মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০২২

ভূবনেশ্বরের লিঙ্গরাজ মন্দির

 ভূবনেশ্বরের লিঙ্গরাজ মন্দিরে যখন প্রথম আসি তখন আমি স্কুলে পড়িনা। তখন মামাদের আদরে মানুষ হতাম কলকাতার জোড়াসাঁকোয়। বলরাম দে স্ট্রীটের ছাদের ঘরে কিন্তু আমার বড়মাসি, ছোটমাসি সন্ধ্যায় রেডিও শুনতে শুনতে রীতিমতো আমাকে পড়াতেন প্রতিদিন। ঠিক ওইসময় ততক্ষণে পাশেই খোলা ছাদের কিছুটা ঢাকা অংশে ইলেকট্রিক হিটারে গাওয়া ঘিয়ের পরটা অথবা লুচি তৈরি শুরু হয়ে যেত, হয় দিদিমা কিংবা বড়মাসি উঠে গিয়ে ভাজতে লাগতো। সেই গন্ধে পড়ায় মন বসতো না কিছুতেই। তখন বয়স ৪ অথবা ৫/৬ হবে।

● সেই সময় বা পরে মাঝে মাঝেই মামাদের সঙ্গে আমি ভূবনেশ্বরে অথবা মধুপুরে বেড়াতে গিয়েছি। গিয়ে একমাস করে থাকা হতো। ভূবনেশ্বরে আমার অনেকটা ছোটবেলা ও বড়বেলা কেটেছে। ওখানে মামাদের
” যোগেশ নিবাস ” লেখা বাড়ির সামনে দিয়ে কদাচিৎ বাস চলে যেত। যার চেহারা ছিল এখনকার মিনিবাসের থেকেও ছোট। মুখটা সামনে বেরিয়ে থাকতো খানিকটা। পাশেই ছিল লিঙ্গরাজ টেম্পল। শুনেছি মাত্র ১৫০ টাকায় জমি কিনে গৌরীকুন্ডের ( ভূবনেশ্বরের গৌরীকুন্ডের জল কলকাতায় তখন বিক্রি হতো বড় বড় ওষুধের দোকানে) মিনেরেল ওয়াটারের কাছে। মাটি ফুঁড়ে উঠতো সেই জল। যা খেলে সেরে যেত পেটের অসুখ। জলের জন্য মামাদের ঠাকুরদা বাড়ি করেছিলেন ওখানে। এক বিঘার কিছু কম জমিতে, লালরঙের সেই বাড়ি আজ আর নেই। মামাদের তিন শরিক মিলে ৫০ লক্ষ টাকায় খানিকটা জলের দরে সেইসব বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছিল– এই তো কয়েকবছর আগের ঘটনা।

● লিঙ্গরাজ টেম্পলের এক পান্ডা যারা দেখভাল করতো তারা প্রায় দুতলা বাড়ি সমেত জায়গাটা অধিকার করে নিয়েছিল একটা সময়। ভূবনেশ্বরের টানে কলেজে পড়ার সময় কেস লড়তে মামাদের সঙ্গে যেতে হতো। অবশেষে জমির বৃহত্তম অংশ ফেরত পাওয়া গেলেও ২৫ ভাগ পেয়ে যায় ওই পান্ডার বংশধররা। সেই জমিতে এখন অন্নপূর্ণা চ্যারিটেবল ট্রাস্টের বিশাল হসপিটাল। পাশেই রামকৃষ্ণ মিশন।

● জুলাই মাসে কোথায় যাই কোথায় যাই করতে করতে হঠাৎ করেই পুরী চলে গেলাম গত ১/৮/২২ -এ। সঙ্গে আমার স্ত্রীও। এখান থেকে নেটেই বুক করলাম হোটেল নীলাদ্রি-কে বুকিং কম থেকে। ছোট থেকে পুরী তো আসছি বহুবার। ১২ বারের বেশি তো হবেই। আগে থাকতাম মন্দিরের কাছে। আমার স্ত্রী ট্রেনে শুয়ে শুয়ে এখন আর যেতে চায়না। কি করা যায়। অগত্যা টিকিট কাটলাম ধৌলিতে। শালিমার থেকে বসে বসে চলে গেলাম পুরী। পুরী থেকে ৪/৮/২২ ভূবনেশ্বর হয়ে ভাইজাগ। পুরনো ওয়াল্টেয়ার আর কেউ বলেন না। সেই কবে যে এসেছিলাম। সাঁত্রাগাছিতে ভাইজাগবাসীদের যে স্কুলটা আছে, ওদের সহযোগিতায় গিয়েছিলাম সেইবারে ভাইজাগ। ওই স্কুলের শিক্ষকরা মাসে মাসে বাড়ি যেত তখন। ওদের হাত দিয়ে (আমার বিয়ের ৫/৬ বছর পর শ্বশুর, শাশুড়ি সহ গিয়েছিলাম) হোটেল বুক করিয়ে আনিয়েছিলাম। ওরাই ওখানে ওদের আত্মীয়কে দিয়ে আমাদের হোটেল পৌঁছে দেওয়া থেকে খাওয়ার হোটেল কোথায় পাওয়া যায় আর জগদম্বা জংশন চিনিয়ে দিয়ে সাহায্য করেদিয়েছিলেন।

● এইবারে তাই দুম করেই চলে গেলাম। পরে বলবো কেন শিল্পীত শহর এখন ভাইজাগ। রামকৃষ্ণ বিচ বর্ধিত হয়ে আরও কিলোমিটার বিস্তৃত হয়েছে এখন। ঋষিকুন্ডা ছাড়িয়ে শহর। ভাইজাগ হয়ে ফিরতি পথে আবার একরাত ভূবনেশ্বর একদিন। এই ভূবনেশ্বরে এসেই কলকাতার জিওলজিক্যাল সার্ভেতে আমার বাবার চাকরি হয়েছিল। আমার বয়স তখন ৪ বছর। তাই আমাদের পরিবারের কাছে এই জায়গা ও ভূবনেশ্বরের লিঙ্গরাজ মন্দিরের প্রতি একটা অন্যরকম শ্রদ্ধা জড়িয়ে রয়েছে। যদিও সেই সময় আমাদের এক আত্মীয় যিনি তখন ছিলেন জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার একজন বড় অফিসার, তাঁর পেটের সমস্যার জন্য তিনি আমাদের ভূবনেশ্বরের ওই মামার বাড়িতে পুরো পরিবার নিয়ে আলাদাভাবে একমাস ছিলেন। আমরাও সকলে গিয়েছিলাম। সেখানেই আমার বড়মাসির উদ্যোগে আমার বাবার চাকরি হয়েছিল তদ্বিরেই তো তখন চাকরি হওয়ার প্রচলন ছিল।

● গত ২০০৮-এ এসে যে লিঙ্গরাজ টেম্পলে লিঙ্গের বিশাল বেড় ছুঁতে পেরেছিলাম অনায়াসে তার ধারেকাছে যাওয়ার অনুমতি ছিলনা এইবারে। সিকিউরিটি এবং প্রশাসনের নজরে এখন মন্দিরে ঢোকায় বহুরকম নিষেধাজ্ঞা। লিঙ্গের কাছে যেতে আর দেয়না। মন্দিরের বাইরেটায়, যে প্রাচীন জায়গা ছিল তাও ভেঙে তচনচ করে দিয়ে সেখানে অনেকটা ফাঁকা জায়গা তৈরি করেছে। সাফসুরত করেছে বেশ। আগে কুষ্ঠরোগীদের ভিড় লেগে থাকতো মন্দিরের বাইরে ও আশপাশে। এখন অন্যরকম মন্দির প্রাঙ্গণ। মোবাইল পর্যন্ত নিয়ে কেউ যেতে পারেন না। ব্যাগ, জুতো মোবাইল রাখার ক্যাম্প অফিস হয়েছে। ২৪ ঘন্টা পুলিশ চৌকি মোতায়েন।

● তবু ছবি যে তুলতে পারা গেল সেটাই অনেক। তার জন্য সরকার একটা টপ (ছাদ) করে দিয়েছে। ছবিগুলি ভূবনেশ্বরের লিঙ্গরাজ টেম্পল কেন্দ্রিক। ছবি তোলার জায়গাটা হ’ল মন্দিরে ঢুকতে ডানহাতে পড়ে। ওদিকে একটা প্রাচীন গেট ছিল। এখন বন্ধ। ভেতরে গিয়ে যাতে
পূন্যার্থীরা হাত ধুতে পারে তার জন্য জলের মেশিন বসানো হয়েছে। পুজো দেওয়ার একটা সিস্টেম করা আছে।

● গত ১ আগস্ট প্রথমে পুরী এসে ৩ তারিখ পর্যন্ত পুরীতে রাত কাটাই। ছিলাম লাইট হাউস বাসস্ট্যান্ডের কাছে হোটেল নীলাদ্রি। ভালো হোটেল। রেস্টুরেন্ট ও সুইমিংপুল আছে। তারওপর হোটেলটি আগাগোড়া সারাচ্ছেও। ছাদ থেকেও সমুদ্র দেখা যায়। পর্যাপ্ত স্টাফ আছে। মোটামুটি বোর্ডারদের চাহিদা মেটাই। ওখান থেকে মোহনা হয়ে একটা ২০০০/- টাকার গাড়িভাড়া নিয়ে সরাসরি ভূবনেশ্বর হয়ে বিশাখা এক্সপ্রেসে করে ভাইজাগ গিয়েছিলাম। ©® অলোক কুমার কুন্ডু

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...