সোমবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৭

REGARDING ISCON

গান্ধীবাদী স্বদেশী থেকে সন্ন্যাসী গৌরাঙ্গে
সমর্পিত প্রাণ কর্পোরেট জীবন থেকে এক
আশ্চর্য ভিক্ষুক শ্রীল প্রভুপাদ - অলোক কুন্ডু ©

স্বামী বিবেকানন্দ ধর্মের চর্চা করতে গিয়ে এক জায়গায় বলেছেন কমপ্রোমাইজের কথা ।
আসলে আমার মনে হয় জীবনের সমস্ত স্তরে সহাবস্থানের কথাই স্বামীজি বলতে চেয়েছিলেন । কারণ তাঁর নিজের ধর্ম ছিল অদ্বৈতবাদ আর তাঁর গুরু শ্রীরামকৃষ্ণ ছিলেন মূর্তির পূজারী ।
শ্রীরামকৃষ্ণ ধর্মের এই বুনোনকে দুহাতে তলতলে মাটির মতো নিয়ে যেকোনো মূর্তির মাঝে
ভগবানের লীলা দেখাত পারতেন । সহজাত
কথায় অন্যদের টেনে নিয়ে আসতে পারতেন
নিজের কাছে । শুধুমাত্র শুনে শুনে তিনি পুরাণ মহাভারতের ব্যাখ্যা প্রাঞ্জলভাবে করতে পারতেন
তাই সে যুগে ইংরেজি জানা রীতিমতো মতো
উজ্জ্বল হয়ে উঠতে যাওয়ার পথে এগিয়ে থাকা স্বামীজিকেও শ্রীরামকৃষ্ণ চুম্বকের মতো টেনে রেখেছিলেন । এ বড় আশ্চর্য ব্যাপার । তাই
এক সামান্য পূজারীর বাক্য ঝেড়ে ফেলে দিতে পারেননি স্বামীজি । যদিও স্বামীজির ধর্মবোধ শ্রীরামকৃষ্ণের থেকে আকাশ পাতাল তফাৎ
ছিল । শ্রীরামকৃষ্ণের কালীভক্তির কারণে
যুক্তিবাদী বিদ্যাসাগর আর কখনো দ্বিতীয়বার শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করেননি । কিন্তু
স্বামীজিও ছিলেন যুক্তিবাদী এবং পুতুল পূজার বিরোধী । তিনি কিন্তু শ্রীরামকৃষ্ণের মধ্যেই ঈশ্বরের দর্শন পেয়েছিলেন । অদ্বৈতবাদী স্বামীজি যখন হিন্দুদের দেবী দুর্গার পুজো করার মনস্থ করেন
( Compromise ) তখন কোনো শিষ্যই তার
কাজে বাধা দেননি পরন্তু যে রাজা ও ব্যবসায়ীদের
সাহায্যে স্বামীজি আমেরিকায় যেতে পেরেছিলেন
সেইসব শিষ্যরা রাজারা আনন্দিত হয়েছিলেন । শুধুমাত্র শ্রীশ্রী মায়ের কথামতো পাঁঠাবলি না
করার বিষয়টি তিনি মেনে নিয়েছিলেন । স্বামীজি নিজেই ধর্মের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়ে গিয়েছিলেন যার তাৎপর্য বোঝা আজ অত্যন্ত কঠিন । নিজে
সারা ভারত ঘুরে বেরিয়েছেন দান চাইতে ।
পরিব্রাজক স্বামীজি যেখানে যেমন পেরেছেন
মানিয়ে নিয়েছেন । পুরাণে সন্ন্যাসীকে
ঘুরে ঘুরে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে দেখতে বলেছে
যাতে একজন সন্ন্যাসী দেশের মানুষের শিক্ষা স্বাস্থ্য
ও খিদের কথা জানতে ও তাদের পরামর্শ দিতে
পারেন এবং সকলের সাথে মানিয়ে নিতে পারেন
স্বামীজি যতটা সম্ভব তাই করেছেন । তার ইচ্ছা
পূরণ হয়েছে ১৯৩৮ সালে বেলুড় মঠ স্থাপিত
হয়েছে । তার এত পয়সার অভাব ছিল যে শ্রীমাকে ঘুষুড়িতে টাকা পাঠাতে পারেননি সব সময় তখন
সারা ভারত ঘুরে মঠের জন্যে তাঁকে একটা একটা করে টাকা ভিক্ষা করতে হয়েছে । স্বামীজি জরুথ্রুস্টের ভক্ত ছিলেন । অনেক বক্তৃতায় তাকে বিদেশীরা অনেক সময় জরথ্রুস্টবাদী মনে করে
ভুল করেছেন । নারীর অধিকার জরথ্রুস্টের মতের প্রথম অঙ্গীকারকে স্বামীজি মনেপ্রাণে গ্রহণ করেছিলেন । শ্রীচৈতন্যের গণধর্মমতও তাঁকে
বিস্মিত করেছিল তিনি জেনেছিলেন শ্রীমদ্ভাগবতের নানা বিশ্লেষণ এবং তাঁর মস্তিষ্কের মধ্যে বারবার
ধর্মের নানা পন্থার দীর্ঘ কাটাছেঁড়া চলেছে । তাই
বিশ্ব ধর্মসভা যেখানে বসেছিল আজও সেই রাস্তার নাম স্বামী বিবেকানন্দের নামে হয়ে আছে  ।
স্বামীজি আরও কিছুদিন বেঁচে থাকলে হয়তো তাঁর অদ্বৈতবাদের রাস্তা অন্য এক মহত্বে বাঁক নিত যা আজ কারো পক্ষেই জানা আর সম্ভব নয় । নানা মতের সমন্বয় সাধন করতে তাঁকে যত্নবান হতে হয়েছিল । মূর্তির পূজারী হলেও শ্রীরামকৃষ্ণ নিজে ছিলেন সর্বজনগ্রাহ্য একজন মানবরূপী ভগবান ।
তাই বেলুড় মঠের নকশায় হিন্দু খ্রিস্টান মুসলিম
ধর্মের সমস্ত মোটিফকে একত্রীকরণ করা হয়েছে । পরে শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন শিক্ষা -স্বাস্থ্য-
রোজগার-মানব উত্থানকে মাথায় রেখে বিশ্ব মানব ধর্মের এক অনন্য প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে । এই
দেশে মাঝে নতুন করে হিন্দু ধর্মের আর কোনো
এমন বলিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির দ্বারা পথের সন্ধান কারও চোখে আসেনি বা নতুন দিশায় নিয়ে সমস্ত জগতের কল্যাণের পথ তেমন প্রশস্ত করার কথা
কোথাও শোনা যায়নি । কিন্তু আমাদের অজানার
নীচের অংশ আমরা যেন দেখতেই পাইনি । কিন্তু
স্বামী বিবেকানন্দের পর খুব কম সময়ের মধ্যে
একক প্রচেষ্টায় এক বৃহদাকার কর্মযজ্ঞের সূচনা
করে গেছেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী , সন্ন্যাসী
শ্রী ল প্রভুপাদ মহারাজ । তিনি যা করলেন তা
আরও বিস্ময়কর । স্বামীজি ছিলেন অদ্বৈতবাদী
যে কারণে আমেরিকা ঘুরে আসার পর ম্লেচ্ছদের
সঙ্গে মেশা নিয়ে স্বামীজিকে দক্ষিণেশ্বরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি । ইন্দিরা গান্ধীকে জগন্নাথদেব
দর্শন করা তো দূরে থাক মন্দিরে প্রবেশ করতে
দেওয়া হয়নি । আজব ধর্মীয় আচরণ এই
দেশের । আর এই দেশেই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকে পান্ডারা নুলিয়াদের দিয়ে হত্যা করিয়েছিল ।
পা টেনে ধরে সমুদ্রে ডুবিয়ে মেরেছিল । কারণ
সেই সময় সমস্ত ধর্মের মানুষ শ্রীচৈতন্যের
সাম্যবাদী ধর্মের কাছে এসে ফল্গুধারার মতো
মিশছিল যেখানে কাউকেই অচ্যুত ভাবা হয়না ।
৫০০ বছর আগে শ্রীচৈতন্যের আবির্ভূত হওয়ার
সময়ে যা নির্দিষ্ট হয়েছিল মায়াপুরের কাছে ।
দলে দলে এক নতুন ধর্মীয় ভাবনায় এসে মিশ্রিত হচ্ছিলেন এই সৃষ্টিতে শ্রীকৃষ্ণকে করেছিলেন
তিনি জনগণের দেবতা ---" মায়ামুগ্ধ জীবের
নাহি স্বঃত কৃষ্ণ জ্ঞান "(চৈতন্য চরিতামৃত) । স্কটিসচার্চে সুভাষচন্দ্রের এক ক্লাস নীচুতে পড়া
ও সুভাষ অনুগামী অভয়চরণ দে স্বদেশী
আন্দোলনে নেমে পড়লেন এবং ইংরেজদের
দেওয়া কলেজের শংসাপত্র প্রত্যাখ্যান করে তা
নিলেন না । পরে বসু গবেষণাগারের প্রধান হয়েছিলেন । ৫৪  বছর বয়সে সন্ন্যাসী হন এবং
৭০ বছর বয়স যখন তখন মাত্র ১৫ ডলার হাতে
নিয়ে অনির্দিষ্ট যাত্রায় আমেরিকা পৌঁছন সঙ্গে
সঙ্গী -  "হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ , কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে
হরে । হরে রাম হরে রাম , রাম রাম হরে হরে ।"
এই মন্ত্র আর ১০৮ টি গুটিকা যুক্ত যপমালা ।
তিনি তখন শ্রী ল প্রভুপাদ । তাঁর কাছে আছেন
শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীচৈতন্য । তিনি বললেন শ্রীকৃষ্ণ
হিন্দু মুসলমান খৃষ্টান কোনো কিছুই নয় তিনি
শুধুমাত্র ভগবানকে জানেন । কে ভগ�বান ?
ভগ অর্থাৎ ঐশ্বর্য আর বান মানে যার মধ্যে
আছে । যার মধ্যে ঐশ্বর্য আছে তিনি ভগবান ।
শ্রীকৃষ্ণ সেই রূপ ভগবান । নিজের ব্যক্তিসত্বাকে নিজের চেতনা দিয়ে দেহরথের বুদ্ধি দিয়ে এই
নাম জপ করলেই ভগবান দর্শন হয় । তার সঙ্গে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু সৃষ্ট নৃত্য-গান যা শরীর ও
মনকে চাঙ্গা করে তোলে । নিরামিষ আহার , হত্যাকারী না হওয়ার অনুরোধ , এমনকি
পশু হত্যাও নয় । ১৯৪৪ সাল থেকে তিনি
একক প্রচেষ্টায় ইংরেজি পত্রিকা সম্পাদিত
করার মধ্য দিয়ে যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তার
ফল স্বরূপ ১৯৪৭ এ পেয়েছিলেন ভারতের
গৌড়ীয় সমাজের দেওয়া উপাধি --ভক্তিবেদান্তিক । এইটুকু সম্বল করেই নিজের পৈতৃিক ব্যবসার ও নিজের সম্বলটুকু সমূহ দান করে একটি
জাহাজের আস্তাকূড়ে শুয়ে শুয়ে আমেরিকা
পৌঁছে যান । ১৯৬৫--১৯৬৬ কঠোর জীবন
যাপনের দ্বারা আমেরিকায় ইসকনকে প্রথম
প্রতিষ্ঠা করেন । তার আগে বৃন্দাবনের দামোদর মন্দিরে ৪ বছর অধ্যয়ন ও নানান গ্রন্হাদির রচনা করেন । ১৯৬৮ তে আমেরিকায় ২০০ একর
জমিতে ,১৯৭৫ বৃন্দাবনে ,১৯৭৬ জুহুতে গড়ে
তোলেন বিশাল বিশাল আশ্রম মন্দির ধর্মশালা ।
এই কাজ করতে সময় লাগলো মাত্র ১২ বছরে
আরও ১০০ মন্দির ৮০ খানা ইংরেজি বই ও তিন
খন্ডে শ্রীমদ্ভাগবতের অনুবাদ সহ সমস্ত পুরাণ বিদেশীদের কাছে তুলে ধরলেন । ১৯৭২--১৯৭৬ মায়াপুরে ইসকন মাথা তুললো । সেই সময়
খড়ের চালা যে ঘরটিতে তিনি থাকতেন সেখানে
আজ ২৪ ঘন্টা হরিণাম সংকীর্তন হয় । আজ আমেরিকা রাশিয়া নিউজিল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া
ইংলান্ড থাইল্যান্ড ব্রাজিল সহ আরও বিভিন্ন
দেশে শ্রীল প্রভুপাদ শ্রীকৃষ্ণ-শ্রীচৈতন্যর নাম
ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন অতি অল্প সময়ের
মধ্যে যা বিস্ময়কর । ১৮৯৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর
যার জন্ম ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত এই ৮১ বছরে যা
করে গেছেন যার উত্তর মিলতে চলছে পৃথিবীর বিস্ময়কর ও বৃহত্তর মন্দির --মায়াপুরে প্রতিষ্ঠিত
হতে চলেছে সৌন্দর্যে উচ্চতায় যে মন্দির তা হবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপাসনা স্থল (কাজ চলছে
মন্দিরের ২০০৯ থেকে শেষ হবে ২০২২ এ) ।
শোনা যাচ্ছে ২০২২ শে মায়াপুর সিটি হিসেবে
ঘোষিত হবে কারণ ইতিমধ্যেই সেখানে ১০ -
তলার ফ্ল্যাট সহ অজস্র ফ্ল্যাট গড়ে উঠেছে এবং
আরও উঠতে শুরু করেছে । আশেপাশে অনেক
আশ্রম ও মন্দির গড়ে উঠেছে ইসকনের বাইরে
ইসকনের নিজস্ব জায়গাও ১৯৭২ থেকে বেড়ে
হাজার গুণ হয়েছে । মায়াপুরে ভালো ও সাধারণ অতিথি নিবাস অনেকগুলি আছে --যেখানে ১০০/৩০০/৫০০/৮০০/২০০০/৩০০০ টাকা দামের
সারি সারি ঘরে অতিথিদের থাকার ব্যবস্থা আছে । আর আছে তিনটি স্থানে পংক্তি ভোজনের দু
বেলার ব্যবস্থা যার টিকিট আগে কাটতে হয় -
মায়াপুরের " গদা ভবন " থেকে । ঘরের বুকিং
অনলাইনে বা কলকাতার ২২ নং গুরুসদয়
রোড , বালীগঞ্জ কলকাতা -১৯ এই ঠিকানা
থেকে অথবা উপস্থিত হয়ে গদাভবনের অফিস
থেকে । কলকাতার মেনল্যান্ড চায়নার সামনে
আছে ISCON HOUSE ।  ১৯৩৩ সাল থেকে মায়াপুরে তার গুরুদেবের কাছে ( ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর ) যাতায়াত শুরু হলেও তা আজ সার্থক হয়েছে । তাঁর গুরু বলেছিলেন স্বাধীনতার সংগ্রাম দুদিনের , যদি পারিস সারা জীবনের
সংগ্রামে নাম । তিনি কথা রেখেছেন সারা
পৃথিবীতে শিক্ষা স্বাস্থ্য ও কৃষ্ণনামের উচ্চারণের
আশ্রয় ও মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত করেছে । মায়াপুর
বাসে দু ভাবে যাওয়া যায় এসি বাস বুক হয়
২২-গুরুসদয় দত্ত রোড থেকে যেখান থেকে
ঘরের বুকিংও হয় আর সরকারি বাস ছাড়ে
প্রতিদিন শহীদ মিনার থেকে দিনে দু বার । তিন
দিনের আদর্শ ট্যুর - ইসকন, মায়াপুর । এই
মন্দিরের আরতী খুবই উপভোগ্য যখন সেখানে
সকলে নাচে যোগ দেন । কেনাকাটারও বেশকিছু দোকান আছে । আলাদা আলাদা ভাবে টোটো
করে মন্দির ও মন্দিরের বাইরে ঘুরিয়ে দেখার
ব্যবস্থা আছে । এছাড়া মন্দির সংলগ্ন ট্র্যাভেলস
থেকে গাড়ি নিয়েও ঘোরা যায় এমনকি এরা
আপনার বাড়ি থেকেও নিয়ে আসে ও ফিরিয়ে
দিয়ে আসে । কোনো বড় অনুষ্ঠানে লাইফ
মেম্বার ছাড়া কারও থাকা খাওয়ার অসুবিধা
হতে পারে । দোলের সময় বাইরের মানুষেরা
এলে অসুবিধায় পড়বেন । -© অলোক কুন্ডু ।

ইসকন মায়াপুর ©অলোক কুন্ডু

গান্ধীবাদী স্বদেশী থেকে সন্ন্যাসী
গৌরাঙ্গে অর্পিত এক কর্পোরেট ভিক্ষুক
শ্রীল প্রভুপাদ
- অলোক কুন্ডু ©

স্বামী বিবেকানন্দ ধর্মের চর্চা করতে গিয়ে এক জায়গায় বলেছেন কমপ্রোমাইজের কথা । আসলে আমার মনে হয় জীবনের সমস্ত স্তরে সহাবস্থানের
কথাই স্বামীজি বলতে চেয়েছিলেন । কারণ তাঁর নিজের ধর্ম ছিল অদ্বৈতবাদ আর তাঁর গুরু শ্রীরামকৃষ্ণ ছিলেন মূর্তির পূজারী । শ্রীরামকৃষ্ণ ধর্মের বুনোনকে দুহাতে তলতলে মাটির মতো নিয়ে যেকোনো মূর্তির মাঝে ভগবানের লীলা দেখাত পারতেন সহজাত কথায় অন্যদের টেনে নিয়ে আসতে পারতেন । শুধুমাত্র শুনে শুনে তিনি পুরাণ মহাভারতের ব্যাখ্যা প্রাঞ্জলভাবে করতে পারতেন সে যুগে ইংরেজি জানা রীতিমতো মতো উজ্জ্বল হয়ে উঠতে যাওয়ার পথে তিনিও এক সামান্য পূজারীর বাক্য ঝেড়ে ফেলে দিতে পারেননি । যদিও স্বামীজির ধর্মবোধ শ্রীরামকৃষ্ণের থেকে আকাশ পাতাল তফাৎ ছিল । শ্রীরামকৃষ্ণের কালীভক্তির কারণে যুক্তিবাদী বিদ্যাসাগর আর কখনো দ্বিতীয়বার শ্রীরামকৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করেননি । কিন্তু স্বামীজিও ছিলেন যুক্তিবাদী এবং পুতুল পূজার বিরোধী । তিনি তাই শ্রীরামকৃষ্ণের মধ্যেই ঈশ্বরের দর্শন পেয়েছিলেন মনে হয় । অদ্বৈতবাদী স্বামীজি যখন হিন্দুদের দেবী দুর্গার
পুজো করার মনস্থ করেন তখন কোনো শিষ্যই তার কাজে বাধা দেননি পরন্তু যে রাজা ও ব্যবসায়ীদের
সাহায্যে স্বামীজি আমেরিকায় যেতে পেরেছিলেন সেইসব শিষ্যরা রাজারা আনন্দিত হয়েছিলেন । শুধুমাত্র শ্রীশ্রী মায়ের কথামতো পাঁঠাবলি না করার বিষয়টি মেনে নিয়েছিলেন । স্বামীজি নিজেই ধর্মের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়ে গিয়েছিলেন যার তাৎপর্য বোঝা অত্যন্ত কঠিন । নিজে সারা ভারত ঘুরে বেরিয়েছেন দান চাইতে । পরিব্রাজক স্বামীজি যেখানে যেমন পেরেছেন মানিয়ে নিয়েছেন । পুরাণে সন্ন্যাসীকে ঘুরে ঘুরে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে দেখতে বলেছে যাতে একজন সন্ন্যাসী দেশের মানুষের শিক্ষা স্বাস্থ্য ও খিদের কথা জানতে ও তাদের পরামর্শ দিতে পারেন স্বামীজি যতটা সম্ভব করেছেন । তার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে ১৯৩৮ সালে বেলুড় মঠ স্থাপিত হয়েছে । এত পয়সার অভাব ছিল যে শ্রীমাকে ঘুষুড়িতে টাকা পাঠাতে পারেননি সব সময় তখন সারা ভারত ঘুরে মঠের জন্যে তাঁকে একটা একটা করে টাকা ভিক্ষা করতে হয়েছে । স্বামীজি জরুথ্রুস্টের ভক্ত ছিলেন
অনেক বক্তৃতায় তাকে বিদেশীরা অনেক সময় জরথ্রুস্টবাদী মনে করে ভুল করেছেন । নারীর অধিকার জরথ্রুস্টের মতের প্রথম অঙ্গীকারকে
স্বামীজি মনেপ্রাণে গ্রহণ করেছিলেন । শ্রীচৈতন্যের
গণধর্মমতও তাঁকে বিস্মিত করেছিল তিনি জেনেছিলেন শ্রীমদ্ভাগবতের নানা বিশ্লেষণ এবং তাঁর মস্তিষ্কের মধ্যে বারবার ধর্মের নানা পন্থার দীর্ঘ
কাটাছেঁড়া চলেছে । তাই বিশ্ব ধর্মসভা যেখানে
বসেছিল আজও সেই রাস্তার নাম স্বামী বিবেকানন্দের নামে হয়ে আছে  । স্বামীজি আরও কিছুদিন বেঁচে থাকলে হয়তো তাঁর অদ্বৈতবাদের রাস্তা অন্য এক মহত্বে বাঁক নিত যা আজ কারো পক্ষেই জানা সম্ভব নয় । নানা মতের সমন্বয় সাধন করতে তাঁকে যত্নবান হতে হয়েছিল । মূর্তির পূজারী হলেও শ্রীরামকৃষ্ণ নিজে ছিলেন সর্বজনগ্রাহ্য একজন মানবরূপী ভগবান । তাই বেলুড় মঠের নকশায় হিন্দু খ্রিস্টান মুসলিম ধর্মের সমস্ত মোটিফকে একত্রীকরণ করা হয়েছে । পরে শ্রীরামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন শিক্ষা -স্বাস্থ্য-রোজগার-মানব উত্থানকে মাথায় রেখে বিশ্ব মানব ধর্মের এক অনন্য প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে । মাঝে নতুন করে হিন্দু ধর্মের আর কোনো এমন বলিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির দ্বারা পথের সন্ধান কারও চোখে আসেনি বা নতুন দিশায় সমস্ত জগতের কল্যাণের পথ তেমন প্রশস্ত হয়নি বটে কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দের পর খুব কম সময়ের মধ্যে একক প্রচেষ্টায় এক বৃহদাকার কর্মযজ্ঞের সূচনা করেগেছেন একজন স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সন্ন্যাসী শ্রী ল প্রভুপাদ মহারাজ । তিনি যা করলেন তা আরও বিস্ময়কর । স্বামীজি ছিলেন অদ্বৈতবাদী যে কারণে আমেরিকা ঘুরে আসার পর ম্লেচ্ছদের সঙ্গে মেশা করা স্বামীজিকে দক্ষিণেশ্বরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি । ইন্দিরা গান্ধীকে জগন্নাথদেব দর্শন করা তো দূরে থাক মন্দিরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি । আজব ধর্মীয় আচরণ এই দেশের । আর এই দেশেই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুকে পান্ডারা নুলিয়াদের দিয়ে হত্যা করিয়েছিল পা টেনে সমুদ্রে ডুবিয়ে মেরেছিল । কারণ সমস্ত ধর্মের মানুষ শ্রীচৈতন্যের সাম্যবাদী ধর্মের কাছে এসে ফল্গুধারার মতো মিশছিল
যেখানে কাউকেই অচ্যুত ভাবা হয়না । ৫০০ বছর আগে শ্রীচৈতন্যের আবির্ভূত হওয়ার সময়ে যা নির্দিষ্ট হয়েছিল মায়াপুরের কাছে । দলে দলে এক নতুন ধর্মীয় ভাবনায় এসে মিশ্রিত হচ্ছিলেন এই সৃষ্টিতে শ্রীকৃষ্ণকে করেছিলেন তিনি জনগণের দেবতা --" মায়ামুগ্ধ জীবের নাহি স্বঃত কৃষ্ণ জ্ঞান "
(চৈতন্য চরিতামৃত) । স্কটিসচার্চে সুভাষচন্দ্রের এক ক্লাস নীচুতে পড়া ও সুভাষ অনুগামী অভয়চরণ দে স্বদেশী আন্দোলনে নেমে পড়লেন এবং ইংরেজদের দেওয়া কলেজের শংসাপত্র প্রত্যাখ্যান করে তা নিলেন না । পরে বসু গবেষণাগারের প্রধান হয়েছিলেন । ৫৪  বছর বয়সে সন্ন্যাসী হন এবং ৭০ বছর বয়স যখন তখন ১৫ ডলার হাতে নিয়ে অনির্দিষ্ট যাত্রায় আমেরিকা পৌঁছন সঙ্গে সঙ্গী -  "হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ , কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে । হরে রাম হরে রাম , রাম রাম হরে হরে ।" এই মন্ত্র আর ১০৮ টি গুটিকা যুক্ত যপমালা । তিনি তখন শ্রী ল প্রভুপাদ । তাঁর কাছে আছেন শ্রীকৃষ্ণ ও শ্রীচৈতন্য । তিনি বললেন শ্রীকৃষ্ণ হিন্দু মুসলমান খৃষ্টান কোনো কিছুই নয় তিনি শুধুমাত্র ভগবানকে জানেন । ভগ�বান কে ? ভগ অর্থাৎ ঐশ্বর্য আর বান মানে যার মধ্যে আছে । যার মধ্যে ঐশ্বর্য আছে তিনি ভগবান । শ্রীকৃষ্ণ সেই রূপ ভগবান । নিজের ব্যক্তিসত্বাকে নিজের চেতনা দিয়ে দেহরথের বুদ্ধি দিয়ে এই নাম জপ করলেই ভগবান দর্শন হয় । তার সঙ্গে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু সৃষ্ট নৃত্য গান যা শরীর ও মনকে চাঙ্গা করে তোলে । নিরামিষ আহার , হত্যাকারী না হওয়ার অনুরোধ , এমনকি পশু হত্যাও নয় । ১৯৪৪ সাল থেকে তিনি একক প্রচেষ্টায় ইংরেজি পত্রিকা সম্পাদিত করার মধ্য দিয়ে যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তার ফল স্বরূপ ১৯৪৭ এ পেয়েছিলেন ভারতের গৌড়ীয় সমাজের দেওয়া উপাধি --ভক্তিবেদান্তিক । এইটুকু সম্বল করেই নিজের পৈতৃিক ব্যবসার নিজের সমূহ দান নিয়ে একটি জাহাজের আস্তাকূড়ে শুয়ে শুয়ে আমেরিকা পৌঁছে যান ।  ১৯৬৫--১৯৬৬ কঠোর জীবন যাপনের দ্বারা আমেরিকায় ইসকন প্রতিষ্ঠা করেন । তার আগে বৃন্দাবনের দামোদর মন্দিরে ৪ বছর অধ্যয়ন ও নানান গ্রন্হাদির রচনা করেন । ১৯৬৮ তে আমেরিকায় ২০০ একর জমিতে ১৯৭৫ বৃন্দাবনে ১৯৭৬ জুহুতে গড়ে তোলেন বিশাল বিশাল আশ্রম মন্দির ধর্মশালা । এই কাজ করতে সময় লাগলো মাত্র  ১২ বছরে আরও ১০০ মন্দির ৮০ খানা ইংরেজি বই ও তিন খন্ডে শ্রীমদ্ভাগবতের অনুবাদ সহ সমস্ত পুরাণ বিদেশীদের কাছে তুলে ধরলেন । ১৯৭২--১৯৭৬ মায়াপুরে  ইসকন মাথা তুললো । সেই সময় খড়ের চালা যে ঘরটিতে তিনি থাকতেন সেখানে আজ ২৪ ঘন্টা হরিণাম সংকীর্তন হয় । আজ আমেরিকা রাশিয়া নিউজিল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া ইংলান্ড থাইল্যান্ড ব্রাজিল সহ আরও বিভিন্ন দেশে শ্রীল প্রভুপাদ শ্রীকৃষ্ণ-শ্রীচৈতন্যর নাম ছড়িয়ে দিতে পেরেছেন অতি অল্প সময়ের মধ্যে যা বিস্ময়কর । ১৮৯৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর যার জন্ম ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত এই ৮১ বছরে যা করে গেছেন যার উত্তর মিলতে চলছে পৃথিবীর বিস্ময়কর ও বৃহত্তর মন্দির --মায়াপুরে প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে সৌন্দর্যে উচ্চতায় যে মন্দির হবে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপাসনা স্থল  ( কাজ চলছে মন্দিরের ২০০৯ থেকে শেষ হবে ২০২২ এ) । শোনা যাচ্ছে ২০২২ শে মায়াপুর সিটি হিসেবে ঘোষিত হবে কারণ ইতিমধ্যেই সেখানে ১০ তলার ফ্ল্যাট সহ অজস্র ফ্ল্যাট উঠতে শুরু করেছে । আশেপাশে অনেক আশ্রম ও মন্দির গড়ে উঠেছে ইসকনের বাইরে ইসকনের নিজস্ব জায়গাও ১৯৭২ থেকে বেড়ে হাজার গুণ হয়েছে । ভালো ভালো ও সাধারণ  অতিথি নিবাস অনেকগুলি যেখানে ১০০/৩০০/৫০০/৮০০/২০০০/৩০০০ টাকা দামের সারি সারি ঘরে অতিথিদের থাকার ব্যবস্থা আছে । আর আছে তিনটি স্থানে পংক্তি ভোজনের দু বেলার ব্যবস্থা যার টিকিট আগে কাটতে হয় । ঘরের বুকিং অন লাইনে বা কলকাতার  ২২ নং গুরুসদয় রোড , বালীগঞ্জ কলকাতা -১৯ এই ঠিকানায় হয় ( মেনল্যান্ড চায়নার সামনে ) । ১৯৩৩ সাল থেকে মায়াপুরে তার গুরুদেবের কাছে ( ভক্তি সিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুর ) যাওয়া তার আজ সার্থক হয়েছে । তিনি বলেছিলেন স্বাধীনতার সংগ্রাম দুদিনের যদি পারিস সারা জীবনের সংগ্রামে নাম । তিনি কথা রেখেছেন সারা পৃথিবীতে শিক্ষা স্বাস্থ্য ও কৃষ্ণনামের উচ্চারণ তাঁকেও মন্দিরে প্রতিষ্ঠিত করেছে । মায়াপুর বাসে দু ভাবে যাওয়া যায় এসি বাস বুক হয় গুরুসদয় দত্ত রোড থেকে যেখান থেকে ঘরের বুকিংও হয় আর সরকারি বাস ছাড়ে প্রতিদিন শহীদ মিনার থেকে দু বার । তিন দিনের আদর্শ ট্যুর । আরতী খুবই উপভোগ্য যখন সেখানে নাচে যোগ দেন । কেনাকাটারও বেশকিছু দোকান আছে । টোটো করে মন্দির ও মন্দিরের বাইরে ঘুরিয়ে দেখার ব্যবস্থা আছে ।

বুধবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০১৭

Portry of Alok Kundu

Borolene is my care now
Alok Kundu

Why Elgo does not want to lose some curves
Now I see less
So what did you say and what I heard
Think a little
What is the forgiveness of this own merit?
You know, now everyone's different society
Do not let me in the flat as well
Come on in the broken system
Day is not good anymore
Bhabona Naxalite Maoist Capitalist
All the wives of the Mughal Ramavadi are different
A will say come, learn politics in Chatatel
See how different discrimination of behavior differ
Eat the society
No one is in the firecracker of water
Feel the fate of creation
Two boys in one mother's belly - dua
Say what the city is to stop and stop
Mera Pata Ma Hai Kahatali Pajara
Nobody could pick up that saying
And now the retailer goes to riot
Amitabh is also moving high
The dialog was such that the diameter is equal to one at a time
Since then, flat, general house rail
The car is bigger than watching the verandah
Where is Poissas, where the Mukder is the seamstress
Mughal Azam - Anarkali Uttam-Soumitra
What a dreadful Hindu - rhyme of Muslim divide
You know
This is the general income and bribe income
There is a difference
Earnings and wages from tender are not equal? Master tuition and unemployed boycott
Munni bad name wi arthritis arthritis arthritis
What could Keshab nag Melaye
Car Home is my homeowner
Mother's mother was driven out of her old age
The brother of the pickup grandfather Tolaapooshano
Nevertheless, it is not possible to reduce the funding
Cute hot soft --- all these people
Neutral people, party people, intermediate people
See here
Look at the north, see people in the south
Hey gentle people are people
To cheeks
Gandhivad means minus people
Marxist people are people
Hyper people hip again people
People who are going to be
People who dance are people
Funi Fakir people of the people
Understand the public, rotate the public Be educated unemployed jobs
Expectation of the movement of protesters
The godly goddess Sajaguzu is religious
A man in a rough man
Nobody plays a card in someone's poems
Somebody says ED
There is no sign of the issue
Somebody wants to borrow a broken home and eat it
Someone is happy in the quote sitting in the flat
Someone goes for prostitution but under pressure
But they all have a great deal
Anyone can match hands anyway
Some people who do not have to
They spend time in the chat
And Munni adds the story of spoiled huihara
Truly I'm Surviving Antiseptic
Cream borolin is no longer go
Now - my dear!
© Alok Kumar Kundu

সোমবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০১৭

গুরুকূল :: অলোক কুন্ডুর কবিতা

গুরুকূল / অলোক কুন্ডু

সমতার বাণী বড় কঠিন সিলেবাসে
সংস্কৃত শব্দেরা যেন সাক্ষাৎ ভূতবাড়ি
ইতিমধ্যেই ইতিহাস মনে নেই আর
ভূগোল না পড়িয়ে যদি যৌন শিক্ষা দিতে
শরীর ভূগোল জটিল হতোনা আজ
দেখ যদি পারো সিলেবাস টেনে ধর
চাবুকের মতো শিক্ষিত কর আগে
জাতকের গল্প কেন বলোতো ওঠালে
সহজপাঠকে তো অকেজো করে রাখা
ধর্মের নামে বিদ্যাসাগর হাওয়া
গোপাল কী শুধুই হিন্দুর ছেলে হয়
গুলিয়ে তোমরা ফেলছো নিশ্চয় !
শিক্ষা শুধুই পরিকাঠামোয় বুঝলে
মাতৃ জঠরের গুরুকূল ভুলে গেলে
কার কোলে এত বেড়ে ওঠে সব শিশু
মেয়েরা থাকবে গুরুকূলে নির্ভয়
এইসব যদি এতদিন না বুঝে থাকো
এখনও সময় আছে হে বুদ্ধিমান
এখনও হিন্দু এখনও মুসলমান
এক সাইকেলে স্কুলে যায় ওরা ।
© অলোক কুন্ডু

মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০১৭

অলোক কুন্ডুর কবিতা নিরিবিলি

অনেকটা নিরিবিলি / অলোক কুন্ডু

নদীর ধার দিয়ে আড়াআড়ি খানিকটা পথ
কোনোকালে এই পথ কেউ তৈরি করেনি
গাছগাছালি জলজঙ্গল উইঢিপি নদী একটা পথ
জলসিক্ত জমাট বনবাদাড় পাশাপাশি  নিরন্তর
মুঠো মুঠো বুনো ফুুল অনিবার্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে
কখনো জলবুদ্বুদ উঠে পড়ছে পাড়ে
ওরই মধ্যে একটা বসার মতো জায়গা দিব্যধাম
একটা লম্বা শিরিষ গাছ সঙ্গী আম গাছ
অনেকটা ছায়া ধরে রাখে দুজনে মিলে
অনেকক্ষণ বসে থাকতে কষ্ট হয়না
ওইটুকু স্বর্গভূমি নিষেধ করেনা কখনও কাউকে
জোড়ায় জোড়ায় আসে
এইখানে অনেকটা নিরিবিলি খেলা করে
এই যুগল একটু বেলাকরে  আসে
শুধুমাত্র একপাল গরু ছাগল চরানো
দুচারজন গাছ তলায় ঘুমোয় তখন
ওদের পায়ের ওপর দিয়ে জল খেলে যায়
একজন অন্যজনকে দেখতে থাকে
ছেলেটার নরম দাড়ি একটু একটু করে বাড়ে
চুল কোনোদিন আঁচড়ানো থাকেনা
মেয়েটা চুল ঘেঁটে দেয় কড়ে আঙুল ধরে
সর্বদা আড়ি আড়ি খেলে বিরক্ত করে
ছেলেটা শুধু জুলজুল করে দেখে
কখনো শুকনো পাতা জলে উড়িয়ে দেয়
কখনো দুজনে কথা বলা বন্ধ করে দেয়
এর মাঝে জল বাড়ে কমে
ওদের এসব মনে থাকার কথা নয়
তবু ছেলেটা মেয়েটার পা মুছিয়ে দেবে রোজ
ওড়নার বালি ঝেড়ে দেয়
মাথার চুল থেকে বুনো ফুলের মঞ্জরী বেছে দেয়
ছেলেটার জিনস্ ভিজিয়ে দেয় মেয়েটা
কেউ কাউকে বারণ করেনা
ক্ষীণ শব্দের প্রশ্ন উত্তর চলে কখনো
প্রথম প্রথম দূরে দূরেই বসতো মেয়েটা
দূরত্ব রেখে বসে দেখতো আপাদমস্তক
ছেলেটা অন্য দিকে চেয়ে সৌন্দর্য নির্মাণ করতো
আজকাল গা ঘেঁষে বসতে আপত্তি করেনা মেয়ে
বিশ্বাসগুলো সজীব হতে হতে শক্তিশালী এখন
একটা আঁকড়ানো মনোভাব বাড়তে থাকে
ছেলেটার হাত ,জামা , চুল অনায়াসে ধরতে পারে
মেয়েটা এখন ঘন করে কাজল দেয়
একটা কালো বিন্দু টিপ পরে সুগন্ধি মাখে
বাহারি ওড়না থেকে গোলাপি হলুদ সবুজাভ
ঝুলতে থাকা পমপম গুলো যেন এক একটা
অলৌকিক পরিপাটি সৌন্দর্যের উচ্চারণ
পনিটেলে নকল বেলকুঁড়ির মতো সোনালি টাসল্
ক্রমশ সৌন্দর্যগুলো টাটকা হয়ে উঠতে থাকে
নদীতে কখনো জলস্রোত তো কখনও চর
কখনও ডুবজল তো কখনও এইটুকু হাঁটুজল
কাকপেয় জল দেখে ওরাও চলে যায়
ছেলেটা বালির স্তূপ দিয়ে
মেয়েটার মুখ অবিকল গড়ে দেয়
মেয়েটা অবাক হয়ে তার নির্মিত হওয়া বুঝে নেয়
নদীর ওপারে গভীর জঙ্গল কাঠকুড়ুনিরা যায়
এক একদিন ওরাও চলে যায় সঙ্গে
সূর্য ডোবার মুখে এপারে এসে ওঠে
তারপর মেয়েটা মুখ ধোয়
ছেলেটা জল তুলে দেয় দু হাত ভর্তি
ছেলেটার জামায় মুখ মোছে চুল আঁচড়ায়
ছেলেটা মুখে ছোট আয়নাটাকে ধরে থাকে
তারপর ছেলেটা হাত ধরে তার
মেয়েটার কোমর দোল খায়
নদীর উঁচু জমির মরা কাদায় পা টলমল
করতে করতে পথে উঠে পড়ে
কোনো কাঠকুড়ুনির সঙ্গে
গল্প করতে করতে চলে গেলে
ছেলেটা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে
ততক্ষণে সূর্য ডুবে যায় কাছাকাছি বসতির
ওপারে
রাঙা আলোয় পোড়া রঙের
কাঠ কুড়ুনি বর বউ চলে যেতে থাকে
ছেলেটা ছবির মতো এইসব দেখতে থাকে
মনে হয় কাঠকুড়ুনি বউটা বাড়ি গিয়ে গা ধোবে
এক চিলতে ভাঙা তেকোনা আয়নাটায় সাজবে
ওর মরদ বাঁশি বাজাতে জানে
ওদের মাটির উঠোনে এক আকাশ চাঁদ আসে ।
এইসব কথা বউটা গল্প করেছে মেয়েটার কাছে
যেদিন জল কম থাকে আজকাল ওরা
সারাদিন জঙ্গলের ওদিকটায় কাটায়
ওদিকে আরো নিরিবিলি
ছেলেটা মেয়েটা এপারে এলে বোঝা যায়
গা ভর্তি করে নিয়ে আসে উলুঘাস ভাটুই তেকাঁটা
তুলসীমঞ্জরী বাঁশপাতা আলকুশি ।
কাঠকুড়ানিরা হেঁসে গড়িয়ে পড়ে এইসব দেখে
কখনও হাতভর্তি ভুঁইআমলা গুঞ্জা
লতাকরঞ্জ ফুল ছেলেটা নিয়ে আসে
মেয়েটার চুল থেকে বেছে দেয় তেকাঁটা
অন্যেরা দেখে আলোচনা করে হাসে
সবাই জানে আবার পরের দিন আসবে ওরা...

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...