শুক্রবার, ২০ আগস্ট, ২০২১

লক্ষ্মীর ভান্ডারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় / অলোক কুন্ডু অলোক কুন্ডু

লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে, একটি প্রবলেম হতে পারে তা হলো যাদের বয়সের কোনও শংসাপত্রই নেই। কেবলমাত্র ভোটার কার্ড বা রেশন কার্ডের জন্মতারিখ দিয়ে এতদিন চলে যাচ্ছিল। এখনও বহু মানুষ আধার কার্ডে জন্মতারিখ নথিভুক্ত করেননি, এই ধরনের জটিলতার জন্য। এ ছাড়া আর এক ধরনের জন্মতারিখ নিয়ে জটিলতা আছে যা গেঁতোমির জন্য সংশোধন করা হয়নি। কারণ আধার কার্ডের জন্ম তারিখের সঙ্গে তার ভোটার কার্ড ও অন্যান্য জন্মতারিখের কোনও মিল নেই। এই কারণে একবছর বা ছয়মাসের তফাৎ থেকে গেছে তাদের নিজের বয়সের। আমি বলবো সবসময় আধার কার্ডের জন্মতারিখ মেনে নিলে সমস্যার সহজ সমাধান হয়ে যাবে। কারও জন্মতারিখ নেই তার ক্ষেত্রে অ্যাফিডেভিড নিয়ে সমস্যা মেটানো যেতে পারে। টাকার লোভে কেউ যদি দু তিন জায়গায় দু তিন রকম জন্মতারিখ রাখেন, তাহলে ভবিষ্যতে আপনার সমূহ ক্ষতি করতে পারে। অ্যাফিডিভিট সব জায়গায় মানতে না চাওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে, তাই কার্পেট জিজ্ঞাসা করে নেওয়া ভালো। 

পশ্চিমবঙ্গ লক্ষ্মী ভাণ্ডার, প্রকল্পের আওতায় আবেদন করার পদ্ধতি কি? লক্ষ্মীর ভান্ডারের আবেদনটি নিয়ে বাড়িতে আনার পর, সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি অর্থাৎ নিজের কাছে থাকা কাগজপত্রগুলি সংগ্রহ করতে হবে এবং এরপর লক্ষ্মীর ভাান্ডারের আবেদন পত্রের অধীনে থাকা সমস্ত প্রয়োজনীয় বিবরণ পূরণ করা শুরু করুন। দুয়ারে সরকার থেকে দেওয়া নিবন্ধন নম্বর টি পূরণ করুন-- সবার আগে। আবেদন পত্র সংগ্রহ করার দিনে এই নম্বর ফরমে লিখে দিতে পারে, আগে দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প হয়ে তবেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ক্যাম্পে যেতে পারবেন,  এই ব্যবস্থা সকলেই জানেন (রেজিস্ট্রেশন করুন)।

স্বাস্থসাথী কার্ডের নম্বরটি ফরমে লাগবে। আগে থেকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড না থাকলে, এই আওতার অধীনে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড প্রয়োজন হবে। তাই এই কার্ড না থাকলেও আবেদন করা যাবে। ফরম্ জমা দিয়ে আধিকারিককে জানাবেন আপনার স্বাস্থ্য সাথী কার্ড হয়নি। তখন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড হবে এবং ততক্ষণ আপনার লক্ষ্মীর ভান্ডারের আবেদনটি অস্থায়ী ভাবে জমা হবে। কিন্তু স্বাস্থ্যসাথী কার্ড না থাকলেও লক্ষ্মীর ভান্ডারে আবেদন জমা করা যাবে অথবা স্থানীয় প্রশাসন এই বিষয়ে সাহায্য করতে বাধ্য থাকবেন। এই বিষয়ে নিয়ম সরকার প্রতিনিয়ত আপডেট করে সংশোধন করছে।

আবেদনকারীকে তার দেওয়া সমস্তরকম জেরক্স কপিতে নিজেকেই স্বাক্ষর করতে হবে। ফরমেও স্বাক্ষর করতে হবে। স্বাক্ষর না করতে পারলে টিপসই দিতে হবে। জেরক্স কাগজের নীচের সাদা অংশে স্বাক্ষর করবেন। 

ফরমে লাগবেঃ পরিবারের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নম্বর। যাদের নেই ফাঁকা থাকবে। আধার নং। আবেদনকারীর। মোবাইল নম্বর। ই-মেইল আইডি না থাকলে, দেওয়ার দরকার নেই। জন্ম তারিখ। বাবার নাম। মায়ের নাম। স্বামীর নাম ( স্পাউস)। ঠিকানা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণী। এই সমস্ত বিবরণ পূরণ করার পর এখন আপনাকে স্বয়ং ঘোষণা ফর্মমটি ( তৃতীয় ও শেষ পাতা) পূরণ করতে হবে। যাতে বলা আছে সবকিছু তথ্য আপনি সঠিক ও সত্য দিচ্ছেন। সঙ্গে একটি ক্যান্সেল লেখা চেকের ফাঁকা পাতা দিলে ভাল হয়, যেখানে স্বাক্ষরের জায়গাটি ক্রস করে দেবেন, চেকের কোথাও সই-স্বাক্ষর করবেন না। একটি ছবি ফরমে মেরে দেবেন আর একটি ছবি ফরমের বামদিকে স্টেপল্ করে দিন। এইসব হলে আসল ফরম্যাটটি সাবধানে পূরণ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে জমা দিয়ে দিন।

এইবার আপনাদের কয়েকটি কথা পরিষ্কার করে বলছি। ফরম্ পূরণের সময় ধৈর্য ধরে লিখুন, ধীরে ধীরে লিখুন অথবা কাউকে লিখে দিতে বলুন। ফরম্ যেদিন জমা হবে সেইদিন আপনার ফোনে এস.এম.এস আসবে। তাই
ফোনের মেসেজ বাক্স বা ইনবক্স পরিষ্কার করুন।
(১). তাই মেসেজ ভর্তি থাকলে, লক্ষ্মীর ভান্ডার থেকে নোটিফিকেশন পাবেন না। (২). যেদিন ফরম্ জমা দেবেন, সেই দিনই কিন্তু এস.এম.এস নাও পেতে পারেন, কিন্তু ফরম্ জমা হলে এস.এম.এস পাওয়ার কথা। কিন্তু হাজার হাজার ফরম্ নিয়ে মিলিয়ে দেখে নিয়ে কম্পিউটারে তুলতে বহু সময় লাগার কথা, এই কারণে দেরি হতে পারে। (৩).ফরমের প্রথমেই যদি দুয়ারে সরকারের দেওয়া নম্বরটি আপনি ভুল লেখেন অথবা ক্যাম্প থেকে ভুল লিখে দেয় তবে সমস্যা হবে। (৪). ফরমের সঙ্গে দুটি ছবি দেওয়ার কথা, একটি ছবি আঠা দিয়ে ডানদিকের উপরের বক্সে চিটিয়ে দেওয়ার কথা। দ্বিতীয় ছবিটি ফরমের সঙ্গে ভালো করে স্টেপল করে বাম দিকের উপরে না দিয়ে থাকলে হারিয়ে যেতে পারে, সে কারণে এস.এম.এস নাও আসতে পারে। (৫). ফরমের সঙ্গে যে সকল জেরক্স কপি দিয়েছেন, তা বারংবার আসল কপির সঙ্গে মিলিয়ে না নিলে এবং ভুল করে বাড়ির অন্য কারও অথবা নিজের আগের ভুল হওয়া কোনও দ্বিতীয় আধার কার্ড বা অন্য কাগজ জমা দেওয়া হলে এস.এম.এস না আসতেও পারে। (৬). জেরক্স করা কাগজগুলোর মধ্যে ভুল করে কোথাও সই/ স্বাক্ষর করে না দিলে এস.এম.এস না আসতেও পারে। (৭). সব থেকে বড় ভুল হতে পারে যাদের স্কুল-কলেজের শংসাপত্র নেই বা বার্থ সার্টিফিকেট নেই এবং যার ফলে জন্ম তারিখের গন্ডগোল থাকলে এস.এম.এস না আসতেও পারে। তাই যাদের এরকম আছে তারা ভুলেও দুরকম জন্ম তারিখ লেখা কাগজপত্র জমা দেবেন না। এইক্ষেত্রে যদি ভুলও থাকে তবে আধার কার্ডের জন্মতারিখ জমা দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আধার কার্ডে জন্মতারিখ না থাকলে ভোটার কার্ড দিন কিন্তু এই প্রসঙ্গে উল্টোপাল্টা কিছু জমা দিয়ে ফেললে এস.এম.এস আসবে না। (৮). ব্যাঙ্কের যে অ্যাকাউন্টটা চালু আছে সেইরকম কোনও অ্যাকাউন্ট দিয়েছিলেন কিন্তু আই.এফ.এস নম্বরটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে মেলেনি তাতেও এস.এম.এস আসবে না। তাই সঙ্গে একটি ব্ল্যাঙ্ক চেক দিতে হবে যেটিতে সই/ স্বাক্ষর কখনই করবেন না। ক্যানসেল বলে বড় বড় অক্ষরে চেকের উপর লিখে দেবেন। নতুন অ্যাকাউন্ট হলে, এখনই চেক বই পাবেন না, তাই
পাশ বইটি ভালো করে জেরক্স করুন এবং ওইখানে আই.এফ.এস কোড না লেখা থাকলে আপনি ব্যাঙ্ক থেকে জেনে লিখুন। আই.এফ.এস কোডটি সঠিক ছাড়া আপনার ফরম্ কম্পিউটারে ঢুকবে না, তাই এস এম এসও আসবে না। (৯).সাদাকালো ছবি দিলে এস এম এস নাও আসতে পারে। (১০) অঙ্গীকার পত্রে স্বাক্ষর না করলে এস.এম.এস না আসতেও পারে।
(১১). স্পাউস মানে স্বামী এই কলমটি ভুল লিখলে এস.এম.এস না আসতেও পারে। (১২). ফরমে তারকা চিহ্নিত ঘর পূরণ না করে ফাঁকা রেখে দিলে এস.এম.এস নাও আসতেও পারে। ফরমের উপরে দুয়ারে সরকারের দেওয়া কোনও নম্বর না থাকলে এস.এম.এস নাও আসতে পারে। স্পষ্ট করে ফরম্ পূরণ না করলে ( ক্যাপিটাল) এস.এম.এস না আসতেও পারে। 

সমস্ত কিছু বলার পরও একটু রাজনৈতিক আলোচনা সামান্য করা দরকার। যখন লক্ষ্মীর ভান্ডার ঘোষণা হ'ল তখন কিন্তু আদেশের মধ্যে ছিল প্রতিটি পরিবারের একজন পাবেন। ১২.৮.২১-এ মুখ্যমন্ত্রী দ্বিতীয়বার সাংবাদিক সম্মেলনেও সেই কথা বললেনও। তারপরই বিজেপির পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করা হ'ল এবং শুভেন্দু অধিকারী বললেন সন্ধ্যায়। তিনি বললেন তৃণমূল কংগ্রেসের ইস্তাহারে লিখিত আছে সকল মহিলাদের দেওয়ার কথা। ১৮.৮.২১-এ মুখ্যমন্ত্রী পুণরায় ঘোষণা করলেন সকলেই পাবেন। এখন এই সকলের মধ্যে কারা পাবেন আর কারা পাবেন না নতুন করে যদি কিছু আইনি ব্যাখ্যা সরকার দেয় তবে বিরোধীপক্ষ নিশ্চিত মামলাও করতে পারে। তাই ধরে নিতে হবে, এখন সকলেই পাবেন। লক্ষ্মীর ভান্ডারের মোট খরচের বাজেট বরাদ্দ এখন তাই বাড়াতে হবে। অলোক কুন্ডু ©®। 




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...