⛔ শুভেন্দু অধিকারীর তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে যাওয়ায় কারও আনন্দ, কারও ভয়, কারও হিংসা, কারও মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এটা হবে জানাই ছিল। অধীর চৌধুরী ও আব্দুল মান্নানের মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় কিন্তু শুভেন্দুকে সমর্থন ও তৃণমূল কংগ্রেসের স্পষ্ট বিরোধীতা প্রচারিত হয়েছে। এখন এই সুযোগে কংগ্রেস সিপিএমের সিদ্ধান্ত দূরকম হয়েছে। বামপন্থীরা এই প্রসঙ্গে প্রচারের আলোয় পিছিয়ে পড়েছেন। কারণ তাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়ায় বিজেপিকেই মূল দোষী ভাবা হয়েছে। কংগ্রেস কিন্তু দোষী হিসেবে তৃণমূল দলকে টার্গেট করেছে। এখানে এই দুটি দল আগামী দিনে ফ্রন্ট করে লড়তে মনস্থির করলেও তাদের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ কিন্তু শুভেন্দুকে নিয়ে দুরকম। সত্যিকথা বলতে কি বামপন্থীরা এখানে রীতিমতো অসহায় হয়ে পড়েছে। কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা থেকে এখানে তাদের শুরু করাটা তাই কৃষক আন্দোলনের ওপর অপেক্ষা করতে হবে। এমনও হতে পারে দশটা দলে জায়গা না পেয়ে লক্ষ্মণ শেঠ যেমন আবার দলে ফেরত এসেছে যদি সেইভাবে তারা আরও কিছু ফিরে পায়। তবে দলবদলের বিশ্বাসযোগ্যতা এখন অনেকটা তলানিতে এসে ঠেকেছে। এখানে একমাত্র শুভেন্দু অধিকারীর দল বদল ব্যতিক্রমী হয়ে উঠেছে। দল-বদল হলেও শুভেন্দুর স্টাইল অভিনব তাই তার দলবদল তার পক্ষে প্রচার পেয়েছে সঙ্গে সরকার বিরোধীতা মূল লক্ষ্য হয়েে উঠে এসেছে।
⛔ আসলে কেন্দ্রীয়ভাবে দিল্লিতে কংগ্রেসের মূল শত্রু বিজেপি হলেও পশ্চিমবঙ্গে, কংগ্রেসের মূল শত্রু কিন্তু এখন তৃণমূল কংগ্রেস। কারণ ২০১১ থেকে যে ঝড়ঝাপটা যে ঘর ভাঙানি কংগ্রেসকে সামলাতে হয়েছে যে অশান্তি তাদের সহ্য করতে এখানে হয়েছে তা সিপিএম বিজেপি কাউকেই করতে হয়নি। আসলে কিন্তু দল বদলের কারণে কংগ্রেসের নেতানেত্রীদের মানুষ অবিশ্বাস করতে শিখেছে এই দোষ কিন্তু কংগ্রেসের ঘাড়ে এসে পড়ে গেছে। কংগ্রেসের ভোটে জিতে দল ছেড়ে চলে যাওয়া মোটেই সাধারণ মানুষ বরদাস্ত করতে কখনও পারেনি। তাই পরবর্তীতে কংগ্রেসের ভোট কমে গেছে অথবা তারা ভোট করতেই পারেনি। বাম আমলে কংগ্রেসিরা ভোট দিতে পারতো না বর্তমানেও কংগ্রেসের একই দশা। ১৯৭৭ সাল থেকে কংগ্রেসের ক্যাডাররা মার খেতে খেতে ২০০৬-এ তার অবশিষ্ট অংশ প্রকাশ্যে ও ভোট বাক্সে বিজেপির দিকে চলে গেছে। প্রকৃতপক্ষে কিছু মুসলিম ভোট কংগ্রেসের পক্ষে না থাকলে তাদের আরও দুর্দশা হতো। সেইদিক থেকে এই মূহুর্তটি কংগ্রেস যদি সঠিক অনুধাবন করতে পারে তবে তাদের কিছু লাভ হলেও হতে পারে। তাই বুদ্ধি করেই আব্দুল মান্নান ও অধীর চৌধুরী প্রকাশ্যে তৃণমূলের যত বিরোধীতা করেছে তত বিরোধীতা বিজেপির করেনি এবং শুভেন্দুকে বরং উৎসাহিত করেছে। এই সময় কংগ্রেসের চাল সঠিক না হলে তাদের সমূহ বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হতে পারে। কারণ একদিকে সমস্ত প্রচার শুভেন্দু অধিকারী কেড়ে নিয়েছেন অন্যদিকে এবারে মুসলিম ভোটের ভালো অংশ সংগঠিতভাবে স্থায়ী দলকে বিপর্যস্ত করে দিয়ে নিজেরাই আলাদা আলাদা ভাবে উঠে আসতে পারে ( যদিও এর ভালো খারাপ এখনই কিছু বলা যাবেনা )। তাই সিপিএমে ও কংগ্রেসের একটা ভোট ব্যাঙ্কের ভালো ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এখন হাতছাড়া হিন্দু ভোট পুনুরুদ্ধার করা এই দুটি দলের মহাকর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
⛔ একটা সময় কংগ্রেসের ক্যাডাররা জানতো দুটো দল ( কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস) বোধহয় এক। ২০১১ তে খানিকটা না না করেও প্রণব মুখার্জীর দূরদর্শিতায় কংগ্রেস নিজের সবকিছু ক্ষতি করে জোট করেছিল। সেদিন কংগ্রেস শুভেন্দু অধিকারীর মতো ধুরন্ধরতা দেখাতে পারেনি। সরল সহজ রাজনৈতিক ম্যাপ মেনে নিয়েছিল ও নিজেদের একপ্রকার পথে বসিয়ে দিয়েছিল। অথচ ২০১১ সালে তাদের হাতে কেন্দ্রীয় সরকার ছিল। কংগ্রেসও যে প্রকৃতপক্ষে ১৯৭৭ থেকে ২০১০ পর্যন্ত মার খেয়েছিল এ কথার তুল্যমূল্য বিচারে কংগ্রেস একপ্রকার আত্মহত্যার রাজনীতি করেছিল সেই সময়। তারপর মানস ভূঁইয়া ও অন্যান্যরা দলে দলে কংগ্রেস ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। কেউ কেউ আবার ফিরে এলেও আর তেমন সুবিধা করতে পারেননি।
⛔ বাম আমলে বিরোধীদের যত উত্থান হয়েছে তার অনেকটা হয়েছিল চিটফান্ড কান্ডের জন্য। বলতে গেলে মিডিয়া ও খবর কাগজের জন্য। মূল ধারার খবর কাগজ-- আনন্দবাজার, বর্তমান, সংবাদ প্রতিদিন, দৈনিক স্টেটসম্যান, একদিন ছাড়াও তখন চিটফান্ড-এর অনেকগুলো কাগজ প্রতিদিন সরকারের বিরোধীতা করে খবর ছাপতো। যেমন- আবার যুগান্তর, এখন খবর, ভোরের বার্তা, নিউজ বাংলা, স্ব-ভূমি, সকালবেলা, সান সময়। এছাড়াও আরও দুটি কাগজ বের হতো। উত্তরবঙ্গ সংবাদ ও বর্ধমানের সংবাদ। এছাড়াও মিডিয়া তো ছিলই। একযোগে প্রায় ১৪ টি সংবাদ পত্র ৩ টি সংবাদ চ্যানেল বামেদের বিরোধীতা করেছিল। শুধুমাত্র কোনও দলের ক্রেডিট নয়। সঙ্গে সংবাদপত্র থাকাটা কত জরুরি এই আন্দাজ করা যেতে পারে। বুদ্ধিজীবীদের খবর তারাই পরিবেশন করেছিল। সাংবাদিকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সরবরাহ করেছিল। কিন্তু এই সমগ্র সুবিধা পেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বের জন্য। পরবর্তীতে বুদ্ধিজীবীরা মধুভান্ড ভক্ষণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
⛔ আরও একটি বৃহত্তর সুবিধা বিরোধীরা সেই সময় রেল থেকে পেয়েছিল। মমতা ব্যানার্জীর রেল দপ্তর দিয়েছিল--বিজেপি ও কংগ্রেস এই দুটি সরকারের কাছ থেকে। ওই দুটি আমলের সবকটি কাগজের বিজ্ঞাপনে বাংলার রেলওয়ের উন্নয়ন ছিল একমাত্র হাতিয়ার। প্রতিদিন কাগজে কাগজে বিজ্ঞাপনে বিজ্ঞাপনে ছয়লাপ হয়ে যেত। ফুলপেজ বিজ্ঞাপন। কয়েক বছর ধরে এই প্রচার রেল থেকে কাগজে দেওয়ার ফলে এবং সেই কারণে কাগজগুলিতে উন্নয়নের জোয়ারের প্রতিষ্ঠিত হয় বিজ্ঞাপনে বিজ্ঞাপনে ভরিয়ে রেখেছিল, এটা ছিল পরোক্ষভাবে তৃণমূল দলের প্রচার। এই সমগ্র সুবিধার বৃহত্তম অংশ ছিল বিরোধীদের দিকে। যার ফলে বাম আমলে আর্থিক নয় ছয় যত কম হোকনা কেন, যতই বেশি ছেলেমেয়ে চাকরি পাকনা কেন যত উন্নয়ন করুক না কেন বামফ্রন্ট একেবারে কোনঠাসা হয়ে পড়েছিল। তাদের খুনোখুনি এত বেশি হয়ে গিয়েছিল যা তাদের ভূমিসংস্কারকেও পর্যদুস্ত করে দিয়েছিল। শিক্ষা ও শিক্ষাজীবনের উন্নয়ন বামেরা যা করেছিল শুধুমাত্র প্রাথমিকে ইংরেজি ও পাশফেল এই দুটি কারণে তাদের অবস্থা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। অথচ ইংরেজি ও পাশফেল প্রথা এসেও লেখাপড়ার উন্নয়ন যে কত হয়েছে তা ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরের লক্ষ্মণ শেঠ ও তপন-শুকুর মিলে বামফ্রন্টের দফারফা করে দিয়েছিল। তারমধ্যে বীরভূমে গণহত্যা অন্ওযতম। সিঙ্গুরের টাটাকে বিদায় জানাতে ক্ষতিগ্রস্ত প্রচারে বাঙালি মেতে উঠেছিল। যা এখন হাত কামড়ালে কারও
কিছু করার নেই।
⛔ সূচপুর, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম, কেশপুর,ও আরও অন্যান্য ঘটনায় এগিয়ে আসা বুদ্ধিজীবীরা এম.পি, মন্ত্রী, উচ্চপদ, পেনশন, স্যালারি, গাড়ি, টাকা পয়সায় ফুলেফেঁপে উঠেছেন। গরীব মানুষ, খেটেখাওয়া মানুষ সহ্য করতে পারেনি তারা ক্রমশ সরকার বিরোধীতায় চলে গেছে। অথচ ইংরেজি আনয়ন, পাশফেল প্রথা রাখা, ইলেকট্রিসিটি বিল এইসবের বিরোধীতা ও আনয়নে একমাত্র দল এস ইউ আই সি ও স্টেটসম্যান-এর সদর্থক ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। এই দল অবশ্য বর্তমান সরকারের কাছ থেকে সরে গেছে। বাম আন্দোলনে এদের চিরস্থায়ী একটা বিশাল ভূমিকা থাকলেও এই দল তেমন করে ক্ষমতা দখলে এগিয়ে যায়নি। আন্দোলনমূখীতায় তাই এই দল সব সময় সকলের থেকে পৃথক ভূমিকায় নিজেদের একটা গন্ডির মধ্যে রাখতে পেরেছেন। তবে এই আমলে ছোট বামপন্থী দলগুলো একেবারে উঠে গেছে।
⛔ এখন এইসব নিয়ে জোর বাজার গরম হয়ে উঠেছে। হয়তো তৃণমূলের বিদ্রোহ অংশ এখনও তৃণমূলে থেকেই বিরোধীতা করে যাবে এত তাড়াতাড়ি তারা অনেকেই বিজেপির দিকে যাবে না। গেলেও জোটবদ্ধ হয়ে থাকবে।
⛔ ©® অলোক কুন্ডু
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন