বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০২২

কলকাতা ইসকনের উদ্যোগে জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা

জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা, কলকাতা ইসকন।
কলকাতা ইসকনের উদ্যোগে জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা

আমার ভাই আশীষ ও আমাদের স্ত্রী মিতাই আজ বেশ কয়েক বছর ধরে কলকাতার ইস্কন মন্দিরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আমাদের বাড়িতে আমাদের হাওড়ার কুন্ডুবাড়িতে ইস্রায়েল প্রভুজিরা উপস্থিত থাকার সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত হন গৌর-তাইয়ের মূর্তিও। প্রায় প্রতি বছর ও উডদের ভগবানের ভজন-পূজন হয়ে আসছে গত বছরের একটি দিনঃ। উত্তর ইসন থেকে আনা প্রসাদ সামাজিক আমরা আত্মীয়-বন্ধুরা সকলে। 

এই সময়কালে ওদের সাঙ্গী হয়ে ময়দানের রথের মেলায় যাওয়ার সময় থেকে ভগবান শ্রীজগন্নাথদেবের পদপ্রান্তে পুষ্পার্ঘ্য দিতে হবে। ভোগ যুগ। মেলাকে নিয়েছি। বহু কলকাতার গঙ্গাবক্ষে, কয়েক বছর আগে শ্রী কৃষ্ণের নৌকাবিহার যাত্রা পুজোলোওও বড়াকার জাহাজে যে পুজোপাঠের সময় উপস্থিত হয়েছিল সেখানে উপস্থিত হতে হতে হতে ধন্য হওয়া। সেই অভিজ্ঞতা ভোলার নয়। 

এবছর ১২ জুন,২০২২ পুণরায় সেই নৌকাবিহার উৎসবেও ওদের সঙ্গী হয়ে যোগ দিয়েছিলাম কলকাতার গঙ্গাবক্ষে। একদিকে চলছে ভজন পূজন ওড়িসি নৃত্য অন্যদিকে গঙ্গার পাড়ের বিস্তৃত সৌন্দর্য। আমাদের বড় পরিবার। তাই আমার ভাতৃবধূ মিতার আগ্রহে আমাদের পরিবারের অনেকেই উপস্থিত হতে পেরেছেন এইসব ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলিতে। ইসকনের ভাবগম্ভীর পুজোপাঠের এইসব ভক্তবাদী অনুষ্ঠানের মর্যাদাই ভীষণ আলাদা। এইসব অনুষ্ঠানগুলি আগাগোড়া খুব সুন্দর ও সুচারুভাবে সুশৃঙ্খলভাবে শুরু ও শেষ হয়। প্রতিবার প্রতিটি ক্ষেত্রে জলযোগ, ফল শরবৎ ও পেটভরে ভোগ খাওয়ার আয়োজন থাকে। নৌকাবিহার অনুষ্ঠানটি সম্পর্কে দু একদিনের মধ্যেই আলাদা করে লিখবো বলে ভেবে রেখেছি। নৌকাবিহার উৎসবে গিয়ে ওখানেই ভাতৃবধূ মিতা আমার স্ত্রীকে জানালো ভগবান জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা মহোৎসবে কি তোমরা যাবে ? আমরা রাজি হয়ে গেলাম।

গতকাল ১৪.৬.২০২২ ছিল সেই স্নানযাত্রা উৎসব। যে উৎসব পুরীতে বহু যুগ থেকে চলে আসছে। এখানে বলে নেওয়া ভালো যে ভক্তিবেদান্ত স্বামী শ্রীল প্রভুপাদ প্রভুজি কলকাতায় ১৯৭০-এ ইসকনের প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং ১৯৭২ সর্বপ্রথম কলকাতায় ইসকনের রথযাত্রা শুরু হয়েছিল। এখানে আমাদের জানা দরকার যে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর উদ্যোগেই যাত্রাপালা ও রথযাত্রা বঙ্গে শুরু হয়েছিল। আর শ্রীল প্রভুপাদ মহোদয় হরে কৃষ্ণ হরে রাম এই মন্ত্রকে সঙ্গে নিয়ে সারা পৃথিবীতে তৈরি করলেন ইসকন মন্দির। সেখানে পূজিত হন রাধা ও কৃষ্ণ, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু আর গৌর নিতাই।

ধ্যানজ্ঞানে শুধুমাত্র কৃষ্ণের নাম ভজনা করাই হল ইসকনের ভক্তদের মূল কাজ। হরে কৃষ্ণ হরে রাম এই মন্ত্র সঙ্গে সবসময় উচ্চারণ করা যায়। কলকাতার মিন্টোপার্ক অ্যালবার্ট রোডের ইসকন মন্দির খুলে যায় খুব ভোরে ৪.৩০ টায়। মাঝে বন্ধ থাকলেও আবার বিকেলে খুলে বন্ধ হয় রাত ৮.৩০ টায়। বর্তমানে এই মন্দিরটি উত্তমকুমার সরণিতে অবস্থিত। রাধাগোবিন্দ মন্দির হিসেবেই পরিচিত। এই গৌরবাণ্বিত শ্রীচৈতন্য ভক্তিবাদের স্রোত ধরে এখানে পূজিত হন ভগবান জগন্নাথ দেবও।

তাই আমরা রাজি হয়ে গেলাম। ভগবান শ্রীজগন্নাথ মহাপ্রভুর স্নানযাত্রাকে পরিলক্ষিত করতে এবং সেই মাহাত্ম্য দর্শনের সাক্ষী থাকতে গতকাল (১৪.৬.২০২২) -এ দক্ষিণ কলকাতার গুরুসদয় দত্ত রোডের ইসকন হাউসে উপস্থিত হয়েছিলাম বিকালে। আসলে কলকাতার ইসকন হাউসটি হল ইসকনের কার্যালয়। মন্দিরটি কিন্তু বেলভিউ হসপিটাল ও বিড়লা স্কুলের কাছে। 

আমরা হাওড়া থেকে গাড়ি করে বিকাল ৫.০০ টার বেশ কিছু আগেই উপস্থিত হলাম ইসকন হাউসে। মুখ্যমন্ত্রী খোঁজ নিয়েছেন এই স্নানযাত্রা সম্পর্কে। গিয়ে দেখলাম পর্যাপ্ত পুলিশ আছেন সেখানে। গেটে ঢোকার আগে জুতো পরিত্যাগ করে তিলক আঁকার লাইনে দাঁড়াতে হল। ভেতরে সুদৃশ্যভাবে প্যান্ডেল হয়েছে। চেয়ার ও ফরাস পাতা আছে। একসঙ্গে হাজার দেড়েক লোকের স্নান সেখানে। কিন্তু ভক্তদের সংখ্যা থেমে নেই সংখ্যায়। মাইকে বেজে চলেছে মন্ত্র উচ্চারণ। ভজন গান। মন্ত্র মানে শ্রীল প্রভুপাদের রেখে যাওয়া হরেকৃষ্ণ নামজপ। মাঝেমধ্যে ভজন সংগীতও তাই। দূরে কাছে সারিবদ্ধভাবে মেয়েরা ও ছেলেরা কৃষ্ণনামে গা দোলাচ্ছেন। নাচ হচ্ছে ছোট ছোট গ্রুপে। 

এরমধ্যেই আশীষ-মিতা আমাদের ডেকে নিয়ে গেল যেখানে দাঁড়িয়ে সমস্ত কিছু অবলোকন করছেন কলকাতা ইসকনের ভাইস প্রেসিডেন্ট অনঙ্গ প্রভুজি।
পুরীর এক রাজার নাম তো অনঙ্গ ভীমদেব। যাইহোক আমরা নতমস্তকে সুদর্শন, সুগায়ক ও সুবক্তা অনঙ্গ প্রভুজির সঙ্গে সাক্ষাৎ করলাম ও ছবি তোলা হল ওনার সঙ্গে। দেখতে দেখতে অনেক ভক্ত ওনাকে প্রণাম করলেন। একটু পরেই উনি নিজেই সঙ্গীত পরিবেধন করবেন। মাইকে দূর থেকেই শোনা যাবে সেই গান। ভগবানকে শুদ্ধিজলে ও দুধ দিয়ে স্নান করাবেন সকল উপস্থিত ভক্তবৃন্দ। এ পরম সৌভাগ্য সকলের।

পুজোপাঠের মধ্যে ততক্ষণে তিন দেবতার অঙ্গসজ্জা শুরু হয়ে গেছে। নানা উপাচারে ভগবানের মহা স্নানযাত্রার বেদি রচনায় ইসকনের প্রভুজিরা ব্যস্ত। নির্দিষ্ট সময় মেনে মহিমান্বিত উপাচারের নানা উপাদানগুলি সৌন্দর্যের সঙ্গে বিগ্রহগুলিতে সঞ্চিত হচ্ছে ধীরে ধীরে। হাজারের বেশি ভক্তবৃন্দ দাঁড়িয়ে বসে হাত জোড় করে সুরে সুর মেলাচ্ছেন, তাদের মাথা দুলছে ভক্তিরসের আচার অনুষ্ঠানে, মাহাত্ম্যে কেউ কেউ চোখ বুজে আছেন। সম্মিলিতভাবে  মোবাইলগুলিতে ভিডিও ফুটেজ তৈরি হচ্ছে ভেতরে ভেতরে। গৈরিক বসনধারী প্রভুজিরা প্রখর দৃষ্টি রেখেছেন অনুষ্ঠানের ভাবগম্ভীর পরিবেশকে ত্রুটিমুক্ত করতে। ভক্তদের উল্লাস শুধুমাত্র হরেকৃষ্ণ হরে রাম উচ্চারণের গভীরতায়। সমগ্র পর্বটির লীলামাহাত্ম্যে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন তারা। উপস্থিত আছেন পন্ডিত মানুষ থেকে সাধারণ চাকুরিজীবী বড় বড় ব্যবসায়ী থেকে কলকাতায় বসবাসকারী পশ্চিম ও দক্ষিণ ভারতের বিশাল জনসমষ্টি। শ্রীকৃষ্ণের প্রবল ভক্ত তাঁরা। একই সঙ্গে জগন্নাথ দেবের ভক্তও তাঁরা। হরিনাম জপছেন কেউ কেউ। হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে স্নানযাত্রায় যারা অংশ নিয়েছেন তাঁদের সকলের কাছে শ্রীকৃষ্ণ ভগবান স্বরূপ তো বটেই স্বতন্ত্রভাবে তাঁর নামকীর্তণে এইসব ভক্তদের আনন্দ ও অশ্রু মিশে যাচ্ছে।

শিশু থেকে বয়ঃবৃদ্ধ সকলেই এই মহান স্নান পরিত্যাগ করতে চান না। যারা বিকাল থেকে এসে উপস্থিত হয়েছেন তাদের কেউ ইসকন হাউস সংলগ্ন "গোবিন্দা" রেস্টুরেন্টে গিয়ে সামান্য শরবৎ মিষ্টি চপ খেয়ে এলেন। যদিও তাদের সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। অনেকেই এই পর্বে অপেক্ষা করে আছেন আগে সুশৃঙ্খল ভাবে ভগবানকে স্নান করাতে যেন তিনি পারেন। সুগন্ধি জল, দই, হলুদ, চন্দন ফুল মিশ্রিত সেই জলে ভগবান বহুক্ষণ ধরে স্নান করছেন। প্রভুজিরা ঝারার জল ঢালছেন জগন্নাথ সুভদ্রা বলরামের মাথায়। যেন স্নানের গরিমায় ভক্তদের মনোবাঞ্ঝা পূরণ হচ্ছে। সকলে হরিধ্বনি দিচ্ছে, উলু দিচ্ছে শাঁখ বাজছে।

ভগবানের স্নানের জন্য রীতি মেনে কয়েক ড্রাম দুধ এসেছে মাটির ছোট ঘড়া এসেছে কয়েক হাজার। কেউ যেন আজ বঞ্চিত না হন এই স্নানযাত্রার ভক্তিরসের আহ্বান থেকে। ভগবান এই মহাস্নানে আন্দোলিত। তিনি ভক্ত ও ইসকনের প্রভুজিদের এই চন্দন প্রদান, সুগন্ধি জলঢলায় দুধ ঢালায় মজা পাচ্ছেন সর্বক্ষণ। আজ বুঝি সমস্ত গ্রীষ্মের অবসানের দিন। একটা সময় থামলো গান ও ভগবানের পরিচর্যা শুরু হলো পর্দার আড়ালে। শেষে প্রথা মেনে গজবেশে মুকুট মণিমুক্তায় সজ্জিত হয়ে ভক্তদের দেখা দিলেন। ইতিমধ্যে ভগবান প্রসাদ ভক্ষণ করেছেন। কাউন্টারে স্লিপ দেখিয়ে ব্যাগভর্তি প্রসাদ নিতে চললো সকলে। ভজন হয়ে চলেছে। বের হচ্ছি যখন তখন প্রায় ৯.০০ বেজে গেছে। ভক্তরা চলে যাচ্ছেন কেউ কেউ। ঝেঁপে বৃষ্টি এলো। আমরা ভিজতে ভিজতে ভগবান জগন্নাথের এই লীলাভূমি থেকে বেরিয়ে পড়েছি। 

স্কন্দপুরাণে জগন্নাথ দেবের রথ যাত্রার কথা উল্লেখ আছে। স্নানযাত্রার কথাও বলা হয়েছে, ওই দিন ভগবান জগন্নাথ দেবের শ্রীবিগ্রহকে যে বা যিনি দর্শন করবেন তিনি অশ্বমেধ যজ্ঞের সমান ফল লাভ করবেন। জৈষ্ঠ মাসের পূর্ণিমায় এই স্নানযাত্রা অনুষ্ঠানটি হয়। এই স্নান যাত্রার আর একটি দিক হল, এই সময়ে আমাদের কাছে স্নানের মতো উপকারী জিনিস আর কিছু নেই, জল হচ্ছে প্রখর দাবদাহ দূর করতে অসীম ক্ষমতার অধিকারী আর সেই জল আমাদের শীতল করে তোলে।

স্নানযাত্রার আসল সময় শুরু হয় সন্ধ্যার ঠিক পূর্ব মূহুর্তে। ওইদিন জগন্নাথ, বলভদ্র, সুভদ্রা, সুদর্শন চক্র ও মদনমোহনের বিগ্রহ একটি বিশাল শোভাযাত্রা সহকারে পুরির মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে বার করে স্নানবেদীতে এনে রাখা হয়। বিশেষ করে যারা প্রকৃত ভক্ত তারাই
প্রধানত এই সময় পুরীতে জগন্নাথকে দর্শন করতে আসেন। এই কারণে লক্ষ লক্ষ পূর্ণার্থীর সমাগম হয়।

স্নানযাত্রার দিন মন্দিরের উত্তর দিকের সোনার-কূপ থেকে জল এনে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে সেই জলের আগে শুদ্ধিকরণ করা হয়। জগন্নাথ দেবের স্নান যাত্রায় শাস্ত্র মতে কিছু রীতি বলা আছে। জগন্নাথ দেব হলেন স্বয়ং নারায়ণ। জগন্নাথ শব্দের অর্থ হলো এই জগতের ঈশ্বর। ঈশ্বরের স্নানযাত্রায় আপনি উপস্থিত হলে আপনার অনিচ্ছুক পাপগুলির সহজেই খন্ডন হয়, এটাই বিশ্বাস। ধরে নেওয়া হয় যদি কেউ ভক্তিসহকারে একবার এই স্নানযাত্রা মহোৎসবের সময় বিগ্রহের স্নান দর্শন করেন অথবা জলে বিগ্রহকে স্নান করাতে সুযোগ পান তবে তিনি এই সংসারের বন্ধন থেকে সুনিশ্চিতভাবে মুক্তি লাভ করবেন। ঋষি জৈমিনি বলেছেন যিনি এই স্নানযাত্রা দর্শন করবেন তিনি সমস্ত তীর্থের স্নানের থেকে শতগুণ অধিক ফল লাভ করবেন।

স্কন্দ পুরাণ অনুসারে রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন জগন্নাথ দেবের কাঠের বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আর সেইদিন থেকেই এই স্নান যাত্রার উৎসব অনুষ্ঠান চলে আসছে আজ পর্যন্ত। স্নানযাত্রাকে তাই জগন্নাথ দেবের আবির্ভাব তিথি বা জন্মদিন হিসেবেও পালন করার রীতি। এইদিন জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রাদেবীকে বিশেষভাবে তৈরি বেদীতে প্রথমে নিয়ে আসা হয়। মন্দির প্রাঙ্গণে বিশেষভাবে তৈরি করা এই বেদীকে স্নান বেদী বলা হয়। তোরণ পতাকা চাঁদোয়া নানা বর্ণের সহযোগে সমস্ত কিছু দিয়ে সুসজ্জিত করা হয় স্নানবেদীর চতুর্দিক। ১০৮ ঘড়া পবিত্র জলে মেশানো হয় গন্ধপুষ্প, হলুদ, চন্দন ও সুগন্ধি। বিগ্রহকে সাজানো হয় ফুল সুচন্দন গন্ধদ্রব্য দিয়ে। জ্বালানো হয় কর্পূর, চন্দনকাঠের গুঁড়ো, ধূপ। পঞ্চ ও ১০৮ প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করাও হয়।স্নানযাত্রার পূর্বে জগন্নাথ বলরাম সুভদ্রাদেবী কে রেশমি কাপড় দিয়ে আবৃত করা হয়। ১০৮ জলপূর্ণ সোনার ঘড়া দিয়ে বিগ্রহের অভিষেক সম্পন্ন হয়। স্নানযাত্রার পর জগন্নাথ দেবের মন্দির পনেরো দিন বন্ধ থাকে। পনেরো দিন পর নেত্রউৎসবে তার নয়ন খোলে বলে মনে করা হয়। পুরীকে মর্তের বৈকুণ্ঠ বা দ্বারকা বলেও বিশ্বাস করা হয়। ভক্তদের বিশ্বাস স্নানযাত্রার পর জগন্নাথদেবের কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসে। তাই রথযাত্রার পর্যন্ত তিনি বিশ্রাম নেন, আবার রথের দিন আত্মপ্রকাশ করেন এবং তখন  রাজবেশে সামনে আসেন। পুরীতে ১২ বছর অন্তর নব কলেবর হয়। জ্বর এলে লেপ-কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকেন জগতের নাথ। শোনা যায় একটু সুস্থ হলে এই সময় করা হয় তাঁর অঙ্গরাগ। অর্থাৎ ভেষজ রং দিয়ে জগন্নাথ দেবকে রাঙানো হয় নতুন করে। এই পর্বে গর্ভগৃহের দরজা বন্ধ থাকে। এই সময়ে তাঁকে রাজবৈদ্যের অধীনে একটি সংরক্ষিত কক্ষে রাখা হয়। এই অসুস্থতার পর্বটিকে বলা হয় 'অনসর'। এই পর্বে জগন্নাথের দর্শনও পাওয়া যায় না। কথিত আছে রাজবৈদ্যের পাঁচন খেয়ে জগন্নাথ আবার সুস্থ হয়ে উঠলে ভক্তরা আবার তাঁর দর্শন পান। 

এই অধিকারের পর জ্যৈমা থেকে আষাঢ়ী আমাবস্যা পর্যন্ত ভগবানকে জনসাধারণ রাখা থেকে ১৫ দিন। এই কয়দিন কেবলমাত্র তাঁর নিত্যপুজা শুধু করতে থাকে। পরো দিন পর ভগবানকে আবার নবসাজে মন্তব্য আনা হয়। আবার জগন্নাথদেবকে সবার সামনে জনসাধার দর্শনের জন্য আসা হয় ১৬ তাঁকে। কভিরাজি পাঁচন জ্বরে জগন্নাথের। তার পর হয় নবযৌবন পরদিন রথে চেপে মাসির ঘরবাড়ি উদ্দেশে রওনা হন জগন্নাথ, বলরাম এবং সুভদ্রা। স্নানযাত্রার পরে দেবতাদের বিগ্রহ গজান পোশাক পরানো হয়। কথিত আছে, জগন্নাথ গণেশভক্তদের কাছে তানতে গজান পোশাক পরেন তিনি। ©® অলোককুন্ডু 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...