🌏•নির্বাচনে জেতা ও সরকার টিঁকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে ফ্রন্টের সুবিধা অসুবিধা দুই থাকে। নমনীয় একজন বিচক্ষণ নেতার প্রয়োজন হয়ে পড়ে। বড় যে দল তাদের সহ্যশক্তি বেশি থাকা দরকার হয়ে পড়ে। সকলকে নিয়ে চলার ক্ষমতাই হ'ল যুক্তফ্রন্টের মহাগুণ। এই মূহুর্তে কেন্দ্র সরকার যেদিকে যাবেন যুক্তফ্রন্ট ছাড়া সরকার গড়া মুস্কিল। তবে আমি রাজ্যের যুক্ত ফ্রন্ট নিয়ে আলোচনা করবো।
⛔• আমি রাজ্য রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করবো। সারা ভারতের রাজ্যগুলিতে রাজনৈতিক পরিমন্ডলে এখন এত নেতা, এত দল হয়ে গেছে যে, কেউ দীর্ঘদিন একদলীয় ভাবে শাসন আর ক্ষমতা ধরে রাখতে পারবেন না। একদলীয় রাখতে গেলে সেখানে পরিবারের লোকেরা ঢুকবেই। বন্ধুবান্ধব ঢুকবেই। সংঘাতের কারণ সেখান থেকেই প্রথম আসে। অন্ধ্রের এন. টি. রামা রাওয়ের এই একদলীয় শাসন কীভাবে ভেঙে টুকরো হয়ে গেছে তা সকলেই জানেন। রামচন্দ্রন-জয়ললিতাও তাই। কিন্তু তাদের একটা সুবিধা ছিল তারা নিজেরা ছিলেন "গণনায়ক। " তবে এই ফরম্যাট দুবার হলেও তিনবার সফল হওয়া কঠিন। একদলীয় যুক্ত ফ্রন্ট সোনার পাথরবাটি অনেকটা। এখানে বড় দল সমস্ত ক্ষমতা ভোগ করতে চাইবে আর সেখান থেকেই সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি শুরু। ছোটদলকে জব্দ করার প্রবণতা যত বাড়তে থাকবে, ছোট দলগুলো সহ্যশক্তি তত হারাবে। আবার হঠাৎ করে ভুঁইফোঁড় নেতা ভোটে জিতে এলেও তাদের কিন্তু দশটা ভোট জোগাড় করার ক্ষমতা থাকে না পরন্তু তারা সরকারের কাছ থেকে জনগণের কাছ থেকে, ক্ষমতা চলে যাওয়ার ভয়ে, দ্রুত বড়লোক হওয়ার চেষ্টা করে যায়। তাই এদের যুক্ত করে যদি একদলীয় যুক্ত ফ্রন্ট হয় সেখানেও বিপর্যয় আসতে পারে। কারণ এইসব ভুঁইফোঁড়দের কোনও আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে আসতে হয়নি। এক প্রকার বিরোধিতা করার জন্য এরা একত্রিত হয়। বিরোধিতা শেষ হলে এরা বিরোধিতা করার অর্থ হারিয়ে ফেলে ক্ষমতা থেকে উপার্জন করতে শুরু করে দেন।
⛔• দক্ষিণের নায়করা ছায়াছবির মায়াময় জগতের সুযোগ তারা বহুদিন পেয়েছিলেন। যার ফলে তারা ক্ষমতাও ভোগ করেছেন অফুরন্ত। যা এখন আর সম্ভব নয়। এখন ১৯৭৭ এর বামেদের মতো ভেতরের তাগিদ থেকে ফ্রন্ট তৈরি হওয়ার পরিস্থিতি কোথাও নেই। কিন্তু মুসলিম সমাজ থেকে ফ্রন্ট তৈরি হওয়ার প্রবণতা থাকলেও এতদিন তৈরি হয়নি। সেই অর্থে বিজেপির ওপর হিন্দুত্ববাদের কাদা লেপটে দিলেও
অধিকাংশ হিন্দু তা মানেন না। কারণ হিন্দুদের মধ্যে বিভিন্ন দল করা লোক অনেক বেশি। কিন্তু মাদ্রাসা থেকে পীরের থানার থেকে যদি রাজনৈতিক দল তৈরির প্রবণতা তৈরি হয় তা কতটা এই ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রে টিঁকে থাকবে হিন্দুদের সমস্ত মানুষকে বাদ দিয়ে তা তারাই জানে। আবার রাজনীতিতে হবেনা পারবে না বলে কোনও কথা নেই। এটা হলে একটা সংঘাত হওয়ার সংঘর্ষ হওয়ার কালো দিক লক্ষ্যনীয়।
⛔• হঠাৎ উঠে আসা নেতৃত্ব কখনও কোথাও টিঁকে থাকেনি কারণ হঠাৎ করে জনগণের ইচ্ছা জাগ্রত করা যত সহজ তাকে প্রতিপালন করা রক্ষা করা মূল উদ্দেশ্যে সফল করে তোলা ভীষণ কঠিন ব্যাপার। হঠাৎ করে আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি বিপদগামী হতে পারে যদি না প্রজাপালন কি বস্তু জানা না থাকে। তাই জনগণের উদ্দেশ্যে সব সময় নিজেদের সীমিত ক্ষমতার কথা বলা প্রচার করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ এখন মানুষ সব বুঝতে পারে। ভুল বুঝিয়ে দল বা ফ্রন্ট তৈরি করলেও বড়জোর দশবছর তারা টিঁকে থাকতে পারবেন। ফ্রন্ট বা নতুন দল তৈরি করলেও আসল কথা হ'ল তাদের "জনগণের দল" গড়ে তুলতে হবে। যদি পরিবারের ব্যবসা বাড়িয়ে নেয় কেউ। যদি পরিবার হঠাৎ কোটি কোটি টাকার মালিক হয়ে যায় দশ-বিশটা ব্যবসা-বাড়ি হয়ে যায় কারও। তবে সেই দল বা ফ্রন্টকে মানুষ চিনে নেবে সহজে।
⛔• যতই পুত্র চন্দনের নামে সামান্য বিস্কুট কারখানার নামে বা বেঙ্গল ল্যাম্প কেলেঙ্কারির নামে দিনের পর দিন বরুণ সেনগুপ্ত লিখে যান না কেন সকলেই জানেন জ্যোতি বসু সরকারকে সামনে রেখে কিছু মাত্র ঝেড়ে কামান নি। বরং নিজের ও পরিবারের অনেক স্বার্থত্যাগ আছে তাঁর মধ্যে। অজয় মুখোপাধ্যায়, প্রফুল্লচন্দ্র সেন, অতুল্য ঘোষ, প্রমোদ দাশগুপ্ত, বিধানচন্দ্র রায়, প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষ, বিনয় চৌধুরী, অনিল বিশ্বাস তো এক প্রকার দারিদ্র্যের বা মধ্যবিত্ত জীবন প্রতিপালন করেছেন একমাত্র বিধান রায় ছাড়া। শখ-আহ্লাদ করে দম্ভ নিয়ে নিজের জীবনী লিখে সময় নষ্ট করেননি, এইসব নেতৃত্ব। এই বিষয়টা গভীর ভাবে লক্ষ্যনীয়। প্রধান নেতা সব সময় গান্ধীজি, নেতাজি, প্রমোদ দাশগুপ্ত, প্রফুল্ল সেন হবেন। নিজের ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছু নেই তাদের। জয়প্রকাশ নারায়ণের মতো আদর্শের হবেন। কানাইয়া কুমারের মতো দার্শনিক বক্তৃতা না জানলেও চলবে। তাঁরা সার্কাসের ট্রাপিজের খেলায় পারদর্শী হলেও সবকিছু ভুলতে হবে তাঁদের। যাদের কথা বললাম, এঁরা ২৪ ঘন্টার কর্মী ছিলেন। সরকারের কাজ বা দলের কাজ ছাড়া এদের কারও ব্যক্তিগত জীবন ছিলনা। যদিও এদের মধ্যে ফ্রন্ট অনেকে গড়েন, ফ্রন্ট গড়েও ভিন্ন কারণে টেঁকাতে পারেননি।
⛔• পশ্চিমবঙ্গে দুবার নির্বাচনে মানুষ গন্ডি ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল ভোট দিতে। একবার ১৯৭৭ ও একবার ২০১১। ১৯৭৭ ছিল ২০১১-এর থেকেও চমকপ্রদ। শুধুমাত্র জনগণের রুখে দাঁড়ানোর শক্তি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ২০১১-তে নির্বাচন কমিশন সর্বশক্তিমান হয়ে ঢাল হয়ে উঠেছিল। ভোট করিয়েছিল স্বচ্ছতার সঙ্গে। নির্বাচন কমিশন ডি. এম. / এস. পি-দের পা কাঁপিয়ে দিয়েছিল। কমিশনের উদ্যোগে জাল ভোটার নষ্ট হয়েছিল, লাখ লাখ রেশন কার্ড ধরা হয়েছিল, লাখ লাখ ডুয়ো ভোটার নিশ্চিহ্ন করেছিল কমিশন। ভোটার তালিকা পরিবর্তন করেছিল। ভোটার লিস্ট তাজা করে দিয়েছিল, সিস্টেমকে দিল্লি বসে একমাস ধরে মনিটরিং করেছিল। এমনকি ২০০৯-এর লোকসভা নির্বাচন থেকেই বুথের কাছে গন্ডগোল ঠেকিয়ে দিয়েছিল। যাদবপুরে সি. আর. পি. এফ. গুলি করে সি. পি. এম ক্যাডারকে মেরে দিয়েছিল পর্যন্ত। তাই ২০১১-এর মতো নিরপেক্ষ, অবাধ স্বচ্ছ নির্বাচন আজ ইতিহাস হয়ে আছে, এই রাজ্যে। ১৯৭৭ ও ২০১১ দুবারই কিন্তু নির্বাচনের আগে ফ্রন্ট হয়েছিল। ১৯৭৭-এ দেখা গেলেও ২০১১-তে মানুষ ফ্রন্টের ব্যাপারটি বোঝেনি। কারণ ২০১১ তে মানুষ মমতা ব্যানার্জীকেই একমাত্র নেতা মনে করেছিল। কিন্তু বিভিন্ন দলের বুদ্ধিজীবীরা দলমত নির্বিশেষে এগিয়ে এসেছিলেন, এর গুরুত্ব কিন্তু খুব কম ছিলনা। বরং নন্দীগ্রাম লড়াইয়ে তারাই মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন। বুদ্ধিজীবীরা যেহেতু দল ঘোষণা করেননি তাই তারা নিজে থেকে কোথাও নির্বাচনে লড়েননি। এস.ইউ.আই.সি খানিকটা স্পষ্ট করেছিলেন। কংগ্রেস ফ্রন্টে এসেছিল। ২০১১-এর নির্বাচনের আগে স্টেটসম্যান, আনন্দবাজার, বর্তমান, প্রতিদিন, ভোরের বার্তা, সকালবেলা, আবার যুগান্তর, এখন খবর, প্রাত্যহিক খবর, ৩৬৫ দিন মিলে প্রিন্ট মিডিয়ার জোট গড়েছিল। তেমনি ১৯৭৭ দেশের অধিকাংশ খবর কাগজ কংগ্রেসের বিরুদ্ধে গিয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৭-এর ফ্রন্ট ৩৪ বছর টিঁকে থাকলেও ২০১১-এর পর বুদ্ধিজীবীদের ভাল অংশ সরকারকে সমর্থন প্রত্যাহার করে। গণতান্ত্রিক আদর্শগত কারণে। কংগ্রেস বেরিয়ে যায় নীতিগত কারণে। এস ইউ আই সিও থাকেনি। সুনন্দ সান্যাল তরুণ সান্যালের মতো বিশাল মাপের বুদ্ধিজীবীরা সমর্থন ত্যাগ করেন।
⛔• দুবারই বুদ্ধিজীবীরা জনমতের সঙ্গী হয়েছিল এবং রাজ্য সরকারের প্রভূত দোষ ছিল। তখন সাধারণ মানুষ অর্থাৎ আমজনতা ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছিল। জনসংখ্যার অধিকাংশই তখন সরকার বিরোধী জনস্রোত তৈরি করেছিল। কিন্তু এই জনস্রোতকে বিধিবদ্ধভাবে জুড়তে একদিকে জয়প্রকাশ নারায়ণের উদ্যোগ অন্যদিকে ক্ষমতা ধরে রাখতে ধৈর্যশীল নেতা জ্যোতি বসুর অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৭৭-এর আগে থেকে যারা একসঙ্গে লড়েছিল তারাই জ্যোতি বাবুর মতো নেতৃত্ব মেনে নিয়েছিলেন। তাছাড়া জ্যোতিবাবুরা অন্তত তিনবার ঠেকে শিখেছিলেন। বুদ্ধবাবু কিন্তু শুধুমাত্র সততা দিয়ে বামফ্রন্টের ক্ষমতা ধরে রাখতে পারলেন না।
এমনকি আমার মনে হয় বুদ্ধবাবুর মধ্যে দাম্ভিকতা ছিল। যা জ্যোতিবাবুর ছিলনা। বুদ্ধবাবু চূড়ান্ত অহংকারী ছিলেন। নিজের এমন কোনও যোগ্যতা ছিলনা যাতে সরকারে নতুন চমকপ্রদ কর্মসূচি নেওয়া যায়। তাছাড়া তিনি দলের দাস হয়ে পড়েন। শুধুমাত্র বামপন্থী আচরণ বজায় রাখলেই হবেনা, কারণ কোনও একটা ওল্ড ম্যানিফেস্টো দিয়ে দেশ শাসন করা যায় না। পার্টি শাসন আর রাজ্য শাসন দুটো পরস্পর বিরোধী। বুদ্ধবাবুর সময়ে প্রাতিষ্ঠানিক নেতা জ্যোতিবাবু না থাকায় অন্য দলগুলো তাকে অমান্য করতে শুরু করেন। ছোটখাটো দলও তেজি ঘোড়ার ভাব দেখানো শুরু করে। সবথেকে বড় কথা কো-অর্ডিনেশন কমিটি ও তাদের মস্তবড় অপদার্থ চেলা পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যালয় পরিদর্শক সমিতি শিক্ষা প্রশাসনকে ধ্বংস করে দেয়। বিদ্যালয় পরিদর্শকরা স্কুল পরিদর্শনের দিন শিক্ষককে দিয়ে তার বাড়িতে/ বাসায় খাতাপত্র নিয়ে এসে স্কুল পরিদর্শন করে দুপুরে ঘুমের দেশে চলে যেতে থাকেন। মাত্র ১০% পরিদর্শনে স্বচ্ছতা দেখা যায়, ১০% পরিদর্শক তার নিজের কর্তব্যে শ্রদ্ধাশীল ছিলেন বলে সরকার ক্ষয় বুঝতে পারেনি। পেনশন, অন্যান্য ফাইল, শিক্ষকদের নিয়োগের কাগজপত্রের ফাইল, বেতন আটকে রাখার প্রবণতা, ঘুষের কারবারে প্রশাসন সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে। বিদ্যালয় পরিদর্শকদের বামপন্থী দল এই ভেঙে পড়ায় হাত গুটিয়ে বসে থাকে। অথচ তাদের মধ্যে যারা কাজের লোক এবং হাজার হাজার শিক্ষক ও তাদের পরিবার ক্রমশ সরকারের বিক্ষুব্ধ হয়ে যায়। এমনকি বাড়ির কাছে ধামাধরাদের পোস্টিং দেওয়া, ফাঁকিবাজ ক্যাডার তৈরিতে সহায়তা এবং দুদিন অন্তর অফিসের মধ্যে পার্টি মিটিং, মিছিল সমাবেশে যোগদান, তাদের কাছে মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। সরকারের কাজের থেকে বামপন্থী সংগঠন বেশি হয়ে দাঁড়ায়। কো-অর্ডিনেশন কমিটির ব্যবস্থাতে অন্যান্য অফিসেও একই কারবার হতে থাকে। এমনকি হাওড়া ট্রেজারির কো-অর্ডিনেশন সদস্যরা দুবার এই প্রতিবেদকের
প্রাপ্য লাখ টাকার বিল দুবার নষ্ট করে দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রাখে। অন্যায়ভাবে হ্যারাসমেন্ট করা তখন সরকারীভাবে প্রথা হয়ে দাঁড়ায়। জনগণের কাজের সুরাহার থেকে কর্মচারীদের দিয়ে দলের বাড়বাড়ন্তে বামেদের মধ্যে জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। জনগণ কাজ না পেয়ে ক্রমশ পিছিয়ে যেতে থাকে তাদের প্রিয় সরকারের কাছ থেকে। যাদের ভোট দিয়ে তারা এনেছিল তারাই বিরোধী হয়ে যায় পরে। বেশিরভাগ দায় কো-অর্ডিনেশন কমিটি ও বুদ্ধবাবুর পুলিশ প্রশাসনিক গাফিলতি মানুষকে বিদ্রোহী করে তোলে। সরকারি অফিসে গেলে কাজ পাওয়া যেত না মোটেই। দিনের পর দিন ঘুরতে ঘুরতে মানুষ মমতা ব্যানার্জীর সঙ্গী হয়ে পড়েন। এটাকেই বলা হয় নেগেটিভ রাজনীতি।
⛔• যে কোনও দল চাইবে, নাগরিক তার মতো আচরণ করুক আর নাগরিক চাইবে সরকার তার মতো আচরণ করুক, এই দ্বন্দ্ব চিরকালের। এই যে টানাপোড়েন এই সেতু রক্ষা করেছিলেন জ্যাতি বসুর মতো মানুষ ছিলেন বলে। তাঁর শিক্ষা, তাঁর প্রজ্ঞা, তাঁর বিলাতি পড়াশোনা, তাঁর চিন্তা চেতনা মোটেই উর্বর মস্তিষ্কের ছিল না। তিনি ঠকে, অভিজ্ঞতা দিয়ে, ৭২-এর রিগিংয়ের থেকে শিক্ষা নিয়ে, জেলে গিয়ে, মাঠে ময়দানে বক্তৃতা করে, ঘরের খেয়ে বক্তৃতা দিয়ে, ব্যাপক জনসংযোগ তৈরির মাধ্যমে, শ্রমিক আন্দোলন, খাদ্য আন্দোলন, ট্রাম ভাড়া বৃদ্ধির আন্দোলন, নকশাল আন্দোলনের ক্ষতিবহনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলেন জ্যোতিবাবু। তাই বামেদের জড় করার প্রধান সংগঠক তিনি না হলেও টিঁকিয়ে রাখার বড় গুণ তাঁর মধ্যে ছিল।
⛔• প্রকৃতপক্ষে এই মূহুর্তে আর.এস.পি. বলে একটা দলের কোনও অস্তিত্ব পশ্চিমবঙ্গে নেই। উঠে গেছে আর. সি.পি.আইও। বামপন্থী দলগুলোর অস্তিত্ব যা বাংলার গর্ব ছিল তা এখন বিহারে, পাঞ্জাবে, মহারাষ্ট্রে, গুজরাটে ও দক্ষিণ ভারতে বিভিন্ন স্থানে বেশ কিছুটা উত্থান হয়েছে। কেরল একমাত্র টিকিয়ে রেখেছে বরাবর বামপন্থী মেজাজ। বামপন্থীদের হাজার ভুল হলেও এরা লড়াই করতে পারে। তবে এদের মধ্যে যে পচন সৃষ্টি হয়েছিল পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে। কেশপুর যার এপি সেন্টার ছিল। তা ২০১১-তে নন্দীগ্রাম আর নেতাই মিলে বিস্ফোরণের রূপ নয়। কিন্তু যদি আপনারা দেখেন দেখবেন বর্ধমানেও বামেরা গ্রাম ঘিরে ফেলেছিল। ২০০৬ - বর্ধমানের গ্রাম পঞ্চায়েত প্রার্থীকে বাড়িতে না পেয়ে বামেরা তার বউকে খুন করে দেয়। আমাকে বর্ধমানের এক কংগ্রেসি স্কুল শিক্ষক বলেছিলেন তার দাদা পঞ্চায়েত দাঁড়িয়ে ছিল তার বদলা হিসেবে ওই মাধ্যমিক শিক্ষকের বউদির কাপড় খুলে নিয়ে তিন কিমি দূরে ছেড়ে দিয়েছিল। ভদ্রমহিলা ব্লাউজ ও শায়া পরে চোখের জল ফেলতে ফেলতে বাড়ি ফিরেছিলেন। আর একটা ঘটনা বলি নিজে ভুক্তভোগী। ২০১২ পঞ্চায়েত নির্বাচন রায়না ছিলাম। তখন বামেদের ক্ষমতা নেই। একটা বুথের কথা বলছি এখানে। তাদের ১৪ জন ভোটার তখন মাত্র। সবাই সরে গেছে। নির্বাচনের আগের রাতে আমাদের ঘুম হয়নি আমাদের সঙ্গে থাকা পুলিশপার্টিরও নয়। কারণ সারারাত ওই ভোটারদের বাড়িতে ইঁট পড়ছে। অন্ধকারে দুবার গেছি পুলিশ নিয়ে। সকালে একবার। শেষে ১৪ জনকে সঙ্গে করে সিকিউরিটি দিয়ে ভোট দেওয়াতে হয়েছিল। তাদের রাজত্বকালে তারাও ঠিক অনুরূপ কান্ড করেছিল হয়তো। এটা বললাম কীভাবে ক্ষমতা ধরে রাখা হয় গ্রামে তার একটা উদাহরণ। কিন্তু ২০১১ এর নির্বাচনের আগে সিপিএম এবং বামপন্থীরা স্কুল কলেজ কোঅপারেটিভ নির্বাচনে ব্যাপকভাবে হারতে থাকেন ২০০৫ থেকেই। এই লোকাল নির্বাচনগুলি হচ্ছে মাপকাঠি। একে অবজ্ঞা করলেই সেই দল ভুগবে। ২০০৬ থেকে এইসব ছোট নির্বাচনে আর ভীতি প্রদর্শন করে প্রতিরোধ করা হয়নি। কিন্তু ২০০৬, ২৩৫ করতে পেরেছিল তাদের ভোটিং মেশিনারি দিয়ে।এই বাজিমাত একবছর পর থেকে বামেদের ওই যুক্তফ্রন্টে কোনও কাজে লাগেনি। অনিল বিশ্বাস মশাই ওই ছোট ছোট নির্বাচনগুলি করিয়ে জনগণের নাড়ি পরীক্ষা করতেন এবং ওইসব স্থানে ভোট হতো জবরদস্তি ছাড়া স্বাধীনভাবে। এই অ্যাসিড টেস্ট করার পরই কিন্তু বিরোধীরা ২৩৫:৩৫ হয়ে যায়।
⛔• ১৯৭৭ তে ফ্রন্ট করে নির্বাচনে লড়ার কারণে কিন্তু বামেরা অনেকদিন টিঁকে ছিল। অনেকগুলো সাইনবোর্ডের দল সঙ্গে থাকলেও বিভিন্ন নেতা এসে মনোবল জোরদার করেছিল। দুর্নীতি ছিল না তা নয়।
তবে প্রথম প্রথম জনগণের জন্য ভূমিসংস্কার বামেদের সত্য সত্যিই অনেকটা পথ এগিয়ে দিয়েছিল। জনগণের জন্য বহু আইন একমাত্র বাম আমলেই হয়েছিল তবু সরকারের সেই কল্যাণময় ভূমিকা সরকারি কর্মকর্তারা সঠিক ভাবে পালন করতে দেয়নি। সঙ্গে সঙ্গে সিপিএম অন্য দলেকে বাড়তে দেয়নি। যুক্ত ফ্রন্ট রাখতে গেলে অন্যকে বাড়তে দিতে হবে। একা ক্ষমতায় থাকবো অথবা আমি বা আমরাই সব এই নীতির জন্য বামপন্থীদের
নৌকো ডুবে গিয়েছিল।
⛔ ২০১১ তেও মনে হয়েছিল যুক্ত ফ্রন্ট করেই সরকারের অগ্রগতি হবে। কিন্তু তা হয়নি মোটেই।
আবার ২০২০-তে এসে পশ্চিমবঙ্গে একটা যুক্তফ্রন্ট
পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে চলেছে। তৃণমূলের মধ্যে ভাঙন হলে তবেই এই পরিস্থিতি হবে তা ১০০ ভাগ নাও হতে পারে। তৃণমূল কংগ্রেস বাম ও কংগ্রেসকে কিছু সিটি ছেড়েও দিতে পারে, এটা যুক্তফ্রন্ট মনোভাবের অঙ্গ। আবার মুসলিম সমাজের থেকে যে একটি দল উঠে আসছে তাদের সঙ্গে তৃণমূল বা বিজেপি ফ্রন্ট ভেতর করতে পারে। একদল বলছেন, বিজেপি, শুভেন্দু ও মুসলিম সমাজের অলিখিত ফ্রন্ট হতে পারে। তবে মুসলিম সমাজের যে দল উঠে আসছে তারা আগে থাকতে কারও সঙ্গে ফ্রন্ট করবে না। তবে তারা অনেকগুলো জায়গায় ফ্যাক্টর হবে।
⛔• এখানে লক্ষ্যনীয় বিজেপি কতটা কার্যকর হয়ে উঠতে পারবে। কারণ ২০১৫ থেকে বিজেপি যত গালাগালি খেয়েছে কোনও দলের ভাগ্যে এত গালাগালি জোটেনি। কিন্তু এত গালাগালির পরও হাথরস নিয়ে সারা ভারতের বিপক্ষে থাকলেও তারা কিন্তু বিহারে জিতেছে। পশ্চিমবঙ্গে আসল লড়াই একমাত্র তাদের সঙ্গে। এখানে একটা বিষয়টা মনে রাখা জরুরি সেটা হলো কটা আসন বিজেপি তোলে আর কটা পায় মুসলিম সমাজের নতুন দল। এদের ওপর পশ্চিমবঙ্গের আগামী রাজনীতি নির্ভর করছে।
এছাড়াও শুভেন্দুর পেছনে যেসব নেতার সমর্থন আছে তাদেরকেও শক্তিশালী হিসেবে শুভেন্দু পেতে চায়। শুভেন্দু তৃণমূল থেকে বের হলে তার অনুগামীদেরও আগামী নির্বাচনে লড়াইয়ে চাইবে। এই লড়াইয়ে যে তাকে সহযোগিতা করবে তার দিকেই শুভেন্দুর সমর্থন যাবে। এখন কে কার সঙ্গে থাকবে বা আছে খুব জটিল বিষয়।
( সঙ্গের ছবিটি প্রতিকী)
©® অলোক কুন্ডু
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন