শৈলেন মান্না স্টেডিয়াম / অলোক কুন্ডু
পূর্বতন হাওড়া ময়দানের আয়তন ছিল বিশাল । দক্ষিণে এখন যেখানে রেলওয়ে
হসপিটাল আছে তার গা থেকে নিয়ে একদিকে হাওড়া জেলা স্কুল পর্যন্ত । অন্যদিকে এখন যেখানে জেলা গ্রন্থাগার
সেখান থেকে বঙ্গবাসী সিনেমা পর্যন্ত ।
পরে যখন বিধান রায়ের মন্ত্রী সভার আমলে
হাওড়া ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট গঠিত হয় তখন
হাওড়া ময়দানকে দু টুকরো করে দক্ষিণ
প্রান্তে তৈরি হয় দুটি ফুটবল মাঠ নাম দেওয়া
হয় ডালমিয়া পরিবারের আর্থিক সাহায্যে
তৈরি ডালমিয়া পার্ক । হাওড়া স্টেট ব্যাংকের দিকে তৈরি হয় সিমেন্টের পাঁচ থাকের স্টেডিয়াম ও শ্রীমার্কেট । শ্রীমার্কেটে স্থান দেওয়া হয় পূর্ব বাংলা থেকে আগত উদ্বাস্তু পরিবারকে । পরে ডালমিয়া পরিবারের সাহায্যে পাঁচিল দেওয়া হয় ও পরের সংলগ্ন মাঠটিতে (পূর্ব প্রান্তিক )
লোহার শক্ত ব্যারিকেড করা হয় । দুটি টিকিট ঘর করা হয় । হাওড়া ডিস্ট্রিক্ট লিগ
প্রথম ও দ্বিতীয় ডিভিশন চালু হয় । মাঠের
মাঝে নতুন একটি রাস্তা হয় কদমতলার
দিকে যাওয়ার যেটি এখন চালু আছে ।
হাওড়া ময়দানের বাকি অংশ পড়ে থাকে
আদি হাওড়া ময়দান নাম নিয়ে । তখন
বঙ্কিম সেতু ছিলনা । এখন যেখানে হাওড়া
কোর্টের কাছে সেতুর একটি ভাগ নেমেছে ওই পর্যন্ত ছিল হাওড়া থেকে কলকাতা
যাওয়ার পুরাতন রেলওয়ে বাকল্যান্ড ব্রিজ
যা সত্তরের দশকে চালু ছিল । বঙ্গবাসী
সিনেমার সামনে দিয়ে ট্রাম ও বাস রাস্তা
হাওড়া জেলা স্কুলের সামনে দিয়ে হাওড়া
জেনারেল পোস্ট অফিসের গা দিয়ে ব্রিজ
উঠে যেত কর্পোরেশন অফিসের সামনে দিয়ে । চার্চ রোডের পূর্ব দিকে কবরস্থান
ছিল । হাওড়া গার্লস কলেজের মূল দরজাটি
ও সেন্ট টমাস স্কুলের দুটি দরজাই লাগোয়া
ছিল হাওড়া কর্পোরেশন অফিসের পাশে ।
ডালমিয়া পার্কে শৈলেন মান্না চুনি বললাম
পিকে ব্যানার্জিরা খেলে গেছেন । হাওড়ার
লিগ ম্যাচে রবিবার টিকিট কেটে ঢুকতে হতো । তিনদিকে দাঁড়িয়ে ও একদিকে
ডালমিয়াদের করে দেওয়া খোলা
স্টেডিয়ামটি এখনও আছে মাঠের পশ্চিম
প্রান্তে । তখন বাগনান উলুবেড়িয়া ডোমজুড়
আমতা জুড়ে ফুটবল খেলা চালু ছিল ।
এমনকি হাওড়ার বড় বড় কারখানার ও
হাওড়া পুলিশের ফুটবল টিম ওই মাঠে
লিগ খেলতো । বছরের কয়েকটা রবিবার
হাওড়ার টিমের সঙ্গে মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গল হাওড়া ইউনিয়নের টিকিট কেটে
খেলা হতো । ব্যাপক ভিড় হতো । এছাড়া
ক্রিকেট লিগও হতো দুটি মাঠেই । পুরাতন
হাওড়া ময়দাননেও স্থানীয় ক্লাবের ও পাড়ার ছেলেরা নিয়মিত ফুটবল ও ক্রিকেট খেলতো । অনন্ত ১০/১২ টা টিম সেভেন সাইড খেলতে পারতো ইঁটের গোলপোস্ট
বানিয়ে । পুরাতন হাওড়া ময়দানে বঙ্গবাসীর
দিকে সার্কাস ও পরে হাওড়া বইমেলা চালু
হয় । তবে হাওড়ার বড় বড় রাজনৈতিক সভা সবই হয়েছে ডালমিয়া পার্কে । ইন্দিরা
গান্ধী থেকে রাজীব গান্ধী ডালমিয়া পার্কে
সভা করে গেছেন । অমৃতবাজার পত্রিকার
শতবর্ষের একমাসব্যাপী অনুষ্ঠান হয়েছিল
ডালমিয়া পার্কের পশ্চিম প্রান্তের মাঠে ।
১৯৭৬ সালে প্রয়াত কংগ্রেস নেতা কুন্তল
ভৌমিকের উদ্যোগে শিবপুর হেলথ সেন্টারের যুব উৎসব হয়েছিল ডালমিয়া
পার্কের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত । ওই
সভায় উপস্থিত হয়েছিলেন সিদ্ধার্থ শংকর
রায় মৃত্যুঞ্জয় ব্যানার্জি ও ধনঞ্জয় ব্যানার্জিরা । ডালমিয়া পার্ক বাম আমলে এটির সংস্কার হয়ে নাম হয় হাওড়া মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন স্টেডিয়াম । এই সময়ে
ডালমিয়া পার্কে অফিস দোকান ও স্টেডিয়ামর আরও দুই দিক গড়ে ওঠে ।
এই সময়ে ক্লাব হাউস ও আন্তর্জাতিক
খেলা শুরু হয় সাবেকি হাওড়া ময়দানে । এই মাঠে পঞ্চাশের দশক থেকে এখানে হাওড়া জেলা লিগ চালু হয় । আগে পূর্ব ও পশ্চিমে দুটি মাঠ একসাথে ছিল । প্রধান মাটটির গোল পোস্ট ছিল পূর্ব-পশ্চিমে ও সঙ্গের সাবেক লাগোয়া মাঠটি ছিল উত্তর-দক্ষিণে গোল পোস্ট । প্রতিদিন
লিগ খেলায় জমজমাট থাকতো । বর্তমান
সরকারের আমলে মোহনবাগান ও হাওড়া
একাদশের খেলার মধ্যে দিয়ে দু বছর আগে
পূর্বতন ডালমিয়া পার্কের নাম হয়েছে
শৈলেন মান্না স্টেডিয়াম । এই মাঠে খেলে
কলকাতা লিগ কাঁপিয় গেছেন অশোক চ্যাটার্জি সুদীপ চ্যাটার্জি অমিয় ব্যানার্জিরা ।
এখন সুদীপ চ্যাটার্জি ও অমিয় ব্যানার্জির
স্মরণে এইমাঠের দুটি ব্লকের নামকরণ
করা হয়েছে ।