রবিবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২০
বোলপুরে অমিত শাহের উপচে পড়া বারান্দার ভিড় না শুভেন্দুর নন্দীগ্রামের সংখ্যালঘু ভোটারের সহায়তা কোনটা বেশি জরুরি: অলোক কুন্ডু
শুভেন্দুর বিজেপিতে যাওয়ার জন্য তৃণমূল কংগ্রেসের রাগ, দুঃখ, ক্ষোভ, মান- অভিমান এবং অপমানিত হওয়া সমস্ত কিছু বোঝা যায়। পার্টি অফিস দখল, ফ্লেক্স জ্বালানো এইসবের কারণ বোঝা যায়। কিন্তু এইজন্য কদিন ধরে সব থেকে বেশি চটেছেন বামপন্থীরা বিশেষ করে সিপিএম দল। তারাই এইসবের আলোচনা নরক গুলজার করে রেখেছেন। এই মূহুর্তে পার্টি বাঁচাতে দু একটি কর্মসূচি ও কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে যাওয়া ছাড়া এমনকিছু নিজেদের প্রোগ্রাম নেই। নিজেদের প্রচার নেই বললেই চলে। তাদের ৩৪ বছরেই যে সরকারের বিস্তারিত সরকারি অর্ডার বেরিয়েছিল সেই খবর সংগ্রহ করে তা তারা জানাতে পারতো। তারা জানাতে পারতো পার্টির বাইরে কত পরিবারের তারা উন্নয়ন করেছিলেন। কিন্তু তাদের এখন বুঝি নেগেটিভ রাজনীতি করার সময় এসেছে। গণশক্তিতে কদিন ধরেই তারা শুভেন্দুর বিষয়ে লিখে চলেছেন। কিন্তু শুধুমাত্র শুভেন্দু তো দলবদল করেনি। লক্ষ্মণ শেঠ বাহাত্তরটা দলের কাছে গিয়েছিল। দল বদলুতে তারাই বা কম কিসের। বহু সিপিএম, সিপিআইও যোগ দিয়েছে বিজেপিতে এবং তৃণমূলে। কিন্তু বামপন্থীরা একটানা গালাগাল, ছবি-শেয়ার, লেখা লিখছে শুধুমাত্র শুভেন্দুকে নিয়ে। গণশক্তিতে প্রথম পৃষ্ঠার দুটো স্থানে লেখা হয়েছে গতকাল-- দলবল নিয়ে। অথচ তাদের এম.এল.এ, থেকে পঞ্চায়েত প্রধান ২০১২ থেকে ৯ বছর ধরে রোজ চলে যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসে। দলবদল নিয়ে সিপিএম বিগ্রেড ডাকেনি, মাইলব্যাপী বড় বড় মিছিল করেনি বাংলা-বনধ্ করেনি। তাদের দলের লোকেরা মিছিল করে যখন চলে গেছেন তখন সেই খবর ছেপেছে খুব বেশি নয়। কিন্তু সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তারাই। তাদের হারিয়েই তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছে। তাদের ক্যাডার মার খেয়েছেন। মরে পর্যন্ত গেছেন। জেল খেটেছেন তারাই। দিন দিন তাদের অবস্থা খারাপের দিকে চলে যাচ্ছে। ইদানিং তাদের পার্টি অফিস যে অবাধে খুলতে দেওয়া হচ্ছে তার কারণ সাধারণ মানুষের অজানা নয়। আবার বেশি বাড়াবাড়ি করলেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে। কিন্তু সিপিএমের বক্তব্য, তাদের ব্যবহার, তাদের উঠাবসা সবটুকু আজ বিজেপি কেন্দ্রিক। এইজন্য তাদের হিন্দু ভোট দিন কে দিন কমে যাচ্ছে। এতে তাদের বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই। জ্যোতি বাবু পলিটব্যুরোর মিটিং থেকে বেরিয়ে বলেছিলেন ওদের বিরুদ্ধে মুখ খুললে ওরা শাস্তি দেবে, মেরে ফেলবে। ওরা কারা। ওরা সিপিএম দল। সকলেই জানেন প্রকাশ কারাত ও সীতারাম ইয়েচুরির জন্য জ্যোতি বাবু প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। অমন ভাল রাজনৈতিক নেতাকে অবধি চোখের জলে নাকের জলে হতে হয়েছিল,স্পিকার পদ থেকে পদত্যাগের চাপ দিয়ে পার্টি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছিলেন। সিপিএম ভাল করে জানে তাদের ক্যাডাররাই বিজেপিতে গেছে। ক্ষমতায় যে থাকে সেখানে প্রচুর মধু থাকে। গরীব মানুষ কিছু পেতে ওই দলে যায়। ক্যাডার কারও তাই কেনা নয় গোলাম নয়। বামপন্থীদের সেইসব ভাল, সৎ চরিত্রবান সৃষ্টিশীল, নিষ্ঠাবান নেতারা আর নেই, সেই যুগও নেই তাদের। কম্যুনিজম দিয়ে এইদেশে আর কিছু হবেনা। লেনিন, স্টালিন মাও জেদং এর অমন রাশিয়া ভেঙে টুকরো টুকরো চীন এখন কর্পোরেট। এখানে সিপিএম কেন্দ্রীয় সরকার থেকে বেরিয়ে এসে যে ভুল করেছে সেই মাসুল তারা গুণে চলেছে। এখন কৃষক আন্দোলনে এগিয়ে থেকে সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করছে তারা। প্রকৃতপক্ষে ২০১১ সালে দিল্লির কংগ্রেস সরকার, যে সমস্ত অফিসারকে এখানে নির্বাচনে ডেপুটশনে পাঠিয়েছিল। তাদের পই পই করে বলে দিয়েছিল যেভাবেই হোক গ্রামেগঞ্জে সিপিএমের ভোট মেশিনকে বসিয়ে দিতে হবে। সেইসব ডেপুটেশনে আসা অফিসাররা, কোনও বুথে সিপিএমেকে নড়তে দেয়নি। ধারে কাছে এলে পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে ছিল। ২০১১ এর ফল সিপিএম জানে। এমনকি নির্বাচনের আগের দিন সারারাত ওইসব অফিসার ঘুমোননি, সিপিএমকে রীতিমতো তাড়া করে রেখেছিল। এবারের নির্বাচনে ভোট জোগাড় করা তাদের পক্ষে আরও কঠিন। কিন্তু তাদের লড়াই কিরকম হবে, সেই অনিল বিশ্বাস এখন নেই। এখন ভাটবকে যে, নির্বাচনে ভোট উদ্ধার করা যাবেনা এই কথা বামপন্থী দল সিপিএমের না বোঝার কথা নয়। এমনিতে দুর্গা পুজোয় তারা বাংলার সস্কৃতি থেকে চিরকাল নিজেদের গুটিয়ে রাখতে রাখতে সমাজে হীনমন্য হয়ে গেছে। সপ্তাহে সপ্তাহে পার্টি ক্লাসের থেকে যে ক্লাব অনেক বড় কালচার সেই কথা তারাও বুঝেছেন তৃণমূলের আমলে। তারা ৩৪ বছরে বহু ভাল কাজ করেছেন। কিন্তু তাদের সেইসব কাজ কেউ মনে রাখেনি তাদের ধর্মীয় রীতিনীতির জন্য। কারণ সমাজে তারা বন্ধু হয়ে ঢুকতে পারেনি। উটপাখির রাজনীতি তাদের ভুলিয়ে দিয়েছে। লক্ষ্মণ শেঠ, তপন, শুকুর এই তিনটি লোক তাদের গোটা পার্টির সর্বনাশ করে দিয়েছে। লক্ষ্মণ শেঠ ফিরে আসায় তাদের তাই ভালোর থেকে খারাপ হবে। নাক কেটে যাত্রা ভঙ্গর আয়োজনের এই রাজনীতি, তাদের আরও পিছিয়ে দেবে। কিন্তু বাম রাজনীতির পথ এরকম নয়। তাদের নিবিড়ভাবে কাজ করে যাওয়া থেকে তাদের ৩৪ বছর কাজের গুণগান প্রচার করতে কখনও তারা এগিয়ে আসেনি। বরং পিছনে গিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে কাটি করাই মুখ্য ভাবনাতে তারা এখন এসে দাঁড়িয়েছে। গত নির্বাচিনে ৭% ভোট ছিল। এই হিসাব বাড়ার থেকে এইবার তাদের ভোট আরও কমে যাওয়ার চান্স খুব বেশি। খুব জোর উত্তরবঙ্গ থেকে তারা একটি বা দুটি এম. এল.এ সিট বার করতে পারেন। তাও সন্দেহ আছে। পূর্ব মেদিনীপুরে যদিও বা কিছু ভোট ছিল তাও সেইসব এখন দ্বিধাবিভক্ত। তাদের হাতের অক্ষয় সংখ্যালঘু ও মুসলিম ভোট এবারে তাদের হাতে না থাকার চান্স সবচেয়ে বেশি। কংগ্রেসের অবস্থাও শোচনীয় হলেও অধীররঞ্জন চৌধুরী বুঝেছেন সবসময় হিন্দু ভোট হিন্দু ভোট করে বিজেপিকে ব্যঙ্গ করলে হিন্দু ভোটও কংগ্রেসের হাত ছাড়া হয়ে যাবে। মুর্শিদাবাদ বাদে কংগ্রেসের হালও খারাপ। তবে কংগ্রেসের সঙ্গে বামপন্থীদের জোট থাকলেও দুটো দলের শুভেন্দুকে নিয়ে মতামত দুরকম। পশ্চিমবঙ্গে ইতিপূর্বে কখনও হিন্দু-মুসলমান জাতের বিভাজনে ভোট হয়নি। আজ এই পরিস্থিতি হলো কেন। কে দায়ী তার জন্য দায়ী বরং বামপন্থীরা তা খুঁজে বার করলে তাদের উপকার হতো। কিন্তু খুব দুর্ভাগ্য এবারেই পশ্চিমবঙ্গে তা প্রথম হতে চলেছে। এইরকম সাম্প্রদায়িক ভোটের সুফল ও কুফল দুই আছে। এবারে সর্ব প্রথম এইরকম সম্ভাবনা হতে যাচ্ছে। যদি সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের জন্য এই ধরনের ভোট পরিকল্পনা এগোয় তাহলে তা সমর্থন যোগ্য তা নাহলে দুটি সম্প্রদায়ের পক্ষে সামাজিক বিভাজন বাড়তে পারে, যা শুভ নয়। মুখে মুসলিম ভোট না বলে সংখ্যালঘু ভোট বললেও কথার মানে সেই একই দাঁড়ায়। এমনকি অন্য দলের বড় বড় সংখ্যালঘু নেতাও ঠিক বুঝে উঠতে পারছেন না, জল কোনদিকে গড়াচ্ছে। অধীর চৌধুরী ও আব্দুল মান্নান বুঝেছেন এই মূহুর্তে হিন্দুভোট কতটা জরুরি। কংগ্রেস সর্ব ভারতীয় দল হলেও মুসলিম বিশ্বাসী দল হলেও ফুরফুরা শরীফের আশীর্বাদ নিতে অধীররঞ্জন চৌধুরী তাই ভুল করেননি। এমনকি ঠিক একই কারণে তাই ভুলেও এখানে তারা হিন্দু ভোটের বিরুদ্ধে মুখ খেলেননি। অধীররঞ্জন চৌধুরী ও আব্দুল মান্নান বা মুর্শিদাবাদ-মালদার কোনও সিট জিততে হলে "ফুরফুরা সরীফের" আব্বাস সিদ্দিকীদের সমর্থন ছাড়া এবারে জেতা মুস্কিল হতে পারে। এই সময়টা একটা রাজনৈতিক ডামাডোলের সময়। ৪০ দিন আগেই বলে দিয়েছি এইবারে পশ্চিমবঙ্গে লিখিত অলিখিতভাবে যুক্তফ্রন্ট হতে পারে। তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেস সিপিএমের ফ্রন্ট হতে পারে। অলিখিত জোট হতে পারে। এইসব হোক বা না হোক আব্বাস সিদ্দিকীকে বাদ দিয়ে কিছু হবে না। আবার অনেকেই বেশ বুঝেছেন তা হলো, নন্দীগ্রামের বৃহত্তর মুসলিম জনগণের সঙ্গে বিনা আলোচনা না করে শুভেন্দু, তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়েননি। শুভেন্দুকে ছোট বড় চ্যানেল ও বামপন্থীরা, কদিন ধরেই সমানে এত কামান দেগে চলেছে যে তৃণমূলের সৌগত রায়, সুব্রত কল্যাণ পর্যন্ত পিছিয়ে পড়েছেন। কিন্তু শুভেন্দু ৩২ টা কমিটি ও তিনটি মন্ত্রীপদ ছেড়ে দিয়েছেন ও মাঝেমাঝেই চুপ করে বসে আছেন। সত্যি কথা কি, শুভেন্দু চুপ আছেন না জবাব তৈরি করছেন এটা জানতে সকলেই আগ্রহী। আগামী দিন বলবে কী হবে, বা কী হতে যাচ্ছে। যদি নন্দীগ্রামের ১০% সংখ্যালঘুদের তিনি বিশ্বাস অর্জন করতে পারেন তাহলে বামপন্থীরা কিন্তু আগামী দিনে আরও পিছিয়ে পড়বে। সেই সম্ভাবনা কিন্তু প্রবল। এখন দেখার নন্দীগ্রাম কি করে ? দ্বিতীয় সম্ভাবনা: বোলপুরে অমিত শাহের উপচে পড়া ভিড়। সঙ্গে বাড়ির ছাদ থেকে ব্যালকনিতে পর্যন্ত গিজগিজ করছে জনগণ।এই ভিড় কি তবে বিশেষ বার্তা দিয়ে গেল- ২০০ আসনে এগিয়ে থাকার। তবে খুনোখুনি না বন্ধ হলে এখানকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। আগামী দিনে বামপন্থীরা উঠতে চাইলে তাদের পজিটিভ রাজ ©® অলোক কুন্ডু
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু
#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...
-
বড় চমক, বাংলা থেকে এনডিএর-র উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী ●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●● গত তিন বছর বিভিন্ন ইস্যুতে মমতা সরকারকে নিশানা করেছেন ব...
-
⛔ এটা ২৮ ডিসেম্বর, ১৯৯৭-এর 'বর্তমান' খবর কাগজ। বরুণ সেনগুপ্ত'র আগাগোড়া ১০০% সমর্থন তখন। জিতেন্দ্রপ্রসাদ এসে সোমেন মিত্রকে নিয়ে...
-
#অলোক_কুন্ডুর_লেখালিখি_ও_কবিতা #CoronavirusLockdown #COVID19PH #COVID19 #CoronavirusPandemic #coronavirus #ভিটামিন_সি ■ বিজ্ঞানী ইন্দুভূষণ ...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন