সোমবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২০

সৌমিত্র প্রসঙ্গ: হাওড়া ও অন্যান্য•• অলোক কুন্ডু


⛔ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় প্রসঙ্গ: হাওড়া ও অন্যান্য • অলোক কুন্ডু

⛔ আমাদের হাওড়ায় স্কুল কলেজের কিছুটা সময় কেটেছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। কৃষ্ণনগর থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে পিতার চাকরিসূত্রে হাওড়ায় এসে পৌঁছন তিনি। উল্লেখ্য হাওড়ার ভূমিপুত্র পরবর্তীতে বিখ্যাত পেন্টার, রবীন মন্ডল ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বাল্যবন্ধু। বলা ভালো যে হাওড়া-ময়দানেই রবীন দার সঙ্গে একদিন আলাপ হয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। রবীন দা, গতবছর প্রয়াত হন। রবীন দার মুখে শুনেছি দুটি পৃথক স্কুলের ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও দুজনের মধ্যে একটা সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। পরে অবশ্য কলেজ লাইফ থেকে সেই সখ্যতা আরও বেড়েছিল। প্রথমদিকে রবীন দা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নাটকের মঞ্চ ভাবনা এঁকে দিয়েছিলেন। যাইহোক রবীন মন্ডল দা তখন ছবি আঁকা নিয়ে পড়ছেন আর্ট কলেজে। সৌমিত্র সিটি কলেজে। রবীন দা প্রচ্ছদ করে দেন বন্ধুদের আর্ট কলেজের নামী ছাত্র তখন তিনি, রবীন্দ্রনাথ মন্ডলকে তখন অনেকে চেনেন। সৌমিত্র কবিতা লিখতে শুরু করেছেন। কিন্তু হাওড়ার সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় (প্রাক্তন অধ্যাপক চারুচন্দ্র কলেজ, ও নটরঙ্গ থিয়েটার গ্রুপের পরিচালক) এবং সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যে নাটকের জন্য আর একটু বেশি বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। লালু ও পলুর বন্ধুত্ব আরও বেশি করে জমে উঠেছে কারণ দুজনেই কলকাতায় পড়াশোনা করেন এবং নাটক ভালোবাসেন। লালুদা কিছুটা সিনিয়র। সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়দের 'যুবসভা ক্লাব'-এ তখন নাটকের রেওয়াজ হচ্ছে সেখানে আছেন স্বয়ং সৌমিত্র। সঙ্গে ভগবান গাঙ্গুলী লেনের অমিয়কান্তি ব্যানার্জী ও শঙ্কর ব্যানার্জী। বিবেকানন্দ ইন্সটিটিউশনের ( শিক্ষক ) বিশ্বনাথ দত্ত। আড্ডাখানার স্থান সন্ধ্যাবাজারের চায়ের দোকানে। এরা সকলেই নাটকের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন পরবর্তীতে। 

•এখানে প্রসঙ্গত একটু অন্য আলোচনায় আসি। স্বাধীনতার আগে হাওড়ায় সুভাষচন্দ্র এসে, নীলমণি মল্লিক লেন ও এম সি ঘোষ লেনে ফরওয়ার্ড ব্লকের যে ভিত খুঁড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন তা হাওড়ায় তখনও অক্ষুন্ন আছে। ফরওয়ার্ডব্লক আশ্রিত হাওড়া সঙ্ঘ ক্লাব তখন হাওড়ার সংস্কৃতির পিঠস্থান। তখন হাওড়ায় কংগ্রেসের প্রাদেশিক বিশাল নেতা বিজয়ানন্দ চট্টোপাধ্যায় আছেন। এদতসত্ত্বেও কিছুমাত্র নড়ানো যায়নি হাওড়া সঙ্ঘের সদস্যদের। তাই পাশেই কংগ্রেস তৈরি করলো হাওড়া উদার সঙ্ঘ ক্লাব। নাট্যকার তখন যুবক জগমোহন মজুমদার সেখানে নাটক করা শুরু করলেন তিনি, কংগ্রেসের ব কলমে --" ঠাকুর দা। " নাটক মহলা চলছে তাঁদের। এদিকে হাওড়ায় তখন 'হাওড়া সঙ্ঘ' উঠতি যুবকদের কাছে সংস্কৃতির পুরোযায়ী হয়ে উঠেছে, প্রেরণাস্বরূপ। এর মাঝে রাজনৈতিক দলের ছত্রাছায়ায় না থেকে সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়রা পঞ্চাননতলায় নতুন নাটকের মহলা শুরু করলো রবীন মন্ডল পার্বতী মুখোপাধ্যায় ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে ( রবীন মন্ডলের মঞ্চ ভাবনা), তাদের নাটকের নাম --"সধবার একাদশী। " সম্ভবত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এখানেই প্রথম অভিনয় করেন। এই দলের পার্বতী মুখোপাধ্যায় ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় দুজনকেই দেখতে তখন উত্তমকুমার একেবারে। পার্বতী দাকে তো আরও সুন্দর দেখতে। বহু আগেই শুনেছি জগমোহন মজুমদারদের সেই নাটকের মহলাকক্ষে, হাওড়া উদার সঙ্ঘ ক্লাবে এলেন শুভেচ্ছা জানাতে রবীন মন্ডল, সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়রা। তখন থেকেই রবীন মন্ডলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা শুরু হলো জগমোহন মজুমদারের। পরে রবীন মন্ডল এঁকে দিলেন নটনাট্যমের লোগো এবং মঞ্চ ভাবনা। 

•প্রকৃতপক্ষে, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পিতার ওকালতি ছেড়ে হাওড়ায় রেলের বড় চাকরি নেওয়ার কারণে ষষ্ঠ শ্রেণিতে এসে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় হাওড়া জেলা স্কুলে ভর্তি হন এবং এখানেই স্কুল জীবন শেষ করেন। বোর্ডের পরীক্ষার সিট পড়েছিল আজকের অক্ষয় শিক্ষায়তনে অর্থাৎ তখনকার হাওড়া রিপন স্কুলে। তিনি হাওড়া থেকেই সিটি কলেজে পড়তে শুরু করেন। হাওড়া জেলা স্কুলের ১৫০ বর্ষ উদযাপনের সময় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। ২০১১-তেও স্কুলে এসেছিলেন আবৃত্তি করে গেছেন প্রাক্তনীদের অনুষ্ঠানে জেলা স্কুলে। 
অনেকে বলেন সালকিয়ার,গোলাবাড়ির রেলের নূন গোলায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পিতা অফিসার হিসেবে চাকরি করতেন এবং নূন গোলায় সৌমিত্ররা
থাকতেন। তবে এই প্রতিবেদক শুনেছিলেন তিনি থাকতেন হাওড়ার ফাঁসিতলার কলভিন কোর্টে রেলের অফিসার্স কোয়ার্টারে। কারণ স্কুল বয়েসেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় পিতার সঙ্গে কালীবাবু বাজার আসতেন। 
তাঁর গৃহশিক্ষক ছিলেন তৎকালীন রিপন স্কুলের বিজ্ঞানের শিক্ষক ( বর্তমান অক্ষয় শিক্ষায়তনে 
পাশে উনি থাকতেন) মাধবকিশোর চক্রবর্তী। 

•আগেই বলেছি, হাওড়ার পঞ্চাননতলা রোডের নাট্যকার অধ্যাপক,সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় ( নটরঙ্গের ফজল আলী আসছে-এর ডিরেক্টর) ছিলেন কাছের বন্ধু। রামকৃষ্ণপুরে পুরনো বাটার দোকানের কাছে একটি চায়ের দোকানে যুবসভার আড্ডা বসতো। দুজনে মিলে শিশির ভাদুড়ীর নাটক দেখতে যেতেন। সুশান্ত দা সৌমিত্রর থেকে কিঞ্চিৎ বড় ছিলেন। এখান থেকেই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় শিশির ভাদুড়ীর অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং এম এ পঞ্চম বর্ষে পড়ার সময় তাঁর সঙ্গে দেখাও করেছিলেন। যাইহোক হাওড়ার এম. সি. ঘোষ লেনে পার্বতী মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতেও ছোটখাটো আড্ডা ছিল তাঁদের। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় হাওড়ার অন্নপূর্ণা ব্যায়াম সমিতির কাছে রবীন-দার বাড়ি, পঞ্চাননতলা রোডে লালুদার বাড়ি, গোরাবাজারে পার্বতী দার বাড়িতে আকচার এসেছেন ও গেছেন। লক্ষ্মণ দাস লেনের মুখে পঞ্চাননতলা রোডে সামান্য কিছু দিন বসবাস করে গেছেন। এমনকি সালকিয়ায় শ্বশুর বাড়ি। অনেকে তাই বলেন সালকিয়ায় থাকার সময়ই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর আলাপ হয়। 

•সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সবে এম.এ পাশ করেছেন। ব্যাটমিন্টন খেলোয়াড় সালকিয়ার একটি মেয়ের সঙ্গে তাঁর প্রেম শুরু হয়েছে। তখন হাওড়ায় আর থাকেন না। শিশির ভাদুড়ীর কাছে যেতে শুরু করেছেন এম. এ-শেষ বছর থেকে। বাংলায় এম. এ করছে শুনে শিশির ভাদুড়ী বললেন ,"বা বেশ।" এতদিন বাংলায় এম.এ-কে সকলে যাচ্ছেতাই করতো, সৌমিত্র মনে মনে ভাবলেন এই মানুষটার বলাতে ভরসা পাওয়া গেল। এতদিনে একজন সঠিক মানুষের দেখা পেলেন। সেই সময় একটা চাকরির জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন সৌমিত্র। আকাশবাণীর একটি ঘোষকের পদে ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে দেখা হলো অখ্যাত এবং থিয়েটারের সাইডরোলের অভিনেতা অনিল চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। হাজার জনের মধ্যে প্রথম হলেন অনিল চট্টোপাধ্যায় দ্বিতীয় হলেন সৌমিত্র। চাকরি হলো অনিলের। সেই যে ইডেন গার্ডেন্সের ফুটপাতে সিগারেট খেতে খেতে অনিল চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলাপ হলো সেই আলাপ চলেছিল অনিল চট্টোপাধ্যায়ের আমৃত্যু পর্যন্ত। পরে অনিল চট্টোপাধ্যায় টালিগঞ্জে যোগ দিয়েছিলেন সহকারী পরিচালক হিসেবে। পরে নায়ক ও অভিনেতা। অনিল চট্টোপাধ্যায়ের সম্পর্কে ভূয়সী প্রশংসা করে গেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। এই প্রতিবেদক একবার অনিল চট্টোপাধ্যায়ের একটি সেমিনারে উপস্থিত হয়েছিলেন তাতে অনিল চট্টোপাধ্যায়, মৃণাল সেন ও তপন সিংহকেই বাংলা সিনেমার আদর্শ পরিচালক বলেছিলেন। বলেছিলেন বাংলা সিনেমার উন্নতধারার এই দুই পরিচালক বাঙালি জীবনের কথা বুঝতে পেরেছিলেন। 

•পরবর্তীকালে শিবপুরে একটি ঘরোয়া আসরে রবীনদাকে যখন সংবর্ধনা দেওয়া হলো তখন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সেই ঘরোয়া আসরে দুজনের সখ্যতার গল্প ও ডালমিয়া পার্কে ঘাসের উপর শুয়ে হাওড়ায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কৈশোর ও কলেজর লাইফের কথা ও গল্প  বলেছিলেন। কেউ কেউ বলেন তিনি থাকতেন হাওড়ার ফাঁসিতলার কলভিন কোর্টের রেলের অফিসার্স কম্পাউন্ডে ( অনেকে বলেন তিনি গোলাবাড়ি থানার কাছে নূনগোলা কোয়ার্টারে থাকতেন, যেহেতু তাঁর পিতা রেলের নূন গোলার বড় অফিসার ছিলেন)। চার্চ রোড, পুরনো হাওড়া ময়দান, পঞ্চাননতলা রোড, রামকৃষ্ণপুরে হেঁটে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আমাদের হাওড়ার ধুলোয় ঘুরে বেড়িয়েছেন এটা ভাবলেই আশ্চর্য হতে হয়। টাউন হলেও উপস্থিত হয়েছেন তখনকার দিনের সখের নাটকে। কলকাতায় চলে যাওয়ার আগে অন্ততপক্ষে ৭ বছর তিনি হাওড়ায় থেকে গেছেন খানিকটা অলক্ষ্যে। অনেক পরেও মৃণাল সেনের বাড়ির ঘরোয়া আড্ডায় কিংবা ক্যালকাটা পেন্টার্সে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও রবীনদার দেখা হতো। রবীন দার ছবি দেখতেও এসেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। রবীনদাও কয়লাঘাটে, রেলের অফিস থেকে সোজা বেরিয়ে কলকাতা করপোরেশন থেকে পার্বতী মুখোপাধ্যায় ও সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সিনেমা দেখতে। বহু আসরে দু-বন্ধু বোঝাপড়া করে উপস্থিত হয়েছেন কখনও। বিখ্যাত কলা সমালোচক ও কলকাতার প্রথম বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলনের অন্যতম উদ্যোক্তা অহিভূষণ মালিক রবীন দাকে বিশেষ স্নেহ করতেন। আনন্দবাজারে অহিভূষণ মালিকের টেবিলের চারপাশে বসে আড্ডা দিয়েছেন রবীন দা, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় ও পার্বতী মুখোপাধ্যায়। একদিন রবীন দা ছবি আঁকছেন আমি এই অধম, বসে তাই দেখতে দেখতে হাওড়ার পঞ্চাননতলার বাড়িতে সেইসব শুনছি। আমি পার্বতী মুখোপাধ্যায়ের স্নেহভাজন ছিলাম। উনি কংগ্রেস করতেন ওনার স্ত্রী ছিলেন ব্যাঁটরা বিবিপিসি স্কুলের হেডমিস্ট্রেস। পার্বতী দা কলকাতা করপোরেশনের বড় অফিসার ছিলেন এবং ছবি আঁকার একজন বিদগ্ধ আলোচক ছিলেন। পরে গড়িয়াহাটে ফ্ল্যাট করে পার্বতী দা চলে যান এবং লেক মার্কেটের সামনে আর্ট গ্যালারি করেন। 

•হাওড়ার মেথর ইউনিয়নের লিডার অর্ধেন্দুশেখর বোসও ছিলেন কলকাতার পুরনো, বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলনের অন্যতম উদ্যোক্তা। আবার হাওড়ার 'যুবসভা'রও তিনি ছিলেন অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। পুরনো বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলন বলতে গেলে একসময় ছিল সংস্কৃতির চাঁদের হাট আর এখানেই অহিভূষণ মালিকের হাতেই ছিল শিল্পীদের উঠে আসার সিঁড়ি। সহকারী,পার্বতী মুখোপাধ্যায় এখানেই থেকেই হয়েছিলেন কলা সমালোচক, রবীন দা পেয়েছিলেন শিল্পীর উত্তরণ, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নাটকে হাতেখড়ি। হাওড়ার অর্ধেন্দু বোস ও আনন্দবাজারের অহিভূষণ মালিকের হাত ধরে একপ্রকার সংস্কৃতির উত্থান হয়েছিল বলা যায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ও ছিলেন তার আর এক সহযোগী। আজ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণে সেই যুগের পরিসমাপ্তি ঘটলো। তবে শুধুমাত্র জগমোহন মজুমদার এখনও বেঁচে আছেন, তাঁর আরও থাকার দরকার। 

•সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অবশ্য অনেকবার বলেছেন ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটে যখন কবি তরুণ সান্যাল, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়রা সত্যজিৎ রায়কে প্রথম নাগরিক সংবর্ধনা দিলেন, তখনও সত্যজিৎ রায়ের কাছে পর্যন্ত যেতে পারেননি। চেনার কথা তো দুর। এমনকি কফি হাউসে সুনীল শরৎ শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের টেবিলে তার কোনও স্থান ছিলনা। কফি হাউসে যাওয়ার জন্য কোনোরকমে বন্ধু নির্মাল্য আচার্যর মাধ্যমে একটা কার্ড জোগাড় করতে পেরেছিলেন। তখনও তো সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও নির্মাল্য আচার্য সম্পাদিত 
"এক্ষণ "-এর ভাবনা আসেনি। পরে যখন এক্ষণ প্রকাশিত হয় তার প্রতিটি সংখ্যার প্রচ্ছদ করেন সত্যজিৎ রায়। সত্যজিৎ রায়ের প্রয়াণের পর নির্মাল্য আচার্যর কাছে সত্যজিত রায়ের অনেক কিছু আসল আর্টওয়ার্ক ও পান্ডুলিপি থেকে যাওয়ায় পুলিশ যখন নির্মাল্য আচার্যর বাড়ি রেইড করে তখন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সেই ঝামেলায় থাকতে চাননি, কারণ নির্মাল্য আচার্য, সত্যজিৎ রায়ের কাছে পৌঁছনোর সেতু হলেও রায় পরিবারের জন্য আজ তিনি সৌমিত্র হতে পেরেছেন। এমনকি তিনি মাণিকদা বললেও নিজেকে পুত্রই মনে করতেন। তাই সত্যজিৎ রায়ের মরদেহ বাড়ি থেকে যখন বের করে নিয়ে আসা হয় নন্দনের পথে, তখন সিনে সেন্ট্রালের ছেলেদের সঙ্গে একই লরিতে একমাত্র ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সেই কাঁদো কাঁদো মুখের ছবি ইতিপূর্বে আমি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলাম। 

• এবার একটা আমার ব্যক্তিগত একটা আনন্দের কথা। সেটা হলো আই. এ বি. এ পড়ার সময় তিনি যে হাওড়ার পঞ্চাননতলায় থাকতেন এবং রোজ যে কালীবাবু বাজারে বাজার করতে আসতেন সেকথা সৌমিত্র চ্যাটার্জী লিখে ছিলেন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ভারতের ৭ জন অভিনেতার মধ্যে তুলসী চক্রবর্তী সম্পর্কেও লিখে গেছেন। তখন আক্ষেপ করে বলেছিলেন কালীবাবুবাজারে বাজার করেছি অথচ অত কাছে থেকেও তখন এত বড় মাপের অভিনেতা যে থাকতেন তখন আলাপ করতে পারিনি। ( সূত্র সৌমিত্র চ্যাটার্জীর লেখালেখি) 

•সাংবাদিক #সুপ্রকাশকে ধন্যবাদ  হাওড়ার কিছু সময় #এইসময়ে (১৬.১১.২০) তুলে ধরার জন্য। আমি এখানে আরও একটু সংযোজন করবো সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নিরিক্ষা সম্পর্কে। হাওড়ার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে সব থেকে ভালো তথ্য দিতে পারতেন অধ্যাপক সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় ও শিল্পী রবীন মন্ডল। সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবনে মোড় ঘুরিয়ে দেয়। উনি সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের থেকে কিঞ্চিৎ বড় ছিলেন এবং উনিই সৌমিত্রকে নিয়ে শিশির ভাদুড়ীর নাটক দেখতে যেতেন। সেই সময় সালকিয়ার ব্যাটমিন্টন খেলোয়াড় দীপা চ্যাটার্জীর সঙ্গে সৌমিত্রর প্রেম হয় নাটকের সুবাদে। অনেকে বলেন সালকিয়ার গোলাবাড়ির রেলের নূনগোলার অফিসার ছিলেন তাঁর পিতা, তাই হয়তো দুজনের দেখাসাক্ষাৎ হয়ে থাকতে পারে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় হাওড়ায় মিশতেন অহিভূষণ মালিকের ভাবশিষ্য পার্বতী মুখোপাধ্যায়, ভারত বিখ্যাত পেন্টার রবীন মন্ডল ও কংগ্রেস নেতা বিজয়ানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের ভাই বিমল চট্টোপাধ্যায়ের জামাই চারুচন্দ্র কলেজের অধ্যাপক সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। ওঁনাদের আড্ডা ছিল রামকৃষ্ণপুর সন্ধ্যা বাজারে। এই থেকে বোঝা যায় তখন থেকেই তাঁর মেলামেশা পরবর্তীতে যারা বিখ্যাত হয়েছিলেন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মেলামেশা ছিল সংস্কৃতির সঙ্গে। পরবর্তীতে একমাত্র শিল্পী রবীন মন্ডলের সঙ্গেই তাঁর যোগাযোগ ছিল। তিনি নিজে বলেছেন আমি স্কুলে পড়ার সময় থেকে কালীবাবুবাজারে যেতাম কিন্তু আলাপ হয়নি অত বড় অভিনেতা তুলসী চক্রবর্তীর সঙ্গে। এই থেকে বোঝা যায় তিনি থাকতেন মধ্য হাওড়ায় ছোট থেকেই। সব মিলিয়ে ৭ বছর মতো ছিলেন। সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় সৌমিত্রর প্রথম মেন্টর ছিলেন বলা যায় ( সৌমিত্র সেকথা উল্লেখ করেছেন কিন্তু নামটা উল্লেখ করেননি), শিশির ভাদুড়ীর কথা সেই যে কানে ঢুকিয়ে ছিলেন তারপর থেকে শিশির ভাদুড়ীর সমস্ত শো-য়ে তিনি গেছেন। তাঁর শেষ মঞ্চ অভিনয়ের দিন আলাপ করেন প্রণামের মাধ্যমে এবং প্রায় বাড়ি যাতায়াত শুরু করে দেন এম. এ পড়ার শেষ বছর থেকে। তারপর সকলে জানেন শিশির ভাদুড়ী সম্পর্কে তাঁর বিস্তৃত লেখালেখি। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় মাত্র সাতজন সর্বভারতীয় অভিনেতাকে নিয়ে নানাভাবে লিখেছেন। বলরাজ সাহানী থেকে তুলসী চক্রবর্তী। 
কালীবাবুবাজারে তুলসী চক্রবর্তী একটা ময়লা সাধারণ গেঞ্জি বা কখনও ফতুয়া পরে ও ভাঁজকরা ধুতি পরে বাজার করতেন সেকথা তার অবজারভেশন থেকে পাওয়া যায়। আলু পটল দোকানি ও মুটে ওলাদের সঙ্গে তুলসী চক্রবর্তীর রঙ্গ-রসিকতাগুলো তিনি তুলে ধরেছেন বিভিন্ন ভাবে, পরে বিভিন্ন আলোচনায় তুলসী চক্রবর্তী সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ণ হাওড়ায় আজ পর্যন্ত কেউ করেছেন বলে আমি দেখিনি। ভানু-জহর বিশেষ করে অনিল চট্টোপাধ্যায় সম্পর্কে তিনি ভূয়সী প্রশংসা করে গেছেন। 

•পড়ার পাঠ চুকিয়ে যখন আকাশবাণীর একটি ঘোষক পদের এক হাজার জনের মধ্যে ইন্টারভিউ দিয়ে দ্বিতীয় হন তখন প্রথমজন অনিল চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর আলাপ এবং সেই আলাপ চিরস্থায়ী ছিল দুজনের। যখন শতরূপা দি-র বাবা অধ্যাপক তরুণ সান্যাল সাধারণ খ্যাত সত্যজিৎ রায়ের সংবর্ধনার আয়োজনে ব্যস্ত এবং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো কজনকে জড়ালেন এবং পরে আরও অনেকে যুক্ত হলেন তখনও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় কফি হাউসে, নিতান্তই ইউনিভার্সিটির ছাত্রদের মতো বন্ধু নিয়ে আলাদা বসে থাকেন এবং শিশির ভাদুড়ীর ভাবশিষ্য হিসেবে পরিচিত হচ্ছেন। ©® অলোক কুন্ডু।
( সূত্র : প্রয়াত পার্বতী মুখোপাধ্যায়, প্রয়াত রবীন মন্ডল, নাট্যকার জগমোহন মজুমদার, বন্ধু অশোককৃষ্ণ দাস)

রবিবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২০

হাওড়ার সৌমিত্র ও তাঁর বন্ধুরা: অলোক কুন্ডু

⛔ আমাদের হাওড়ায় স্কুল জীবনটা কেটেছিল সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। কৃষ্ণনগর থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ে পিতার চাকরিসূত্রে তিনি হাওড়ায় এসে পৌঁছন। উল্লেখ্য হাওড়ার ভূমিপুত্র পরবর্তীতে বিখ্যাত পেন্টার রবীন মন্ডল ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের একজন বন্ধু। বলা ভালো যে হাওড়া ময়দানেই রবীন-দা'র সঙ্গে একদিন আলাপ হয় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের। রবীন দা, গতবছর প্রয়াত হয়েছেন। রবীন দার মুখে শুনেছি দুটি পৃথক স্কুলের ছাত্র হওয়া সত্ত্বেও দুজনের মধ্যে একটা সখ্যতা গড়ে উঠেছিল। পরে অবশ্য কলেজ লাইফ থেকে সেই সখ্যতা আরও প্রগাঢ়
হয়েছিল। প্রথমদিকে রবীন-দা, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নাটকের মঞ্চ ভাবনা এঁকে দিয়েছিলেন। যাইহোক রবীন মন্ডল-দা তখন ছবি আঁকা নিয়ে পড়ছেন আর্ট কলেজে তখন সৌমিত্র সিটি কলেজে যাচ্ছেন। রবীন দা প্রচ্ছদ করে দেন বন্ধুদের আর্ট কলেজের নামী ছাত্র তখন তিনি। সৌমিত্র কবিতা লিখতে শুরু করেছেন। হাওড়ার সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় (প্রাক্তন অধ্যাপক চারুচন্দ্র কলেজ) আর সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মধ্যে নাটকের জন্য আর একটু বেশি বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে তখন। লালু ও পলুর বন্ধুত্ব আরও বেশি করে জমে উঠেছে কারণ দুজনেই কলকাতায় পড়াশোনা করেন এবং নাটক ভালোবাসেন, বাসে একসঙ্গে যাতায়াত করেন। সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়দের 'যুবসভা' ক্লাবে তখন নাটকের রিয়ার্সাল হচ্ছে। সেখানে আছেন স্বয়ং সৌমিত্র।

•এখানে প্রসঙ্গত একটু অন্য আলোচনায় আসি। স্বাধীনতার আগে হাওড়ায় সুভাষচন্দ্র এসে, নীলমণি মল্লিক লেন ও এম সি ঘোষ লেনে ফরওয়ার্ড ব্লকের যে ভিত খুঁড়ে দিয়ে গিয়েছিলেন তা হাওড়ায় তখনও সমান অক্ষুন্ন আছে। ফরওয়ার্ডব্লক আশ্রিত হাওড়া সঙ্ঘ ক্লাব তখন হাওড়ার সংস্কৃতির পিঠস্থান। তখন হাওড়ায় কংগ্রেসের প্রাদেশিক বিশাল নেতা বিজয়ানন্দ চট্টোপাধ্যায় আছেন। এদতসত্ত্বেও কিছুমাত্র নড়ানো যায়নি হাওড়া সঙ্ঘকে। তাই পাশেই কংগ্রেস তৈরি করলো হাওড়া উদার সঙ্ঘ ক্লাব। প্রখ্যাত নাট্যকার, তখন যুবক জগমোহন মজুমদার সেখানে নাটক করা শুরু করলেন কংগ্রেসের ব কলমে --" ঠাকুর দা। " নাটক মহলা চলছে তাঁদের। এদিকে হাওড়ায় তখন হাওড়া সঙ্ঘ উঠতি যুবকদের কাছে সংস্কৃতির পুরোযায়ী হয়ে উঠেছে, প্রেরণাস্বরূপ। এর মাঝে রাজনৈতিক দলের ছত্রাছায়ায় না থেকে সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়রা পঞ্চাননতলায় অর্ধেন্দু বোসের পৃষ্ঠপোষকতায় নাটকের মহড়া দেওয়া শুরু করলো, রবীন মন্ডল পার্বতী মুখোপাধ্যায় ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে ( রবীন মন্ডলের মঞ্চ ভাবনা), তাদের নাটকের নাম --"সধবার একাদশী। " সম্ভবত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এখানেই প্রথম অভিনয় করেন।
এই দলের পার্বতী মুখোপাধ্যায় ও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় দুজনকেই দেখতে তখন উত্তমকুমার একেবারে। পার্বতী দাকে তো আরও সুন্দর দেখতে।

•প্রকৃতপক্ষে, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের পিতার ওকালতি ছেড়ে হাওড়ায় রেলের বড় চাকরি নেওয়ার কারণে কৃষ্ণনগর থেকে এসে ষষ্ঠ শ্রেণিতে, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় হাওড়া জেলা স্কুলে ভর্তি হন এবং এখানেই স্কুল জীবন শেষ করেন। তাঁর বোর্ডের পরীক্ষার সিট পড়েছিল আজকের অক্ষয় শিক্ষায়তনে অর্থাৎ তখনকার হাওড়ার রিপন স্কুলে। তিনি হাওড়া থেকেই সিটি কলেজে পড়তে শুরু করেন। ১৯৯৪ সালে যখন হাওড়া জেলা স্কুলের শতবার্ষিকী হয় তখন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
আগেই বলেছি, হাওড়ার নাট্যকার অধ্যাপক,
সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় ( নটরঙ্গের ফজল আলী আসছেনের ডিরেক্টর) ছিলেন কাছের বন্ধু। রামকৃষ্ণপুরে পুরনো বাটার দোকানের কাছে একটি চায়ের দোকানে যুবসভার আড্ডা বসতো। এম. সি. ঘোষ লেনে পার্বতী মুখোপাধ্যায়দের বাড়ির মস্তবড় উঠোনের একপাশে ছোটখাটো একটা আড্ডা ছিল তাঁদের। পরবর্তীকালে শিবপুরে একটি ঘরোয়া আসরে রবীনদাকে যখন সংবর্ধনা দেওয়া হলো তখন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সেই ঘরোয়া আসরে দুজনের সখ্যতার গল্প ও ডালমিয়া পার্কে ঘাসের উপর শুয়ে, হাওড়ায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কৈশোর ও কলেজর লাইফের কথা ও গল্প বলেছিলেন। তিনি থাকতেন হাওড়ার ফাঁসিতলার কলভিন কোর্টের রেলের অফিসার্স কম্পাউন্ডে। চার্চ রোড, পুরনো হাওড়া ময়দান, রামকৃষ্ণপুরে হেঁটে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আমাদের হাওড়ার ধুলোয় ঘুরে বেড়িয়েছেন। টাউন হলেও উপস্থিত হয়েছেন তখনকার দিনের সখের নাটকে। হাওড়ার রেলের মঞ্চে হল পেতে তখন তাঁর অসুবিধা হওয়ার কথা নয় ( এই হলেই হাওড়ায় উত্তমকুমারকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল)। কলকাতায় চলে যাওয়ার আগে অন্ততপক্ষে ৭/৮ বছর তিনি হাওড়ায় থেকে গেছেন খানিকটা অলক্ষ্যে। অনেক পরেও মৃণাল সেনের বাড়ির ঘরোয়া আড্ডায় কিংবা ক্যালকাটা পেন্টার্সে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও রবীনদার দেখা হতো। রবীন দার ছবি দেখতেও এসেছেন বহুবার। রবীনদাও কয়লাঘাট রেলের অফিস থেকে সোজা বেরিয়ে কলকাতা করপোরেশন থেকে পার্বতী মুখোপাধ্যায় ও সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সিনেমা দেখতে। বহু আসরে দু-বন্ধু বোঝাপড়া করে উপস্থিত হয়েছেন কখনও। বিখ্যাত কলা-সমালোচক ও কলকাতার প্রথম বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলনের অন্যতম উদ্যোক্তা অহিভূষণ মালিক রবীন দাকে বিশেষ স্নেহ করতেন। আনন্দবাজারে অহিভূষণ মালিকের টেবিলের চারপাশে বসে আড্ডা দিয়েছেন রবীন দা, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সন্দীপন চট্টোপাধ্যায় ও পার্বতী মুখোপাধ্যায়। একদিন রবীন দা ছবি আঁকছেন আমি ( এই অধম) বসে তাই দেখতে দেখতে হাওড়ার পঞ্চাননতলার বাড়িতে সেইসব শুনছি। হাওড়ার মেথর ইউনিয়নের লিডার অর্ধেন্দু বোসও ছিলেন কলকাতার বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলনের অন্যতম উদ্যোক্তা। আবার হাওড়ার যুবসভারও তিনি ছিলেন অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। পুরনো বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলন বলতে গেলে ছিল সংস্কৃতির চাঁদের হাট আর এখানেই অহিভূষণ মালিকের হাতেই ছিল শিল্পীদের উঠে আসার সিঁড়ি। পার্বতী মুখোপাধ্যায় এখান থেকেই হয়েছিলেন কলা সমালোচক, রবীন দা পেয়েছিলেন শিল্পীর উত্তরণ, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের নাটকে হাতেখড়ি। হাওড়ার অর্ধেন্দু বোস ও আনন্দবাজারের অহিভূষণ মালিকের হাত ধরে একপ্রকার সংস্কৃতির উত্থান হয়েছিল বলা যায়। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ও
ছিলেন বঙ্গ সংস্কৃতির আর এক সহযোগী। আজ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রয়াণে সেই যুগের সম্পূর্ণ সমাপ্তি ঘটলো।

•সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় অবশ্য অনেকবার বলেছেন ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউটে যখন কবি অধ্যাপক তরুণ সান্যাল, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়রা সত্যজিৎ রায়কে প্রথম নাগরিক সংবর্ধনা দিলেন, তখনও সত্যজিৎ রায়ের কাছে পর্যন্ত যেতে পারেননি তিনি। এমনকি কফি হাউসে সুনীল শরৎ শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের টেবিলে তার কোনও স্থান ছিলনা। কফি হাউসে যাওয়ার জন্য কোনোরকমে বন্ধু নির্মাল্য আচার্যর মাধ্যমে একটা কার্ড জোগাড় করতে পেরেছিলেন। তখনও তো সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় ও নির্মাল্য আচার্য সম্পাদিত " এক্ষণ "-এর ভাবনা আসেনি। পরে যখন এক্ষণ প্রকাশিত হয় তার প্রতিটি সংখ্যার প্রচ্ছদ করেন সত্যজিৎ রায়। সত্যজিৎ রায়ের প্রয়াণের পর নির্মাল্য আচার্যর কাছে সত্যজিত রায়ের অনেক কিছু আসল আর্টওয়ার্ক ও পান্ডুলিপি থেকে যাওয়ায় পুলিশ যখন নির্মাল্য আচার্যর বাড়ি রেইড করে, তখন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় সেই ঝামেলায় থাকতে চাননি, কারণ নির্মাল্য আচার্য, সত্যজিৎ রায়ের কাছে পৌঁছনোর সেতু হলেও রায় পরিবারের জন্য আজ তিনি সৌমিত্র হতে পেরেছেন। এমনকি তিনি নিজেকে পুত্রও মনে করতেন। তাই সত্যজিৎ রায়ের মরদেহ বাড়ি থেকে যখন বের করে নিয়ে আসা হয় নন্দনের পথে, তখন সিনে সেন্ট্রালের ছেলেদের সঙ্গে একই লরিতে একমাত্র ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সেই কাঁদো কাঁদো মুখের ছবি ইতিপূর্বে আমি ফেসবুকে পোস্ট করেছিলাম। ©® অলোক কুন্ডু।

শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২০

রাজ্য রাজনীতি সরগরম : অলোক কুন্ডু

রাজ্য রাজনীতি সরগরম: অলোক কুন্ডু

⛔ আজ ( ১৩.১১.২০২০) শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক উপদেষ্টা পিকে-কে পৌঁছতে হলো শুভেন্দুদের বাড়ি। এইথেকে পরিষ্কার হলো যে শুভেন্দু যা বলেছেন তার ভিত্তি আছে। এই মূহুর্তে শুভেন্দুর যে একতরফা জয় ,ক্ষমতা ও ভোট বেড়ে গেল একথা অনস্বীকার্য। ইদানীং কিন্তু সেখানে বিজেপিও একটা মাটি খুঁজে নিচ্ছিল। বিশেষ করে অমুসলিম এলাকাগুলো এখন ভেতরে ভেতরে বিজেপিও দাপট দেখাতে আসরে নেমে পড়েছিল। সব থেকে বড় বিষয় হলো, এই কদিন নেট দুনিয়ার রাজনীতি চর্চায় একমাত্র শুভেন্দু অধিকারীর নাম উঠে আসছিল, সমস্ত চ্যানেলজুড়ে। এখন আবার নন্দীগ্রাম রাজ্যের রাজনৈতিক আসরে মূল ভরকেন্দ্র বা এপি-সেন্টার হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। এবারে নির্বাচনে যদি শুভেন্দু নিজের এই ইমেজ ধরে রাখতে পারে তবে পূর্ব মেদিনীপুরে, বিজেপি এবং তৃণমূল কংগ্রেস দুটো দলই এখন শুভেন্দুকে কাছে টানতে চাইবে। এতদিন পরে এই যে শুভেন্দুর প্রকাশ্য উত্থান, এই যে জাত চেনানো, এতে করে এই পর্বটি যদি তিনি ২০২১-এর নির্বাচন পর্যন্ত টেনে নিয়ে যেতে পারেন তবে শুভেন্দু অধিকারী আগামী নির্বাচনে তার মনোনীত ৪০-৫০ জন সমর্থককে টিকিট দিতে সমর্থ হবেন এবং জিতিয়ে আনবেন এবং তা তৃণমূলে থেকেই। আর যদি তিনি নিজেই একটি দল গড়ে ফেলেন তবে তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি এই দুটি প্রধান দলকেও ভাবনায় ফেল দিতে পারবেন। যাই হোক না কেন, শুভেন্দু এখন চাইলেই তৃণমূলের দ্বিতীয় ব্যক্তি হতে পারবেন অথবা নিজের দল গড়ে জোট রাজনীতিকে মদত দেবেন। এখনও শুভেন্দুকে কেউ সাম্প্রদায়িক বলতে পারেননি এখনও বরং তার সহযোগীদের মধ্যে মুসলিম সমাজের ভালো কিছু নেতারাও আছেন। সেইদিক থেকে শুভেন্দু রাজনৈতিক স্তরে এখন একটা ভালো জায়গায় আছেন। সঙ্গে শিশির অধিকারীর মতো দুঁদে রাজনৈতিক নেতা আছেন যাকে পূর্ব-মেদিনীপুরের মানুষ যথেষ্ট শ্রদ্ধা করেন।
•২০১১ নয়, বরং ১৯৯৬ ২০০১ ২০০৬ প্রতিটি নির্বাচনে শুভেন্দুদের সঙ্গে জনজোয়ার ছিল। প্রতিটি নির্বাচনেই মনে হয়েছে এই বুঝি পূর্ব মেদিনীপুর বামেদের হাতছাড়া হলো কিন্তু শেষ মূহুর্তে সব ফল গুলিয়ে গেছে তার কারণ রাজ্যবাসী জানেন। জনগণ সঙ্গে থেকেও শুভেন্দুরা রাজ্যের ক্ষমতা পাননি সেইসব এখন তথ্য ও ইতিহাসে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। নন্দীগ্রাম আন্দোলনের খবর সারা ভারতে ছড়িয়ে গিয়েছিল। এতটাই ছিল তার ব্যাপ্তি যে তার কম্পনে রাজ্য নড়ে গিয়েছিল। নন্দীগ্রামের অনেক মানুষ এখনও নিখোঁজ। সেই সময় বাইরে থেকে ঢুকতে রীতিমতো ক্ষমতা লাগতো। শুধুমাত্র নকশাল, শুধুমাত্র কোনও একটি রাজনৈতিক দলের পৌঁছনোর শুধুমাত্র বুদ্ধিজীবীদের পৌঁছে যাওয়া স্বপ্ন ছিল যদি না পেছন থেকে শুভেন্দুরা মদত দিতো।
শুভেন্দুরও প্রচুর সহযোগিতা ছিল, আশ্রয় দেওয়া
অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসার সাপোর্ট দেওয়া। তাৎক্ষণিকভাবে অধিকারীদের সমর্থনে তাই বাম বুদ্ধিজীবীরাও ভেতরে গিয়ে আন্দোলনের একজন হতে পেরেছিলেন। তা না হলে যেভাবে লাশ গায়েব তখন পদ্ধতি হয়ে গিয়েছিল তাতে করে কলকাতা থেকে মদত দেওয়া কঠিন হোতো। এইসব তো পুরনো কথা শুভেন্দু যা বলতে চান। শুভেন্দু বক্তব্যের মধ্যে বলেননি তিনি বা তারা পাশে ছিলেন। বলেছেন নন্দীগ্রাম লড়েছে, স্থানীয় মানুষের আবেগকে রীতিমতো সম্মাননা দিয়েছেন। তাই এখন শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে আসর সরগরম। হ্যাঁ রাজনৈতিক আসর সরগরম।
•অনেকে বলছেন শুভেন্দু অধিকারী বি. জে. পি-তে যাচ্ছেন। আমার মনে হয়, তা একদমই নয়। তবে বহুদিন থেকেই মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শাসন অনেক পুরনো তৃণমূল কংগ্রেস নেতা মেনে নিতে চাইছিলেন না। শুভেন্দু অধিকারীর এই নিভৃত উষ্মা তারই নামান্তর। তৃণমূলের একগুচ্ছ দলে ভেড়া নেতা তিনি মোটেই নন। আদতে তিনি ছিলেন যুব গোষ্ঠীর প্রধান নেতা।
পূর্ব-মেদিনীপুরের অধিকারী পরিবারকে বামেরাও জব্দ করে রাখতে পারেনি, যদিও সেখানে মমতা ব্যানার্জীর নেতৃত্ব শুভেন্দুকে সব সময় সাপোর্ট দিয়েছিল। তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মলগ্ন থেকে যদি ভালো করে এলাকাগুলো বেছে বেছে দেখেন তবে দেখবেন মেদিনীপুর ও পূর্ব-মেদিনীপুরে বামফ্রন্টের যতটা দুর্গ ছিল বলে মনে করা হয় তার থেকে বেশি দুর্গ ছিল লক্ষণ শেঠের ব্যক্তিগত দীপক সরকার শুকুর আলীদের ব্যক্তিগত সাম্রাজ্য। বিশেষ করে পূর্ব মেদিনীপুর লক্ষণ শেঠের সাম্রাজ্য ছিল। কিন্তু লক্ষণ শেঠও অধিকারী পরিবারকে জব্দ করে রাখতে পারেনি। আবার তৃণমূলে, লক্ষণ শেঠের ঢোকার যাও একটা চান্স পরিবর্তী সময়ে হয়েছিল তাও শুভেন্দুদের জন্য হয় নি। অবশ্য নন্দীগ্রাম না হলে সেখানে কিন্তু তৎকালীন সময়ে বি.জে.পি ও কংগ্রেসের লড়াইটা ছিল বামেদের বিরুদ্ধে মাটি উদ্ধারের লড়াই। কিন্তু ১৯৯৬-এ কংগ্রেস থেকে মমতা ব্যানার্জীকে বহিষ্কার করার পর সেই লড়াইয়ের একমাত্র নেতা ও নেত্রী ছিলেন মমতা ব্যানার্জী ও তৃণমূল কংগ্রেস। কেশপুর থেকে বাঁকুড়ার চমকাইতলা কিংবা সুচপুর তখন পশ্চিমবঙ্গের ম্যাপে জ্বলছে। নন্দীগ্রাম নয়। নন্দীগ্রাম শেষ পেরেক হলেও পূর্ব মেদিনীপুর থেকে একমাত্র অধিকারী ভাইরা পশ্চিমের লড়াইয়ে শুকুর আলী দীপক সরকারদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিলেন। মানস ভূঁইয়া কিন্তু কংগ্রেসে থেকে নিজের কেন্দ্রীটি শুধুমাত্র বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। পাশেই শুভেন্দুদের চৌকস লড়াই ছিল বলে তা সম্ভব হয়েছিল। তা নাহলে তার পক্ষেও বাম আমলে লক্ষণ শেঠের হাত থেকে জমি উদ্ধার করার সমস্যা ছিল। কিন্তু সি. পি. এমের এই জেলায় একটা দোটানার রাজনীতি ছিল। তা হলো তারা কিছুতেই মাইনাস লক্ষণ শেঠ ও পূর্ব মেদিনীপুরকে ভাবতে পারেননি। আর লক্ষণ শেঠও বাম-পার্টির তৃণমূলস্তরকে সেখানে বাড়তে দেননি। লক্ষণ শেঠের দায়িত্ব ছিল সি.পি.এম-এর কাঁড়ি খানেক সহযোগী সংগঠনের বড় বড় রাজ্য সম্মেলন সফল করানো সেখানে। কি হতো তখন। এক একটি ইউনিয়ন বা সংগঠন পূর্ব-মেদিনীপুরের এক একটি স্থানে তিনদিন ধরে গান্ডেপিন্ডে মাছ ভাত, মাংস ভাত বিরিয়ানি খেয়ে স্থানীয় ভাবে মিছিল মিটিং করে ফেরত চলে যেত। ব্যানারে, ফেস্টুনে লাল কাপড়ে এলাকা ছেয়ে যেত। খরচ সব লক্ষণ শেঠের। এমনকি হলদিয়া উৎসবে, এলিতেলি কবিরাও গিয়ে বামপন্থী কবিতা আউড়ে, তিনদিন গান্ডেপিন্ডে খেত এবং গাদা উপহার নিয়ে ঘরে ফিরতো। আখেরে বামেদের মাটি ধসতেই থাকতো। সাধারণভাবে বিপ্লবের মাটি মেদিনীপুর তা মেনে নেয়নি, এইসব বেনিয়মকে সহ্য করেনি। সেই মাটিকে শিশির অধিকারীর মতো মানুষরা ভোটের বাক্সে সযত্নে সংগ্রহ করে রেখেছিলেন। শুভেন্দু তার অন্যতম কারিগর। কনটাই কো-অপারেটিভ তখনও তারা বে-হাত হতে দেননি। পারিবারিক ব্যবসা, জায়গাজমি, প্রতিপত্তি, নগদ টাকা সবকিছু তারা দিয়েছেন রাজনীতির স্বার্থে। বামেদের মধ্যে সোস্যালিস্ট পার্টি, ফরোয়ার্ড ব্লক, সিপিআই, আরএসপি থাকলেও সকলকে একঘরে করে রেখেছিলেন লক্ষণ শেঠ। যার ফলে অন্য বাম দলগুলোর সহানুভূতি ছিল শুভেন্দুর সঙ্গে। সকলেই চেয়েছিলেন লক্ষণ শেঠকে হঠাতে। শক্তিশালীতায়, অর্থে লোকবলে দ্বিতীয় দল ছিল প্রথমে কংগ্রেস তারপর ১৯৯৬থেকে তৃণমূল কংগ্রেস। যে কারণে ১৯৯৬-এ দ্বিতীয় বড় সভা হয়েছিল শিশির অধিকারীর আহ্বানে এবং রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়কে আনন্দবাজার পাঠিয়েছিল মমতা ব্যানার্জীর গাড়িতে সেই জনস্রোতকে কাগজের প্রথম পাতায় তুলে আনতে।
ইংরেজি সাহিত্যের রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় তার আগে কখনও রাজনৈতিক আসরের বিবরণ লেখেননি। রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের টানটান গদ্যে একদিনেই তৃণমূল কংগ্রেসের অবস্থান হয়েছিল সারা বিশ্বজুড়ে।
পরেরদিন আনন্দবাজারের একটাও কপি আর পাওয়া যায়নি।
•পশ্চিম মেদিনীপুরের দীপক-তপন-শুকুর ও পূর্বে লক্ষণ ও তাদের অনুগামীরা দিন দিন বড়লোক, পয়সাওয়ালা হতে থাকার সঙ্গে সঙ্গে তাদের এলাকায় তাদের একমাত্র কাজ হয়ে দাঁড়ায় সিপিএম-কে জেতানো। এর ফলে ভোট করতে না দেওয়াতে মানুষের বিরোধিতা বাড়তে থাকে। যত গ্রাম ঘিরে ফেলা হতে থাকলো, তত শুভেন্দুদের ঝুঁকি ও ঝাঁজও বাড়তে থাকে এবং এরা নিজেদের কেন্দ্রগুলিতে ভোটের মাটিতে বামেদের পরাস্ত করতে থাকে যার ফলে আরও রক্তারক্তি, খুনখারাপিতে তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থকদের জমি জান প্রাণ যেতে থাকে ও শুভেন্দুদের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। যার ফলে স্বরূপ শুভেন্দু ২০০৬ থেকে নিজের ও পরিবারের আরও দুজনের ছবি বড় বড় ঢাউস মুখ দিয়ে দীঘা থেকে কাঁথি-নন্দকুমার পর্যন্ত মুড়ে দেয়। রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস এসে গেলে পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর তাই স্বাভাবিক ভাবে জোনাল নেতৃত্বের দ্বিতীয় সারির নেতা হিসেবে শুভেন্দু উঠে আসেন। কে হবেন যুব নেতা সেই আলোচনা শুভেন্দু ঘিরে চলতে চলতেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় উঠে আসেন সর্বোচ্চ আসনে। মনে হয় এখান থেকেই তৃণমূলের অন্দরে সামান্য সংঘাত শুরু হলেও তা কখনও প্রকাশ পায়নি। কারণ এই দলে মূল নেতা একজনই সমস্ত সিদ্ধান্ত তাঁকে বাদ দিয়ে নয় তিনি মুখ্যমন্ত্রী তিনি তৃণমূল গড়েছেন নিজের হাতে, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ২০১১-এর জেতার দিনে যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাড়ির ছাদে পায়চারি করতে ছাড়া আর কোথাও দেখা যায়নি, তার হাতে তৃণমূল কংগ্রেসের মূল চাবিকাঠি অর্থাৎ যুব সম্প্রদায় এখন। অথচ একসময় যা শুভেন্দুদের বেশ খানিকটা এক্তিয়ারভুক্ত ছিল। ওই একই কারণে দলের দ্বিতীয় ব্যক্তি মুকুলের দল ছেড়ে যাওয়া। মন্ত্রী ও কয়েকটি জেলার দায়িত্ব ছাড়া এখন শুভেন্দু কিন্তু দ্বিতীয় সারির নেতাও নন।
•অথচ অধিকারীরা মনে করেন মূলত শিশির অধিকারীর নামে পূর্ব মেদিনীপুরের বিস্তির্ণ অঞ্চলে ২০১১ -এর আগে থেকেই তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক ভিত্তি গড়ে উঠেছিল। কিন্তু অধিকারী পরিবার যেভাবে পূর্ব মেদিনীপুর সংগঠন গড়ে দিয়েছিল এবং ধরে রেখেছিল তা এক কথায় উদাহরণ। এই কৃষিজীবী,মৎস্যজীবী ও শিল্পাঞ্চলে একসময় সিপিএম নয় সেখানকার সাম্রাজ্য লক্ষণ শেঠ চালালেও অধিকারীদের সাংগঠনিক ক্ষমতা দিন দিন বেড়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরে দলনেত্রীর কাট আউট খুব সামান্য আগেও ছিল এখনও তাই। এই দেখাদেখি বছর তিনেক আগে সল্টলেকের পুর পিতা নিজের ছবি দিয়ে মুড়ে দিয়েছিলেন কিন্তু তিনদিনের মধ্যে বাইরে থেকে ছেলে গিয়ে সমস্ত কাটআউট খুলে দেয় এবং দল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে যান তিনি। এখানেই শুভেন্দুদের ক্যারিশমা। শুভেন্দুর জন ভিত্তি। প্রথম যে নির্বাচন তৃণমূল লড়েছিল তার দ্বিতীয় বৃহত্তম সভা হয়েছিল পূর্ব-মেদিনীপুরে। অতএব শুভেন্দু যদি কখনও চলে যান তবে দল গড়ে ফেলবেন। সেখানে মুকুল রায়ের সাপোর্ট পাবেন। এমন যদি হয় শুভেন্দু ও মুকুল একজোট হয়ে গেল। বিজেপি ও তৃণমূল দুটো দলকেই তখন তারা খেলাতে পারেন। তখন দিল্লিতে পর্যন্ত এদের জোট বাংলায় একটি পক্ষ হয়ে যেতে পারে এবং রাজ্য রাজনীতিতে মূল দল হিসেবে উঠে আসতে পারে। তবে আগামী নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গ হয়ে উঠতে চলেছে সারাদেশের কাছে যুদ্ধের গর্ভগৃহ। যদি শুভেন্দু তৃণমূল কংগ্রেসে শেষ পর্যন্ত থেকে যান তবে তারা একটি দলের ভেতর দল করে নির্বাচনে নামতে পারেন।
•এদিকে আগামী নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরা শুধুমাত্র কোনও দলে থাকবেন না একটি দলকে সাপোর্ট করবেন অথবা তাদের সমাজ থেকে উঠে আসা নতুন কোনও দলকে সাপোর্ট করবেন এইরকম নানা ইঙ্গিত বা রাজনৈতিক সমীকরণ উঠে আসতে চলেছে। ইতিমধ্যে বিজেপিও বিহার নির্বাচনে প্রতিকূলতার মধ্যে লড়ে যথেষ্ট ভালো ফল করায় তাদের জোর অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় চলে এসেছে। হিন্দু মুসলমান ভোট সবক্ষেত্রে ভাগাভাগি না হলেও কে কীভাবে তা পাবেন তা এখন লাখ টাকার প্রশ্ন। মুসলিম সমাজ থেকেও তারা এই প্রথম যে দলকে সাপোর্ট করবেন তাদের কাছে নির্দিষ্ট কথা চান।
•শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন যদি এইসময় রাজনৈতিক ইস্যুতে পিছিয়ে পড়ে তবে তা এই রাজ্যের পক্ষে হবে অত্যন্ত হতাশাজনক।
•তবে আরও একটা প্রশ্ন উঠে এসেছে তাহলো পুরোটাই এটা নাটক। কিন্তু মাঝখান থেকে লক্ষ্য করুন সেটা হলো এই রাজনৈতিক লড়াইয়ের মধ্যে যা ভাবতেও পারছেন না তাহলো সি.পি.এম যদি কোনোরকমে টিকেট যায় তবু কংগ্রেসের এই ধাঁধার মধ্যে বেঁচে থাকা খুব মুস্কিল হতে পারে। 
©® অলোক কুন্ডু

বৃহস্পতিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২০

মমতা ব্যানার্জীকে বহিষ্কারের প্রামাণ্য তথ্য ১৯৯৭


⛔ এটা ২৮ ডিসেম্বর, ১৯৯৭-এর 'বর্তমান' খবর কাগজ। বরুণ সেনগুপ্ত'র আগাগোড়া ১০০% সমর্থন তখন। জিতেন্দ্রপ্রসাদ এসে সোমেন মিত্রকে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন কলকাতায়। মদন মিত্র তখনও সোমেন মিত্রর এক নম্বর সহযোদ্ধা। একা পঙ্কজ ব্যানার্জী এম এল এ, তৃণমূলের সবকিছু সামলান তখন। ক'দিন আগে কংগ্রেসের হাইকমান্ড বহিষ্কার করেছেন মমতা ব্যানার্জীকে। কংগ্রেসের অনেক এম.এল.এ-এর তখন কোনও সাড়াশব্দ নেই। সঙ্গে আর আছেন হুগলির খন্দকার। তখন তামিলনাড়ুর মুপানারের নাম প্রসঙ্গে ঘোরাফেরা করছে কেননা তিনিও কংগ্রেস থেকে বেরিয়ে আলাদা দল করেছিলেন এবং কংগ্রেসকে ভুগিয়েছিলেন... ( চলবে) ©® অলোক কুন্ডু

©® অলোক কুন্ডু

সোমবার, ৯ নভেম্বর, ২০২০

৯ বছরে মদের বোতল পরিষ্কার করার খরচ সত্তর হাজার

আমাকে আগে কলকাতার লোকে বলতো হাওড়া পাবলিক । আমি জানতে চাইতাম মানে কিরে। বলতো তোদের হাওড়ার লোকেরা কালচার কি জানেনা। এখন দেখছি ঠিক বলতো। আমার বাড়ির সামনে যারা মদ খায় তাদের গালে যারা চুমু খায় তারা আমার গালেও খায়। এ বড় অদ্ভুত পাড়া। কোনও একটা লোক বলার নেই এখানে সন্ধ্যার পর কেন মদের পার্টি বসে। দেওয়াল লেখা, পোস্টার, মাইকে প্রচার সব আমি করেছি। কোনও একটা লোক একবারও বলেনা এটা অন্যায় কাজ। নিধিরাম মাঝি লেন, ময়রাপাড়া, চৌধুরীবাগান,
কালী কুন্ডু লেনের একগাদা ছেলে কোনও দিন ৩০/৩৫ জন পর্যন্ত মদ খায়। পাড়ার লোক এদের সঙ্গে গল্প করে, আড্ডা দেয় (একটি দর্জির দোকান)! লোকাল কেবিল কোম্পানির, কালী কুন্ডু লেনের একটি প্রমোটারের ছেলে
কালী ব্যানার্জী লেনের একজন, এইসব হুলো প্রতিদিন জড় হয়। আমাদের নর্দমার জল কীভাবে বের হবে তার তোয়াক্কা নেই এদের। কিরকম বদমাইশ দেখুন মদ খেয়ে প্রতিটি দিন বোতল গুলো নর্দমার ভেতরে মুড়ে ঢুকিয়ে দেয়। সপ্তাহে ১০০ বোতল, মাসে ৩০০০ বোতল বছরে ৩৬ ০০০ বোতল পরিষ্কারের খরচ প্রচুর। ২০১০ এ সিপিএম আমাকে রায়না পাঠিয়ে দিল। দিব্যি মদ খাওয়া বসে গেল ২০১২ থেকে। সন্ধ্যার পর আমার বাড়ি ২০১২ থেকে কেউ ভুলেও মাড়ায়নি। পাড়ার লোকের প্রচুর মদত আছে। না হলে একটা পরিবারের ওপর এই জঘন্যতম অত্যাচার চলতে পারে না। এই দেখাদেখি পাশাপাশি বাড়ি থেকে যত আনাজের খোলা জঞ্জাল ফেলে দিয়ে যায়। মেথর পরিষ্কার করে আমাদের নর্দমাটা বাদ দিয়ে। এত ট্রেনিংপ্রাপ্ত মেথর কোথাও পাবেন না। ৯-বছরে ৭০,০০০/- টাকা নর্দমা পরিষ্কারের খরচ। জীবনে চাকরিতে ঘুষ দিয়েছি এক পয়সা নিইনি। সবাই বড় বড় ঠুলি চোখে বেঁধে যাতায়াত করে মনে হয়। আহা কি সুন্দর নাম বলুন তো হাওড়া মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন। আমাকে মার্চ মাসে একটি রাজনৈতিক দলের পরামর্শদাতা ফোন করেছিল। কি কারণে? কারণটা হলো প্রাক্তন মেয়র ভোটে দাঁড়ালে জিততে পারবেন কিনা। এত লোক থাকতে আমার মতামত কেন? না আপনাকে চয়েজ করেছি। বললাম হ্যাঁ জিতবেন, কাজের লোক ভালো লোক। তিনি কেন জানলেন না এতদিন। বহু মানুষ আমার এই পারিবারিক রাস্তা ব্যবহার করে কিন্তু কেউ এইসব জানেনা। এমনই
নির্বোধ প্রাণহীন জায়গায় বাস করি। আমি যে এইসব অশান্তি নিয়ে এত লিখি তা শুধুমাত্র আমার ভেতর থেকে আসে বলে। বহু নেতাকে বলেও কিছু হয়নি। বললাম না চোখে ঠুলি পরতে ওস্তাদ মানুষের অভাব নেই। মদ্যপদের তো কাণ্ডজ্ঞান নেই। এখানকার হেন রাজনৈতিক দল নেই যারা আমার কাছে সুবিধা নেয় নি। কত নেতা গিয়ে অফিসে দাঁড়িয়েছে, এম এ এলে, ছোট বড় মানুষ সব উপকার নিয়ে গেছে। এমনকি রাজনৈতিক সুবিধা পর্যন্ত নিতে কেউ বাকি রাখেনি। এক বেটা তো আমার বাড়ি বয়ে সুবিধা নিয়ে গেছে। তারপর পোস্ট পেয়ে আমার বাড়ির কাছে আসা বদলি আটকে দিয়েছিল। তাই ঘাটের মড়াদের আমি খুব চিনি। তখন এদের রূপ হয়ে দাঁড়ায় একেবারে সাদাসিধে। গালভরা ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে থাকি আমি। ভোটে লোকে দাঁড়ায় বটে এখানেও। আমাকে চেনেনা এ তল্লাটে এমন কেউ নেই। তবে কেন এমনটা হবে। আমার তবে কি মেলামেশা নেই, চাঁদা দিই না, খারাপ ব্যবহার করি কোনোটাই নয়। বন্ধু নেই। তাও নয়। আত্মীয় নেই তাও নয়। তবে কেন। হ্যাঁ ঘেন্নাধরা রাজনীতিতে নেই। কোন দলের এম এল এ লিখে পাঠায়নি সাহায্য চেয়ে। কোন দলের এম এল এ সাহায্য নিতে আমার বাড়ি আসেনি। কিন্তু তা বলে আমি যাবো কেন ? আমি তো কারও কাছে মাথা নত করতে পারবো না। তাই এই শাস্তি বইতে হচ্ছে। আমাকে কেউ বলবে তুমি উপকার নিয়েছো তাহলে তো হয়েই গেল। তবু কয়েকটা গ্রুপে আমার এই অসুবিধা জানিয়েছিলাম। কেউ কেউ আমাকে ফোনও করেছেন। পোস্ট করে পরামর্শ দিয়েছেন। সবচেয়ে বড় কথা এদের কাউকে আমি কোনও সাহায্য করিনি। অবশেষে গতকাল ব্যাঁটরা থানার বড়বাবু ডেকে পাঠিয়েছিলেন। এখন আমি দেখছি আমার হাতে একটা ফেসবুক ব্লগ আছে যেখানে লিখলে সারা পৃথিবীতে দেখা যায় এবং চিরকাল থেকে যাবে। এছাড়াও খুব শীঘ্রই আমার নিজস্ব ওয়েবসাইট হচ্ছে। ধন্যবাদ হাওড়ার সিটি পুলিশ ও অন্যান্য ফেসবুক গ্রুপকে। এটা খুবই শক্তিশালী মাধ্যম। ৯-বছর ধরে আমি অপেক্ষা করেছি। কেউ কিছু বলে কিনা? হাওড়া করপোরেশন আমাকে জানিয়েছেন এই বিষয়ে তাদের করণীয় কিছু নেই। ধন্যবাদ ব্যাঁটরা থানার ওসি সাহেবকে। সত্যি ভদ্রতাবোধ আছে ওনার যা আমার পাড়ার কারও নেই।

রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০২০

আমায় তবে কোথায় নিয়ে যাও

আমায় তবে কোথায় নিয়ে যাও

তোমার চোখে নৌকো আঁকলে যখন
সেই তো সবে মধ্য রাতের শুরু। 
আমার তখন বুক ধড়ফড় করলো
সে ধড়ফড় শোনাতে চাই খুব। 
সেই তো সময় তোমার চোখে চাওয়া
মাঝ দরিয়ায় বিপুল বৃষ্টি এলো। 
কোথাও উজান কোথাও ভাটা জলে
মাঝি হওয়ার সাধ তবু কি যাবে
গভীর চোখে ডুবতে থাকি শুধু। 
ঝড়ে যদি চুল খুলে যায় এমন
মুখের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লো সাপ
সে তো তোমার অপ্সরা এক রূপ। 
অপূর্ব এক আলো-আঁধারী রাত
আমি তখন বাউল হতে রাজি। 
তোমার গালে তখন চাঁদের আলো
সে আলো তো তুলোর মতো নরম। 
যত দেখি ডুবতে ডুবতে থাকি 
হুমড়ি খেয়ে গাল বরাবর এলো। 
ছিল শুধু একটা কাজল টিপ 
কপাল যেন জ্যোৎস্না দিয়ে আঁকা
ভ্রুলতা কি সত্যি এমন বাঁকা? 
বাঁকা যদি চাঁদটা উঠলো এমন
সে চাঁদে কি অনিবার্য ডাক! 
চুলগুলো সব উড়তে  উড়তে 
আমার বুকে কাঁথাফোঁড়ে। 
এমন বুঝি মিষ্টি দেখতে হয়
এমন বুঝি লাজুক মুখের পাতা
এমন বুঝি নরম দুটি গাল
এমন তবে ভীষণ চোখের চাওয়া
গভীর করে নৌকো আঁকায় মরি
মাঝ সমুদ্রে উঠলো তখন ঝড়
আমায় তবে কোথায় নিয়ে যাও। 

শ্রী দেবব্রত মুখোপাধ্যায় (ওসি ব্যাঁটরা থানা)-কে ধন্যবাদ

ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ থেকে চেষ্টা করেছেন যাতে আমার বাড়ির গেটের সামনে থেকে গত ৯-বছর ধরে মদের ঠেককে ওঠানো যায়। আমি হাওড়া সিটি পুলিশের কাছেও আবেদন করেছিলাম আমাদের এই বিপদের কথা জানিয়ে। বিপদ মানে একদল যুবক আমার বাড়ির দোড়গোড়ায় বসে দরজা আটকে মদ খাচ্ছে আজ গত ৯-বছর ধরে। ৪ -বছর আগে একবার ব্যাঁটরা থানার উদ্যোগে উক্ত আসর ছয়মাস বন্ধ থাকলেও প্রায় ন-বছরে কেউ এইসব নিয়ে ভাবেনি। কারণ মনে হয় মদ্যপদের অনেকের সঙ্গে তাদের ভাব ভালোবাসা আছে। তাই আমার পাড়া থেকে ব্যাপকভাবে প্রশ্রয় পেয়েছে তারা। এই কারণে আমার জলের মতো টাকা খরচ হয়েছে আমাদের নর্দমা পরিষ্কার করাতে। যা শুনলে চমকে যাবেন অনেকে, তাতেই একদল সুখী হয়েছেন হয়তো। এ সমাজ বড় জটিল। পাড়া প্রতিবেশী মানে আজকাল সকলের সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখা। ২০১২ থেকে চলা এই মদের আসরের জন্য কিন্তু কোনও মহিলা এমনকি আমাদের আত্মীয়রা আমাদের বাড়ি আর আসতো না। বহুবার পোস্টার দিয়েছি। বারণ করেছি। মদ্যপরা শোনেনি। শেষে বিভিন্ন স্থানে মেল করে করে জানাই। ব্যাঁটরা থানাতেও মেল করেছিলাম, ওদের যা কাজের ভল্যুম হয়তো ওরা তা ঠিকমতো দেখে উঠতে পারেননি। যাই হোক, এইরকম পরিস্থিতিতে ব্যাঁটরা থানার অফিসার ইনচার্জ শ্রীযুক্ত দেবব্রত মুখোপাধ্যায় মহাশয় বিভিন্ন সূত্রে এই বিষয়টি জেনে, আজ সন্ধ্যায় এই বিষয়ে একটি এনকোয়ারি করান আমাদের পাড়ায় এবং আমাকে দেখা করতে বলেন। থানার অফিসার ইনচার্জ মহাশয়, তার নিজস্ব মানবিক চেতনা দিয়ে বিষয়টি যথেষ্ট অনুধাবন করেছেন। আমার সঙ্গে অত্যন্ত ভালো ব্যবহার করার মধ্য দিয়ে তার দক্ষ প্রশাসনিক ক্ষমতাকে প্রয়োগ করেছেন। তার ঐকান্তিক ক্ষমতার মাধ্যমে তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন এবং আমার মতামতও আগ্রহ নিয়ে শুনেছেন। আমি ওনার এই কার্যধারায় বেশ আপ্লুত ও অত্যন্ত খুশি হয়েছি। আশা করবো তার দক্ষ ভূমিকায় ও উদ্যোগে এলাকার সমস্ত রকম আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকবে। আমরা ওনার কাছ থেকে যে সহযোগিতা পেয়েছি তা অত্যন্ত আন্তরিক। অতিমারির এই কঠিন সময়ে, দেবব্রতবাবু ও ওনার পুলিশ পরিবারের সুস্বাস্থ্য কামনা করি ও তাদের ধন্যবাদ জানাই। এই সঙ্গে ফেসবুকের সকল আগ্রহী গ্রুপ এবং আগ্রহী সদস্যদের কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আশাকরি আমাদের সমস্যা মিটে যাবে।

ভবদীয়-অলোক কুন্ডু, ১১০/১/এ/১, কালী কুন্ডু লেন, হাওড়া-৭১১১০১. ( ৮.১১.২০২০)

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...