সোমবার, ৫ অক্টোবর, ২০২০

অলোকের ঝর্নাধারায়১৮

#অলোককুন্ডুরলেখালিখিওকবিতা
#indianwriterscommunity #kolkatadiaries #kolkata #writer #lekhak #facebookpost

অলোকের ঝর্নাধারায় 
( আমার টুকরো জীবন)
পর্ব-১৮

◆ শিবপুর দীনবন্ধু ইনস্টিটিউশন কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েট হয়েছি। কলেজে গিয়ে একগাদা নতুন বন্ধু হলো। সন্ধ্যায় কলেজ কিন্তু সকালে আমার নিত্য দিনের আড্ডা হলো শিবপুর কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের উল্টোদিকে ঘড়িবাড়ির নীচে কংগ্রেস নেতা শঙ্কর দা-র কাছে। আসলে আড্ডাখানাটা হলো শিক্ষক কল্যাণ সঙ্ঘের ডাকসাইটে নেতা ও দক্ষিণ হাওড়ার কংগ্রেস নেতা শিবশঙ্কর গুপ্তর অফিস। অফিস বলতে ঠেক। আমি পড়ি নাইট কলেজে কিন্তু। আমার কলেজের ছাত্র-পরিষদের নেতা কুন্তল ভৌমিক, কুন্তল দার আড্ডা‌ও ওখানেই। কলেজে কিন্তু আমি ছাত্রপরিষদের ছেলেদের সঙ্গে খুব মিশিনা। আমার বন্ধু ওখানে আমাদের স্কুল থেকে যারা একসঙ্গে ভর্তি হয়েছি। যাইহোক সকালে কংগ্রেসের লোকেদের সঙ্গে মেশামিশি হলেও সন্ধ্যায় পাঁচমিশিলি বন্ধু। সকালে শঙ্কর দা-র ঠেকে আলাপ হলো গোরা দা-র সঙ্গে। গোরা দা-র দুটো বাড়ি। একটা হাওড়ার জুজারসায়। আর একটা হাওড়ার শিবপুরের মন্দির তলায়। একবার গোরাদার জুজারসায়‌ও গেছি। আসলে তখন ফার্স্ট ইয়ার একদম বেকার। পাড়ায় আমাদের বন্ধুদের মধ্যে সকলেই কংগ্রেসের ভক্ত। গোরাচাঁদ দাস আমার থেকে বড় কিন্তু কেন জানিনা ওর সঙ্গে আমার আলাদা বন্ধুত্ব। পড়াশোনা খুব জানেনা লোকটা।কিন্তু মানুষটা ভালো। তখন থেকেই পাড়া বেপাড়ায় আমার নাম আঁকাআঁকির জন্য। কখনও কোনও মেয়ের বি.এডের প্রজেক্ট করে দি। কেউ ১০/২০ টাকা দিলে ভালো অধিকাংশটা নামের জন্য করা। খুব আলাপ হয়ে গেল হাওড়ার সাঁকরাইল গার্লস স্কুলের বড় দির সঙ্গে। একদিন সরস্বতী পুজোর আগের দিন ধরে নিয়ে গেলেন তাঁর স্কুলে। সারা স্কুলবাড়ি আলপনা দেওয়ার জন্য। আমি পড়ি ফার্স্ট ইয়ারে আর সঙ্গে হাত লাগিয়েছে ২০ খানা ছোটবড় মেয়ে। আমাকে দেখা আর যাচ্ছেনা, ঢাকা পড়ে আছি। শেষে বড়দির ধমকে মেয়েরা অর্ধেক হয়ে গেল। সকলেই তার বাড়ি নিমন্ত্রণ করলো সরস্বতী পুজোয়। কিন্তু আমাদের ক্লাবে পুজো হয় তবে ছোট করে। যাইহোক গোরা দার সঙ্গে খুব আলাপ হয়ে গেল আঁকাআঁকির জন্য। গোরা দা তখন একটা এন. জি.ও. খুলেছে, ওর সংস্থার সাইনবোর্ড লিখে দিলাম। প্রথমে খুললো সেলাই স্কুল। মেয়েরা লেডি ব্রেবোর্ন পরীক্ষা দেবে ওর এনজিও-স্কুল থেকে। সেই সময় আমাদের যৌথ পরিবারের হাতির মতো ভাঙা ঝুরঝুরে বাড়িটা সবে পার্টিশন হয়েছে। ৫ টা ভাগ হয়েছে‌। আমার বাবার অফিস যত ভালো বাড়ি তত খারাপ। রোজ ঝগড়া জল নিয়ে কাপড় শুকোতে দেওয়া নিয়ে। ছাদে দৌড়লে অশান্তি। ক্লাস সিক্স-সেভেন পর্যন্ত ছাদে দৌড়াদৌড়ি করার জন্য বাড়িতে প্রচুর অশান্তি, বেদম মার খেয়েছি। মা কাঁদতে কাঁদতে একটা লাঠিই ভেঙে ফেললো একদিন আমার পিঠে। সেই থেকে আর বেশি ছাদে উঠতাম না। একটু সামান্যতম ঊনিশ-বিশ ঝগড়া। বালতি ছোঁড়াছুড়ি। একেবারে বস্তির মতো কেচ্ছাকান্ড। কে বলবে এই পরিবার জমিদার ছিল। সেইসব থেকে বাঁচতে পার্টিশন বিনা বাক্যবিনিময়ে আমার বাবা মেনে নিলেন। যে বাড়িতে জন্মেছিলেন সোনার চামচ মুখে দিয়ে ভাগ্যগ্রমে ১২ কাঠা জুড়ে হাতির মতো বাড়ির ৫ ভাগের ১ ভাগ তখন তার প্রাপ্য। প্রাপ্য অংশটা আসলে একটা খন্ডহর। আমাদের অংশে সিঁড়ি নেই দোতলা আছে। ফুটো ছাদ দিয়ে জল পড়ে। কোনও পায়খানা বাথরুম নেই। চতুর্দিক বন্ধ হয়ে গেল। রাস্তার ধারের ছিঁটেফোঁটাও নয় বাজে অংশ দুদিকে হাওয়া বাতাস বন্ধ করা একটা বস্তাপচা অংশ পাওয়া গেল। মা দিদি বোন পাশের ময়রা পাড়ায় কার‌ও খাটা পায়খানায় ভোরে চলে যায়। আমি বাবা ভাই যাই পাশের মিত্তিরদের বাড়িতে একটা পাড়ার পায়খানা সকলের জন্য ছিল, সেখানে। সেটা নোংরা জঘন্যতম। এই অবস্থায় আমাদের অংশে কোনোভাবে ধারধোর করে একটা সরু সিঁড়ি আর একটা পায়খানা করতে হবে। হাওড়া মিউনিশিপ্যালিটিতে গিয়ে আমার এক সৎ পিসোমশাই অজিত সাধু ( প্রয়াত) অবজেকশন দিয়ে এসেছেন। অথচ দলিলে লেখা আছে আমরা এই কাজ করতে পারি। যাইহোক একজন ইন্সপেক্টর ও গোরা দা এসেছে রাজমিস্ত্রির কাজ বন্ধ করতে। আমার বাবাকে মিউনিশিপ্যালিটি থেকে নোটিশ ধরানো হয়েছে। আগে হেয়ারিং হবে তারপর কাজ। আমি তখন বাজারে গিয়েছিলাম। ফিরে এসে দেখি গোরাদাকে আর একটা লোককে আমার বাবা কাকুতি মিনতি করছে। গোরা দা অবাক আমাকে দেখে। শেষে দুজনে বসে চা খেল আমাদের ঘরে। গোরাদার ইন্সপেক্টর বললেন বাবাকে, আপনি হাওড়া মিউনিশিপ্যালিটিতে গিয়ে একটা কাগজে স‌ই করে দেবেন। মিস্ত্রিরা তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করুক। সেপটিক ট্যাঙ্কের ইঁট গাঁথায় আর বাধা র‌ইলো না। গোরা দা ওখানে গ্রুপ ডি হলেও কংগ্রেসের ইউনিয়ন করে ওর যথেষ্ট খাতির। অফিসার পর্যন্ত সমীহ করে। আমাদের সমস্যা মিটে গেল। কলেজ থেকে বেরিয়ে দু বছর বাদেই  আমি যখন হাওড়া ডি. আই. অফিসে চাকরি পেলাম। গোরা দা রোজ‌ই আমার কাছে একবার করে আসে। ওর লেডিব্রেবোর্ন স্কুলের অফিসিয়াল কাজটাও আমাদের অফিসে হয়। গোরা দা এসে বলে চা খেতে এলুম‌, নয়তো কিছু জমা দিতে। আসলে ওর ব‌উ জুজারসা গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষিকাও। সেই কারণে আর‌ও আসা বেড়ে গেছে। শিবপুরের ঘড়িবাড়িতে রোজ সকালে আর যেতে পারিনা। তবে কুন্তল ভৌমিকের সঙ্গে আমার যোগাযোগ আছে। কারণ কুন্তল দা, আমার শিক্ষা বিভাগে চাকরির জন্য মেন তদ্বির করে দিয়েছে। কুন্তল ভৌমিক ক্যান্সারে মারা গেছেন। পরে সেইসব বলবো। সবে মে মাসে দার্জিলিং থেকে ঘুরে এসেছি। গোরা দা জুলাই মাসে এলো। তখন আমি খুব ব্যস্ত। অফিসের ছোট ক্লার্ক থেকে বড় কাজের ভার পাচ্ছি। একসঙ্গে আবার আর্ট কলেজে পড়ি। আমার হাতে সময় নেই। আমার এ.আই অফ স্কুলস তখন "তাহেব বক্স" সাহেব। কাঁথিতে বাড়ি। তাহেব বক্সসাহেব আমাকে রোজ শেখান কীভাবে ফাইলে নোট দিতে হয়। তখন ঘোর বাম আমল। আমার ভুল ইংরেজি ঠিক করে দেন। ইংরেজি কিছু ছাই তেমন জানিনা। বিভিন্ন লোক বলেন তোমাদের অফিসে মাল না দিলে বড় কাজ হয়না। ঘুষ কেউ কেউ নেন বুঝতে পারি। তবে বক্স সাহেব নেন না। থাকেন উলুবেড়িয়ার কোনও একটা মাদ্রাসায় ছাত্রদের সঙ্গে। পয়সা কড়ি কারা কারা নেয় বক্স সাহেব আমাকে চুপিচুপি বলেন। উনি অত্যন্ত সৎ মানুষ। শুক্রবার নামাজ পড়তে যান। এমনকি সোমবার বাড়ি থেকে এলে রুটি তরকারি একটা খেতে বলেন। ইচ্ছে হলে, কোনোদিন হাতে নিয়ে নি। নারকেলের নাড়ু খেতে দেন, এক‌ই কৌটোয় হাত ঢুকিয়ে মুড়ি নি ওনার থেকে। উনি আমার থেকে ৪/৫ টি পদ উপরে কাজ করেন। আমি লোয়ার ডিভিশন ক্লার্ক। উনি খেলা দেখতে ভালোবাসেন। আমার সঙ্গে খুব ভাব বলে, উনি না থাকলে স্কুলের লোকেরা আমার কাছে ওনার খবর জানতে চান। ওই সময় গোরা দা এসে বললো। পুজোয় ওর সেলাই স্কুলের মেয়েদের সঙ্গে আমাকে যেতে হবে দার্জিলিং। শুনেই আমি চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে পড়েছি। হ্যাঁ যাবো। কি করতে হবে। বললো ৪৫ টা মেয়ে যাবে। ওর ব‌উ ছেলে বাড়ির সকলে। এ সে নিয়ে অনেক মেয়ে। ছেলে বলতে রান্নার দুজন লোক। আর তুই। ওকে কোন‌ও রেলের অফিসার বলেছে পুরো একটা কোচ দেবে। কিন্তু নিয়ম হচ্ছে ৭২ টা টিকিট কাটতে হবে। ফেয়ারলি থেকে ব্যবস্থা হয় মেয়েদের স্কুলের জন্য। এটাতো একটা এন জি ও যাচ্ছে। তার ওপর নারী কল্যাণ ও শিক্ষা বিভাগের চিঠিচাপাটি দিয়ে ২৫% ছাড়। আমি আমার নাম, বয়স সব লিখে দিলাম। আমাকে ও ওর এনজিওর মেম্বার করে নিল কারণ রেলকে দেখাতে হবে যারা যাবে তাদের পরিচয়। বাইরের কেউ যেতে পারবে না। দুজন মাত্র কুক নেওয়া যাবে। ( ক্রমশ) অলোক কুন্ডু। ৬.১০.২০

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...