⛔ পুজোতে আমার কোনও জামাকাপড় খুব একটা হয়না। ছোটবেলায় যদি বা একটা প্যান্ট একটা জামা হতো তার যে কত দাম ছিল তা বুঝি এখন। বেশ মনে আছে এক এক বছর বাবা জামাকাপড় দিতে পারতেন না। অভাব ছিল আমাদের। তবে এখন বুঝতে পারি প্রতিদিন আমাদের সংসারে, এত জলখাবার, পরটা-আলুর দম, রবিবার রবিবার মাংস, প্রতিদিন চার পাঁচ রকম তরকারি দেওয়া ভাত এতসব খাওয়া দাওয়া করতে গিয়ে আমার বাবা-মা সংসার ঠিক প্ল্যান করে চালাতে পারতো না। কিন্তু মাসের মশলাপাতি আসতো পেল্লাই ঝাঁকামুটে করে, যেন বিয়ে বাড়ির ফর্দ। আমাদের মশলাপাতি কখনও মাসে দুবার আসতো না, ফুরিয়ে যেতনা। এখন ভাবি এত রকমের খাওয়া দাওয়া আজ পয়সা থেকেও আমাদের কিন্তু আর হয়না। কারণ এত রকম রান্না করতে যে কেউ আজ বিরক্তবোধ করবে। তখনকার দিনে উনুনে আর কেরোসিন স্টোভ মিলিয়ে মা একা কত রান্নায় সময় দিত। তারমধ্যে বাটনা বাটা কাপড় কাচা ঘর মোছা বিছানা ঝাড়া খেতে দেওয়া কত কি। সারাদিন উনুন জ্বলে দুপুর বাদ দিয়ে। তবে শনিবার শনিবার আমরা বাবা মা ভাই বোন সবাই মিলে হয় উত্তম-সুচিত্রার সিনেমা নয় তো স্টারে, মিনার্ভায়, রঙমহলে, কাশী বিশ্বনাথ মঞ্চে নাটক দেখতে যেতাম।
শীতে চিড়িয়াখানা, তারকেশ্বরের মন্দির, দক্ষিণশ্বর মন্দির দেখতে। শুধুমাত্র বাংলা সিনেমা নয়, হিন্দি সিনেমাও বিস্তর দেখতাম। শনিবার আমাদের লেখাপড়া একেবারে বন্ধ। আগেকার দিনে সিনেমার হলে গানের বই পাওয়া যেত সেগুলো আমার দিদির কাছে বহুকাল ছিল। কোথায় হারিয়ে ফেললো কে জানে ? এইসব করে পুজোতে আর আমাদের জামাকাপড় খুব একটা হতো না।
•কিন্তু যেই কলেজে উঠে টিউশনি শুরু করলাম, জামাকাপড় পরা শুরু হলো আমার। ওই শখ একমাত্র করোনায় মাঠা মারা গেছে। তা না হলে জামাকাপড় রাখার আর আমার বাড়িতে জায়গা নেই। দক্ষিণ ভারত থেকে আনা দুটো পাঞ্জাবি এখন আলমারিতে পচছে। রায়নার গৌতম,সুশান্তরা দেখেছে আমি এক জামা প্যান্ট দ্বিতীয় দিন আর পরতাম না। গতবছর দুখানা প্যান্ট করালাম। যার অনেকগুলো করে পকেট। বিশেষ করে বাইরে গিয়ে ক্যামেরার অ্যাক্সেসারিজ ও মোবাইল,টাকাপয়সা,চাবি টিকিট, রুমাল,ওষুধ পত্র রাখার সুবিধার জন্য। এইসব ব্যাগে নিয়ে ঘোরাঘুরির বিপদ ও অসুবিধা দুই আছে। একবার সিমলা থেকে আসার সময় ব্যাগে টাকা, টিকিট ক্যামেরা রেস্টুরেন্টে ফেলে অনেক দূর ফেলে চলে এসেছিলাম, এখনও ভাবলে বুক উড়ে যায়। গত ১/১১/১৯ তারিখে করিয়েছিলাম। পরলাম ৬/১১/১৯ তারিখে। ওই প্যান্টটা ভাঙলাম যেদিন, বর্ধমানের গুইরে সন্দীপপ্রসন্ন চক্রবর্তী বাবুর বাড়িতে জগদ্ধাত্রী পুজোর নিমন্ত্রণ ছিল। ওইদিন রায়নার শ্যামসুন্দরেও গিয়েছিলাম একবার কারণ ওখানে আমার একটা ব্যাঙ্কের পুরনো অ্যাকাউন্ট ছিল।
প্যান্টটা ওইদিন পরার পর অপছন্দ হওয়ায় আবার খুলিয়ে সেলাই করালাম। দুবারে (৮০০+৫০০) ১৩০০/-টাকা মজুরি পড়ে গেল। বড়বাজারে যে দোকানে প্যান্টটা বানালাম এই মাসে গতবছর, তাদের ওস্তাগর মাস্টার খুব নামকরা। তাছাড়া বিদেশি মেশিনে সেলাই হয়। স্টিচ ও ফিনসিং দারুণ। প্যান্টের মজুরিও বেশ চড়া। অন্য যে কোনও জায়গার চেয়ে বেশি। আমাকে একটা অচেনা দোকানদার সন্ধান দিয়েছিল। সামনে দুটো ইনার পকেট সহ মোট পকেট সাতখানা হবে । তো আমার এই আব্দার নিয়ে গেলাম বড়বাজারে ২০৩/৪ ,মহাত্মা গান্ধী রোডস্থ দোকানে। একজন ননবেঙ্গলি ভদ্রলোককে পরতে দেখেছিলাম রাস্তায় ওইরকম প্যান্ট। বলেছিলেন দিল্লি থেকে তিনি কিনেছেন। অপরিচিত বেশি কথা রাস্তায় আর জিজ্ঞেস করা হয়ে ওঠেনি । যাইহোক এঁকে ছক করে দেখিয়ে দিয়েছিলাম বড়বাজারে যে দোকানে করতে দিয়েছিলাম। ৮০০/-টাকা মজুরি কারণ সামনে দুটো এক্সট্রা ও দুটো ইনার পকেট। পরলে স্মার্ট লাগতেও পারে সেটা মুখ্য বিষয় নয়, মুখ্য বিষয় হলো
ট্রেনে-প্লেনে এইরকম পকেট রাখা যথেষ্ট যুক্তিযুক্ত
ব্যাপার, সেফটি পারপাস । প্যান্টটা পরার আগে
এতটাই নিশ্চিত ছিলাম যে পরে আর দেখিনি এনে তুলেই রেখে দিয়েছিলাম । পরবার পর দেখলাম ঠিক মতো হয়নি । মনটা একটু খটমট করছিল । বর্ধমানে রায়নার শিক্ষক বাসুবাবুর বাড়িতে ( মিরছোবা) রাতে ছিলাম গতবছর, সন্দীপপ্রসন্নবাবুর বাড়ি (গুইর) থেকে ফিরে এসে । বাসুবাবুর ২২/২৩ বছরের ছেলে রাজের সঙ্গে কথা হয়েছিল আমার প্যান্টটা নিয়ে। ও কিছু সংশোধন করলো। প্রথম পরেছিলাম সেইদিন আর দ্বিতীয়বার ১৭.৩.২০২০ সারান্ডায় ব্যস তারপর অভিশাপে পড়লাম। কোথাও আর যাওয়া হয়নি। প্যান্টের কাপড় একেবারে ১০০% কটন। একটা ১৬০ কাপড়ের (১৩০ লাগে ) দাম ১২০০/- মজুরি ৮০০/-নিয়ে প্রায় ২০০০/- পড়লো,পরে আবার ৫০০/-। সঙ্গে ঊনিশ-বিশ রঙের আর একটা পিসও কিনেছিলাম তখনই। বলেছিলাম একটা তৈরি করে যদি ভালো লাগে তো আর একটা তোমাকেই করতে দেব --হুবহু ডুপ্লিকেট আর একটাও হয়েছে।
•বহুবছর আগে যখন কলেজে উঠে পুজোর সময় নিউ মার্কেটে সব বন্ধু মিলে প্যান্ট করাতে দিতে যেতাম এই নতুন প্যান্টটা করতে দিতে যাওয়ার সময় সেইসব পুরনো দিনের কথা মনে পড়ে গেল। আর একটা ঘটনা এই প্রসঙ্গে না বললেই নয়। আমাদের মধ্য হাওড়ার শ্রীরামকৃষ্ণ শিক্ষালয়ে বরাবরই একটা কড়াকড়ির মধ্যেই আমরা স্কুলে বড় হয়েছিল। আমি ওই স্কুলের ছাত্র। ক্লাস নাইনে প্রথম চুস প্যান্ট পরে স্কুলে গেছি। ওই প্যান্ট পরার জন্য মুকুলবাবু স্যার ( উনি দু বছর আগে হঠাৎ প্রয়াত হয়েছেন ) আমাকে বেঞ্চে উঠিয়ে মাপ
নিয়েছিলেন। আমার সেই প্যান্টের মুহুরির মাপ কত?
স্যারের নির্দেশে, তখন বোর্ডে আমার এক বন্ধু প্যান্ট এঁকে, লিখছে কোমর এত লম্বা এত মুহুরি এত। সারা ক্লাসের কাছে আমার তখন শ্রাদ্ধ হচ্ছে। এটাই শাসন পরে বুঝেছিলাম। সে লজ্জা অবশ্য এখন কবেই কেটে গেছে। তবে জামাকাপড়ে যে আমার একটু বেশি লোভ আর মায়া সে কথা স্বীকার না করে পারছি না। আমাদের পাড়ার ইস্ত্রি যে করে সে তো দেখা হলেই এখন বলে, "কি গো এইভাবে পেটে মারবে দাদা।" একবার রায়নার শ্যামসুন্দরে হাটতলায় ( ২০১২) একটা জামাকাপড়ের রেডিমেড দোকান হলো সবে। রায়না-১ এর শিক্ষাবন্ধু গৌতম সাহা বললো স্যার (দোকানের শো-কেসে সাজানো) জামাটা আপনাকে মানাবে। আমি বললাম গায়ে হলে কিনে নেব, তবে এখন পয়সা নেই, দিতে পারবো না । একটু পরেই দেখি কীরকম দেখার জন্য গৌতম হৈহৈ করতে করতে ওই জামাটা নিয়ে চলেই এসেছে। দোকানটা অফিসের জানলা থেকে দেখা যায়। গ্রামে দু-তিনটি ইন্সটলমেন্টে আকচার বিক্রি হয় জামাকাপড়। তাবলে আমিও ধারে কিনবো ?! কারণ রাস্তার দুধারে নমস্কার আর স্যার শুনতে শুনতে নিজেকে আরও সম্মান করতে শিখেছি বোধহয়। গৌতমের আনা জামাটা পরেই ফেললাম কারণ সেদিন শুক্রবার ছিল। মোটামুটি ওইদিন বাড়িতে যাই। সঙ্গে সঙ্গে পরেই ফেললাম দেখবার জন্য ফিট হলো কিনা এবং আমার মনে আছে জামাটা খুব ফিটিং হয়েছিল ( দোলের রঙ লেগে যাওয়ায় ওটা বাড়ির ঝাড়পোছে লেগে গেছে ) এবং সত্যি সত্যি তিনবারেই জামাটার দাম শোধ করেছিলাম। যদিও আমি রেডিমেডের একেবারেই খদ্দের নই । বেশ কয়েকবছর আমার পাড়ার টেলরের থেকেও বেশ কটি জামা প্যান্ট পাঞ্জাবি করিয়েছি। খুব খারাপ না করলেও আমার যেন খুঁতখুঁত করতো। কোথায় টেলর পাই খুঁজতাম। কারণ আমি ফিটিং পছন্দ করি। তবে গতবারে চারটে পাঞ্জাবি ও দুটো প্যান্ট করতে দিয়ে দেখেছি কলকাতার টেলরের সত্যি কাজ ভালো। স্টিচ দেখলে হ্যাঁ মনে হবে প্রফেশনাল। ফিটিং দারুন। ছেলেদের টেলরদের প্রথম দোষ হচ্ছে, জামা বা পাঞ্জাবির হাতের ঝুল ৪/৫ ইঞ্চি বড় রাখবে। জামার কাটিং একটু ভি হওয়া দরকার অধিকাংশরা ড্রাম কাটিং করে অর্থাৎ জামার ঘের উপর নীচ সমান মাপ । ছাতি ও জামার নীচের ঘের সমান। অবশ্য অনেকে বলবেন ছেলেদের ভুঁড়ির জন্য ওটা করে। কিন্তু কলকাতায় জামা সেলাই করিয়ে এই প্রথম দেখলাম জামা একটু ভি কাটিং করেছে। তারপর অধিকাংশ টেলর জামার হাতের ঘেরের মাপ একটা অ্যাভারেজ মাপে করে ,অর্থাৎ লুজ
করে । আমি জিজ্ঞেস করে দেখেছি, দরজিরা বলে থাকে, বাসে ছেলেদের রড ধরে দাঁড়াতে হয় তখন হাতে টান পড়ে । হয়তো বা পড়ে। তা বলে সব ছেলেরা হাত উপরে তুলে রাখবে বলে এত ঢিলা সহ্য করা যায়না। রেডিমেড কেনা জামা মাপে ছোটবড় হলেও বড় বড় কোম্পানি এইসব বডি ডেকোরাম মেনে ছেলেদের জামা তৈরি করে থাকে । সে কারণেই বড় দোকানের রেডিমেডের একটা প্রলোভন আছে পুরুষের কাছে। আমি আর কিছু করি না করি এবেলার জামা প্যান্ট ওবেলা কখনও পরিনা, করোনা এসে মনে হয় সকলকে এটা শিখিয়েছে। না সকলে এটা করোনা তেও করেনা। আবার কখনও শতচ্ছিন্ন জামাপ্যান্ট পরে মেট্রোগলিতে ক্যামেরার ব্যাটারি কিনতে চলেও গেছি । এইরকম বহুবার দূরে চলে গেছি বলে তো আমার বউ --এই বকে তো সেই বকে। আমি এখন বলেই ফেলেছি এই তো পাড়ায় গিয়েছিলাম ( মেট্রোগলি)। একসময় তো আমাদের এক বন্ধু হাফপ্যান্ট পরে গ্লোবে অ্যাডাল্ট সিনেমা দেখতে গিয়েছিল আমাদের সঙ্গে। তখন প্রবল আপত্তি করেছিল সেকথা তো ভুলিনি। কিছুতেই ঢুকতে দেবেনা। তবে আজেবাজে জামাকাপড় পরে আরও যে দু-চারবার মেট্রোগলিতে যাবো না এই গ্যারান্টি নেই, এসপ্ল্যানেডে ঘুরবো না এই দিব্যি কেউ দিলেও ধোপে টিঁকবে না। যা বলছিলাম। আমার ওই একটাই শখ জামাকাপড় দেখলে জিভ দিয়ে জল গড়ায় সব সময়। গত বছর বড়বাজারের মহাত্মা গান্ধী রোডের দোকানের মাস্টার (ওস্তাগর) আজকের দিনে আগের প্যান্ট ও নতুন আর একটা পিস সহ দুটোই ডেলিভারি দিয়েছিল । ৬/১১/১৯ -এর পরাটাও ঠিক করে দিয়েছিল। প্যান্ট দুটোর বিশেষত্ব হলো সামনে দুটো এক্সট্রা পেস্ট পকেট। ভেতরে সেম সাইজের সমান দুটি গুপ্ত পকেট ও একটা ব্যাক পকেট ও নরম্যাল দুটো সাইড পকেট । সেম কাপড়ের মজবুত মোট সাতটা পকেট। বেড়াতে গেলে এই দুটো প্যান্ট ট্রেনে-প্লেনে সঙ্গী করবো ভেবেছিলাম মনে হয় তা আর হবেনা। দুটো কাপড়ের রঙ সামান্য
হেরফের ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন