বুধবার, ২০ এপ্রিল, ২০২২

মোহন-ইস্টের খেলা ছেড়ে সৌমেন ঠাকুরের বক্তৃতায় ভিড় : অলোক কুন্ডু

🎯 গুণি নেতা ও বক্তব্য গুণের হলে মানুষ মনে রাখবেন।

🎯 দেখতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের থেকে আরও সুন্দর ছিলেন। সত্যজিৎ রায় যখন তাঁকে দেখেছেন তখন তিনি রাজনীতি করেন। দারুন আবৃত্তিকার। গান গাইতে পারেন। কবিতা লিখতেন পারেন। ছবি আঁকতে পারেন।কিন্তু আদ্যোপান্ত একজন কম্যুনিস্ট। কম্যুনিস্ট পার্টি ও লেনিন সম্পর্কে দুটি বই লিখেছিলেন। কলকাতায় সৌমেন ঠাকুর বক্তব্য রাখলে হৈ হৈ পড়ে যেত। তাঁর বক্তব্য এতটাই টানটান, এতটাই তুখোড় এবং কাব্যিক ব্যঞ্জনাময় যে স্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতো যে আজকের দিনে তা ভাবতে পারা যাবেনা। তাঁর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে ভাব ও ভাষা বোঝাতে তাঁকে কোনোদিন হোতো না। কখনো শালীনতা ছাড়িয়ে যেতেন না কিন্তু বিরোধীদের চরিত্রগুলিকে ছাল ছাড়িয়ে দিতেন। বিরোধীদের ন্যায় নীতিকে পর্যদুস্ত করে দিতেন। বক্তব্যের মাঝে তাকে এমন কোনও প্রসঙ্গ আনতে কখনও হয়নি যার ফলে তিনি ধিক্কার পান। অথচ তীব্র শ্লেষাত্মক বক্তব্য রাখতে তাঁর জুড়ি ছিলনা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সায়েন্সের ছাত্ররা ছুটছেন ডায়রি নিয়ে কী বলেন সৌমেন ঠাকুর, কেমনভাবে বলেন। রবীন্দ্রনাথ, সৌমেন ঠাকুরের অনুরোধে গান লিখেছেন পর্যন্ত। রবীন্দ্রনাথ খুব পছন্দ করতেন ঠাকুরবাড়ির এই সন্তানকে। হাওড়ার প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা মৃগেন মুখোপাধ্যায় একদিন বলছিলেন, তখন ফার্স্ট ইয়ারে তিনি পড়েন। তিনি বলছিলেন, শুনলাম সৌমেন ঠাকুর একদিন উত্তর কলকাতায় এক জায়গায় বক্তব্য রাখবেন। তার আগের দিন বাবা একটা ফুল প্যান্ট কিনে দিয়েছেন। সেই সময় ধুতি ছেড়ে ছেলেরা সবে প্যান্ট পরছে। প্যান্টটা লুজ হয়েছে। আবার বাড়ি গিয়ে প্যান্ট পাল্টে ধুতি পরতে গেলে দেরি হয়ে যাবে। তাই কলেজের দরোয়ানের ঘর থেকে নারকেল দড়ি দিয়ে কোমর টাইট করে ছুটলাম বক্তব্য শুনতে। সৌমেন ঠাকুরের বক্তব্য শোনার জন্য সিপিআই, আর. সি.পি.আই, কংগ্রেস, ফরোয়ার্ড ব্লক, এস ইউ সি আই সব দলের লোকেরা জড় হতো। আর আজ নেতাদের মুখ থেকে জঘন্য বক্তব্য শুনলে আমরা বিস্তর হাততালি দিচ্ছি। সত্যি আমাদের কত পরিবর্তন হয়েছে। সংস্কৃতির পরিবর্তও বলা যায়। আগে শুনেছি সাহিত্যক অধ্যাপকদের পড়ানো শুনতে অন্য ক্লাসের ছাত্রেরাও জড় হতেন তাঁদের ক্লাসে। কবি তরুণ সান্যালের ইকনমিক্স পড়ানো শুনতে স্কটিশে চলে আসতেন বাইরের ছেলেরা। আমি একবার কংগ্রেস নেতা দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের একটি সেমিনার শুনতে গিয়ে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলাম যার সঠিক উদাহরণ দেওয়ার ভাষা আমার জানা নেই। তিনি ছিলেন অধ্যাপক এবং ইন্দিরা গান্ধীর প্রিয় পাত্র, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যি মন্ত্রী ছিলেন। দেখতে এতটাই সৌম্য দর্শন ছিলেন যে সিনেমার নায়ক হতে পারতেন। আমার হাওড়ার দীনবন্ধু কলেজে যখন সুমন্ত চৌধুরী " লাস্ট রাইড টুগেদার" পড়াতেন আমরা সবাই ভাবতাম স্যার যেন খালি চিরকাল ধরে ওটাই পড়িয়ে যান। ক্লাস ফাঁকির অফুরন্ত সুযোগ সুবিধা ও প্রলোভলনেও তাই ক্লাস ছাড়তাম না। একবার কৃষ্ণনগরে মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গলের খেলা। বাজার গরম। আর খেলা ঠিক হওয়ার বহু আগেই ঠিক হয়ে আছে সৌমেন ঠাকুর মশাইদের পার্টির মিটিং। সৌমেন ঠাকুর মুখ্য বক্তা নন। তখন তিনি পরিচিতি ততটা পাননি। আর তখন ইস্টবেঙ্গলে খেলেন বিখ্যাত পঞ্চপাণ্ডব। সকলে ধরেই নিয়েছেন একই সময়ে খেলা ও মিটিং পড়ে যাওয়ায় সভায় আর কেউ থাকবেন না। সভায় তখনও বড় বক্তারা আসেননি। সভার লোকেরাও অনেকেই সভা কিছুটা শুনে মাঠে যাবেন ঠিক করেছেন। তখনকার মাঠ বলতে চট দিয়ে ঘেরা। টিকিট কেটে খেলা। সৌমেন ঠাকুর বিকাল চারটের সময় সভা শুরুর টাইমের আধ ঘন্টা আগেই বক্তব্য রাখতে শুরু করলেন। তার বক্তব্য শেষ হলো দেড় ঘণ্টা পর। ততক্ষণে খেলা শুরু হয়ে শেষ হয়ে গেছে। এদিকে এই সভার ভিড় তো কমেই নি উত্তরোত্তর বাড়তে শুরু করে।

🎯 ©® অলোক কুন্ডু

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...