বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০২০

১৯৬২-এর চীন-ভারত যুদ্ধ: অলোক কুন্ডু

●পশ্চিম অরুণাচল ঘুরতে গেলে ১৯৬২-ও ঘুরে 
------------------------------------------------------------------
আসতে হয়● 
-----------------
◆অলোক কুন্ডু 

■ মহম্মদ রফি, মদনমোহন ও কাইফি আজমির
তৈরি গান--" কর চলে হম ফিদা জান ও তন সাথিওঁ।" ভূবন ভোলানো সংগীতের মর্যাদায় ভূষিত। আসলে এই গান ও হকিকৎ না হলে পূর্ব ভারতের জনগণকে রোখা যাচ্ছিল না। সরকারের ওপর রাগ ক্রমশঃ বিস্ফোরণের চেহারা নিতে যাচ্ছিল।
■ পশ্চিম অরুণাচল গিয়েছিলাম ২০১৭-তে
সে কথার উৎস টেনে হকিকৎ ও ১৯৬২ ভারত চীন যুদ্ধের করুন কাহিনী কেন বলতে চাই সেটা জানা দরকার। যুদ্ধ কথাটা আসলে একটা মস্তবড় ধোঁকা। আসলে বিনা সেনা পাহারায় অরক্ষিত সীমান্ত দখল হয়ে গিয়েছিল। ওই সময় কি কারণে প্রথমে ভারত "ফরোয়ার্ড পলিশি।" নিয়েছিল! এর উত্তর আজও পরিষ্কার নয়। প্রথমত ১৯৬২ যুদ্ধের ফাইলটি ভারত সরকারের দ্বারা ক্ল্যাসিফায়েড করা আছে। অর্থাৎ চূড়ান্ত গোপনীয় তথ্য। তৎকালীন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হেন্ডারসান ব্রুকস ও ব্রিগেডিয়ার পি.এস.ভকতের তৈরি লজ্জাজনক হারের বিস্তারিত রিপোর্ট। ওই সময়কার আন্তর্জাতিক সাংবাদিক নেভিল ম্যাক্সওয়েল ওই রিপোর্ট তৈরি ও যুদ্ধের সময় অরুণাচলজুড়ে কাজ করেছিলেন একমাত্র তিনি
ভারত সরকারের ওই রিপোর্ট ফাঁস করে দেন কিন্তু ওই রিপোর্ট বি.জে.পি সরকারে এসেও রিপোর্টারদের হাতে তুলে দিতে পারেন নি। কিন্তু কিছুই গোপন থাকেনি। ভারত সরকার নাকি পেছনে হাঁটতে অর্ডার দিয়েছিল। তাহলে যুদ্ধ কথাটা কিসের!
■তায়াং ছেড়ে আগামীকাল অর্থাৎ ( ৬/১০/১৭) 
চলে আসবো। পথে আবার পড়বে ভারতের সুইজারল্যান্ড " দিরাং।" একটা ছোট ক্ষরস্রোতা নদীর দুই পারে ছোট্ট শহর, নয়নাভিরাম বললেও কম বলা হবে, সেই দিরাংও ছেড়ে চলে যাবো।
■ আজ ৫/১০/১৭ তায়াংয়ে স্থানীয় ওয়ার মেমরিয়াল দেখতে এসেছিলাম। বাইরে বেরিয়ে আসতে জানা-অজানার ভিড়ে আটকে কিছুক্ষণ দাঁড়াতে হলো। লাইট অ্যান্ড সাউন্ড দেখে রাত ৮ টায় বেরিয়ে দখি পূর্ণিমার চাঁদ হাট বসিয়েছে রাস্তাজুড়ে। ১৯৬২ র চীন অগ্রাসনের কাহিনী শুনে ইতিমধ্যে চোখে জল ভরে গেছে এমন যে, সেই অত বড় পাহাড়ি চাঁদটাকেও ঝাপসা দেখছি। এদিকে ততক্ষণে পাশে বেহালার শীলপাড়ার গৌতম মুখার্জী দা ও বৌদি অনসূয়া দি । আমার স্ত্রী, এল আই সির ব্রাঞ্চ ম্যানেজার কালিন্দীর 
সাহা-দা তাঁর স্ত্রী রীতা সাহা, নীলরতন মেডিক্যালের সবে এমবিবিএস পাশ করা 
তাদের সুযোগ্য ডাক্তার পুত্র দাঁড়িয়ে গেছি সবাই। সকলেই ভারাক্রান্ত। জুতোর শব্দের সঙ্গে মানুষের ফিসফিস শব্দের মিলমিশে যেন এক অদ্ভুত বেদনা সৃষ্টি হয়েছে চারিদিকে। এমনকি ঝিঁঝিঁ ডাক‌ও অস্পষ্ট যেন। কাছে দূরে অন্ধকারে অনেকেই চোখটা মুছে নিচ্ছেন। বয়স্ক কেউ কেউ তখনও বুঝি নিভৃতে কেঁদে চলেছেন। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়া সেই জল যেন ৬২-র স্মৃতি-স্মারক
ছুঁয়ে রাখছে। আসলে ওর নাম বনি, তরতাজা যুবক, সাহাদার পুত্র ও আমাদের একজন ভালো সঙ্গী, স্যরি ও কিন্তু ডাক্তারবাবু। বেশ বৃহদাকার চাঁদের ডজন খানেক ছবি তুলেছেন। এই লাইট 
অ্যান্ড সাউন্ডে সবটুকু কাহিনী তুলে ধরা হয়নি এবং তা হওয়ার কথাও নয়। তবুও এখানে প্রত্যেকটা দর্শকদের চোখের কোনে কোনে এত জল তবে কেন ? সামান্যতেই এত যদি বেদনা তাহলে কত কষ্ট হয়েছিল ওদের। কাহিনির সংক্ষিপ্তসার হলো, এখানকার কয়েকজন অসম রাইফেলসের অকুতোভয় জওয়ান পালিয়ে না গিয়ে, সরকারি আদেশ অমান্য করে, লড়াই করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন। আর এরা উপরের কোনও আদেশ শোনেননি মূলতঃ সেই তিনজনকে নিয়েই মহম্মদ রফির গান, "কর চলে হম ফিদা জান ও তন সাথিওঁ।"  সামনে তখন ছিলেন ৬ জন অফিসার সহ ২৪০/২৫০ অসম রাইফেলসের সেনা তারাও মারা গিয়েছিলেন। 
এর কয়েকদিন আগে সীমান্ত পেরিয়ে অক্টোবরের দেওয়ালির আগেই বিশ হাজার সুসজ্জিত চীনা সেনা, তখন বুমলা পাস আর জেমিথাঙ হয়ে অনাবৃত বর্ডার টপকে এগিয়ে আসতে থাকে। প্রথমেই দখল করে তায়াংয়ের বিখ্যাত মনেস্ট্রি। শত শত শিশু হত্যা করে এবং খুঁজে খুঁজে বার করে আনে মেয়েদের। মেয়েদের ব্যাপক ধর্ষণ করতে করতে এগিয়ে এসেছিল তারা । এমনকি মেয়েদেরও হত্যাকারী এই চৈনিক বর্বররা। যুবকদের‌ও গুলিতে ঝাঁঝরা করেদিয়েছিল। তখন তো কোনও রাস্তাঘাট‌ই ছিলনা এত বাস গাড়িও ছিলনা যে নাগরিকরা ওই দুর্গম অঞ্চল পরিত্যাগ করে পালিয়ে যাবে। স্বাধীনতার ১৫ বছরের আহ্লাদ তখনও কাটেনি, নেহরুর আর ডান হাত ভি. কে. কৃষ্ণমেননের। ইতিমধ্যে নেহরু ও মেনন বিদেশের সমস্ত দেশ জায়গায় দুবার করে ঘুরে ফেলেছেন। নেহরু আর মেননকে পত্র-পত্রিকায় বিকিনিপরা মেয়েদের সঙ্গে তাদের গায়ে হাত দিয়ে মস্করা করতে দেখা গেছে। এমনকি নেহরু তাদের সাথে সিগারেট খাচ্ছেন এও দেখা গেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভিকেকেএমকে বিকিনি গার্লদের মধ্যমণি হিসেবে দেখা যাচ্ছে। স্বাধীনতার ১০ বছর পর এই দুজনেই স্থির করেন সীমান্তে সেনার দরকার নেই। এমনকি অস্ত্র খারখানায় উৎপাদন পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়ছিলেন। ১৯৫৯-এ দলাইলামাকে আশ্রয় দেওয়াতে চীন ক্ষেপে যায়।  ইতিমধ্যে কিন্তু মাও জে দঙয়ের প্রধানমন্ত্রী জৌ এন লাই-কে এদেশে এনে নেহরু আর ডান হাত কে মেনন মিলে ভারতের প্রত্যেকটি বড় শহরের ফুটপাথ জুড়ে কাতারে কাতারে মানুষ জড়ো করে বিশ্বজয় করেছিলেন। দু লাখ বাহাত্তর হাজার বর্গ কিলোমিটার আগেই চিন দখল করে নেয় যা পুরাতন " নেফা" -র সঙ্গে যুক্ত ছিল । ম্যাকমোহন 
লাইন অতিক্রম করে ১৯৬২-এর অক্টোবরের প্রথম দিকে। দেওয়ালিতে দিরাং দখলে নেয় ও অকথ্য অত্যাচার করে তখন যারা সেখানে বাস করতেন। এখন যেখানে যশবন্ত ওয়ার মেমোরিয়াল হয়েছে, তাও ৬০ কিমি দূর সীমান্ত থেকে, সেইখানে একমাত্র তিনজন মিলে বাধা 
দেয়। এদের তিনজনকে নিয়ে এবং মনে রেখে "হকিকৎ" সিনেমা তৈরি হয়েছিল। তাই হকিকতে দেওয়ালির দিন জানপ্রাণ নিয়ে চীনের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা শোনা যায় । পরে নভেম্বরে ১৯৬২ চীনা সেনা বিনা বাধায় বর্ডার থেকে ৩০০ কিমি দূরে বমডিলা চলে আসে। নেহরুর বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে কমজোরি নেতৃত্ব হিসেবে ধীক্কার উঠে যায়। পার্লামেন্টে ব্যাপক ক্ষোভ তৈরি হয়। নেহরু, কেনেডিকে সৈন্য অস্ত্র সমেত সাহায্য করতে চিঠি লেখেন। আমেরিকান হস্তক্ষেপে তিন দিনের মধ্যে চায়না নেফা পরিত্যাগ করে। কিন্তু আজও সেই দু লক্ষ বাহাত্তর হাজার বর্গ কিমি জায়গা চিন ছাড়েনি। নেহরু বলেছিলেন ওই ঘাসের জঙ্গলে না হয় আবাদি না আছে ঘাস, মূলভূমি তো তারা ছেড়ে চলে গেছে। উত্তরে নেহরুকে পার্লামেন্টে শুনতে হয়েছিল আপনার মাথা তো ন্যাড়া, সেটা নিয়ে চলে গেলে কি আপনি বসে থাকতেন ? ( ছবি -ব্রহ্মপুত্রের উপর 
গুয়াহাটির ফ্যান্সি বাজারের স্মারক ) ●©® অলোক কুন্ডু।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...