সোমবার, ৬ জুলাই, ২০২০

#Saranda tour

■পুরনো সারাঙডা ২০২০-[ পর্ব●১ ]
◆অলোক কুন্ডু

●সাতশো পাহাড়ের জঙ্গল হিসেবে 
নজরকাড়া পশ্চিম সিংভূম জেলা বা এই অঞ্চলের অন্য নাম সারাঙডা। জঙ্গলের আনাচেকানাচে মাটিতে মিশে রয়েছে খয়েরি ও কালো রঙের লৌহ আকরিক । লালমাটি অর্থাৎ 'আয়রন-ওর' ( সমস্ত লালমাটি কিন্তু লৌহ আকরিক নয়, ল্যাটেরাইট মানে লালমাটি) আর আছে অফুরন্ত শাল সেগুনের ভয়ঙ্কর ঘন গা ছমছমে ভিরিডিয়ান জঙ্গল। কাছাকাছি আছে অনেকগুলো আয়রন‌-ওর মাইন্স। কিরিবুরু আর মেঘাহাতুবুরু হলো সারাঙডার দুটি পাহাড়ের চূড়ার নাম। এখন অবশ্য দুটো
চূড়ার অবস্থানের নাম হয়েছে হিলটপ। অবশ্য কিরুবুরু কিন্তু জঙ্গলের রেঞ্জ নামেও
অভিহিত করা হয়। এখানে আসতে হলে হাওড়া থেকে দিনের দিন বারবিল-এ অথবা বড়াজামদায় (রেলস্টেশন) নামতে হবে। এইসব স্টেশনে নামলে আপনি জঙ্গল আর আয়রন‌ওর এলাকায় নেমেছেন বলে অচিরেই বুঝতে পারবেন। বিহার-ঝাড়খণ্ডের গ্রামগঞ্জের সাদামাটা ধুলোয় মোড়া আর পাঁচটা রেলস্টেশনের মতো দেখতে হলেও এইসব স্টেশনের পরিবেশ একটু অন্যরকম। এখানকার সমস্ত ধুলো লাল, রেড-অক্সাইড দিয়ে এলাকাটা কেউ যেন সম্পূর্ণভাবে মুড়ে দিয়েছে। কোনও এক অজ্ঞাত প্রকৃতির অঙ্গুলিহেলনে লালের লেলিহান আস্তরণে গাছপালা পর্যন্ত ঢাকা। এইসব স্টেশনের বাইরে বহু বছর আগে দাঁড়িয়ে থাকতো টাঙ্গাগাড়ি আর টাট্টু ঘোড়া। এখন সেই 
ছবি বদলে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আধুনিক 
সব গাড়ি আর বড় বড় লরি বা ট্রাক। সাতসকালে আমরা দুটো পরিবার হাওড়া স্টেশনের ২০-নং প্লাটফর্ম থেকে জনশতাব্দীতে (হাওড়া-বারবিল) উঠেছিলাম। নামলাম বারবিলের আগের স্টেশন,বড়াজামদায় প্রায় বেলা১.২০-তে। মোট ৭-ঘন্টার সুহানাসফর। আমাদের পারিবারিক এক স্বামী-স্ত্রী বন্ধু শিল্পী-সুপ্রিয়র 
রুট-প্ল্যান অনুসারে আমরা যাবো 
সারাঙডায়, কারণ ওরা সব চেনে। 
চিনারপার্ক থেকে (ইউবিআইয়ের ) 
সুজিত চ্যাটার্জী-দা ও কৃষ্ণা চ্যাটার্জী(স্ত্রী) আমাদের আরেক জোড়িবন্ধু,খুব 
ভোরবেলা আগেই এসে পৌঁছেছেন হাওড়া স্টেশনে। আমরা মধ্য হাওড়া থেকে একটা টোটোতে চেপে চলেছি, নামবো হাওড়ার ফোরসোর রোড হয়ে রেল-মিউজিয়ামে,
ওখান থেকে হেঁটে হাওড়া স্টেশন ঢুকতে 
লাগবে ২/৩ মিনিট। এমন সময় ফোন 
এলো কৃষ্ণার কাছ থেকে। জানা গেল সুজিত-দা দাঁড়িয়ে আছেন প্লাটফর্মের 
মুখে, আমাদের অপেক্ষায়। সকাল 
৬.২০-তে সঠিক সময়ে জনশতাব্দী 
ছেড়ে দিল। আছি এসি চেয়ারকারে। 
কিন্তু সাময়িক যাত্রায় এসিতে বাইরেটা
সেইরকমভাবে উপভোগ করা যায় না কিন্তু সঙ্গে মহিলারা আছেন,কিছুটা হলেও বাথরুম একটু সাফসুরত পাওয়া যাবে তাই এসিতে। চাইবাসা থেকে উঠবে সুপ্রিয়-শিল্পী ওদের চাইবাসায় একঘন্টা অপেক্ষা করতে হবে। জনশতাব্দী চাইবাসায় ঢুকতে ওরা যোগ দিলেন আমাদের সঙ্গে (আমরা এখন 
তিনটি সমমনস্ক পরিবার একসঙ্গে 
হয়ে গেলাম)। বড়াজামদা স্টেশনে 
গাড়িও বন্দোবস্ত করে রেখেছিল সুপ্রিয়। 
বোলেরো ও তার ড্রাইভার সাহেব উপস্থিত রয়েছেন। বেলা ১.২০-তে আমরা নামলাম বড়াজামদায়। আসল সারাঙডা রয়েছে মেঘাহাতুবুরু ও কিরিবুরুর পাহাড়ে এবং থলকোবাদে। বাকি সারাঙডার অনাঘ্রাত সবুজ পড়ে আছে আর‌ও গহীন জঙ্গলে।আমরা গিয়ে উঠবো মেঘাহাতুবুরুতে,
সেলের যেখানে গেস্ট-হাউস রয়েছে,
ওটাই সারাঙডার ভিউপয়েন্ট। যেখানে থাকতে গেলে সেইলের কর্মচারী বা অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী হতে হবে অথবা সেইলের অফিসার সঙ্গে থাকলে খুব 
ভালো হয়। কিন্তু তা নাহলে সেইলের গেস্টহাউসে স্থান পাওয়া খুব‌ই মুস্কিল। 
খুব জ্যাক না থাকলে, নিজেরা হঠাৎ গিয়ে সারাঙডার জঙ্গলে থাকার আসল মজা কিন্তু পাওয়া যাবেনা। এককথায় বলা যায় মেঘাহাতুবুরুতে সেইলের গেস্টহাউস সহজে বুক করতে পারা যাবেনা, যদিও কেউ বুক করে চলেও যান কিন্তু হঠাৎ কোনও ভিআইপি এলে তার ঘর বুকিং ক্যান্সেল হয়ে যাবে, এটাই সেইলের স্থায়ী নিয়ম। ভিআইপি এলে, স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়ার স্টাফের‌ও বুকিং ক্যান্সেল হয়ে যেতে পারে। তাই মেঘাহাতুবুরুর ওই গেস্টহাউস হলো সারাঙডায় ভ্রমণার্থীদের থাকার জন্যে একটি মহার্ঘ থাকার জায়গা। পাওয়া না পাওয়ার দোলাচলে থাকতেই হয়। তাই সারাঙডায় গেলে প্রায় সকলেই গিয়ে ওঠেন বারবিলের মি: লতিফের রিসর্টে বা অন্য কোন‌ও হোটেলে। বারবিল স্টেশন থেকে ওইসব হোটেলের দূরত্ব ২০/২৫ কিলোমিটার এবং বারবিল থেকে কিরিবুরু রেঞ্জ খানিকটা দূরে। যাইহোক আমাদের তিনটি পরিবারের হোয়াটস‌অ্যাপে আলোচনা করে ঠিক হলো যে আমরা অন্য দুটি পরিবার‌ও ওদের সঙ্গে মেঘাহাতুবুরুতে গিয়ে থাকবো অর্থাৎ সেইলের গেস্টহাউসে আমরা ওদের দুজনের সঙ্গে আর‌ও চারজন থাকতে পারবো। মেঘাহাতুবুরুর গেস্টহাউসের নাম "মেঘালয়"। কেন মেঘালয়, সেটা ওখানে গিয়ে টের পেলাম। অধিকাংশ সময়ে জায়গাটা মেঘ ও কুয়াশায় ছেয়ে ফেলে। এই"মেঘালয়"-এর মতো গেস্টহাউস, গোটা সারাঙডায় আর একটাও নেই এবং যেহেতু মেঘাহাতুবুরুর গেস্ট হাউসে পুলিশ, 
প্রতিরক্ষা, সিআইএস‌এফ,খনি দপ্তর, 
ঝাড়খণ্ড সরকারের হোমরাচোমরাদের 
সারাঙডায় কাজের জন্যে গিয়ে হরদম  সাময়িক-স্টে করার একমাত্র জায়গা‌। 
তাই ওই গেস্টহাউস সব সময় ভর্তিই 
থাকে। এই গেস্টহাউস ফাঁকা পাওয়া সৌভাগ্যের ব্যাপার। পাশের কিরিবুরুতেও সেলের আর‌ও দুটি গেস্ট হাউস আছে। আর‌ও একটি আছে ভিজিটারদের জন্য যারা দূর থেকে এখানে কাজে আসেন 
তাদের থাকার জন্য এবং আর একটি গেস্টহাউস কিরিবুরুতে আছে সেটা সম্পূর্ণভাবে ব্যাচেলরদের জন্য। কলকাতার ক্যামাক স্ট্রিটের "সেইল"-এর অফিস থেকে বুক করলেও কিন্তু যখন তখন সেই বুকিংও ক্যানসেল হয়ে যেতে পারে, এই মহামন্ত্র জেনেবুঝে ওই বিষ ও অমৃতভান্ডের বরণডালা সাজিয়েই আমরা বেরিয়ে পড়েছিলাম সেই সৌন্দর্য পথের সন্ধানে। 
এই আপ্তবাক্য মনে রেখে, যা ভাগ্যে আছে তাকে মেনে নিতে হবে। বিশেষ করে ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী যখন তখন সারাঙডার এই "মেঘালয়" গেস্ট হাউসে এসেই ওঠেন। উড়িষ্যার লাগোয়া মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, অফিসার এমনকি পশ্চিমবঙ্গের 
মন্ত্রীরা পর্যন্ত এখানে আসেন। মেঘালয়ের গেটে ২৪ ঘন্টা সিআইএস‌এফের জ‌ওয়ানরা পাহারা দিচ্ছেন। ট্যুরিজমের পর্যাপ্ত সুযোগ থাকা সত্বেও এতবছরেও সারাঙডা কিন্তু
জবরদস্ত ট্যুরিস্ট স্পট হয়ে উঠতে পারেনি, একমাত্র কারণ হলো থাকার এই জায়গার অভাবের কারণ। সারাঙডার এই মধ্যমণি গেস্টহাউস অর্থাৎ মেঘালয়ের ঘরে ঘরে যখন তখন মেঘ ঢুকে আসে। এক আশ্চর্য রূপারোপ নিয়ে খাড়াই পাহাড় হয়ে বাঁকেবাঁকে উঠে গেছে আমাদের সারাঙডা। নির্লিপ্ত অথচ এখানকার যে পাহাড়িভঙ্গি ভ্রমণার্থীদের দীর্ঘ দিন আকর্ষণ করে রেখেছে তার প্রধান কারণ হলো এর অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মণিকাঞ্চনসমূহ। একদিকে গাছ, ঘন জঙ্গল, লৌহ খনির খাদানের অপূর্ব সৌন্দর্য শৈলী,জীবজন্তু
এবং ঝর্ণা। এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম শালের জঙ্গল যার ঘনত্ব হেক্টর প্রতি ভারতে আর কোথাও নেই। সঙ্গে অরণ্যসুন্দরীর বিনোদবেণির বাঁকে বাঁকে তীক্ষ্ণ হেয়ারপিন সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়েছে আর তার রূপলাগি বাঙালি ভ্রমণপিপাসুরা বহুকাল ধরে সেই অনন্ত ঐশ্বর্যবিলাসী রূপ-রসের মোহে চিরকাল ধরে মজে আছেন। সেইসঙ্গে আছে বিশাল বিশাল আয়রন-ওর মাইন্স। ব্যাপক সেই আয়োজনে মানুষের রুপির ঝনঝনানির শব্দ যা ভারতবর্ষের জিডিপি বর্ধিত করার প্রলোভনে মাতোয়ারা থাকে সর্বক্ষণ। যত্রতত্র হাতির করিডোর। জমির ১০-মিটার ভেতর লাল কালো সলিড 
লোহার পাহাড় অর্থাৎ হেমাটাইট-লোহার ৫৮-৬০ ভাগের ঐশ্বর্যকে কোম্পানিগুলি চুটিয়ে খরিদদারি করে যাচ্ছে, এই ব্যবসা
অনেকটাই মনোপলি। এখানকার ভূমির মাটি ছুঁয়ে আকাশে উঠে গেছে বিশাল বিশাল শাল পিয়াল বট সেগুন মেহগনি গাছের অবিরাম বিস্তার। মাথা উঁচিয়ে আকাশে তাকাতে হয় মানুষকে এমন‌ই 
তার উচ্চ মিনার। ৫/৬ তোলা (৫০-৬০ ফুট) শাল সেগুন পিয়ালের ঘন জঙ্গল। এক 
এক জায়গায় জঙ্গলের গভীরতা এতটাই অন্ধকারাচ্ছন্ন যে দিনের আলো সেখানে ঝিমিয়ে থাকে। শ্যাওলার আস্তরণ দেখে নিজেকে বুঝে নিতে হবে যে সেখানে 
বহুকাল মানুষ আসেনি। এখানকার জঙ্গল এমন‌ই রূপসী যে সেই অগম্যতাকে দেখার 
বিহ্বলতায় ভ্রমণার্থীর মনে সুখের এক প্রকার অনাবিল আনন্দের সঞ্চার হয়। কখনও আবার সবুজ বনানীর ঘন আকৃতিময়তা ও তার গভীরতায় প্রাণ
ধুকপুক করে ওঠে । অনাঘ্রাত প্রকৃতির 
সেই ভয়ধরা শিহরণ পৌঁছে যায় হাড়ে
হিম ধরা পর্যন্ত। হিন্দি ছবি রাজের থেকে সেই ভয় আর‌ও ব্যাপক। দুর্গম রূপের সেই রুক্ষ-গাঢ়-মরা সবুজাভ বনভূমির অবিচল নির্লিপ্ত চাউনি ভ্রমণপিপাসুদের আর‌ও ভেতরে নিয়ে নিয়ে যেতে চায় বুঝি। একসময় ভয়ঙ্কর জঙ্গলের মধ্যে গিয়ে 
যখন জানতে পারা যায় যে সেখানেই ২০০৯-এর কোনও এক সকাল ৮.০০ টায় ১৭-জন জ‌ওয়ানের কনভয়সমেত গাড়িকে মাওবাদীরা ক্যানবম্ব আইডি বিস্ফোরণ করিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিল। সেইসব জেনে তখন আমাদের হৃদযন্ত্রের স্পন্দন এবং রোড-রোলালের শব্দের মধ্যে আর কোনও তফাত হয়তো ছিলোনা। সত্যিই ভয়ে বুক কেঁপে উঠেছিল। সেখানে আজও স্মৃতি হিসেবে রাখা আছে একটুকরো বুলেট প্রুফ কাঁচ। বুলেটপ্রুফ কাঁচ যে কতটা মোটা ও শক্তপোক্ত হয়, এখানে আসার আগে পর্যন্ত তা মোটেও জানা ছিলনা‌। প্রথম শ্রেণির একজন অফিসার সহ তাও ১১-জন জ‌ওয়ানকে বাঁচাতে পারা যায়নি সিআরপিএফ জ‌ওয়ানরা নিধন হলেও ৬-জন ঝাড়খণ্ড পুলিশ নিদারুণভাবে চোট পেয়ে বেঁচে গিয়েছিলেন। সংবাদপত্র ১৭ জন লিখলেও জনগণ সেই হিসেবকেই মুখে মুখে ১৮ জন করে নিয়েছেন কি কারণে সে বিষয়ে রহস্য থাকলেও থাকতে পারে‌।এখনও আপনাকে সেখানে প্রাণ হাতে নিয়েই যেতে হবে ওইসব পথ দিয়ে। এই পথে অন্য দর্শনীয় স্থান দেখতে যাওয়ার আগে সিআরপিএফ চেকপোস্টের ডিউটিরত জ‌ওয়ান গাড়ির ড্রাইভারকে 
মাত্র আধঘন্টা সময় দিলেন, ফিরে আসার জন্য। ওই পথ ধরে বেরিয়ে যাওয়ার রাস্তা শুধুই গভীরে যাওয়ার, জঙ্গল পথে চলে যাওয়ার। সে পথ বুঝি অনন্ত অথবা নেই তাই সেই পথেই ফিরে আসতে হবে। জঙ্গলঘাঁটি শুরু হয়েছে এখান থেকেই।
ঘাঁটি মানে উঁচিয়ে ওঠা আর ওঠা। এক 
একটা ঘাঁটি এখানে একের চার কিমি পথ টানা উঠে গেছে। পাথর মেশানো কাদামাটির সেই পথ। ড্রাইভার‌ও সেকথা ভালো ভাবে জানেন দুর্গম পথের হিসাব এবং কখন তাকে ফিরে আসতে হবে। তাই যতদূর পারা যায় গিয়ে তিনিও কথা রাখতে তাড়াতাড়ি ফিরতে চাইবেন। কারণ দূর পথে একটা ঝর্ণা আছে আর আছে হাতিদের নদীতে জলপানের একটা জায়গা যেখানে তখন একটা বাঁধ দিয়ে জন্তুজানোয়ারদের জলপানের জন্য একটা বদ্ধ জলাশয় তৈরি করার চেষ্টা চলছে। আমরা যেদিন গেলাম সেইদিন সেখানে ওই ছোট্ট বাঁধের কাজকর্ম দেখতে আসা বন দপ্তরের লোকেরা ততক্ষণে ওখানে একটা ছোটখাটো পিকনিক শুরু করে দিয়েছে। তাদের গাড়িটি যেখানে রাখা আছে তার ঠিক পেছনে আমাদের ড্রাইভারসাহেব তার গাড়িটি থামিয়ে দিলেন। সেই গভীর জঙ্গলে হাতির নিজস্ব ভূমির পরিচয় দেওয়া একটি বোর্ডের পাশে দাঁড়িয়ে বনকর্মীদের আনন্দের দেখাদেখি ততক্ষণে আমাদের‌ও ফটোসেশন শুরু হয়ে গেছে। এতক্ষণ যে ভয় শরীর ও মনে বাসা বেঁধেছিল তা অচিরেই পালিয়ে গেছে ততক্ষণে। গাড়ির মধ্যে যে জবুথবু হয়ে বসে থাকা, মনে মনে যে আতঙ্কের চিত্রকল্প সাজানো চলছিল, জঙ্গলের মধ্যে নামতে পেরে সেইসব তখন তুচ্ছতাচ্ছিল্যের মতো উবে গেছে। স্বাধীন জঙ্গলের কাছে তখন আমাদের স্বাধীনতা ভাগ করে নেওয়ার পালা। সামনে বিশাল জঙ্গলের পটভূমি, একটা ছোট পাহাড়ি নদী এই পর্যন্ত আসার পর তাকে তিন সাড়ে তিনফুট একটা বাঁধ দেওয়া হয়েছে। বর্ষাকালে জল যে বাঁধ ছাপিয়ে ভয়ঙ্কর হবে সেকথা না বললেও বুঝে নিতে হয়। জঙ্গলের যত্রতত্র উইঢিপিগুলো থেকে তাদের বিশাল বাহিনী নিয়ে বড় বড় নিষ্পাপ আকাশছোঁয়া গাছগুলোকে বধ করার পরিকল্পনায় অনেক দূর তারা এগিয়ে গেছে। আমরা এখন ফেব্রুয়ারির প্রথমদিকে এসেছি, শীত শেষের জঙ্গল দেখতে। জঙ্গলকে অপরূপ লাগা মানে একরকম নেশা ধরা। পাতা ঝরার সময় শুরু হয়েছে এখন। নব পত্রপল্লবের পতাকায় জঙ্গলের উৎসব শুরু হবে মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে, বসন্তের আগমনে। তারপর ওরা দিনের পর দিন গনগনে গ্রীষ্মের প্রখর তাপ সহ্য করবে। বৃষ্টিতে ভিজবে অরণ্যসমূহ। সেই সাধে বুঝি বৃক্ষশ্রেণি আকাশের উদ্দেশ্যে চিরকাল বড় হয়। স্বাধীন অরণ্যের স্বাদ নেওয়ার যে সাধ হয়েছিল আমাদের, এতক্ষণে তা বুঝি অনেকটাই পূর্ণ হয়েছে। আমরা গাড়ি থেকে নামতে পেরে নানা ভঙ্গিতে তখন সেল্ফি-গ্রুফিতে মগ্ন। কখন যেন আনন্দে সারাঙডাকে আপন করে নিয়েছি তা আর মনে নেই...( ক্রমশ: )

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...