শনিবার, ৪ জুন, ২০২২

কে কে অক্সিজেন নিলে বেঁচে যেতেন/ অলোক কুন্ডু

২৯/৭/২০১৯-এ লিখেছিলাম। সমতলেও সকলের এই লেখা পড়া উচিত। শিল্পীদের মঞ্চে ওঠার আগে অক্সিজেন নেওয়া উচিত।

গাছপালাহীন উচ্চতম স্থানে অক্সিজেনের প্রভাব
©® অলোক কুন্ডু 

উচ্চতা ১৭,০০০ কিংবা ১৮,০০০ উঠে শ্বাস নিতে
কষ্ট না হলে ভালো কিন্তু লাদাখের লে-তে ১১,০০০ -এ উঠে সব থেকে সমস্যায় পড়েন
সাধারণ মানুষ । হোমিওপ্যাথি কোকা-৬ থেকে
পর্যাপ্ত অক্সিজেন যে পাওয়া যায় এবং সেই অক্সিজেন যে শরীরে সাতদিন স্টে করানো যায়
এরকম অকাট্য প্রমাণ নেই (একমাস আগে থাকতে খেলেও যে এর উপকার পাওয়া যাবে তার কোনও ঠিক ঠিকানা নেই ) ,তবু যারা হিমালয়ে যান তারা বিশ্বাস করেন এবং প্রতিদিন দু-তিনবার কোকা-৬ খান । এই পর্যন্ত সব
ঠিক আছে । কিন্তু লাদাখের (লে ) সরকারি হাসপাতালের ট্যুরিস্ট ওয়ার্ডে ঘন্টায় ঘন্টায় অক্সিজেনের ঘাটতি নিয়ে যে সমস্ত যুবক থেকে বুড়ো ভর্তি যারা হয়ে থাকেন তারাও নিয়মিত কোকা-৬ খেয়ে আসছিলেন বেশ কয়েকদিন , কিন্তু কোকা-সিক্স নয় অক্সিজেন থেরাপিই যে একমাত্র ওষুধ এটা প্রমাণিত হয়ে যায় হাসপাতালের ওই ১ থেকে ৯ নম্বর বেডে যারা
এসে সুস্থ হয়ে ফিরে যান । আমাকে সমতলে 
যে কখন‌ও কোনও ডাক্তার অক্সিজেন
মাপিয়েছে এরকম অভিজ্ঞতা একেবারেই নেই ।
আসলে এখানকার বড় বড় ডাক্তাররাও তা জানেন না যে প্রতিটি রোগীর অক্সিজেন লেভেল মাঝেমধ্যে মাপা দরকার এমনকি সমতলেও । 
এই দরকারি বিদ্যা সমতলের ডাক্তারদের এত অজানা কেন তার কোনও কারণ দেখিনা । 
এটা এখন জেনেছি বলে আমার কাছে খুব আশ্চর্য লাগছে এই জেনে যে এখানকার কোনও ডাক্তারের কাছে মানব শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ মাপার সামান্য যন্ত্রটি থাকেনা , অথচ আপনি লাদাখের ওপিডিতে গেলে আগে আপনার অক্সিজেন লেভেল সবার আগে 
মাপবেই মাপবে । তারপর তার অন্য চিকিৎসা । আপনি এই অবধি পড়ে স্বাভাবিকভাবেই 
বলবেন এখানে দরকার পড়েনা তাই । তাহলে আমার উত্তর হলো এটাই আমাদের কাছে একটা মারাত্মক ফল্ট অথবা অজ্ঞতা । সমতলেও এই লেভেল মাপা অত্যন্ত আবশ্যিক। রক্তের অক্সিজেন বহন ক্ষমতা কম হলে প্রথমত
মানুষের ঘুম আসেনা , রাতের পর রাত জেগে কাটাতে হয় । তাই সমতলেও লাদাখের মতো
অক্সিজেন থেরাপির ব্যবস্থা একান্ত আবশ্যিক ।
প্রথমত রক্তের কোনও ঘাটতি থাকলে অক্সিজেন
বহন শরীরে কম হয় কিন্তু মাসে একবার দুবার
চার/পাঁচ ঘন্টা অক্সিজেন থেরাপি নিলে একটা
মানুষের কী কী উপকার হয় সেটা জানা দরকার
(১) মানুষটার হার্টের অসুখ হ‌ওয়ার চান্স অনেকটা কমে যায় (২) ভালো ঘুম হয় (৩) অক্সিজেনের ঘাটতির জন্য যাদের সর্দিকাশি লেগেই থাকে সেই থেকে সে নিস্কৃতি পায় , বয়স্কদের নিউমোনিয়া হ‌ওয়াটা থেকে অনেকটা বাঁচানো যায় । (৪) শরীরে একটা তাজা ভাব আসে। এখন আপনি বলতেই পারেন সকালে মর্নিং ওয়াক করলে শরীরে অক্সিজেন যায় ।
কিন্তু নেড়া জায়গায় ভোরে উঠে যতই দৌড়াদৌড়ি করেন না কেন কিছুতেই অক্সিজেন আপনি আয়ত্ত করতে পারবেন না বড় জোর আপনার ফিটনেস বাড়বে কিন্তু হাজার দৌড়ঝাঁপ করা মানুষের শরীর যদি অক্সিজেন ঠিকমতো বহন করতে অপারগ হয় তখন তার ফিটনেস কোনও কাজে আসবে না । যেমন ধরা যাক রক্তে শর্করা বা সুগার থাকলে অক্সিজেনের পরিমাণ বহন শরীর ঠিকমতো করতে পারবে না । এইসঙ্গে যদি
লিভার-প্যানক্রিয়াস কমজোরি হয় তবে ফ্যাট
ও প্রোটিন সেই ব্যক্তি উপযুক্ত পরিমাণে নিতে
পারবে না এবং তাই শরীরে অক্সিজেন প্রবাহিত
কম হবে । মোদ্দাকথা রক্ত কমজোরি হলে অক্সিজেন শরীরে কম যাবে । ৭৫ % অক্সিজেন
শরীরে থাকলে ভবিষ্যতে ব্যক্তির জীবনে নানা
অসুখ এসে পড়তে পারে । ৮০ থাকাটা অত্যন্ত
প্রয়োজনীও । এই অক্সিজেন লেভেল বলে দেয় মানুষের সর্দিকাশি, নিউমোনিয়া, হার্টের প্রবলেম ও ঘুমের ব্যাঘাত হয় কি না ? এখন স্থানীয় কোনও ডাক্তারকে ঘুম হয়না বললে তিনি এক সপ্তাহের একটা অ্যালজোলাম কোর্স করাবেন কিন্তু জীবনে বলবে না অক্সিজেন মাপার কথা । যাদের অক্সিজেনের দুর্বলতা আছে তাদের খাওয়াদাওয়াতে নজর দিতে হবে । সপ্তাহে তিন
দিন কলা ডিম ও পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে ।
কিন্তু যদি এর মধ্যে কার‌ও সুগার থাকে তবে তিনিও এই পুষ্টিকর খাবার খাবেন এবং সপ্তাহে
একবার সুগার টেষ্ট করে দেখে নেবেন । 
লাদাখে যারা প্রথম দিন যান তাদের হোটেলের
ঘরে চুপচাপ বসে আরাম করতে বলা হয় এই
কারণে যে , চারপাশের আবহাওয়ার সঙ্গে তার
শরীরকে মানিয়ে নিতে হয় তবুও বহু মানুষের কোনও কিছুই উপলব্ধি হয়না । মনে রাখতে হবে ১১,০০০ ফুট উচ্চতা লাদাখের , যেখানে স্বাধীনতার ৭৫ বছরে তেমন বনসৃজন হয়নি । একে শীতল মরুভূমি তার ওপর উচ্চতা এবং পর্যাপ্ত গাছ না থাকায় অক্সিজেনের সমূহ অভাবের মুখে গিয়ে পড়তে হয় সমতলের মানুষকে এবং কলকাতার চিকিৎসকদের সে বিষয়ে কোনও সচেতন করার প্রবণতা নেই 
এবং  বাংলার চিকিৎসকমহল খানিকটা অচেতন বলাই যায় । চিকিৎসকরা শুধু জানেন সুগার লেভেল কমাবাড়ার উপর অক্সিজেনের প্রভাব পড়তে পারে । বড় জোর এক সপ্তাহের ডায়োমক্সের
একটি কোর্স করতে বলেন । এখানে বলে রাখা
দরকার অক্সিমিটার মেশিনে অক্সিজেন সহজে
মাপা যায় । হ্যান্ডি মিনি অক্সিমিটার দিয়েও মাপা যায় আবার সামান্য বড় মিটার দিয়েও মাপা যায় । তবে ABG পদ্ধতিতে মাপতে গেলে রিস্টের কাছে ধমনী থেকে রক্ত নিয়ে মাপতে হয় । তবে
লে-তে এক কেজি ওজনের অক্সিমিটারেই শরীরের অক্সিজেন মাপতে দেখেছি । পকেটে
রাখা যায় অক্সিমিটার‌ও পাওয়া যায় । পরীক্ষার
সময় লাদাখে ৬০% বা তার কম অক্সিজেন শরীরে থাকলে অক্সিজেন থেরাপিতে মিনিমাম ১২ ঘন্টা
মানুষটিকে রাখতেই হবে । শরীরে সুগারের সমস্যা
না থাকলে একটা ডেক্সোরেঞ্জ ইঞ্জেকশন করে
ছেড়ে দেওয়া যায় যদি অক্সিজেন লেভেল থাকে
লাদাখে ৭০% কম । তবে ডায়ামক্স খেলে ( প্রতিদিন
২টি খাবার পর তিন দিনের কোর্স ) শরীরের নানা
স্থানে চুলকানি বের হতে পারে কোনও কোনও
ক্ষেত্রে । ৮০% অক্সিজেন লেভেল লাদাখে ( Good) 
থাকলেও কিছু অসুবিধা প্রথমদিন লাদাখে
দেখা দিতে পারে । যেমন ঘুম হবেনা , লুজ মোশান হবে , ঘাড় ব্যাথা করবে । এটা হল কমন
ম্যাটার । এছাড়াও যদি বমি হয় , বুকে সর্দি 
বসে যায় , জ্বর হয় ও হাত মুখ পা ফুলে যায়
তাহলে বুঝতে হবে রক্ত অক্সিজেন প্রবাহিত করতে পারছে না । সোজা হাসপাতালে যেতে
হবে । না শুয়ে না ঘুমিয়ে বসে বসে মুখে মাস্ক
লাগিয়ে সরাসরি ন্যাচরাল ভাবে অক্সিজেন
থেরাপির সাহায্য নিতে হবে । বেডে ২০০/-টাকা বেড ভাড়া দিয়ে ভালো একটা ব্যবস্থাপনার 
মধ্যে অবজারভেশনে কাটাতে হবে । এখানে
চারঘন্টা অন্তর অক্সিজেন রিমুভ করে আধঘন্টার
বিশ্রাম দিয়ে মাপা হবে দিনে দুবার চিকিৎসকের
পরামর্শ পাওয়া যাবে । বুকে সর্দি বসে না গেলে ১২-১৮ ঘন্টার অক্সিজেন কোর্স করলেই
অক্সিজেন লেভেল ৮৫-৮৮ লাদাখে, দাঁড়িয়ে যায় । সঙ্গে
ডায়মক্স ওষুধ দিনে দুবার ও দিনে চার /পাঁচ লিটার জল পান করতে হবে এবং ডিম কলা 
রুটি প্রোটিনেক্স ,হরলিক্স এক‌ই সঙ্গে খেয়ে 
যেতে হবে । মোদ্দাকথা লাদাখ যাওয়ার আগে 
কোকা-৬ নয় আপনাকে হিমগ্লোবিন পরীক্ষা করাতে হবে । এক সপ্তাহ আগে থেকে একটা
ডেক্সোরেঞ্জ ক্যাপসুলের কোর্স দিনে দুবার খাওয়ার পর খেয়ে যেতে হবে যতদিন না লাদাখ
ছেড়ে চলে আসছেন । অক্সিজেন বৃদ্ধির সঙ্গে
ডেক্সোরেঞ্জের একমাত্র সম্পর্ক । রক্তাল্পতা থাকলে ডাক্তার দেখিয়ে ডেক্সোরেঞ্জ ইঞ্জেকশন নিয়ে লাদাখ যান আর‌ও সমস্যা হলে হ্যান্ডি অক্সিজেন সিলিন্ডার সঙ্গে নিতে হবে , লেতে
ওষুধের দোকানে পাওয়া যায় । পথে খারদুঙলা
(১৮,৩৮০) পাশে যদি অক্সিজেনের ঘাটতি হয় তবে কোনও চিন্তা নেই ওখানে মিলিটারিরা পারলে সারারাত সেবা দিতে তৈরি থাকেন । গাড়িতে বসে না থেকে মিলিটারিদের সাহায্য
নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ । তবে অক্সিজেন ঘাটতির ভয়ে ট্যুর ক্যানসেল করে দেওয়ার কোনও মানে হয়না । চারশো টাকায় পর্যন্ত
হ্যান্ডি অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনতে পাওয়া যায়
তাও সঙ্গে নেওয়া যায় । মাঝারি অক্সিজেন সিলিন্ডার বহন কোনও ভয়ের ব্যাপার নয় ।
তাই ঘন্টা ১০/১২ অক্সিজেন নিয়েই বিভিন্ন 
ট্যুর পার্টি তাদের সদস্যদের হাসপাতাল
থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে সঙ্গে সিলিন্ডার ভাড়া 
করে নিয়ে বেশ ঘুরে আসেন । লাদাখে অক্সিজেনের ঘাটতি কোনও সমস্যা নয় । 
বরং যদি সিসটেমগুলো জানা থাকে
তবে দ্রুত হাসপাতালে অ্যাডমিশন করানো 
বুদ্ধিমানের কাজ । ট্যুরিস্টকে ভয় দেখালে তাকে
অক্সিজেন আর‌ও পেয়ে বসে তাই অনেক মানুষ
ভীতির শিকার হয়ে যান । আমি বলবো লাদাখ
যাওয়ার আগে ১৫ দিন আগে থেকে ডিম সিদ্ধ,
কলা ও প্রোটিনেক্স খান । সপ্তাহে দুদিন
চিকেন-স্ট্রু দুপুরে একটু ফল , লেবু ,খেঁজুর,
বাদাম ছোলা ভিজিয়ে খান পরিমাণ মতো 
যতটা আপনি নিতে পারেন । সঙ্গে ডেক্সোরেঞ্জ
বা এইসব খাবারের প্রকোপ যাতে লিভারে না
পড়ে তার জন্য সরবিলিন সিরাপ দুবার খেলে
আপনার লাদাখে আপনি তরতাজা থাকতে পারবেন ( লাদাকে যাওয়ার পর সরবিলিন ছাড়তে হবে কারণ ওখানে গেলে পেট লুজ এমনিতেই থাকবে তাই সরবিলিন আর‌ও লুজ করাতে পারে তাই এটাও নিজের শরীরের মতো করে ব্যবহার করা উচিত)কিন্তু সমতলে এসে অক্সিজেন থেরাপি
সম্পর্কে সরকারের ভাবনা কী এটা আরটিআই
করে জেনে নিলে ভালো হয় --অলোক কুন্ডু ।

পুনশ্চঃ কতকগুলি অক্সিজেন ঘাটতির সিমটম 
কমন সিমটম (১) মাথা ও ঘাড় ব্যথা (২) ঘুম
না আসতে চাওয়া (৩) হঠাৎ পায়খানার প্রকোপ (৪) কান ভো ভো করা (৫) নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ 
এছাড়া অন্যান্য সিমটম : (১) চোখের নীচ ফুলে যাবে (২) হাতের আঙুল পায়ের পাতা
ও মুখ ফুলে যাওয়া (৩) হঠাৎ জ্বর, সর্দি (৪)
শুয়ে পড়তে ইচ্ছে করবে । (৪) কানে আগে
থেকে কোনও ইনফেকশন থাকলে রস গড়াবে ।
পরীক্ষা : অক্সি মিটার দিয়ে পরীক্ষার সময়
জোরে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে হয় । বসে পিঠ সোজা করে পরীক্ষা করা উচিত । তর্জনীতে অক্সিমিটার ক্লীপের মতো এঁটে দেওয়া হয়।কিন্তু আঙ্গুল পরিষ্কার করে নেলপলিশ তুলে পরীক্ষা করার নিয়ম ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...