উপরে রেজাল্ট বার করে দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। তবে আমি সবশেষে বলবো এইবছর স্কুল খুলে ক্লাস করলেও ছাত্রছাত্রীদের পাওয়ার একটা বিশাল সমস্যা হবে। সম্ভাবনা নেই বললেই হয়। ছাত্ররা বিলকুল অনুপস্থিত থাকবে। তাই ধান ভানতে শিবের গীত না গাওয়াই ভালো। আজ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ই-পাঠশালা খোলার ওপর জোর দিয়েছেন। তার পরিকাঠামোর জন্যে আর্থিকভাবে সরকার সঙ্গতি প্রদান করতে উদ্যোগ নিয়েছে যখন তখন সব রাজ্য‌ই এই শিক্ষা মাধ্যমে নিজেদের যুক্ত করবে বলে আশা রাখি। পরিশেষে ই-পাঠশালার জন্যে র‌ইলো হাততালি। ই শিক্ষায় ঘরোয়া টিউশনির মাষ্টার মশাই ও দিদিমণিদের‌ও নিজেদের তৈরি করে নিতে হবে।
©® অলোক কুন্ডু
( এই লেখাটি একটি ম্যাগাজিনের জন্যে লেখা
তারা কবে ছেপে তা প্রকাশ করবে জানা নেই। তাই এই লেখার কোনও অংশ কেউ থিম ও কোনও ভাবে কোথাও লিখে দেবেন না। সংবাদ পত্রেতো নয় । লেখাটি মৌলিক রচনা। মনে রাখবেন )

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...