রবিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০

শিক্ষক দিবস / অলোক কুন্ডু

■ আমরা ভারতবাসী, আমরা শুধু ভালোটুকুই
মনে রাখবো , প্রণাম রাধাকৃষ্ণান। 
অলোক কুন্ডু

■ এরকম শিক্ষককে আমি জানি যাদের শিক্ষকতা করার মতো আচরণ যথেষ্ট ভালো , ক্লাসে ভালো পড়ান কিন্তু জাতীয় শিক্ষকের সম্মান মোটেও তাদের দেওয়া হয়নি। জাতীয় শিক্ষকের সম্মান পাননি এরকম একজন শিক্ষকের নাম অন্তত জানি যিনি হাওড়ার প্রয়াত ইন্দুভূষণ চট্টোপাধ্যায় , যিনি হাওড়ার দুটি স্কুলের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আমার প্রধান শিক্ষক। খুব লজ্জার বিষয় তৎকালীন বেলুড় মঠের নিস্ক্রিয় মনোভাবের জন্য তিনি হাওড়ার বিবেকানন্দ ইন্সটিটিউশনের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত থেকেও ( স্কুলের প্রথম প্রধান শিক্ষক ) দলিলে স্বাক্ষর থাকা, পাঁচজন প্রতিষ্ঠাতাদের এক নম্বরে নাম থাকা সত্বেও, অছি হ‌ওয়া সত্বেও শুধু ভোটাভুটিতে তাকে হারিয়ে বিবেকানন্দ আশ্রম থেকে তাঁর নাম কেটে দেওয়ার অভিমানে প্রতিষ্ঠিত স্কুল ছেড়ে তিনজন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও চারজন শিক্ষককে নিয়ে হাওড়ার বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউশন থেকে বেরিয়ে এসে হাওড়ায় শ্রীরামকৃষ্ণ শিক্ষালয় প্রতিষ্ঠা করেন কিন্তু তিনি কোনোদিন জাতীয় শিক্ষক হননি। কখনও বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউশন থেকে বিতাড়িত হ‌ওয়ার অভিমান লিখে যেতে পারেননি
এতটাই শ্রীরামকৃষ্ণ-স্বামীজি ভক্ত ছিলেন। সামান্য গ্র্যাজুয়েট হ‌ওয়ার কারণে তার প্রধান শিক্ষক হয়ে ওটা আটকে যায়, সেই নিয়ে যখন কথা ওঠার কথা নয় তা উঠে যায়। তবে অনেকে তাঁবেদারি করে জাতীয় শিক্ষক হয়েছেন এরকম চোখে বিস্তর দেখেছি। এমন‌ও দেখেছি জাতীয় শিক্ষক হয়েও নিজের আচরণ পাল্টাতে পারেননি অনেক জাতীয় শিক্ষক। কী বলবেন তাঁদেরকে ? তাদের জীবনের আচরণ কোনো দিন পাল্টাতে পারেননি তবুও তারা জাতীয় শিক্ষক । এখানে আমি কয়েকটি বিশেষ গুণের কথা লিখছি যে গুণগুলি সকলের থাকেনা। সেই গুরুত্বপূর্ণ গুণগুলি থাকলে ( অন্তত ১০ টা গুণ থাকেই) তবেই তিনি জাতীয় শিক্ষক। তা নাহলে বুঝতে হবে তিনি শুধুমাত্র শিক্ষক। ১. নিজের অনেক জমি থাকলেও যিনি স্কুলের জন্যে এক টুকরো জমি দেননি তিনি কীভাবে জাতীয় শিক্ষক হবেন বা হলেন ? ২. সিগারেট খাওয়া ছাড়েন নি যিনি তিনি কীভাবে
জাতীয় শিক্ষক হলেন কিংবা হবেন ? ৩. রাজনীতি করা ছাড়েননি তিনি কীভাবে তবে জাতীয় শিক্ষক হলেন বা হবেন ? ৪.কোনো স্কুল প্রতিষ্ঠার সংগে তার নাম একবারও  শোনা যায়নি যখন তবে তিনি কীভাবে জাতীয় শিক্ষক হলেন অথবা হবেন ?
৫. বাড়ি বাড়ি গিয়ে কখনো কোন‌ও একটি ছাত্রেরও খোঁজ নেননি যিনি তিনি কীভাবে হয়ে গেলেন জাতীয় শিক্ষক বা হ‌ওয়ার জন্য বিবেচনাধীন হলেন ? ৬.পরিবেশ রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নিয়েছিলেন কোনোদিন কি?  কিংবা গাছ লাগিয়ে তার নেতৃত্ব দিয়ে গোটা পরিবেশ পাল্টে দিতে পেরেছিলেন কি ? যদি না পেরে থাকেন তবে কিসের তিনি জাতীয় শিক্ষক ? ৭. একটি ছেলেকেও বিনা পয়সায় টিউশন দিয়েছিলেন বা দেননি ? তাহলে কেন হবেন তিনি জাতীয় শিক্ষক। ৮. এমন কিছুই কৃচ্ছ সাধন করেননি তবু হয়ে গেছেন জাতীয় শিক্ষক, হ‌ওয়া মোটেই উচিত ছিল না। ৯. স্কুলের সময়ের বাইরে অর্থাৎ আগে-পরে কতদিন স্কুলে এসেছেন এবং পরে থেকে গিয়েছেন কি ? এটা না করেও তবে যদি কেউ জাতীয় শিক্ষক হিসেবে ঘুরে বেড়ান তবে বুঝতে হবে তিনি তাঁবেদার একজন। ১০. বিনা পয়সার কোচিন দিয়ে ছাত্রদের সাহায্যে এগিয়ে যাননি যিনি তিনি কীভাবে জাতীয় শিক্ষকের আবেদন করবেন ? ১১.নিজের পরিবার আর রাজনীতির বাইরে কোনো কিছুই করেননি তবু তিনি জাতীয় শিক্ষক হয়ে গেলেন বিষয়টি অদ্ভুত নয় কি ? ১২.ছাত্রদের গায়ে হাত তুলেছেন অথবা রাশভারী অথবা ছাত্ররা সেই শিক্ষককে ভয় পেয়েছেন অতিরিক্ত শৃঙ্খলার জন্যে তবে তিনি কীভাবে হবেন জাতীয় শিক্ষক ? ১৪. কখনও অন্যান্য কলিগদের সাহায্যে এগিয়ে গিয়েছিলেন একটাও উদাহরণ আছে ? ১৫. সমাজের বন্ধু হতে পারার জন্যে গ্রামে ধোঁয়াহীন চুল্লির ব্যবহার কিংবা গোবর গ্যাসের ব্যবহার,সূর্য চুল্লির ব্যবহার শিখতে সমাজকে উদ্ভুদ্ধ করেছেন কি ? ১৬. খেলাধুলোয় ছাত্র ছাত্রীদের অনন্য করে গড়ে তুলতে তার সহায়তা ছিল কি শিক্ষকের ? ১৬. ব্লাড ডোনেশন, চক্ষু অপারেশন,বিনা ব্যয়ে চিকিৎসার জন্যে উদ্যোগে
কোনও ক্যাম্প হয়েছিল ? যদি না হয়ে থাকে
তাহলে কীভাবে জাতীয় শিক্ষকের মর্যাদা পেয়ে গেলেন? ১৭. হাতে কলমে আবর্জনা পরিষ্কার , ময়লা পরিষ্কার করার মতো কাজ করে স্কুল
এলাকাকে পাল্টে দেওয়ার নজির আছে কি ? ১৮.স্কুলে আঁকাজোকা কোনও বড় ব্যাপার নয়,
স্বাস্থ্য দিবস পালন কোথাও বড় ঘটনা নয়। শিক্ষক
এমন কিছু করেছেন কি?  যার ফলে সমাজ অবাক হয়ে গেছে সেই কাজ দেখে ? ১৯.নিজের 
জন্যে না ভেবে পরের হিতেই নিজের জীবনকে 
বিলিয়ে দিয়েছেন ? ২০. এইসব কোন‌ও কৃচ্ছসাধন নেই কিন্তু তারা দেখবেন কেউ গানের বড় শিল্পী, কেউ বড় আবৃত্তিকার, কেউ ২০টা বই লিখেছেন, কেউ ডক্টরেট করেছেন, কেউ রক্তদান শিবিরে বক্তৃতা করেছেন, কেউ প্রতিযোগিতায় বিচারক ,
রবীন্দ্রনাথ নিয়ে দশ কথা বলতে জানেন তাতে সমাজের অবাক হ‌ওয়ার কিছু থাকেনা যদিও কিন্তু
ফাঁকতালে এইসব শিক্ষকরা গন্ডায় গন্ডায় জাতীয় শিক্ষক হয়ে গেছেন। কেউ কেউ ভালো জীবন যাপন করেন। ভালো জীবন যাপন করা দোষের নয়। কেউ কেউ পাথরের বাড়িতে থাকেন। কেউ কেউ জাতীয় শিক্ষকের টাকা ফিক্সড করে দিয়েছেন। কেউ কেউ জাতীয় শিক্ষক হয়ে আর ওদিকে পা মাড়াননি। কেউ কেউ শিক্ষক সংগঠনের মাথা হিসেবে মিটিং এ নিজের লোককে দিয়ে জাতীয় শিক্ষকের মনোনয়ন করিয়ে নিয়েছেন। তাবলে কি কোনো গুণী মানুষ ত্যাগী শিক্ষকরা জাতীয় শিক্ষক হননি, নিশ্চিত হয়েছেন। অনেক জাতীয় শিক্ষকের মধ্যে তাঁরাই হলেন আসল জাতীয় শিক্ষক যার জন্যে তাদের ছাত্রদের চোখে জল এসে যায়। মাথা হেঁট হয়ে প্রণাম করতে ইচ্ছে করে। যার কর্তব্যের জন্য সমাজ খুশি হয়।
আমার জাতীয় শিক্ষক হাওড়ার শ্রীরামকৃষ্ণ শিক্ষালয়ের প্রয়াত প্রধান শিক্ষক সামান্য গ্র্যাজুয়েট, ইন্দুভূষণ চট্টোপাধ্যায় যিনি কোনো দিন সরকারি ভাবে জাতীয় শিক্ষকের সম্মান পাননি। হাওড়ার বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউশন।ও শ্রীরামকৃষ্ণ শিক্ষালয়ের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
■ সম্মাননীয় রাধাকৃষ্ণন জানতেন না তার জন্মদিন উপলক্ষে সারাদেশে কয়েক লক্ষ পেন কেনাবেচা হতে পারে। গান্ধীজি এক সময়ে বলেছিলেন দেশের লোক বা আমি সোনার গয়না
চাইনা। কেউ এমন কিছু আমাকে উপহার দিন যাতে তা দেশের জনগণের কাজে লাগে। গান্ধিজি সেই পেন উপহার পেয়েছিলেন। বাঙালি শিল্পপতি কলকাতায় পেন তৈরির কারখানা খুলেছিলেন।
ড.রাধাকৃষ্ণান‌ও জানতেন না যে তাঁর জন্মদিনে গান্ধিজির সেই পরামর্শ হয়ে উঠবে এক অনন্য উপহার। শিক্ষক দিবস উদযাপনে নানা উপহার দেওয়া নেওয়াটা বেশ ভালো রকম উদযাপনের অঙ্গ হয়েছে । এই দেওয়া নেওয়ার মধ্যেও শিক্ষক দিবসের আরেকটি সৌন্দর্য বিকশিত হয়। ‌আমি এরকম একটি সৌন্দর্যের কথা জানাবো আজ।
হাওড়ার শিবপুরে , বি.গার্ডেন চিত্তরঞ্জন আদর্শ প্রাইমারি স্কুলে এক অভিনব বিষয় হয়ে আসছে যা আজ পর্যন্ত কোন‌ও খবর কাগজে প্রকাশিত 
হয়নি। আজকাল দেখি ব্যাঙের ছাতা গজালেও
খবর হয়ে যায়। সে যাই হোক গে। অথচ বিষয়টি
রীতিমত খবর। এই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষক দিবসের দিন খানিকটা ব্যতিক্রমী। যেমন এখানে হিন্দু-মুসলিম ছাত্রদের সংখা প্রায় কাছাকাছি।
এছাড়াও নিম্ন আয়ের ঘরের ছাত্র-ছাত্রীদের
সংখ্যাও কম নয়। এক সময় গেস্টকিন উইলিয়ামসের জন্যে এখানে উচ্চ আয়ের মানুষের বসবাস গড়ে উঠলেও শ্রমিক ও অন্য অনেক কারণে এলাকায় নিম্ন আয়ের মানুষের একটা জন বিস্ফোরণ হয়েছিল পাশাপাশি বস্তি এলাকা থাকায়। সরকার প্রচুর কোয়ার্টার করে তার কর্মচারীদের জন্য এই জায়গায়। দ্বিতীয় হুগলী সেতু হ‌ওয়ার আগে পর্যন্ত এই বিদ্যালয়ে
ছাত্র-ছাত্রীদের প্রচুর ভিড় ছিল। এখন নিম্ন
আয়ের সঙ্গতিহীন ঘরের ছেলেমেয়েদের জন্য
এই বিদ্যালয়ের প্রাথমিক বিভাগটি বেশ ভর্তি থাকে শুধু নয়, শিক্ষার একটি আদর্শ স্থান
অরুণ বসু এই স্কুলের শিক্ষক থাকাকালীন ( অনেক দিন অরুণবাবুর সঙ্গে দেখা নেই)  বিদ্যালয়টিকে যে যত্ন‌আত্তি করতেন তার ফলে বিদ্যালয়টি আত্মপরিচয়ে ছাত্র-শিক্ষকের মধুর সম্পর্ক বজায় আজ‌ও রেখে চলতে পারছে। সব মিলিয়ে হাওড়া শহরের বুকে এহেন একটি হাই অ্যাটাচ স্কুলের প্রাথমিক বিভাগে শিক্ষক দিবসের দিনে প্রায় অধিকাংশ ছাত্র ছাত্রীরা সঙ্গে করে নিয়ে আসে এক একজন ৯/১০ টি করে পেন। সামর্থ্য অনুযায়ী সংখ্যার হিসেবে কম-বেশি হতে পারে ‌। 
১০০ উপস্থিত হলে প্রায় ৭০০/৮০০ পেন জড় হয় স্কুলে । (কেউ কেউ ৯/১০টির জায়গায় ২/৩ টিও নিয়ে আসে) নতুন পেন উপহারের জন্য ছাত্র-ছাত্রীরা এক একজন ৫ টাকা থেকে ২০-২৫ টাকা দামের পেন কিনে আনে। অভিভাবকদের মধ্যে উৎসাহের শেষ থাকেনা বলে তারাও যে যেমন পারেন এর মধ্যে অংশগ্রহণ করে থাকেন। দেখা গেছে সারা দেশেই এইদিন পেনের জমকালো একটা ব্যবসা হয়। পেন হলো একটি সহজ ও নিষ্পাপ উপহার। যা দেওয়ার মধ্যে দিয়ে একজন শিশুর মধ্যে দানশীল হ‌ওয়া ও স্বজন গড়ার গুণ তার মধ্যে তৈরি হতে শুরু করে উপহার দেওয়ার মানসিকতার সঙ্গে শিক্ষকদের সঙ্গে একাত্মতা গড়ে তোলোর যে আয়োজন তার একান্ত প্রয়োজন আছে বলে করা হয় এবং মানসিক বিকাশ কর্তব্য বোধ তৈরি হয়। এই দিনে তা একজন তা সহজেই গড়ে তুলতে পারে।
সবচেয়ে বড় কথা এত নিষ্পাপ উপহার আর হয়না। এখন এই দিনকে ঘিরে উপহার দেওয়াটা  ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে একটা প্রতিযোগিতা
তৈরি হয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরে। সে কারণে অনেক বিদ্যালয়ে নোটিশ দেওয়া শুরু হয়েছে ছাত্র ছাত্রীরা উপহার আনবে না। এবছর তো এইসব মানা গেলনা। শিক্ষক দিবসের উপহার এত‌ই নিষ্পাপ ও সরল বেমানান । আসলে বাণিজ্যিক সংস্থা ও আর্থিক সঙ্গতিপূর্ণ অভিভাবকদের জোড়া ফলায় বিদ্যালয়ে বিদ্যালয়ে প্রতিযোগিতা একটা খারাপ বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছে যা বাঞ্ছনীয় নয়। আসলে এই উপহার নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিজেদের মধ্যে একটি জনপ্রিয়তার প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠেন যা মোটেই শোভন 
নয়। সব শিক্ষক জনপ্রিয় হবেন একথার গ্যারান্টি দেওয়া যায় না। শিক্ষার্থীদের কাছে জনপ্রিয়তা ও যোগ্য শিক্ষক এইভাবে বিচার পাওয়া মুশকিল। সুকুমারমতী ছাত্র ছাত্রীদের কাছে যা ভালো লাগবে শিক্ষকদের কাছে তা নাও লাগতে পারে। কোন‌ও শিক্ষক ২০ টা পেন কোনো শিক্ষক ১০ পেন বা অন্য উপহার পেলে টিচার্স রুমে নিজেকে ছোট মনে করার ভাবনা থেকে শিক্ষক শিক্ষিকাদের মননের উন্নয়ন ঘটাতেও হবে । পাঠদানের মাধ্যমে নিজেকে জনপ্রিয় করে গড়ে তুলতে হবে। যোগাযোগ এখানে একটা সেতু তৈরি হয়। আবার এও নিশ্চিত গণিতের শিক্ষক শিক্ষিকাদের জনপ্রিয়তা অর্জন করা অত্যন্ত কঠিন। সে যাইহোক নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে না গিয়ে সারা বছর ছাত্র‌দের জন্য প্রাণপাত করাই প্রকৃত শিক্ষকের কাজ ও কর্তব্য । বরং আসুন হাওড়ার শিবপুরের বি.গার্ডেন গেস্টকিন উইলিয়াম গেটের সামনের চিত্তরঞ্জন স্কুলের প্রাইমারির ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে উপহারের পাঠ নি‌ই । যাঁরাই সেদিন ওই স্কুলে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যোগদান করেন অভিভাবক হলেও তিনিও কয়েকটি পেন উপহার পান। শিক্ষক-শিক্ষিকারা, অতিথিরা এক একজন ৫০/৬০ টি করে পেন উপহার পান । এমনকি অতি
নিম্ন আয়ের অভিভাবক যখন দেখেন। তার পুত্র ও কন্যা লজেন্স-বিস্কুট নিয়ে খুব আনন্দমুখর হয়ে স্কুল থেকে ওইদিন বেরিয়ে আসছে তা দেখে অভিভাবকদেরও মুখ তৃপ্তিতে ভরে ওঠে । তারাও
জানতে চান সকল অতিথি ও শিক্ষক শিক্ষিকাকে
পেন দেওয়া গেছে তো ? কলকাকলিতে তখন
ভরে ওঠে বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। উপহার দেওয়ার আনন্দ‌ই যে শিক্ষক দিবসের গরিমা হয়ে ওঠে তার তৃপ্তির হাসিতে ভরে ওঠে আকাশ। 
■ ১৮৮৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জন্ম । শুধু জাতীয় শিক্ষকের সঙ্গে শিক্ষক দিবসের তাৎপর্যময় দিনটি যে জড়িয়ে আছে তা তো নয় । বর্তমান দিনে ড.রাধাকৃষ্ণনের শিক্ষক দিবসের চাওয়াটি আজ সমাজ পরম পাওয়া হিসেবে বুঝতে পেরেছে। ছাত্রদের কাছে আজ দিনটি খুশির দিন হিসেবে পরিগণিত হয়েছে মনে হয় এই অবিরল আনন্দের ধারা থেকেই শিক্ষক দিবসের তাৎপর্য বোঝা যায়। শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত থেকে দেখেছি শিক্ষকরা দলে দলে রাষ্ট্রপতি পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হতে পারেন না। এই প্রোপোজাল তৈরি করতে গিয়ে দেখেছি উপরে
লিখিত গুরুত্বপূর্ণ গুণগুলি যে যে শিক্ষকের থাকবে তাকেই রাষ্ট্রপতি পুরস্কারের জন্যে বিবেচনা করা উচিত‌। তাঁর ছাত্রদের উদ্যোগে যে জন্মদিন পালনের উদ্দেশ্য ছিল রাধাকৃষ্ণান সেই ইচ্ছেকে শিক্ষক দিবসের মর্যাদায় উত্তীর্ণ করেছিলেন। তাঁর অবদান ভারতে এক মহত্তম ঘটনা।
■ ফিলিপ স্যামুয়েল স্মিথ পুরস্কার ও গ্রিফিথ পুরস্কারে ভূষিত দেশে- বিদেশে বন্দিত বাঙালি দার্শনিক যদুনাথ সিংহ ১৮৯২ খৃষ্টাব্দে বীরভূমের কুরুমগ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং বাংলা মাধ্যমে বীরভূমের স্কুল, বর্ধমান হয়ে কলকাতা চলে আসেন এবং ১৯১৫ ফিলজফিতে
অনার্স, ১৯১৭ এম.এ কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। বিশাল প্রশ্ন চিহ্ন তার থিসিসটি জমা হয়েছিল কলকাতা ইউনিভার্সিটিতে কবে ? হাইকোর্টের মহাফেজখানায় ও কলকাতা ইউনিভার্সিটির মহাফেজখানায় তা কে খনন করবে ? রাধাকৃষ্ণন কলকাতায় অধ্যাপনা 
করতে আসেন ১৯২১-১৯৩২ পর্যন্ত । দুজনের
এক‌ই বিষয়। একজন শিক্ষক রাধাকৃষ্ণন অন্যজন ছাত্র, পিএইচডি থিসিস জমা করেছেন
একজন খ্যাতনামা রাধাকৃষ্ণন ,অন্যজন অল্পখ্যাত যদুনাথ সিংহ। একজনের ইচ্ছে বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছনো অন্যজনের ইচ্ছে ব‌ই লেখা এবং তার আবিস্কার সকলের কাছে পৌঁছনো। কিন্তু যদুনাথ সিংহ পিএইচডি সম্মান লাভ করেন ১৯৩৪ সালে আর ১৯৩২ - এ কলকাতা ছাড়লেন রাধাকৃষ্ণন। অর্থাৎ রাধাকৃষ্ণনের উপস্থিতিতে যদুনাথ পিএইচডি
সম্মান জোগাড় করতে ব্যর্থ হয়েছেন। মর্ডান রিভিউ পত্রিকায় জানুয়ারি ১৯২৯ সালে যদুনাথের চিঠি প্রকাশিত হলো , উদ্দেশ্য রাধাকৃষ্ণন । তাহলে পাঠক ধরে নিতে পারেন যে যদুনাথের থিসিস জমা দেওয়ার কাজ চলছিল। ১৯২৯ তখন রাধাকৃষ্ণন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে
উপস্থিত আছেন । প্রেমচাঁদ-রাইচাঁদ বৃত্তি পাওয়া ( পি এইচ ডি করার জন্য) যদুনাথ সিংহ তার শিক্ষক রাধাকৃষ্ণনের বিরুদ্ধে চিঠি লিখলেন 
যে ১৯২৪ এবং ১৯২৬-এ তার পিএইচডি পেপারের যে অংশ মীরাট কলেজের ম্যাগাজিনে প্রকাশ পেয়েছিল তা রাধাকৃষ্ণনের দুটি ব‌ইতে হুবুহু দুটি চ্যাপ্টারে সংকলিত হয়েছে। বিশেষ করে রামানুজমের বেদান্তের উপর যে ব‌ইটি রাধাকৃষ্ণান বিখ্যাত হয়েছিলেন তার দুটি চ্যাপ্টার হুবহু যদুনাথের লেখা থেকে রিপ্রিন্ট করা হয়েছে। রাধাকৃষ্ণান যদুনাথের চিঠি যুদ্ধ থেকে কিছুদিন বাদে সেই প্রসঙ্গে যখন রাধাকৃষ্ণন চুপ করে গেলেন তখন রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের প্রবাসীতে রাধাকৃষ্ণননকে আক্রমণ করে থিসিস চুরির 
দায়ে ফেলা হলো ‌এবং সংবাদ প্রকাশিত হলো।
দেখা যাচ্ছে এক অদ্ভুত কারণে ১৭ বছর পর
যদুনাথের পিএইচডি হয় তিনি এম এ হন ১৯১৭
তে। এই কারণে যদুনাথের গড়িমসি ছিল কিনা
তা জানা যায় না। এই যদুনাথ-রাধাকৃষ্ণন পর্বটি
জনৈক উৎপল আইচের আনন্দবাজারে সম্পাদক
সমীপেষুতে ৭.৯.১৮ তারিখে চিঠি প্রকাশিত হ‌ওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে পুণরায় জনমানসে প্রতিক্রিয়া দেখা যায় ও শিক্ষিত সমাজে আলোড়ন শুরু হয়ে যায়। আসলে যদুনাথের সঙ্গে রাধাকৃষ্ণানের একটি এই লেখা নিয়ে একটি কোর্ট কেস হয়। কোর্ট কেসটি করেন যদুনাথ সিংহ রাধাকৃষ্ণানের বিরুদ্ধে। কী সেই কোর্ট কেস। একটি স্যুট ফাইল হয়। যদুনাথ সিংহ রাধাকৃষ্ণনের চিঠি যুদ্ধ মর্ডান রিভিউতে থেমে যায় কারণ রাধাকৃষ্ণন আর উত্তর দেননি। তখন যদুনাথ তখনকার দিনে ২০,০০০/- টাকার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করেন রাধাকৃষ্ণনের বিরুদ্ধে। যদুনাথের লেখা থেকে টুকে রাধাকৃষ্ণন তার দুটি ব‌ইয়ের দুটি চ্যাপ্টার হুবহু তৈরি করেন বলে রিট দাখিল করেন ‌১৯২৯ সালের আগস্টে। রাধাকৃষ্ণনের ব‌ই প্রকাশিত হয় ১৯২৮ সালে রামানুজমের 
ফিলজফির ওপর। রাধাকৃষ্ণন ভার্সেস যদুনাথ
মামলা পেন্ডিং থাকা অবস্থায় রাধাকৃষ্ণন অন্য
একটি মামলা করেন রামানন্দ চট্টোপাধ্যায় ও
তার প্রবাসীর বিরুদ্ধে। এই মামলাটিতে রাধাকৃষ্ণন এক লক্ষ টাকার মানিহানি মামলা করেন। পরিশেষে তিনজনের সম্মিলিত সন্তোষ জনক মিউচুয়াল বিনা আপত্তিতে দুটি মামলাই
হাইকোর্টৈর বাইরে নিষ্পত্তি হয়। যদুনাথ পিএইচডি প্রাপ্ত হন। রাধাকৃষ্ণন কলকাতা ত্যাগ করেন।  দেশে বিদেশে যদুনাথের ও রাধাকৃষ্ণনের
ব‌ই, দর্শন ও হিন্দু দর্শনের ব‌ই বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে সমাদৃত আজও । ১৮৮৮ সালে দার্শনিক ও ইংরেজি মাধ্যমে পড়া ড.সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণনের জন্ম দক্ষিণ ভারতে যিনি চারবছরের বড় যদুনাথের থেকে । রাধাকৃষ্ণনের শিক্ষা খ্রিস্টান মিশনারি শিক্ষায় তখন থেকেই তিনি ইংরেজি ভাষায় দক্ষ এবং শিক্ষিত । যদুনাথের নাম পড়ে থাকে অনেক পেছনে। প্রচারের সমস্ত আলো এসে পড়ে আমাদের প্রাক্তন রাষ্টপতির । তার জন্মদিনকে কেন্দ্র করেই আজকের শিক্ষক দিবস
আমরা ভারতবাসী আমরা শুধু ভালোটুকুই
মনে রাখবো , প্রণাম রাধাকৃষ্ণন। 
©® অলোক কুন্ডু

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...