মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৭

History of Indian SARI ভারতীয় শাড়ির ইতিহাস- অলোক কুন্ডু

ভারতীয় শাড়ি নারীর এক অনন্য আভরণ
অলোক কুন্ডু (copyrights)

গ্রিস মেসোপটেমিয়া রোম সুমেরু মিশরীয় সভ্যতা ছাড়াও দেখা যায় , আসিরিয়া সভ্যতায় কাপড়ের প্রচলন ছিল তখন অবশ্য স্ত্রী বা পুরুষের আলাদা কোনো কাপড়ের ভাগ ছিলনা । আর্যরা ভারতে
আসার সময় সঙ্গে করে " ভাসত্রা " শব্দ নিয়ে আসে । সংস্কৃত মতে যা কাপড় তখন অবশ্য চামড়ার কাপড় পরার রেওয়াজ ছিল । ঋকবেদ থেকেও আমরা শাড়ির কথা জানতে পারি । সিন্ধু নদীর তীরে আর্য সমাজে বয়ন শিল্পের পেশায় যুক্ত মানুষকে তন্তুবায় শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছিল । কৌটিল্যর অর্থশাস্ত্রে পাণিণির রচনায় শাড়ির উল্লেখ রয়েছে । " মহাদেব জাতক" নামক গ্রন্থে আছে -- "  পীলেত্বা আপনেতাব্বা কারপাত্তা অহেংসু " অর্থাত শাড়ি ভিজিয়া অপনয়ন করিবার যোগ্য হইল " । মধ্য ভারতে সাটক বা সাটিকা শব্দের ব্যবহার অতি প্রাচীনকাল থেকেই কানে শুনে আসতে থাকে মানুষ । মানুষের সভ্যতার উৎপত্তি ও উত্থান থেকেই শাড়ি সভ্যতার বিকাশ । খুকি থেকে বুড়ি শাড়ি যুগে  যুগে অনেক লুন্ঠন ভাঙচুর ও ফ্যাশনের মধ্যে
দিয়ে উঠে এসেছে প্রাচীনতম পোশাক
হিসেবে । জমকালো আবেদন ও সামাজিক
মর্যাদার প্রতীক হয়ে উঠেছে শাড়ি ।
সাধু দায়ানেশ্বরের লেখা পুথি থেকে ( ১২৭৫-১২৯৬)কান্দানাকি চোলি শব্দের ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায় । আর্যদের আসার সময় থেকেই নিভিয়ে বা কোমর এবং কাঁচুকি শব্দের প্রচলন পাওয়া
যায় । চীন থেকে হাজার বছর ধরে সিল্করুট ধরে সিল্ক ও সুক্ষ্ম রেশমি আসতো এখন আসছে ভারতীয় ও বাংলাদেশের শাড়ির জন্য মুগা, সিল্কের খুব কম দামের সুতোও । উপনিবেশিক আমলে মাদাম বেলানোসের চিত্রে এদেশের শাড়ি পরা মহিলার পেইন্টিং দেখতে পাওয়া গেছে এ। ১৮৫১ তে
ফ্যানি পার্কসের বিবরণ থেকে জানা যায় বাঙালি
ধনী পরিবারের মধ্যে শাড়ি পড়ার ভালই প্রচল ছিল । ১৮৮৫ তে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় বিলেত থেকে ফিরে লিখেছিলেন বাঙালির পোশাক অতি আদিম এবং আদমিক " । মুকুন্দরামের কাব্যে ধুতি ও শাড়ির শব্দটি সমার্থক শব্দটি অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে । তার লেখায় --সুরঙ্গ পাটের শাড়ি, তসরের শাড়ি ,
মেঘডম্বুর শাড়ি , ক্ষীরোদ শাড়ি ও খুঞ্চার ধুতির কথা থেকে আরও জানা যায় " তন্তুবায় ভুনি ধুতি খাদি বুনে গড়া " । মনে করা হয় ১৫/১৬ শতকে নারীরা কেবলমাত্র একখন্ড আধখানা শাড়ি পরতেন তেমনভাবে উদ্ধারঙ্গের জন্যে কোনো ব্যবস্থা ছিলনা । তারও আগে কটিবন্ধকে বলা হতো --"নিভি " । সিন্ধু সভ্যতায় একটি কাপড়ের টুকরো কে বলা হতো - কাঁচুকি । তখন কটিবন্ধ আর কাঁচুকি মিলে শাড়ির একটা ধারণা ধীরে ধীরে তৈরি হতে লাগলো ।
আবার অনেক পরে হলেও রাজা রবিবর্মার
পেন্টিং-এ ১১ জন রমণী ১১ রকমের শাড়ি
পরিহিত হয়ে বসে আছেন । বৃটিশ মিউজিয়ামের পেন্টিংয়ে দেখতে পাওয়া যায় বাঁ দিকে আঁচল ও দু পায়ে ভাগ করা সামনে কুঁচি দেওয়া শাড়ি পরিহিতা ভারতীয় রমণীকে ব্রিটিশ গুয়াস পেন্টিং-এ । চন্ডীদাসের কাব্যে আছে-" নীল শাড়ি মোহনকারী
/ উছলিতে দেখি পাশ" । সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর
১৮৬৪ তে বলেছেন --" আমাদের স্ত্রীলোকেরা
যেরূপ কাপড় পরে তাহা না পরিলেও হয় । " ১৮৬৩-৬৫ আবার রাজকুমার চন্দ্র লিখেছেন--
" দশ হাত কাপড়ে স্ত্রীলোক লেংটা ( আক্কেল
গুড়ুম ) "। ১৮৭৪ খ্রিষ্টাব্দে রাজনারায়ণ বসু তার সেকাল আর একাল গ্রন্থে পোশাক নিয়ে মন্তব্য করেন যে --আমাদিগের বাঙালি জাতির একটি নির্দিষ্ট কোনো পরিচ্ছদ নাই " । যোড়শ শতাব্দীর মাঝামাঝি শাড়ির জন্যে গুজরাট থেকে তুলো আসতে থাকে আর তার বদলে তৎকালীন বাংলা থেকে যেতে থাকে রেশম । ইতিহাসে রাফেল ফিচার ( ১৫৮০--৯৯)
-এর বিবরণের পর ভারতীয় শাড়ির একটা পাকাপাকি রেকর্ড নথিবদ্ধ হয় । মহাভারতে শাড়ি নিয়েই মহাকাব্য বাঁক নিয়েছে । দ্রৌপদীর শাড়ি কাহিনি কে না জানেন ( চান্দেরি )? সাহিত্য , বাণিজ্য ও ইতিহাস ঘাঁটলে মেয়েদের শাড়ি তৈরি ও পরার এক বিস্তৃত ইতিহাস পাওয়া যায় । সংস্কৃত " শাটী " শব্দ বা " সত্তিকা " থেকে শাড়ি শব্দের উৎপত্তি হয়েছে । সিন্ধু এবং মেহেড়গড়ের অনার্য সভ্যতার ধ্বংসাবশাস থেকেও শাড়ি পরিহিত রমণীর খোঁজ মেলে । কলকাতায় রবীন্দ্রনাথের ভাই সত্যেন্দ্রনাথের স্ত্রী জ্ঞাননন্দিনী
প্রথম বঙ্গদেশে পার্শি স্টাইলে শাড়ি পরে সকলকে তাক লাগিয়ে দেন । পাল আমলের (৭৫০ থেকে
১১৬২ ) পাহাড়পুরের ময়নামতি ভাস্কর্য ও পোড়ামাটির মন্দির ও দেওয়াল চিত্রে শাড়ি পরা নারীকে ইতিহাসবিদগণ বাংলা সাহিত্য ও ইতিহাসের মাধ্যমে অনেক আগেই তা জানিয়ে দিয়েছেন ।
অষ্টম শতাব্দী থেকে শাড়ির প্রচলন নানা মূর্তিতে অনেক পরিমাণে পাওয়া যেতে থাকে । ড. নীহাররঞ্জন রায় আধখানা শাড়ির উল্লেখ করেছেন । বিনা সেলাই করা কাপড় হিসেবেই শাড়ি নারীর আবরণ ও আড়াল হিসেবে উঠে এসেছে । কখনো তা ধীরে ধীরে দুপাট হয়েছে । এখনও অসমে বা উত্তর-পূর্বাঞ্চলে এই দুপাটি শাড়ির প্রচলন রয়ে গিয়েছে । প্রথম দিকে শাড়ি কেবল নারীর নিম্নদেশে ঢাকার জন্যে প্রচলিত ছিল । দক্ষিণ ভারতে হিন্দু রাজাদের আমলে মেয়েদের  " স্তনকর " নামে একটি কর চালু ছিল এথেকে মনে করা হয় ভারতীয় নারীর মধ্যে  একপাটের বা অর্ধেক শাড়ি পড়া প্রচলিত ছিল । চোলির কথাও প্রসঙ্গে উঠে আসে বিশেষভাবে-- সিনেমার গানে অন্যভাবে তা ব্যবহৃত হলেও তা প্রাচীন যুগে শাড়ির অংশবিশেষ বলেই মনে করা হয় ।
কোনো কোনো স্থানে হয়তো উর্দ্ধাঙ্গে কাঁচুলি বা
অন্য কোনো ভাবে আড়ালের ব্যবস্থা ছিল । ব্রিটিশ আমলে মেয়েদের অন্তর্বাস ও ফুলহাত ব্লাউজ পরার স্টাইল ও কৌশল ছড়িয়ে পড়ে । কলকাতায় ঠাকুর বাড়িতে অন্তর্বাস প্রচলিত হলেও রবীন্দ্রনাথ পরিবেষ্টিত ঠাকুরবাড়ির মেয়েরা দু-ভাঁজের শাড়ি পরিহিত হয়ে বসে আছেন এরকম অনেক আলোকচিত্রতে তা দেখতে পাওয়া যায় ( সেখানে কুঁচি দেওয়া শাড়ি পরিহিত কেউ নেই ) । গুপ্ত
যুগে ( ৩০০--৫০০) অজন্তা-ইলোরার ভাস্কর্যে ও দেওয়াল চিত্রে শাড়ির প্রমাণ পাওয়া গেছে । কালীদাসের শকুন্তলা ও কুমারসম্ভব কাব্যগ্রন্থে শাড়ির উল্লিখিত আছে । ভারতচন্দ্রের বিদ্যাসুন্দরে বিদ্যার শাড়ি পরার উল্লেখ দেখতে পাই । আবার ভারতের হিন্দু মতবাদে যেকোনো পুজোয় তসরের শাড়ি পরার প্রচলন ধর্মের সঙ্গে মিথ আকারে চলে আসছে । যেহেতু তসরে প্রাণি হত্যা হয়না তাই পুজোতো তসর বা পাট থেকে তন্তু সংগ্রহ করে তসরের সঙ্গে মিলিয়ে ঠাকুর ঘরে সনাতন হিন্দুদের একটা রীতি চলে আসছে কারণ এই শাড়িকে পুরোহিত এবং মেয়েরা দুপক্ষই ব্যবহার করে থাকে । সাধারণভাবে এদেশে মুগল সম্রাটদের সময়ে যখন জমিদারি প্রথা চালু হয় তখন জমিনদারদের বাড়িতে ইংরেজ মেমেদের যাতায়াত তৈরি হয় এবং মনে করা হয় এই সময় থেকে ভারতে ও বঙ্গদেশে ধনী বাড়ির মেয়েদের মধ্যে শাড়ি পরার প্যাঁচ-কুঁচ পদ্ধতি -আঁচলের আবষ্কার অন্যভাবে শাড়ি বিত্তবানেদের ঘরে প্রবেশ করে ।
শাড়ি পরার ধরণ, রীতি ,আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্য ও তার বিন্যস্ত রূপ, কুঁচি ,একভাঁজ ,দুভাঁজ, একপেঁচে, দুপেঁচে,, টানটান আঁচল রীতি , পরম্পরা ও পরিপাটি হয়ে  আধুনিকতায়-র পথ ধরে এই স্টাইলে আসার মধ্যে শাড়ির একটা ইতিহাস মোটামুটি ৫৫০০ বছরের পুরাতন বলেই ইতিহাসবিদরা মনে করেন । মুগল ও মগ  রমণীদের হাত ধরে খানিকটা আকবরের সৌজন্যে শাড়ি শিল্প একটা স্থান করে নেয় । মনে করা হয় হুমায়ুনের আমলে কাশিতে প্রথম শাড়ির কারখানা তৈরি হয় । অনেকে বলেন তারও আগে মহাভারতে চেদিরাজ শিশুপালের সময় থেকেই শাড়ির ব্যবহার শুরু হয় এবং মধ্যপ্রদেশের চান্দেরি নামকরণ আসলে চেদি থেকেই এসেছে এবং দ্রৌপদীর অঙ্গে যে শাড়ি ছিল তার নাম আসলে চান্দেরি ( পরে যখন চান্দেরি শাড়ির কথা আসবে তখন সেই আলোচনা করবো ) । আবার ইংরেজ আমলে এই শাড়ি পরার রীতি নিয়ে ব্রাহ্মসমাজের মেয়েদেরকে অসম্মানজনক কথাবার্তা শুনতেও হয় । তবে বহু উত্থান পতনে শাড়ির ইতিহাস দীর্ঘতর যে তাতে কোনো সন্দেহ নাই । ভারতীয় সমাজে অবাঙালিরা শাড়িকে শোভিত করেছেন ও নানা স্টাইলে তা পরারও কায়দা এনেছেন । সিনেমায় রাজকাপুর তার নায়িকা পদ্মিনীকে একটু আঁটোসাটো শাড়িতে পছন্দ করতেন । শাড়ি পরিহিতা নার্গিসকে তিনি বৃষ্টির সঙ্গে গানজুড়ে পৃথিবী বিখ্যাত করে
দিয়ে গেছেন । নায়িকা মুমতাজ টাইট শাড়িতে ও ছোটহাতা ব্লাউজে এক অভিনবত্য এনেছিলেন ।
বাংলায় ,শাড়িতে সুচিত্রা সেন একটি যুগ তৈরি করে গেছেন । মুগল আমলে একটি ছোট বাঁশের কৌটতে একটি মসলিন শাড়ি সম্রাট আকবরকে উপহার দেওয়া হয়েছিল যা পরীক্ষার জন্যে সম্রাট আকবরের সামনে সেটাই একটা গোটা হাতীকে মুড়ে দেওয়া হয়েছিল । রবীন্দ্রনাথের গল্পে পাওয়া যায়- উমার চরিত্র নির্মাণে শাড়ির কথা । একসময় বাংলায় ফুটি তুলো চাষ হতো । অনেকেই মনে করেন ওই তুলো থেকে মসলিনের কাপড় তৈরি সহজ হতো ।
ইংরেজরা বঙ্গদেশে ওই তুলোর চাষ বন্ধ করে দেন । বিদেশী বণিক ও ঐতিহাসিক ফ্রাঁসোয়া তেভারনিয়েরের বিবরণ থেকে ভারতীয় মেয়েদের শাড়ি পড়ার একটা ইতিহাস জানা যায় । অনেক ইতিহাসবিদ দেখিয়েছেন ১৭ শতকে ভারতে শাড়িবোনা ব্যাপকভাবে শুরু হলেও ১৯ শতকে এর কদর বেড়ে যায় । ডাচেরা বাংলার রেশম ও গুজরাটের পাটোলা কাপড়ের কিনে নিয়ে গিয়ে এশিয়া ও মধ্য প্রাচ্যে শাড়ি ও তা থেকে পোশাক তৈরি করে এশিয়া ইউরোপে ব্যবসা শুরু করতে শুরু করে এবং ভারতীয় কাপড় বা শাড়ির সৌন্দর্যের বিকাশ ঘটে । " আগে ওকে বারবার দেখেছি / লালরঙের শাড়িতে / দালিম ফুলের মতো রাঙা /
আজ পড়েছে কালো রেশমের কাপড় / আঁচল
তুলেছে মাথায় " । অথবা -" বাসন্তী রঙ শাড়ি
পরে ললনারা হেঁটে যায় " । ১৯১০ সালে ঠাকুর বাড়িতে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আছেন প্রতিমা , বেলা
মীরা ও রথীন্দ্রনাথ । সেই ছবিতে ঠাকুর বাড়ির
তিন মেয়েদের দু ভা‌‌‌‌‌‌‌‌জের শাড়ি পরিহিত হয়ে বসে থাকার ছবি সঙ্গে ব্লাউজ পরিহিতা দেখতে পাওয়া
যায় কিন্তু ওই ছবিতে কেউই কুঁচি দেওয়া শাড়ি পরে
নেই । এতো গেল রবীন্দ্রনাথের কথা । ১৯২৮ সালে
একটি প্রামাণ্য জলরঙের ছবির পাওয়া যায় যেখানে
চারজন ভারতীয় রমণীদের ছবিতে তাদের ব্লাউজ পরিহিত অবস্থায় দেখা যায় ( শিল্পী এম ভি
ধুরন্ধর) । হান্টার ও উডের ডেসপ্যাচে ভারতীয়
সুতি ও রেশমি শাড়ির ও বয়ন শিল্পের কথা জানা
যায় । পাহাড়পুরের অষ্টম শতাব্দীর যে ভগ নারী মূর্তি
উদ্ধার হয় তাই থেকে মনে করা হয় সেই সময়
আধখানা শাড়ি পরার প্রচলন ছিল । সেই সময়
শাড়িকে জুড়ে জুড়ে পরাটা প্রায় শাস্ত্রের বিরোধী
ছিল । মধ্যযুগে ঢিলা করে কোমরে জড়ানো আর
পেছন দিকে যেমন করে হোক আঁচল ফেলে দেওয়াই
ছিল শাড়ি পরা । একটা সময় ছিল যখন লম্বা
কাপড় জড়িয়ে পরাটাই ছিল রেওয়াজ পেটিকোট
ও ব্লাউজের ভাবনা তখন আবিষ্কার‌ই হয়নি ।
আসলে আদিম যুগ থেকেই আজ পর্যন্ত নারীর
অঙ্গে চাপানোর আগে পর্যন্ত শাড়ি পুরুষের হাতেই
তার কলা-কৌশল , টানা-ভরনা , টানা-পোড়েন ,
মাকুর (এক ,দুই,তিন) ব্যবহার , বুনন রীতি,
সৌন্দর্যবোধ, মোটিফের জাদু , জমকালো করা ,
আবেদনমোহিত করা, অমেয়, নান্দনিক, পরিশ্রম
থেকে ঘাম ঝরানো ও তাকে শিল্প-সুষমায় ভরিয়ে
দেওয়ার পেছনে পুরুষের একাগ্রতা ঐকান্তিক
নিষ্ঠা প্রেম ও বাহুবলের এক অনন্য পরিচয় পাওয়া
যায় । যদিও ইদানিং মেয়েরাও সুতো তোলা রঙ
করার কাজে সাহায্য করছে তবুও যে অধ্যবসায়
দিয়ে শাড়ি বুনতে একজন পুরুষের জীবনের আনন্দের সময়টা অন্ধকারে কেটে যায় যা কেউ ভেবেই দেখেনা । সুতো তৈরি থেকে রঙ করা
শেষে মাড় দিয়ে পালিশ করে দোকানে গেলেও
শাড়ি পুরুষের হাতের নাগালের বাইরে যায়না ।
বিশেষ করে এদেশে ভিক্টোরিয়ান যুগ থেকেই
শাড়ি ও তার অ্যাক্সেসরিজের প্রকাশ ঘটে ।
তারপর হিন্দি সিনেমার সৌজন্যে শাড়ি আরও
কৌলিন্য পায় । এখন নানা ডিজাইনার শাড়ি
ব্র্যান্ড হিসেবে উঠে এসেছে । অভিনেত্রী রেখার
এক রঙ্গা শাড়ি পড়ার সঙ্গে লম্বা হাতের ব্লাউজ
ও তার ওষ্ঠরঞ্জনী সব নিয়ে রেখার শাড়ি পরার
কায়দা এখন খ্যাতির তালিকায় । সত্যম শিবম
সুন্দরমের মিনি শাড়ি রাজকাপূরকে ভারতীয়
সিনেমার শাড়ির ডিজাইনার বলা যেতেই
পারে । হর দিল যো প্যার করেনা ও গানা
গায়েগা " সঙ্গম" এর গানের সিকোয়েন্স -এ
বৈজয়ন্তীমালাকে দেখতে পাই টানটান ডিজাইনার
শাড়িতে । ইতিহাসে পাই মধ্যপ্রদেশের
মহেশ্বরের উপাসিকা রানী অহল্যাবাঈকে ।
রানীকে ও মন্দির ঘিরে গড়ে উঠেছে চান্দেরি
শাড়ির কাছাকাছি মহেশ্বরী শাড়ি । গুজরাটের
পাটনের সোলাঙ্কি রাজাদের আমলে ৮০০
বছরের বেশি ধরে চলে আসছে পৃথিবীর বিখ্যাত
শাড়ি পাটোলা যার দাম ৫/৭ লাখ । চান্দেরি ও
কাঞ্জিভরম‌ও দামে কম যায়না এদের দাম‌ও ৩/৪
লাখ পার করে পাওয়া যায় । শোনা কথা আনুষ্কা
ওর রিসেপশনে ৫ লাখের বেনারসি পরেছিলেন তবে এই সব শাড়ি একটাই বোনা হয় । পুরাণে পাওয়া
যায় মার্কন্ড ঋষির বংশোদ্ভূত শিল্পীরাই কাঞ্চিপূরমে
" কাঞ্জিভরম " শাড়ি তৈরি করতেন । পুরাণে আছে ভগবান বিষ্ণুর পছন্দ রেশমি ও রঙিন আর শিবের সাদা । এই কারণে কোনো কোনো শাড়ির রঙ তৈরি হয়েছে । কাঞ্জিভরমে ভারতীয় সমস্ত মোটিফ নিয়ে
দেবতার জন্য তৈরি হয়েছে শাড়ি । মোটিফ গড়ে উঠেছে সেই সময়ের সম্রাট , রাজা ও দেবতাকে
ঘিরে । মনে করা হয় দাক্ষিণাত্যের চোল রাজাদের আমলে থেকে চোলি বা আঁচলের পরম্পরা চালু হয়েছে । পল্লবরাজ থেকেই যে আসলে পল্লু কথাটা
এসেছে এতেও একটা প্রমাণ মেলে পল্লু অর্থাৎ
আঁচল । তখন থেকেই মেয়েদের উর্ধাঙ্গের কাপড়ের প্রচলন বলে মনে করা হয় । ইন্দোনেশিয়ায় বাঁশ
দিয়ে রঙ করার পদ্ধতিতে উড়িষ্যা আর পচমপল্লীর ইক্কত শাড়িও দামে ও ঐতিহ্যের এক ভারতীয় হয়ে উঠেছে । বেনারসি নিয়ে তো আলাদা করে লিখতে হবে । এই শাড়ি বেনারসি ও বাংলাদেশের একমাত্র বিয়ের শাড়ি হয়ে উঠেছে । মনে পড়ে যায় উত্তমকুমারের মুখে -" যদি ওই চোরকাঁটা হ‌ই শাড়ির ভাঁজে " শাড়িকে ভাঁজে ভাঁজে বিন্যস্ত করতে বেশ কয়েক বছর আগে শাড়ি পরানো শেখাতে নিউ
দিল্লির জ‌ঙপুরাতে রিতা কাপূর স্কুল খোলেন ।
১০৮ ধরনের শাড়ি সেখানে পরা শেখানো হয় ।
শাড়ি স্মার্ট হয়ে ওঠে বিমানবালাদের হাত ধরে ।
এদেশে পুলিশ ও মিলিটারি অফিসারদের শাড়ি
পরার রেওয়াজ আছে তবে সেখানে বেল্টের
একটা সংযোজন আছে । একটা সময় ছিল যখন
পাঁচতারা হোটেলে শাড়ি পরাবার জন্য পুরুষদের
প্রাধান্য ছিল । বিদেশে শাড়িকে ছড়িয়ে দিয়েছে
ইসকন সম্প্রদায় । পাকিস্তানের করাচিতে মোহাজি
শাড়ি আর ধনীদের মধ্যে পাটোলা কোনোরকমে
টিকে আছে সেখানে । বাংলাদেশ এখনও শাড়িকে টিকিয়ে রেখেছে । এখন শাড়ির মাপ ১২ হাত ১৮ ফুট ৪ থেকে ৯ মিটার । তবে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
আবার তার চন্দ্রনাথে বার্মিজ রমণীদের রাস্তায়
হেঁটে যাওয়ার স্মার্টনেস দেখে শাড়ি পড়া রমণীদের জড়সড় ভাবে দুঃখিত হয়েছেন । যদিও সেই যুগ আজ আমূল বদলে গেছে ।
এদেশে শাড়িকে আধুনিক ভাবে পরার
কায়দায় প্রথমেই নাম আসে ইন্দিরা গান্ধীর ,
তারপর রেখার নাম । বিদেশ থেকে এসে
সোনিয়া গান্ধী সেই ঐতিহ্য আর‌ও উচ্চে তুলে
ধরেছেন । তাঁর গায়েই এ যুগের সবথেকে
দামি শাড়ি পাঁচ লাখের পাটোলা উঠেছিল রেগনের পার্টিতে ( যার বর্তমান দাম ১২,০০০০০/- )
( কপিরাইট- Alok Kumar Kundu /
আলোক কুন্ডু ( আলোক কুন্ডু রং লেখালিখি
ও কবিতা , ফেসবুক পেজ । alokkundu.blogspot.in)



বুধবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০১৭

বড় শাড়ির শখ ছিল Poetry of Alok Kundu

বড় শাড়ির শখ ছিল / অলোক কুন্ডু

রাজশাহী-রেশমি ঢাকাই-জামদানি
ব্রোকেট-জর্জেট বা মাইসোর সিল্কে
তার মা কে দারুন মানাতো ।
ক্লাস ইলেভেন যখন মা বলতেন
এখন থেকেই শাড়ি পরবি ?
কলেজে উঠলে সব নিয়ে নিস
মায়ের মুখ থেকে
হরেক শাড়ির নাম শুনে শুনে
মুখস্থ করতো মেয়েটা
মা বলতেন আহা মেয়ের শখ দেখ ।

বড় শাড়ির শখ ছিল মেয়েটার
সেই থেকে শাড়ি দেখলেই
মেয়েটা প্রজাপতি হয়ে উড়ে যেত ।

ইউনিভার্সিটির প্রথম দিনই
পরে গিয়েছিল মায়ের মুগা মেখলাখানা
আর সেদিনই আলাপ হয়েছিল অমিতেশের সঙ্গে
আলাপ যত বাড়তে লাগলো
তত একটার পর একটা শাড়ি ভাঙে
কখনো আদিবাসী উমারিয়া তা বিষ্ণুপুরী
আরানি-রেশম তো কখনো কাঞ্চিপূরম
পাইথানি-সিল্ক থেকে মসলিন
কোনোদিন ভাসতারা-কটন ।

অমিতেশ শাড়ির খুঁট ধরে একটান দিয়ে বলতো
--খুব যে সাজা আজ ?
কখনো ভাগলপুরী-কটনে কফি হাউসের হৈচৈ থেকে
দুজনে চলে যেত নির্জনে একাএকা --ইক্কতে
অমিতেশ অবাক তাকিয়ে বলতো
এত সেজে বুঝি কেউ পড়তে যায়
মেয়েটা বলতো জানো সাহেব--
কাঁধের ওপর থেকে পিছনে
এই যে মস্ত ঝোলা দেখছো
ওই ঝোলায় তোমাকে বেঁধে রাখবো--দেখো ।

দুবছরের সিনিয়ার অমিতেশ
আমেদাবাদ থেকে পিএইচিডি করে ফিরে
সটান এসেছিল দুপুরে তাদের বাড়িতে
সদর থেকে চিলেকোঠায় গিয়ে থেমেছিল
অমিতেশ বলেছিল চোখ বন্ধ কর উঁহু দেখবেনা
চুপি দেওয়া চোখে দেখেছিল সে --
লালপেড়ে গঙ্গাজল রঙের একটা--পাটোলা ।

বাবা বলেছিলেন শাড়িটার নাম যেন কী
মা যুগিয়ে দিয়েছিলেন - পাটোলা
বাবার মুখ থেকেই প্রথম শোনা
গুজরাটের পাটনে এই পৃথিবী বিখ্যাত শাড়ি তৈরি হয়
বাবা জিজ্ঞেস করেননি দাম
সে বিশ হাজার টাকা দামের স্টিকারটা
আগেই তুলে ফেলছিল
শাড়ি পাগল মেয়েটা শাড়িটার যত্ন করতো বটে
মা বলতেন ওটা আর কবে পরবি বলতো ?
বড় শাড়ির শখ ছিল মেয়েটার ।

প্রতি বছর পুজোতে মা বলতেন
আমার কেনা শাড়ি তো তোর পছন্দই হবেনা
মেয়ের আমার নাকউঁচু ।

কত বছর যে চলে গেল তারপর কে জানে
অমিতেশের চিঠিগুলো জুড়ে জুড়ে
মস্ত একটা আঠারো ফুট সম্বলপুরী
বা পচমপল্লীর পৈঠানী
কিংবা বারো হাত বোমকাই হয়ে যেতে পারতো
কিন্তু কিছুই হলনা
শেষে একদিন টরেন্টোর অলিভ অ্যাভিন্যু থেকে
চিঠি আসা একবারে বন্ধ হয়ে গেল
পাটোলাটা জীবনে পরাই হলোনা তার ।

অমিতেশের ঘামলাগা শাড়িগুলো
আর কোথাও পরে যেতনা
আলমারীর থাকে থাকে
বেঙ্কটগিরি লুগালে গাদোয়াল ক্লাসিকেট
চান্দেরি কটাদরিয়া ঢাকাই-জামদানি
বলরামপূরম মঙ্গলগিরি শান্তিপুরি বাঁধনি
বেগমপরি কাঞ্জিভরম কটকিগুলো
ভাদ্রমাসের রোদ দেখতোনা আর ।

শেষে বাবাও বলতে শুরু করলেন --
মেয়ের আমার নাকউঁচু
বর আর পছন্দ হয়না ।
প্রথম প্রথম লুকিয়ে চোখ মুছতো
এইভাবেই দুটো বছর তবু আশা ছাড়েনি মেয়েটা
গোঙানির কোনো শব্দ কেউ টের পাইনি তার ।

বড় শাড়ির শখ ছিল মেয়েটার
বড় বরেরও শখ ছিল মেয়েটার ।
দ্বিতীয় পক্ষের বলে বাবা মা রাজি হননি কিছুতেই
শেষে জোর করে রাজি হয়ে গেল মেয়েটা নিজেই
কাতান একটা লাল রঙের বেনারসীতে
ভারি মানিয়েছিল
ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে গেল মেয়েটার ।

ফুলশয্যার রাত কাটলে
বাড়ির সকলের সঙ্গে মিশে গেল মেয়টা
সেদিনই সুশোভন খুলে দেখালো একটা আলমারি
আলমারিটায় শুধু সারসার শাড়ি
বড় শাড়ির শখ ছিল মেয়েটার
মায়ের মুখ থেকে শুনে শুনে
শাড়ির সব নাম মুখস্থ করেছিল মেয়েটা ।

আলমারিভর্তি কলমকারী ধনিয়াখালি কলাক্ষেত্র শোলাপুরি ভেঙ্কটগিরি তাঞ্চোই বালুচরি
কড়িয়াল-বেনারসি কিমেরা-সুনোঢ়ি ওভেন পাট্টু
নৌভরী নারায়ণপেট কোসা সিল্কের মতো বেওয়ারিস শাড়ির মধ্যে দেখতে হঠাৎ চোখে পড়লো
একটা গঙ্গাজল রঙের লালপেড়ে হুবহু পাটোলা ।

মায়ের মুখ থেকে শুনে শুনে
শাড়ির নাম মুখস্থ করতো মেয়েটা

যে গোঙানিগুলো এতদিন শব্দ করেনি
যে কান্নাগুলো লুকিয়ে যেত চটপট
আজ তা আর সামলানো গেলনা কিছুতেই
কোনোরকমে আলমারিটা বন্ধ করেদিল
সুশোভন কিছু জানতে চাইলো না
দু হাতে গাল ধরতেই
মেয়েটা বুকের পাঞ্জাবি আঙড়ে ধরলো 
গোঙানি গুলো ততক্ষণে কাঁন্নার শব্দে বাঁক নিয়েছে
সুশোভন অস্ফুটে বললো --খুব ভুল হয়ে গেছে
সুশোভন টের পাচ্ছে পাঞ্জাবিটা ক্রমশ ভিজে যাচ্ছে
মেয়েটা ফুঁপিয়ে ফুঁফিয়ে কাঁদছে 
বড় শাড়ির শখ ছিল মেয়েটার ।
© অলোক কুন্ডু










শনিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৭

বড় শাড়ির শখ ছিল / Poetry of Alok Kundu

বড় শাড়ির শখ ছিল / অলোক কুন্ডু

রাজশাহী-রেশমি ঢাকাই-জামদানি
ব্রোকেট-জর্জেট বা মাইসোর সিল্কে
তার মাকে দারুন মানাতো ।
যখন ক্লাস ইলেভেন মা বলতেন
এখন থেকেই শাড়ি পরবি ?
কলেজে উঠলে সব নিয়ে নিস
মায়ের মুখ থেকে হরেক শাড়ির নাম
শুনে শুনে মুখস্থ করতো মেয়েটা
মা বলতেন আহা মেয়ের শখ দেখ ।

বড় শাড়ির শখ ছিল মেয়েটার
সেই থেকে শাড়ি দেখলেই
মেয়েটা প্রজাপতি হয়ে উড়ে যেত ।

ইউনিভার্সিটির প্রথম দিনেই
পরে গিয়েছিল মায়ের মুগা মেখলাখানা
আর সেদিনই আলাপ হয়েছিল অমিতেশের সঙ্গে
আলাপ যত বাড়তে লাগলো
তত একটার পর একটা শাড়ি ভাঙে
কখনো আদিবাসী উমারিয়া তো বিষ্ণুপুরী
আরানি-রেশম কখনো কাঞ্চিপূরম
পাইথানি-সিল্ক থেকে মসলিন তো কোনোদিন ভাসতারা-কটন ।

অমিতেশ শাড়ির খুঁট ধরে একটান দিয়ে বলতো
--খুব যে সাজা আজ ?
কখনো ভাগলপুরী-কটনে
কফি হাউসের হৈচৈ থেকে দুজনে
চলে যেত নির্জনে একাএকা --ইক্কতের সাজে
বলতো জানো সাহেব--
কাঁধের ওপর থেকে পিছনে
এই যে মস্ত ঝোলা দেখছো
ওই ঝোলায় তোমাকে বেঁধে রাখবো--দেখো ।

দুবছরের সিনিয়ার অমিতেশ
আমেদাবাদ থেকে পিএইচিডি করে ফিরে
সটান এসেছিল একদিন দুপুরে তাদের বাড়িতে
সদর থেকে চিলেকোঠায় গিয়ে থেমেছিল
অমিতেশ বলেছিল চোখ বন্ধ কর উঁহু দেখবেনা
চুপি দেওয়া চোখে দেখেছিল সে --
লালপেড়ে গঙ্গাজল রঙের একটা--পাটোলা ।

বাবা বলেছিলেন শাড়িটার নাম যেন কী
মা যুগিয়ে দিয়েছিলেন - পাটোলা
বাবার মুখ থেকেই প্রথম শোনা
গুজরাটের পাটনে
এই পৃথিবী বিখ্যাত শাড়ি তৈরি হয়
বাবা জিজ্ঞেস করেননি দাম
সে বিশ হাজার টাকা দামের স্টিকারটা
আগেই তুলে ফেলছিল
শাড়ি পাগল মেয়েটা শাড়িটার যত্ন করতো বটে
মা বলতেন ওটা আর কবে পরবি বলতো ?
বড় শাড়ির শখ ছিল মেয়েটার ।

প্রতি বছর পুজোতে মা বলতেন
আমার কেনা শাড়ি তো তোর পছন্দই হবেনা
মেয়ের আমার নাকউঁচু ।

কত বছর যে চলে গেল তারপর কে জানে
অমিতেশের চিঠিগুলো জুড়ে জুড়ে
মস্ত একটা আঠারো ফুট সম্বলপুরী
বা পচমপল্লীর পৈঠানী
কিংবা বারো হাত বোমকাই হয়ে যেতে পারতো
শেষে একদিন টরেন্টোর অলিভ অ্যাভিন্যু থেকে
চিঠি আসা একবারে বন্ধ হয়ে গেল
পাটোলাটা আর পরাই হলোনা তার ।

অমিতেশের ঘামলাগা শাড়িগুলো
আর কোথাও পরে যেতনা
আলমারীর থাকে থাকে
বেঙ্কটগিরি লুগালে গাদোয়াল ক্লাসিকেট
চান্দেরি কটাদরিয়া ঢাকাই-জামদানি
বলরামপূরম মঙ্গলগিরি শান্তিপুরি বাঁধনি
বেগমপরি কাঞ্জিভরম কটকিগুলো
ভাদ্রমাসের রোদ দেখতোনা আর ।

শেষে বাবাও বলতে শুরু করলেন --
মেয়ের আমার নাকউঁচু
বর আর পছন্দ হয়না ।
প্রথম প্রথম লুকিয়ে চোখ মুছতো
এইভাবেই দুটো বছর তবু আশা ছাড়েনি মেয়েটা
গোঙানির কোনো শব্দ কেউ টের পাইনি তার ।

বড় শাড়ির শখ ছিল মেয়েটার
বড় বরেরও শখ ছিল মেয়েটার ।
দ্বিতীয় পক্ষের বলে বাবা মা রাজি হননি কিছুতেই
শেষে জোর করে রাজি হয়ে গেল মেয়েটা নিজেই
কাতান একটা লাল রঙের বেনারসীতে
ভারি মানিয়েছিল
ধুমধাম করে বিয়ে হয়ে গেল মেয়েটার ।

ফুলশয্যার রাত কাটলে
সুশোভন খুলে দেখালো একটা আলমারি
আলমারিটায় শুধু সারসার শাড়ি
বড় শাড়ির শখ ছিল মেয়েটার
মায়ের মুখ থেকে শুনে শুনে
শাড়ির সব নাম মুখস্থ করেছিল মেয়েটা ।

হঠাত আজ আলমারিভর্তি
কলমকারী ধনিয়াখালি কলাক্ষেত্র শোলাপুরি ভেঙ্কটগিরি তাঞ্চোই বালুচরি কড়িয়াল-বেনারসি কিমেরা-সুনোঢ়ি ওভেন নৌভরী নারায়ণপেট কোসা সিল্কের মতো
একগাদা বেওয়ারিস শাড়ির মধ্যে দেখতে পেল
একটা গঙ্গাজল রঙের হুবহু লালপেড়ে পাটোলা
মায়ের মুখ থেকে শুনে শুনে
শাড়ির নাম মুখস্থ করতো মেয়েটা
বড় শাড়ির শখ ছিল মেয়েটার
আজ আর একটাও নাম মনে করতে পারলোনা
সুশোভনের বুকের পাঞ্জাবি আঙড়ে ধরে
হাউহাউ করে কেঁদে উঠলো মেয়েটা ।
© অলোক কুন্ডু

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...