রবিবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০

বিদ্যাসাগর : অলোক কুন্ডু-র কবিতা

◆বিদ্যাসাগরমশাই এইপথে এসেছিলেন
●অলোক কুন্ডু
অথচ মাইলফলক নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে যে বড় রাস্তা চরণ ছুঁয়ে গেছে যে ধুলোবালি মাখা পথ
কোনোদিন বিদ্যাসাগরের নামে হাইওয়ে হয়নি একটাও
অনেকদিন পর কেঁদেকেটে তৈরি হলো একটা বিশ্ববিদ্যালয়।
ইংরেজ প্রতিপালনে কাটিয়েছিলেন একশতম জন্মদিন তাই বাদ‌ই দিলাম ওইটুকু
দেড়শো বছরে শুধুতো ওইকটা রচনাবলী হাতে পাওয়া।
কলেজ স্কোয়ারের বিদ্যাসাগর তো সত্তরের টার্গেট ছিল
ভিড়ভাট্টা হৈচৈ তা হোক তবু তো সকলে জানে ওখানে বিদ্যাসাগরমশাই আছেন।
এখনও মা মাসিমারা চটিখুলে প্রণাম করে যান ওইটুকু সম্মানপ্রাপ্তি যদিও যথেষ্ট নয়
তবু অনেকপরে কর্মস্থলের বুকে একটা বর্ণপরিচয় হলো
হা-হুতাশ করতে করতে একটা আধুনিক শপিংমল কটা ব‌ইয়ের দোকান‌ও আছে তাতে
সত্যি বলছি ভীষণ মন খারাপ হলো অনেকে বলেছিলেন কিছুতো হলো।
বিদ্যাসাগর পুরস্কারের একটা চল আছে বটে কিন্তু একটাও রেল‌ওয়ে স্টেশন তো ছিলনা এই সেদিন পর্যন্ত
শুধুমাত্র পাড়ার ছেলেদের উৎসাহে আর সরকারি ব্যবস্থাপনায় অজস্র মূর্তি এখানে ওখানে ছড়িয়ে।
তবু ব্রোঞ্জের পূর্ণাবয়ব নিয়ে দাঁড়াতে পারেননি আপনি আজও
খুদিরাম জ‌ওহরলাল ইন্দিরা সুভাষ আশুতোষ মাতঙ্গিনী গান্ধীজি বিবেকানন্দের পাশে আপনার একটা গোটা মূর্তিও নেই।
কঠিন মুখমণ্ডলের ভেতর গুটিয়ে রাখা দয়াগুলো জড় করলে একটা হিমালয় হতো
স্কুলগুলোকে জড়ো করলে আর একটা ধ্রুবতারা হতো
তেজস্বীতাগুলিও চিহ্ণিত করিনি কিছুই তো গড়তে পারিনি
বরং আপনার গড়াগুলোকে ভেঙে লোপাট করতে চেয়েছি
চেতনা দিয়ে এক এক করে ভেঙ্গেছেন বিভেদের যে প্রাচীরসমূহ
যে দয়াগুলি অবিরল জলের ধারার মতো 
মিশিয়ে দিয়ে গেছেন 
তা যে একটা গোটা করুণার মহাসাগর তাও অনেকসময় গুলিয়ে ফেলি
বারবার মুন্ডছেদের সময় সেইসব চিন্তা অকাতরে গোল্লায় দিয়েছি 
বর্ণপরিচয়‌ও স্তব্ধ হয়েছে থেকে থেকেই তবে শুনে আশ্চর্য হবেন তার চেহারায় চাকচিক্য এসেছে বিস্তর
সম্পাদকের বেহায়া নাম আঁচড়ায় বর্ণপরিচয়ের সর্বাঙ্গ এখন
আঘাতে জর্জরিত হয়েছেন নিজেই তো কতবার
অনিবার্য ঈশ্বর বিমুখতায় আপনি নিজেই তো খাঁটি ঈশ্বর হয়ে আছেন।
দুশোটি বছর কেটে গেছে প্রণাম হে মহামানব বাংলা বর্ণের শ্রেষ্ঠ জাতক বিদ্যাসাগর মশাই।
আজ দুশোবছরে পৌঁছলেন যখন তখন আমাদের সমস্ত মুখমন্ডল কালিমালিপ্ত 
আমরা না হয়েছি ঘরের না হয়েছি ঘাটের
সততা দয়া মায়া মমতার জন্য বেছে নিয়েছি চারটি মুখোশ যুক্তি চেতনা বোধের জন্যে আর‌ও তিনটে
সাতটা মহা মুখোশের আড়ালে নিজেদের গুটিয়ে রেখেছি
রাগ আহ্লাদ হাসি ও জন্য মুখোশ নয় বর্ম রেখেছি
বছরে একবার মুখোমুখি হলে এইরকম কবিতা লিখে দি কিংবা ভ্রান্তিবিলাস গল্প
লালমলাটের ব‌ইদুটো নাকি আজও বেস্টসেলার
মাইলফলক জানে এক বালকের মেধার উত্তরণের গল্প
রেড়িরতেল থেকে গ্যাসলাইটের কলকাতা কোম্পানি আমল থেকে বৃটিশ লাটসাহেব
এক্কাগাড়ি থেকে টমটম
ফ্যাকাসে লাল রঙের বর্ণপরিচয় থেকে বোধদয়
কখনও ফ্যান চাইছে দুর্ভিক্ষের দাপট 
কখনও নীলচাষের বিপর্যয় বাঙালি জীবন বিভীষিকাময়
প্লেগ থেকে ম্যালেরিয়ার বিপর্যস্ততা শুনতে শুনতে
চেতনাগুলি সম্বল করে সত্যিই এক তেজদীপ্ত ঈশ্বর তখন আপনি 
রামমোহন জানিয়ে গেলেন সতীদাহরদের শক্তিশালী দাপট আপনার বাল্যকালে।
কিন্তু তখনও কেউ জানেনা ঘাটালের বালকের লেখাপড়া তরতর করে ছুটবে নবজাগরণ ঘাটে
ব‌ই প্রকাশ থেকে ব‌ই লেখা টোল থেকে স্কুল-কলেজ স্থাপনা
ব্রাহ্মণদের হাত থেকে সংস্কৃতকে ছাড়িয়ে নেওয়ার  দাপট
আপনার কাছে বৃটিশ সাহেবের দর্পচূর্ণে বাঙালি হাতে প্রাণ ফিরে পেয়েছে তখন
ডাক্তারদের আন্দোলনে দাঁড়িয়েছেন পাশে
আপনার বিপ্লবের ধরণ একেবারে একান্ত আপনার।
এসেছিলেন পড়াশোনার মান ঘোরাতে শেষে সমাজে চরম কুঠারাঘাত
বিধবাবিবাহ আইন তৈরি করিয়েই ছাড়লেন
সমাজের বিপক্ষে রুখে দাঁড়িয়ে দিলেন‌ও
বিধবাবিবাহ--
আয়ের সিংহভাগ দান করলেন অকাতরে
পুজো-পার্বণ নয় মানবতাই আপনার ধর্ম হয়েছে
সাঁওতালদের কাছে আপনার খ্যাতি ডাক্তার বিদ্যাসাগর।
প্রজ্ঞায় বলিষ্ঠতায় আপনি কুসংস্কারগুলি  সরিয়েছেন দুহাতে
সমাজপতিদের যুক্তি খন্ডন করেছেন নিমেষেই
বালিকা শিক্ষার আয়োজনকে করেছেন সর্বোচ্চ সম্মানিত
তবু এই চলে যাওয়া দুইশত বছরে দুইশত দিন কখনও আপনাকে দিইনি
গোপাল হালদার মশাই ছাড়া 
আপনাকে নিয়ে তেমন গবেষণাও কেউ করলো না
দুশোবছর বড় কম কথা নয় হে ঈশ্বর 
অনেকদিন পর হলো একটা বিশ্ববিদ্যালয় একটা বর্ণপরিচয় মল
তবু ব্রোঞ্জের পূর্ণাবয়ব নিয়ে দাঁড়াতে পারেননি আপনি আজও।
আপনার যাত্রাপথের কয়েক হাজার মাইল ফলক খুঁজতে বেরিয়ে ফিরে এলাম 
এত গ্রাম এত জনপদ এত নিওন এত প্রচার প্রপাগান্ডা কাদের ?
কোনও গ্রাম পঞ্চায়েত তো আজ‌ও লিখে রাখেনি 
বিদ্যাসাগরমশাই এইপথে এসেছিলেন।
©® অলোক কুন্ডু

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...