মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর, ২০২০

অলোকের ঝর্নাধারায়-১৬

#অলোককুন্ডুরলেখালিখিওকবিতা
#indianwriterscommunity #lekhak #writer #kolkata #kolkatadiaries #facebookpost

অলোকের ঝর্নাধারায়
( আমার টুকরো জীবন)
পর্ব-১৬

রায়নায় থাকাকালীন আমার জীবনে সত্যি ভয় ধরে গিয়েছিল। ভেবেছিলাম শেষ পর্যন্ত আমার হয়তো বাঁচার অধিকার নেই এই পৃথিবীতে! এই পৃথিবীতে আমার জন্য আর নয়। এত বছর ধরে এত অত্যাচার আর সহ্য করতে সত্যি আর পারা যাচ্ছে না। যে সে লাথি মারছে। একবার পূর্ণিমার রাত ৯ টায় বর্ধমানের সদরঘাট ব্রিজে দাঁড়িয়ে দামোদরের দিকে চেয়ে থেকেছি। চোখ দিয়ে জল পড়েছে টপ টপ করে। আমি যদি মৃত্যুকে ডেকে নি
তাহলে আমার ব‌উ মেয়ের কি হবে ? আমার মা তখনও বেঁচে। হাঁটতে হাঁটতে বাসুবাবুর বাড়িতে ফিরে এসেছি। দোকান থেকে ক্যাডবেরি হাতে করে এনে পাশের ঘরে একটা ছোট্ট মেয়ে থাকতো তাকে ক্যাডবেরি দিয়ে মনটা ভালো করতে চেয়েছি। হয়তো ওদের ঘরে বসে কখনও চাও খেয়েছি। হাওড়ায় থাকতে ১১ বছর ধরে কি ভয়াবহ জীবনযন্ত্রণায় যে আমি কাটিয়েছি সেই ভুক্তভোগী শুধুমাত্র আমিই জানি। সেখানেও বারবার বদলি চেয়েছি। রায়নায় গিয়ে মাত্র ৬-মাস শান্তিতে ছিলাম। যেই বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রশান্ত ব্যানার্জী ও এস আই অমিত চক্রবর্তীর সঙ্গে সামান্য পরিচয় হলো, ব্যস আমার জীবনে আর‌ও চরম অশান্তি শুরু হয়ে গেল। রায়নায় গেলাম প্রমোশন পেয়ে। ভেবেছিলাম ১১ বছর ধরে রাত দুটো তিনটে অবধি বাড়িতে, অফিসে সারাদিন এত কাজ করলাম কোনও দাম তো পাইনি। এত উপকার করলাম একজন কেউ ফিরেও পর্যন্ত তাকালো না। মানুষ থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পর্যন্ত এত নির্মম হয় বুঝি! এত পাগলের মতো কাজ তো আর কেউ কখনও করেনা কখনও করবেও না। তবু ভেবেছিলাম দূর হলেও শান্তি তো পাবো। পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যালয় পরিদর্শক সমিতি যে এত রকমের হীন নীচ ভয়ঙ্কর কতকগুলো অনার্স, এম.এ জড় করে শিক্ষার অঙ্গনকে এমন বিষাক্ত করে রেখেছে জানলে ভিক্ষে করে চালাতুম তবু চাকরি করতে কখনও আসতাম না। রায়নার হাই স্কুলগুলো কিন্তু অত্যন্ত ভালো ছিল কিন্তু বর্ধমানের শিক্ষা বিভাগের কয়েকজন বিদ্যালয় পরিদর্শকের উদ্যোগে আর‌ও ডবল অপমান করা শুরু হয়ে গেল। রায়নার এস.আই. অমিত চক্রবর্তী ভেতর ভেতর একজন প্রাথমিক শিক্ষককে পর্যন্ত আমার পেছনে লেলিয়ে দিলেন। তিনিও ফোন করে আমাকে উত্যক্ত করতে লাগলেন। তিনি ভুলে গেলেন আমি তার অনেক উঁচুতে চাকরি করি। বলতে লাগলেন,আপনার নামে অমুকে এই বলেছে তমুকে এই বলেছে। একদিন তার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করেই দিতে হলো তার ওই অভদ্র আচরণের জন্য। অথচ আমি কখনও কার‌ও পেছনে লেগেছি বলে কেউ বলতে পারবে না। খুব কষ্ট হতে থাকলো যে কোথায় যাবো আমি। একটাও কি জায়গা নেই যেখানে গিয়ে একটু দাঁড়াই। শিক্ষা বিভাগে কি একজন‌ও কেউ শিক্ষিত নেই। এত হীন মানুষের সমাবেশ এক জায়গায় হতে পারে! কোথায় গিয়ে বাঁচবো তবে ? রায়নার একজন মাধ্যমিক শিক্ষক যে বীরভূমের অমিত চক্রবর্তীর সহপাঠী ছিলেন তিনি পর্যন্ত আমাকে রোজ নাস্তানাবুদ করে তুললেন। বিকাশভবনের ডেপুটি ডিরেক্টরের প্ররোচনায়। অথচ এমনটা হ‌ওয়ার নয়। বহু হাইস্কুলে যাই কেউ বলেন না আপনি মশাই একটা ছোটলোক। কিন্তু এই শিক্ষক অফিসে এসে সকলের সামনে বিনাকারণে অপমান করেন। অথচ সকলেই জানেন ওনার সঙ্গে আমার দেখাসাক্ষাত হ‌ওয়ার নয়। আমি ওই স্কুলের প্রশাসক, শিক্ষক মাত্র দুজন। আর‌ও দুটো স্কুলের প্রশাসক সেগুলিতে ২০/২২ জন করে শিক্ষক তাদের সঙ্গে হার্দিক সম্পর্ক। অথচ দুজন স্কুলের একটি শিক্ষক অফিসে এসে দিনের পর দিন অপমান করে। আর কাউকে নয় শুধুমাত্র আমি তার টার্গেট। জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। বিডিওকে বলি, ডিআইকে বলি সকলে বলে লিখিত অভিযোগ করুন। শেষ পর্যন্ত তিনি মিড ডে মিলের একবস্তা চাল সরিয়ে দিয়ে এস এস সির চাকরি ছেড়ে সরকারি চাকরিতে চলে গেলেন। গিয়ে সেখানে যোগদান করতে পারলেন না। অমিত চক্রবর্তীর প্রিয় বন্ধু। প্রশান্ত ব্যানার্জী যাকে বর্ধমান ডি আই অফিসে বসিয়ে আমার পেছনে লাগার প্ল্যান রচনা করেছিলেন। চাকরি চলে গেল তার। শিক্ষককে আমি চাকরি ফেরালাম। ফড়িং অফিসার অমিত চক্রবর্তীর বন্ধুকে বাঁচালাম। আমাকে মেরে ফেলতে যাকে বোড়ে করেছিল চাল চুরি করিয়েছিল সে আমার শেষে চাকরি বাঁচাতে লিখে দিলেন "আমাকে ক্ষমা করুন।" জীবনে কখনও অন্যায় কাজ করিনি ক্ষতি করিনি। আমি জানি রায়নায় আর কে কে তাকে সঙ্গ দিয়েছিল। তবু তাদের কার‌ও ক্ষতি চাইবো না। সকলে ভালো থাকুন। ( ক্রমশ ) অলোক কুন্ডু। ৫.১০.২০২০

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...