রবিবার, ২৯ নভেম্বর, ২০২০

নির্ভয়ে ভ্যাকসিন নেওয়ার দিন আগত : অলোক কুন্ডু

🌏 নির্ভয়ে ভ্যাকসিন নিতে হবে সেই দিন আগত। কিন্তু দয়া করে কেউ বলবেন ভ্যাকসিনের বদলে আমাকে ভোট দিন, প্লিজ বিরত থাকুন

➡️ দেখা যাচ্ছে নিউমোনিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জা, ফ্লুয়ের ভ্যাকসিন বের করতে আগে দশকের পর দশক চলে গেছে। সেইসব আবিষ্কারের পেছনে কখনও সমস্ত দেশ একযোগে, কখনও যৌথভাবে, কখনও একক উদ্যোগে উঠেপড়ে সবাই এগিয়ে আসেনি, করোনার জন্য যেভাবে সকলে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। আবিষ্কারের উদ্যোগ এইভাবে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে কখনও শুরু হয়নি। একযোগে আমেরিকা রাশিয়া বৃটেন ভারত চায়না ইজরাইল আবিষ্কারে মনোনিবেশ করেছে। এটা ব্যবহার থেকে তাগিদ বেশি। বরং রাষ্ট্র নায়কদের বেশি উদ্দোগ যুক্ত হয়েছে। প্রত্যেকটি দেশের বিভিন্ন রসায়নাগারে বিজ্ঞানীরা ছয়মাস লাগাতার কাজ করছে। প্রকৃত গবেষণায় নিযুক্ত ছাত্ররাও সঙ্গী হয়েছে ব্যাপকভাবে। স্বেচ্ছাসেবক পাওয়া গেছে আবেদনের বেশি। রাজনৈতিক ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ট্রাম্প থেকে সমস্ত রাষ্ট্রনায়করা প্রতিনিয়ত চোখ কান খোলা রেখেছেন। তাদের স্বার্থ সবচেয়ে বেশি। 

➡️ কারণ এতদিন দেখা গেছে শিশু ও বয়স্ক মিলিয়ে একমাত্র নিউমোনিয়াতেই লাখো লাখো মানুষের প্রাণ চলে যেত। তবু সেই নিউমোনিয়ার ভ্যাকসিন ভালোভাবে বাজারে আসতে বহু পরীক্ষা পর্ব চলেছে। 
ফাইজার নিউমোনিয়া ওষুধের বাজার জাত করার বরাত পেয়েছে। তাদের পয়সায় তাদের তত্বাবধানে তৈরি হলেও তা খানিকটা সাইজে আনতে ২০১৯-এর জানুয়ারি পর্যন্ত চলে গেছে। অথচ এর আবিষ্কার হয়েছিল অনেক আগেই। কিন্তু রোগী চিহ্নিতকরণ একটি বড় বিষয়। তবে নিউমোনিয়া ভ্যাকসিন প্রয়োগ ও বছর বছর তার উন্নয়ন করা ও রিসার্চ ওয়ার্ক চালিয়ে যাওয়ার ফলে ওই  ACIP থেকে ২০১০-এ যেভাবে ও যে বয়সীদের নিতে বলেছিল তার ২০১৪ থেকে ২০১৮ ACIP থেকে যা বলেছিল ২০১৯ -এর জানুয়ারি আরও নির্দিষ্ট করলো। এখন ২০২০ এর মার্চে ACIP থেকে আবার বলছে কেবলমাত্র ৬৫ বছরের পর PPSV23 নিতে আরও একবছর পর PCV13 নেওয়া হয়ে যাওয়ার পর। ছোটদের জন্য আগে ছিল PCV7 বছরে একবার এখন হয়েছে তিনবার। নিউমোনিয়া বহু রকম আছে তার মধ্যে বেশ কয়েকটিকে বেছে নিয়ে ভ্যাকসিন। তারমানে এই নয়
যে অন্যগুলো হবে না। অবশ্যই সম্ভাবনা কম থাকবে। 
যারা সিগারেট খায় ৬৫ বছর ও বিশেষ কয়েকটি অসুখ আছে তাদের নিতেই হবে। আবশ্যিক নেওয়া হয়ে যাচ্ছে যত দিন যাচ্ছে। যত রিসার্চ হচ্ছে। ২০২০ মার্চ পর্যন্ত ACIP থেকে আপডেট দেওয়া হয়েছে। 
ফিজি সরকারি স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে রিসার্চ করে দেখেছে নিউমোনিয়া PCV13 নেওয়া থাকলে কোবিদ১৯ এ ভয়াবহ কিছু হওয়া সম্ভব নয়। হলেও
এই যাত্রা রোগী বেঁচে যেতে পারে। তবে পুণরায় যেকোন ভ্যাকসিন তিনি নিতে পারেন একমাস পরে। কিন্তু ইনফ্লুয়েঞ্জা বা সার্স ও ফ্লু কয়েকবার নিলে শরীরের নিজস্ব ইমিউনিটি ক্ষমতা কমে যেতে পারে। 
তাই মহামারী না দেখা দিলে ফ্লু-এর জন্য আর কোনও ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত নয়। তবে যারা নিউমোনিয়া নিতে পারছেন না তারা ইনফ্লুয়েঞ্জা বা ফ্লুয়ের ভ্যাকসিন নিতে পারেন। যেকোনো একটি নেওয়া থাকলে করোনা থেকে সামান্য হলেও নিশ্চিন্ত হতে পারবেন। দুটো ভ্যাকসিন নেওয়ার দরকার নেই বরং দুটো নিলে আপনার শরীরে বেশি টক্সিন ঢুকবে। 

➡️ কোনও ভ্যাকসিন একবার নিলে কোনোটার আয়ু সারাজীবন। কোনও ভ্যাকসিন বছর বছর দিতে হয়। কোনোটা আবার পিরিওডিক্যাল। কিন্তু এইসব বিচার, জিনগত পার্থক্যের বিচার, নানা পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সামাল দিয়ে মানুষের ক্ষয়ক্ষতি শূন্যতে নামিয়ে এনে ভ্যাকসিন বের করা একপ্রকার দূরূহ কাজ। ব্যয় সাপেক্ষ তো বটেই। বড় বড় ওষুধ কোম্পানিগুলি এইজন্য সারা বিশ্বে গবেষক খুঁজে বেড়ান। কখনও গবেষণা হয় ব্যক্তিগত পর্যায়ে। কখনও অধ্যাপক ও ছাত্রদের সহায়তায়। আর এইসব প্রাণদায়ী ওষুধ প্রচন্ড ঠান্ডার দেশ ছাড়া আবিষ্কারের একটা মুস্কিল পর্ব তো আছেই। কখনও কোনও গবেষণাগার গড়ে উঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রণী ভূমিকায়। এই বিশ্বে জীবনদায়ী ওষুধের অবিরত আবিষ্কার হয়ে চলেছে। এইরকম গবেষণা থেমে নেই। নোবেল কমিটি থেকে বড় বড় এইরকম কমিটির অবদান এইসব আবিষ্কারের ক্ষেত্রে একটি মানবতাবাদী ভূমিকা সব সময় পালন করে চলেছে। তাই কোবিদ ভ্যাকসিন আর ট্যাবলেট বিক্রি দুটো সম্পূর্ণ আলাদা বিষয়। সুগারের ওষুধ না খেয়েও লোক বেঁচে আছে থাইরয়েডের ওষুধ না খেয়ে বেঁচে আছে তাই কোবিদ ভ্যাকসিনকে সেই মতো তুলনা করা ভুল হবে। অনিবার্যতা আবশ্যিক ও নিতেই হবে কোবিদ ভ্যাকসিন। এখানে ব্যবসার কি হবে না হবে তা ভেবে জনগণের কোনও লাভ নেই। 

➡️ ওষুধ শিল্পে ব্রিটেন ও আমেরিকা অগ্রগণ্য। সরকারের প্রচেষ্টার মধ্যে অবশ্যই বাণিজ্যিক একটি পরিকল্পনা থাকে। সরকার প্রচুর ট্যাক্স পায়। শেয়ার কেনাবেচা থাকে, ওষুধের বিক্রি বাবদ সরকারের লাভ, ডাক্তারের লাভ, রিপ্রেজেন্টেটিভদের লাভ, ওষুধের দোকানের লাভ ছাড়া ওষুধের প্রচলন প্রায় হয়না। বিক্রি বাটোয়ারর কোনও মানে হয়না যদি না তা বাজারজাত হয় যদি না ভালোভাবে বিক্রি হয় তবেই না রিপ্রেজেন্টেটিভদের চাকরি হবে কোম্পানি থেকে ব্যবসায়ী, এজেন্ট থেকে সকলে ফুলেফেঁপে উঠবেন। ওষুধের ব্যবসা মানুষকে বাঁচায় যেমন তেমনি সমাজকে, বেকারি থেকে বাঁচায়। এখন তো ডাক্তারদের মনোরঞ্জনের সমস্ত দান প্রতিদানে কোম্পানিগুলির প্রতিযোগিতা দেখার মতো। 

➡️ তা হোক। কিন্তু প্রাথমিক উদ্দেশ্য থাকে মানুষ বাঁচানোর। মানুষকে বাঁচতে সাহায্য করা সভ্যতার 
মূল কাজ। আর করোনার মূল উদ্দেশ্য মানুষের ক্ষয়ক্ষতি। এত বড় আকারে মৃত্যু ও আক্রান্ত ইতিপূর্বে হয়নি। যদিও রোগের আক্রমণ থেকে প্রাথমিক ভাবে বাঁচতে মানুষ কতকগুলি আবিষ্কার আগেই করে রেখেছিল। মাস্ক, হাতধোয়া ও দূরত্ব বজায় রাখা। 
এর ফলও যথেষ্ট পাওয়া গেছে বৈকি। কিন্তু মৃত্যু পথযাত্রীকে বাঁচানোর দায়িত্ব আরও বড় এবং ভাবনার বিষয়। মারণ করোনা থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে তাই ভ্যাকসিনের দিকে চেয়ে আছেন সকলে। 
হ্যাঁ আবার আবিষ্কার হয়ে গেলে রাজনৈতিক দলগুলোর অস্তিত্ব সংকটও হতে পারে কারণ অনেকেই চান এই রোগে আরও মানুষ মরলে তাদের দলের সুবিধা হবে তাতে।

➡️ তাহলে কবে ভ্যাকসিন আসছে। যেহেতু ভ্যাকসিন আবিস্কারের পরেও ব্যাপক রিসার্চ চলবে। মনে রাখতে হবে পোলিও টিকা প্রথমে যেটা বাজারে এসেছিল তার মধ্যে বিস্তর গন্ডগোল ছিল। মৃত্যু পর্যন্ত হয়েছিল। 
তাই ক্ষয়ক্ষতি শূন্য যাতে হয় সেই কারণেই পরীক্ষার পর্যায়গুলো আরও তন্ন তন্ন করে ভাবতে সময় লাগছে। আমাদের দেশে একসঙ্গে অ্যালোপ্যাথি ও হোমিওপ্যাথি আবিষ্কারের কথা শোনা যাচ্ছে। চায়নার আবিষ্কার একেবারে শেষ পর্যায়ে। আমেরিকাও আগে খাতা খুলতে পারে। সকলের টিকা প্রস্তুতি পর্ব একেবারে শেষের দিকে। ফেব্রুয়ারি থেকে মনে হয় ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়ে যাবে। যদি আমেরিকান ভ্যাকসিন আগে বের হয় অথবা ব্রিটিশ তবে এরা অনেক নির্ভরযোগ্য হবেন। তা না হলে ফ্রিতে ভারতের ভ্যাকসিন ওই সময়েই শুরু হয়ে যাবে। নববর্ষের দিনে কিছু বার্তা শোনা যাবেই। প্রথমে করোনার বিরুদ্ধে সামনের সারিতে লড়ছেন যারা তারা জানুয়ারির শেষ থেকে নিতে শুরু করতে পারেন। তা না হলে প্রত্যেকই
তার প্রোডাক্ট বিক্রি করতে চাইবেন। কার সব থেকে কার্যকরী তা বুঝতে দুবছর লেগে যাবে। যাদের বেশি কার্যকরী তারা ভালো ব্যবসা করুক এবং করবে। জনগণের ওইদিকে তাকিয়ে থাকলে চলবে না। তাদের বাঁচতে হবে। কারণ ভ্যাকসিনের কার্যকরী ভূমিকা বুঝতে দুবছর থেকে দশবছর সময় লেগে যেতে পারে। মনে রাখতে হবে যে কোনও মারণ রোগকে জব্দ করতে শুধু ওষুধ আবিষ্কার করলেই হবেনা। কতখানি কাকে কাকে দিতে হবে এটাও একটা ব্যাপার। সকলকে ঈশ্বর সমান ছাঁচে তৈরি করেনি যখন তখন ওষুধের প্রয়োগেও তফাত হবে কিছুটা। কিন্তু এখন যা দেবে তাই নিতে হবে। জ্বর, সর্দি, চুলকানি, পায়খানা এগুলো যেকোনো ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া এটা মনে রাখতে হবে। 
( ছবিটি প্রতিক অর্থে ব্যবহৃত) 

©® অলোক কুন্ডু 

 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...