⛔ হাওড়ায় সৌমিত্র ও অভিযান- এর যোগ : অলোক কুন্ডু
⛔ সৌমিত্র চ্যাটার্জী হাওড়াকে নিয়ে তিনটি ঘটনা বা বিষয়কে উল্লেখ করে গেছেন, তাঁর বিভিন্ন লেখায়। তাঁর কালীবাবুবাজারে বাজার করার কথা আগেই বলেছি। ক্ষণজন্মা অভিনেতা তুলসী চক্রবর্তীকে নিয়ে বিশেষভাবে একটি নিবন্ধ লিখেছেন কিছুটা জীবনীও। অভিযান করতে গিয়ে ড্রাইভারের অঙ্গভঙ্গি কিরকম হবে তা তার আগে থাকতেই কিছুটা রপ্ত হয়েছিল। কারণ এই অভিজ্ঞতা হয়েছিল হাওড়ায়। তা হলো হাওড়া জেলা স্কুলে যখন তিনি উচ্চ ক্লাসে পড়তেন। এখানে ধরে নিতে হবে স্কুল ফাইনাল দেওয়ার সময়ের কিছু আগের বা পরের ঘটনা। অথবা পরীক্ষার পরে যে অবসর পাওয়া যায় সেই সময়কার ঘটনা হলেও হতে পারে। একজন ড্রাইভারের সঙ্গে তাঁর ভালো বন্ধুত্ব হয়েছিল। সেই সময় জেলা স্কুলের দু একজন বন্ধু ও তার সঙ্গে হাওড়ার কোনও একটি রুটের বাস ড্রাইভারের সঙ্গে আলাপ হয়। আলাপ গভীর বন্ধুত্বে পৌঁছয়।
বেশ কয়েকদিন তাঁরা, সেই ড্রাইভারের পাশে বসে ইল্লিদিল্লি করতেন। তাঁরা বাসে করে ঘন্টার পর ঘন্টা ঘুরেছেন কদিন এবং বাস কীভাবে চলে তার বাস্তব অভিজ্ঞতা নিয়েছেন। তখন ড্রাইভারের কেবিন ছিল লরীর মতো। যাত্রীদের থেকে আলাদা। এখানে উল্লেখ্য তখনকার দিনে হাওড়ার রুটের বাস কিন্তু কলকাতায় যেত না। বাসের কাঠামোও এইরকম ছিল না। বনেট অনেকটা সামনের দিকে বের করা হতো। ইঞ্জিনের ঢাকনা বাঁয়ে ডানে দুদিকে খুলতো। বাসের টাইপও লম্বায় ছোট হোতো।
•অভিযান করতে গিয়ে কিছু ডায়লগ সৌমিত্র চ্যাটার্জী, উচ্চারণ নিজের মতো করে তৈরি করে নিয়েছিলেন হিন্দি বাংলা মিশিয়ে। দুবরাজপুরে যখন স্যুটিং শুরু হলো, তখন সিনেমার ওই নতুন কেনা গাড়িটাও সৌমিত্রই চালাতেন সব সময়, সিনেমার বাইরেও চালাতে হতো তাঁকে। আলাদা কোনও ড্রাইভার না থাকায় স্যুটিংয়ের কাজে চালাতে হতো। তিনিই লিখেছেন গাড়িটাকে নিয়ে যা ইচ্ছা করতাম যেমনভাবে চালাতে চাইতাম, সেই ভাবে গাড়িটা চলতো। সত্যজিৎ রায় পরিচালনা করবেন না, করবেন না, করতে করতে শেষ পর্যন্ত পরিচালনা করেছিলেন, অভিযান। তাই সৌমিত্র আগে থাকতেই নিজের জীবনের হাওড়ার অভিজ্ঞতা থেকেই উচ্চারণ তৈরি করে ফেলেন। কিন্তু যখন জানলেন সত্যজিৎ রায়ই পরিচালনা করবেন তখন তিনি বার বার তা মানিকদাকে জানালেন। তার উচ্চারণ তৈরি করে ফেলার কথা। কি সেই উচ্চারণ তা মানিকদা দু তিনবার শুনতেও চাইলেন। তিনবার করে রিয়ার্সাল হতো, তখন প্রতিবারই সৌমিত্র তাঁর মানিক দাকে জিজ্ঞেস করতেন, "ডায়লগ কি নিজের মতো বলবো? নাকি আপনার মতো করে বলবো।" সৌমিত্র বলেছেন মানিকদা ততবারই কোনও উচ্চবাচ্য করতেন না। কিন্তু যেদিন প্রথম স্যুটিং ফাইনাল টেক হলো মানিকদা আমাকে আমার মতো বলতে অনুমতি দিলেন। "
• প্রসঙ্গক্রমে বলি, যারা হাওড়ায় থাকেন তাদের মনে হতে পারে হাওড়া জেলা স্কুলের সামনে বোধহয় তখন থেকেই বাস দাঁড়াতো এখনকার মতো। তখন বঙ্গবাসীর এই উড়ালপুল একেবারেই ছিলনা। বাসও হাওড়া ময়দানে কোথাও দাঁড়াতো না। জেলা স্কুলের গা দিয়ে ট্রাম লাইন ছিল, ট্রাম যেত। কিন্তু একটা পেট্রোল পাম্প ওখানে ছিল, সেখানেই হয়তো ড্রাইভারের সঙ্গে তাদের আলাপ হয়ে থাকতে পারে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন