রাজ্য সরকার কর্মচারীদের ডি.এ নিয়ে কি সুপ্রিম কোর্টে যাবে ? এই প্রশ্ন লাখ টাকার হলেও যেতে পারে এবং এতে আরও ৭/৮ মাস সময় নষ্ট হবে। তা হোক। কর্মচারীদের মনোবল ভাঙার উদ্দেশ্য তো সরকারের থাকতেই পারে। তবে সরকার এর মধ্যেই পুজোর সময় ৭% ডিএ দিয়ে দিতে পারে এই জন্য, যে হাইকোর্টের রায়ের অবমাননাও তাতে হবে না। খানিকটা নিষ্কৃতি পাওয়া যেতে পারে। সরকার বলতে পারে আমার কাছে ডিএ দেওয়ার মতো কোনও অর্থ সংস্থান নেই। যতটুকু ছিল, তা কুড়িয়ে বাড়িয়ে দিয়েছি। বরং আদালতের কাছে এই বলে প্রশ্ন রাখতে পারে যে রাজ্য সরকারের এখন প্রচুর দায়। রাজ্যের মানুষের স্বাস্থ্যের কথা তাদের ভাবতে হয়েছে বলেই না তারা স্বাস্থ্যসাথীর মতো একটি জনহিতকর প্রচেষ্টা চালাতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। গরীব মেয়েদের দুর্দশায় বঞ্চিত মেয়েদের জন্য লক্ষ্মীর ভান্ডার কি তারা ডিএ-র জন্য তুলে দিতে পারে ? রাজ্য সরকার যদি আদালতে যায় তবে রিটে লক্ষ্মীর ভান্ডারের কথা তারা যুক্ত করে দিতে পারে। রিটে টাকা না থাকার কথা বলতে গিয়ে এইসব জনপ্রিয় আর্থিক ব্যয়ের কথা সরকার তুলে ধরতে পারে। কারণ সরকারের কাছে এইসব প্রচেষ্টা ঢাল স্বরূপ। এতে করে রাজ্য সরকার আদালতের কাছে মার্জনা চাইতে পারে, সময় চাইতে পারে। তাই কিছুটা ভাগ ডিএ, সরকার কর্মচারীদের দিয়ে দিতে পারে বর্তমান রায়ের ভিত্তিতে। তবে আদালতের সম্পূর্ণ রায় মানতে তারা আদালতের কাছেই আবেদন করতে পারে। তাতে লাঠিও ভাঙলো না সাপও মরলো না। আগামী বছর আরও ৩% কি ৪% ডিএ দিয়ে দেবে এবং বলতে পারে সরকার আদালত ও রাজ্যবাসী দুটোকেই মান্যতা দিলাম। কারণ একেবারে ডিএ না দিলে কোর্টের অবমাননা হবে। তাতে মুখ্যসচিবের হয়তো জেল জরিমানার অর্ডার আদালত দিতে পারে। তবে ডিএ একদম না দিলে উচ্চ আদালতের কি ভূমিকা হবে। নিশ্চিতরূপে আদালত রাজ্য সরকারের সমালোচনা করতে পারে মুখ্যসচিবকে, সাত দিনের জেল দিতে পারে এর বেশি মনে হয় আদালত কিছু করবে না। সরকারকে ফেলে দেওয়ার কথা বলতে আদালত বলতে মনে হয় পারতে নাও পারে। ডিএ না দিলে সাংবিধানিক সংকট হতে পারে। কিন্তু রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা না থাকলে আদালত জোরাজুরি করতে পারে কি না এ প্রশ্ন লাখ টাকার। কর্মচারীদের যা অবস্থা তাতে তারা আন্দোলন করার ক্ষমতায় নেই। আইএএস / ডব্লিউবিসিএসরা ৩৩/৩৪ হাজার টাকা অতিরিক্ত পেতে শুরু করেছেন, অতএব ডিএ-র সঙ্গে তাদের আর কোনও স্বার্থ জড়িয়ে নেই। তাদের অ্যাসোসিয়েশন এই বিষয়ে মাথা ঘামাবেও না। তৃণমূল সরকারি কর্মচারীরাও এই বিষয়ে মাথা ঘামাবে না। পড়ে থাকবে মুষ্টিমেয় কর্মচারী। তারা আন্দোলন করলে নির্ঘাৎ জেল খেটে মরবেন। আদালতে বার বার মামলা হবে নতুন ভাবে। মোদ্দা কথা ডিএ নিয়ে যে মামলা চূড়ান্ত বিষয়ে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে এই কথা চ্যালেঞ্জ নিয়ে কেউ বলতে পারবে না এখন। সকলেই জানে হয়তো সরকারের সঙ্গে আরও আইনি লড়াই হবে। তবু আশা করা যায় রাজ্য সরকারের অফিসাররাও বুঝছে ডিএ একেবারে না দিলে যে সাংবিধানিক সংকট হতে পারে তা থেকে তাদেরও মুক্তি নেই। তারা ফাইলে কি লিখবেন তবে। সরকার মানে তো শুধুমাত্র মুখ্যমন্ত্রী নন, শুধুমাত্র একটা রাজনৈতিক দলের সরকার নয়। সরকার মানে সকলের সরকার। সরকার পরিচালনা করেন আইএএস বা সচিবরা। তারা সংবিধানের কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এখন দেখার রাজ্য সরকারের অফিসারদের নিচু তলা থেকে অর্থসচিব মুখ্যসচিব ডিএ দেওয়ার বিষয়ে কি বলেন বা ফাইলে কি লেখেন। তারা সরকারকে যে পরামর্শ দেন, মুখ্যমন্ত্রী তাতে স্বাক্ষর করেন একেবারে শেষে। কিন্তু তার আগে অন্ততপক্ষে চার/ পাঁচজন অফিসারকে একটা মতামত দিতে হবে।
সরকারের মনোভাব বুঝে মতামত দিলেও সেই মতামতকে হতে হবে সাংবিধানিক এবং আইনের বাধ্যতামূলক নীতির উপর। তবে অনেকের ধারণা সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে সরকার সময় নিতে চাইবে। কারণ তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে যে কোনও ভোটে জিতে আসার জন্যে রাজ্য সরকারি কর্মীদের কাউকে প্রয়োজনে আর লাগেনা। অবশ্যই এখানে বলে রাখা ভালো এই মূহুর্তে সরকার বুদ্ধি করে এখনই রাজ্য সরকার ও শিক্ষকদের মধ্যে ডিএ নিয়ে বিভাজন সৃষ্টি করে দিতে পারে এবং তাতে আরও অনেকগুলো মামলার সম্মুখীন সরকারকে হতে হবে বটে কিন্তু এখন বছর দুই সরকার শুধুমাত্র সরকারি কর্মচারীদের ডিএ মিটিয়ে দিলেই চলবে। এই মূহুর্তে ডিএ নিয়ে রাজ্য সরকারের যে সংকট উপস্থিত হয়েছে তাতে এই মূহুর্তে দুঁদে রাজনীতিক প্রণব মুখার্জির মতো একজন পরামর্শ দাতার দরকার ছিল। এই মূহুর্তে শিক্ষকদের মধ্যেও একটা ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। এখনই শিক্ষকরা আদালতের রায়ে যে ডিএ পাওনা হয় তা শিক্ষকরা হয়তো পাবেন না। তাদেরও আরও লড়াই করে তবে সরকারি কর্মচারীদের মতো দাবি আদায় করতে হবে। এখন এই মূহুর্তে সকলকে ডিএ না দিলে সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষকরা স্যোশাল মিডিয়ায় যে মিনিটে মিনিটে আন্দোলন ও সরকার বিরোধী ভাব প্রকাশ করে চলছে তা আরও শতগুণ বৃদ্ধি পাবে। তবুও এই বিরূপ প্রচারে তৃণমূল সরকারের ভোট একটাও কমবে না। কারণ ভোটের বিষয়টা এই রাজ্যে যে যখন রাজত্বে থাকে তখনই তাদের হারানো মুস্কিল হয়ে ওঠে।
কংগ্রেস ৩০ বছর বামফ্রন্ট ৩৪ বছর তৃণমূল কংগ্রেসও মোটামুটি ৩০ বছর রাজত্বে থেকে যাবে হেসেখেলে। তাই বর্তমান সরকার এই ডিএ এখন অল্প অল্প করে দিতে পারে সবটা দিয়ে দেওয়ার তার পরিকল্পনা কিছুতেই থাকবে না। তাদের হাতে আরও আর্থিক সহায়তা রাখতে হবে কারণ তারা এখনও এখানে রাজত্বে থাকবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন