মিছিল এবং কবি / অলোক কুন্ডু
এই তো খানিকটা আগেই
প্রচন্ড বৃষ্টিধারায় ভেসে যাচ্ছিল চারপাশ
যেন কোন বিধাতা ধুইয়ে দিচ্ছিল পথ
বাড়ির বারান্দায় রাখা ফুলগাছগুলো
আনন্দে আরও ভিজতে চাইলো
আমি জানতে চাইলাম আজ এত বৃষ্টি কেন
অটোঅলা আমাকে ধমক দিলো
বললো আজ শোক মিছিল আসবে জানেন না
আজব মানুষ মশাই আপনি
আপনার বুকের ব্যাজে স্যারের ছবি না
ওনাকে কে না চেনে
আমি বৃষ্টির দিকে চেয়ে
আরও তীব্রতর হচ্ছে তার রূপ
আমি দেখলাম বৃষ্টিটা এত ধারালো যে
যারা বাড়ির বাইরে বের হতে চাইলো
তারা কিছুতেই তা পারলো না
অটো অলা আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলে
আমার সম্বিৎ হলো যে ও পয়সা নিল না
কেউ কাউকে বলছে এখান দিয়েই মিছিল যাবে
একটা চায়ের দোকানি পয়সা নিল না
বললো আপনি মিছিলে যাবেন তো
আপনার বুকের ব্যাজে স্যারের ছবি উল্টে গেছে
আমি সাদাকালো ছবিটা উল্টে নিলাম
সোনালি সেফটিপিন খুলে ছবিটা বুক পকেটের
ভেতরে রাখা একটা প্লাস্টিক খামে রেখেদিলাম
আমি সিমলা স্ট্রিটের মোড় থেকে দেখতে পেলাম
মিছিলে গান হচ্ছে মিছিলের সামনে একটা ব্যানার
ব্যানারে লেখা কবি অধ্যাপক তরুণ সান্যাল...
আমি একবার ওনাকে সামনে থেকে দেখেছিলাম
স্বামীজির স্ট্যাচুর কাছে এসে
মিছিলটা কেমন নীরব হয়ে গেল
মিছিলের মানুষ ভিজে গেছে
এবার বাঁক নিচ্ছে মিছিলের মুখ হেদুয়ার আগে
একজন বললো এই তো উনি যাচ্ছেন
আমিও অবিকল দেখতে পাচ্ছি
মিছিলের মুখে যেন ঠিক নন্দীগ্রাম আন্দোলন
বুক চিতিয়ে তিনিই তো এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন নিজে
কাঁচের গাড়ি ফুলে ফুলে উপচে পড়েছে
আমার ভুল হচ্ছেনা
আমি শুধুমাত্র ইহকালকে দেখতে পাচ্ছি
মৃত্যুতে বিচলিত হই
শত শত ছাত্রছাত্রী
উপকার পাওয়া আরও শত শত কতজন
শোক মিছিলে এত মানুষ কেন
আমার কেমন অস্বস্তি হচ্ছে মৃত্যুতে আমার ভয়
আমি যা দেখছি অন্তর দিয়ে দেখছি
বাইরে আমার মলিনতাগুলি
বৃষ্টিতে অনেকটা ধুয়ে গেছে আমার সেই মলিনতা
আমি ধীরে ধীরে পরিশ্রুত হতে শুরু করেছি
হাতেটানা রিক্সার ঘন্টার শব্দে সম্বিৎ ফিরে এসেছে
কেউ বলছেন --
এরকম মানব দরদি অধ্যাপক কলকাতা দেখেনি
আমি মিছিলে ঢুকতে পেরেছি
মিছিলের মধ্যে থেকে একটি মেয়ে কাছে এলো
আবার একটা সোনালি সেফটিপিনে
একটা সাদাকালো ছবি আমার শার্টের বুকে
অধ্যাপক কবি তরুণ সান্যাল অমর রহে
বৃষ্টি থেমে গেছে অনেকক্ষণ
আমি সকলের মুখ দেখছি
বিমর্ষ নত মুখ কিন্তু মুখে তাদের গান
বিয়াল্লিয়াসের গান খাদ্য আন্দোলনের গান
নন্দীগ্রাম আন্দোলনের গান সব একাকার হয়ে মিশে যাচ্ছে অনেক আন্দোলনের সাক্ষীর কাছে
কই তিনি আমি কি ভুল দেখছি তবে
মাল্যদান পর্ব চলছে
মিশনারীদের পবিত্র গান তাঁর জন্য উৎসর্গ হচ্ছে
কাঁচের গাড়ির ভেতরটা এখন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি
এইতো নন্দীগ্রাম আন্দোলনের পুরোযায়ী
কেউ বলছেন স্কটিশের অধ্যাপক
কেউ বলছেন রবীন্দ্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি
কেউ বলছেন দয়াবান পন্ডিত কমিউনিস্ট
প্রত্যেকটা ভূষণের জন্যে
ফুলের আলাদা আলাদা সৌন্দর্য ফুটে বেরচ্ছে
মিছিলের সামনে আর কবিকে দেখতে পাচ্ছিনা
স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে মরদেহ বের হচ্ছে
যাবে তার প্রিয় ছাত্রদের হস্টলে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন