শনিবার, ৪ জুলাই, ২০২০

চিন ভারত যুদ্ধ

#অলোক_কুন্ডুর_লেখালিখি_ও_কবিতা

#চিন_ভারত_যুদ্ধ_হলে_চিন_অর্থনৈতিকভাবে_ক্ষতিগ্রস্ত_হবে...

ইতিহাস সাক্ষী, মুছে যায় বিস্তারবাদীরা: লাদাখে দাঁড়িয়ে চিনকে বার্তা প্রধানমন্ত্রী মোদীজির গতকাল। লাদাখে গিয়ে সরেজমিনে দেখার কথা ছিল রাজনাথ সিংহের, তড়িঘড়ি বাতিল হয় সেই যাত্রা যখন বোঝা যায় চিনকে সপাটে ছয় মারার দরকার আছে এখনই। আপনারা ভেবে দেখুন সাম্প্রতিক গন্ডগোলের আগে, প্রথম দিন যখন আলোচনার কথা ছিল, তখন আমাদের ব্রিগেডিয়ার চিনের ডেরায় গিয়ে তিনঘন্টা বসে ছিলেন। বেলা ১১ টার মিটিং শুরু করে চিন বেলা ২ টোয়। যে দেশের শৃঙ্খলা শ্রদ্ধা করার মতো তাদের আচরণ আসলে প্রথম থেকেই ভারতকে কোনঠাসা করার। অস্ট্রেলিয়া, জাপান, আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যখন একযোগে চিনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বলতে শুরু করেছে এবং অস্ট্রেলিয়া যেদিন বিমান ও অস্ত্র কেনার বরাত দিয়েছে সেদিনই ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাদাখ গেল। এর মধ্যে কোনও কূটনৈতিক যোগ থাকলেও থাকতে পারে। ইতিমধ্যে মহারাষ্ট্রের সাইবার বিশেষজ্ঞরা দেখেছে যে এই কদিনে চার হাজারবার ভারতের সাইবার ক্রাইসিস তৈরি করার
চেষ্টা করেছে চিন। মহারাষ্ট্র সরকার, রেল, টেলিফোন ও আর‌ও সরকারি প্রকল্প মিলে যা বয়কটের সিদ্ধান্ত হয়েছে দূরদৃষ্টিহীন ভারতবাসীও ভেবেছিল ভারত কিছুই করতে পারবে না। আসলে ভারতে এখন যত আমাদের লপরচপর সব‌ই চিনের দয়ায়, এটা মনে রাখতে হবে। দিশেহারা অর্থনীতিকে চিনের কাঁচা পয়সা দিয়ে উন্নত করার চেষ্টা যতটা হয়েছে ততটা প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ হয়নি, এই সত্যের প্রচুর ইতিহাস আছে। প্রতিরক্ষা খাতে কীভাবে বরাদ্দ বাড়ানো যায় ভারতবাসী কখনও বোঝেনি। এতটাই গোঁয়ারগোবিন্দ নাগরিক এখানে। যেভাবে হোক ভর্তুকি দাও আর কিছু করে দেখাও তবে আমি ভোট দেব, এখানকার রাজনৈতিক দল ও নাগরিক এইভাবে চুক্তিবদ্ধ পরস্পরের। কিছুতেই শিক্ষার আমূল সংস্কার এখানে হবেনা।
কি কংগ্রেস রাজত্বে কি বিজেপি রাজত্বে সিদ্ধান্তের কোনও বদল নেই। সমালোচনা ছাড়া ভারতবাসীর আর অন্য কিছু বোঝেও না। মোদ্দা কথা ভারতের ৫০ টিও যুদ্ধ বিমান নেই। তাহলে উপায় কি যুদ্ধে তো লড়তে হবে? ভারতের একটা সুবিধা যে চিনের ঝা‍ঁ চকচকে শহরকে ভারতের ২০/২৫ টি বিমান তাক করে আছে। সুপারসনিক বোম না থাকুক দেশজ মিশাইল কিছু আছে। লড়াই দুপক্ষই লড়বে। ভারতের এবারে প্ল্যান কিন্তু চিনের জায়গা দখল করা সে কারণে ৪৫/৫০ হাজারের মতো ব্যাপক সেনা সমাবেশ করেছে ভারত। যুদ্ধ হলে ভারত চিনে ঢুকে যাবে। এক‌ই সঙ্গে পাকিস্তানকেও দুহাত নিতে চায় আমাদের বিমানবাহিনী, কারণ পাকিস্তানের এয়ারবেস যদি চিন ব্যবহার করে যুদ্ধের সময় তাহলে এক যাত্রায় পৃথক ফল হবেনা। অবশ্যই অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও ইজরায়েলের সাহায্য ধরে নিয়ে ভারত এগোতে চাইছে। কিন্তু ৫৯ টি অ্যাপ ও বেশকিছু টেন্ডার ও চুক্তি বাতিল করার ফলে ( ভারতের চৈনিক পন্থীরা এখন মুখে আঙুল ও লাগাম লাগিয়েছে। কারণ এরা ভেবেই নিয়েছিল ভারত কিছুমাত্র প্রতিবাদ করতে পারবেনা)‌। সত্যিই ভারতের হাতে তেমন যুদ্ধ বিমান নেই যা দিয়ে চিনের মোকাবিলা যায়। ইলকট্রোম্যাগনেটিক সেন্সর রেডিও, ৩০/৪০টি বিমান, ভালো মেশিনগান, রাশিয়ান ডেফিনিট টার্গেট মিশাইল এক্ষুনি আমাদের চাই বেশ কিছু। সবে এক সপ্তাহ আগে রাশিয়াকে বরাত দেওয়া হয়েছে। যুদ্ধ তাড়াতাড়ি হবে নাকি হবে না। এইসব প্রশ্নের মধ্যে বলা ভালো যুদ্ধ হবে না। কারণ চিন দেখছে যত সহজে ভারতকে চেপে মেরে ফেলবে বলে ভেবছিল ঠিক ততটা সহজ হবে না। কারণ হংকং, তাইওয়ান, জাপানের হয়ে ভারত কিন্তু তখন চিরকাল সেখানে মদত দেবে। আসলে ভরতুকির জন্য যে আমাদের দেশের সমূহ ক্ষতি এটা আজকে মেনে নিতে হবে। ভর্তুকি দিতে থাকলে একটা সময় এইদেশের সমস্ত জনগণ কাজ বিমুখ হয়ে যাবে। চিনেও ভর্তুকি আছে সেই ভর্তুকি খুব সামান্য নাগরিক পায়। তাদের মধ্যে কিছু লোককে ঘরে বসে কিছু উৎপাদন করতে হয়
তবে ভর্তুকি পায়। ১০০ দিনের কাজের মতো ঘাস কাটা নয়। ভর্তুকি দিতে দিতে ভারতের কাছে আজ যুদ্ধ বিমান কেনার টাকা নেই। যুদ্ধ লাগলে কত তেল মবিল লাগে আমাদের কিছু জানা আছে, এই হৈ হৈ ভারতবাসী কিছু তার খবর রাখে? গত পরশু যে বড় লেখা লিখেছি সেখানেই বলেছি ভারতের জ‌ওয়ানদের হাতে পুরনো মডেলের রাইফেল আছে। যদি আমরা অন্তত একটা করে যদি রাশিয়ান রাইফেল কিনে দিতে পারতাম। চিন যুদ্ধ করবে কিনা জানিনা, সে যুদ্ধে চিন পর্যদুস্ত হবে কিনা জানিনা কিন্তু চিনের হাতে ২৫০- এর উপর বিমান আছে নিশ্চিত। ইজরাইল, আমেরিকার মতো ৫ রকম বিমান আছে। একসঙ্গে ১৩৫ টা বিমান ওড়াবার ক্ষমতা রাখে ওরা। নাকি ভারতের আকাশে দেওয়ালি জ্বালানোর ক্ষমতা রাখে‌। ইজরায়েল আমেরিকার ডায়গ্রাম ও টেকনোলজি নকল করে বিমানগুলো, আমেরিকাকে ভয় দেখানোর জন্য বানানো। একঘন্টায় সমস্ত ভারতে বোমা ফেলে দিতে পারে। অবশ্য এটা একটা কথার কথা। সম্ভব নয় এতটা। যুদ্ধ হলে আকাশেই হবে এখন। স্যুইচ টিপে মিশাইলের যুদ্ধ। এখন নাগরিক মারার যুদ্ধ করা যায়না। চিনের একটা এমন মডেলের বিমান আছে যাকে কোনও সেন্সার সিস্টেম দিয়ে ধরা যাবেনা কোথায় উড়ছে। এর মধ্যেই বোঝা যা যাচ্ছে তা হলো চিন সৈন্য সরাতে রাজি হলেও এখনই সরছে না,
ডোকলামেও ৭২ দিন ছিল। তৈরি আস্থানাও ভাঙবে না। কবে সরবে সেই তারিখ‌ও বলেনি। একটা ভালো খবর জাপান ভারত যৌথভাবে ভারত মহাসাগরে দুদেশের মহড়া সেরে নিয়েছে। এটা যে চিনকে জব্দ করতে 
করা তা পরিষ্কার। ভারতের লোকেরা অভিনন্দন না জানালেও ৫৯ টা অ্যাপ ব্যান করে দেওয়ায় জন্য আমেরিকার বিদেশ সচিব এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। লাদাখের ঘটনায় বিহার রেজিমেন্টের ১৭ জন সেনা কিন্তু কোনও কিছু শুনতে চায়নি এবং ঝাপিয়ে পড়েছিল সেদিন। সত্যিই ৪০/৪৩ জন চিনা সৈন্য ওদেরও মারা গেছে, যারা সকাল পর্যন্ত পড়েছিল। ওই ১৭ জন কিন্তু ফিরতে পারেনি। এর জন্য সমস্ত কৃতিত্ব ওই ১৭ জন শহীদের। তার আগেই ৩ জনকে মেরে দেয় চিন। আর‌ও শতখানেক দু তরফেই আহত হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর যে ওই জায়গায় কোনও ক্যাম্প ছিল, তার কোনও প্রমাণ নেই। ভারতীয় সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার থেকে কর্নেল পর্যন্ত যে এই ঘটনায় দায়ি এই সহজ কথা ওদের সম্মানের জন্য কেউ বলছেন না। মিলিটারির অগাদ সম্পত্তি তার এপাশ‌ওপাশ করে পয়সা লুটপাটের যে একটা কারবার দীর্ঘদিন চলে আসছে, তাকে সব সরকার‌ই ভয় পায়। এইসব বুঝতে পেরেই বেশ কয়েকবছর ধরে সামরিক বাজেটের ঘাটতি হচ্ছে এবং তেমন যুদ্ধাস্ত্র ক্রয় করা হচ্ছেনা। বাংলা-উড়িষ্যার বর্ডারে সমুদ্রে বহু মিশাইল পরীক্ষা হলেও তার পেছনে গাদা গাদা অর্থ ব্যয় হলেও এখন বোঝা যাচ্ছে ওইসব মিশাইল পাকিস্তানের বাঙ্কার ধ্বংসের থেকে বেশি কাজে দেবে না।
সবচেয়ে বড় কথা দীর্ঘ দিন ধরে খানিকটা যুদ্ধ লাগার ভয়েই, আমাদের সেনাবাহিনী 
সীমান্তে দেখেও দেখেনা। এই অবস্থায় সকলে তাই এই কারণে সরকারের দোষ ধরছে। এটাতো ঠিক যে চিন, রেডার, মিশাইল, বিমান নিজেই বিশ্বমানের তৈরি করতে পারে এবং যার খদ্দের হলো বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মায়ানমার,
নেপাল শ্রীলঙ্কা মালদ্বীপ এরা। এখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান রুখে দাঁড়াতে, চিন কিন্তু যুদ্ধের থেকে কূটনৈতিক খেলায় এখন বেশি মেতেছে এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফর তাই সঠিকভাবে হয়েছে তা নাহলে ভারতীয় জনগণের কাছে তিনি মাথা তুলতেও পারতেন না আর কূটনীতিক যুদ্ধে পরিস্থিতি সামাল‌ও দিতে পারতেন না। বলা যায় বিরোধী দল কিন্তু তাকে ছেড়ে কথা বলতো না, এটা বুঝতে পেরেও তড়িঘড়ি গিয়ে সেনাবাহিনীর মনোবল বাড়িয়ে ভালোই করেছেন। ভারত এখন চতুর্মুখী লড়াইয়ে নেমেছে‌। এক: ধার করে হলেও যুদ্ধাস্ত্র ক্রয় করা, দুই: সীমান্তজুড়ে সৈন্যদের দিয়ে পাঁচিল তৈরি করা তিন:যুদ্ধের প্রস্তুতি সমানতালে জারি রাখা, চার: সবথেকে কঠিন সিদ্ধান্ত হলো চিনা পণ্য বয়কট। 
এখন ভারতে চিন বহুরকমের ব্যবসা করে। ইতিমধ্যে আমেরিকা ঘোষণা করেছে চিনের ব্যাঙ্কের সঙ্গে লেনদেন করলে আমেরিকার ব্যাঙ্ককে শাস্তি পেতে হবে। হংকং থেকে যাতে অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা বৃটেন নিজেদের সরিয়ে নেয় চিনের ভাবনা ছিল তাই লাদাখে দ্বিতীয় ফ্রন্ট খুলে একটা অস্থিরতা সৃষ্টি করে হংকংবাসীকে উচিত শিক্ষা দেবে। ভেবেছিল চিন। হংকংয়ে যে কালাকানুন চিন চালু করেছিল, তা হলো হংকংয়ের নাগরিকদের ন্যায়-অন্যায়ের বিচার হবে বেজিংয়ে। তাকে
আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া জাপান ও হংকংবাসী কিছুতেই মানছে না। হয়তো এইসময় আমেরিকার সৈন্য‌ও মোতায়েন হবে সমুদ্রের কাছে। ভারত মহাসাগরেও তা থাকতে পারে। আমাদের যুদ্ধাস্ত্রর খামতি আছে এটা পরিষ্কার কিন্তু এই মুহূর্তে জাপান, আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইজরায়েল অস্ট্রেলিয়া ভারতের পক্ষে প্রতিবাদ করেছে, এই কূটনৈতিক সাহায্য কিন্তু অস্ত্রের থেকেও বড় দরকার ছিল ভারতের। করোনা নিয়ে এমনিতেই কোনঠাসা হয়ে পড়েছে চিন। তাই তারা নেপালকে দিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক যুদ্ধে নেমেছে‌। ভূটানকে দিয়েও জল বন্ধ করিয়েছে। সর্বশেষ ভূটান ত্রিদেশীয় একটি রাস্তা নির্মাণের বিষয়ে মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেনি‌। বাংলাদেশে করোনার ওষুধ পরীক্ষার জন্য, চিন ৪০০ জন নাগরিককে বিপুল সাহায্যের ব্যবস্থা করেছে। যাতে ওই পরীক্ষা ভারতের ঘাড়ে এসে বাংলাদেশে করা যায় এবং পরীক্ষায় সফলতা পেলে ভারত থেকে শত শত নাগরিক তখন এমনিই বাংলাদেশে গিয়ে সেপ্টেম্বর মাসেই লাইন লাগিয়ে দেবে। এই বেইজ্জতির আগেই তাই ভারতের‌ও ১৫ অগাস্টে করোনার প্রতিষেধক নিয়ে আর একদফা কূটনৈতিক লড়াই শুরু হয়ে যাবে সন্দেহ নাই। কিন্তু এর মাঝেই চিন হুমকি দিতে শুরু করেছে ভারতের কৃত্রিম পণ্য বাধার ফল ভয়াবহ হবে বরং তারা চিনের সঙ্গে সীমান্ত সমস্যা মেটানোর বেশি চেষ্টা করুক, ওখানেই বেশি মন দিক, সমস্যা মিটিয়ে নিক। এখনও পর্যন্ত ভারত ধীরে ধীরে এগোচ্ছে। বয়কটের হিসাব মাত্র ২০% ভাগ। যদি চিনের মূলধনকে বাধা দেয় ভারতের অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে কিন্তু এছাড়া উপায় কি ? আর চারখানা মোবাইল কোম্পানিকে ফিরিয়ে যদি দেয় তাহলে এক ধাক্কায় চিনের অর্থনীতি নীচে নেমে যাবে। ওপো,ভিভো,জায়মী,রিয়েলমির ব্যবসা লাটে উঠে যাবে। ইতিমধ্যে ব্যবসায়ী মহল চিনকে বোঝাতে শুরু করেছে বলেই ভারতীয় চিনা দূতাবাস, ওদের মিডিয়া, কাগজ ও সরকারের একটি অংশ ভারতকে অনুরোধ করেছে। অর্থনৈতিক যুদ্ধ করলে যে চিনের সমূহ ক্ষতি এটা এতদিন ভারতের শিক্ষিত নাগরিক বুঝতে পারেনি। এইদিক থেকে চিন কিন্তু ভারতের সমস্ত রাজনৈতিক দলকে তটস্থ রেখেছে। যুদ্ধ হলে বিজেপির ক্ষতি কিন্তু যুদ্ধ নাহলে বিরোধীদের আর‌ও বেশি ক্ষতি। ©® অলোক কুন্ডু

#চিন_ভারত_যুদ্ধ

বুধবার, ১ জুলাই, ২০২০

ভারত চীন যুদ্ধ কোথায় দাঁড়িয়ে

#অলাক_কুন্ডুর_স্পষ্টভাষণ
#চীন_ভারতের_যুদ্ধ_কোন_পথে
------------------------------------------------------
১■ আসুন "মুফত মে" নভেম্বর পর্যন্ত, ডালরোটি ফ্রিতে খাই । সংখ্যা খুব কম, মাত্র ৮০ কোটির জন্য ভারত সরকার বরাদ্দ করেছে। করোনা সারা বিশ্বে হয়েছে ভারতেও হয়েছে‌। বিরোধী পার্টির কুটুর কুটুর করে কামড়ানোকে জব্দ করতেই কি এইরকম পরের পর দানছত্রের বিপুল আয়োজন? মাপ করবেন, বলবেন বড় অমানবিক আপনি মশাই। প্রত্যেকের এখন কাজ কোথায়? খাবে কি ? জানিনা। তবে এত জনহিতকর কাজ যদি সব সময় চলতেই থাকে তখন অন্যান্য শ্রেণির মনেও একটা আশার আলো জাগতে পারে ব‌ইকি! যা দেশের পক্ষে ভালো নয়। তারাও বলবে,তবে তারা কি পেল ? যে পরিযায়ী শ্রমিকদের কেউ কেউ সচ্ছল ছিলেন, গ্রামে যার কোটা বাড়ি তৈরির ক্ষমতা ছিল সেও তো এই মুফত্ মে খানা জরুর মিলেগা-তে নাম লিখিয়েছেন। উনহে ভি বিলকুল মিলনা চাহিয়ে। কামকাজের আর দরকার নেই। শুধু বসে বসে খেয়ে যাও এখানে। আর বিশৃঙ্খলার সঙ্গে সকলে মিলেই করোনা ছড়িয়ে কিছু ভালো মানুষকে মেরে দাও। এ নীতি বহুৎ বড়িয়া, পলিশি ভি বহুৎ অচ্ছা হ্যায়। আর দেশের সমস্ত দলমিলে তা জুলজুল করে দেখতে থাকুক। কীভাবে দেশের আর্থিক দুরাবস্থা তৈরি করছে এই রাজনীতিকরা আমরা দর্শক হয়ে শুধুমাত্র তা গিলতে থাকি। প্রথমে তো ১০০ দিনের কাজ এনে দেশের মানুষের কাজ করার মানসিকতায় একটা বড় আঘাত এসেছিল। বলা যায় জাতির শিরদাঁড়া ভেঙে গিয়েছিল। তারপর নানা রাজ্যের যথেচ্ছ ভর্তুকি সঙ্গে যুক্ত হয়েছে দিনকে দিন বছরের পর বছর। অনেকেই বলবেন বারে, নিজের সচ্ছলতা আছে বলে বাইরে ঢেরা পেটাচ্ছেন, তো বেশ। কিন্তু আমি ভাবছি অন্যান্য দেশের নাগরিকদের কথা। তারা করোনার সময় কীভাবে দিনগুজরান করেছিল। দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়ে রাজনীতি করে যাওয়া এদেশে সবসময়েই বড়রকম একটা ধান্দা। কিন্তু আজ পর্যন্ত দেখিনি কোনও দলের দেশ গড়ার কাজে তেমন করে গঠনমূলক কোনও কিছু জেগেছে বলে। সকলের নীতি হচ্ছে পুঁজি এনে দেশে সোনা ফলাবো। ৭৩ বছরের বেশিটা রাশিয়ানরা একচেটিয়া ভাবে 
কয়লাখনি উত্তোলনের যন্ত্রপাতি থেকে ভারি শিল্পের যন্ত্রপাতি সরবরাহ করেছে। নিয়ে গেছে চুক্তি অনুযায়ী ইস্পাত থেকে শুরু করে কয়লা, লৌহ‌আকরিক, বক্সাইট, তামা। আমাদের নিজেদের আর তেমন কিছু করে ওঠা হয়নি। তবু সঞ্জয় গান্ধীর দৌলতে প্রথম মেক ইন ইন্ডিয়া প্রজেক্টের শিল্প মারুতি হয়ে গেল জাপানি থেকে ভারতীয় গাড়ি ( তখন মেক ইন ইন্ডিয়া প্রজেক্টের জন্ম হয়নি ) গাড়ি শিল্পের ভারতে একটা জোয়ার এলো কংগ্রেসের হাত ধরে‌।

২■ ঠিক এই মুহূর্তে আমাদের গায়ে গা দিয়ে টক্কর দেওয়া,লাদাখের গাল‌ওয়ান উপত্যকার বহুচর্চিত নিষ্ঠুর চিন, এই জানুয়ারি মাসে, মাত্র ১০ দিনে ফাঁকা মাঠে একটা হাজার বেডের সমস্ত সুবিধা সহ বিশ্বমানের করোনা হাসপাতাল গড়ে দিল করোনা সংক্রমণের মধ্যেই। ( ভারতে যার সময় লাগতো অন্তত পাঁচ বছর, পশ্চিমবঙ্গে বেসরকারি হাসপাতালের করোনা চিকিৎসার খরচ বেঁধে দিতে ১০০ দিন সময় লেগেছে)। যা বলতে চাইছিলাম, এই বসিয়ে বসিয়ে খাওয়ানোর নীতি কিন্তু চিনে একেবারেই বরদাস্ত নয়। এখানে বসিয়ে বসিয়ে রেশন না দিলে সমস্ত রাজনৈতিক দল এমন ভাবে হক্কাহুয়া ডাক দেবে যে দেশ রসাতলে যাওয়ার অবস্থা হবে। কোনও জাতীয়তাবোধ নেই, শৃঙ্খলাবোধ নেই, কাজ করে খাবার ইচ্ছা কোনও কালে আমাদের ছিলনা। এখন না হয় করোনা হয়েছে তাই। বামেদের ৩৪ বছরে নিজে দেখেছি একটা গ্রুপ-ডি স্টাফ‌ও একজন কো-অর্ডনেশনের বাম কর্মী হয়ে, শিক্ষকর পেনশন ফাইল নড়াতে পয়সা নিয়েছে। ক্লার্কদের তো পয়সা না দিয়ে কোনও কাজ হতো না। তার মধ্যে নিশ্চিতরূপে ভালো দু-চারজন ছিল বলেই না ৩৪ বছর চলেছিল তারা।

৩■ এখন না হয় সকলের কাজ নেই কিন্তু, ভারতের তো এটা চিরকালীন ব্যবস্থাপনা ভর্তুকি দিয়ে দেশ চালাও। যার সামর্থ্য আছে সেও তাই এখন বিনামূল্যে "রেশন লাও" চাইছে। যার নেই সেও তো নেবেই। আবার কতজনের সাজানো বাড়ি আছে কিন্তু কাজ কোনোদিন ছিল না, তাই তাদের‌ও কিছু নেই।তারাও অনেকেই খেতে পাচ্ছেননা, তাদের কেউ দেখছে না। নেই নেই করে এই করোনার সময় দান পেতে পেতে এক এক জনের ৩০/৪০ কেজি চাল ঘরে পচতে বসেছে এখন। আসলে শৃঙ্খলা না থাকায় সিস্টেম না থাকায় সমস্ত ক্ষেত্রে এইরকম হাল আমাদের। শৃঙ্খলা নেই, বোধ নেই, তাই নীতিহীন যেকোনও ক্ষতিকর কাজ আমরা করে ফেলতে  খুব সহজে পারি। করোনার বিগত ১০০ দিনের মধ্যে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়াকে বহুমুখীভাবে আটকানো যদি যেত, তাহলে এইসময় অনেকটাই সংক্রমণ কমে যেতে পারতো। তার জন্য আর‌ও কঠিন কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার ছিল কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছার জন্য তা হয়ে ওঠেনি এবং সরকারের তা করারও সাহস হয়নি। কিছু করতে গেলে এখানে প্রধান সমস্যা হলো দলীয় ভোট কমে যাওয়া। এ যে ভারতবর্ষের কতবড় অভিশাপ তা বলে বোঝানো যাবে না।

৪■ চিনের সঙ্গে আমাদের তফাৎ এইখানে। চিন কিন্তু নিজেদের সঙ্গে আমাদের‌ও সমস্ত কিছু নখদর্পণে খবর রেখেছে‌। কি ব্যবসা নীতি কি অর্থনীতি কি সমরাস্ত্র নীতি সবেতেই ২০২৫-এর মধ্যে তারা আমেরিকাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। চিনের কাছে তাই ব্যবসা, অর্থনীতি, যুদ্ধের বিষয়ে ভারত অনেকটাই পিছিয়ে আছে। কূটনীতিতে চিনের সঙ্গে পারাটাও খুব সহজ নয়। গতকাল (৩০/৬/২০) ভারত বিমান পাঠিয়েছিল তার কূটনীতিকদের সে দেশ থেকে ফিরিয়ে নিতে, কিন্তু চিন তাদের ফিরে আসতে অনুমতি দেয়নি। সারা বিশ্বের কাছে চিন বোঝাতে চায় তারা ভারতের সঙ্গে যুদ্ধ চায়না। তারা ভারতের এক ইঞ্চি জমিও দখল করেনি। এত তাদের প্রচারের কায়দা যে রন্ধ্রে রন্ধ্রে তারা বিজ্ঞাপন দিয়ে অর্থ দিয়ে ব্যবসার সুযোগ দিয়ে মিডিয়া,
কাগজ সমস্তটা কব্জা করে নিয়েছে। তাছাড়া ভারতকে কোনঠাসা করতেও চিন, কূটনীতিকদের আটকে দিল বলে মনে করা হচ্ছে। দেখা যাক এই নিয়ে দেশের প্যারালাল কূটনীতিকদের বচন কি হয়? ইতিপূর্বে চিন, ভারতে বসে প্রেস কন্ফারেন্স করেছে এবং গুড়মাখিয়ে বচন প্রকাশ করেছে যা আমাদের দেশের প্যারালাল কূটনীতিকদের মনে আলোড়ন সৃষ্টির দ্বারা আমাদের মগজ পর্যন্ত সেই বার্তা তারা সহজে পৌঁছে দিতে পেরেছে‌।

৫■ মোদি এতবার চিনে গিয়েছিলেন কেন? কেন এত মাখামাখি করা হয়েছিল চিনের সঙ্গে। এইসব তো প্রকাশ্যেই হয়েছে তাই সকলেই এই সমালোচনায় যে প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপিকে বিদ্ধ করবে, এটা জলের মতো সাফ। এই ঢলাঢলি করতে গিয়ে মোদিকে এখন শাঁখের করাত সামলাতে হচ্ছে। কেন চিনের আগ্রাসন নীতি ভারত বোঝেনি, প্রশ্ন উঠেছে। এই ঝাড়ে মোদিজি যারপরনাই কোনঠাসা। ২০-জন সৈন্য মারা যাওয়া এবং গাল‌ওয়ান উপত্যকা ও প্যানগঙ লেকের কিছু অংশ দখল নেওয়ায়
বিরোধীদের প্রশ্নবানে প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি জর্জরিত। কিন্তু এটাও তো সত্য, আমাদের দেশেও তো ভাই ভাই একসঙ্গে থাকতে পারেনা, "দোস্ত দোস্ত না রহা..." মাকেও উপযুক্ত ছেলে দেখেনা। " মেরা পাস মা হ্যায় " এইসব তো হবে আগে থাকতে কেউই বুঝতে পারেননা। নরসিমা রাওয়ের উদার অর্থনীতি ঘোষণার পর থেকে এবং বিশ্ববাজার খুলে যাওয়ায় ভারতে অন্যান্য পরিকাঠামো থাকলেও বড় বড় শিল্প গড়ায় তেমন কোনও উদ্যোগ আসেনি যা দিয়ে 
মোড় ঘোরানো যায়। মূলত মূলধনের অভাব ছিল। মোদিকে যতই গালাগালি দেওয়া হোক না কেন এই সময় চিনের দ্বারাই ভারতের বাজার চাঙ্গা হয়ে ওঠে। মূলধন দিয়ে পরিকাঠামো পরিকল্পনা দিয়ে এমনকি রাতারাতি সারা ভারতজুড়ে এটিএম মেশিন বদল করে অনলাইন সংস্থাগুলিতে পয়সা ঢেলে ভারতকেও মেক ইন ইন্ডিয়া গড়তে নানাভাবে সাহায্য করেছিল। যা গত ৭৩ বছরে ভারতে কখনও হয়নি। রাশিয়া, বিড়লা, গোয়েঙ্কা, টাটার বাইরে যাওয়ার ভারত সাহস করেনি। লতায়পাতায় বিড়লাদের আত্মীয় না হলে এদেশে শিল্প গড়াই যেত না। এর মধ্যে এদেশে ২জি ৩জি ও টেলিকম কেলেঙ্কারি বফর্স কেলেঙ্কারি নিয়ে হৈচৈ হয়েছে। ইদানিং নীরব মোদি, অনিল আম্বানির রিলায়েন্স, মেহুল, সাহার ইন্ডিয়া এইসব ছোটবড় কেলেঙ্কারি দেউলিয়া সাজার মতো কেলেঙ্কারি সমস্ত কিছু হয়ে গেছে। চিনের জন্য ভারতে ব্যবসার ভোল পাল্টে গেছে। কোনও মিত্র বা ভারতীয়দের মাথা থেকে রাজনৈতিক দলের মাথা থেকে ভারতের বাজারে কাজের সুযোগ তৈরি কেউ করে দেয়নি। এখন কেউ কেউ বলছেন এশিয়ার ক্ষমতা হাতে ধরে রাখতে চিন ভারতকে ব্যবসায় জড়িয়ে দিয়ে এতটাই পঙ্গু করে দিয়েছে যে সেখান থেকে উঠে পড়া খুব সহজ নয়। আর এই দোষে নরেন্দ্র মোদি ছাড়া আর কেউ দোষী নয়। তাহলে আগে থাকতে কি এমন উপায় ছিল যা দিয়ে একজন শত্রু হবে না বন্ধু হবে তা আগেই বুঝে নেওয়া যেত। বোঝার সহজ পাটিগণিত কোনও ছিল কি? কীভাবে বোঝা যেত তাহলে ? হ্যাঁ সত্যি কথা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর আমলেই অথবা ২০০৬ থেকে গুজরাটে চৈনিক ক্যাপিটাল ভারতে মঞ্জুর হতে থাকে বেশি করে। এর সুবিধা বিজেপি যেমন নিয়েছে তার মসনদ বাঁচিয়ে রাখতে পেরে তেমনি চিনের পয়সায় এখানে ছোট দোকানদার পর্যন্ত অঢেল ব্যবসা করেছে, খুচরো টাকা বাজারজাত হয়েছে। তাবলে কি চিনের কিছু হয়নি ? এমনটা ভাবলে ভুল হবে।
চিনের লাভ প্রভূত হয়েছে‌। কম পয়সায় কোয়ালিটি জিনিস সরবরাহ করে চিন ভিরতের গৃহিণীদের পর্যন্ত মন জয় করে নিয়েছে।

৬■ এই কারণে ভারতের অর্থনীতিও তো ভালো জায়গায় পৌঁছেছিল। মানুষ মনেপ্রাণে আনন্দ পেয়েছে সস্তায় মোবাইল কম্পিউটার এটিএম টিভির ব্যবহার পেয়ে। সেকেন্ড হ্যান্ড ইলেকট্রনিক জিনিস‌ও ফেলা যায়নি। পাড়ায় পাড়ায় সারানোর জন্য স্টল হয়েছে। রোজগার বেড়েছে। গরীবদের পর্যন্ত স্মার্টফোন ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। অ্যাপের আনন্দ উৎসবে ব্যবসার মূলধন থেকে লাভালাভ চিন ও ভারতের সমস্ত পন্থীরাও লুটে নিতে কসুর করেনি। ঘরে ঘরে ৬/৮ টা মোবাইলের সুবিধা কে নেয়নি। এইসবই হয়েছে মেক ইন ইন্ডিয়ার জন্য। যুদ্ধ হলে এইসব কোম্পানি থাকবে না যাবে তা ভবিষ্যত বলবে। যুদ্ধ কিন্তু কিছুতেই কাম্য নয় চিনের থেকে ভারত বেশি বুঝেছে‌। শত শত অনলাইন
কোম্পানি, পণ্য সরবরাহ কোম্পানি এমনকি আর্থিক সংস্থা পর্যন্ত ভারতী অ্যাপ থেকে কারবারে গাড়ি পরিবহণ সংস্থা থেকে বড় বড় মলে পর্যন্ত চিনা অর্থনীতির সুফল দুহাতে লুটে নিয়েছে একদল মানুষ‌। তারা ব্যবসায়ী তারা ধান্দাবাজ‌ও। এই দল এখন কোনদিকে যাবে?
যুদ্ধ হলে এদের ভয় সব থেকে বেশি। এরা চিনা পণ্য থেকে পার্টস, অ্যাক্সেসারিজের বড় ব্যবসা করে থাকে। এরা কিন্তু পণ্য বয়কটের বিপক্ষে।
দেখবেন এরা প্রতিদিন ফেসবুকে হিং ছড়াচ্ছে।
বিদ্রুপ করছে এই বলে, " আব তেরা ক্যা হোগা কালিয়া " বলে। ভারতের জমি চলে গেলে এদের কিছু যায় আসেনা। যেনতেন প্রকারে যুদ্ধ না হয় এদের কাছে ফার্স্ট প্রায়োরিটি‌। যুদ্ধ কে চায় ? একটা ধুয়ো উঠেছে সেটা হলো বিজেপি যুদ্ধ চায়। কিন্তু আমাদের জেনে রাখা ভালো যুদ্ধ হলে বিজেপির গদি চলে যাবে। যুদ্ধ হলে ভারতের এত ক্ষয়ক্ষতি হবে তা আমাদের চিন্তার বাইরে। 

৭■ রাশিয়া যদি বলে থাকে তাদের কাছে ১২ ফুট সাইজের " বোমের বাপ রাখা আছে" আমেরিকার কাছে আর‌ও হাল্কা ধরনের ১০ ফুটের এমন বোমা আছে বাপের বাপ। কিন্তু চিন সম্প্রতি পরীক্ষা করে নিয়েছে যাকে ওরা বলেছে " মা বোমা " এবং বিশাল ভারি একটাই বহন করা যায়। একটা ফেলতে পারলে সমস্ত অস্ত্রের ভান্ডার ধুলিস্মাৎ হয়ে যাবে। আমেরিকার ইলেকট্রোম্যাগনেটিক প্রযুক্তির যে রকেট আছে তার কাছাকাছি তীব্র দক্ষতার রকেট মিশাইল চিন বানিয়েছে বলে পেন্টাগনের কাছে খবর আছে। তাছাড়া আছে প্রচণ্ড শক্তিশালী ডি-১৭ ডেস্ট্রয়ার মিশাইল, যা অক্লেশে ১৮০০ থেকে ২০০০ কিমি দূরের লক্ষ্যবস্তুতে ডেফিনিট আঘাত করবে। তাছাড়া পেন্টাগনের ধারণা হাইপারসনিক স্পিডি মিশাইল‌ও তাদের হাতে যা আমেরিকার মিশাইলের প্রায় সমকক্ষ‌ও। নিজস্ব ওয়েভরাইডার বিমান ৩২০ কিমি যার গতিবেগ। ৭৩৪৪ কিমি উঁচুতে উঠতে পারে যা।
আমেরিকার এয়ারব্লাস্টের সমতুল্য পিপুলস লিবারেশন আর্মির হাতে আছে। সম্প্রতি যে সমরাস্ত্র ভারত রাশিয়া থেকে পেল তা তিনমাস আগেই হাতে পেয়েছে চিন। তাছাড়া সেন্সরের যুদ্ধে যে চিন এগিয়ে থাকবে না এটাও বিরোধিতা করা যাবেনা বলেই মনে হয়। তাই বারুদের যুদ্ধ ভারতকে এড়িয়ে চিনের ভারতীয় বাজার ছোট করে দেওয়াই এখন বুদ্ধিমানের কাজ হবে। ভারতের সমারাস্ত্র যে নেই, হেলিকপ্টার, মিশাইল যে নেই তা নয় কিন্তু আমাদের বুঝতে হবে চীন কিন্তু মহাকাশ পাড়িতেও লক্ষ্য স্থির রাখতে পেরেছিল যা আমরা পারিনি। এখন যুদ্ধ হলে পরস্পরের বিমানঘাঁটি, সমরাস্ত্রের গোডাউন ধ্বংস‌ই হবে যুদ্ধের মূল লক্ষ্যবস্তু। তাছাড়াও চিন যেভাবে
বুদ্ধি খেলাতে জানে এবং একের ফর এক নতুন নতুন পথ আবিষ্কার ও আলোচনা চালাতে চালাতে সময় নষ্টের খেলায় ভারতকে জব্দ করে রেখেছে তাও যুদ্ধের নিরিখে তাদের এগিয়ে থাকারই ইঙ্গিত দেয়। ১৬-২৫ শে জুনের মধ্যে লাদাখের আর‌ও বেশ কিছু অংশ তারা কব্জা করে বসে রয়েছে এবং পাকা আস্থানা গড়ে ফেলেছে তাতে করে তাদের পিছিয়ে যাওয়ার কোনও ‌ইঙ্গিত নেই। তারা ভারতের ব্রিজ রাস্তাও আর নতুনভাবে করতে দেবে
বলে মনে হয় না। বড় জোর দু এক কিমি ছেড়ে দিতে পারে কিন্তু সেখানেও ভারতকে কোনও কিছু করতে দেবেনা। 

৮■ ২০-জন সৈনিকের মৃত্যুর জন্য কে দায়ি তা এখন লাখটাকার প্রশ্ন। যদিও আমাদের মিলিটারিদের গোয়েন্দা বিভাগের নড়বড়ে ভাব ছিল। ব্রিগেডিয়ার পর্যায়ে ছেলেখেলা অবশ্যই আছে। সবচেয়ে বড় দোষ ভারতীয় সেনাবাহিনীর বড় বড় অফিসাররা অশান্তির ভয়ে না দীর্ঘ দিন ধরে না দেখার একটা ভান যে করে আসছিল এই ঘটনা কিন্তু তার বড় প্রমাণ।
 টহলদারি ঠিক মতো হতো কিনা এটা নিয়েও
বিস্তর সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ফেসবুকে স্থানীয় মানুষ ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সতর্ক করলেও
স্থানীয় বিজেপি নেতারা সেনাবাহিনীকে নজর দিতে বললেও তারা চুপচাপ বসে ছিল। ঠিকমতো পাহারা না দেওয়া, চৌকি তৈরি না করা সেনাবাহিনী সর্বতোভাবে দায়ি এখন যার ফলে দাগহীন জায়গা দখল করে বসে গেলেও ভারতের কাছে তেমন কোনও জোরালো ছবি নেই। গতকাল বরং চিন সমস্ত জায়গায় বড় বড় প্রতীক টাঙিয়েছে যাতে উপগ্রহ থেকে ছবিতে তা বোঝা যায়। ভারতীয় বাহিনীর এই অপদার্থতা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায়না।
মারপিটের দিন পাঁচঘন্টা ধরে ধস্তাধস্তি চললেও ভারতের কোনও রিজার্ভ বাহিনী রাতেই উদ্ধার কাজে নামেনি। 

৯■ মেক ইন ইন্ডিয়া ব্যর্থ হয়েছে হয়তো। চারটি মোবাইল কোম্পানি যারা এদেশে কারখানা গড়ে চিনের মোবাইল তৈরি করছেন
সেই অপো,ভিভো,জাওমি ও রিয়েল মি-তে কিন্তু ভারতীয়রা কাজ করছে। তাই যতটা টিটকারি ভারতীয়রা করছেন, খেউড় করছেন তাদের যদি জিজ্ঞেস করা হয় আপনারা কি করতেন এই মুহুর্তে ক্ষমতায় থাকলে, দেখবেন তাদের‌ও কোনও উত্তর জানা নেই। কংগ্রেস এই দেশকে শাসন করেছে তাদের‌ও ভাবনা চিন্তা করে এইসব কাটিয়ে উঠতে হবে এবং স্পষ্ট না বললে দেশের লোক ভুল বুঝবেন। ফেসবুকে বামপন্থীরা একদিকে মোদির ঢোল ফাটিয়ে চলেছেন সেইসঙ্গে তাদের বিরোধিতাও হচ্ছে
বামেদের ৩৪ বছর নিয়ে, নন্দীগ্রাম নিয়ে, ইউ পিএ জমানায় সরকার ছেড়ে দেওয়া নিয়ে, জ্যোতি বসু, সোমনাথ লাহিড়ীকে টেনে ধরা ও যন্ত্রণা দেওয়া নিয়ে, কম্পিউটারের বিরোধিতা নিয়ে, বামেদের স্বজনপোষন নিয়ে চটুল পর্ব না মুষলপর্ব চলছে তা ভগবান‌ই জানেন। ফেসবুক চিনের সাধারণ মানুষের দেখার অধিকার নেই তাদের কিন্তু প্যারালাল প্লাটফর্ম আছে সেখানে তারা এইসব খেউড় দেখতে পাচ্ছে এবং বুঝতে পারছে। ভারতকে চেপে ধরার এই উপযুক্ত সময়ে তাদের জনগণের হাতে জিনফিং সাহেব
ভারতের খেউড় তুলে দিয়ে চিনের জনগণের কাছে জাতীয়তা জাগ্রত করছেন নিসন্দেহে। বেশকিছু বামপন্থীদের পোস্ট দেখলাম তারা বলছে, ভারতের সমস্ত জনগণের উদ্দেশ্যে বলছেন, তোমার আপাদমস্তক এখন চিনের তুমি যত‌ই মোবাইল ছোঁড়া ভাঙার চেষ্টা করো কিচ্ছুটি হবেনা, তোমাদের মোদিবাবাকে এবার জিজ্ঞেস করো আর কতবার জিনফিংয়ের সঙ্গে বৈঠক করবে, দোলনায় দুলবে? কংগ্রেস‌ও তার মতো করে বলতে ছাড়বে কেন?
বিশেষকরে সর্বদল বৈঠকে সোনিয়া গান্ধীজির প্রশ্নমালা এখন সারাদেশে ঘুরপাক খাচ্ছে। 
সারা ভারতটা যেন শুধুমাত্র বিজেপির তারাই পণ্য বয়কটে রাস্তায় নামছে তারাই পোড়াচ্ছে।
এটা বড় আশ্চর্য যে সমগ্র ভারতবাসী বিজেপির হাতে এই সুযোগ তুলে দিয়েছে।

১০■ এখন যদি চিন মনে করে কূটনৈতিক পর্যায়ে এমন কঠিন অবস্থায় ভারতকে ফেলে দেবে এবং গলা টিপে ধরবে ভারতের গোলাগুলি ছোঁড়া ছাড়া তখন আর উপায় থাকবে না। তাহলে বিজেপি ও প্রধানমন্ত্রীর গদিও কিন্তু তখন বেমালুম টলে যেতে পারে, এটাও কিন্তু বড় ভাবনার একটা বিষয় প্রধানমন্ত্রীজির। যুদ্ধ কিন্তু খুব সহজ কথা নয়, ব্যবসা বন্ধ‌ করাও খুব শক্ত কাজ। চায়নার সমস্ত ব্যবসা বন্ধ করে দাও এই আভ্যন্তরীণ প্ররোচনায় প্ররোচিতজনের একটা আভ্যন্তরীণ আনন্দ নিশ্চিত হয়। কিন্তু এটা তো একটা সংসারের বিষয় নয়। আন্তর্জাতিক ও জাতীয়স্তরে ব্যবসা বন্ধ একেবারেই সহজ কথা নয়। যুদ্ধ সাজানো খানিকটা গণিকাবৃত্তির সাজের মতো। সেজে তোমাকে রাস্তায় দাঁড়াতে হবেই। এক পক্ষ যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করলে চার্লি চ্যাপলিনের মতো তো আর তখন একার খেল থাকেনা। সৈন্য সাজাতেই হয়। কিন্তু চীন যদি দখলকৃত জমি আর ফেরত না দেয়, তবে ধীরে ধীরে চিনা পণ্যের ওপর যুদ্ধ না করে ভারতের কোনও তখন আর উপায় থাকবে না। পণ্য বয়কটের এই যুদ্ধ জারি না রাখলে ভারতের সমূহ  অসম্মান ও বিপর্যয় হবে। ভারতের কাছে তো দ্বিতীয় কোনও পথ‌ও খোলা নাই। কারণ ভারত শুধু শুধু বিনা কারণে সৈন্য সাজাতে চায়নি। ব্রিগেডিয়ার স্তরে মিটমাটের আলোচনা পিছিয়ে যাওয়ার আলোচনা চলার মাঝেই নৃশংসভাবে চিনের সৈন্যরা দাঁড়িয়ে থাকা ভারতীয় সৈন্যদের হত্যা করে দেয় ও তারপর ৫/৬ ঘন্টা ধরে দুপক্ষের হাতাহাতি মারপিট এমনভাবে চলে যে আমাদের ২০-জন সৈন্য শহীদ হয়। এরপর যে ঘটনা নিয়ে সরে যেতে বলা সেই খানেই পাকাপোক্ত চৌকি স্থাপন করে বিপুল বাহিনী নিয়ে চিনারা ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় ঢুকে বসে পড়েছে এখন। তাই ভারতকেও অনিচ্ছাকৃতভাবে সৈন্য ও সরঞ্জাম সাজাতে হয়েছে। যুদ্ধ না করলেও
তাকে সমস্ত ব্যবস্থা সেরে ফেলতেই হবে। কিন্তু চিন হয়তো জানে ভারত সহজে যুদ্ধে যাবেনা
তাই যতরকমভাবে তারা ক্রমাগত খোঁচাবে এবং এই খোঁচাখুঁচিতে যে ভারতের একপক্ষের মানুষের কি পরিমাণ বিপুল আনন্দের সঞ্চার হচ্ছে তা খবর কাগজ থেকে নেটদুনিয়া দেখলেই পাত্তা মিলে যাবে। কে লিখছে ওষুধ পাওয়া যাবেনা , কে লিখছে এবার ভারত কি করবে । তবে কি চিন থেকে ওষুধের যৌগ আনবে না। সঙ্গে ফোড়ন, না আনাই উচিত। দ্বিতীয় ফোড়ন চিনা মোবাইল হাতে মোবাইল পোড়াচ্ছো পোড়াও তোমারটাও তো পোড়াতে পারতে। দেশের সর্বনাশ হয়ে গেল চিনা লগ্নির ইয়া ফিরিস্তি। যেন তিনি বিদেশী। খুব আনন্দ হয়েছে এই চিন-ভারত আকচাআকচি তে‌‌। ফেসবুকের আমার এক বামপন্থী বন্ধু বলেই ফেললেন, আরে চিনের বিরুদ্ধে কবিতা লিখলেন যুদ্ধে তো যাওয়া উচিত। কিন্তু যুদ্ধ এখন তো হবে স্যুইচ টিপে আর যুদ্ধের ২০০ কিলোমিটারের মধ্যে প্রবেশ করলে একেবারে শ্রীঘরে দশ বছর জেল‌। কার‌ও জ্যাত্যাভিমান, স্বদেশ ভাবনা না থাকতে পারে তাই যারা মোবাইল পোড়াচ্ছেন, রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করছেন, অ্যাপ বয়কট করছেন তাদের স্বাভিমানকে অপমান করার আগে আপনাকে আমার প্রশ্ন করা উচিত আপনি কোন দলে আছেন ? ধান্দাবাজ বা এদেল‌ওদলে। তাই আমি এতক্ষণে বোঝাতে পেরেছি এই যুদ্ধ চিনের কারণে চিনের জন্য চিনের দরকারে চাপানো হচ্ছে।

১১■ এটাও মনে রাখতে হবে, চিন কিন্তু আগে কখনও গোলাগুলি ছুড়বে না কারণ তা করলে চিন নিজেকে থামতে পারবে না। তবে আর‌ও ব্যাপক প্ররোচনা তারা দেবে এটা এখন ধরে নিতে হবে। চিন যুদ্ধ শুরু করলে ভারতের প্রভূত ক্ষতি করে তবেই তারা থামবে।
চোরাগোপ্তা মারেও যে আর‌ও ব্যাপক ক্ষতি করা যায় এহেন চতুরতাও তাদের কাছেই আমাদের শিখতে হলো। গোলাগুলি চললে তাদের কাছে ভারতের পরাজয়ের সম্ভাবনা‌ কিন্তু প্রবল। কেন প্রবল তা আলোচনার দরকার আছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ভয়াবহ হতে পারে। কারণ আমাদের মনে রাখতে হবে চিন এক‌ই সঙ্গে চতুর্দিকে যুদ্ধ সাজিয়ে রেখেছে এবং বাজিয়ে রেখেছে। তারা যুদ্ধে অনেকটা পোক্ত। তারা এখন সবকিছুতে একটা পারফরমার জাতি। অন্তত দু-ডজন সেরা সমর বিশেষজ্ঞ ম্যানেজমেন্ট পাশ, তাদের ঘরে বসে সব সময় অঙ্ক কষে চলেছে। নির্ভুল হবে তাদের সেই যুদ্ধের পরিকল্পনা। যা হয়তো আমাদের ভাবার‌ও বেশি হবে। তবে হলপ করে কিছু বলা যায়না কতটা কীহবে। তাদের ক্যামেরা, লেন্স, সেন্সর, রেডার কিন্তু এমনিতেই ধুরন্ধর বিশ্বমানের। এই যুদ্ধ ডিজিটালি হবে এটা ধরে নিতে হবে। ট্যাঙ্ক, হেলিকপ্টার, রকেট লঞ্চার, কামানের গতিবেগ কতদূর আসবে সত্যিই আমাদের কোনও আন্দাজ নেই। স্যুইচ টিপে তারা যুদ্ধ করবে নাকি চিরাচরিত অস্ত্র সাজিয়ে পর পর এগোবে। শুধুমাত্র ক্ষতি করবে নাকি প্যানগঙটা পুরো এবং আর‌ও ভেতরে এগিয়ে আসবে। এসবই খুব অজানা। চিনের আক্রমণের ছবি ওরা খুব একটা প্রকাশ করেনা। তবে আন্দাজ করা যায় যুদ্ধে চিন খুব ডেঞ্জারাস হবে। ওদের সমর সরঞ্জাম‌ও কোনও হেলাফেলা হতে পারেনা কারণ পেন্টাগন পর্যন্ত ২০১৭-সালে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

১২■ চায়নার এই এগিয়ে আসা ও পরিযায়ী সমস্যা,করোনা মোকাবিলায়,যে রাজনৈতিক দলের ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাচ্ছে তারা বিজেপি ছাড়া আর দ্বিতীয় কোনও দল নয় এটা একদম পরিষ্কার কথা। চিন নড়াচড়া করলে ভারতের অবস্থার সঙ্গে সঙ্গে বিজেপি দলের অবস্থাও এখন আর‌ও খারাপ হবে, এটা না বললেও চলে। বলতে গেলে চিনের ঝড়ঝঞ্ঝায় তঠস্ত থাকার কথা সম্পূর্ণভাবে ক্ষমতাসীন দলের। মুখ দেগলেই বোঝা যায় প্রধানমন্ত্রীর ঘুম উড়ে গেছে। এটা কোনও তাচ্ছিল্যের কথা নয়। আমি দেখবো এই উদ্বেগ আমারও। যারা কাজে আছে, কাজ করছে, তাদেরকেই সমস্ত সমালোচনা সবচেয়ে বেশি সহ্য করতেও হয়, এটাই ভবিতব্য। এই রাতজাগা ও টেনশন আর কোনও দলকেই ভুগতে আপাতত হচ্ছেনা। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ছাড়াও আর‌ও কয়েকজনের ঘুম নেই এটাই স্বাভাবিক ঘটনা। এই দিক থেকে ভারতের বিরোধী দলগুলোর এখন তেমন ভূমিকা নেই, সমস্তটাই এখন বিরোধীদের লাভ। এমনকি চিন যত খেলবে বিজেপির‌ই বেশি রাজনৈতিক ক্ষয়ক্ষতি হব। এটা এখন ছবির মতো পরিষ্কার। চায়না এটা জানেনা এরকমটাও নয়। চিন এটাও বিলক্ষণ জানে, তারা যাকে কমিশন দেব সেই দল তাদের আবার ভারতে ব্যবসা করতে দেবে। দূধে আমে মিল হয়ে যাবে। তাদের কাছে বরং বিজেপিকে শিক্ষা দেওয়ার ফর্মূলা বেশি সহজতর। ইতিমধ্যে তারা দিল্লিতে বসে ভারতবিরোধী প্রেস কন্ফারেন্স করে তাদের সমস্ত বক্তব্য এদেশের মিডিয়া ও কাগজকে খাওয়াতে পেরেছে। প্রেসমিট যুদ্ধে প্রথমেই চিন ভারতেকে নাস্তানাবুদ করে নাড়িয়ে দিয়েছে।

১৩■ প্রকৃতপক্ষে রাস্তার পাগলকে পেছন থেকে খেপিয়ে দেওয়া ছাড়া ভারতবর্ষের কিছু নাগরিকের আর দ্বিতীয় কোনও কাজ‌ও নেই। আমরা মনে মনে যত না দেশকে ভালোবাসি তার থেকেও বেশি ভালোবাসি আমাদের রাজনৈতিক দলকে। মূলত রাজনৈতিক দলের ভুলভ্রান্তি আমরা দেখতে অভ্যস্ত ন‌ই। ভেতরে ভেতরে আমরা কিন্তু চিনা পণ্য বয়কটের পক্ষপাতী একদম‌ই ন‌ই। বরং বয়কট হলে ক্ষমতাসীন দল সমস্যায় পড়বে। এই মজার বিষয়টিও চিনাদের অজানা নয়। চিনাদের এই যুদ্ধে তাদের সঙ্গে তাদের গ্রাহকরাও যে রয়েছে যারা ভেতর থেকে রাস্তায় পাগল ক্ষেপাতে পারে, এটাও একনায়কতান্ত্রিক জিন ফিং ভালোই জানে।

১৪■ সমরসজ্জা হলো একপর্যায়ের কূটনৈতিক যুদ্ধ। সমর সজ্জা সাজিয়ে ভয় পাকিস্তানকে দেখানো গেলেও চিনকে দেখানো অত সহজ নয়। কারণ পাকিস্তান একটা নড়বড়ে ও হীন নেতার অধিনস্ত রাষ্ট্র। যাদের কখনও নিয়ম নীতি কোনোদিন ছিলনা। সেই দিক থেকে চিন ৭৫ বছর ধরে এক‌ই রকমভাবে এবং কম্যুনিস্ট দেশ হিসেবে নিজেদের নতুন ভাবে গড়ে তুলেছে। এমনকি তিয়েনানমেন স্কোয়ারে গণতন্ত্রকামী ছাত্রদের ওপর নির্বিচারে যুদ্ধ ট্যাঙ্ক চালিয়ে জনসমক্ষে হত্যা করে বুঝিয়েছিল খোলা গণতন্ত্র চিনে সম্ভব নয়।
এখন যত হুঙ্কার‌ই আমাদের প্রধানমন্ত্রী দিন না কেন যুদ্ধ করলে তাদের দলের মতো ক্ষতি ভারতবর্ষে আর‌ও কার‌ও হবেনা। সরকারের যুদ্ধ যত না চিনের সঙ্গে তার থেকেও বেশি যুদ্ধ করতে হবে তার নাগরিকদের সঙ্গে,দেশের বিরোধীদলের সঙ্গে। ফড়ে দালাল ধান্দাবাজ
সকলের সঙ্গে। এইসব চিন্তা চিনের একদম নেই। এক কঠোর বুননের প্রশাসন তাদের হাতে আছে। দ্বিতীয় রাজনৈতিক মতের সেখানে কোনও অস্তিত্ব নেই। তাই চিন আগে থাকতেই পেরেক লাগানো লোহার রড দিয়ে পরকে আঘাত করলেও সেখানে সমালোচনার জায়গা নেই। কিন্তু এরকমটা যদি ভারত করতো, তাহলে এখানে প্রধানমন্ত্রী থেকে সেনাবাহিনীর গুষ্টির তুষ্টি হয়ে যেত, এটা গণতন্ত্রের একটা ভীষণ খারাপ দিক। 

১৫ ■ আমাদের দেশের রাজনৈতিক দল যখন প্রশাসন হাতে নেয় তখন যতটা না তারা দেশভক্তির কাজে ব্যস্ত থাকে তার থেকেও দল গোছানোই তাদের মূল কাজ হয়ে দাঁড়ায়। তবুও বলতে হয় ৭০ বছরে বর্তমান সরকারের নির্দিষ্ট লক্ষ্য হয়েছে লাদাখ থেকে অরুণাচলের বিস্তীর্ণ সীমান্তকে মজবুত করতে রাস্তাঘাট ও সেতু নির্মাণে প্রয়োজনীয় ভূমিকা নেওয়া। কিন্তু এই সাজিয়ে তোলার মধ্যে যে সমরাস্ত্রের সঞ্চালনার দ্রুততা থাকে তাই চিনের গা ঘেমেছে এইসব দেখেশুনে। শুধুমাত্র তো যুদ্ধ নয়, সীমান্তের মানুষের কথাও অন্তত ভাবা গেছে। বিশেষ করে অরুণাচলে প্রচুর বাসভূমি আছে। সেই তুলনায় লাদাখ মরুভূমির রুক্ষতা থাকায় পশুচারণদলের কিছু মানুষেরা সেখানে বসবাস করেন,সীমান্ত এলাকায়।  হাজার হাজার পশুর খাদ্য সংগ্রহ ও পশুবিক্রয় করে জীবনধারণ করাই তাদের কাজ। জলের হ্রদ ও নদী থাকায় কিছু কাঁটাগাছ, লতাগুল্ম হয়। সত্যি বলতে কি স্বল্প অক্সিজেন থাকা এইসব জায়গায় মানুষের নতুন বসতি গড়ে উঠতেও শুরু করেছে কোথাও কোথাও। জলের যোগান থাকায় বৃক্ষরোপন হয়েছে  ইদানিং এবং খুব সামান্য চাষের জন্য মানুষ নতুন করে এলাকা তৈরি করছেও। তা ছাড়া রুক্ষ লাদাক দখল করে চিন যদি কিছু নতুন খনিজ আবিষ্কার করতে পারে তো ভালো তা না হলে ট্যুরিজম ছাড়া লাদাখ কেড়ে নিয়েও চিনের জমিজমার লাভ কিছু নেই। কিন্তু ভয় আছে যদি ভারত কখনও আমেরিকাকে জায়গা করে দেয়। চিনের ভয় অমূলক নয়। ভবিষ্যতে এইধরনের সহবস্থান গড়ে উঠতেও পারে। কিন্তু চিন জানে ভারত যতই অস্ত্র কিনুক, যতই পাঁয়তারা করুক একা যুদ্ধ করার সাহস ভারতের নেই। বরং ভারতীয় সরকারি দলের একশোভাগ ভয় আছে এতে। তাছাড়া ভারত এখনও পর্যন্ত নিজে থেকে যুদ্ধে কখনও যায়নি। যুদ্ধের মানসিকতা তাদের একমাত্র পাকিস্তানের জন্য চিনের জন্য নয়। কিন্তু আমাদের অনেকেরই ধারণা যুদ্ধ বুঝি শুধুমাত্র বিজেপির বিরুদ্ধে চিন করছে। এইসব নিম্নমানের ধারণা। সৈন্যসামন্ত, যুদ্ধসরঞ্জাম কোনও একটা দলের নয়। যুদ্ধ হলে ভারতবাসী কি বলতে পারে? না এতে আমি নেই। ওটা তো বিজেপির সরকারের সঙ্গে হচ্ছে। এরকম মাথামোটা চিন্তা ধারা কার‌ও কার‌ও আছে। সহজেই তারা বলেও দিচ্ছে দুম করে। প্রধানমন্ত্রী ঠিক মতো দেখেনি,
চিনের সঙ্গে মাখামাখির ফল। এর থেকে আর ভালো কি হবে ? তবে বিরোধী দলের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কথা দেশবাসীর বিশ্বাস হয়নি এটা স্পষ্ট করে বলতে পারাই যায়।

১৬■ চিন একটা মজবুত দেশ শুধুমাত্র নয়। অর্থনীতি ব্যবসা আর্থিক মজবুতি ও খানিকটা সমর সজ্জায় পৃথিবীর বৃহত্তর এবং দ্বিতীয় শক্তি। চিনের অর্থনৈতিক মজবুতি থেকে প্রশাসনিক মজবুতি,যুদ্ধের প্রস্তুতির মজবুতি, টেকনোলজি থেকে সমরাস্ত্রের মজবুতি সবেতেই চিন ভেতরে-বাইরে অখন্ড এক বিস্ময়কর শক্তি। শক্তি তার এখন বুদ্ধিতে, কূটনীতিতে। পৃথিবীর দ্বিতীয় শক্তিশালী দেশ হয়ে চিন,আমেরিকার সঙ্গে পায়ে পা দিয়ে ঝগড়ায় সামাল দিতেও জানে। করোনার সামাল‌ও কীভাবে যে ওরা দিয়েছে তাও দেখার মতো। যদিও যখন চীন যেদিন করোনায় তার জনগণের মৃতের সংখ্যা দেখিয়ে ছিল ৫০০ জন (৫.২.২০) তখন তাইওয়ানের একটি সংস্থার ওয়েবসাইটে চিনে মৃতের সংখ্যা তারা দেখিয়েছিল ২৫,০০০ হাজার। পরে ওই সংস্থা জানিয়েছিল ওটা ভুল হয়েছে। কিন্তু কেন এমন ভুল হলো তার কোনও ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। যে ডাক্তার পিপিই কিট সম্পর্কে ডাক্তারদের প্রথম সতর্ক করেছিলেন তাকে চিন সরকার জেরা করে ও তার বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নিয়েছিল বলে শোনা যায়। তার দশদিনের মাথায় ওই চিকিৎসকের করোনায় মৃত্যু হয়েছিল। আসলে চিনা লাল কম্যুনিস্ট পার্টির হাতে দেশের শাসনভার থাকলেও তার একনায়কতন্ত্রের একমাত্র মালিক সি জিন ফিং তিনি পরম মমতায় তার অনুচরদের মুড়ে রেখেছেন রাজকীয়ভাবে। সেখানে কড়া শাসন বেষ্টনীর দ্বারা যে প্রশাসন সেখানে চলে আসছে তা খুব‌ই আঁটোসাঁটো। সেখানে সরকারের অনুমতি ছাড়া মতামত প্রকাশ করা এক প্রকার যায়না। কিন্তু ওই চিকিৎসক যে চরম ভুল করেছেন তা তার মনে ড়য় জানা ছিলনা।

১৭■ গতবছর গেছে চায়নার স্বাধীনতার ৭৫ বছর। এই সময়ের কিছু আগে ১৯৯৭-এ চুক্তি মতো হংকংকে বৃটেন চিনের হাতে তুলে দিয়েছে সেখানকার নাগরিকদের তুমুল প্রতিবাদ সত্বেও। হংকংয়ে এখনও সমানে চলছে স্ব-স্বাধীন থাকার প্রচেষ্টা। যদিও হংকংয়ের নিজস্ব একটা প্রশাসন আছে কিন্তু সেই প্রশাসনকে কখন যে চিন সম্পূর্ণ কব্জা করে ফেলবে তার এক বিশ্বাস হীনতায় হংকং ডুবে রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন চলেছে ঘেরাও তিনমাস ধরে, ব্যারিকেড চিনের পতাকায় হিটলারের প্রতিক এঁকে প্রতিবাদ করেছে তারা, এইসব এখনও সামান্য জারি আছে। একদিকে চিনের পুলিশের জলকামানে নীলরঙ চিহ্নিত করে জল ছোঁড়া ( কারা কারা ওখানে উপস্থিত ছিল বুঝতে), রবার বুলেটের ঝাঁকে ঝাঁকে ব্যবহার থেকে ধড়পাকড় চলছে। চিন হংকং নিয়ে নাজেহাল একরকম কিন্তু তাদের হাতে আছে নিপীড়নের হাতিয়ার। অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে হংকংয়ের অধিবাসীরা প্রতিবাদ করছে দূর থেকে, সারা বিশ্ব হংকং নিয়ে প্রতিবাদে মুখর হয়েছে। সবে মাত্র কালাকানুন চিন স্থগিত রেখেছে। আমেরিকার নেতৃত্বে চিনকে চাপে রেখেছে। তাইওয়ানকেও চিন নানাভাবে জব্দ করতে চাইছে। তাইওয়ানে আবার আমেরিকার বহু কোম্পানির মূলধন রয়েছে। তাইওয়ানে ল্যাপটপ, মোবাইল ও ইলেকট্রনিকস জিনিস তৈরি হয় এবং আগামী দিনে তাইওয়ান ভারতের ইলেকট্রনিকস ব্যবসায় নাম লেখাতে পারে। ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামের সঙ্গেও চিনের লড়াই অনেক দিনের। জাপানের সঙ্গে একটা দ্বীপ নিয়ে ঝামেলা যুদ্ধের পর্যায়ে। তবুও কিন্তু চিনের আভ্যন্তরীণ প্রশাসনে কোনও চাপ নেই। সরকারের অনুমতি ছাড়া পরিযায়ী শ্রমিকরা ধেই ধেই করে নিত্য করবে এই সাহস ছিল না। না খেতে পেলেও ওখানে কিছুই করা চলবেনা। কাজ করো খাও। উৎপাদন করো। সময়ে কাজে যাও। উৎকর্ষ বোঝাও। সময়ে কাজের পয়সা নাও বাড়ি গিয়ে গান নাচ করো, অপেরা দেখ। প্রয়োজনে অতিরিক্ত কাজ এবং দক্ষতা উজাড় করে দিতে হবে। চিন তার করোনার বিপর্যয় কাটিয়ে উঠেছে উদাহরণ যোগ্য শৃঙ্খলা দিয়ে।

১৮■ গ্রামে থেকে দীর্ঘদিন গ্রামীণ জীবন থেকে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করা সি জিনফিং এখন সেই দেশের একছত্র অধিনায়ক। দেশের আজীবন হেডস্যার। চিন তো আসলে একটা বিশাল স্কুলের মতো। যেখানে শৃঙ্খলাপরায়ণতা ছাড়া আর দ্বিতীয় কোনও কিছুর তেমন মূল্য নেই । কম্যুনিস্ট পার্টির একসময়ের আজ্ঞাবহ কর্মী থেকে দেশের সর্বময় কর্তা এখন জিনফিং এখন বুদ্ধি সরবরাহের পৃথিবীর একনম্বর মাষ্টার মশাই। যিনি নাকি মুখে হাসি লাগিয়ে রেখেছেন। একসময়ে তাদের পরিবারকে চিনের কম্যুনিস্ট পার্টি বন্দী করেছিল নির্মমভাবে তাদের হেয় করেছিল তবু জিনফিং দল ছেড়ে দেন নি। দল করাই সেই দেশের সকলের কর্তব্য। একটিই দল। এখন সেখানে একজন‌ই এখন দেশনেতা, তিনি জিনফিং। 
জিনফিং চায়নার তিনটি পদে একসঙ্গে রয়েছেন। চিনা মিলিটারির তিনি চেয়ারম্যান, গণতান্ত্রিক চিনা প্রজাতন্ত্রের তিনি প্রেসিডেন্ট
আজীবন এবং চিনা কম্যুনিস্ট পার্টির তিনি সাধারণ সম্পাদক। ধীরস্থিরভাবে চলাফেরা করেন ও কথাবার্তায় লাগাম দিতে জানা তার বড় গুণ। বাইরের দেশ থেকে ছাত্রদের পর্যন্ত চিনেতে নিয়ে আসছেন। অনেকেই জানেন, চিনে পড়াশোনা করলে অন্তত একজন উঁচুদরের ভালো ডাক্তার হবেন, একজন ভালো ম্যানুফ্যাকচারার হবেন, একজন ভালো ম্যানেজমেন্ট বিদ্যার মাষ্টার তৈরি হবেন যা দিয়ে আক্রমণ শানাতেও পারবেন ব্যবসা গড়ে দিতেও পারবেন। তেমনি পারবেন দয়াশীল হতেও। গরীব অনুন্নত দেশের পরিকাঠামো থেকে ব্যবসার উন্নয়ন কীভাবে একবছরের মধ্যে করে দিতে হয় তা চিনের কাছে শিখতে হবে বৈকি। দেশে কম্যুনিস্ট পার্টি থাকলেও জিনফিং যে এখন মাও জে দংয়ের থেকেও শক্তিশালী হয়ে উঠেছেন এ কথা তো সারা বিশ্ব‌ও বোঝে। প্রশাসনের সর্বত্র বসে আছে দেশের জিনিয়াস ছাত্ররা যারা পলিটব্যুরোর সদস্য, ম্যানেজমেন্ট পাশের দুঁদে ছাত্ররা আজ দেশের শাসন ক্ষমতায়। তারা জানে চিন একটা বৃহত্তম কম্যুনিটি। তাকে গড়ে তুলতে ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে নজর দিতে হয়েছে মার্কেটিং, ব্যাঙ্কিং ও পরিকাঠামো ব্যবসাতেও। তাই আমরা দেখতে পাই খুব অল্প দিনেই করোনার মোকাবিলা করতে নতুন হসপিটাল তারা খেলাঘর ভেবে বানানোর মতো আহ্লাদে বানিয়ে ফেলতে পারেন মজবুত পরিকাঠামো। এই অহংকার তাদের একটা সম্পদ এবং এই ভাবনায় খানিকটা যে তাচ্ছিল্যের সুরে আছে যার মর্মবাণী চিনের সমস্ত গুণ আছে। সীমান্ত দখল করে নিয়েছে সেই তাচ্ছিল্যের মতো করে। 
যদিও বিহারী রেজিমেন্টের জ‌ওয়ানরা জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়ে আর‌ও ৪০ জনকে ছিঁড়ে খেয়েছে। সেই শোক কিন্তু চিন সাবলীল ভাবে গুপ্ত করে রেখেছে। কারণ তাদের চাই জমি। প্রাণ তুচ্ছ করে যে লড়াই দিয়ে কোনও বিদ্রোহ যখন নেই বুঝতে হবে আর‌ও বড় প্রস্তুতি তাদের চাপা আছে।

১৯■ লাদাখ নিয়ে সর্বদল বৈঠকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তব্যে জট পাকিয়েছে সমগ্র পরিস্থিতি। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যটি গভীর সন্দেহজনক হয়েছে। বক্তব্যটি মোটেই ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মুখে মানানসই নয়। চিন ভারতের জায়গায় ঢুকে নেই, এই বক্তব্যের মধ্যে একটা জটপাকানো ব্যাপার দেখা গেছে। কিন্তু তা বলে বিজেপির রাজনৈতিক উত্থানের জন্য প্রধানমন্ত্রী এই একটা যুদ্ধপাকিয়ে দিতে চাইছেন এটা কিন্তু মোটেও মানা যায়না। এটা একটা মেঠো গুজব। আসলে ভারতীয় মার্কেটে সবসময় অনেক গুজব চলে আসে। আদতে ভারতবর্ষকে শিক্ষা সংস্কৃতির এবং ঐতিহ্যবাহী দেশ বলা হলেও আমাদের দেশ হলো একটা বড় "গুজবখানা।" বহু গুজবের জন্ম দিয়েছে এই দেশ। বর্তমানে গুজব বেশিরভাগ একটি রাজনৈতিক দলের‌ই সৃষ্টি। গুজব তৈরির জন্য বিভিন্ন দলের আইটি সেল আছে। কিন্তু চিনকে দেখেও আমরা সর্বদলীয় বৈঠক ডেকে শিক্ষার পরিকাঠামো বদলে দিতে আমাদের আজ‌ও কোনও ইচ্ছা জাগেনা। যুগ বদলের চেষ্টা আমাদের নেই। বরং সমস্ত দল আমরা বসে আছি, এই আশা নিয়ে যে, আমি কীভাবে ভারতের সিংহাসনে বসবো এবং কবে বসবো। আর চিনের সঙ্গে সদ্ভাব ফিরিয়ে এনে আবার চিনের বাণিজ্য বসতে লক্ষ্মীকে কীভাবে জাগরিত করবো।

২০■ রাজনৈতিক দলের কর্তাব্যক্তি থেকে সামান্য সমর্থক পর্যন্ত আজগুবি কথার খেউড় তৈরি করে তা প্রথমে চায়ের দোকানে ছেড়ে দিয়ে থাকেন আমাদের দেশে। কি সেই কথা? কথার মর্ম হলো নির্বাচন পর্যন্ত এইসব যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা চলবে তারপর থেমে যাবে। এইসব বানানো কথাবার্তা বাজারে কান পাতলে চিরকালের মতো এখনও শোনা যাবে। চীন যত হুঙ্কার ছাড়বে এরকম গুজব তত উড়তে থাকবে। এই দেশে, এ যে কতবড় ন্যাকামি, তা ব্যাখ্যা করে কূলকিনারা পাবেন না। শুনলে গা রিরি করে উঠবে কিন্তু কিছুই করা যাবেনা। চিনের মতো ব্যবসায়ী রাষ্ট্র যাদের আছে টানটান প্রশাসনিক দক্ষতা, যাদের আছে ম্যানেজমেন্ট পড়া একদল সমর বিশেষজ্ঞদের নিয়ে টেকনিক্যাল গোষ্ঠী তাদের নিয়ে কি কোনও খেউড় চলে ? আমাদের কি মনে হয় 
যারা আমেরিকাকে চমকাতে পারে তারা নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে হাত মিলিয়ে এখানে যুদ্ধের খেলা খেলবে ? ভারতের এইসব লোকেরা যদি রাজনীতি করে তবে বলতেই হবে এইসব চ্যাঙড়ার জাত আছে বলেই এদেশের দিশেহারা রাজনৈতিক দলগুলোর এত বাড়বাড়ন্ত।
এবড় বিষ্ময়কর প্রশ্ন আজ ভারতবাসীর কাছে।

২১■ আপনি যদি দু-দেশের সৈন্যদের ধাক্কাধাক্কির সময় লক্ষ্য করে একটু দেখেন। তবে দেখতে পাবেন ওদের রাইফেলে কোনো কাঠ নেই আমাদের রাইফেলে কাঠ আছে। আর ওই কাঠ খুব ভারি ওর ভেতরে আবার লোহার পাত আছে। কিন্তু চিনেদের রাইফেল ছিমছাম ও আর‌ও দুর্ভেদ্য তো বটেই। ওইখানেই আমাদের সৈন্যদের মনোবল ভেঙে তো যাবেই এবং  সৈন্যদের তার ভার‌ও তো বহন করতে হবে। এখন আমাদের সৈন্যদের ভারি মেশিনগান বহন করার জন্য আমাদের কোনও ত্যাগ স্বীকার নেই। আমরা এক একজনকে আর‌ও উচ্চমানের রাইফেল কিনে দান করার বা সমূহ অর্থ দেবার কখনও ব্যক্তিগত চিন্তা করিনি। আমরা ভারতবাসী কি তবে শুধুমাত্র দেশের খেতেই জানি। এরকম অদ্ভুত প্রশ্ন করার আমার কোনও অধিকার যে নেই তাও বুঝি। তবে চিনা সৈন্যদের জন্য ওদের একটা আত্মত্যাগ আছেই। হতে পারে সেই আত্মত্যাগের কারণ তাদের দেশের একনায়কতান্ত্রিক কম্যুনিস্ট পার্টির শাসনে 
মোড়া কিছু নিয়ম শৃঙ্খলা।

২২■ চীনের হাতে কাঁচা পয়সা থেকে ডলার কোনও কিছুর অভাব নেই। সারা বিশ্বের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বড় দাদা বনতে আর বেশি দেরি নেই তাদের। একটা সময় ইউরোপীয় দেশগুলোর ছিল অন্য ধান্দা। অন্য দেশে গিয়ে খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাট করো এবং সেখানকার জনগণকে চাকর বানিয়ে খাটিয়ে নাও বিনিময়ে কিছু করণিক তৈরি করো। কিন্তু চিনের আগ্রাসন অন্যরকম। মেশিনারিজ তৈরি করার পর দক্ষ শ্রমিক সৃষ্টির পর তারা তৈরি করলো বিশ্বমানের সস্তার ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পের দুনিয়া। যা সারা বিশ্ব গোগ্রাসে গিলছে। ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প‌ও তারা তিন চাররকম করে করছে। ধরুন আমাদের এখানে কবি,শিল্পীদের যে সমস্ত স্মারক দেওয়া হয় তার বড়জোর দাম চিনে ১০/২০/৫০ টাকা আর এখানে সেগুলো বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ১০০/১৫০ টাকায়। কিন্তু গ্র্যান্ড হোটেলের অনুষ্ঠানে যে চাইনিজ মেড স্মারক একজন নামজাদা চলচ্চিত্রকারকে দেওয়া হচ্ছে তার দাম কিন্তু আবার ৫০০/১০০০/২০০০ টাকা এবং সেগুলোর ম্যানুফ্যাকচারিংও করছে সেই চায়না। তাহলে ওদের মার্কেট রিসার্চটা একবার বুঝুন। কোন দেশে কোন ক্রয় ক্ষমতার কত লোক বাস করে চীন সেটা উত্তম জানে। আর সেখানে কোনও গুজব নেই। গুজব ছড়ালে , আবোলতাবোল বকলে সেখানে সারাজীবন নিপীড়ন জেল জরিমানা অথবা মৃত্যুদন্ড। জিনফিংয়ের বাবাকে সন্দেহ করে এই রকম নির্বাসিত করাও হয়েছিল। আসলে দেশের শাসন কর্তা থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে হতে হবে অত্যন্ত কড়া প্রকৃতির, হতে হবে অত্যন্ত সুচিন্তিত মনের, হতে হবে দয়াশীল, দানছত্রের মানসিকতাও পরিপূর্ণ থাকতে হবে। গণতন্ত্রের দোষ এখানে উল্টো মানুষের প্রাদুর্ভাব খুব বেশি তাই সরকার এবং বিরোধীপক্ষ দুজনকেই চিনের প্রশাসক জিনফিং ভালো করে চেনেন এবং যুদ্ধের সাজঘরে কি করতে হবে তারাও তা জানে। 

২৩ ■ এই মুহূর্তে অর্থনৈতিক ভাবে চীনের কোনও দৈনতা বোঝা না গেলেও করোনার কারণে এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক কারণে চীন খানিকটা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে। চীন প্রথমে শ্রমিক বানিয়েছে। দক্ষ করেছে তাদের। কীরকম ? এক একটা বিষয় নিয়ে দক্ষতার শীর্ষে পৌঁছতে হব। সময় ধরে কাজ কাজ শেষ করতে হবে। কাজের জায়গায় সময়ে পৌঁছতে হবে। দ্বিতীয় স্তর হলো শ্রমিকরাই উন্নয়ন করে দেখাচ্ছে নতুন নতুন মেশিন বানাতে হবে তাদের তবেই জুটবে প্রমোশন। নিরন্তর চলছে মেশিনের কারসাজিতে ফিনিস প্রোডাক্ট বানানো। প্রোডাক্ট এমন হবে তা যেন টেঁকস‌ই হয়, সৌন্দর্য যেন থাকে তার মধ্যে, ছিমছাম যেন হয় শিল্পসুষমামন্ডিত প্রোডাক্ট যেন হয়। এইসব করতে হলে যে সকল র-মেটিরিয়াল দরকার তা বাইরের দেশ থেকে বেশি বেশি করে কিনে দেশে জমা করছে তারা। মেটিরিয়ালগুলি মিশিয়ে কি কি শংকর মেটিরিয়াল বা খনিজ তৈরি করা যায় যা হবে হাল্কা এবং বহনযোগ্য। মানুষের ব্যবহারে কি কি জিনিস লাগে। নিত্য প্রয়োজনের বিষয়টি হাতেকলমে সেই দেশের নেতাদের জানতে হয়েছে। রান্নাঘরে আর কি কি অ্যাক্সিসারিজ দিলে গৃহিণীদের কাজ করতে সুবিধা হয়। ব্যায়ামাগারের অ্যাক্সিসারিজ কি কি তৈরি করলে শুধুমাত্র নয় একটা গোটা ব্যায়ামাগারের পট কীরকম হবে সৌন্দর্য কীরকম হবে। কোথায় কতবড় কি ধরনের আয়না থাকবে, মেঝেতে কি থাকলে ভালো হয়, এইসব খুঁটিনাটি বিষয়ে কোম্পানির কর্মকর্তাদের নাড়িনক্ষত্র জানতে হবে। তাই পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে একজন ভালো ছাত্র চিনে ম্যানেজমেন্ট পড়তে চলে যাচ্ছে। সে জানে চিন থেকে বের হতে পারলে সারা বিশ্বে লাখ পাঁচেকের একটা চাকরি জোটা কোনও ব্যাপার নয়। এখান থেকে ছাত্র যাচ্ছে ডাক্তারি পড়তে চিনে। চিন জানে তার লোকেরা দক্ষ বিজ্ঞানী, দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার দক্ষ শ্রমিক যথেষ্ট আছে তবু যদি বাইরে থেকে আর‌ও দক্ষতা সংগ্রহ করা যায়। আপনার বাড়িতে কিছু সারাবেন আপনাকে চীনের কর্পোরেট সংস্থায় জানাতে হবে। তাদের দক্ষ শ্রমিক নির্দিষ্ট দিনে আসবে সবকিছু নিয়ে আসবে, তার আগে একজন এসে জেনে যাবে আপনার অসুবিধা কোথায়। আপনাকে শিখতে হবে কীভাবে আপনি অনলাইনে নিজের ব্যক্তিগত কাজকারবার করবেন। টেকনোলজির শিক্ষা শুধুমাত্র শিখলেই হবেনা। হাতেকলমে তাকে সেই কাজ করে করে উঠে আসতে হবে। 

২৪■ চীন এখন আফ্রিকায় বিনা পয়সায় বড় বড় শহরে একটা করে বিজনেস সেন্টার তৈরি করে দিচ্ছে চেয়ার টেবিল থেকে বিশাল বিল্ডিং সব করে দিচ্ছে বিনা পয়সায়। কারণ কি ? আফ্রিকার খনিগুলির‌ও আধুনিক পরিকাঠামো ঢেলে সাজিয়ে দিচ্ছে। এমনকি আমি নিজে গিয়ে ঝাড়খণ্ডে দেখে এসেছি সেখানকার লৌহ‌আকরিক তোলার এক একটা ১৮/২০ লাখ টাকার বুলডোজার মেশিন স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে যা চীনের তৈরি। যা ডিজিটালি মেইনটেইন হবে। এমনকি সে কী কাজ করছে তাও সে লিখে রাখছে তার মগজে। যেখানে ২০০০ শ্রমিক লাগতো এবং প্রোডাকশন সেইভাবে হোতো না এখন একটা মেশিনেই তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। সেই মেশিন চালাবার জন্য একজন শিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ার আছে, স্তরে স্তরে আঠারোজন কর্মচারী আছে। একটি মেশিন লোহার পাহাড় থেকে লোহা নিচ্ছে। কতটা নেবে সে জানে। কোনও ব্যক্তি ছাড়াই বেলচা কোদাল ছাড়াই সেই লোহা বোঝাই করে দিচ্ছে ট্রাকে‌ এবং মেশিনটি সামান্য সামনে পেছেন করছে। হাতির শূঁড়ের ভাবনা মগজে এনে শুধুমাত্র স্যুইচ টিপে সব হচ্ছে। আমাদের হুগলী জেলার জাঙ্গিপাড়ায় তাঁতিদের ঘরে তাঁতবোনা দেখতে গেছি। কিছু তাঁতশাড়িতে জেল্লা কেন জিজ্ঞেস করলাম। সেগুলোর দাম‌ও বেশি এবং হাল্কা।
জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম মাঝে মাঝে হাল্কা চাইনিজ সুতো দেওয়ার ফলে দেখতে জেল্লা আসছে। এই যে আমাদের মহিলারা কটনশাড়ি পরছেন, হালের ফ্যাশনে চলছে। আসলে এইসব চিনের সুতো মিশিয়ে দেওয়ার ফলে হচ্ছে। আমরা দেখছি পমপম ঝুলছে বেশ তো তাঁতি বানিয়েছে। না চিন যখন সুতো দিচ্ছে তারাই এঁকে ডিজিটাল ডিজাইন করে শাড়িতে পমপম করে দিচ্ছে। তারাই রঙ ম্যাচিং করে দিচ্ছে এমনকি এখন শাড়িও চিন বানাচ্ছে। প্রয়োজনে আফ্রিকার মেয়েদের জন্য চ‌ওড়া শাড়ি। আসলে গোটা দেশে শ্রমিকশ্রেণিকে চিন এমন দক্ষতা দিয়েছে যারা এদেশের ইঞ্জিনিয়ারদের বাবা এক একজন। একটি জেমসক্লিপের যে সৌন্দর্য থাকতে হয় অনেকদিন যে তাকে ঝাঁ চকচকে থাকতে হয় এই বোধ চিনের ম্যানেজমেন্ট গড়ে দিয়েছে। ম্যানেজমেন্ট তৈরি করেই ক্ষান্ত নয় তদারকি করছে। কারা তদারকি করছে। ম্যানেজমেন্ট পড়া কম্যুনিস্ট পার্টির নেতারা। আমাদের মতো বক্তৃতা দেওয়া গুজব তৈরির দেশ নয়। আমাদের রাজনৈতিক দলের নেতারা সবসময়
এখানে বক্তৃতা দিয়ে টিঁকে থাকতে চায় তার ৯০% গুজব। হ্যাঁ পরিষ্কার বলছি এই গুজব বিজেপির লোকেজন‌ও তৈরি করতে সমান পারদর্শী। যে দল সরকারে থাকেনা কিংবা সরকারে থাকে তাদের একটাই কাজ গুজব তৈরি করা, গুজবে দক্ষ করে গড়ে তোলা, এক একজনকে গুজবমাষ্টার হিসেবে তৈরি করা।

২৫■ চিন তার ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পকে যে উচ্চস্তরে নিয়ে গেছে সেখানে কিছুমাত্র কমজোরি হলেই চীনের উৎপাদিত দ্রব্য দেশে পড়ে থাকবে। যদি তা হয়‌ও তাহলে চীনের অর্থনীতিতে তার ছায়া পড়বে। সেটা কিন্তু চিন হতে দেবেনা। সমস্ত জিনিস সেখানে কখনোই সরকার তৈরি করেনা। তদারকি করে। শিল্প সুষমা, সৌন্দর্য বোধ , তুল্যমূল্য বিচারে বাজারে কতটা তার গ্রহণযোগ্যতা আছে এবং পরিবর্তন হচ্ছে কিনা এইসব নিয়মিত দেখে তারা। পয়সা আসলেই হবেনা শুধুমাত্র গ্রাহক ড়লেই হবে না। গ্রাহক পর্যাপ্তভাবে নির্ভরশীল কিনা সেই ভাবনায় বিচ্যুতি ঘটালে খাটালে বাস নির্ঘাত।

২৬■ ইতিমধ্যে বলেছি এইসময় চীন নানাভাবে যুদ্ধে জর্জরিত হয়েছে। জাপানের সঙ্গে উপকূলীয় রক্ষায় চীন ও জাপানের সম্পর্ক ভালো নয়। চীন রাশিয়া সীমান্তে নাগরিকদের একটা পারাপারের সমস্যা রয়েছে চীনের সঙ্গে
তবুও রাশিয়ার যুদ্ধাস্ত্র কেনা ও চীনের গৃহস্থালির সরঞ্জামাদি রাশিয়ায় রপ্তানির সূত্রে একটা রফাসূত্র বজায় আছে। হংকং ও তাইওয়ান নিয়েও চীন এক প্রকার জেরবার। সেকারণে চীন কম ক্ষমতাশালী নেপাল, ভূটান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার, মালদ্বীপ ও পাকিস্তানকে বিশাল সাহায্যের হাত বাড়িয়ে রেখেছে। নানা সাহায্য দিয়ে আমাদের‌ও  আমাদের দেশীয় প্রোডাক্টের ওপর নির্ভরতা কেড়ে নিয়েছে বেশ কিছুটা চীন। শুধুমাত্র টিকটক নয় আমরা শতভাগ নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি চিনের ওপর। সেফটিপিন, জেমসক্লিপ,
মাঞ্জা, থালা বাটি গ্লাস, প্লাই, ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম, তালাচাবি, চাবির রিং, মানি ব্যাগ থেকে চটি জুতো বেল্ট, মেয়েদের বিভিন্ন দামের ব্যাগ, ইমিটেশন গয়না, ঘর সাজানোর শোপিস, উপহারের স্মারক, কাপ থেকে ঘর মোছার সরঞ্জাম, ঘর পরিষ্কার করার, গাড়িতে জল দেওয়া ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করার সামগ্রী প্রায় সব কিছু আমাদের ওপর সস্তায় ছেড়ে দিয়েছে। এছাড়াও তো ওষুধের বেসিক যৌগ থেকে রেল এটিএম ইলেকট্রনিক ইলেকট্রিক বৃহত্তম সরঞ্জাম শৌখিন বস্তুর বিশাল সম্ভার ছুরি কাঁচি টর্চ কিছুই বাকি নেই আমাদের চিন দীর্ঘদিন ধরে দিয়ে চলেছে। ভারতের এই ব্যবসায়িক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসনে নিজেদের এতটাই তারা এগিয়ে রেখেছে যে তাদের সমরাস্ত্রের সাংঘাতিক প্রতিঘাত যে কত বড় হবে এবং কত দূর পর্যন্ত হতে পারে তা আমরা এখনও কিছুই জানিনা। তারা কতটা বুদ্ধিধর হলে বোমাপিস্তল গুলিবন্দুক ছেড়ে দিয়ে শুধুমাত্র লোহার রডে পেরেক ওয়েল্ডিং করা একরকম মারণ অস্ত্রের আঘাতে আমাদের ২০ জনকে শহীদ করে দিতে পারে সেই আন্দাজ‌ও করতে পারিনি। 

২৭■ চিন যেভাবে ছোটখাটো দেশকে অর্থনৈতিক সাহায্য দিয়ে চলেছে তাতে এই মুহূর্তে ভারতের বিপদে কাউকে পাশে সহমর্মি হিসেবে আমরা পাবো কিনা খুব সন্দেহ আছে। তাছাড়া ১০ দিনে যারা হাসপাতাল গড়ে দিতে পারে সেই বিশ্বমানের পরিকাঠামো রচনা করতে পারার ক্ষমতায় তারা এই মুহূর্তে গাল‌ওয়ান উপত্যকায় স্থায়ী ঘরদোর বানিয়ে ফেলেছে এই কদিনে। যেখানে আমাদের ২০ জন সেনাকে নির্মমভাবে ওরা হত্যা করেছিল সেখানে ভেঙে পুড়িয়ে দেওয়া আস্থানাকে পুণরায় তারা গড়ে তুলেছে। ১৫/১৮ কিমি তারা এগিয়ে এসেছে যখন এবং দখলে রেখেছে যখন তখন এই মুহূর্তে পৃথিবীর কাছে নিজেদের বৃহত্তম শক্তি প্রমাণ করতে আর পিছিয়ে যাবে বলে মনে হয়না এটা এখন স্পষ্ট ইঙ্গিত।
আমার ধারণা ভারতের কিছু তৈরি রাস্তা ও ব্রিজ‌ও চিন দখলে রাখতে পারে। তারা বসে থাকবে এবং উঠবে না। চিন ভারতকেও পিছিয়ে আসতে বাধ্য করবে। চীনের সঙ্গে এই ঝঞ্ঝাটে সমরাস্ত্রের প্রয়োগ হলে ক্ষয়ক্ষতি ভারতের বেশি হবে। চিনা সেনাবাহিনী এই দিক থেকে মরিয়া। তাদের দেশে ফিরলেও সেখানে কোনও গণতন্ত্র নেই মৃত মানুষের মতো থাকতে হবে তার থেকে ভারতের সেনাবাহিনীকে শিক্ষা দিয়ে মরা তাদের কাছে অনেক বড় সাফল্য। এখন আমেরিকা রাশিয়া বৃটেন ফ্রান্সের এখানে নাক গলিয়ে কিছুমাত্র লাভ নেই। মার্কিনীরা বড় জোর তাইওয়ান ও হংকংয়ের জন্য সেখানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করবে। লাদাখে আমেরিকার সেনা এসে থাকলে তার জন্য আমরাই বেশি চেঁচাবো আমেরিকানরা তা ভালো করেই জানে। অত‌এব এই মুহূর্তে লাদাখে জমি ছেড়ে দেওয়াই হবে আমাদের ভবিতব্য। আর কোন আমলে কত জমি চিনের কাছে আমরা কতটা ছেড়ে দিয়েছি এই আলোচনায় আমরা এখন নরক গুলজার করতে থাকি কারণ এর বেশি করতে যাওয়া আমাদের বিপদের এখন।

২৮■ এই অবস্থায় ভারতের বৃহত্তম দায়িত্বশীল দল হিসেবে কংগ্রেসের উচিত হবে "মেকিং ইন্ডিয়া" এই নতুন শ্লোগান তুলে 
সরকারকে শিক্ষা নীতি বদলানোর দাবি তোলা ও চায়নায় উচ্চ পর্যায়ের ডেলিগেশন নিযুক্ত করে বিষয়টি বোঝার। ভারতবর্ষ তাদের‌ও দেশ‌। যুদ্ধ থেকে চিনকে নিরস্ত্র 
করাই সব থেকে বড় কাজ এখন।
২৯■ ভারত বরাবর শান্তির রাষ্ট্র। গান্ধীজি, শ্রীরামকৃষ্ণ স্বামীজি নেতাজির দেশ। বুদ্ধ গান্ধী বিবেকানন্দের দেশ হিসেবে বিখ্যাত। হিমালয় তো আসলে আদি ভারতীয় ভূখণ্ড। যুদ্ধের প্রস্তুতি তুঙ্গে হলেও যুদ্ধ বা শান্তির পক্ষে ভারতবর্ষের রাজনৈতিক লোকেদের কোনও মতামত এখনও পাওয়া যায়নি। ধরে নিতে হবে কেউ আমরা যুদ্ধ চাইনা। কিন্তু ভারতের একাংশ চান যুদ্ধ হোক। যুদ্ধে ভারতের ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে বিজেপিও ভেগে যাবে এইরকম ক্ষতিকারক কামনায় মালা জপছেন রাতদিন এরকম মানুষের কিন্তু অভাব নেই। তারাই বলছেন চায়নার ওষুধের জন্য চায়নার মূলধনের জন্য ভারত শেষ হয়ে যাবে এবং চায়নার ব্যবসার তথ্য দিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করছেন কিন্তু সেখানে তাদের নিজস্ব কোনও মত লিখছেন না। এটা এক ধরনের চালাকি। ভারত পারেনি যতটা তার ৭৩ বছরের অনেক ভুল আছে। কিন্তু যা পেরেছে তা যদি ভুল হয়ে থাকে তাহলে কীভাবে তার বদল হবে সেই কথা বলো রাজনীতি।

৩০■ যুদ্ধ মোটেও কাম্য নয়। কারণ ২০ জন ৪০/৪৩ জনকেও মেরেছে‌। ক্ষতি দুদলের। যুদ্ধের আগে চিনের ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে।
যারা বলেছিল ভারতের ব্যবসায় চিনকে হঠানো সম্ভব নয়। আমি ধন্যবাদ দেব মহারাষ্ট্র সরকার, রেল, টেলিফোন, রোড এমনকি গঙ্গা নিয়ে অ্যাকশন প্ল্যানে ভারত সরকার তড়িঘড়ি
সমস্ত মূলধন যুক্ত না করার টেন্ডার ফিরিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা নিয়েছেন। ভারতের সামনে অর্থনৈতিক যুদ্ধে চিনকে গুটিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত আর‌ও নিতে হবে। বিশেষ করে যারা ভাবেনা এটা বিজেপির শুধুমাত্র দেশ তাদের স্বাভিমান জাগ্রত হয়েছে। জাতীয়তাবাদী জাত্যাভিনান জাগ্রত হলে ভারত সব পারবে
প্রাণের বিনিময়ে যুদ্ধ‌ও করবে। যতই চীন বলিয়ান হোক না কেন। শেষ বিন্দু রক্ত দেওয়ার কথা তো ইন্দিরাজি বলেই গিয়েছিলেন। ব্যবসা বন্ধ, পণ্য বয়কট, থেকেই ভারতবাসী ওদের কোনঠাসা করবে। ভারত মানে আয়তনে নাগরিক সংখ্যায় পৃথিবীর দশটা দেশের সমান। চিনকে জব্দ করতে তাই অর্থনৈতিক যুদ্ধ ভারতকে জারি রাখতে হবে। ভারতবাসী মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকলে আর প্রধানমন্ত্রীর দোষ তুলে কচু কাটা করতে থাকলে চিন আর‌ও পেয়ে বসবে। জমি চিন ছাড়বে কিনা এটা লাখ টাকার প্রশ্ন। ইতিপূর্বে
বহুবার চিন ভারতে আগ্রাসন করেছে। শুধুমাত্র ওই নিয়ে পড়ে থাকলে আজ চলবে না। ভারতকেও অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়াতে হবে‌।
©® অলোক কুন্ডু

বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৯

রেডিওর প্রাক্কালে প্রদীপের সলতে পাকানো থেকে আলো জ্বালানোর দেবদূত : অবহেলিত বাণীকুমার ও মহিষাসুরমর্দিনী প্রসঙ্গ একটি ঐতিহাসিক দলিল ও তার সম্ভার... ©® অলোক কুন্ডু শাহজাহানকে কে আর অতটা মনে রেখেছেন যতটা উদ্ভাসিত তাজমহল । তেমনি বাণীকুমার হয়ে গেছেন শাহজাহান । আর তাজমহলের রূপ পেয়েছেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র । ১৮৯৫ সালে বঙ্গের কৃতী সন্তান আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু প্রথম বেতার তরঙ্গ সম্প্রসারণ করে দেখালেন। ১৯২২ ইংল্যান্ডের রেডিও জগতে দেখা দিল বিবিসি । ১৯২৪ এদেশে প্রাইভেট রেডিও ক্লাব চালু হলে কানে হেডফোন লাগিয়ে একজন সেই রেডিও শুনতে পারতেন। মূলত ধনীদের মধ্যেই এই ধরনের রেডিও চালু ছিল --অনেকাল ধরেই । প্রথমে মাদ্রাজ-পন্ডিচেরির পর ২৩.৭.১৯২৭ বম্বেতে এই রেডিও হাউসের পত্তন হলো । পরে ২৬.৮.১৯২৭ হলো ওদের শাখা কলকাতায়। নাম হয় -ইন্ডিয়ান স্টেটস্ ব্রডকাস্ট সার্ভিস । Reits Microphone এ তখন সম্প্রচার হতো , দু-ফুট দূরে বসতে হতো মাইককে ছেড়ে । ১ এপ্রিল ১৯৩০ এই কোম্পানিকে পুরোপুরি অধিগ্রহণ করে নাম পরিবর্তন করলেন ব্রিটিশরা , হলো - ইন্ডিয়া ব্রডকাস্টিং কোম্পানি । হেড অফিস বম্বের (মুম্বাই) ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং সার্ভিস যেটা ছিল । তার নাম‌ও পরিবর্তন হয়ে গেছে । বাড়ি ভাড়া নিয়ে ১ নং গার্স্টিন প্লেসে কলকাতায় তাদের নতুন সংস্থার শাখা । অধিকর্তা হিসেবে আসেন- স্টেপলটন সাহেব । ভারতীয় অনুষ্ঠানের তত্বাবধায়ক হন ক্ল্যারিনেট শিল্পী - নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ মজুমদার , সহচর হিসেবে যোগ দেন সঙ্গীতজ্ঞ রাইচাঁদ বড়াল ( বুড়োদা)। ১৯৩০ এ যখন বৃটিশ সরকার ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং কোম্পানি অধিগ্রহণ করে নেয় এবং কর্মসূচি বর্ধিত করার কাজ শুরু করে তখন নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ মজুমদার সহকারী প্রোগ্রাম ডিরেক্টর হন । সাহিত্যিক প্রেমাঙ্কুর আতর্থী অন্যতম অধিকর্তা হিসেবে যুক্ত হন এই বেতার ব্যবস্থার সঙ্গে । অ্যানাউন্সার ছিলেন মোহনবাগানের রাজেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ওরফে রাজেন সেন । তখন‌ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র যোগ দেননি । তিনি তখন এদিকে সেদিকে নাটক করে বেড়াচ্ছেন । স্তোত্রপাঠে তেমন করে নিমগ্ন হননি । বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের জন্ম হয় ৪.৮.১৯০৫ ও তিনি প্রয়াত হন ৩.১১.১৯৯১ । জীবনে নাটক বেতার নাটক ছাড়াও বিরুপাক্ষ ছদ্মনামে তার অনেক ছোট ফিচার ও নাটকের ব‌ই আছে । জীবদ্দশায় তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ নাটক ও ব‌ই লিখেছেন । ছোট থেকেই কলকাতার তেলিপাড়া লেনের রাজেন্দ্রনাথ দে নামক এক পন্ডিত ব্যক্তির কাছে তিনি অল্পস্বল্প চন্ডীপাঠে তাঁর হাতেখড়ি নেন । তখনকার দিনের আবৃত্তিকার হিসেবে বীরেন ভদ্র মশাইয়ের নামডাক হতে থাকে । নাটকের দিকেই তাঁর বেশি মোহ ছিল । পরে আকাশবাণীর নাট্য বিভাগের দায়িত্ব‌ও সামলে ছিলেন । বীরুপাক্ষ ছদ্মনাম নিয়ে মঞ্চে ও রেডিওতে মজার অনুষ্ঠান ও নাটক সম্প্রচারে তিনি বাঙালির মন জয় করে নিয়েছিলেন । পরে রেলের ও স‌ওদাগরি অফিসের চাকরি ছেড়ে রেডিওর সঙ্গে যুক্ত হলেও সরকার তাকে পেনশন দেয়নি বলে শোনা যায় । ১৯৩১ রেডিওতে একটা নতুন কিছু করার তাগিদে নৃপেন বাবু ও অন্যান্যদের অনুরোধে বাণীকুমারের পুরনো লেখা বসন্তেশ্বরীতে গদ্য পাঠে যৎসামান্য অংশ নিয়েছিলেন বীরেন ভদ্র কিন্তু তখন‌ই তিনি তার জাত চিনিয়ে দেন রেডিওর কর্তাদের কাছে । ১৯০৭ সালের ২৩ নভেম্বরে হাওড়ার কানপুর গ্রামে মামারবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন বেতারের মহিষাসুরমর্দিনীর শ্রষ্ঠা বাণীকুমার ওরফে বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য । পিতা সংস্কৃত-পন্ডিত ও ঐতিহাসিক, বিধুভূষণ ভট্টাচার্য যিনি ঐতিহাসিক " রায় বাঘিনী"র ইতিহাসকার । বাণীকুমারের মাতা ছিলেন-অপর্ণা ভট্টাচার্য । বাণীকুমারদের আসল বাড়ি ছিল হুগলির আঁটপুরে । দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে থাকতেন বিধুভূষণবাবু । কার্যকারণে বাণীকুমারের পিতা একসময় উঠে এলেন মধ্য হাওড়ার খুরুট ধর্মতলায় । নিলেন ভাড়া বাড়িও । এখানে পিতার টোলেই বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্যের প্রাথমিক শিক্ষা হয় । এরপর হাওড়া জেলা স্কুলে ভর্তি হন বৈদ্যনাথ ওরফে বাণীকুমার । কিন্তু ভাড়া বাড়ি ছেড়ে অবশেষে তাঁরা হাওড়ার রামরাজাতলা-সাত্রাগাছি অঞ্চলে বট গাছের মোড়ে সান্যালদের বাড়ি যেখানে সেই বাড়িতে উঠে যান । বাণীকুমারের পিতা ও পিতামহ দুজনেই ছিলেন সংস্কৃত পন্ডিত, বাড়িতে তাই সংস্কৃতের বরাবরই চর্চা ছিল । কিন্তু সংস্কৃত কলেজের সঙ্গে পন্ডিত বিধুভূষণ ভট্টাচার্য যুক্ত থাকায় ম্যাট্রিক পাশ করার পর ছেলেকে তিনি প্রেসিডেন্সিতে প্রথমে আই.এ এবং তারপরে সেখানেই ইংরেজিতে বি.এ. অনার্সে ভর্তি করে দেন । একে তো সংস্কৃত ঘরাণায় বাণীকুমারের বড় হয়ে ওঠা সেই সঙ্গে ইংরেজিতে নাটক নভেল জানায় তিনি কাব্যচর্চায় ও সাহিত্যে অতি দক্ষ হয়ে ওঠেন । হাওড়া জেলা স্কুলে তাঁর শিক্ষক কবি করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়, তাঁর‌ই উৎসাহে বৈদ্যনাথ লিখতে শুরু করে দেন। কবিতা ও অনুবাদ সাহিত্য ছাড়াও ছোট নাটিকা লেখায় তিনি একপ্রকার কিছু দিনের মধ্যেই সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠলেন । কলেজে পড়ার সময়ই সংস্কৃতে ব্যুৎপত্তির জন্য কলেজের সস্কৃতের অধ্যাপক বাগবাজারের পন্ডিত অশোকনাথ শাস্ত্রীর সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে । কলেজ সমাপ্তির পর পিতার উৎসাহে সংস্কৃত বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ পড়াশোনা শুরু করে দেন এবং শাস্ত্রীমশাইয়ের টোল থেকে সরকারের দেওয়া কাব্য সরস্বতী উপাধি লাভ করেন । এর কিছুদিন পর তিনি চাকরি পান টাকশালে । পিতা আর দেরি না করে হাওড়ার সান্ত্রাগাছিতে থাকার সময়ই তাঁর বিয়ে দিয়ে দেন গৌরীদেবীর সঙ্গে । বানীকুমার লিখে গেছেন - "মহিষাসুরমর্দিনী আমার প্রথম যৌবনের রচনা ।" মূল রূপটির বিশেষ পরিবর্তন না ঘটলেও বেতারের মহিষাসুরমর্দিনীর মধ্যে শাশ্বত সত্য এক অতিথিবৎসল ভারতের শান্তিময় জীবনের মর্মকথা ধরা আছে । ১৯২৮ সাল থেকেই বেতারের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে । কলকাতার বেতার তখন আধুনিক যুগের মনোরঞ্জনের একটি অতি আবশ্যিক ও উচ্চতর মাধ্যম । ইংরেজি ১৯২৮ সালের ২৬ শে আগষ্ট বেতারের আমন্ত্রণে বেতারজগৎ-এ প্রকাশ পায় রবীন্দ্রনাথের কবিতা । --"ধরার আঙিনা হ'তে ওই শোনো উঠিল আকাশবাণী" পরে যখন ইডেন গার্ডেনে ১৫.৯.১৯৫৮ তে রেডিও অফিস উঠে এলো তখন তার নাম হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেওয়া সেই- আকাশবাণী । অবশ্য বৃটিশদের প্রশাসনের সুবিধার জন্য তারা ১৯৩৬-এ গার্স্টিঙ প্লেসে থাকার সময়ই রেডিও কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে সরাসরি শাসনে নিয়ে আসেন ও নাম হয়- অল ইন্ডিয়া রেডিও । রেডিও তখন ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে বাণীকুমারের ভাবনায় এলো কীভাবে রবীন্দ্রনাথের নাটক ও ছোটগল্প শ্রুতিমধুরভাবে সম্প্রচার করা যায় । এখানে বলে রাখা ভালো শুধু মহিষাসুরমর্দিনীতেই বাণীকুমার মেতে থাকলেন না অথবা ছিলেন না । রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্প ও নাটক থেকে একের পর এক শ্রুতিনাটক তৈরি করতে শুরু করলেন তিনি। বেতারেই হলো তার ঘরবাড়ি । টাকশালে চাকরি শুরুর আগেই বন্ধুদের নিয়ে যৌথ ভাবে গড়ে তুলেছেন ,"চিত্রা সংসদ" নামে একটি ছোট নাট্যদল । সেখানেই রাজেন্দ্র সেন বীরেন্দ্র ভদ্রকে দেখতে পান বেতারের কর্মাধ্যক্ষ শ্রী নৃপেন্দ্রচন্দ্র মজুমদার মহাশয় । ইতিপূর্বে টাকশাল থেকে ১ নং গ্রাস্টিন প্লেসে অফিসের পর প্রোগ্রামের আশায় আসতে শুরু করেছেন । ছোট ছোট কাজ পাচ্ছেন । খোদ বৃটিশ সরকারের কর্মচারী । পার্টটাইম কাজে তাই ছদ্মনামে মিন্ট অফিসের বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য পরিচিত হলেন বাণীকুমারে । শেষ পর্যন্ত নাট্য প্রেমিক, স্ক্রিপ্ট রাইটার ,কবি গীতিকার, তিনটি ভাষায় পন্ডিত বাণীকুমার আকাশবাণীতে , "চিফ প্রোগ্রাম এক্সিকিউটিভ"হিসেবে কর্মরত ছিলেন । ওইখানে ঘোষক হিসেবে আগেই যোগদেন রাজেন সেন । আর এক ঘোষক ও পাঠক বিজন বসু , গল্প দাদুর আসর চালাতে এলেন ১৯২৮-এ । এলেন সঙ্গীত শিল্পী সাগির খাঁ, পাঞ্জাবি গাইয়ে হরিশ্চন্দ্র বালি । সঙ্গীতজ্ঞ রাইচাঁদ বড়াল । রেডিও স্টেশন চালানোর মতো সমাজের গণ্যমান্য শিল্পী-সাহিত্যিকের দল , এলেন শিশির কুমার মিত্র, নলিনীকান্ত সরকারের মতো প্রশাসকরা । ড. ইন্দিরা বিশ্বাস বসু যিনি বেতারজগৎ ও অল ইন্ডিয়া রেডিও নিয়ে ডক্টরেট করেছেন বাস্তব তথ্য খানিকটা তার থিসিস পেপারের সঙ্গে মেনে নিতে হয় । তিনি বলেছেন- বেতারে বাণীকুমার প্লে-আর্টিস্ট হিসেবে প্রথম যোগদান করেন । মুন্ডক উপনিষদ ও মার্কন্ডেয় পুরাণের দেবীস্তুতি অর্থাৎ চন্ডীপাঠটি বাণীকুমারের হুবহু মুখস্থ ছিল । পাঠ‌ও করতে পারতেন । ১৯৭৮ সালে বহু বছর পরে প্রথম এইচ‌এমভি কর্তৃক ভূবনভোলানো মহিষাসুরমর্দিনীর রেকর্ড বের হলো , কপিরাইট র‌ইলো AIR -এর হাতে । ১৯৬৫ সালেও মহিষাসুরযর্দিনীর শো-গুলি লাইভ প্রোগ্রামে হতো । গানের শিল্পীরা ছিলেন- সুপ্রীতি ঘোষ,কৃষ্ণা দাশগুপ্ত, শিপ্রা বসু , মানবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, বিমলভূষণ, রবীন বন্দ্যোপাধ্যায়,অরুণকৃষ্ণ ঘোষ, তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, ইলা বসু , আরতি মুখোপাধ্যায়, সুমিত্রা সেন, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, উৎপলা সেন ,ধীরেন বসু, অসীমা ভট্টাচার্য । শিল্পী ও সহকারী মিলিয়ে প্রায় ৫০ জনের বঙ্গ বিজয়ী একটা দল তৈরি হয়েছিল সেই সময় এবং সেই দলের তিন তারকা ছিলেন বাণীকুমার, পঙ্কজ কুমার মল্লিক ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র । শ্লোকের উচ্চারণ ও তার তর্জমাগুলি বাণীকুমার প্রস্তাবিত স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী হুবহু তুলে নিয়ে তাকে আরও মাধুর্যতর করে এবং স্বরক্ষেপণকে ব্যঞ্জনাময় করে তোলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র । যে কারণে প্রথমবার বাণীকুমার নিজেই যে চন্ডিস্তুতিগুলি বসন্তেশ্বরীতে পাঠ করেছিলেন পরে সেগুলির সম্পূর্ণ দায়িত্ব দেন বয়সে বড় ও পদাধিকারে নীচে থাকা বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে । এই অসাধারণ আয়োজনের রচনা ও প্রবর্তনা ছিল - বাণীকুমারের । বাঙালি জাতি এমনকি হালের উইকিপিডিয়া পর্যন্ত বাণী কুমারের কাজকে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের কাজ বলে অনেক জায়গায় উল্লেখ করেছে । যখন প্রথম এই ধরনের প্রোগ্রাম রেডিও নিতে চলেছে সেই আসরে রাইচাঁদ বড়াল সাগির খাঁ নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ মজুমদার প্রেমাঙ্কুর আতর্থীদের সঙ্গে বাণী কুমারের যুক্ত ছিলেন । বিকেলের দিকে চা-সিঙ্গাড়া সহযোগে ১৯৩১ এই বেতারের আড্ডায় এক নম্বর গার্স্টিন প্লেসে আসর বসতো কখনো কখনো বীরেন্দ্র কৃষ্ণ‌ও সেখানে থাকতেন সেই সময় যদিও তিনি রেডিওতে মহিলা মজলিসে যুক্ত হয়েছেন-১৯২৮এ। কিন্তু চাকরি করতেন না এবং সারাদিন রেডিওতে থাকতেন‌ও না । যাইহোক মহিষাসুরমর্দিনীর সঙ্গীত সর্জনা ছিল স্বনামধন্য মিউজিক কম্পোজার পঙ্কজকুমার মল্লিকের এবং শুরু করেছিলেন মালকোষ রাগ দিয়ে । সেই সুরকে আজ‌ও কার‌ও ছাপিয়ে যাওয়ার সাধ্য হলনা । গ্রন্থনা ও স্তোত্রপাঠের ক্যারিস্মা ছিল - বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের । ইন্সট্রুমেন্ট বা বাজনাগুলি ছিল- হারমোনিয়াম,তানপুরা, চেলো, ভাওলিন, ভাইওলা, বাঁশি । পাঞ্জাবি গায়ক হরিশ্চন্দ্র বালি একটি গানে সুর সংযোগ করে ছিলেন । আর একটি গানে সুর দিয়েছিলেন সাগির খাঁ সাহেব। খুশি মহম্মদ বাজিয়েছিলেন- হারমোনিয়াম, আলী ছিলেন চেলোতে । বাঁশি বাজিয়ে ছিলেন একজন বিখ্যাত মুসলমান বাজনদার । ইন্সট্রুমেন্ট অধিকাংশ‌ই ছিলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। যার ফলে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সংস্কৃত উচ্চারণ ঠিক মতো তাঁরা প্রথম প্রথম ধরতে পারতেন না । অসুবিধা হচ্ছিল কিন্তু বারবার অনুশীলনের ফলেও লাইভ প্রোগ্রামেও সেই ভুল হয়ে গিয়েছিল কিন্তু একবার‌ও কেউ তা বুঝতে পারেননি যে কোথায় সেই ভুল-ত্রুটিটি হয়েছিল ?! লাইভ অনুষ্ঠানে শঙ্খ, বাঁশি ও স্লোক-স্তোত্র পাঠ পরপর থাকায় কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল কিন্তু কাঁচের ঘর থেকে বাণীকুমার তা চালিয়ে যেতে বলেছিলেন এবং সেই সুরের মূর্ছনায় ততক্ষণে বাঙালির হৃদয় জয় করা হয়ে গেছে । পরে তাই কোনো ভাবেই বাঁশির সুরের সেই মুহূর্তকে আর বদল করেননি পঙ্কজকুমার মল্লিক ও বাণীকুমার । তবে পরে অনেকবার স্ক্রিপ্টের সামান্য বদল করলেও বাণীকুমার অগ্রজ-বন্ধু বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের সঙ্গে আলোচনা করে পঙ্কজকুমার মল্লিকের মতামত নিয়ে তা নতুনভাবে রিয়ার্সালে ঠিক করে নিতেন । বাণীকুমার ১৯২৮ এ তার ২১ বছর বয়সে টাকশালের চাকরি ছেড়ে দিয়ে স্ক্রিপ্ট রাইটার ও স্টাফ আর্টিস্ট পদে যোগ দিয়েছিলেন কিন্তু বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র চিরকাল তার মূল চাকরির সঙ্গে রেডিওর দপ্তর সমানে চালিয়ে গেছেন । চাকরি ছেড়েছিলেন অনেক পরে এবং বেতারে অনেক পরে যোগদান করার জন্য তিনি সরকারের পেনশন পাননি । বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে সরকারের এই অবহেলার জন্য পরে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় । বীরেন ভদ্র বেশ কয়েকবছর রেডিওর মহিলা মজলিস বিভাগটি চালিয়েও ছিলেন কিন্তু এই নিয়ে অমৃতবাজার পত্রিকায় বিস্তর চিঠি লেখা হয় । এক প্রকার স্ক্যান্ডাল ছড়ায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে নিয়ে ,তারপর তিনি সরে যান ১৯৩৪ সালে । আর ১৯৩৬ নাগাদ শুরু হয় মহিলা মহল বেলা দে-র তত্ত্বাবধানে । পাকাপাকি ফর্মেশন নেওয়ার আগে রেডিওর বিভিন্ন আড্ডা থেকে উঠে আসা বাঙালির হৃদয়ের আসুমদ্রহিমাচল বিজয়ী , মহিষাসুরমর্দিনী সঙ্গীতালেখ্যটি বিভিন্ন ভাবে পরিবেশিত হয় , কখন‌ও বসন্তেশ্বরী নামেও । তাই মহিষাশুরমর্দিনীকে সম্পূর্ণ রূপে জানতে আমাদের চলে যেতে হবে সত্তরের দশকের বাঙালি সমাজে । সেই মধ্যবর্তী সময় থেকেই টেলিভিশন যখন বিভিন্ন বাড়িতে স্থান পেতে শুরু করলো । এখন এরকম বাড়ি খুঁজে পাওয়া খুব শক্ত যেখানে টিভি নেই । কিন্তু রেডিওর আদিকালে কিন্তু রেডিওকে ঘরে ঘরে পাওয়া তো দূরের কথা সমস্ত বাড়িতেও পাওয়া মুস্কিল ছিল । যদিও আগে এক সময়ে রেডিওই ছিল খবর ও অন্যান্য অনুষ্ঠান সম্প্রচারের একমাত্র গণ ও মনোরঞ্জনকর মাধ্যম । এখন সে দায়িত্ব পালন করছে টেলিভিশন। রেডিও বলতে নতুন প্রজন্ম বোঝে এফ‌এমকে । কোন অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দৃশ্যের উপস্থিতি দর্শকমনকে আকৃষ্ট করে অনেক বেশি । সেজন্যই রেডিওর জৌলুষ এখন অনেকটাই স্তিমিত। হয়ত এর একমাত্র ব্যতিক্রম ঘটে যায় মহালয়ার ভোরে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ শোনার আগ্রহে ঝাড়পোছ হতে শুরু করে দেয় অপোড়ো রেডিও । টেলিভিশনের চেয়ে আকাশবাণীর এই অনুষ্ঠানটি এখনও যে লোকের কাছে অনেক বেশি জনপ্রিয় তা মহালয়ার ভোরেই স্পষ্ট বোঝা যায় । অনুষ্ঠানের শুরুটি - “আজ দেবীপক্ষের প্রাক-প্রত্যুষে জ্যোতির্ম্ময়ী জগন্মাতা মহাশক্তির শুভ আগমন-বার্ত্তা আকাশ-বাতাসে বিঘোষিত। মহাদেবীর পুণ্য স্তবনমন্ত্রে মানবলোকে জাগরিত হোক ভূমানন্দের অপূর্ব্ব প্রেরণা। আজ শারদ গগনে-গগনে দেবী ঊষা ঘোষণা করছেন মহাশক্তির শুভ আবির্ভাব-ক্ষণ।” এরপর তিনবার শঙ্খধ্বনির পর শুরু হয় অনুষ্ঠান। সুপ্রীতি ঘোষের পরিশীলিত কন্ঠে গাওয়া সেই গান – “বাজল তোমার আলোর বেণু”। সাধারণ মানুষের কাছে পঙ্কজকুমার ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ যেভাবে এই ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত, সেই তুলনায় একটু হয়তো আড়ালেই থেকে গেছেন বাণীকুমার । অথচ মূল অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা রচনা-প্রস্তাবনা এবং বারবার সংযোজন বিয়োজনের অধিকার দেখিয়েছেন সব‌ই বাণীকুমার । ১৩৩৯ বঙ্গাব্দের আশ্বিনে প্রথম প্রচারিত হয় অনুষ্ঠানটি, কিন্তু তখন এর নাম ছিল ‘শারদ বন্দনা’। ১৯৩৪-এর ৮ ই অক্টোবর ( ১৩৪১ বঙ্গাব্দ ) মহালয়ার সকাল ছয়টা থেকে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত প্রচারিত হয়েছিল অনুষ্ঠানটি। কিন্তু এটি ঘিরে তীব্র আপত্তি ওঠে – রক্ষণশীল দলের কাছ থেকে থেকে। প্রতিবাদের মূল কারণ ছিল – এক অব্রাহ্মণ ব্যক্তির কন্ঠে কেন চণ্ডীপাঠ শোনা যাবে ? রুখে দাঁড়ালেন বাণীকুমার স্বয়ং । গ্রন্থনা ও চণ্ডীপাঠ বীরেন্দ্রকৃষ্ণই করবেন এই সিদ্ধান্তে অটল থাকেন তিনি এবং এও বললেন তাহলে তিনিও এই অনুষ্ঠান থেকে নিজেকে মুক্ত করে নেবেন । আর‌ও একটি আপত্তি ছিল মহালয়ার সকালে পিতৃপক্ষের সময়‌ই কেন চণ্ডীপাঠ হবে ? যখন প্রতিমার বোধন‌ই হয়না । অথচ ওই স্রোত্রগুলি সব‌ই দুর্গা মন্ত্র । এতেও তৎকালীন সময়ে ব্রাহ্মণরা আপত্তি তুলেছিলেন । সেই জন্য ১৯৩৫ ও ১৯৩৬ সালে অনুষ্ঠানটি ষষ্ঠীর ভোরে প্রচারিত হয়েছিল । কিন্তু পরিশেষে বাণীকুমারের সিদ্ধান্ত মেনেই ১৯৩৭ সাল থেকেই মহালয়ার ভোরে প্রচারিত হয় – ‘মহিষাসুরমর্দিনী। ’ । প্রভাতী বিশেষ এই অনুষ্ঠানের সময় বিভিন্ন সময় পরিবর্তিত হয়েছে। কখন‌ও ৬.০০ থেকে ৭.৩০ । পরে শুরুর সময়ে পরিবর্তন আনা হয় ৫.৩০ ও শেষে ৪.০০ থেকেই নির্দিষ্ট থেকে যায় সময় ১৯৫০ সালে । অনুষ্ঠানটি সফল ও আকর্ষণীয় করে তুলতে বাণীকুমারের সঙ্গে পঙ্কজকুমার মল্লিক ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের নাম অবশ্যই এক‌ই সারিতে স্মরণীয় হয়ে থাকার কথা । বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র, পঙ্কজকুমার মল্লিক ও বাণীকুমার ছিলেন একই বৃন্তের তিনটি কুসুম । ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ গীতি আলেখ্যটি পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় । এ প্রসঙ্গে একটি নিবন্ধে বাণীকুমার নিজেই লিখেছেন –“মহিষাসুরমর্দিনী” আমার প্রথম যৌবনের রচনা । কিন্তু মূল রূপটির বিশেষ পরিবর্তন না ঘটলেও এই গ্রন্থের বর্তমান রূপ বহুতর তথ্য ভাবগর্ভ বিষয় এবং বেদ-পুরাণাদি-বিধৃত শ্লোকাবলী সংযোজনায় সমলংকৃত। প্রকৃতপক্ষে এই গ্রন্থ মার্কন্ডেয় সপ্তশতী চন্ডীর সংক্ষিপ্তসার বললেও অত্যুক্তি হয় না, তদুপরি এর মধ্যে আছে মহাশক্তি-সম্বন্ধে বৈদিক ও তান্ত্রিক তত্ত্বের ব্যঞ্জনা এবং এর অন্তরে নিহিত রয়েছে শাশ্বত ভারতের মর্মকথা..." মূল রচনাটি লেখা শুরু হয়েছিল হাওড়ার খুরুটের বাড়িতে --১৯ সেপ্টেম্বর ১৯১৭ । পরে হাওড়ার সাঁতরাগাছির বাড়িতেই ১৯৩১ থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত খসড়াটি চন্ডীপাঠ থেকে বসন্তেশ্বরী ও তারপর ‘মহিষাসুরমর্দিনী’তে পরিপূর্ণ রূপ পায় । এরপর বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য ওরফে বাণীকুমার বাগবাজারে উঠে চলে যান। দেশে জরুরী অবস্থা থাকাকালীন ১৯৭৬-এর ২৩ শে সেপ্টেম্বর মহালয়ার ভোরে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’কে সরিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের প্রধান ড. গোবিন্দগোপাল মুখোপাধ্যায়ের রচনা-‘দেবীঙ দুর্গতিহারিণীম্ 'কে বিকল্প হিসেবে মহালয়ার অনুষ্ঠানে প্রচারিত করা হয় । রূপদান করেছিলেন পাঠে অভিনেতা মধ্যগগণের উত্তমকুমার ও বসন্ত চৌধুরী ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর ও আশা ভোঁসলে এবং পরিচালনা করেছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় । এছাড়া প্রভৃতি স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ এই অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন । অনেকে মনে করেন দেশের এমার্জেন্সির সুযোগে কংগ্রেস নেতা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির মৃদু প্রভাব ছিল এই প্রোগ্রাম চেঞ্জের ব্যাপারে । যদিও এই বিষয়ে কাগজে প্রিয়রঞ্জনের নামে কোনোদিন কিছু বের হয়নি । কিন্তু ততদিনে বাণীকুমার রেডিও থেকে অবসর নিয়ে প্রয়াত হয়েছেন । বরং বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে আগের দিন পর্যন্ত কিছু জানতে দেওয়া হয়নি । ১৯৬৬ থেকে রেকর্ডেড প্রোগ্রাম হলেও যে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র বরাবরের মতো শেষ ট্রামে আকাশবাণী ভবনে , রাতেই বালিশ-বিছানা নিয়ে চলে আসতেন , তিনি কিন্তু ১৯৭৬ সালের মহালয়া বাড়িতে বসেই নতুন আলেখ্যটি শুনেছিলেন এবং তাঁর পুত্রকে -"আক্ষেপ করে বলেছিলেন লোকে যদি নেয় নেবে তার কি বলার আছে ।" বাস্তবিক তিনি খুব দুঃখ পেয়েছিলেন কিন্তু ততদিনে বাণীকুমার‌ও প্রয়াত হয়েছিলেন ( ১৫ আগষ্ট ১৯৭৪) তাই সমস্ত দুঃখ একলাই ভোগ করেছিলেন । কিন্তু '' মহিষাসুরমর্দিনী '' স্থানচ্যুত হওয়ায় জনরোষ ফেটে পড়ে মানুষ-জনতা । পত্র-পত্রিকায় সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। পোস্টকার্ডে এবং সরাসরি হাতে করে প্রতিবাদ পত্র আকাশবাণী ভবনে ও আনন্দবাজার অফিসে লোকে সেদিন‌ই পৌঁছে দিয়েছিল । এমনকি একদল মানুষ রেডিও অফিস ঘেরাও করে স্টেশন ডিরেক্টরের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করতে শুধু বাকি রেখেছিল । বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র বরাবরই আগের দিন একা রাত্রিবেলাতেই বেতারকেন্দ্রে চলে আসতেন এবং ‘মহিষাসুরমর্দিনী ’ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উপস্থিত থেকে তারপরে যেতেন । টেপ রেকর্ডারে অনুষ্ঠান চললেও এ অভ্যাস তিনি চালিয়ে গেছেন দীর্ঘকাল । কিন্তু ১৯৭৬ সালের পর থেকে তিনি কখনও রাত্রি বেলা আর কখন‌ও যাননি । ওই জরুরী অবস্থার সময়েই অপসারিত হন পঙ্কজকুমার মল্লিক ‘সঙ্গীত শিক্ষার আসর’ থেকে । অবশ্য জনসাধারণের চাহিদাকে মর্যাদা দিতে সেবছর ষষ্ঠীর দিন পুণরায় বাণীকুমারের রচনার সম্প্রচারিত হয় পুরনো এবং চিরদিনের ‘মহিষাসুরমর্দিনী ।’ আর ১৯৭৭ থেকে স্বমহিমায় মহালয়ার ভোরে আবার ফিরে আসে সেই আদি অকৃত্রিম ‘মহিষাসুরমর্দিনী।’ ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠানটি রচনা ও তরঙ্গায়িত করে বাণীকুমার যে আসাধারণ কাজটি করেছিলেন পরবর্তীতে স্টেশন ডিরেক্টর দিলীপকুমার সেনগুপ্ত সে প্রসঙ্গে বলেছেন – –“বাণীকুমার যদি আর কোনো কাজ নাও করতেন, তাহলেও শুধু - ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র জন্য মহালয়ার ‘নেপথ্য নায়ক’ হিসেবে চিরকাল অমর হয়ে থাকতেন , তাঁর কলম থেকে নিঃসৃত ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ বাঙালি সংস্কৃতির মজ্জায় মজ্জায় থেকে গেছে"। যে বাণীকুমারের মহিষাসুরমর্দিনীর বেতার সংস্করণ বঙ্গবাসী শুনতে পেয়েছিলেন এক অপ্রত্যাশিতভাবেই সেইতুল্য খ্যাতি স্বনামধন্য বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য ওরফে বাণীকুমারকে আজ‌ও দেওয়া হয়নি । সবচেয়ে বিস্ময়কর অনেকেই আর তাঁকে মনে পর্যন্ত রাখেননি ,চেনা তো দূরের কথা । এর একটি বিশেষ কারণ তিনি ছিলেন আকাশবাণীর একটি বিভাগের প্রযোজক তাই বেতার জগৎ পত্রিকা ও অন্যান্য পত্রিকায় বাণীকুমার সম্পর্কে তেমন কোনো আর্টিকেল না বেরনোর ফলে তিনি চিরকাল পর্দার পেছনে রয়ে গেছেন। নবীন প্রজন্মের কেউই তাঁর সম্পর্কে কিছুই জানেন না । এমনকি তার একক ও সম্মিলিত কোনো ভালো ফটোগ্রাফ‌ও কোথাও এখন পাওয়া যায় না । বাণী কুমারের ডায়রিতে ১৯৩২ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত মহিষাসুরমর্দিনীকে নানাভাবে ভাঙাগড়ার ইতিহাস যা ছিল তা আজ কোথায় আছে ঠিকমতো কারো জানা নেই এবং ওই প্রারম্ভিক সময়ে অজস্রবার বাণীকুমার তার স্ক্রিপ্ট ও গানের সময়ের কিছু পরিবর্তন করেছিলেন যেটা বঙ্গীয় সমাজ কখন‌ও ধরতে পারেনি । বাণীকুমারের সাহিত্যিক নাতি চন্দ্রিল ভট্টাচার্য এক জায়গায় বলেছেন-" তার ঠাকুরদা কখন‌ও কম্প্রোমাইজ করেননি,তার ডায়রিতে প্রতিবার‌ই কিছু পরিবর্তন করতেন তাঁর সাধের মহিষাসুরমর্দিনীর । আসলে ওটা তিনি একটি মিথ তৈরি করে গেছেন প্রায় যা টানা ২৮ বছর লাইভ প্রোগ্রাম চলেছিল।" সত্যি এটা ভাবলে আমাদের অবাক লাগে --সরস্বতী সঙ্গীত বিচিত্রা দিয়ে "বেতার বিচিত্রা" নামের অনুষ্ঠানটি বাণীকুমার প্রোডিউসারের ভূমিকায় ১৯৩১ থেকে টানা ২১ বছর তিনি চালিয়ে গেছেন । ইতিমধ্যে হাওড়ার সাত্রাগাছি থেকে বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য একসময় নতুন বাড়ি করে উঠে গিয়েছেন সেকথা বলেছি,কলকাতার বাগবাজার স্ট্রিটের কাছে ৪৭/১ বোসপাড়া লেনে । বর্তমানকে চেনাতেই হয়তো গত ২০১৭ সালে ওই চৌমাথার মোড়ে কলকাতা কর্পোরেশনের স্থানীয় কাউন্সিলর বাপি ঘোষ ও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে একটি স্মৃতিরক্ষা কমিটি গড়ে মর্মর মূর্তি বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয় । অথচ ওই এলাকায় এতদিন তাঁর নামে কোনও স্মারক পর্যন্ত ছিল না বলেই স্থানীয় বাসিন্দাদের মত । আপামর বাঙালির কাছে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ বলতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের নামই সর্বাগ্রে উঠে আসে , হয়তো তাই নেপথ্যে চলে যান বাণীকুমার ওরফে বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য । ২০১৭-তে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্যর জন্য ওই মূর্তি বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল গত বছর তার বাগবাজারের বাড়ির কাছে । প্রসঙ্গত জানা যায় যে বাণীকুমারের পুত্র নৃসিংহকুমার ভট্টাচার্য বর্তমানে কেষ্টপুরের বাসিন্দা । তাঁর নাতি স্বনামধন্য লেখক চন্দ্রিল ভট্টাচার্যের কথা আগেই বলা হয়েছে । গত মহালয়ার দিনই ওই মূর্তি বসানো সম্পূর্ণ হয়েছে বলে বাপি ঘোষ কাউন্সিলর সংবাদপত্রে জানিয়েছিলেন । এই সঙ্গে আর‌ও জানা যায় স্কুল বয়সে বাণীকুমার যেখানে থাকতেন , মধ্য হাওড়ার খুরুট ধর্মতলাতেও বাণীকুমারের পূর্ণাবয়ব একটি মূর্তি বসানো হয় গত সেপ্টেম্বর ১৯১৭তে । মধ্য হাওড়ার খুরুট ধর্মতলা বারোয়ারী তলায় ওই মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন স্বনামধন্য সঙ্গীত শিল্পী শ্রী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় ও প:ব: সরকারের ভারপ্রাপ্ত সমবায় রাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী অরূপ রায় মহাশয় । উপস্থিত ছিলেন হাওড়া কর্পোরেশনের মেয়র ও মেয়র পারিষদ যথাক্রমে ডা: রথীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও শ্যামল মিত্র মহাশয় , এঁদের উদ্যোগেই হাওড়ার মূর্তিটি স্থাপিত হয়েছে বলে শোনা যায় । ইতিমধ্যে গঙ্গার অনেক জল গড়িয়েছে অবশেষে ১৯৭৯ বের হলো বাণীকুমারের জীবনের সেরা কাজের সিডি । এইখানে একটু জানানো দরকার "দেবিঙ দুর্গতিহারিনিম্ " কিন্তু কিছু দিন আগে পর্যন্ত রেডিওতে ১৯৭৭ সাল থেকে মহা ষষ্ঠীর সকালে আকাশবাণী থেকে সম্প্রচার করা হতো , কারণ মহিষাশুরমর্দিনীর কাছেপিঠে না আসতে পারলেও সেটির সঙ্গে উত্তমকুমার হেমন্ত লতা এবং এইচ‌এমভির সত্ত্বা জড়িয়ে ছিল লঙ-প্লেইঙ রেকর্ড‌ও ছিল । আবার ফিরে আসি আমার মূল আলোচ্য বিষয় বাণীকুমারের প্রসঙ্গে । যদি আরও কিছু পিছিয়ে যাই তাহলে দেখতে পাই , কলেজে পড়তে পড়তে তিনি জড়িয়ে পড়েন তৎকালীন সাহিত্য জগতের সঙ্গে । প্রেসিডেন্সী কলেজ ম্যাগাজিনে, প্রকাশিত হয় মহাকবি ভাস রচিত "শোণিত পারণা" নাটকের বঙ্গানুবাদ । অধ্যাপক অশোকনাথ শাস্ত্রী কৃত এই বঙ্গানুবাদ নাটকের রূপারোপ করেছিলেন বাণীকুমার। এই রূপারোপ সম্বন্ধে অশোকনাথ শাস্ত্রী , এই নাটকের মুখবন্ধে লিখেছিলেন- " সংস্কৃত দৃশ্যকাব্যে কেবল অঙ্কবিভাগ আছে---দৃশ্যবিভাগ নাই । কিন্তু সাধারণের বোঝার জন্য , বাণীকুমার দৃশ্যবিভাগ তৈরি করে দিয়েছিলেন । কলেজে পড়ার সময়ই এই সম্মান বাণীকুমারকে সাহিত্যে আরও আগ্রহী করে তোলে । নাটকের panorama scene এর দর্শনীয় প্রেক্ষিতটি বাণী কুমারের ওই সময়েই তৈরি হয়ে যায় । পিতা নিজে পণ্ডিত-সাহিত্যিক হলেও ছেলের সাহিত্যচর্চাকে খুব একটা সুনজরে দেখেননি । তাই স্নাতক হবার পরই সংসারের দিকে মন ফেরাতে বিবাহ সম্পন্ন করে দেন পুত্র বাণী কুমারের । বৈদ্যনাথ ছদ্মনামেই যাবতীয় সাহিত্য রচনা করে গেছেন। সংসারের প্রয়োজনে মহিষাশুরমর্দিনীর লেখককে চাকরি নিতেও হয় কলকাতার টাকশালে একথাও জানানো হয়েছে । ১৯২৭ সাল ১নং গাস্টিং প্লেসের যখন ইংরেজদের নতুন গণমাধ্যমের কর্তারা তখন নিত্যনতুন অনুষ্ঠান নির্মাণের জন্য লোক খুঁজছিলেন আর তখন‌ই এই সূত্রেই ওই সময়ে একটি বেতারনাটকের সূত্রে কলকাতার বেতার কেন্দ্রের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়ে যায়। বাণীকুমার তার লোভনীয় টাকশালের চাকরি ছেড়ে ১৯২৮ সালে যোগ দেন ভবিষ্যতহীন রেডিওতে । টাকশালের স্থায়ী সরকারি চাকরি ছেড়ে, রেডিওর চাকরির অনিশ্চয়তার পথে পা বাড়ানো বিফলে যায়নি বাণীকুমারের । সেই যুগের রেডিওর প্রায় সমস্ত অনুষ্ঠান-বিভাগেই ছিল তাঁর ঐকান্তিক উদ্ভাবনার পরিচয় । ১৯৩১-এর জানুয়ারিতে “সরস্বতী সঙ্গীত বিচিত্রা” দিয়ে “বেতার বিচিত্রা” অনুষ্ঠানের সূচনা। এই বিভাগেই বসন্তেশ্বরী অনুষ্ঠানের রচনা ও চন্ডীপাঠ করেছিলেন বাণীকুমার নিজেই । রাইচাঁদ বড়াল ছিলেন তার সুরকার ও বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র ছিলেন গদ্যাংশ কিছু শ্লোক পাঠে এবং সংযোজনায় । তা ছাড়াও তাঁর প্রযোজনায় সম্প্রচার করা হয়েছে আরও বহু জনপ্রিয় বেতার অনুষ্ঠান। ১৯৩২ সালে রচিত হয় শারদ-আগমনী গীতি-আলেখ্য দেবীপক্ষের সূচনার বার্তা বহন করতেই করা হয়েছিল । কলকাতা বেতার কেন্দ্রে অসংখ্য অনুষ্ঠান করলেও বাণীকুমার ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে মানুষ মনে রেখেছে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-র জন্য। পঙ্কজ মল্লিক অবশ্য বহুমূখী প্রতিভাধর ব্যক্তি ছিলেন, যিনি বম্বে-বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় সুরকার গায়ক নায়কও ছিলেন । কিন্তু তবু যেন ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-র জন্য এখনও এই ত্রয়ীকে এক‌ই ফ্রেমে আমাদের মনে পড়ে যায় । কিন্তু তবুও বাণীকুমার ওই দুজনের থেকে অনেকটাই আজ অবহেলিত। বাণীকুমার নিজের লেখাতেই জানিয়েছেন,‘‘এ-কথা বলা বাহুল্য যে, আমাদের কয়জনের আন্তরিক সাধন-দ্বারা এই মহিমাময় চণ্ডী-গাথা সকল শ্রেণীর জনবর্গের প্রশংসনীয় হয়েছে ।... ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ কলিকাতা বেতারের তথা বাঙালায় একটা কীর্তি-স্থাপন করেছে । ’’ বলাই যায় বেতার সম্প্রচারের ৯০ বছরের ইতিহাসে এই রকম অনুষ্ঠান আর দ্বিতীয় নির্মিত হয়নি, যার জনপ্রিয়তার ধারে কাছে আজ পর্যন্ত কোনো অনুষ্ঠান আসতে পারেনি । ইতিপূর্বে বলেছি ১৯৭৬-এ আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ একবার ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ বাতিল করে দিয়ে মহানায়ক উত্তমকুমারকে দিয়ে ভাষ্য পাঠ করিয়ে নতুনভাবে এই অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন যার নাম ছিল “ দেবীঙ দুর্গতিহারিণী”, কিন্তু সেই পরিবর্তন বাঙালী মেনে নেয়নি। অনুষ্ঠান শেষে ব্যাপক জনরোষ দেখা দেয়। মজার ব্যাপার ছিল এই যে এই নতুন অনুষ্ঠানের নেতৃত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা সকলেই সেই সময়কার সাংস্কৃতিক-জগতের অতি নমস্য ও জনপ্রিয় ব্যক্তি! তা সত্ত্বেও প্রত্যাখ্যানের সুর এতটাই চড়া ছিল যে খ্যাতির মধ্যগগনে থাকা মহানায়ক উত্তমকুমারকে ব্যাপক তিরষ্কার হজম করতে হয় তার অগণিত ভক্তের কাছ থেকে। শেষে উত্তমকুমারকেও ক্ষমা চাইতে হয় । সেই ‘জরুরী অবস্থা’-র জমানাতেও জনগণের প্রবল প্রতিবাদে মহাষষ্ঠীর সকালে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ সম্প্রচার করতে বাধ্য হয়েছিল সরকারি প্রচার মাধ্যম ‘আকাশবাণী’। পরের বছর থেকে আবার ফিরে আসে বাণীকুমার-পঙ্কজকুমার মল্লিক-বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। বাঙালি প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিনা বিজ্ঞাপনেই এই অনুষ্ঠান শুনে চলেছেন ! এটা একটা বিস্ময়কর ও অভাবনীয় ব্যাপার । ১৯৭৬ এর সেই মহালয়ার সকালে ক্ষুব্ধ রেলকর্মীরা যাত্রিদের জন্য হাওড়া স্টেশনেরর মাইকে ওল্ড ‘মহিষাসুরমর্দিনী’- তাদের ক্যাসেট চালিয়ে দিয়েছিলেন এবং হাওড়া স্টেশনের উপস্থিত যাত্রীরা যেন প্রাণে বেঁচেছিলেন । প্রতি বছর‌ গঙ্গায় তর্পন করতে আসা অগণিত যাত্রীর জন্য রেল কর্তৃপক্ষ বরাবর ওই মহিষাসুরমর্দিনী চালিয়ে থাকেন সরাসরি রেডিও থেকে । বিভিন্ন সংবাদপত্র থেকে জানা যাচ্ছে যে গতবছর ২০১৭ তে আকাশবাণী থেকে যে মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানটি শোনা গিয়েছিল সেটি ছিল ১৯৬৬ সালে সম্প্রচারিত হ‌ওয়ার আগের রিয়ার্সালের খসড়া । যা আকাশবাণীর বর্তমান অধিকর্তা ও অন্যান্যদের মনে হয়েছে বাণীকুমারের নানা সময়ের খসড়া ও বহুলাংশে প্রচারিত এবং এটাই সবচেয়ে সৌন্দর্যমন্ডিত (১৯৭৩ এর সংস্করণ যা থেকে রেকর্ড,সিডি ইত্যাদি হয়েছে এবং যেটি শুনে থাকি আমরা ) । ১৯৬৬ সালের খসড়াটি বাণীকুমারের সবথেকে সুন্দর রচনা । তাই এবছর‌ও ওই খসড়াটিই ভোর চারটার ৮/১০/১৮ সোমবার সম্প্রচার করা হয় । আকাশবাণীর তথ্যসংগ্রহকারী নিখিলরঞ্জন প্রামাণিক এবং বর্তমান (২০১৮) স্টেশন ডিরেক্টর শ্রী সৌমেন বসু ওই খসড়াটিকেই সর্বশ্রেষ্ঠ বলেছেন । তবে সেই ১৯৩২-৩৩ এ মহিষাসুরমর্দিনীর রেডিওর যিনি কপিয়েস্ট ছিলেন তিনি তিরিশের দশকের থেকেই (শ্রীধর ভট্টাচার্য ) প্রতিটি লাইভ প্রোগ্রামের কপি প্রতিটি শিল্পীকেই সরবরাহ করতেন বলে অনেক কপি করতেন । একইসঙ্গে তিনি খসড়া গুলিও নিজের কাছে রাখতেন । তার পুত্র সনৎ ভট্টাচার্যের কাছ থেকে এই মহামূল্যবান খসড়াটি গত দু'বছর আগে পাওয়া গেছে যা বাণীকুমারের মহিষাসুরমর্দিনীর একটি কিছুটা পরিবর্তিত ( এডিট করা) কপি । ফিল্মের সাহায্যে এই কপি করা হতো বলে মনে করা হচ্ছে । মহিষাশুরমর্দিনী সম্পর্কে অনেক বাস্তব কাহিনী লোকমুখে চালু আছে । বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র ও বাণীকুমার দুজনেই দুটি ধার্মিক পরিবার থেকে রেডিওতে এসেছিলেন যার ফলে মহিষাসুরমর্দিনী সম্পর্কে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র সকলকে বলতেন আমি ব্রাহ্মণ সন্তান না হলেও কিন্তু ঐকান্তিক ভাবে ওই সময়ে শ্লোকগুলি যেন আমার কাছে মন্ত্রের স্বরূপে দেখা দেয় । তিনি সমস্ত শিল্পীকে অত ভোরে স্নান ও গঙ্গায় স্নান করে গরদ বস্ত্রে আকাশবাণীতে প্রবেশের একটি প্রথা করে দিয়েছিলেন । অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ও প্রযোজনা বাণীকুমারের হলেও শ্রী বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র অনেকটা দায়িত্ব নিতেন কারণ তখন বাঙালির মন আজকের মতো এতটা বিষিয়ে যায়নি । ফুল মালা দিয়ে সেদিন রীতিমতো সাজানো হতো ধুপধূনো জ্বালিয়ে পরিবেশ আগে থাকতেই একটা শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে তৈরি করে তবে আসরে বসতেন বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র । কোনো অনুষ্ঠানটি যে একটি পবিত্রতার অঙ্গ হতে পারে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র সেটি সকলকে শিখিয়েছিলেন । কিন্তু এই আয়োজন না হলেও হয়তো মহিষাশুরমর্দিনীর কোনো প্রকার ভেদরেখা তৈরি হতো না কারণ সেই হিসেবে বাঙালি এই প্রভাতী অনুষ্ঠানকে কখন‌ও পুজো-অর্চনা করার মতো একটা বিতর্কিত গোঁড়ামির পর্যায়ে নিয়ে যায়নি । সে কারণে বীরেন্দ্র ভদ্র মশাই নিজে আকাশবাণীতেই আগের রাতে শেষ ট্রামে চলে এসে বিশ্রাম নিয়ে , রাত দুটোতেই তৈরি হতে শুরু করতেন । এমনকি মুসলমান বাজনদাররা পর্যন্ত হাসতে হাসতে অক্ষরে অক্ষরে সেই নিয়মাবর্তিতা মেনে চলতেন । আসলে কাজের প্রতি সম্মান বোধ এত তীব্র ছিল বলেই আজ‌ও এই সম্প্রচার স্রোতস্বিনী । বাণীকুমার প্রসঙ্গে আবার ফিরে আসি তার পুত্র নৃসিংহকুমার ভট্টাচার্য লিখেছেন- " তাঁর বেতার নাট্য রূপান্তর , পরশুরামের চিকিৎসা সাধন নাটকটি বেতারস্থ হ‌ওয়ার পর‌ই তৎকালীন বেতার অধিকর্তা তাকে বেছে নেন সেটা ছিল ১৯২৮ । ১৯৩২-১৯৩৬ এই পাঁচ বছর ছিল আঁতুড়ঘর । ১৯৩৭ প্রথম তার লক্ষ্য স্থির করে কিন্তু যেহেতু ১৯৩২ থেকে এর নানা প্রক্রিয়ায় শুরু তাই আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ ১৯৩২ কে প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে ধরে নেন । বসন্তেশ্বরী হিসেবেই ষষ্ঠীর সকালে রেডিওর বিশেষ প্রভাতী অনুষ্ঠান হয়েছিল । পন্ডিত অশোকনাথ শাস্ত্রী মহাশয়ের পরামর্শে ১৯৩৭ সালে বাণীকুমার‌ই নাম পরিবর্তন করে -মহিষাসুরমর্দিনী নাম দেন ও সেইসঙ্গে সংস্কৃত উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে তার অনুবাদ গ্রন্থনার উপর জোর দেওয়া হয় । শিল্পী ও কলাকুশলীদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসা হতো , আকাশবাণী গাড়ি পাঠাতো । এক একটি গাড়িতে ৩/৪ কে আনা হোত । এক কথায় বলা যায় বৃটিশ সরকারের পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা ছাড়া যে এরকম অনুষ্ঠান করা অসম্ভব ছিল সেকথা বলাই বাহুল্য । তবে ১৯৩১ সালে প্রাথমিক ভাবে যে চন্ডীপাঠের অনুষ্ঠানটি হয়েছিল সেখানে সুর দিয়েছিলেন রাইচাঁদ বড়াল । রচনা ও তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে বাণীকুমার শ্লোকগুলি উচ্চারণ করেছিলেন তিনি নিজে আর কিছু গদ্যাংশ ও স্তোত্রপাঠ এবং সংযোজনা করেছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র । বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র বলেগেছেন - " বাণীকুমার স্বল্প দৈর্ঘ্যের নাটিকা আলেখ্য ও বেতার উপযোগী সহস্রাধিক রচনা লিখে গেছেন । বেতারে মহিষাসুরমর্দিনী সম্প্রচার করার আগে বাণীকুমার লিখেছিলেন-" বসন্তেশ্বরী"যা লিখতে সময় লেগেছিল দু বছর তখন‌ও তিনি হাওড়ার সাত্রাগাছিতেই থাকতেন যা ১৯৩২ সালে প্রথম সম্প্রচারিত হয়েছিল । মার্কেন্ডেয় পুরাণের দেবীস্তুতি থেকে তিনি পুণরায় মহিষাসুরমর্দিনীও রচনা করেছিলেন। ব্যাসের মার্কেন্ডেয় পুরাণের ৭০০ কাব্যাঞ্জলি থেকে সমস্ত বাঙালির কাছে মা দুর্গার স্থিতি প্রলয়কে এই অল্প কিছু শ্লোকের মাধ্যমে এবং বঙ্গানুবাদ সহ নির্বাচন করে তার সঙ্গে উপযুক্তভাবে গীত রচনা করে পরিবেশন করা খুব একটা সহজ ছিল না । প্রথমে রাইচাঁদ বড়াল পরে পঙ্কজ কুমার মল্লিক ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সঙ্গে বসে একটি মহাকাব্যের নির্যাসটুকু আম জনতার দুর্গার বিশ্বাসের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া মাত্র ৯০ মিনিটে মধ্য সেটাও বোধহয় খুব কঠিন ছিল , যা কিনা ব্যাসদেব রচনা করেছিলেন আদিযুগে ( ৪০০-৬০০ এ.ডি.-এর মধ্যে) যা ৫.৩০ টায় বদলে ১৯৫০ থেকে টানা ভোর ৪.০০ তে সম্প্রচারিত হয়ে থাকে এবং যা সরাসরি ১৯৬৫ পর্যন্ত ২৯ বছর সম্প্রচারিত হতো । মোট গানের সংখ্যা-১৮ । তার মধ্যে সংস্কৃতে লেখা গান ৪ খানি ও বাংলা-১৪ । ফোক, ক্লাসিক্যাল ও আধুনিক সুরের মূর্ছনায় যা চিরজীবী হয়ে ওঠে । ১৯৩৭ থেকে পাকাপাকি ভাবে এই প্রোগ্রামটি ৯০ মিনিটের গ্রীন সিগন্যাল পেয়ে যায় । দেবী পক্ষের শুরুতে স্তবস্তুতির মাধ্যমে বেতারে দেবীর বোধন করা যায় কিনা সে বিষয়েও কথা উঠেছিল কিন্তু যেহেতু অধ্যাপক অশোকনাথ শাস্ত্রী মহাশয়ের মত ছিল তাই তখনকার রেডিও কর্তৃপক্ষ সেটি বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্যের উপর‌ই ছেড়ে দিয়েছিলেন । একবার অশোকনাথ শাস্ত্রীর অনুরোধে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের আনন্দমঠের নাট্যরূপ দিয়েছিলেন বাণীকুমার এবং তার নামকরণ করেছিলেন-" সন্তান ।" বিষয়টি বাণীকুমারকে এক‌ই সঙ্গে ব্যথিত করেছিল ও বিখ্যাত করেছিল। কারণ সেখানে একটি পত্রিকা থেকে বন্দেমাতরম্ গানটির উপর ও নাটকটির কিছু সংলাপের উপর তারা আপত্তি তোলেন এবং বৃটিশ সরকারের নির্দেশে বেশকিছু অংশ বাণী কুমারকে বাদ দিতে হয়েছিল । এটি হয়েছিল বাণীকুমারের নাট্যরূপ নির্দেশনায় রঙমহলে । এছাড়াও বাণীকুমার পরবর্তী সময়ে রেডিওতে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বেঁচে ছিলেন । সিনেমার গান‌ও লিখেছেন । (All rights reserved by Alok Kundu ছবি বাগবাজারের কাছে যেখানে বানী কুমার থাকতেন । রেডিওতে সেকালের কিছু ছবি । একসঙ্গে বাণীকুমার পঙ্কজকুমার ও বীরেন্দ্র ভদ্র । হাওড়ার খুরুটে ২০১৭ উদ্বোধন করার দিন মন্ত্রী অরূপ রায় ও দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় । হাওড়ার খুরুটের মূর্তি । রাইচাঁদ বড়াল ও সহশিল্পী। পঙ্কজকুমার ও সহশিল্পী । মহিষাশুর্দিনীর টিম । মহালয়া শুনছেন । কয়েকটি প্রামাণ্য ছবি ।)

শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৯

দুটো স্থান থেকে অমরনাথ যাত্রা শুরু হয় (১) পহেলগাম (২) বালতাল । বালতাল থেকে কাছে হলেও খুব চড়া পথ , কষ্টকর । ঘোড়ারা সিধে ওঠে এবং যে বসে থাকে তার অবস্থা প্রাণান্তকর। জম্মু থেকে রেজিস্টার করাতে হয় কোন পথে বাস বা গাড়ি যাবে । প্রায় লক্ষাধিক জ‌ওয়ান পাহারায় একসঙ্গে বাস ও গাড়ি ছাড়ে । ৪/৫ টা গাড়ি প্রতি এসকর্ট ভ্যান । টোটাল বিষয়টি কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় । জম্মু থেকে পহেলগাম বা বালতালে আলাদা আলাদা করে মোড় পরবে যতগুলো গলি মোড় পরবে সেখানে বাড়ির ছাদ থেকে মোড়ে মোড়ে থিক থিক করছে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে জ‌ওয়ানরা ২৪ ঘন্টা ডিউটি পাহাড়ের উঁচু থেকে নীচে সর্বত্র ছয়লাপ সামরিক বাহিনীর জ‌ওয়ানে । বড় বড় মোড়ে কাশ্মীরী পুলিশ তার সঙ্গে । পথে হাজার হাজার স্থানীয় লোকজন আটকে , গাড়ি আটকে বাসস্ট্যান্ডে স্টপে শয়ে শয়ে লোক দাঁড়িয়ে । গলির মুখে উল্টোদিকে তাক করে জ‌ওয়ানদের প্রহরা একদম টানটান নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মোড়া । চোখে দেখে এলাম কারণ আমাদের তিনটি বাস‌ও ওই দলে চশমেশাই থেকে ঢুকে গিয়েছিল তাই নিস্তার পেয়েছিলাম আমরা । কিন্তু যখন মাঝপথে আমাদের তিনটি গাড়ি আমাদের খাওয়াদাওয়া করানোর জন্য একটা ধাবায় স্ট্যান্ড করলো সঙ্গে সঙ্গে জ‌ওয়ানরা এসে আমাদের গাড়ি ঘিরে ফেললো পুলিশ । ড্রাইভারকে অনেক বোঝাতে হলো যে তারা অমরনাথ যাত্রী নয় । শেষে স্থানীয় জনগণ বোঝাতে এবং গাড়িতে কোনও স্টিকার নেই পরীক্ষা করে তারপর ছাড় দিল । সদ্য দেখে এলাম কাশ্মীরকে । প্রথম দেখা অবশ্য যখন কাশ্মীরের সঙ্গে আমার বিয়ের দুবছর বাদে । তখন সবে কাশ্মীরকে দেখছি । ভয়ে কাশ্মীরের হোটেল ফাঁকা । আমরা দুজনে লোকাল বাসে করে ঘুরেছি । যখন যেমন মনে হয়েছে নেমে পড়েছি । চশমেশাইয়ের পথটা ডাল লেকে লোকাল বাসে নেমে হাঁটতে হাঁটতে গেছি । ট্যুরিস্ট বলতে আর‌ও দু চারজন । থেকেছি একেবারে মুসলমান হোটেলে । আন্তরিক ব্যবহার যা কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ দিয়েছিল তা আজ‌ও অম্লান । একমাত্র কাশ্মীরেই এরকমটা হয়েছিল ‌। শীতের জিনিস কিনে ঠকে গিয়ে অন্য দোকানদারদের প্রচেষ্টায় ঠকা টাকা ফেরত পেয়েছি । কোথায় ছিল তখন সিআরপিএফ নিরাপত্তা কেন নিতে হবে বুঝতে পারিনি । তখন সবে শুরু হচ্ছে কাশ্মীরে একটা থমথমে ভাব । ট্যুরপার্টি নেই । ট্যুরিষ্ট নেই । একঘন্টা ধরে হোটেল খুঁজে ফিরে এসে দেখি আমার স্ত্রী কেঁদে ভাসিয়ে ফেলেছে , অনেকটা দেরি করেছি ফিরতে । তার আগে ১২ ঘন্টার জম্মু থেকে শ্রীনগর বাস জার্নি হয়েছে । কিন্তু তার পরেই কদিন আমরা দিব্যি ঘুরেছি । এখনও টুকরো টুকরো কাশ্মীরী খেলনায় ভর্তি হয়ে আছে আমার আলমারি । শিকারাকে যেমন বলেছি তেমনি ঘুরিয়েছে । ডাল লেকের ধারে গিয়ে বসেছি দু তিন দিন । পথের ধারের মার্কেটে। এবারে বহুকাল পরে সেই কাশ্মীরে নিজের দ্বারায় আর যাওয়া সম্ভব হলোনা । গেলাম ডলফিন ট্রাভেলের সঙ্গে , ওদের মালিক তখন রক্তিমবাবু ডাললেকের হোটেল প্যারাডাইসে উপস্থিত ,অমরনাথ যাত্রায় ওনাদের সঙ্গে একটা দল গেছে । আজ দেখলাম আনন্দবাজার ওনাকে উল্লেখ করেছেন । আমি অমরনাথে যাইনি আমাদের যাত্রাপথ তো লাদাখ । লাদাখের পথে অমরনাথের একটি ৩০/৩২ টি বাসযাত্রীদের বিশাল কনভয়ের সঙ্গে আমাদের ড্রাইভাররা ডাললেকের কাছে যে বাইপাস আছে চশমেশাই যেতে ওখান থেকে একেবারে শেষে ঢুকিয়ে দেয় ,ওই দলের মধ্যে যদিও অমরনাথে যাওয়ার গাড়ি আসছে জম্মু থেকে বিভিন্ন ক্যাম্প পেরিয়ে । এইসব যাত্রীদের বাস উত্তর প্রদেশের দক্ষিণ ভারতের । তার মাঝে মাঝে বম ডিজপোজাল ভ্যান,জ্যামার লাগানো গাড়ি , আগেপিছে ১০/১২ খানা জিপে এস‌এল‌আর হাতে আধা সামরিক জ‌ওয়ানরা ও সঙ্গে কাশ্মীরী পুলিশ । দৌড়াদৌড়ি । সংবাদ সংস্থার গাড়ি । কোনও গাড়ি থেমে গেলে তাকে ঘিরে ফেলছে সামরিক বাহিনীর জ‌ওয়ানরা , ওই সময় কয়েকটি বাস টপকে আমাদের ড্রাইভারাও এগিয়ে যেতে থাকে ওভারটেক করে । থামলে তবেই বোঝা যাবে আমাদের গাড়ির সামনে পিছনে স্টিকার নেই , আমাদের পেছনেও ৪/৫ টা গাড়ি ঢুকে গেছে কারণ আগের গাড়ির ড্রাইভাররা চলেছে আধা সামরিক বাহিনীর নির্দেশে । আমরা চলেছি লোকাল ড্রাইভারদের চেনা রাস্তায় । পথে যেতে এই গাড়ির দল থেকে যেই তেল নেওয়ার জন্য একটা গাড়ি পাম্পের ভেতর ঢুকে গেছে তখনই তাকে নিরাপত্তায় মুড়ে দাঁড়িয়ে গেছে গাড়ির সারি । সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির ভিডিও তুলছে পুলিশের টিম । মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক আটকানো । বাড়ির মাথায় গলির লাগোয়া রাস্তায় থরে থরে অস্ত্র হাতে জ‌ওয়ান , স্যাটেলাইট ফোন , ব্যারিকেড দুধারে সাধারণ পথ চলতি মানুষকে প্রায় বন্দীর মতো করে আটকানো । ছবি ভিডিও তুললেও সেগুলো ভারতের নিরাপত্তার খাতিরে দেওয়া গেলনা । এমনকি আমাদের গাড়িও একবার ঘিরে ফেললো যখন মাঝপথে আমাদের গাড়ি একটা ধাবায় ঢুকলো । এই সব সারি সারি দৃশ্যের সামনাসামনি হ‌ওয়ায় অবাক হ‌ওয়ার মতো বিষয় থাকলেও ভয়ের একটা স্রোতের মধ্যে ততক্ষণ ছিলাম যতক্ষণ ওই অমরনাথ যাত্রীদের বাসের কনভয়ে ছিলাম। তারপরেও আমরা পরে বালতালের আগে পর্যন্ত সোনমার্গের হোটেলে যতক্ষণ পর্যন্ত না ঢুকলাম ততক্ষণ দেখতে দেখতে চলছি পথের দুপাশের নিরাপত্তা । কারণ ধীরে ধীরে ট্রাফিক কমে গেলেও সারসার দাঁড়িয়ে জ‌ওয়ানদের দল । এমনকি সন্ধ্যায় যখন একটু রাস্তায় বেরিয়েছি তখনও জ‌ওয়ানরা দূরে দাঁড়িয়ে । এই গার্ড সারাদিন সারারাত চলবে অমরনাথ যাত্রার জন্যে । ভারতবাসীর ধর্মীয় এহেন মাসাধিক ধরে এই আচরণ আমার খারাপ লেগেছে বৈকি । কারণ এইসব কারণে জ‌ওয়ানদের যে পরিমাণ কষ্টসাধ্য অবস্থায় কাটাতে হয় । পথ থেকে বনবাদাড়, মোড় থেকে বাড়ির মাথায় ২৪ ঘন্টা ধরে এই নিরন্তর পাহারা দিতে হয় তা মেনে নেওয়া যায় না । লক্ষ লক্ষ মানুষ অমরনাথের যাত্রী । এই ধর্মীয় আচরণ জুনের শেষ থেকে শুরু হয়ে মধ্য আগস্ট পর্যন্ত চলে অবশ্যই বড় বড় মঠ মিশনের ক্যাম্পগুলো মাসাধিক সময় শতশত ভলান্টিয়ার দিয়ে বালতাল ও পহেলগামের কাছে ক্যাম্প চালায় । লক্ষ লক্ষ মানুষ যায় হেলিকপ্টারে , ডান্ডিতে হেঁটেও যায় হাজার হাজার মানুষ । ঘোড়ায় যায় । প্রথম একমাস বড় বড় মঠ-মিশন এই যাত্রীদের সেবায় হাজার হাজার ক্যাম্প করে থাকেন । এই উপলক্ষে কাশ্মীরীদের একটা অর্থনৈতিক আয় বাড়ে । হোটেল ব্যবসা এই একটা সময়েই বিশাল লাভ ওঠায় । সত্যি যদি অমরনাথ যাত্রীদের জন্য নিরাপত্তা এক নম্বর কারণ হয়ে ওঠে তাহলে এটা কাশ্মীরের জনগণের কাছে এক বড় অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসবে ।

বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০১৯

বিশ্বকাপ বিশ্বকাপ / আলোক কুন্ডু

বল প্লেয়ার বিশ্বকাপার
দেখতে যদি চাও
সটান একটা এরোপ্লেনে
সেন্ট পিটার্সবার্গ যাও ।
লেভা-লেনা নদীর ধারে
দাঁড়াও যদি গিয়ে
স্বর্গীয় সুখ ব‌ইছে ধারায়
স্বপ্নের মাঝ দিয়ে ।
গিয়ে দেখবে দাঁড়িয়ে আছে
হাজার ইতিহাস
লেনিন-স্টালিন-পুতিন ছাড়াও
সংস্কৃতির চাষ ।
লাগবেনাকো ভিসা-পাশপোর্ট
লাগবে না আধার
সঙ্গে যদি শান্তির বাণী
সদাই থাকে তোমার ।
মাঠের মধ্যে লড়াই তখন
গোলের পর গোল
আসলে তা প্রতিযোগিতা
শান্তির আদল ।
বলের বাউন্স লম্বা পাশের
নয়নাভিরাম কিক
জাতীয় সংগীত উঠবে গেয়ে
বিশ্ব নাগরিক ।
চার তিন তিন, দুই চার চার
এসব জ্যামিতি
কোনো কালে মিলবেনা ভাই
এমন পরিমিতি ।
গেম ট্যাকটিস দারুন দৌড়
হেডিং শেভিং টাচে
মনে রেখো এই খেলাতে
কালো ঘোড়াও আছে ।
ব্যাকভলিতে মেসির বল
ছিঁড়বে যখন জাল
ফ্রিকিকেতে নেইমারের
মাতাবে সাম্বাতাল ।
কখন কোথায় এসব হবে
অঘটন বা চাওয়া
জ্যোতিষরা সব ফেলের দলে
বিফল তাদের গাওয়া ।
কোথায় যাবে কারা নেবে
সোনালী ওই কাপ
সারা বিশ্বের উন্মাদনায়
তেইশ দিনের চাপ ।
বত্রিশ দল পাঁচ মহাদেশ
ঝাপায় কাপের জন্য
ভারতের নাম নেই সেখানে
তবুও ন‌ও নগন্য ।
বিশ্বের কবি রবিঠাকুরের
রাশিয়ার চিঠি পড়ো
বিশ্বকাপের স্বপ্ন বুনে
হীনমন্যতা ছাড়ো ।

বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০১৯

১৯৭২ সালে সির্দ্ধাথশঙ্কর রায় সরকার বিপুল ক্ষমতা নিয়ে এসেছিল  পুলিশকে কাজে লাগিয়ে । সরকার পরে পুলিশকে কাজে লাগিয়ে নিজের এম‌এল‌এ-কে অবধি ডেকে ধাতিয় ছিল । ভুষি কেলেঙ্কারি তে কেস দিয়েছিল। দু দল যুব কংগ্রেস ।
দু দল কংগ্রেস ,দু দল আইএনটিইউসি/এন‌এলসিসি এবং দু দল ছাত্র পরিষদ / শিক্ষা বাঁচাও কমিটি নিয়ে কলেজে কলেজে মারপিট, পাড়ায় পাড়ায় মারপিট, খুন-জখম , মিছিল । বামপন্থীরা দলে দলে ভিড়ে ছিল পুলিশের ভয়ে । স্কুল কলেজে মিউনিসিপ্যাল নির্বাচন বন্ধ করে দলীয় শাসন কায়েম হয়েছিল । প্রশাসন ঝুরঝুরে হয়ে গিয়েছিল । আমি তখন যুব কংগ্রেসের একটি গ্রুপে ছিলাম এবং এমারজেন্সির ফলেই যে কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়ে যায়
তা কিন্তু নয় । পশ্চিমবঙ্গে অন্তত কংগ্রেসের কাজকর্ম জনগণের পছন্দের ছিল না ।
তার আগেই ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে ছিল --ব্যাঙ্ক
জাতীয়করণ, কয়লাখনি জাতীয়করণ
এবং গরিবি হঠাও । তবু সারাদেশে কংগ্রেসের ভাঙন দল রুখতে পারেনি ।
সৌগত রায় কংগ্রেস থেকে জোটে গিয়ে
মন্ত্রী হয়েছিলেন ব্যারাকপুর থেকে জিতে ।
বহুগুনা চন্দ্রশেখরের মতো হেভিওয়েট
কংগ্রেস ছেড়েছিলেন । একবছর বাদে
চিকমাগালুর থেকে ইন্দিরা গান্ধী একা
কংগ্রেসের এম পি ছিলেন , হয়তো আর‌ও
দু চারজন থাকতে পারেন কিন্তু তা মনে পড়ছে না। এক প্রকার কংগ্রেস, ধুয়ে মুছে গিয়েছিল । কিন্তু এখানকার নির্বাচন
পদ্ধতি ত্রুটিপূর্ণ হ‌ওয়ার ফলে যার শুরু
বাম আমলে হয়েছিল , ফলে আজ পর্যন্ত কংগ্রেসের অবস্থান এই কারণে এবং কিছু অন্য কারণে রাজীব গান্ধীর সময় ছাড়া পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস আর ফিরে দাঁড়াতে পারেনি এজন্য ---কংগ্রেসের থেকে বেশি দোষ নির্বাচন কমিশনের । এখন
প্রেক্ষাপট আলাদা প্রত্যন্ত গরিবের কাছেও হোয়াট‌সঅ্যাপ বা ফেসবুক আছে মানুষ এখন অনেক বুঝদার । ট্রোল হ‌ওয়া জিনিস তার পরিবেশনে মানুষ আনন্দ পায় ।
গরীব জানে সে কোনও দিন এসিতে থাকতে পারবে না , তার কোনও দিন ফ্ল্যাট হবে না , রেস্টুরেন্টে সে কোনও দিন ঢুকতে পারবে
না । তার কাছে রাজার হারের আনন্দের থেকে বেশি আনন্দ আর কিছুতেই নেই ।
এই নির্বাচনের যখন তিন মাস আগে বিজেপি ভ্যান পাঠিয়ে প্রতি জেলা শহরে ১৫/২০ মিনিটের -"পোস্টকার্ড ডালো ক্যাম্পেন" করে তাতে আমি দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করি শয়ে শয়ে মানুষ ১৫ মিনিটের মধ্যেই তাদের ভোট বিজেপির বাক্সে দিয়ে দিয়েছিল । এই ক্যাম্পেন এত হঠাৎ ও চুপিসারে হয়েছিল যে আর কোনো দল এর টের‌ই পায়নি । তাতে বিজেপি যেমন জানতো তেমনি আমার মতো সাধারণ
মানুষ‌ও বলেছিলাম এক দেড় মাস আগে
৩০-৯-২-১ । কংগ্রেস ছাড়া আর কোনো
হিসেবে যদিও মেলেনি আমার , কিন্তু আমি আভাস তো নিজের মাথা থেকে বের করিনি , মানুষ চাইছিল। তাতে কেউ
বলছেন ধর্মীয় ভোট, কেউ বলছেন বাম ভোট । আশ্চর্য কেউ কিন্তু বলছে না কংগ্রেসের ভোট ও তৃণমূলের ভোট ।
এখন কিন্তু দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে তৃণমূলের
ভোট‌ও বিজেপিতে গেছে । সকলেই উপলব্ধি করতে পারছে যে ভোট একবারে ফেয়ার হয়নি , কারণ প্রচুর বুথের ভিডিও আসছে সেই মতকে আর‌ও জোরালো করে তুলছে । সে যাই হোক ভোটের হাওয়া পরিষ্কার বোঝা গেছে । আবার এদিকে ভোটের পর এত দ্রুত জায়গা বদল হচ্ছে যে জনগণ ঘাবড়ে যাচ্ছে আর‌ও বেশি । এই সময় একদিকে পুলিশের উপর আর সরকারের মুক্ত অবাধ ক্ষমতা নেই তারাও চাকরি বাঁচাতে তৎপর । প্রশাসনের ব্যাপক বদলি। হঠাৎ এস‌এসসি নিয়োগে তৎপরতা । বিদ্যালয় খুলে দেওয়া এইসব নিয়ে প্রচুর ট্রোল হচ্ছে । তবে উন্নয়ন
কি ? উন্নয়ন ছিলনা ? এইসব জটিল প্রশ্নে
মানুষ দ্বিধান্বিত। গ্রামে গ্রামে এত বিপুল
পরিমাণে ক্যাডার থাকায়‌ও কীভাবে তৃণমূলের অফিস হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে ?অফিস ফিরে পেলেও কেউ কী সাহসের সঙ্গে সেই অফিস রোজ খুলবে ?  এইসব জটিল প্রশ্ন ট্রোল হচ্ছে । ভদ্র পোশাক
পরেও , " মিমি ও নূসরাত" ঠিক এক‌ই কারণে তারা মিছিমিছি ট্রোল হচ্ছেন । দলকে দল একদল থেকে অন্য দলে চলে যাচ্ছেন এবং মুখ্যমন্ত্রীকে ধর্ণায় বসতে হচ্ছে ! সব মিলিয়ে ভোটার, জনগণ, পক্ষ বিপক্ষ সকলেই দিশেহারা । ঠিক এইরকম দিশেহারা অবস্থান হয়েছিল ১৯৭২-৭৭ এ এখানে । কে যে কাকে কী করবে সরকারের এম‌এল‌এরাও তখন বুঝে উঠতে পারতো না ‌।  এখন এইখানে জনগণ ভোটের পরে শান্তি চেয়েছিল । কিন্তু
চতুর্দিকে একটা কী হবে কী হবে ভাব ।
বেশি ভাগ ভোটার শান্তি চায় । প্রশাসনের
গতি প্রকৃতি দুড়দাড়িয়ে ৫ বছরের কাজ
১ বছরে করতে গেলে ভুলভ্রান্তি হতে পারে
এটা শাসকদের মনে রাখা উচিত । হটকারী
সিদ্ধান্ত বিজেপি যা নিচ্ছে এবং তারপর
রাজ্য সরকার‌ও হঠকারী সিদ্ধান্ত নিলে
সবকিছু ট্রোল হবে । ফেসবুক হোয়াটস‌অ্যাপ চলতেই থাকবে এবং নেগেটিভ প্রচার আর‌ও বাড়তে পারে ।
যেকোনও ঘটনা দু মিনিটের মধ্যে উত্তর থেকে দক্ষিণ বঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে । কারণ মানুষ আজ তীক্ষ্ণ বিচার বিবেচনা সে নিজেই করতে পারে , ফেসবুকের দৌলতে। এখনও দু পক্ষের সময় আছে হঠকারী সিদ্ধান্ত সামলে নেওয়ার । তা না হলে জনগণ সেই সিদ্ধান্ত ফেরাবে ব্যালটে ।
এর পরের ভোট আর‌ও টাইট হবে এবং
জনগণ রাজার পরাজয় দেখতে
ভালোবাসে ,এই আপ্তবাক্যটি মনে রাখা
জরুরি ।

শনিবার, ১৮ মে, ২০১৯

Poetry of Alok Kundu

সত্যের আলো ছড়িয়ে পড়বে জীবনে

অলোক কুন্ডু

রকমারি আলো তোমাকে চিনতে হবে
আলোর খেলায় দিশেহারা হতে পারো
বিপদের আলো দিশাহীন বাঁক নেবে
আলোর ভেলকি শুধুই সাজানো শব ।

গোটা আকাশটা যতটুকু আলো দেয়
সেইটুকু আলো চিরকাল এক সত্য
যার তার কাছে খুঁজতে যেওনা আলো
ভন্ডের আলো ঝলমলে রোশনাই ।

কে আছে এমন আলোর ঝর্ণাধারায়
এসে দাঁড়াবে আলোর মানুষ স্বরূপ
সঠিক মানুষকে চিনতে পারো যদি
সত্যের আলো ছড়িয়ে পড়বে জীবনে ।

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...