সোমবার, ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

লেনিন ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মধ্যে অমিল : অলোক কুন্ডু

🎯 একই ঘটনার জন্য লেনিন ধিকৃত হয়ে আছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন-- অলোক কুন্ডু

🎯 গত ৩০.৫.২০০৭-এ প্রকাশ কারাত বলেছিলেন, প্রাত্যহিক ব্যবসায় সব্জি প্রক্রিয়াকরণে, রিলায়েন্সকে আটকে রাখা যাবেনা। ফরোয়ার্ড ব্লকের হাতে ছিল কৃষি বিপনন দপ্তর। ফরোয়ার্ড ব্লক নিজেদের স্বার্থেই চেয়েছিল নিত্য প্রয়োজনীয়, কৃষি ও সবজি ব্যবসায় যেন রিলায়েন্স না ঢোকে। সেই সময় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সদিচ্ছার কাছে ১০০ একর জমির দরখাস্ত করেছিলেন মুকেশ আম্বানি, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের জন্য। বুদ্ধবাবুর তখন ২৩০/৩৫- এর সময়, কৃষি আমাদের ভিত্তি শিল্প আমাদের ভবিষ্যত। তারপর নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুর এসে পশ্চিমবঙ্গের সব ওলটপালট করে দিয়ে গেছে। মিডিয়া ও খবর কাগজের সেই চুলচেরা বিশ্লেষকদের কথা কেউ মনে রাখবেন না কিন্তু
যে সব শিল্পী-সাহিত্যিকরা বুদ্ধিজীবী সেজে মহা বিপ্লবী হয়ে উঠেছিলেন তারা অধিকাংশ আজ উইঢিপিতে পরিণত। বামেরাও আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেননি, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় গলদ থাকায়। বামেদের আজ পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতা নেই। তারা সেই রিলায়েন্স, সেই মুকেশ আম্বানির এখন উঠতে বসতে শ্রাদ্ধ করে থাকেন। বামপন্থীরা বলে থাকেন তাদের পার্টিলাইনের কথা। অবশ্য তারা যখন কম্পিউটার আটকে ছিলেন সেই কম্পিউটার আর আজকের কম্পিউটারের কাজের আকাশ পাতাল তফাৎ। আসলে তারা অটোমেশন আটকে ছিলেন। অটোমেশন যদি ব্যবহার হোতো তাহলে ১৯৪৭ থেকে ডেক্সটপ কম্পিউটার আসা পর্যন্ত কয়েক কোটি ভুয়ো সরকারি কর্মচারী, শিক্ষক, শ্রমিকের বেতন
সরকার ও সেই সংস্থাগুলিকে গুণতে হোতো না।

•যখন যুদ্ধ বিদ্ধস্ত রাশিয়ায় খাবার নেই অনটনে ও শিল্পহীন রাশিয়া একপ্রকার ধুঁকছে। তখন লেনিনের কাছে আমেরিকান এক ব্যবসায়ী শিল্প স্থাপনের প্রস্তাব করেছিলেন শুধুমাত্র রাশিয়াকে গড়ে তুলতে, পুঁজির যোগান থেকে কয়েকবছর না লাভালাভের সেই প্রস্তাব লেনিন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন শুধুমাত্র পুঁজিবাদ আটকাতে। কিন্তু লেনিন সেই খাদ্য ও শিল্পের অনটনের সময় এবং মহা দৈন্যতায় আমেরিকান পুঁজিবাদকে ঢুকতে না দিয়ে আসলে ধিকৃত হয়েছিলেন। লেনিনের সেই মতবাদকে বড় করে দেখার জন্য তৎকালীন বৃহত্তর রাশিয়ানরা প্রচুর দুঃখ কষ্ট ভোগ করেছিলেন। লেনিন আদর্শ বিচ্যুত হননি ঠিকই কিন্তু লেনিনের ধারণাকে ভ্রান্ত প্রমাণিত করতে সেই ঘটনা নিয়েই একাধিক বেস্টসেলার বই বেরিয়েছে। কিন্তু এই ধারণার বাইরে বেরিয়ে বুদ্ধবাবু ২০০৬-এ রিলায়েন্স, টাটা, মুকেশ আম্বানির দ্বারস্থ হয়েছিলেন। সেই সময় বামফ্রন্টের অনেক শরিক এইসব কাজে বাধা দিয়েছিলেন যাদের আজ একখানা এম.এল.এ জিতিয়ে আনার শক্তি নেই। পতাকায় যত আরএসপি, ফরোয়ার্ড ব্লক দেখা যায় বাস্তবে তাদের ১৪ দলের সাইনবোর্ড ছাড়া অনেকের আজ কিছু নেই যদিও পশ্চিমবঙ্গের বাইরে সিপিআই, সিপিএম ও ফরোয়ার্ড ব্লকের কিছু বাড়বাড়ন্ত হয়েছে। কিন্তু সেখানেও পার্টি ধরা আছে কলকারখানার ইউনিয়ন ও খেটেখাওয়া কৃষক পরিবারের ওপর নির্ভর করে যা প্রায় পশ্চিমবঙ্গ থেকে উঠে গেছে। পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থী বলতে- ছাত্র, অধ্যাপক, শিক্ষক শ্রেণির কাছে এখনও দাঁড়িয়ে আছে। পশ্চিমবঙ্গের গ্রাম-গঞ্জ থেকে কারখানায় পর্যন্ত, শক্তিশালীতায় এখন সেইসব দখল করেছে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি। যে কোটিপতি কৃষকদের বিরুদ্ধে এককালে বামেদের দীর্ঘ দিনের আন্দোলন ছিল এখন সেইসব ট্রাক্টরওলা ঋণ পরিশোধ না করা, ঋণখেলাপি কৃষকদের সমর্থনে খেটে খাওয়া কৃষকদের সামিল করে দিয়েছেন তারা ও কৃষিবিল প্রত্যাহারে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছেন। ক্ষমতায় থাকলে একরকম নীতি আর ক্ষমতার বাইরে থাকলে আর একরকম নীতি সঠিক কিনা ভবিষ্যত বিচার করতে করতে দেশ গোল্লায় যাবে কিনা সেটাই এখন দেখার। তবে নন্দীগ্রাম আর সিঙ্গুর যে শিল্প না নিয়ে যে শতাব্দীর সেরা ভুল করেছিল তা সকলেই হাড়ে হাড়ে বুঝতে পারছেন। যা কখনও ক্ষমার যোগ্য হবেনা। রাশিয়ার দুঃসময়ে লেনিন যা করেছিলেন সেই বিপরীত আদর্শে বুদ্ধবাবু নিরুপম সেনরা গিয়েও ফিরে আসতে পারেননি। রাশিয়া টুকরো টুকরো হয়ে গেছে আজ। নন্দীগ্রাম ও সিঙ্গুর বুদ্ধবাবুকে পুরস্কার দেবেনা হয়তো। একই ঘটনার জন্য লেনিন ধিকৃত হয়ে আছেন হয়তো বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। ©® অলোক কুন্ডু 🎯🎯 ( ছবিটি একটি প্রতীক) 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...