মঙ্গলবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২০

তুলসী চক্রবর্তী প্রসঙ্গ-১: অলোক কুন্ডু

⛔ অলোকের ঝর্নাধারায় 

⛔ আমার মা দিদি ইতিমধ্যে মারা গেছেন, তাঁরা বেঁচে থাকলে আরও কিছু বলতে পারতেন। আমার বাবাকে তুলসী চক্রবর্তী নামেই চিনতেন, আসলে তুলসী চক্রবর্তী এই অঞ্চলের প্রতিটি মানুষকেই বোধহয় চিনতেন। পরে এখানে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মূল্যায়ণ যুক্ত করবো। তাহলেই মানুষটাকে বোঝা যাবে। আমার বাবা রামকৃষ্ণপুর অঞ্চলে, রবীন্দ্রলাল সিংহের অধীনে এ. আর. পি-র চিপ ভলান্টিয়ার ছিলেন। পরে রবীন্দ্রলাল সিংহ কংগ্রেসের শিক্ষামন্ত্রী হয়েছিলেন। তখনকার দিনে বেতন বাড়ানোর দাবিতে একবার, সারা রাজ্যের বামপন্থী শিক্ষকরা হাওড়ার সিদ্ধেশ্বরীতলা লেন দিয়ে এসে রাজবল্লভ সাহা লেন ও সন্ধ্যাবাজার দিয়ে ঢুকে রবীন্দ্রলাল সিংহের বাড়ি ঘেরাও করেছিলেন (এইসব পুরনো কথা আমার বাবা ও আমাদের বন্ধুবান্ধবদের অভিভাবকদের কাছ থেকে ছোটবেলায় শোনা। খানিকটা সাংবাদিক জয়ন্ত সিংহ বন্ধু অশোককৃষ্ণ দাস ঝালিয়ে দিয়েছেন)। 

•আমার বাবা, তুলসী দা তুলসী দা বলতে তো অজ্ঞান ছিলেন। বিশেষ করে বাবার কোলে আমার ছোটবোন, সঙ্গে আমার মা এবং দিদির হাত ধরে ছোটবেলায় আমি, আমার বাবার তুলসী-দার বই (সিনেমা) শনিবার নাইট শোতে দেখতে যেতাম, হাওড়ার পার্বতী, নবরূপম, শ্যামাশ্রীতে। তুলসী চক্রবর্তীর বাড়িটা এখনও আছে। তবে তা কার দখলে তা আর খেয়াল রাখিনা। হেঁটে বড় জোর তিন থেকে চার মিনিটের দূরত্ব। এমনকি তুলসী চক্রবর্তীর কাছে স্টারের পাশ এনেছেন আমার বাবা, থিয়েটার দেখার জন্য। সেইসব বিস্তৃত মনে করতে পারছি না আর। সম্প্রতি কয়েকবছর আগে আমাদের ষষ্ঠীতলার মাঠটি তুলসী চক্রবর্তীর নামে উৎসর্গ ও সাজানো হয়েছে বর্তমান সরকারের আমলে। 

• কিন্তু আমি তখন খুব ছোট। হয়তো স্কুলে পড়িও না। অথবা দীর্ঘদিন একই দৃশ্য দেখতে দেখতে বড় হয়েছি বলে সময়টা ভাগ করে বলতে পারছি না। এখানে সেটা বিবেচ্য নয়। আমাদের বাড়ির লাগোয়া তখন আমাদের পাঁচিলঘেরা বিশাল পুকুরটা ছিল, খুরুট রোডের উপরে। যার অর্ধেকটা এখন পেট্রোল পাম্প হয়েছে। জ্ঞান হওয়া থেকে দেখছি আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে ৫২ ও ৫৮ নম্বর বাস চলছে। আসলে এইসব গৌরচন্দ্রিকা উপলক্ষ মাত্র। আসল হচ্ছে তুলসী চক্রবর্তী। আমাদের বাড়ির সামনে নিধিরাম মাঝি লেন। তুলসী চক্রবর্তী যতদিন বেঁচে ছিলেন ঠিক বেলা দেড়টা নাগাদ ধুতি ফতুয়া একটা বড় ঘোরানো ডাঁটিওয়ালা ছাতা হাতে একটা থলি গোছের ব্যাগ নিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করতেন বাসে উঠবেন বলে। আমাদের বাড়ির উল্টোদিক থেকে তিনি এসে প্রথমে উড়িয়া পানের দোকান থেকে পান নিতেন এবং ওইখানে দাঁড়াতেন আমাদের দিকে মুখ করে। আমার দিদি দুপুরের দিকে স্কুলে গেলে মা আর আমি ধাক্কাধাক্কি করে মুখ বাড়াতাম। আমাদের মস্তবড় গাড়ি বারান্দা ছিল আগেকার দিনের। কিন্তু শীতকাল ছাড়া রোদে দাঁড়ানো যেতনা। দিদি থাকলে ঠিক সময়টা ডেকে নিত। যেদিন উনি আসতেন না সেদিন আমরা হতাশ হতাম। আসলে আমার তখনও এত কৌতূহল হওয়ার কথা নয় কিন্তু যে লোকটাকে সিনেমায় দেখেছি বাড়িতে আকচার রাতদিন শুনছি তিনি তো তখন আমার কাছে এক আশ্চর্য মানুষ। তখন বাস হাওড়া পর্যন্ত যেত। ওখানে গিয়ে তুলসী চক্রবর্তী ছ-নম্বর দোতলা বাসে উঠে টালিগঞ্জ যেতেন এবং ওইভাবে ফিরে আসতেন। কখনও মাঝপথে পাল্টে ১৬ নম্বর বাসে করে এসে হাওড়ার মল্লিক ফটকে নামতেন। হেঁটে এবং পথে কথা বলতে বলতে সিদ্ধেশ্বরী মন্দির ছুঁয়ে বাড়ি ফিরতেন। এই ছিল নিত্য রুটিন কিছু দেখা কিছুটা বাবার কাছে ও বন্ধুদের কাছে বয়ঃজেষ্ঠদের কাছে শোনা বহু আগে। ( তাই তুলসী চক্রবর্তী ট্রামে করে যাতায়াত করতেন ফেসবুকের উড়ো খবর মানতে পারবো না, কখনও নিশ্চিত এক আধদিন শিবপুর হাওড়ার দুমুখো ট্রামে উঠেছিলেন, এটা হতেও পারে।

• হাওড়ার নাট্যকার জগমোহন মজুমদাররা যখন হাওড়ায় কংগ্রেসি ক্লাব উদার সংঘে প্রথম নাটক মহলা দিচ্ছিলেন তখন রবীন মন্ডলের সঙ্গে তাদের নাটক দেখতে এসেছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, এই বিষয়টা আমি আমার অন্য লেখায় উল্লেখ করেছি। 
তখন কংগ্রেসের জোড়াবলদ প্রতীক। অতুল্য ঘোষকে  কেউ কেউ রিপোর্ট করলেন সত্যজিৎ রায়ের সিনেমায় কোনও একটি জায়গায় বলদের বিষয়টা আছে। অতুল্যবাবু তখন কংগ্রেসের থিঙ্কারম্যান বিজয়ানন্দ চট্টোপাধ্যায়কে (যিনি এক ঝটকায় হাওড়ার অজয় ঘোষের নাম ছাত্র পরিষদের সভাপতির প্যানেল থেকে কেটে দিয়ে রায়গঞ্জ থেকে কলকাতায়, বাংলায় এম.এ পড়তে আসা বেলঘড়িয়ায় সিঁড়ির তলায় বসবাস করা ময়লা অখ্যাত প্রিয়রঞ্জনকে বেছে নিয়েছিলেন।) বিষয়টা দেখতে বললেন। বিজয়ানন্দ চট্টোপাধ্যায় আবার দুজনকে ডাকলেন। তুলসী চক্রবর্তী ও জগমোহন মজুমদার, সেখানে বন্ধু জগমোহন ডেকে নিলেন শিল্পী রবীন মণ্ডলকে। তিনজনে নাইট শোতে সিনেমা দেখলেন পার্বতীতে। কিন্তু কিছুই পাওয়া গেলনা। এখানে বলে রাখা ভালো রবীন মন্ডল কখনও কোনও রাজনীতি করেননি মতও দেননি। কিন্তু তার দুই বন্ধু পার্বতী দা ও জগমোহন দা কংগ্রেস করতেন। অবশ্য প্রথম জীবনে পার্বতী দা পি এস পির অর্ধেন্দুশেখর বোসের সমর্থক ছিলেন। ( ক্রমশঃ চলবে...) ©® অলোক কুন্ডু ( ১৭.১১.২০২০)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...