বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০১৯

১৯৭২ সালে সির্দ্ধাথশঙ্কর রায় সরকার বিপুল ক্ষমতা নিয়ে এসেছিল  পুলিশকে কাজে লাগিয়ে । সরকার পরে পুলিশকে কাজে লাগিয়ে নিজের এম‌এল‌এ-কে অবধি ডেকে ধাতিয় ছিল । ভুষি কেলেঙ্কারি তে কেস দিয়েছিল। দু দল যুব কংগ্রেস ।
দু দল কংগ্রেস ,দু দল আইএনটিইউসি/এন‌এলসিসি এবং দু দল ছাত্র পরিষদ / শিক্ষা বাঁচাও কমিটি নিয়ে কলেজে কলেজে মারপিট, পাড়ায় পাড়ায় মারপিট, খুন-জখম , মিছিল । বামপন্থীরা দলে দলে ভিড়ে ছিল পুলিশের ভয়ে । স্কুল কলেজে মিউনিসিপ্যাল নির্বাচন বন্ধ করে দলীয় শাসন কায়েম হয়েছিল । প্রশাসন ঝুরঝুরে হয়ে গিয়েছিল । আমি তখন যুব কংগ্রেসের একটি গ্রুপে ছিলাম এবং এমারজেন্সির ফলেই যে কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়ে যায়
তা কিন্তু নয় । পশ্চিমবঙ্গে অন্তত কংগ্রেসের কাজকর্ম জনগণের পছন্দের ছিল না ।
তার আগেই ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে ছিল --ব্যাঙ্ক
জাতীয়করণ, কয়লাখনি জাতীয়করণ
এবং গরিবি হঠাও । তবু সারাদেশে কংগ্রেসের ভাঙন দল রুখতে পারেনি ।
সৌগত রায় কংগ্রেস থেকে জোটে গিয়ে
মন্ত্রী হয়েছিলেন ব্যারাকপুর থেকে জিতে ।
বহুগুনা চন্দ্রশেখরের মতো হেভিওয়েট
কংগ্রেস ছেড়েছিলেন । একবছর বাদে
চিকমাগালুর থেকে ইন্দিরা গান্ধী একা
কংগ্রেসের এম পি ছিলেন , হয়তো আর‌ও
দু চারজন থাকতে পারেন কিন্তু তা মনে পড়ছে না। এক প্রকার কংগ্রেস, ধুয়ে মুছে গিয়েছিল । কিন্তু এখানকার নির্বাচন
পদ্ধতি ত্রুটিপূর্ণ হ‌ওয়ার ফলে যার শুরু
বাম আমলে হয়েছিল , ফলে আজ পর্যন্ত কংগ্রেসের অবস্থান এই কারণে এবং কিছু অন্য কারণে রাজীব গান্ধীর সময় ছাড়া পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস আর ফিরে দাঁড়াতে পারেনি এজন্য ---কংগ্রেসের থেকে বেশি দোষ নির্বাচন কমিশনের । এখন
প্রেক্ষাপট আলাদা প্রত্যন্ত গরিবের কাছেও হোয়াট‌সঅ্যাপ বা ফেসবুক আছে মানুষ এখন অনেক বুঝদার । ট্রোল হ‌ওয়া জিনিস তার পরিবেশনে মানুষ আনন্দ পায় ।
গরীব জানে সে কোনও দিন এসিতে থাকতে পারবে না , তার কোনও দিন ফ্ল্যাট হবে না , রেস্টুরেন্টে সে কোনও দিন ঢুকতে পারবে
না । তার কাছে রাজার হারের আনন্দের থেকে বেশি আনন্দ আর কিছুতেই নেই ।
এই নির্বাচনের যখন তিন মাস আগে বিজেপি ভ্যান পাঠিয়ে প্রতি জেলা শহরে ১৫/২০ মিনিটের -"পোস্টকার্ড ডালো ক্যাম্পেন" করে তাতে আমি দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করি শয়ে শয়ে মানুষ ১৫ মিনিটের মধ্যেই তাদের ভোট বিজেপির বাক্সে দিয়ে দিয়েছিল । এই ক্যাম্পেন এত হঠাৎ ও চুপিসারে হয়েছিল যে আর কোনো দল এর টের‌ই পায়নি । তাতে বিজেপি যেমন জানতো তেমনি আমার মতো সাধারণ
মানুষ‌ও বলেছিলাম এক দেড় মাস আগে
৩০-৯-২-১ । কংগ্রেস ছাড়া আর কোনো
হিসেবে যদিও মেলেনি আমার , কিন্তু আমি আভাস তো নিজের মাথা থেকে বের করিনি , মানুষ চাইছিল। তাতে কেউ
বলছেন ধর্মীয় ভোট, কেউ বলছেন বাম ভোট । আশ্চর্য কেউ কিন্তু বলছে না কংগ্রেসের ভোট ও তৃণমূলের ভোট ।
এখন কিন্তু দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে তৃণমূলের
ভোট‌ও বিজেপিতে গেছে । সকলেই উপলব্ধি করতে পারছে যে ভোট একবারে ফেয়ার হয়নি , কারণ প্রচুর বুথের ভিডিও আসছে সেই মতকে আর‌ও জোরালো করে তুলছে । সে যাই হোক ভোটের হাওয়া পরিষ্কার বোঝা গেছে । আবার এদিকে ভোটের পর এত দ্রুত জায়গা বদল হচ্ছে যে জনগণ ঘাবড়ে যাচ্ছে আর‌ও বেশি । এই সময় একদিকে পুলিশের উপর আর সরকারের মুক্ত অবাধ ক্ষমতা নেই তারাও চাকরি বাঁচাতে তৎপর । প্রশাসনের ব্যাপক বদলি। হঠাৎ এস‌এসসি নিয়োগে তৎপরতা । বিদ্যালয় খুলে দেওয়া এইসব নিয়ে প্রচুর ট্রোল হচ্ছে । তবে উন্নয়ন
কি ? উন্নয়ন ছিলনা ? এইসব জটিল প্রশ্নে
মানুষ দ্বিধান্বিত। গ্রামে গ্রামে এত বিপুল
পরিমাণে ক্যাডার থাকায়‌ও কীভাবে তৃণমূলের অফিস হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে ?অফিস ফিরে পেলেও কেউ কী সাহসের সঙ্গে সেই অফিস রোজ খুলবে ?  এইসব জটিল প্রশ্ন ট্রোল হচ্ছে । ভদ্র পোশাক
পরেও , " মিমি ও নূসরাত" ঠিক এক‌ই কারণে তারা মিছিমিছি ট্রোল হচ্ছেন । দলকে দল একদল থেকে অন্য দলে চলে যাচ্ছেন এবং মুখ্যমন্ত্রীকে ধর্ণায় বসতে হচ্ছে ! সব মিলিয়ে ভোটার, জনগণ, পক্ষ বিপক্ষ সকলেই দিশেহারা । ঠিক এইরকম দিশেহারা অবস্থান হয়েছিল ১৯৭২-৭৭ এ এখানে । কে যে কাকে কী করবে সরকারের এম‌এল‌এরাও তখন বুঝে উঠতে পারতো না ‌।  এখন এইখানে জনগণ ভোটের পরে শান্তি চেয়েছিল । কিন্তু
চতুর্দিকে একটা কী হবে কী হবে ভাব ।
বেশি ভাগ ভোটার শান্তি চায় । প্রশাসনের
গতি প্রকৃতি দুড়দাড়িয়ে ৫ বছরের কাজ
১ বছরে করতে গেলে ভুলভ্রান্তি হতে পারে
এটা শাসকদের মনে রাখা উচিত । হটকারী
সিদ্ধান্ত বিজেপি যা নিচ্ছে এবং তারপর
রাজ্য সরকার‌ও হঠকারী সিদ্ধান্ত নিলে
সবকিছু ট্রোল হবে । ফেসবুক হোয়াটস‌অ্যাপ চলতেই থাকবে এবং নেগেটিভ প্রচার আর‌ও বাড়তে পারে ।
যেকোনও ঘটনা দু মিনিটের মধ্যে উত্তর থেকে দক্ষিণ বঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে । কারণ মানুষ আজ তীক্ষ্ণ বিচার বিবেচনা সে নিজেই করতে পারে , ফেসবুকের দৌলতে। এখনও দু পক্ষের সময় আছে হঠকারী সিদ্ধান্ত সামলে নেওয়ার । তা না হলে জনগণ সেই সিদ্ধান্ত ফেরাবে ব্যালটে ।
এর পরের ভোট আর‌ও টাইট হবে এবং
জনগণ রাজার পরাজয় দেখতে
ভালোবাসে ,এই আপ্তবাক্যটি মনে রাখা
জরুরি ।

শনিবার, ১৮ মে, ২০১৯

Poetry of Alok Kundu

সত্যের আলো ছড়িয়ে পড়বে জীবনে

অলোক কুন্ডু

রকমারি আলো তোমাকে চিনতে হবে
আলোর খেলায় দিশেহারা হতে পারো
বিপদের আলো দিশাহীন বাঁক নেবে
আলোর ভেলকি শুধুই সাজানো শব ।

গোটা আকাশটা যতটুকু আলো দেয়
সেইটুকু আলো চিরকাল এক সত্য
যার তার কাছে খুঁজতে যেওনা আলো
ভন্ডের আলো ঝলমলে রোশনাই ।

কে আছে এমন আলোর ঝর্ণাধারায়
এসে দাঁড়াবে আলোর মানুষ স্বরূপ
সঠিক মানুষকে চিনতে পারো যদি
সত্যের আলো ছড়িয়ে পড়বে জীবনে ।

বুধবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

সোহরাব্রিজ সিনেমার আলোচনা ©®অলোক কুন্ডু

গতকাল নন্দনে বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়-এর (২৬-২-১৬) " সোহরা ব্রিজ " রিলিজ
করলো প্রিমিয়ার-শো । বাংলা চলচ্চিত্রের
অন্যধারার ছবির নির্দেশক বাপ্পাদিত্য দেখে
যেতে পারেননি তাঁর এই ছবির প্রিমিয়ার শো ।
তাই তার বন্ধুরা শোকমগ্নতায় করলেন তারই
আলোচনা । যা করাটাই স্বাভাবিক ছিল ।
উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী ব্রাত্য ব্সু । একালের
প্রখ্যাত নায়ক-অভিনেতা প্রসেনজিৎ
চট্টোপাধ্যায়ও উপস্থিত ছিলেন । কাল একে
বৃষ্টি এবং তার সিনেমার পরিচালক সদ্য প্রয়াত
হয়েছেন । কে প্রিমিয়ারটা প্রেজেন্ট করবেন
সে নিয়ে দ্বিধা থাকলেও জড়তা ছিলনা ।
এই গত নভেম্বরেই ঘুরে এসেছি চেরাপুঞ্জি ।
আসলে চেরাপুঞ্জির আসল নামই--সোহরা ;
এটা জেনেছিলাম ওখানে গিয়ে । মেঘালয়ের
সাব-ডিভিশ্যনাল টাউন " সোহরা " কে ১৮৮৩
তে বৃটিশরা চেরাপুঞ্জি রূপে দখলে নেয় ;
ভারতের ইস্ট খাসি হিলস্ কেই সোহরা নামে
খাসিরা আজও ডেকে থাকে । পৃথিবীর ইতিহাসে এখনও চেরাপুঞ্জির বিশ্ব রেকর্ড বৃষ্টিপাত
( ১৮৬১ এর জুলাই থেকে ১ লা অগস্টের
বৃষ্টিপাত ) । আসলে ( So-har-a  কে )
বৃটিশরা উচ্চারণ করে  ' CHURRA '
তে রূপান্তরিত করেন । চেরাপুঞ্জিকে
Land of Oranges বলা হয় । চেরাপুঞ্জিতে
একঘর বাঙালি থাকে তারা কিন্তু খ্রিস্টান
সম্প্রদায়ের তারা এসেছিলেন বাংলাদেশের
সিলেট । ওপারেই সিলেট । অসম-
মেঘালয়জুড়ে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ
বৃটিশদের আসার আগে থেকেই হয়ে আসছে ।
আমি গত নভেম্বরে চেরাপুঞ্জির 
" কনিফেরাস রিসর্টে " উঠেছিলাম । ওই রিসর্টে
প্রতি বছর একদল সাহেব-মেম জার্মানী থেকে
১২ চাকার দো-তলা বাস নিয়ে ১২/১৪
জন বিদেশী আসেন বৃষ্টির বিভিষিকা দেখতে ।
সে কথা অন্য ব্যাপার । যদি আপনারা বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের SOHRA BRIDGE দেখতে
গিয়ে বৃষ্টিপাত খুঁজতে চান ,
তাহলে কিন্তু তা পাবেন না । ট্যুরিস্টরা
চেরাপুঞ্জিতে গিয়ে রাত কাটান না । লোকাল
ট্যুর করে চলে আসেন । দেখেন - গুহা , সিলেট ,
পাহাড়ি রাস্তা  , রামকৃষ্ণ মিশন ইত্যাদি ।
কিন্তু চেরাপুঞ্জির আসল বিষয় হলো - এখানে খোলামুখের কয়্লা খনি ;  শিল্পের অন্যতম
অনুঘটক চুনাপাথর বৃটিশরা আবিষ্কার
করেছিল এখানে । বৃটিশদের তৈরি ঘোড়ায়
চড়া পথ এখনও আছে সোহরাতে ;
চেরাপুঞ্জিতে । পথ চলে গেছে সিলেট । 
যেখান থেকে হয়ে আসছে দীর্ঘ অনুপ্রবেশের
কাহিনী । বাপ্পাদিত্য তার এই চলচ্চিত্রে সেই
কাহিনীকে মূল ফোকাস পয়েন্ট করেছেন ।
কিন্তু কাহিনী এখানে চলচ্চিত্রের মেজাজকে
ধরেছেন - অন্যধারার প্রেক্ষাপটে ।
বহুদিন আগে " দ্য মিস্ট " নামের জাপানি
একটি চলচ্চিত্র দেখেছিলাম । কুয়াশা আর
ছবির নায়িকা জুড়ে ছিল সেই চলচ্চিত্রটি ।
এই ছবির পরিচালক সেই বিদেশী ছবিকে
একেবারেই কপি করেননি । চেরাপুঞ্জিতে
বিদেশীরা আসেন ( গোয়াতেও বিদেশীনিরা
আসেন এবং কোটিপতি বিদেশীনিরা তাদের সেক্সচ্যুয়াল স্যাটিসফ্যাকশন-এর জন্য
এদেশের কিছু যুবককে টাকা দিয়ে
একমাসব্যাপি ভাড়া করেন । এমনকি এইরকম
ভাড়া খাটতে বেশ কিছুদিন আগে কলকাতার
একটি ছেলে বেশ ডলার কামিয়েছিলেন ।
এরকম একজনের সঙ্গে আমার বছর কুড়ি
আগে সারারাত রেলের টিকিটের লাইনে
আলাপ হয়েছিল এবং সেই গল্প শুনেছিলাম ।
তখন অবশ্য সেই যুবক বিয়ে থা করে থিতু
হয়েছিলেন ) এরকমটা যে ভারতের আর
কোথাও হয়না তা কে বলতে পারে ? এই
বিষয়টিকেও এই সিনেমার একটি মুখ্য
অবলম্বন হিসেবে দেখা গেছে । যার জন্য
একটু সেক্সচ্যুয়ালিটি এসেছে খুব নগন্যভাবে ।
আর যাই হোক বাপ্পাদিত্য বাঙালিকে সাবালকত্ব শিখিয়ে গেছেন । কিন্তু এই " সোহরা ব্রিজ  "
সিনেমাটি প্রকৃত অর্থে কাহিনী উপ-কাহিনীর
থেকে বড় ব্যাপার আমার মনে হয়েছে এই
ছবিটি যেন সিনেমাটিক পেইন্টিং । আরো
ভালো করে বলি কথাটা । সিনেমা যে একটি
ভিস্যুয়াল আর্ট এবং অ্যাপ্লায়েডআর্টের মতো
-সোহরা ব্রিজ দেখতে দেখতে আমার সে
কথাই মনে হয়েছে । টাইটেল থেকেই যার শুরু
হয়েছে । চিত্রনাট্য ছাড়া সিনেমা হয়না ।
কিন্তু কথা-বার্তা অত্যন্ত কম সেই চিত্রনাট্যের
পরতে পরতে । এতদিনে বাপ্পাদিত্য বুঝি
বোঝাতে চেয়েছিলেন শুধু মুখে ভারতের
অখন্ডতা বললেই তা অখন্ডতা হয়ে যায়না।
এখানে প্রয়োজনে যেখানে অসমিয়া
( অহমিয়া ) ভাষার যেখানে খাসি ভাষার
প্রয়োজন এবং ইংরেজি উচ্চারণ রাখা দরকার
সেখানে সেটাই অবিকল ব্যবহার করেছেন ।
তাই এই সিনেমা অসম ( অহম)  মেঘালয়েও
দর্শক পাবে । সিলেট থেকে কীভাবে রোজ
রাজনীতির হাত ধরে খুল্লামখুল্লা টাকা-ডলারের
হাত ধরে এপারে ( ওদের কথায় বাঙালিরা
আজও বিদেশী) লোক ঢুকছে সেই আগুনের
মতো বিষয়্কেও এই ছুঁয়ে গেছে । ছবিটি মুখ্যত
সিঙ্গল ক্যারেকটরের ফিল্ম । একটি মেয়ে রিয়া । কনভেন্টে পড়া । তার পিতা লেখক সন্দীপ
চট্টোপাধ্যায় কলকাতা ছেড়ে এবং রিয়ার
মাকে ছেড়ে এক অসমিয়া নারীর কাছে চলে
এসেছেন । সময়কাল নকশাল মুভমেন্ট
থেকে সন্ত্রাসবাদের কথা আছে । এমন কিছু
ডায়লগ আছে যা শুনে মনে হতে পারে যারাই
সরকারে ছিল এবং আছে তাদের
প্রত্যেককে বাপ্পাদিত্য বার্তা দিয়ে গেছেন ।
সে বার্তা পড়তে জানলে সরকার ও দলের
রাগ হবে কিন্তু বাপ্পাদিত্যের বলায় তেমন স্পষ্ট
রাজনীতি নেই । কিন্তু ষা আছে যা আমি
ও আমার স্ত্রী গত নভেম্বরে গোটা একদিন ধরে
ঘুরে ঘুরে দেখে এসেছি সেই  মানুষসমান দীর্ঘ
চেনা নভেম্বরের পোড়া ঘাসের জঙ্গল ।
কয়লা-চুনাপাথর শ্রমিকদের ছেড়ে যাওয়া
কালো কালো পোড়া বাড়ি । সরু পিচের রাস্তা ।
ছোটো পাহাড়ের কোল ঘেঁষে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সিম্বলিক এলোমেলো ক্রস যা আসলে খাসি
সম্প্রদায়ের কবরস্থান । যে রকমটি নির্জন
চেরাপুঞ্জিকে বাপ্পাদিত্য দেখিয়েছেন - সোহরা
আসলে সেই রকম একদম । আমিও সেই
চেরাপুঞ্জিকেই দেখে এসেছি । নায়িকা বা মূল
চরিত্র সারা চেরাপুঞ্জির ফাঁকা রাস্তায় ঘুরে
বেড়িয়েছেন কিন্তু তিনি আসলে তার কলকাতা
ত্যাগী লেখক পিতাকে খুঁজতে এসেছিলেন ।
বিশাল ফ্রেমে সেই সব অবাক নিসর্গকেও
বাপ্পাদিত্য দর্শকের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন
ক্যামেরার কারুকাজে । এই ছবির ক্যামেরা
লোয়ার রিয়ার অ্যাঙ্গেলে প্রথমে স্থির থাকে
মিনিটব্যাপি ধীরে ধীরে অনেকটা পরে বাঁক নিতে
থাকে খুব কাছ থেকে । মনে হয় থ্রি ডি মুভি
দেখছি না তো । এই সিনেমার এডিটিং প্রচুর জাম্পকাটের ব্যবহারে ছবির স্পিডকে ধরে
রাখতে সাহায্য করেছে । ছবির মিউজিক
খাসিয়াদের রূপককে কখনও তুলে ধরেছে
তো কখনও তার সুর দক্ষিণ আমেরিকার
লোক সংগীতের আঙ্গিকে । কখনো সুরকার
দু- একটি মাত্র যন্ত্রানুষঙ্গের ব্যবহারে তার
জাত চিনিয়েছেন । এত কম কথা । স্বল্প উপ
কাহিনী । পিতা-পুত্রির এক সামান্য গল্পকে
এই সিনেমার এডিটররা ( সম্পাদনা)
অসামান্য করে তুলেছেন কতক্ষণ কোথায়
কতখানি রাখতে হবে । এই ছবির সেতুর এক
পারে এক যুবতী যে আজকের দিনের মেয়ে
নিজের শরীর ভোগের কথা যার জানা আছে
ইংরেজি কবিতার মানে যে বুঝতে পারে ;
অবলীলায় ধরাতে পারে একটার পর একটা
সিগারেট । যার কাছে প্রয়োজনে যৌনতা
মদ্যপান দোষের নয় । আর তার ব্রিজ অর্থাৎ
তার পিতাকে খোঁজার প্রয়াস তাকে জানার
ইচ্ছে অবশেষে বুঝতে পারা ও পিছিয়ে থাকা
উত্তর-পূর্ব ভারতের সমস্যাকে সম্যক রূপে
উপলব্ধি করার মধ্যে দিয়ে এই গল্পের
প্রয়োজনে এক অন্য ধারার নারী চরিত্র
ফুটিয়ে তুলেছেন যা ভারতীয় সিনেমায়
দ্বিতীয়বার আসেনি । সিনেমাটির প্রধান
অভিনেতা বরুণ চন্দ । তিনি প্রিমিয়ারের
শুরুতেই বলে দিয়ে ছিলেন এই ছবিকে একটু
অন্যভাবে দেখতে হবে । আমি মনোযোগ দিয়ে
দেখিছি - এ ছবি সিনেমার পেইন্টিং ছাড়া
আমি কিছু ভাবতে পারিনি । কারণ গল্পের
থেকে ভিস্যুয়ালাইজেশন রূপান্তরের প্রধান
বিচার্য বিষয় এখানে ক্যামেরা । কীভাবে তা
প্যান করছে কী দৃশ্যপট তুলে ধরছে এই তুলে
ধরার মধ্যে রঙের প্রাচুর্য যা চেরাপুঞ্জির
বাস্তবতা -রুক্ষ প্রাণহীন । বাস্তবিক যেখানে
পানীয় জলের সমস্যা আছে শুষ্কতার মধ্যে
তার নিদর্শন পাই । অথচ এখানেই বৃষ্টিপাত
বেশি । না এটা ছবির বিষয়ে ছিলনা ।
বাপ্পাদিত্য বেঁচে থাকলে তাঁর সব কথা
হয়তো আবারও বলতে পারতেন....
© অলোক কুন্ডু

বুধবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৯

Subhash Bose :Poetry of Alok Kundu

সুভাষ বোস / অলোক কুন্ডু ©®

দেখলেই বোঝা যায় অসময়েও
মুনিম আগর‌ওয়ালার দিন
আজকাল বেশ ভালো যাচ্ছে
তার ক্যানিং স্ট্রিটের দোকানে ভিড় লেগেই আছে ।
ফুটপাতের ছবিঅলা ছাড়াও
ছেলে-ছোকরাদের অনন্ত আনাগোনায়
দেদার বিক্রি হচ্ছে রাজনৈতিক নেতাদের মুখ
আর সঙ্গে সঙ্গে টালমাটাল হতে থাকছে
মুনিমের মুখের হাসিও ।

পাশের দোকানের বঙ্কু পোদ্দারদের
এ তল্লাটে তিন পুরুষের রঙের বেওসা ।
যত‌ই ইলেকশন এগিয়ে আসছে
মুনিমের খরিদ্দারের ভিড়
বঙ্কুর দোকানকে ছাপিয়ে চলে যাচ্ছে যেন
বঙ্কু বললো- তুর বাজারটা খুব জমেছে ভাই
                                                     যো বোল ?
এতো দেখছি সুভাষ বোসকে ভি ছাপিয়ে গেল রে।
মুনিমের হাসির সাউন্ড সিস্টেমের স্পিকারে তখন
ডলবি টেকনোলজির ধুম--
মুনিম পিচ্ আওয়াজ করে একটু দূরে
পানের পিক ফেলে এলো
টাকা গুনতে গুনতে
হাসি তার আর থামতেই চায়না ।

এবছর‌ও ২৩ শে জানুয়ারির আগেই
মুনিমের ব‌উ বলে দিয়েছিল
ইবারে কিন্তু ভালো দুটো শাড়ি দিবে
লড়কির জন্য ভি সিসা ওয়ালা লেহেঙ্গা জরুর চাই।
ফি-বছর ২৩ শে জানুয়ারি এলে
বাড়ির সিঁড়িতে গণেশজির পাশে টাঙানো ছবিটায়
ঝাড়পোচ হয় চন্দন লাগানো হয়
প্রতিদিন মালা লাগাতে লাগাতে
মনে মনে বলে 'বেস্ট সেলার বঙয়ালি বলতে তো
একজন‌ই আছেন ।'
-- প্রণাম করে আসছে কতকাল মনে নেই ।
শুধু জানে ছবিটা মুনিমের বাবার আমলের
বেওসায়ি হলেও ছবিটা কিন্তু
পাল্টানোর কথা ভাবেনি সে ।

একদিন এক সাংবাদিক বাবু এসেছিল
জিজ্ঞেস করেছিল রবীন্দ্রনাথ টেগোর
বিশ্ব কবিকে মুনিম চেনে কি না ?
ফুল দূধের চা খাইয়েছিল বাবুকে
বলেছিল কি যে বলেন রবি ঠাকুরকে কে না চেনে
কিন্তু সুভাষ বোসের কাছে কিছু নয়
সুভাষ বোসের ছবি যত ক্যালেন্ডার হয়
স্কুলের ছেলেমেয়েরা যত কেনে
সত্যি বলছি বাবু
আর কার‌ও ছবির অত বেওসা হয়না
সুভাষ বোস ভগবান আছে ভগবান ।

বঙ্কু মস্করা করে আজ বললো
-'কিন্তু এখন তো তোর দোকানের ভিড় সুভাষ বোসের নয় ?
এত ভিড় তো আগে ছিলনা কোনোদিন
এ ভিড় তো --
সুভাষ বোসকে ভি ছাপিয়ে গেল রে।'
টাকা গুনতে গুনতে আর একবার পানের পিক্ ফেলে মুনিম ।
আগের মতো হাসতে পারলো না
মুখটা এখন গম্ভীর হয়ে এলো
বললো -ভিড় তো বড় জোর ইলেকশন পর্যন্ত
জিতলে ভালো
কিন্তু হেরে গেলে কী হবে ভাব
এইসব ছবি একটাও বিক্রি হবে না রে ভাই
গোডাউনেই পড়ে থাকবে ।

ভিড় একটু পাতলা হয়েছে এখন
ওড়িয়া বামুন জগদীশের লাগানো
সদ্য মালা দেওয়া পিতাজির ছবির পাশে
শ্রীরামকৃষ্ণ শ্রীমা স্বামীজি রবীন্দ্রনাথ 
ওদিকের দেওয়ালে বিশাল সুভাষচন্দ্র
তার দিকে চেয়ে আছেন 
মুনিম অবাক হয়ে দেখলো
ছবিগুলো থেকে আলোর জ্যোতি বেরিয়ে আসছে...

©® অলোক কুন্ডু

রবিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮

গুজরাটের পাটোলা
------------------------
৮০০ বছর আগে গুজরাটের সোলাঙ্কিদের রাজবংশের রানীদের শাড়ি তৈরি করতে মহারাষ্ট্রের কোলাপুর থেকে আমেদাবাদের ১৩০ কিমি দূরে পাটনে ( এখানকার দুর্গা মূর্তিও ৮০০ বছরের প্রাচীন ) চলে আসে । চীন থেকে ৮০০ বছর ধরে রেশমি সুতো আসছে পাটোলা শাড়ি তৈরির শিল্পীদের জন্যে সালভি পরিবারের হাতে । মোটামুটি ভালো পাটোলা শাড়ির দাম দেড় থেকে
আড়াই লাখ টাকা দাম লাগে । শোনা যায় সোনিয়া গান্ধীর যে ছবিটি রেগনের সঙ্গে তোলা হয়েছিলো সেখানে যে শাড়িটি তিনি পরে ছিলেন তার দাম অনেকটাই বেশি । শাড়িটি পাঁচ লাখে কিনেছিলেন রাজীব
গান্ধী । একটি শাড়ি আছে সুইজারল্যান্ডের
যাদুঘরে থাকলেও কে সেই ক্রেতা তার নাম
জানা যায়নি । এই শাড়ির শাড়ি একলাখ
থেকে শুরু । বিশেষ সুতো এর জন্যই আসে। আর এই সালভি পরিবার সেই বুনন তা ৮০০ বছর ধরে তাদের পরিবারের মধ্যেই রেখেছে । এই পরিবারের মেয়েদের পর্যন্ত আগে বোনা ঘরে যাওয়া নিষেধ আছে । তবে অনেক দিন ওই ভাবনা উঠে গেছে ।
এই শাড়ি বোনার আগে নকশা কাগজে কেটে নিতে হয় । যেহেতু সুক্ষ্ম কাগজ কাটতে একমাত্র জাপানিদেরই দক্ষতা
আছে তাই তারা কাগজের নকশা কেটেও এই শাড়ি বুনতে তারা পারেনি জাপানিরা।
পাটোলার বিশেষত্ব হচ্ছে এর সুতো আগে
ডিজাইন হয় পরে বোনা হয় এবং দুপিঠই এর সমান যে কারণে এটি ইউনেস্কোর খাতায় স্বীকৃতি লাভ করেছে । পাটোলায়
এদের একটা আস্ত মিউজিয়াম আছে ।

রবিবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৮

Chaniya Coli of Bhuj ©® Alok Kundu

চানিয়া চোলি, ল-গার্ডেন, ভুজৌড়ি ও রানী কি
হাজিরাতে কচ্ছের ক্র্যাফট / ©® অলোক কুন্ডু

গুজরাটের কচ্ছের ট্রাইবাল আর্টিস্টদের কাচ বসানো এমব্রয়ডারি কাজ যুক্ত মেয়েদের ঘাঘরার স্থানীয় নাম চানিয়া চোলি ( চ্যানিয়া চোলি ) চোলি অর্থাৎ ভারতীয় মহিলাদের সনাতন ড্রেসকোডের উপরাংশ অর্থাৎ ব্লাউজ । চানিয়া চোলি অথবা ঘাঘরা চোলি বা লেহেঙ্গা চোলি ভারতবর্ষের মধ্য ও উত্তর ভারত এবং নেপাল জুড়ে তিনপিসের ( ঘাঘরা চোলি দোপাট্টা/চুনরি) এই ট্র্যাডিশনাল ড্রেসটি উৎসব ও বিয়ে বাড়িতে মেয়েদের মহান পোশাক হিসেবে ১০ ম সেঞ্চুরি থেকে উঠে এসেছে এবং মোঘল আমলে এই পোশাকের রমরমা ও বৈচিত্র্যময়তায় প্রভাব পড়ে ।
তবে এই ঘাঘরা চোলির গুজরাটি সংস্করণ চানিয়া চোলি তৈরি করতে ২০ দিন সময়
লাগে । গুজরাটের কচ্ছে বহুল পরিমাণে ঘরে ঘরে তৈরি হয় । সকলেই জানেন কচ্ছে লবণ পাওয়া যায় , উটের আন্তর্জাতিক দৌড় প্রতিযোগিতা হয় , ঘরে ঘরে পালিত হয় মোষ,
তাই প্রচুর ঘি-দুধ পাওয়া যায় । ভুজে আমির
খান লগান করেছিলেন মনে আছে নিশ্চয়ই ।
প্রায় মরুভূমির দেশে দেখার জিনিস অনেক আছে । বিশেষকরে ভুজের ক্র্যাফট মার্কেট
সারা পৃথিবীতে বিখ্যাত । এখানকার জিনিস ইউনেস্কোর ক্র্যাফট প্রদর্শনীতে স্থান করে
নিয়েছে । এখানকার বাঁধনি থেকে ভেজিটেবল ভাইয়ের সুতির কাপড় শাড়ি আজ ভারতের বাজার থেকে বিদেশের রপ্তানি হয় । শুধু শাড়ি কাপড় নয় এমনকি ঘাঘরাও নয় সোফা কভার থেকে বালিশের ওয়াড় ব্যাগ থেকে বটুয়া পর্দা থেকে জ্যাকেট শাল কোনো আইটেম‌ই তৈরি হতে বাকি নেই এই ভুজে। কিন্তু ট্যুরিস্টরা খুব একটা ভুজে যাননা । গেলেও রাত্রি বাস করে বেরিয়ে যান । কোঅপারেটিভ সিস্টেমে ভুজে
মেয়েরা ছেলেরা এই হাতের কাজ করে থাকে ।
সেখানে চানিয়াচোলি ছাড়াও অঢেল হ্যান্ডিক্র্যাফটের জিনিস পাওয়া যায় ।
শহর থেকে ১৫ কিমি দূরে ভুজৌড়িতে গড়ে উঠেছে ঝাঁ চকচকে দোকান থেকে গেরস্তের
বাড়িতে ক্র্যাফট আইটেমের বাজার । আজরখপুরে ঘরে ঘরে তৈরি হয় আজরখ
হ্যান্ড প্রিন্টের সিল্ক তসর শাড়ি সুতির ড্রেস
মেটিরিয়াল । ভুজ বাজারের ফল পট্টির
ভেতরেও এই সব ক্র্যাফট ও প্রিন্টের রেডিমেড
কিছু দোকান আছে । কচ্ছে তিনদিন লাগবে
একদিন প্রাসাদ মহল মন্দির মিউজিয়াম এইসব দেখে নিতে । একদিন নুনের বিচ রান । একদিন ভুজৌরিও আজরখপুর । কেনেন বা না কেনেন জিনিসপত্র দেখাটাই আপনার ট্যুরকে সমৃদ্ধ
করবে । এই সবই ডলারে বিক্রি হবে কচ্ছের
রান উৎসবে । অক্টোবর থেকেই তার তাঁবু
পড়তে শুরু করেছে । জলের ট্যাঙ্কার তেলের
টাঙ্কার বাথরুমের ঝকঝকে দেখে শীতে বুঝতেই
পারবেন না এটা একটা মরুভূমির দেশ ।
এলাহি করে সাজানো শুরু হয়েছে রান উৎসবের
অস্থায়ী পার্ক, দোকান, এসি ঘর ,ঝকঝকে রাস্তা।
একমাস ধরে এইসব থাকবে তবে মূল উৎসব
সাতদিনের । তাতেই লক্ষ লক্ষ ডলার আমদানি
হবে । হ্যাঁ যা বলছিলাম তা হলো এই ভুজৌড়িতেই
তৈরি হয় গুজরাটি চানিয়া চোলি । কলকাতায়
ডান্ডিয়া নাচের মেয়েদের এই ড্রেস পরতে দেখলেও নবরাত্রিতে লোকাল মেয়েরা লাঠি
ছাড়াই নিজেদের পোশাকে নাচ গান করে থাকেন। যদি আপনি ভুজৌড়ি না যেতে পারেন
তাড়াতাড়িতে তাহলে ভুজের ফল মার্কেটের ভেতরে কয়েকটা দোকান পাবেন । তা নাহলে
আমেদাবাদের ল গার্ডেনের ফুটপাত মার্কেটেও
ভুজের হ্যান্ডিক্র্যাফট অঢেল পেয়ে যাবেন ।
ওখানে চানিয়া চোলি থেকে ব্লাউজ সবকিছু
একটু দরদাম করে কিনতে হবে আপনাকে আর
এইসব কাপড় কিনতে চাইলে বা আরও একটু ভালো নিতে চাইলে ভুজৌড়ি অথবা আমেদাবাদের মানিকচকের রানী কি হাজিরাতে অনেক গুলো হোলসেল ও রিটেল দোকান
আছে । এইসব ইন্টারনেটে পাওয়া গেলেও লোকাল মানুষকে বলে জায়গা উদ্ধার করা খুব
সহজ কাজ নয় । এতদিন এই তিনটি জায়গাকে একসঙ্গে করে কেউ প্রকাশ করেনি । আমি এইসব খুঁজে পেতে ভুক্তভোগী এবং অনেক
সময় খরচ করে এইসব জায়গায় গেছি । সঙ্গে আমেদাবাদের ল-গার্ডেনের ও রানী কি হাজিরা
মার্কেটের ছবি দিলাম । ©® অলোক কুমার কুন্ডু



বৃহস্পতিবার, ১ নভেম্বর, ২০১৮

RANI KI VAV ,PATAN,GUJRAT

রানী কি ভাও ( Rani Ki Vav) ও পাটোলা
শাড়ির জন্য গুজরাটের পাটন বিখ্যাত - অলোক কুন্ডু

স্বাধীনতার বহু আগে পোরবন্দরে গান্ধীজি জন্মগ্রহণ করেছিলেন । পরে রাজকোটে গান্ধীজির বাল্যকাল কাটে । কিন্তু গান্ধীজি
সবরমতীর তীরে আশ্রম গড়ে যখন থাকতে লাগলেন তখন গান্ধীজি বলেছিলেন -"প্রথমত
আমি গুজরাটি দ্বিতীয়ত এই আশ্রম গড়তে
পয়সাঅলা কিছু মানুষের দরকার তা আমেদাবাদে আছে । আমেদাবাদে এখনও
অনেক কিছু করার আছে " সেই আমেদাবাদ বহু
বছর গুজরাটের রাজধানী ছিল এবং এখন‌ও আমেদাবাদ আর গান্ধীনগর গায়ে গায়ে ।
কোনটা আমেদাবাদ আর কোনটা গান্ধী নগর
বোঝা দায় । সে যাই  হোকনা কেন, আমেদাবাদের নির্মাতা আহমেদ শা, সোলাঙ্কিদের
পরাস্ত করে তাদের বৃহত্তর গুজরাটের রাজধানী পাটনকে তুলে আনেন সবরমতীর তীরে নাম দেন আহমেদাবাদ । আসলে মহারাষ্ট্রের কিছু অংশ নিয়ে ,সৌরাষ্ট্র সহ গুজরাটের রাজধানী ছিল পাটন । সোলাঙ্কি রাজত্বের প্রতিষ্ঠাতা বনরাজ চাওডা (৭৪৫ AD) Anhilpur-Patan নামে গুজরাটের রাজধানীর পত্তন করেন । ইন্টারনেট হ‌ওয়ায় আমরা মাত্র কয়েক বছর হলো এই পাটনের নাম রপ্ত করতে পেরেছি । তার আগে কেবলমাত্র ইতিহাসের ছাত্র ছাত্রীরাই ও পর্যটকদের মধ্যে পাটনের পরিচিত সীমাবদ্ধ ছিল । কিন্তু সাধারণ বাঙালির মধ্যেও পাটন বলতে নেপালের পাটনের নাম‌ই মনে
পড়ে । আমেদাবাদ ( আহমেদাবাদ বা আমদাবাদ ) থেকে পাটনের দূরত্ব আগে ছিল ১০৮ কিঃমিঃ ( গুগল ১৪৫ ) কিন্তু আমি
গেছি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ রুট ধরে মেহেসানা ও
মোদেরার সূর্য মন্দিরের মতো হেরিটেজ ছুঁয়ে ( আমেদাবাদ-পাটন ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হাইওয়ে )
একদিকে ১৩৫ কিঃমিঃ হবে । একেবারেই গ্রাম বলা যায় । বিশেষ করে আদি পাটন , সিটি থেকে একটু দূরে তৈরি হয়েছে । আসল পাটন
প্রায় গ্রামের মতোই আছে । হাঁটা পথে (১) পাটোলা হাউস মিউজিয়াম (২) পাটন হেরিটেজ
মিউজিয়াম (৩) রানী কি ভাও ১০/১৫ মিঃ-এর মধ্যে হয়ে যাবে , দেখতে কিন্তু ২ ঘন্টার মতো
সময় দিতে হবে , কারণ রানী কি ভাওয়ের পিছনেই আছে সোলাঙ্কি রাজাদের আর এক স্টেপ ওয়েল বলা যায় প্রজাদের জন্য জলের
তালাও/তালাব/পুকুর /ভাও বাঁধানো ও একসময়ের ওই ভাওতেও মন্দির ছিল জলের
মধ্যে । চতুর্দিকে চ্যানেল করা মাঝে উঁচু জমি
তাতে মনে হয় এটিও ছিল জলের রিজার্ভার
এবং কাছেই ছিল সরস্বতী নদী । সেখান থেকে
জল আসতো । এখন নদী এক কিলোমিটার
দূরে । এখন তৈরি হয়েছে সেখানে একটি ফিল্টার
পানীয় জলের প্রকল্প এই দ্বিতীয় ভাওয়ের অনতিদূরে । যদিও দ্বিতীয় খোলা সাদামাটা
জলের বিস্তৃত ঘাট , খুব বেশি স্থাপত্য নেই ।
ছিল কিনা বোঝার উপায় নেই । তবে তথ্য
বলছে ওখানেও ঘাটে জলের ওপর মন্দির
ছিল , ভাঙা কিছু বাস্তু পড়ে আছে । মনে করা
হয় এখানে মহিলা ও পুরুষদের আলাদা ঘাট
ছিল জলের মধ্যে মন্দিরকে ঘিরে । আসলে
গুজরাটকে সুলতান মাহমুদ থেকে মহম্মদ গোরি, তৈমুর লঙ,হুমায়ূন থেকে ঔরঙ্গজেব এমনকি আকবর আক্রমণ করে দখল করতে চান । আফগানিস্তান মধ্য এশিয়া , দিল্লির সুলতান
ও বিভিন্ন প্রান্তিক রাজত্ব বহুকাল ধরে গুজরাটকে আক্রমণের দিশা করেন ও ধ্বংসলীলা চালিয়ে যান । গুজরাট নিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি কাটাকাটি সুলতান
ও তাদের আমির ওমরাহ ও স্থানীয় শাসকদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে ছিল । দীর্ঘ দিনের
লড়াই চলে তার মধ্যে দু/তিন বার মুঘল সাম্রাজ্যে
থেকে গুজরাট হাতছাড়া হয়ে যায় । কিছু বছর
আগে এই পাটনে সরপঞ্চ নির্বাচন নিয়ে হিন্দু-মুশলিম রায়ট হয়েছিল , যদিও সেইসব ঘটনা যেন আর না হয় দেখতে হবে গুজরাট প্রশাসন ও সরকারকে । আমি ট্যুরিস্ট হিসেবে পাটনকে দেখতে চাই তার মলিনতা
যেন আমার মন খারাপ করে না দেয় । পাটনের ২০১১-এর জনসংখ্যা ১,৩৩,৭৪৪ । হিউয়েন
সাঙ গুজরাটের বহু স্থানের গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করেছেন কিন্তু তখন পাটন ছিলনা । আইহোল লিপি থেকে জানতে পারি নর্মদা থেকে কাবেরী পর্যন্ত চালুক্য রাজত্বের সীমান্ত ছিল । ৭৪৫ AD তে চালুক্য / সোলাঙ্কি রাজত্বের প্রতিষ্ঠা করেন বনরাজ চাওডা । উত্তর মহারাষ্ট্র ও বিদর্ভে বাকাটদের পতনের পর সোলাঙ্কি রাজত্ব দুর্ভেদ্য করতে তাঁরা ( ৯৪০ CE থেকে ১১২২ CE) তারা
পাওয়াগড়ে দূর্গ নির্মান করেন । ১৫ সেঞ্চুরিতে
মহম্মদ বেগাদা পাওয়াগড়‌ও দখল করে নেন ।
বর্তমানে ভদোদরা থেকে ট্যুর নিয়ে রোপ‌ওয়ে করে পাওয়াগড়ের ধ্বংসাবশেষ দেখে নেওয়া
যায় । পাটন হলো মাউন্ট আবু ও আমেদাবাদের মাঝে । পাটনের পথে পড়ে হিন্দু মন্দির স্থানীয়
মদেরা গ্রামে ( এটিও ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অন্তর্ভুক্ত) । মদেরায় জানুয়ারি মাসে তিন দিনের
ক্ল্যাসিক্যাল ড্যান্সের ফেস্টিভ্যাল হয় । মদেরার
মন্দিরটি ভারতের দ্বিতীয় সূর্য মন্দিরের তকমা
পেয়েছে ও ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে স্থান পেয়েছে
মন্দির তৈরি করেন সোলাঙ্কি/ চালুক্য রাজা
ভীম-১ । মোদেরার কাছেই আছে আর এক
সূর্য মন্দির ও রাজ প্রাসাদ পুষ্পবতী নদীর তীরে। মেহেসনাতে । মেহেসনার চামুণ্ডা মন্দির বিখ্যাত মূর্তি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অন্তর্ভুক্ত । তৈরি করেন Mehsaji । মোদেরার সূর্য মন্দিরের সঙ্গে আছে
সমবেত হল, সূর্য কুন্ড ও মন্দির এবং এইসব
ভগ্নাংশ নিয়ে একটি দুর্লভ মিউজিয়াম । সুন্দর বাগান আছে সবকটি হেরিটেজের সঙ্গে এগুলির
সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয়েছে নরেন্দ্র মোদীর মুখ্যমন্ত্রীত্ব
কালে । সোলাঙ্কিরা ৮০০ বছর আগে সৌরাষ্ট্র
থেকে যে তাঁত শিল্পীকে এনেছিলেন রানীর
শাড়ি তৈরির জন্য তারা পাটনে থেকে গেছেন।
এঁদের শাড়ির নাম হলো পাটোলা । এঁদের পদবী
থেকে শাড়ির নাম । ক্রমে ৭০০ বংশধর মিলে সারা বিশ্বের বাজারে পাটোলা শাড়ি পাঠানো
ছিল এদের পারিবারিক ব্যবসা । প্রথম দিকে
এরা নিজের মেয়েকে এই শাড়ি তৈরির ব্যাকরণ
শেখাতো না । পরে তা আটকানো যায়নি । এখন
এঁদের পরিবারের ধন দৌলতের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা
ও অন্যান্য ব্যবসায় এরা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে
পড়েছে । যার ফলে এখন একটা পরিবার এই
বিদ্যা ধরে রেখেছে পাটনে । যার মিনিমাম দাম
এক লাখ থেকে সাত/ আট লাখ । পাটনে ডুপ্লিকেট ছাপ মেরে পাটোলা বিক্রি হয় তার
দাম‌ও ১০.০০০/- হাজার । কিন্তু সেগুলি নামে
পাটোলা নয় এবং ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ভুক্ত নয় ।
পাটোলা শাড়ি বাজারে পাওয়া যায় না । এঁদের
কাছে অর্ডার দিতে হয় । রাজা ভীম -২( পিতাপুত্র মিলে ১০২২-১০৬৪) হঠাৎ মারা যেতে রানী
উদয়মতী এই নান্দনিক আশ্চর্য এবং বিস্ময়কর
স্টেপ ওয়েল বা ধাপ কুয়োটি তৈরি করেন কিন্তু
তিনি সমস্তটা দেখে যেতে পারেননি । মূলা রাজা ও খেমরাজা দুই বংশধর রেখে যান । Rani Ki Vav সরস্বতী নদীর তীরে ( ১১ সেঞ্চুরিতে তৈরি)
বর্তমান ১০০ টাকার ল্যাভেন্ডার কালার ব্যাঙ্ক নোটের উল্টোদিকে রানী কি ভাওয়ের মোটিফ
মুদ্রিত হ‌ওয়ায় গুজরাটের ঐতিহাসিক মূল্যকে
ভারত সরকারের এক বিরল স্বীকৃতি হিসেবে
দেখছে গুজরাটিরা । ৬৬ মিটার চওড়া ও
১৪২ মিটার লম্বা এটি সাত তলা বিশিষ্ট সিঁড়ি
দিয়ে নীচে নেমে গেছে ( এখনকার মাপে ১০/১২
তলা নীচে হবে) তবে বিভিন্ন সময়ে পাটনে দেশী-বিদেশী সুলতানদের আক্রমণে রানী কি
ভাওয়ের উপরের অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে ।
হিন্দু ধর্মের দেবতা ও অপ্সরা মূর্তি দিয়ে সুনিপুণ ভাবে বালি পাথরে খোদাই করা এই তালাও
বা পুকুর । ২০১৪ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের ও ২০১৬
ভারতের শ্রেষ্ঠ পরিচ্ছন্নতা পুরস্কার পায় এই
সৌন্দর্য স্থাপত্য । দুর্গা কল্কি অবতার শ্রীকৃষ্ণ শ্রীরামের মূর্তি গুলি করা বলছে যেন । অনুপম
খোদাইকৃত কিছু ঝাফরিও আছে দেওয়াল বরাবর । ৫০০ র বেশি মূল বড় মৌলিক ভাস্কর্য
প্যানেল ও ১০০০ এর বেশি মিনিয়েচার ভাস্কর্য
প্যানেল ছাড়াও থাম , সিলিং, জাফরি দেওয়ালে
ধর্মীয় মোটিফে ভারতীয় ধর্মীয় মাইথোলজির
বিকাশ ঘটেছে । আছে যোগিনী, নাগকন্যা, সোলহা-সিঙ্গার বিশিষ্ট স্টাইল , বিষ্ণুর দশাবতার। মোট ১৬ রকমের স্টাইলে ফেসিয়ালের দেখা মেলে এখানে ।  একেবারে শেষে একটি কুয়ো সংশ্লিষ্ট হয়েছে যার উপরের অংশের তিন দিক ঘেরা সেখানে পোড়া ইঁট লক্ষনীয় । এই ট্যাঙ্কটি উপর থেকে ক্যামেরা দিয়ে দেখতে হয় ঝুঁকে দেখা যায় না । সেখানে জল আছে। ৯. ৫ /১০ মিটার গোল আকৃতির ও ডিপ ২৩ মিটার। এন্সিয়েন্ট রাজস্থানী শিল্প রীতিতে এই আয়তাকার পুকুরের স্থাপত্য রূপ পেয়েছে । এই ধরনের ধাপ পুকুরের মধ্যে পৃথিবীর মধ্যে এটি সর্বশ্রেষ্ঠ । একে ১১ সেঞ্চুরির ওয়ান্ডার্স বলা হয়েছে । ৫০/৬০ বছর আগেও এখানকার জলে জন্মানো জড়িবুটি থেকে ভাইরাল রোগ সেরে যাওয়ার বহু প্রমাণ আছে । কিন্তু রানী কি ভাউ এখন সর্বশ্রেষ্ঠ পরিচ্ছন্ন স্থান হয়েছে তাই এর বাইরে হয়েছে সুন্দর মনোরম মনোমুগ্ধকর বাগান । গাড়ি পার্কিং ঠান্ডা ফিল্টার করা পানীয় জলের ব্যবস্থা । রানী কি ভাও কে ঝকঝকে তকতকে করা হয়েছে । জায়গায় মাপ ১১.৬ একর । বাবার জোন
৩১০.০ একর । এর সমস্তটায় আজ আর যেতে দেওয়া হয়না স্যুইসাইড করা ও স্থাপত্য নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ভয়ে । ভেতরে একটি ট্যানেল ছিল যেটি এখন বুঝিয়ে বেলা হয়েছে পাথর ও কাদা দিয়ে নিরাপত্তার জন্য । ঐতিহাসিকরা মনে করেন আক্রমণ হলে রাজার সৈন্য সামন্ত নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা করা ছিল কেউ বলেন বর্ষায় জল আনার জন্য। তবে রাজ্যের নিরাপত্তার জন্য‌ও একে ব্যবহার করার যতটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ । এটি ৬৪ মিটার লম্বা ও ২০ মিটার প্রশস্ত ছিল । করিডোর হিসেবেই এটি ব্যবহার হতো মনে হয় ।
ট্যানেলটি পাটনের একটি গ্রাম সিদপুর পর্যন্ত
গিয়ে মিশেছে । এই রানী কি ভাওতে সিঁড়ি ভেঙে
নামলে ঠান্ডা বাতাস অনুভব করবেন । কোনো রানী তার ভালোবাসার জন্য কোনো রাজার জন্য এমন নিরিবিলি সৌধ নির্মাণ করে গেছেন কিনা
সন্দেহ হয় । অনেকে বলেন বিধবা রানী এই
নিরিবিলি পুকুরে এসে রাজা ভীমের জন্য দুঃখ
ভাসাতেই এরকমটা করেছিলেন সেখানে ধর্মীয়
মোটিফে তিনি বুকের কষ্ট দেবতার কাছে অর্পণ
করতেন কিন্তু এই স্থাপত্য শেষ হ‌ওয়ার আগেই
রাণি মারা যান । যেহেতু এটি ভূমিকম্পের প্রন
এরিয়া তাই এর স্ট্রাকচার  মাঝে মাঝেই পরীক্ষা
করা হয় । ভুজের ভূমিকম্পের সময় খুব একটা
এর ক্ষতি হয়নি যা বিভিন্ন আক্রমণে এখানকার
ক্ষতি হয় । অনেকেই মনে করেন পাটনে এতবার
আক্রমণ হ‌ওয়া সত্বেও রানী কি ভাইয়ের উপরের
অংশ ছাড়া কিছু মাত্র ক্ষতি করতে পারেনি আক্রমণকারীরা । রাজা কর্ণ এই কাজটি শেষ করেন । Copyright  ©®Alok Kumar Kundu

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...