⛔ শুভেন্দু অধিকারী প্রায় একমাস সময় নিলেন। ঠিক এই সময়ে ঝড় তুলে বক্তব্য রাখার মতো মাঠ জমানো ময়দান কাঁপানো নেতা কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে আর নেই। শুভেন্দু অধিকারীর ছেলেমেয়ে বউ-বাচ্চাও নেই। কিন্তু সব থেকে বেশি ফেসবুকের গ্রুপ-ফলোয়ার শুভেন্দুর আছে। ৫০ টার ওপর গ্রুপ লাখ লাখ ফলোয়ার। আমি ২০০৮ এবং ২০১৬ তে দীঘা গিয়ে প্রত্যক্ষ করেছি দীর্ঘ রাস্তার অলিগলিতে বাজারে বড় রাস্তায় শুভেন্দুর ছবির ঢাউস ফ্লেক্সের ছড়াছড়ি ছিল। হ্যাঁ শুভেন্দুর ভাই সহ বাবা শিশির অধিকারীরও কিছু ছবি দেখেছিলাম। কিন্তু রাজনৈতিক নেতা যে তিনি তা প্রমাণ করে ছেড়েছিলেন অত ফ্লেক্সের মাধ্যমে। আর কারও ছবি লাগাতেই দেননি। দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করে আসছেন। তৃণমূলের উত্থান কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুর থেকে, এই কথা ভুলে গেলে চলবেনা। দীর্ঘ রাজনৈতিক ধ্যানধারণার অধিকারী শুভেন্দু। সঙ্গে আছেন তার পোড়খাওয়া, দীর্ঘদিনের রাজনীতিবিদ শিশির অধিকারী, পিতা। তিনি এই লড়াইয়ের বিচক্ষণ নেতা ও লক্ষবস্তুতে আঘাত করার মূল কান্ডারি। কম কথা বলেন। রাজনৈতিক কলাকৌশল সাজাতে অখিল গিরিকে সাইড করে রাখতে তাঁর রাজনৈতিক মেধার জুড়ি মেলা ভার। তারা এখনও দল ছাড়েননি। এটাও একটা রাজনৈতিক অ্যান্টি গিমিক। সবকিছুকে অপ্রকাশিত করার কৌশল। সবচেয়ে বড় কথা সমবায় ব্যাংকে যখন চুরিচামারি পশ্চিমবঙ্গজজুড়ে লেগেই আছে, তখন অধিকারীবংশ কন্টাই সমবায় ব্যাংকের উন্নয়ন ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর হয়েছে। বিশ্বাস অর্জন করেছে। ১৯৯৬-৯৭ থেকে তৃণমূলের ক্ষমতা ধরে রেখেছিলেন, জবরদস্ত নেতৃত্ব দিয়েছেন। শুভেন্দু এমন নেতা যে তৃণমূল পর্যন্ত তাকে ৩০/৩৫ টা পদের দায়িত্ব দিয়েছিল। মন্ত্রিত্ব ছাড়া এত বড় বড় ক্ষমতা শুভেন্দু পরিত্যাগ করলো তাতে ওর ত্যাগের মহিমা এখন প্রচার পাবে। এত বছর বাদে যতই চোর সুদীপ্ত সেন শুভেন্দুকে টাকা দিয়েছে প্রচার করুক না কেন তা ধোপে টিঁকবে না। শুভেন্দু নিজেকে পান্তাভাত খাওয়া গ্রামের ছেলে বলে প্রচারের আলোয় বার বার আনছেন। এই যে এইভাবে নিজেকে ভাবলেন এবং তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তার সুরেলা মজার বক্তব্য বহুমুখী প্রভাব ফেলতে পারে। তিনি নিজেকে নিয়ে এইভাবে যে এলেন তাও একটা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। খানিকটা হেঁয়ালি। যদিও তার একটি প্রক্রিয়াপর্ব ভেতরে ভেতরে বহুকাল ধরে চলে থাকতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে। একমাত্র আব্বাস সিদ্দিকী ছাড়া আর কোনও বক্তা তার ধারে কাছে নেই
⛔ শুভেন্দুকে ৪২ টা সিট দিলে শুভেন্দু মর্যাদা নিয়ে পুরাতন দলে থেকে যেতেন হয়তো। কিন্তু তা হয়নি। শুভেন্দু অধিকারী ভবিষ্যতে কি করবে বিজেপির অতশত দেখার ও জানার দরকার নেই। তাদের টার্গেট
অস্থায়ী নয়। ২০১৫ এর আগে থেকেই বিজেপি অত্যন্ত খারাপ দল বলে, বামপন্থী ও কংগ্রেসের প্রচার চলে এলেও এখনও বিজেপিকে শেষ করে দেওয়া যায়নি। সাম্প্রদায়িক দল বলে মিডিয়া পর্যন্ত বিজেপির ব্যান্ড বাজালেও এই বাংলায় বিজেপির যথেষ্ট উত্থান হয়েছে।
তবু বিজেপির দল এখানে সুঠাম নয়। তাদের নিজস্ব নেতা একমাত্র দিলীপ ঘোষ। মেঠো রাজনীতিই যার একমাত্র সম্বল। পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি যে এখন সভ্যতার ধরাবাঁধা গন্ডিতে আটকানো নেই সে কথা সকলেই জানেন। তাই দিলীপ ঘোষ ছাড়া কি এখানে মানাতো ?
⛔ শুভেন্দু বিজেপিতে যাচ্ছে মানে মুখ্যমন্ত্রী অথবা উপ-মুখ্যমন্ত্রীত্ব পাবেন। তবে প্রকাশ্যে এই নিয়ে দর কষাকষি একেবারেই নেই। ৪২ টা সিট না পেলেও ৩০ টা সিট পাবেনই তার পছন্দ মতো। শুভেন্দুর সঙ্গে অনেক সংখ্যালঘু মানুষ আছেন। তাঁরা অধিকারী পরিবার ও শুভেন্দুকে বিশ্বাস করেন। এদের পরামর্শ ছাড়া শুভেন্দু বিজেপিতে যাচ্ছেন না। ধরে নিতে হবে সংখ্যালঘু ভোট শুভেন্দু ভাগ করতে দেবেন না, অন্ততঃ তার নিজের পূর্ব মেদিনীপুরে। কিন্তু তবুও যদি কিছু না পান তাতে তার দুঃখ নেই। ইতিমধ্যেই বিজেপির ভোটব্যাঙ্ক একটা ভালো জায়গায় যে পৌঁচেছে এটা শুভেন্দু জেনেই তো দল বদল করছেন। যিনি তৃণমূলের ৩২ টা পদ একা সামলেছেন তিনি কিছুই বোঝেননি এটা ভাবা আমাদের বোকামি হবে। একমাত্র আমি ছাড়া সকলেই জানতেন যে, শুভেন্দু দল বদল করে বিজেপিতে যাবেন। যাইহোক না কেন একমাসের মধ্যে শুভেন্দু একই সঙ্গে তার মূল শত্রুকে চিহ্নিত করে দিয়েছেন এবং নিজেকে প্রচারের আলোয় এক নম্বরে তুলে এনেছেন। মিডিয়া খুললেই শুভেন্দুময়।
⛔ শুভেন্দু দল ছেড়ে দেওয়ার ফলে তার বাড়তি একটা সুবিধা যেটা হলো তা হচ্ছে পুরনো দিনের তৃণমূল কংগ্রেসের আদি দলটাকে তিনি কাছে পাবেন, কারণ বর্তমানে তৃণমূলের অধিকাংশই দলের সঙ্গে ছিলনা। প্রত্যেকটি মানুষ রয়েছেন তার নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে। কখনো তাদের দেখাও যায়নি ১৯৯৬ থেকে ২০১০ পর্যন্ত। এই যে বসে যাওয়া শ্রেণি এটা নেহাত কম নয়। এরা অন্ততঃ নিঃস্বার্থভাবে কাজ করবে, এরাই তৃণমূলকে আনার জন্য ছিলেন।
⛔ শুভেন্দু অধিকারীকে দল ছাড়ার ব্যাপারে পেছন থেকে সমানে বুদ্ধি দিয়েছেন বিজেপির বর্তমান চাণক্য মুকুল রায়। এই নির্বাচন সব থেকে বেশি চ্যালেঞ্জ মুকুল রায়ের কাছে। তৃণমূল দলের সংগঠন গড়ার পেছনেও প্রধান কান্ডারি ছিলেন মুকুল রায়। বাজি ধরার ক্ষেত্রে ক্ষুরধার বুদ্ধি ধরেন। ২০১০-২০১১ এই প্রতিবেদক দীর্ঘ দিন তৃণমূল ভবনে যেত। তখন আমি দেখেছি তৃণমূল বলতে মুকুল রায় ছিলেন সর্বেসর্বা। তিনি সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী হলেও বিজেপি কাউকে প্রজেক্ট করবে না।
⛔ শুভেন্দু বাইরে থাকলে যদি বিজেপির ৫০% লাভ হতো এখন তা ১০০% লাভে চলে গেল। যদি ভালোভাবে দেখি তো দিলীপ ঘোষ কিন্তু মাঠ ময়দান চাঙ্গা করার জন্য বিজেপির জবরদস্ত এক নেতা। দিলীপ ঘোষ একাই দলটাকে টেনে তুলে এনেছেন। যতই তাকে নিয়ে ব্যঙ্গ বা কার্টুন হোক না কেন লোকটার যত গাড়ির কাঁচ ভেঙেছে তত লোকটার নাম হয়েছে। বিজেপির ডাকাবুকো নেতা। সেই দিক দিয়ে দেখলে সাহসিকতার পরিচয়ে উঠে আসা নেতা আর কোনও দলে তেমন নেই। যদিও বেফাঁস মন্তব্য করা তার একটি স্বাভাবিক অভ্যাস। তাতে বিস্তর সমালোচনা হলেও যে মাঠ ময়দানের ভিড় কোথাও কমেনি বিজেপির নেতৃত্ব সেটা বিলক্ষণ জানেন। ভদ্রলোকের মধ্যে নানারকম প্রতিক্রিয়াশীল চিন্তা থাকে, বিজেপির নেতৃত্বের তাও জানা আছে নিশ্চিত। তাদের চাই মেঠো জনতা। মেঠো জনতা পিছিয়ে পড়া মানুষ তাদের এখন একান্ত আপন। তাই মঞ্চের ছবিতেও দিলীপ ঘোষের বড় মুখ। কিন্তু উনি মহিলা মুখ্যমন্ত্রীকে গালাগালি দিচ্ছেন এটা কিন্তু অনেকেই বরদাস্ত করবেন না। এক একজন এরকম থাকেন মুখটা খুব পাতলা হয় কিন্তু কুচক্রী হন না।
⛔ এখন শুভেন্দু এলে বিজেপির মাঠ ময়দানের জোর অনেকটাই বেড়ে যাবে। রাজনীতিতে কেউ যে ভালো কথা বলবে না, তা মানুষের জানা হয়ে গেছে। তাহলে হলোটা কি ? যারা ফেসবুক করে তাদের বড় অংশ বামপন্থী। এখন ফেসবুক দেখে কিন্তু শুভেন্দুর যাওয়া আসা থাকা বোঝা যাবে না। বিজেপির মূল উদ্দেশ্য এতদিনে কাজ করতে শুরু করেছে। প্রকৃতপক্ষে রাহুল সিনহা ছিলেন একজন শুধুমাত্র বক্তা। তার পক্ষে সংগঠন করা হয়নি। বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্ব চাইছেন ক্ষমতা পেতে। সেই লক্ষ্যে তাদের অগ্রসর নেহাত ভ্রান্তি দিয়ে ভরা নয়। তুল্যমূল্য লড়াইয়ে শুভেন্দুর আগমনে তাদের প্রথম রাউন্ডে জয় হয়ে গেছে। শত্রুকে দুর্বল করা রণনীতির একটা বড় কৌশল। এই কৌশলের মূল কান্ডারি সম্ভবত মুকুল রায়। এখনও পর্যন্ত বিজেপিকে যত গালাগালিই দিই না কেন বিজেপি করতে গিয়ে অনেক তাজা প্রাণ চলে যাচ্ছে। এই খুনোখুনির রাজনীতি বিজেপিকেই টানতে হচ্ছে।
তাই তারা এখন বলতে পারবে বাংলায় বামপন্থীদের মতো রাজনীতি করতে এসে তারাও ক্ষতি স্বীকার করেছে অনেক। রাজনীতিতে খুন-জখমের বিষয়টা জনসাধারণ ঠিক বুঝতে পারে। খুনি দল সব সময় দূরে সরে গেছে। এটা জনগণের একটা ভালো চিন্তা।
⛔ ১৯৭২-৭৭ কংগ্রেসকে যতই বাজে বলে প্রচার হোক না কেন অথবা এখন নিঃস্ব বলা হোক না কেন কংগ্রেস পশ্চিমবঙ্গে একটা সময় রীতিমতো লড়াই করেছে। আসলে রাজনৈতিক লড়াই সব সময় করে থাকেন ক্যাডাররা। নেতারা এদল-ওদল করে যায়, নেতাদের দায়বদ্ধতা থাকার প্রয়োজন হয়না। বামপন্থীদের সঙ্গে কংগ্রেসি ক্যাডাররা লড়াই করে উঠতে পারেনি, হয় মরেছে, তা না হলে অত্যাচারিত হয়ে বসে গেছে। সুযোগ পেলে তৃণমূলে গেছে। অনেকে সরে গেছে। এইরকম যারা আছে তারা সিপিএমের সঙ্গে ফ্রন্ট করা কখনও মেনে নেবে না। আমতায় যাদের হাতকাটা গিয়েছিল তারা এই ফ্রন্ট জীবনে মেনে নিতে পারবেনা। কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মিথ্যে প্রচার ও ইন্দিরার ইমারজেন্সির কারণে কংগ্রেসের বেশি দিন ক্ষমতায় থাকা হয়নি। কিন্তু কংগ্রেসের নেতাদের তাতে দুঃখ নেই তারা তৃণমূল কংগ্রেসে গিয়ে পুরস্কার জিতেছেন। কিন্তু কংগ্রেসের মূল অংশ কখনও তৃণমূলে যায়নি। ২% হলেও তারা আর কখনও তৃণমূলের সঙ্গে যাবেনা।
⛔ বামপন্থীদের মধ্যে কিছু দল প্রায় উঠে গেছে আর তাদের দেখা যাবেনা। তবে বামপন্থা উঠে যেতে পারেনা।
বড় বড় দল একেবারে উঠে যাবে এ কল্পনাও করা ছেলেমানুষি। তবে আমি ক্যাডারদের কথা বলছি।
যারা এখনও আছেন তারা যে তৃণমূল কংগ্রেসকে হঠিয়ে ফিরে আসতে পারবেন এ নিশ্চয়তা আগামী ১০ বছরে আর নেই এখানে। বামপন্থীদের সেইসব ক্যাডাররা অনেকে এখন শুভেন্দুর সঙ্গে যেতে পারেন শুভেন্দুর বিপ্লবী চরিত্রের কারণে। সেটাও শুভেন্দুর বড় অস্ত্র। তাদেরও তিনি কাছে পাবেন। আসলে একদল লোক যারা সবসময় বিরোধী আসনে থেকে যায়।
⛔ সবথেকে বিশ্বাসযোগ্যতা শুভেন্দু অর্জন করেছে একগাদা ক্ষমতাকে পরিত্যাগ করে দিয়েছে। বামপন্থী নেচারের এই মেজাজ বহু নিরপেক্ষ মানুষ পছন্দ করেন। ক্ষমতায় থেকে ক্ষমতা ছাড়তে কেউই চাননা। এই দিক দিয়ে বিজেপি দলটাই তৈরি হলো তৃণমূলের ক্ষমতা থেকে সরে এসে, একদম ক্ষমতায় না থাকা নেতাদের নিয়ে গড়া একটা দল। শুভেন্দু যদি নির্বাচিনের পরে আসতেন এই সম্মান তার থাকতো না। এই বাজারে এত আত্মত্যাগ করার ক্ষমতা কিন্তু সকলের থাকেনা। বিজেপি তার এই যাওয়া তাই সসম্মানের।
⛔ শুভেন্দু কিন্তু খুব কৌশলী। তার লাভালাভ ছাড়া এত আত্মত্যাগ তিনি করবেন না। দেখতে গেলে এক্ষেত্রে শুভেন্দু ও বিজেপির যৌথ লাভ হলো। দুপক্ষের শক্তিই বেড়ে গেল। তাদের উদ্দেশ্য লক্ষ্য এক বিন্দুতে এসে মিশেছে।
(সমস্ত রাজনৈতিক দলের কাছে আবেদন খুনোখুনি বাদ দিয়ে রাজনীতি করুন দয়া করে। এই প্রতিবেদক আবেদন করছে নিবেদন করছে। বিজেপির কেউ মারা
যাচ্ছে না। মারা যাচ্ছে তরতাজা যুবক। যারা নীচুতলায় পার্টি করেন তারা কখনও টাকা পয়সার জন্য কিছু করেন না। তাদের এইভাবে মেরে ফেলা উচিত নয়। এই খুনোখুনি আর কবে শেষ হবে?)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন