বুধবার, ২৯ জুন, ২০২২

লক্ষ্মীর ভান্ডার কি মুখ থুবড়ে পড়বে।





লক্ষ্মীর ভান্ডার / অলোক কুন্ডু

এই নিবন্ধটি "পশ্চিমবঙ্গ লক্ষ্মীর ভাণ্ডার স্কিম" সম্পর্কিত সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আপনি যদি আগ্রহী হন, তাহলে আপনি এই লেখাটি শেষ পর্যন্ত পডুন।

২০২১-এ তৃণমূল সরকার ফিরে আসার পর, সরকারের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক পদক্ষেপ হ'ল লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পটির ঘোষণা করা। আদতে এই প্রোগ্রাম ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপের কথা শোনা যায় ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে, ওই দলের ইস্তাহারে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এই পদক্ষেপের এখন সরকারি আদেশনামা প্রকাশিত হয়েছে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী নবান্ন থেকে এই প্রকল্পটি ঘোষণা করেছেন।

প্রকল্পটি যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা বোঝা যায় যখন আমরা দেখি ১৫ দিনের মধ্যে এই সিদ্ধান্তটি নিয়ে তিনবার সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি নিজের মুখে জানিয়েছেন এই Form-টি কোথাও কিনতে পাওয়া যাবেনা। জেরক্স করে পূরণ করাও যাবেনা। প্রতিটি ফরম হচ্ছে কম্পিউটার জেনারেটেড। ওই দপ্তরের সরকারি আধিকারিক ছাড়া এই Form-টি কেউ ডাউনলোড করতে পারবেন না। প্রতিটি Form-এ একজন নির্দিষ্ট আবেদনকারীর জন্য একটি নম্বর থাকবে। এটি যিনি তুলবেন তিনি ছাড়া ২য় কেউ পূরণ করতে পারবেন না। Form-টি নিয়ে নষ্ট করে ফেলে দিলে বা হারিয়ে ফেললে বা ছিঁড়ে ফেললে অথবা অন্যকে বিতরণ করলে আর কিছু করার থাকবে না। পুণরায় পাওয়া মুস্কিল হবে।
মুখ্যমন্ত্রী আরও জানিয়েছেন একজন নয় সংসারের সকল যোগ্য মহিলা এই সুযোগ পাবেন। এখানে আরও একটু ব্যাখ্যার প্রয়োজন।

১৬.৮.২১ থেকে দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প যেখানে যেখানে হচ্ছে সেখানেই লক্ষ্মীর ভান্ডার ক্যাম্পও থাকছে। আর সেখান থেকে ডাউনলোড করার পর Formটি হাতে পাওয়া যাবে, ফরম্- টি হাতে নিয়ে নিজের জন্য দুটি জেরক্স করে নেওয়া উচিত কাজ হবে। এখনও পর্যন্ত সমস্ত জায়গায় ক্যাম্প চালু হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই জানিয়েছেন কারও চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই প্রয়োজনে ক্যাম্পের তারিখ বাড়ানো হতে পারে।

বাড়িতে Form-টি পূরণের সময় আসল Form-টিকে তুলে রেখে জেরক্স কপিতে আগে লিখে, প্র্যাকটিস করে নিলে ভালো হয়। যা কাটাকুটি হবে তা জেরক্সেই হবে। মনে রাখবেন Form-টির তিনটি পাতা আছে। ১৩/৮/২১-এ আপডেট করে Form-টি তিন পাতার করা হয়েছে। সুবিধার জন্য ইংরেজির সঙ্গে বাংলাতেও লেখা আছে। তবে আপনারা ইংরেজিতেই পূরণ করবেন।

যেখানে দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প হবে, সেখানে আগে নাম রেজিস্ট্রেশন করিয়ে একটি নম্বর নিতে হবে। তারপর ওই নম্বরটি একটি কাগজে লিখে নিয়ে যত্ন করে রাখতে হবে। আর সেখানেই "লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প"-এর নির্দিষ্ট একটি টেবিল বা ক্যাম্প থাকবে, ওইখানে গিয়ে Form-টি চাইতে হবে। এরকম শোনা যাচ্ছে, তা হলো ভিড়ের ঝুঁকি এড়াতে, বহু জায়গায়, আগেই কূপন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তারিখ অনুযায়ী এসে বা কারও মাধ্যমে তারা ফরম্ তুলবেন আগে। পরে নির্দিষ্ট তারিখে জমা দেবেন।

ধরে নেওয়া যেতে পারে গ্রামেগঞ্জে বিডিও অফিসে ও শহরে মিউনিসিপ্যাল বরো অফিস অথবা মিউনিসিপ্যাল অফিসে হবে এই ক্যাম্প। স্থানীয় প্রশাসন মনে করলে এই ক্যাম্প তারা যে কোনও বড় স্কুলেও বসাতে পারে। হচ্ছেও তাই।

এই প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য হলো, রাজ্যের বহু এমন ঘর-গৃহস্থী আছে যাদের কোনও বেসিক/ প্রাথমিক আয় নেই। বেসিক বা প্রাথমিক আয় হলো যা প্রতি মাসে নির্দিষ্ট কোনও সংস্থা থেকে স্থায়ী ভাবে পাওয়া যায় এবং তার জন্য কোনও না কোনও ট্যাক্স দিতে হতে হয়।

সেই কারণে প্রাথমিক আয়হীন সেই সব পরিবারের মহিলাদের প্রধানকে অথবা পরিবারের নির্দিষ্ট মহিলাটিকে এই প্রাথমিক আয় বৃদ্ধিজনিত প্রকল্পের আওতায় আনা হচ্ছে। যাতে ৬০ বছর পর্যন্ত তাদের সকলের একটি বেসিক আয় থাকে।

সরকারের এই প্রকল্পে, পরিবারের সকল (২৫ থেকে ৬০ বছর) মহিলাই আসতে পারবেন, অর্থাৎ আবেদন করতে পারবেন কিন্তু এখানে লক্ষবস্তু হচ্ছে পরিবারের উন্নয়ন, তাই পরিবারের হেড পাবেন আর্থিক আয়, তবে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন সকলে পাবে। অর্থাৎ একটি বাড়িতে একটি পরিবারের আয়হীন একজন মহিলাই আবেদন করতে পারবেন যা বলা ছিল তার ব্যখ্যা হচ্ছে প্রতি হাঁড়িওলা পরিবার থেকে একজন, তার মানে এই নয় যে বাড়িতে তিনটি হাঁড়ি আছে মহিলা আছে ১০ জন, তাই ১০ জনই পাবেন। মনে হচ্ছে একই বাড়িতে তিনটি পরিবার থাকলে তিনজন পাবেন। অর্থাৎ যে পরিবারের কোনও বেসিক বা প্রাথমিক আয় নেই সেক্ষেত্রে ১ জন মহিলা এই সুবিধা পেতে পারবেন এবং আবেদন করতে পারবেন। এখন বলাই আছে তাদের মধ্যে সরকারের চাকরি করলে ও সরকারের যেকোনও পেনশন পেলে, তারা নাম লেখাতে পারবেন না।

বেসরকারি ক্ষেত্রের কথা বলা না থাকলেও বেসিক ইনকাম মানে একটা ভালো আয় আছে। প্রাথমিক ইনকাম থাকলে তা লুকিয়ে রাখা চলবে না। এখানে জেনে রাখা ভালো পরের বাড়ি বাসন মাজা ও কাজ করে উপার্জন করলেও, সেটা বেসিক ইনকাম বলে ধরা হয় না। রিকশা চালকের স্ত্রীর কোনও বেসিক আয় নেই।

মিড-ডে মিলের রাঁধুনিদেরও কোনও প্রাথমিক স্থায়ী আয় না থাকলে তারাও আবেদন করতে পারবেন। অর্থাৎ অন্য কোথাও কাজ করলে যদি পিএফ বা গ্র্যাচ্যুইটি না থাকে তবে তিনি আবেদন করতে পারবেন। রোজের রোজগার আছে অথচ অনিয়মিত তারাও আবেদন করতে পারবেন। যদি ডেলি ওয়েজে কেউ কোথাও কাজ করেন বা বাজার বিক্রি করেন, বড় দোকানে কাজ করেন স্বামী, ফেরি করেন, কারখানায় ডেলি রোজে কাজ করেন, তারাও আবেদন করতে পারবেন। এখন কে কোথায় কাজ করেন কীভাবে আয় করেন, বাইরের লোকের তা জানা থাকেনা। এক্ষেত্রে স্বামী কিছু রোজগার করলেও সকল স্ত্রী কিন্তু হাত খরচ পান না। হঠাৎ কোনও খরচ করতে হলে এতদিন তিনি ধার করে ঋণ নিয়ে তা করতেন। মূল কথা গৃহকর্ত্রীর হাতখরচ সরকার এখন থেকে দেবে। কারও অনেক ইনকাম থাকলেও সরকারের ধরার ব্যবস্থা না থাকায় আবেদনকারীকে একটি ডিক্লেয়ারেশন দিতে হচ্ছে।

এমন অনেক পরিবার রয়েছে যাদের প্রাথমিক আয়ের কোনও সহায়তা নেই, তাই তারা তাদের দৈনন্দিন ব্যয়ের সংস্থান করতে পারছেন না। সেই সমস্ত মানুষের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার পরিবার প্রতি লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প চালু করেছেন এটা কিন্তু সরকারের আদেশনামায় আছে। এই স্কিমের মাধ্যমে, সরকার পরিবারের একজন মহিলাকে প্রাথমিক আয়ের সহায়তা প্রদান করতে যাচ্ছে। সরকারের তরফে স্বচ্ছ ও নির্ভুল আবেদন কারীকে ২০ শে অক্টোবরের মধ্যে একটি করে কার্ড দেওয়া হবে। ওই কার্ড হচ্ছে তার রক্ষাকবচ।

লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের বাজেটের সুবিধাভোগীরা আগামী ১ লা সেপ্টেম্বর থেকে আর্থিক সহায়তা পেতে শুরু করবেন। তবে সেপ্টেম্বরের শেষ ছাড়া বা অক্টোবর ২০২১ ছাড়া প্রাপ্তিযোগ নাও হতে পারে। ব্যাঙ্কের টাকা আসতে আসতে সেপ্টেম্বর অথবা অক্টোবর, ২০২১ হয়ে যেতে পারে। সে কারণে চিন্তার কিছু নেই। যিনি একবার কার্ড হাতে পাবেন, তিনি এই টাকা মাসে মাসে পেতে থাকবেন। শুধুমাত্র প্রতি বছর তাকে জীবিত থাকার একটি নির্দিষ্ট ফরম জমা করতে হবে আইন অনুসারে।

মহিলা নাগরিকরা এই স্কিমের অধীনে, দুয়ারে সরকার শিবিরের মাধ্যমে গিয়ে লক্ষ্মীর ভান্ডার টেবিলে আবেদন করতে পারবেন, যা রাজ্য জুড়ে ১৬/৮/২১ থেকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, কোথাও কোথাও এক সপ্তাহ দেরিতে হবে। যদি কোন উপভোক্তা ২০ শে অক্টোবর ২০২১ তারিখে, লক্ষ্মীর ভান্ডার কার্ডটি যদি দেরি করেও হাতে পান, তাহলেও তিনি সেপ্টেম্বর ২০২১ থেকে এই আর্থিক সহায়তা পাবেন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার স্কিমের সুবিধা এবং বৈশিষ্ট্য, যোগ্যতার মানদণ্ড এবং কি কি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র লাগবে তা নীচে দেওয়া হলো।

রাজ্য সরকার পশ্চিমবঙ্গে লক্ষ্মীর ভান্ডার যোজনা চালু করলেন এই কারণে, যাতে গরিব পরিবারের ২৫ থেকে ৬০ বছর বয়সী অন্তত এক জনকেও প্রাথমিক আয়ের সহায়তা প্রদান করা যায়। প্রাথমিক খরচ বলতে এখানে গৃহকর্ত্রীর হাতখরচ বুঝতে হবে। এই স্কিমের মাধ্যমে, ওবিসি ও সাধারণ শ্রেণির পরিবারকে প্রতি মাসে ৫০০/- টাকা এবং এস.সি/এস.টি পরিবারকে প্রতি মাসে ১০০০/- টাকা করে প্রদান করা হবে। পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ১.৬ কোটি পরিবার এই প্রকল্প থেকে উপকৃত হবেন। এই স্কিমটি রাজ্যের একটি পরিবারের মাসিক গড় খরচের ( ৫,২৪৯/-) হিসাবকে মাথায় রেখে প্রকল্পটি চালু করা হচ্ছে। এই প্রকল্পের অধীনে থাকা সিঙ্গল অ্যাকাউন্টধারী মহিলাদের সুবিধার আর্থিক পরিমাণ উপভোক্তার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি জমা হবে। অবশ্য জয়েন্ট অ্যাকাউন্টেও কাজ হবে।

এই বছর বয়সের মাপকাঠি ধরা হবে ১ লা জানুয়ারি থেকে। এখন সিঙ্গল অ্যাকাউন্ট নিয়ে রাজ্য জুড়ে সমস্যা আছে। তাই সম্ভবত পরিবারের কারও জয়েন্ট অ্যাকাউন্টও গ্রাহ্য করা হবে। বিষয়টি নিশ্চিত হতে ক্যাম্পে ভালো করে জেনে নিন।

লক্ষ্মীর ভাণ্ডার যোজনার জন্য নির্দেশিকা এবং নিয়মাবলী পশ্চিমবঙ্গ সরকার ঘোষণা করেছে। এই স্কিমের মাধ্যমে, সরকার দরিদ্র পরিবারগুলিকে একটি মাসিক সহায়তা ভাতা দিতে চলেছে। এই প্রকল্পটি গত ৩০ জুলাই ২০২১-এ পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মহিলা ও শিশু উন্নয়ণ ও সমাজ কল্যাণ বিভাগ থেকে আদেশনামা আকারে জারি করা হয়েছে। এখানে লক্ষ্যণীয় যে এই স্কিমটি তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বাচনী ইশতেহারের একটি অংশ ছিল।

প্রথম মাসের টাকা সেপ্টেম্বর ২০২১-এর পর থেকে ২০/১০/২১-এর মধ্যে ব্যাঙ্কে পৌঁছনোর কথা। পরিবারের একজন যোগ্য মহিলা এই স্কিমের আওতায়, মাসে মাসে একটি প্রাথমিক আয়ের সহায়তা পাবেন। পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ১.৬ কোটি পরিবার এই প্রকল্প থেকে উপকৃত হবেন। বাঙালি মেয়েদের পুজোর বোনাস দিয়ে শুরু হবে এবারের দুর্গাপুজো।

এই উপলক্ষে রাজ্য জুড়ে যেসব সরকারী ক্যাম্প আছে অথবা হবে, সুবিধাভোগীরা সেখানে গিয়ে বিনামূল্যে আবেদনের সুযোগ পাবেন। লক্ষ্মীর ভাণ্ডার যোজনার নিয়ম ও নির্দেশিকা: সরকারের তরফে স্বচ্ছ আছে এটা বলা হয়েছে। আবেদনকারী ১৬ আগস্ট ২০২১ থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২১ পর্যন্ত আবেদন করতে পারবেন। তবে সরকার মনে করলে এই সময়সূচী বাড়াতে পারে। তারিখ বাড়তে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে আপনি দেরি করবেন না।

যে সকল পরিবারগুলির মধ্যে কমপক্ষে একজন সদস্য কোনও ভাবে সার্ভিস ট্যাক্স অথবা ইনকাম ট্যাক্স ও বিভিন্ন কর প্রদান করে থাকেন তারা এই স্কিমের অধীনে আবেদন করতে পারবেন না, এটা স্পষ্ট। অর্থাৎ তাদের বেসিক ইনকাম রয়েছে। সাধারণ শ্রেণির মহিলারা ( জেনারেল কাস্ট ও ওবিসি) যাদের ২ হেক্টরের বেশি জমি রয়েছে তারাও এই প্রকল্পের অধীনে আবেদন করতে পারবেন না।

আবেদনকারীকে খেয়াল করতে হবে যে তার আধার কার্ডের নম্বর ও ব্যাঙ্কের নতুন নম্বর ( এই উপলক্ষে করা) যুক্ত হচ্ছে কিনা অথবা পুরাতন অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত করা আছে কিনা। আবেদনকারীর সিঙ্গল অ্যাকাউন্ট হতে হবে কিন্তু এই নিয়ে রাজ্যজুড়ে সমস্যা তৈরি হয়েছে তাই জয়েন্ট অ্যাকাউন্টকে সরকার মান্যতা দিতে পারে, বিষয়টি ক্যাম্পে জানুন। তবে সিঙ্গল অ্যাকাউন্ট থাকা ভালো। সরকার জানিয়েছিল কোনও রকম জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট গ্রাহ্য হবে না। অ্যাকাউন্ট না থাকলে নতুন করে নিন। জিরো ব্যালেন্স সিস্টেমে এই অ্যাকাউন্ট হবে। সিঙ্গল অ্যাকাউন্ট থাকলে পরে জটিলতা থাকবে না।

আধার কার্ডে জন্ম তারিখ না থাকলে, তারও আপডেট করানোর দরকার। কারণ আবেদনকারীর জন্মতারিখ সব জায়গায় একই রকম হতে হবে। এছাড়াও সুবিধাভোগীকে তার আধার নম্বরটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। আধার কার্ড না থাকলে এই আবেদন করা যাবেনা। পশ্চিমবঙ্গের স্থায়ী বাসিন্দারাই কেবলমাত্র এবং যাদের বয়স ২৫ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে তারাই কেবল এই স্কিমের অধীনে আবেদন করতে পারবেন। অবশ্য জন্মতারিখের প্রমাণ থাকলে এই মূহুর্তে আধার কার্ডের জন্ম তারিখের সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। তবে ভোটার কার্ডের জন্মতারিখটি যদি সব জায়গায় ইতিমধ্যে ব্যবহার করে থাকেন, তবে সঙ্গে ভোটার কার্ডটির জেরক্স দেবেন এবং ফরমে ভোটার কার্ডের তথ্য দেবেন। দু জায়গায় দুরকম জন্মতারিখ থাকলে
এই মূহুর্তে এড়িয়ে চলুন।

যেসব মহিলা বা তাদের পরিবারের কর্তা সরকারি খাতে স্থায়ী চাকরি করছেন ও বিভিন্ন রকম পেনশন পান তারা এই প্রকল্পের সুবিধা নিতে পারবেন না। কিন্তু যারা পরের বাড়ি কাজ করেন এবং কোথাও রোজের ভিত্তিতে কাজ করেন অথবা নৈমিত্তিক কর্মী আছেন, অথবা প্রাইভেটে কাজ করেন এবং তাদের স্বামীর কাছ থেকে কোনও হাতখরচ পান না, তিনিও আবেদন করতে পারবেন। মিড-ডে মিলের কর্মীরাও এই প্রকল্পের আওতায় আবেদন করতে পারবেন। মনে রাখবেন স্থায়ী ইনকাম না থাকলেই হলো। স্বামী প্রাইভেটে চাকরি করলেও স্ত্রী অনেক সময় হাত খরচ পান না তাই তিনি অবশ্যই আবেদন করতে পারবেন। মনে রাখবেন পরিবারের কেউ বিধবা পেনশন পেলেও অন্যরা আবেদন করতে পারবেন।

এই স্কিমের অধীনে, এস.সি এবং এস.টি সম্প্রদায়ের প্রতিটি পরিবারকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে, এই স্কীমের সবচেয়ে বড় ট্যুইস্ট হলো এটা। সরকার এই স্কিমের জন্য ১২,৯০০ কোটি টাকার বাজেট বরাদ্দ করেছে।

এই স্কিমের বাস্তবায়ন ১লা জুলাই থেকে শুরু হলো। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে ইতিমধ্যেই কিছু যোগ্য উপভোক্তার ডেটাবেস রয়েছে যেমন সামাজিক নিরাপত্তা স্কিমের ৩৩ লক্ষ মহিলা সুবিধাভোগী। এই সুবিধাভোগীদের এই স্কিমের সরাসরি বেনিফিট ট্রান্সফারের অধীনে আনা যেতে পারে।

বাকি পরিবার সরকারের কাছে আবেদন করবে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নের ফলে রাজ্যের গ্রামীণ ও শহুরে অর্থনীতি শক্তিশালী ও মজবুত হবে বলে সরকার মনে করছে। সুবিধাভোগীরা সেপ্টেম্বর ২০২১ থেকে আর্থিক সহায়তা গ্রহণ করতে পারবেন।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:-

(১).জেরক্স সহ আধার কার্ড (২). জেরক্স সহ জাতি সনদ শংসাপত্র এবং তপশিলি জাতি উপজাতিদের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর নিজের নামে এস.সি/ এস.টি সার্টিফিকেট থাকতে হবে। আবেদনকারী জেনারেল কাস্টে বিয়ে করলেও নিজে এস.সি/ এস. এস.টির সুবিধা পাবেন। (৩) জেরক্স সহ নিজের একই নামের রেশন কার্ড (পদবী পরিবর্তন না হলেও চলবে) (৪). জেরক্স সহ স্থায়ী আবাসিক সার্টিফিকেট। (৫).জেরক্স সহ বয়সের প্রমাণপত্র। (৬). ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণী পৃষ্ঠার জেরক্স ও পাশবই, যেমন ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট বিবরণের পৃষ্ঠা যাতে আই.এফ.এস কোড ও অ্যাকাউন্ট নম্বর আছে। (৭). পাসপোর্ট সাইজ রঙিন ছবি দুই কপি। (৮) নিজের বা পরিবারের কারও চালু মোবাইল নম্বর। যাদের স্কুলের পড়াশোনা নেই তাদের ক্ষেত্রে আধার কার্ডের জন্মতারিখটি গ্রহণ করা হতে পারে, ভ্যালিড। (৯) বয়সের প্রমাণ হিসেবে অ্যাফিডেভিট চলবে কিনা তা ক্যাম্প অফিস বলতে পারবে।

ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট করা নিয়ে একটু সমস্যা হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েদের অ্যাকাউন্ট আছে। বাবার অ্যাকাউন্ট আছে। লক্ষ লক্ষ মহিলাদের নিজেদের কোনও অ্যাকাউন্ট নেই। তাই বিরাট সমস্যা যে এই কদিনের মধ্যে ব্যাঙ্ক পারবে কিনা এত এত মহিলাদের সিঙ্গল অ্যাকাউন্ট তৈরি করে দিতে। এই সমস্যা রাজ্য সরকারও বুঝেছে। মনে হচ্ছে এই নির্দিষ্ট বিষয়টি সরকার বিবেচনা করবে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যেখানে সিঙ্গল থাকবে না, সেখানে জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট চলতে পারে। আরও কয়েকটি সমস্যা হবে। যেরকম জয়েন্ট ফ্যামিলিগুলো স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করিয়েছে একজন বয়স্কা মহিলার নামে কিন্তু আদতে সেখানে একই বাড়িতে দুটি বা তিনটি হাঁড়ি আছে এই ক্ষেত্রে দুই বৌমা আবেদন কীভাবে করবে ? কারণ বড় ছেলে সরকারি কর্মী। মেজ ও ছোট ছেলে কিছুই করে না। এইরকম জয়েন্ট ফ্যামিলির কি হবে ? এইক্ষেত্রে দুই বউমাই পাবেন।

আর একটি প্রবলেম হতে পারে তা হলো যাদের বয়সের কোনও শংসাপত্রই নেই। কেবলমাত্র ভোটার কার্ড বা রেশন কার্ডের জন্ম তারিখ দিয়ে চলে যাচ্ছিল এতদিন। এখনও বহু মানুষ আধার কার্ডে জন্মতারিখ নথিভুক্ত করেননি, এই ধরনের জটিলতার জন্য। এ ছাড়া আর এক ধরনের জন্মতারিখ নিয়ে জটিলতা আছে যা গেঁতোমির জন্য সংশোধন করা হয়নি। কারণ আধার কার্ডের জন্ম তারিখের সঙ্গে তার ভোটার কার্ড ও অন্যান্য জন্ম তারিখের কোনও মিল নেই। এই কারণে একবছর বা ছয়মাসের তফাৎ থেকে গেছে নিজের বয়সের। আমি বলবো সব সময় আধার কার্ডের জন্মতারিখ মেনে নিলে সমস্যার সহজ সমাধান হয়ে যাবে। কারও জন্মতারিখ নেই তার ক্ষেত্রে অ্যাফিডেভিড নিয়ে সমস্যা মেটানো যেতে পারে। টাকার লোভে কেউ যদি দু তিন জায়গায় দু তিন রকম জন্মতারিখ রাখেন, তাহলে ভবিষ্যতে আপনার সমূহ ক্ষতি করতে পারে।

পশ্চিমবঙ্গ লক্ষ্মী ভাণ্ডার প্রকল্পের আওতায় আবেদন করার পদ্ধতি:- লক্ষ্মীর ভান্ডারের আবেদনটি নিয়ে বাড়িতে আনার পর সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি অর্থাৎ নিজের কাছে থাকা কাগজপত্রগুলি সংগ্রহ করতে হবে এবং এরপর লক্ষ্মীর ভাণ্ডার আবেদন ফর্মের অধীনে থাকা সমস্ত প্রয়োজনীয় বিবরণ পূরণ করা শুরু করুন। দয়া করে দুয়ারে সরকার থেকে দেওয়া নিবন্ধন নম্বর টি পূরণ করুন সবার আগে। আবেদন পত্র সংগ্রহ করার দিনে এই নম্বর ফরমে লিখে দিতে পারে, আগে দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প হয়ে তবেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ক্যাম্পে যেতে পারবেন (রেজিস্ট্রেশন করুন)।

স্বাস্থসাথী কার্ডের নম্বরটি ফরমে লাগবে। আগে থেকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড না থাকলে, এই আওতার অধীনে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড প্রয়োজন হবে। তাই এই কার্ড না থাকলেও আবেদন করা যাবে। ফরম্ জমা দিয়ে আধিকারিককে জানাবেন আপনার স্বাস্থ্য সাথী কার্ড হয়নি। তখন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড হবে এবং ততক্ষণ আপনার লক্ষ্মীর ভান্ডারের আবেদনটি অস্থায়ী ভাবে জমা হয়ে পড়ে থাকবে। কিন্তু স্বাস্থ্যসাথী কার্ড না থাকলেও লক্ষ্মীর ভান্ডারে আবেদন জমা করা যাবে অথবা স্থানীয় প্রশাসন এই বিষয়ে সাহায্য করতে বাধ্য থাকবেন। এই বিষয়ে নিয়ম সরকার প্রতিনিয়ত আপডেট করে সংশোধন করছে।

আবেদনকারীকে তার দেওয়া সমস্ত জেরক্স কপিতে নিজেকে স্বাক্ষর করতে হবে। ফরমে স্বাক্ষর করতে হবে। স্বাক্ষর না করতে পারলে টিপসই দিতে হবে।

ফরমে লাগবেঃ পরিবারের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নম্বর। যাদের নেই ফাঁকা থাকবে। আধার নং। আবেদনকারী সুবিধা প্রাপ্তের নাম। মোবাইল নম্বর। ইমেইল আইডি না থাকলে দেওয়ার দরকার নেই)। জন্ম তারিখ। বাবার নাম। মায়ের নাম। স্বামীর নাম। ঠিকানা। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বিবরণী। এই সমস্ত বিবরণ পূরণ করার পর এখন আপনাকে স্বয়ং ঘোষণা ফর্ম পূরণ করতে হবে। যাতে বলা আছে সবকিছু তথ্য আপনি সঠিক ও সত্য দিচ্ছেন। সঙ্গে একটি ক্যান্সেল লেখা চেকের ফাঁকা পাতা, যেখানে স্বাক্ষরের জায়গাটি ক্রস করে দেবেন, চেকের কোথাও সই-স্বাক্ষর করবেন না। একটি ছবি ফরমে মেরে দেবেন আর একটি ছবি ফরমের বামদিকে স্টেপল্ করে দিন। এইসব হলে আসল ফরম্যাট সাবধানে পূরণ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে জমা দিন। অলোক কুন্ডু ©®।





কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...