মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০
অলোকের ঝর্নাধারায় : আমার টুকরো জীবন
■ অলোকের ঝর্নাধারায়-১
দরলাঘাট, হোটেল বাগেলা
■ সেবার মানালি থেকে সিমলা ফিরবো ৩০/১২/০৭। ৩১.১২.০৭- এ আগে সিমলাতে গিয়ে ওখান থেকে কুফরির একটা গ্রামে গেলে তবেই জানতে পারবো ৩১.১২.২০০৭-এর ফেরার ট্রেনের টিকিট জুটেছে কিনা। ওখানে একটি ট্যুর পার্টির এজেন্টের কাছে সিমলা থেকে হাওড়ার আমাদের ফেরার ট্রেনের টিকিট আছে। হিমালয় ক্যুইনে কালকায় বদলিয়ে ফেরার টিকিট স্পিডে পৌঁছে গেছে জানতে পারলাম ২৯.১২.২০০৭-এর রাতে। বহু কষ্টে শেষে ফোনে খবর পেলাম। হঠাৎ করে দেরিতে মানালি আসার সিদ্ধান্তে, আমাদের ফেরার টিকিট কেটে নিয়ে আসতে পারিনি। শুধুমাত্র আসার টিকিট পেয়েছি। ইতিমধ্যে দুবার মানালি আসা হয়ে হয়ে গেছে। এইবার মানালি এসেছিলাম ২৭/১২/০৮-এ। আগের দিন মানালিতে স্নোফল হয়ে গেছে। ভাগ্য এমন খারাপ যে পরে আর তা পাওয়া গেল না। তবে সোলানভ্যালিতে প্রচুর বরফ পড়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে চলে আসার জন্যে মানালিতে কালীঘাটের ভিড় যেন। থিক থিক করছে বাঙালি এমনকি আমার পাড়ার তিনটে পরিবারের সঙ্গে পর্যন্ত দেখা হয়ে গেল। সকলেই ভয় দেখাচ্ছে সিমলাতে ৩০.১২-তে কোনও ঘর নেই। একটা বাথরুমে থাকলে তার ভাড়া ২০০৭-এই ৪০০০/৫০০০ এক রাত। মহাসমস্যায় পড়লাম। ৩১.১২-তে প্রতিবছর সারারাতের ফ্যাংশন হয় ম্যালেতে, অন্তত একদিনে একলক্ষ লোক দিল্লি চন্ডিগড় ও নিচ থেকে হুল্লোড় করতে উপস্থিত হয়। সে যে কি হুলুস্থুল কান্ড চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা মুস্কিল। দলে দলে ছেলেরা পোর্টেবল মাইক মিউজিক সেট, ব্যান্ডপার্টি আরো কত কি সঙ্গে চলেছে। কালীবাড়িতে চেনা থাকলেও মেঝেতে কম্বল মুড়ি দিয়ে কতজন পড়ে থাকবে তার কোনও ঠিক নেই। চার কিমি দূর পর্যন্ত আশেপাশের সব বাড়ি হোটেল ভর্তি ৩০ ও ৩১ তারিখ প্রতিবছরে। এটাই হয়ে আসছে। ২৯.১২তে গিয়ে পড়লাম মানালির ট্যুরিস্ট অফিসে। কি হবে আমাদের? অনেক কথার পর একজন স্টাফ দিশা দিলেন একটা। তবে সেটা মানালি সিমলা রোড থেকে ফেরার পথে একটু ঢুকে দরলাঘাটে ( সোলান জেলার মধ্যে পড়ে) ওদেরই ( hptdc) ট্যুরিজমের হোটেল ও অ্যাকোমোডেশন, "হোটেল বাগেলা।" সোলান জেলা তে পড়ে জায়গাটা হলো- দরলাঘাট। ওখান থেকে ওরা মানালি থেকে সিমলা ফেরার একটা গাড়ি ভাড়া ও বুক করেদিল। তবে গাড়ি আমাদের ৪৫ কিমি দূরে আগেই নামিয়ে দিয়ে চলে যাবে। খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা ভালো। সিমলা মানালি হাইওয়েতে না হলেও একটু ঢুকলে এদের রেস্টুরেন্টের নামডাক আছে। থাকাও এলাহি। কিন্তু ধারেকাছে সিমলা ফেরার গাড়ি পাওয়া মুস্কিল। সিমলা ফিরতে গাড়ির ড্রাইভারকে দু তরফের ভাড়া গুনে দিতে হবে। ৪৫ কিমি দূর যদিও খুব একটা দূর নয় কিন্তু আমাদের সিমলা পেরিয়ে কুফরির গ্রামে একবার যেতে হবে টিকিট সংগ্রহ করতে। যাইহোক ওইখানে নির্জনতা একেবারে পেয়ে বসেছে জায়গাটায়। শীতে বরফও পড়ে। হোটেলের পেছনে বাগান আছে তবে ইয়া উঁচু মোটা জালের পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। বন্যজন্তু বিশেষ করে শিয়াল,হনুমান বন্য কুকুর ভাল্লুক সাপ খড়গোস, বেঁজি পাখিদের কচিৎ দেখাও মিলে যায়। বড় বড় ঢালা কাঁচের জানলা হোটেলের ঘরের পেছেনের বাগানের দোলনাজুড়ে রোদে দোল খাচ্ছে সেখানে। কিন্তু আশেপাশে কোনও দোকান বাজার স্কুল হাট কোনও কিছুই নেই। কাছাকাছি ছোট গ্রাম থাকলেও দু একটা মাত্র গাড়ি তাদের আছে। তবে হোটেলের ম্যানেজার বুক করে গাড়ি আনিয়ে দেবে সে বিষয়ে খুব একটা চিন্তা নেই। কিন্তু ৩১ তারিখ সকাল সকাল না বের হলে বিশাল জ্যামে পড়ে যাবো আমরা, দুপুরে ফেরার ট্রেন। একেবারে হনিমুন পারপাস জায়গা বটে। হোটেলে লোকও খুব কম। অনেক সময় মিটিং পারপাস গ্রুপ বুকিং এখানে আসে। রেস্টুরেন্টে বিলিতি মদ পাওয়া যায়। লাউঞ্জে বসে দু একজনকে খেতে দেখলাম। এদিকটা একেবারেই অচেনা জায়গা আমাদের ড্রাইভারেরও। কোনও ভাবে গাড়ি পৌঁছলে খাওয়া ও থাকার জন্যে বুকিং হয়। সিমলায় হোটেল না পেয়ে hptdc-র কয়েকজন বোর্ডার এখানে উঠেছেন দেখলাম। বেঁচে গেছি দলে দলে এই ৪৫ কিমি দূরে আর কেউ উড়ে আসেনি। হোটেলটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং পরিবেশ সুন্দর হলেও দৃশ্যপট খুব একটা এখান থেকে দেখা যায়না। পাইন-ফার বা শীতের গাছপালার সেই পরিবেশ ওইখানে নেই। দূরের পাহাড়টা এখান থেকে বহুদূরে। অস্পষ্ট মায়াবী। হোটেলটা একটা উঁচু পাহাড়ের মাঝখানে যার ফলে পেছনের জঙ্গল ও পাহাড়ের উঁচুটা কতদূর বোঝা যায়না। সাধারণত হোটেলটি বিয়ের মরসুমে সেই পারপাসে সরগরম হয়ে ওঠে। বাইরেটা কিছুটা পুরনো আমলের হলুদ এলা রঙের ছিল তখন কিন্তু বর্তমানে রঙটঙ পাল্টেছে। উঁচুও হয়েছে। হোটেলের ভেতরটায় ডাইনিং হল ও ঘরগুলোকে বেশ কয়েক বছর আগে আধুনিক করা হয়েছে। সাদা ধবধবে চাদরে মোড়া বিছানা দেড়ফুট উঁচু ও নরম। রাতে বেশ ঠান্ডা এক্সট্রা কম্বল আলমারিতে দেওয়া আছে। টিভি আছে। গরম ঠান্ডা জলের কোনও প্রবলেম নেই দোতলায় থাকার ব্যবস্থা। সার সার ঘর। বেশ বড় ঘর। একতলায় কিচেন, বড় ডাইনিং, পোর্টিকো, বাগান, অফিস লাউঞ্জ। হোটেলের সামনে পরিষ্কার পিচেমোড়া রাস্তা সারাদিনে সিমলা থেকে অন্য কোথাও বাস যাতায়াত করে গোটা ৬-য়েক। এত কিছুই মানালি থেকে জানা যায়নি। বাকিটা এসে দেখা গেল। কিন্তু ওরা মানালি থেকে আমাদের জন্য ফোন করে বলে দিল আর বুক করে দিল। হাতে আকাশের চাঁদ পাওয়া কেন তা পরে বলতে থাকবো। সিমলায় গ্যারেজওলা গাড়ির এক ড্রাইভার পেয়ে গেলাম তবে অ্যাম্বাসাডার। আমাদের পৌঁছনোর কথা। গাড়ির কার্যকারিতা দেখবার জন্য নয়। ওই ড্রাইভার বাগেলাতে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল যখন তখন বিকাল এবং তারিখ হলো গত ৩০-শে ডিসেম্বর ২০০৭। সাধারণত বিদেশীরা এইসব হোটেলে এসে থাকে। কারণ সিমলা আর মানালির সরকারি হোটেলের থেকে এখানে রেট অনেকটাই মডারেট।
গাড়িটা চলে যেতে যেন মন খারাপ হয়ে গেল। সে মন খারাপ বুঝি বিয়ের পর মেয়েদের প্রথমদিকে বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছনোর মতো। কেউ কোথাও নেই। এমনকি একটা রাস্তার এমন বাঁকে হোটেলটা এমন একটা এল টাইপের জায়গায় যে রাস্তার দুটো প্রান্ত কোথায় যে পৌঁছলো তা বোঝার ঠিক উপায় নেই। যেন সারা পৃথিবী থেকে একে লুকিয়ে রেখেছে। পৌঁছে গরম জলে গা ধুয়ে ডাইনিং-এ গরম গরম মশলা চায়ের সঙ্গে রোস্ট করা লম্বা লম্বা আলু ভাজা আর বাঙালি টাইপ পরটা আর মাখনে ভাজা টোস্ট ও ওমলেট মিলিয়ে মিশিয়ে মুখে মিলিয়ে যেতে থাকলো। গাড়ির সামান্য ধকল ও সারাদিনের কি হয় কি হয় অবস্থা ততক্ষণে চলে গেছে। মহিলা রাঁধুনিরা অতিরিক্ত চায়ের আব্দার মিটিয়ে হাসিমুখে জেনে নিয়েছে তাদের তৈরি খাবারের গুণগত মান ঠিক মতো ছিল কিনা? পরের দিন বাসে করে যাবো বলে মনস্ত করেছি সিমলা। কিন্তু ঠিক সকাল ৯.২০ নাগাদ মানালির দিক থেকে একজন একটা মারুতি ভ্যানে করে এসে হোটেলের সামনে নামতেই ধরলাম। রাজিও হয়ে গেলো ড্রাইভার সাহেব আমাদের সিমলা নিয়ে যেতে। কিন্তু বললো জলদি বেরিয়ে পড়ুন মুস্কিল হয়ে যাবে দেরি হলে। আমাদের রেডি হওয়াই ছিল। তড়িঘড়ি একটা হোটেল বয়কে দিয়ে লাগেজ নামিয়ে গাড়িতে তুলেতে গাড়ি দুদ্দাড়িয়ে ছেড়ে দিল। পথের সৌন্দর্য বেশ মনোরম কেননা এ যেন বেশ পয়সাওয়ালাদের পাড়া দিয়ে গাড়ি যাচ্ছে বলে মনে হয়। বাড়িঘর সব বেড়া বা গ্রীল ও পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। ঘ্যারেজে প্রত্যেকের গাড়ি ছিমছাম বাংলো প্যাটার্নের বাড়ি বোগেনভেলিয়া গেটের মাথায়। ফুলের টব দিয়ে সাজানো। আবার পাহাড় উৎরাই চড়াই। দূরে কাছে কোনও কোনও জায়গাটা অনেকটা সমতল চোখ বুজলে পুরনো নিউ আলিপুরের ওপর দিয়ে চলেছি মনে হচ্ছে। ভেতরের পথ। আবার পাহাড় অনেক অনেক খোপ খোপ বাড়ি দূর থেকে মনে হয়। সবুজের ভেতর সবুজ। মিলিটারি চৌকি। ড্রাইভার আঙুল দিয়ে দেখালো, এখানে কোন একটা হিন্দি সিনেমার স্যুটিং হয়েছিল। নাচগানের স্পট মেলাতে মেলাতে চেনা সিমলার রেলস্টেশন পেরিয়ে উঁচু নিচু করে করতে করতে গাড়ি পৌঁছলো কুফরির একটা গ্রামে। তখনও স্মার্টফোন ফোন হয়নি। পাতি ফোন। সেই দিয়ে ধরলাম এজেন্টকে। রোদ খাচ্ছিল দলবেঁধে একদল। গাড়ির নম্বর বলে দিয়েছিলাম। একটা চকে কয়েকজন গাড়ি থামালো। ওদের মুখস্থ কোন নম্বরের গাড়ির কি তার চেহারা। হাতবাড়িয়ে স্পিডপোস্টের খামটা নিয়ে নমস্কার সেরে ধন্যবাদ দিতে দিতে আমাদের গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়েছে। ধীরে ধীরে বেলা ১১.০০ তেই জ্যামজটে হাজার হাজার লোকে সিমলা তখন বড় অচেনা। দলে দলে চলেছে ম্যাল। মাথা আর মাথা। কোনরকমে ড্রাইভারের পেমেন্ট মিটিয়ে টিকিটের জেরক্স করে লকার রুমে তল্পিতল্পা রেখে কালীবাড়িতে তড়িঘড়ি গিয়ে একটু খেয়েই
আমরাও ম্যালেতে। একঘন্টা থেকে কোনরকমে দৌড়তে দৌড়তে হাঁপিয়ে ট্রেনে। তখনও দেরি আছে ছাড়তে। ইঞ্জিন শব্দ করে হুইসেল দিয়ে ছেড়ে দিল। ততক্ষণে ম্যালে জায়গায় জায়গায় অর্কেস্ট্রাপার্টি তাসাপার্টি গীটার নাচের দল হাজির দলে দলে আইসক্রিম খাচ্ছে আমরাও আইসক্রিম হাতে নিয়ে নেমে এসেছি। পোশাক যেমন ঝলমল করছে সকলের, তেমনি বেলা ১ টাতেই আলো জ্বলে উঠেছে চতুর্দিকে। জায়গা দখল করতে রেলিং ধরে বসা শুরু হয়ে গেছে। শুনছি সারারাত নাচ গানে হুল্লোড় হবে। দলে দলে ভাগ ভাগ হয়ে হবে আবার কেন্দ্রীয়ভাবে হবে। এক এক বছর বরফ পড়েছে তারওপর চলেছে নাচগানের আসর। ঠান্ডাকে দুহাত দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেবে সবাই। ট্রেন যত নিচে নামছে তত ভিড় অন্য দিক থেকে আসছে। ফিরতি ট্রেনের মাথায় জানলায় ঠাসাঠাসি ভিড়। ছেলেমেয়ে কে যে কার ঘাড়ে বসে আছে বোঝার উপায় নেই। মাঝেমধ্যে রাস্তায় রাস্তায় গাড়ির লাইন মিডিবাস গাড়ি সব ভিড়েভিড়। উপচে পড়ছে। এমনকি ওই অন্ধকারে ট্রেনের মাথায় বসে ছেলেমেয়েরা কীভাবে কতগুলো সুড়ঙ্গ পার হচ্ছে তা ঠিক বোধগম্য হলোনা।
অক্সিজেন : অলোক কুন্ডু
#অক্সিজেন_ক্লিনিক_গড়ো_হৃদয়ে_আমার
এই পোস্ট আসলে গতবছরে আজকের দিন করেছিলাম। অক্সিজেন নিয়ে লিখেছিলাম। ফেসবুক সাক্ষী। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর অসুস্থতার জন্য এই লেখা। অক্সিজেন ক্লিনিক খুলতে বলেছিলাম যার পরিকাঠামো খরচ খুব সামান্য। আমার একটা রাষ্ট্রপতি বা রত্ন পুরস্কার জুটতো কি না না হা হা হা...
----------------------------------------------------------
#বুদ্ধদেববাবু_দ্রুত_সুস্থ_হয়ে_উঠুন (১০.৯.১৯)
বর্ষা ও শীতকালে দরজা জানলা বন্ধ থাকার কারণে বয়স্ক ও শিশুদের অক্সিজেনের অভাব বোধ খুব বাস্তবিক । অক্সিজেনের
অভাব থেকে সর্দি কাশি জ্বর ও মারণ অসুখ
নিউমোনিয়া ধরে নিতে পারে হার্ট অ্যাটাকও
হতে পারে তাই সরকারের কাছে আবেদন প্রতিটি শহরে অক্সিজেন ক্লিনিক খোলা আবশ্যিক এবং অবিলম্বে তা করা হোক।
অক্সিজেনের ঘাটতির জন্য বুদ্ধবাবুকে
ভর্তি করতে বুদ্ধবাবুকে বিশাল নার্সিংহোমে
ভর্তি করতে হয়েছিল এ বিষয়ে আমার বক্তব্য নেই কারণ তিনি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ।
কিন্তু অক্সিজেনের ঘাটতিতে জ্বর সর্দির থেকেও সামান্য অসুখ হতে পারে মানে হয়েছে। অক্সিজেন নিজেই কন্ট্রোল করা যায় । বসে বসে অক্সিজেন নিলে তা শরীরে তাড়াতাড়ি প্রবেশ করে । অক্সিজেন নাকের কাছে ধরলেই শরীরে প্রবেশ করে । বারান্দায় দশটা ফুলের টব থাকলে একজনের জন্য অক্সিজেন কম
পড়ার কথা নয় । অক্সিজেন ৯০ থাকা মানে ঠিক আছে । তাজা। একটু বাড়াতে হলে অক্সিজেন দেওয়া ছাড়া গতি নেই। কিন্তু বয়স হলে খাওয়াদাওয়ার কারণে অক্সিজেন কমে যায়। ৭০-এও চলে যায়। কিন্তু ৬০ হয়ে গেলে বিপদ অনিবার্য । সর্দি কাশি ধরে
নেবে । চোখের নিচটা ফুলে যাবে হাত পা
ফুলে যাবে । কান নাক দিয়ে রস রক্ত গড়াবে। কিন্তু অক্সিজেন দিলে একঘন্টার মধ্যে মানুষ ঠিক হতে শুরু করবে। ৯০ হয়ে গেলে আর অক্সিজেন দেওয়া ঠিক নয় তাই তিন ঘন্টা অন্তর অক্সিজেন মাপার নিয়ম। একবার অক্সিজেন দিলে এখন শরীর ফিট। আঙুল টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে টেস্ট করা দরকার । তবে অক্সিজেন ক্লিনিক তৈরি করলে অক্সিজেনের খরচ ঘন্টা প্রতি রুগীর কাছ থেকে নেওয়া ছাড়া আর খরচ নেই ।
ক্লিনিক প্রতি একজন ডাক্তারের দিনে ও রাতে দুবার ভিজিটর ব্যবস্থা করা । রোগীর জন্য একটি বাথরুম সহ একটি ১০ শয্যার হল । দু সিফটে দুজন করে চারজন নার্স । একজন হেড নার্স ,যিনি টাকা নেবেন,টিকিট করবেন ও প্রাথমিক পরীক্ষা করবেন । একটি ক্যাশ রেজিস্টার , ক্যাশ মেমো ও রুগীর নাম এন্ট্রি রেজিস্টার রাখলেই চলে যাবে। অক্সিজেন মাপার বড় মেশিন একটি। রোগীর ১২ ঘন্টার বেশি থাকার প্রয়োজন হলে রেফার করে ব্যবস্থা নিতে হবে । একটি আর ও ফিল্টার যুক্ত জলের মেশিন । দুজন হল অ্যাটেনটেন্ডস প্রথমবারের অক্সিজেন পরীক্ষার জন্য ১০/-টাকা ও ভর্তির জন্য বেড ভাড়া বাবদ ১০০/-টাকা প্রতিদিন । অক্সিজেন খরচ বাবদ ১০০/-টাকা প্রতিদিন । সাধারণত নরমাল অক্সিজেন লেভেল ৮০ থাকলে সর্দি কাশি নিউমোনিয়া ধরেনা । মাননীয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অক্সিজেন কমে গিয়েছিল তাই দ্রুত অক্সিজেন বাড়াতে
আইসক্রিমের প্রয়োজন হয়েছে কারণ
ক্যালরি দ্রুত বাড়ালে সর্দি জ্বর ও নিউমোনিয়ার আক্রমণ থেকে বাঁচানো সম্ভব। পেঁপে দেওয়া হয়েছে এই কারণে সম্ভবত তাঁকে ডেক্সোরেঞ্জ ইন্জেকশন
করা হয়েছিল । দ্রুত রক্তে অক্সিজেনের পরিবহন বাড়াতে এবং একই সঙ্গে ডেক্সোরেঞ্জের সাইড এফেক্ট অনুসারে পেট ফাঁপা ও অ্যাসিড তৈরি হতে পারে
তাই পেঁপে খেতে দেওয়া হয়েছে । পেঁপে
সরবিলিনের কাজ করে বিশেষ করে
এইক্ষেত্রে লিভার বেড়ে গেলেও যেতে
পারে তাই হজমশক্তি ঠিক রাখতে পেঁপে
অপরিহার্য এবং পেটও ভরাবে শরীরের
ক্ষতি নেই । ঠিক সময়ে ভর্তি না হলে নিউমোনিয়া ধরে নিলে বড় ক্ষতির সম্ভাবনা
থাকতো । আমি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দ্রুত
আরোগ্য কামনা করি । আমার মনে হয় খুব
বেশি চিকিৎসা ওনাকে করতে হয়নি। যাইহোক যা বলছিলাম তা হলো, মোটামুটি ১২-১৪ ঘন্টা ধরে অক্সিজেন শরীরে
নিলে সামান্য জ্বর-সর্দি থাকলেও তা সেরে
যাবে । তবে ২০০/৫০০ টাকার অক্সিজেন খরচের জন্য নাগরিকদের আইসিইউ
তে ভর্তি হয়ে ৭০/৮০ হাজার টাকা খরচ করে শুধুমাত্র অক্সিজেনের অভাবের চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এলে
সেটা নিশ্চয় গায়ে লাগবে বইকি । এছাড়া
অক্সিজেন নিলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও
কমে যায় সমস্ত স্নায়ুতন্ত্র সজাগ হয়ে ওঠে ।
©® অলোক কুন্ডু
অলোকের ঝর্নাধারায়: আমার টুকরো জীবন
অলোকের ঝর্নাধারায় -২
(আমার টুকরো জীবন)
গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের রাজ্য সম্পাদক ইন্দ্রনাথ দা'কে প্রথম দেখেছিলাম কলকাতার একটা আর্ট ফেয়ারে, কিন্তু উনিই যে ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সেটা পরে বুঝতে পারি। শুনেছিলাম ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় থাকতেন সিপিএমের কম্যিউনে যেরকম বিমান বসু থাকেন। একদিন বন্ধু আবৃত্তিকার নূপুর বসু ওর শিক্ষিকা,মায়ের বিষয়ে আমার হাওড়ার অফিসে এলো তখন কথায় কথায় সেই প্রথম ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম জানতে পারি। ওর সঙ্গে গিয়ে একদিন নিউ সিনেমার ওপর ইন্দ্রনাথ দার সঙ্গে আলাপ করি ( তারিখ মাস সাল পরে দেখেশুনে বসাবো এখনই মনে পড়ছে না ) আমি তখন বর্ধমানের ভাতারে পোস্টিং আর্ট কলেজ ও বি.এড পড়তে গিয়ে পরপর প্রায় আটবছর আমার সঙ্গে তখন আমার আত্মীয়-স্বজন, পরিবার বলতে কারও সঙ্গেই সম্পর্ক রাখতে পারিনি। তার উপর তখন বন্ধুদের সঙ্গে ছুটির দিনে একাডেমির পেছনে বসে একটা আড্ডা দি।ওখানে যে চপ ক্যাটলেটের ক্যান্টিনটা ছিল সেখানে আড্ডাটা হোতো, এখন ওইখানে ছেলেমেরা বসে থাকে। আট বছর বোহেমিয়ান জীবন। সেইসব বন্ধুরা অধিকাংশ বহু আগে কলকাতা ছেড়েছে আর দেখাসাক্ষাত নেই। চয়ন-শুক্তির সঙ্গে আর দেখা হয়না। দুজনেই এখনও ছবি আঁকে প্রদর্শনী করে। দিলীপ ভট্টাচার্যও ছবি আঁকে কাগজে রিভিউ পড়ি। এদের সঙ্গে আর দেখা হয়না। যাইহোক যা বলছিলাম ইন্দ্রনাথ দা বেশ ফর্সা, ধুতি পাঞ্জাবী পরেন সুপুরুষ। বাম আমলে বুদ্ধদেব বাবুর পরের জন। বুদ্ধবাবু তথ্য-সংস্কৃতি মন্ত্রী তখন। আর্ট কলেজ থেকে পাশ করা ইন্দ্রনাথ দা প্রচ্ছদও করেন। খুব ভালো মানুষ। আমার নামও বলতে পারেন। সেই ইন্দ্রনাথ দা আর্ট কলেজের ছাত্রদের আব্দারে একটা বড় সেমিনার ডাকলেন কলকাতায়। তথ্যকেন্দ্রে এলেন বড় বড় মানুষ সকলেই সহমত হলেন যে বিদ্যালয়স্তরে শিল্প শিক্ষা চালু করার বিষয়ে। ইতিমধ্যে কুমোরটুলিতে প্রথম গিয়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু যে বক্তব্য রেখেছিলেন প্রাথমিক স্তরে পুতুল গড়তে হবে, সেই ইতিহাস তুলে ধরে বক্তব্য রাখলেন ইন্দ্রনাথ দা। হাতে সব সময় সিগারেট থাকে ইন্দ্রদার। স্বনামধন্য বিজন চৌধুরী তখন আমাদের ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ, উনিও বক্তব্য রাখলেন। অস্ট্রেলিয়া সরকার তখন বিজন চৌধুরীর উপর তথ্যচিত্র তুলছে। স্যারের বাড়ি বালীর সাহেববাগানে, আমি গেছি অনেকবার। হাজার হাজার ছেলেমেয়েরা গণস্বাক্ষর করলো, বড় বড় দিকপাল শিল্পীরাও স্বাক্ষর করলেন। শিক্ষামন্ত্রী কান্তি বিশ্বাসের কাছেও তা জমা পড়লো। কিন্তু বামফ্রন্ট তা মানলো না। মনটা খারাপ হয়ে গেল।
ইন্দ্রনাথ দা'র কাছে নিউ সিনেমার ওপরে গেলাম একদিন। এক কথায় আমার নাম ধরে একজনকে চা দিতে বললেন। আমি যা দেখেছি ইন্দ্রনাথ দা
একজন চরম বামপন্থী হয়ে এত সাধারণ থাকতেন এবং আজকের দিনে মনে হয় ওইসব নির্লোভ মানুষ গুণি স্বনামধন্য শিল্পী হয়েও এবং ইন্দ্র-দার হাতে বামফ্রন্ট সরকার থাকা সত্বেও কোনও কিছু করেছিলেন বলে কখনও শুনিনি। তিনি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে বুদ্ধ বলে ডাকতেন। কান্তি বিশ্বাসকে কান্তি বলে ডাকতেন। এত ভাব হয়ে গেল যে ইন্দ্রনাথ দা ওর প্রদর্শনীর ইনভিটেশন হাতে দিলেন। আমার দেখা অতি সৌন্দর্যমন্ডিত হাতের লেখা ইন্দ্রদার। আমার সঙ্গে সিপিএমের কোনও সম্পর্ক নেই। তবু লোকটাকে আমার ভালো লেগে গেল। এহেন সৎ নির্লোভ আমি দেখিনি।এমনকি ইন্দ্রদা একদিন বললেন, তোকে মেট্রোচ্যানেলে আর্টক্যাম্পে ঢুকিয়ে দিলাম।
আমার তো মহাআনন্দ, কেননা মহারথীরা দলবেঁধে ছবি আঁকবেন। আমরা জুনিয়ররা ভরাট করবো। এই সুযোগ কখনও হবে আমার জীবনে। ইন্দ্র-দাকে ভগবানের মতো মনে হচ্ছে আমার মতো সামান্যজনের কাছে। এরপর একটা বড় কি একটা মেলা ঠিক ময়দানের কোথাও একটা হয়েছিল। সেখানে নানারকম প্রদর্শনী হয়েছে।
ইন্দ্রনাথ দার কার্ড এলো বাড়ির ঠিকানায় গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের অনুষ্ঠান। বড় বড় আর্টিস্টের নাম। বইয়ের স্টল। পেন্টারদের প্রদর্শনী। আমার কোনও সুযোগ নেই। আমি ওইসব সুবিধা নেওয়ার পক্ষেও নেই। যাইহোক উদ্বোধন একটা শনিবার করে হয়েছিল। আমি বর্ধমানের ভাতার থেকে উপস্থিত হলাম। একটু দেরিতে, ততক্ষণে অনুষ্ঠান শেষ। এক জায়গায় মাঠের মধ্যে ইন্দ্রনাথ দা বসে গুণমুগ্ধরা দু চারজন
আছেন। আমি বসলাম গিয়ে একটু দূরে। বললেন এত দেরি হলো কেন রে ? খুব আন্তরিক কন্ঠস্বর।
একটু দূরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বসে আছেন। ইন্দ্রনাথ দা হঠাৎ আমার হাতে একটা লাইটার ও সিগারেটের প্যাকেট দিয়ে বললেন, এটা দিয়ে আয়, বুদ্ধকে। আমি আগেই দেখেছি বসে আছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, তার কাছে একজন পুলিশ অফিসার দাঁড়িয়ে, দুজন ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে, কিছু আলোচনা করছেন। আমি তো হকচকিয়ে গেছি, কি বলছেন ইন্দ্র দা। প্রথমটা বুঝতে পারিনি। আমি বুদ্ধবাবুর কাছে গেলাম হাতে দিলাম আমার দিকে তাকালেন না। সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা নিয়ে আমার হাতে প্যাকেট ফিরিয়ে দিলেন, অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। দুবারেই আলো জ্বালিয়ে সিগারেট ধরালেন। ওটাও ফিরিয়ে দিলেন। সেই প্রথম শুনলাম জলদগম্ভীর স্বর বুদ্ধবাবুর। আমাকে বললেন ওনাকে দিয়ে দাও। আমি চলে এলাম ইন্দ্রদার কাছে। ©® অলোক কুন্ডু
অলোকের ঝর্নাধারায়: আমার ঠুকরো জীবন
অলোকের ঝর্নাধারায় -২
(আমার টুকরো জীবন)
গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের রাজ্য সম্পাদক ইন্দ্রনাথ দা'কে প্রথম দেখেছিলাম কলকাতার একটা আর্ট ফেয়ারে, কিন্তু উনিই যে ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সেটা পরে বুঝতে পারি। শুনেছিলাম ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় থাকতেন সিপিএমের কম্যিউনে যেরকম বিমান বসু থাকেন। একদিন বন্ধু আবৃত্তিকার নূপুর বসু ওর শিক্ষিকা,মায়ের বিষয়ে আমার হাওড়ার অফিসে এলো তখন কথায় কথায় সেই প্রথম ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম জানতে পারি। ওর সঙ্গে গিয়ে একদিন নিউ সিনেমার ওপর ইন্দ্রনাথ দার সঙ্গে আলাপ করি ( তারিখ মাস সাল পরে দেখেশুনে বসাবো এখনই মনে পড়ছে না ) আমি তখন বর্ধমানের ভাতারে পোস্টিং আর্ট কলেজ ও বি.এড পড়তে গিয়ে পরপর প্রায় আটবছর আমার সঙ্গে তখন আমার আত্মীয়-স্বজন, পরিবার বলতে কারও সঙ্গেই সম্পর্ক রাখতে পারিনি। তার উপর তখন বন্ধুদের সঙ্গে ছুটির দিনে একাডেমির পেছনে বসে একটা আড্ডা দি।ওখানে যে চপ ক্যাটলেটের ক্যান্টিনটা ছিল সেখানে আড্ডাটা হোতো, এখন ওইখানে ছেলেমেরা বসে থাকে। আট বছর বোহেমিয়ান জীবন। সেইসব বন্ধুরা অধিকাংশ বহু আগে কলকাতা ছেড়েছে আর দেখাসাক্ষাত নেই। চয়ন-শুক্তির সঙ্গে আর দেখা হয়না। দুজনেই এখনও ছবি আঁকে প্রদর্শনী করে। দিলীপ ভট্টাচার্যও ছবি আঁকে কাগজে রিভিউ পড়ি। এদের সঙ্গে আর দেখা হয়না। যাইহোক যা বলছিলাম ইন্দ্রনাথ দা বেশ ফর্সা, ধুতি পাঞ্জাবী পরেন সুপুরুষ। বাম আমলে বুদ্ধদেব বাবুর পরের জন। বুদ্ধবাবু তথ্য-সংস্কৃতি মন্ত্রী তখন। আর্ট কলেজ থেকে পাশ করা ইন্দ্রনাথ দা প্রচ্ছদও করেন। খুব ভালো মানুষ। আমার নামও বলতে পারেন। সেই ইন্দ্রনাথ দা আর্ট কলেজের ছাত্রদের আব্দারে একটা বড় সেমিনার ডাকলেন কলকাতায়। তথ্যকেন্দ্রে এলেন বড় বড় মানুষ সকলেই সহমত হলেন যে বিদ্যালয়স্তরে শিল্প শিক্ষা চালু করার বিষয়ে। ইতিমধ্যে কুমোরটুলিতে প্রথম গিয়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু যে বক্তব্য রেখেছিলেন প্রাথমিক স্তরে পুতুল গড়তে হবে, সেই ইতিহাস তুলে ধরে বক্তব্য রাখলেন ইন্দ্রনাথ দা। হাতে সব সময় সিগারেট থাকে ইন্দ্রদার। স্বনামধন্য বিজন চৌধুরী তখন আমাদের ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ, উনিও বক্তব্য রাখলেন। অস্ট্রেলিয়া সরকার তখন বিজন চৌধুরীর উপর তথ্যচিত্র তুলছে। স্যারের বাড়ি বালীর সাহেববাগানে, আমি গেছি অনেকবার। হাজার হাজার ছেলেমেয়েরা গণস্বাক্ষর করলো, বড় বড় দিকপাল শিল্পীরাও স্বাক্ষর করলেন। শিক্ষামন্ত্রী কান্তি বিশ্বাসের কাছেও তা জমা পড়লো। কিন্তু বামফ্রন্ট তা মানলো না। মনটা খারাপ হয়ে গেল।
ইন্দ্রনাথ দা'র কাছে নিউ সিনেমার ওপরে গেলাম একদিন। এক কথায় আমার নাম ধরে একজনকে চা দিতে বললেন। আমি যা দেখেছি ইন্দ্রনাথ দা
একজন চরম বামপন্থী হয়ে এত সাধারণ থাকতেন এবং আজকের দিনে মনে হয় ওইসব নির্লোভ মানুষ গুণি স্বনামধন্য শিল্পী হয়েও এবং ইন্দ্র-দার হাতে বামফ্রন্ট সরকার থাকা সত্বেও কোনও কিছু করেছিলেন বলে কখনও শুনিনি। তিনি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে বুদ্ধ বলে ডাকতেন। কান্তি বিশ্বাসকে কান্তি বলে ডাকতেন। এত ভাব হয়ে গেল যে ইন্দ্রনাথ দা ওর প্রদর্শনীর ইনভিটেশন হাতে দিলেন। আমার দেখা অতি সৌন্দর্যমন্ডিত হাতের লেখা ইন্দ্রদার। আমার সঙ্গে সিপিএমের কোনও সম্পর্ক নেই। তবু লোকটাকে আমার ভালো লেগে গেল। এহেন সৎ নির্লোভ আমি দেখিনি।এমনকি ইন্দ্রদা একদিন বললেন, তোকে মেট্রোচ্যানেলে আর্টক্যাম্পে ঢুকিয়ে দিলাম।
আমার তো মহাআনন্দ, কেননা মহারথীরা দলবেঁধে ছবি আঁকবেন। আমরা জুনিয়ররা ভরাট করবো। এই সুযোগ কখনও হবে আমার জীবনে। ইন্দ্র-দাকে ভগবানের মতো মনে হচ্ছে আমার মতো সামান্যজনের কাছে। এরপর একটা বড় কি একটা মেলা ঠিক ময়দানের কোথাও একটা হয়েছিল। সেখানে নানারকম প্রদর্শনী হয়েছে।
ইন্দ্রনাথ দার কার্ড এলো বাড়ির ঠিকানায় গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের অনুষ্ঠান। বড় বড় আর্টিস্টের নাম। বইয়ের স্টল। পেন্টারদের প্রদর্শনী। আমার কোনও সুযোগ নেই। আমি ওইসব সুবিধা নেওয়ার পক্ষেও নেই। যাইহোক উদ্বোধন একটা শনিবার করে হয়েছিল। আমি বর্ধমানের ভাতার থেকে উপস্থিত হলাম। একটু দেরিতে, ততক্ষণে অনুষ্ঠান শেষ। এক জায়গায় মাঠের মধ্যে ইন্দ্রনাথ দা বসে গুণমুগ্ধরা দু চারজন
আছেন। আমি বসলাম গিয়ে একটু দূরে। বললেন এত দেরি হলো কেন রে ? খুব আন্তরিক কন্ঠস্বর।
একটু দূরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বসে আছেন। ইন্দ্রনাথ দা হঠাৎ আমার হাতে একটা লাইটার ও সিগারেটের প্যাকেট দিয়ে বললেন, এটা দিয়ে আয়, বুদ্ধকে। আমি আগেই দেখেছি বসে আছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, তার কাছে একজন পুলিশ অফিসার দাঁড়িয়ে, দুজন ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে, কিছু আলোচনা করছেন। আমি তো হকচকিয়ে গেছি, কি বলছেন ইন্দ্র দা। প্রথমটা বুঝতে পারিনি। আমি বুদ্ধবাবুর কাছে গেলাম হাতে দিলাম আমার দিকে তাকালেন না। সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা নিয়ে আমার হাতে প্যাকেট ফিরিয়ে দিলেন, অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। দুবারেই আলো জ্বালিয়ে সিগারেট ধরালেন। ওটাও ফিরিয়ে দিলেন। সেই প্রথম শুনলাম জলদগম্ভীর স্বর বুদ্ধবাবুর। আমাকে বললেন ওনাকে দিয়ে দাও। আমি চলে এলাম ইন্দ্রদার কাছে। ©® অলোক কুন্ডু
অলোকের ঝর্নাধারায়: টুকরো জীবন
অলোকের ঝর্নাধারায়
(আমার টুকরো জীবন)
পর্ব-৩
প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো যে আমার মামারবাড়ি মধ্যবিত্ত হলেও খাওয়াপরায় কখনও কোনও অভাব দেখিনি। আমার ছেলেবেলার অনেকটা এবং পরেও যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি তখনও অন্তত গ্রীষ্মের ও পুজোর ছুটিটা কলকাতার-৬, জোড়াসাঁকোর ৫৯ নং বলরাম দে স্ট্রীটে আমার কাটতো বেশিরভাগ। সেখানে ভাগ্নাভাগ্নির সমস্ত আদর-যত্ন আমি একাই ভোগ করেছি। মামাতো ও মাসতুতো ভাইরা তখনও জন্মগ্রহণ করেনি এবং আমার নিজের ভাইবোনেরাও খুব কম গিয়ে থেকেছে । আমি সেখানে একাই রাজা ছিলাম। একতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত নিজের একটা রাজত্ব ছিল। তবে মামা মাসিদের শাসন ছিল খুব। আমার বড় মাসিমা ১৪ বছর বেলায় বিধবা হয়ে চিরকাল মামার বাড়ি ছিলেন শুনেছি মাত্র একবছর তাঁর দাম্পত্য জীবন কেটেছিল। হাওড়ার শিবপুরে তখন পাল ফার্মেসীর ওষুধের দোকান মানে বিশাল টাকা পয়সা, বেশ ধনী পরিবার। তখনকার দিনে শিবপুরের গন্ধবণিক ওই পরিবারের ছেলের যে টিবি ছিল এটাও খুব আশ্চর্যের। ওদের কাছ থেকে মাসিমার মাসোহারা পেতে অনেক কোর্টঘর করে পাওয়া গিয়েছিল মাসে ১৯/২০ টাকার মতো। কারণ ওদের ওষুধের দোকানটি ছিল সারা জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় ওষুধের দোকান এবং আইনত আমার মাসিমার চার আনা শেয়ার ছিল প্রচুর জায়গা জমিও ছিল কিন্তু আমার মাসিমা ওই টাকাটা ছাড়া আর কিছুই পেতেন না। আমি যখন যেতাম, মাসিমা সেখান থেকে আমাকে তখন রোজ সকালে ২ টো জিলিপির পয়সা দিতো। মামার বাড়িতে সকালে কিন্তু ফিরপো কোম্পানীর পাঁউরুটি দেড় পাউন্ড সঙ্গে আমার বড়মামা আনতো কাঁচের বোতলের হরিণঘাটার দূধ। ছোট থেকেই চা খাওয়ার বায়না ছিল আমার। মামার বাড়িতে একপিস পাঁউরুটি কলাইয়ের গ্লাসে চা। ( কলকাতায় নিত্য প্রয়োজনে কলাইয়ের বাসন ব্যবহার হোতো) তারপর একছুটে দু একটা সরু গলির ভেতর দিয় দে ছুট মামার বাড়ির একেবারে পেছন দিকে। নোপানী স্কুলের ভেতর দিয়ে সতীমায়ের মন্দির হয়ে সুন্দর চন্দনের গন্ধ ও পুজোর ঘন্টার আওয়াজ আর স্কুলের দারোয়ানের ফাঁক গলে বিখ্যাত রামবাগানে। ওখানে হিন্দুস্তানীদের দোকানে ঝুরিভাজা,জিলিপি সিঙাড়া খুব বিক্রি হতো। উত্তর কলকাতা মানে গায়ের ওপর গায়ে বাড়ি। চোর একটা ছাদে উঠতে পারলে আর রক্ষা নাই, দশটা বাড়ি গায়ে গায়ে। তাই কোনও ভাবেই কোনও বাড়ির সামনেটা ছাড়া তিনদিকে দেখা যেতনা। সতীমায়ের মন্দির স্কুলের একতলায়। বড় মাসিমা পই পই করে বলে দিত, দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েগুলো ডাকলে একদম যাবিনা। সাজাগোজা ঘরে ঘরে মেয়েরা কেন, সাত সকালে দাঁড়িয়ে থাকে, তখন কিছুতেই মাথায় ঢুকতো না। এখন ভাবি ওইটুকু ছেলেকেই বা ওরা কেন ডাকবে! আসলে মাসিমার ভয় করতো আমি যেন হারিয়ে না যাই। ওই জিলিপির দোকান থেকেই বেশ্যাপাড়ার শুরু হয়ে যেত। কিন্তু তখন থেকেই বাঙালিরা ক্রমশ ওইসব জায়গায় কোনঠাসা হয়ে পড়ছিল। একচেটিয়া মাড়োয়াড়ি পাড়া হয়ে উঠছিল। এখন তো বাঙালি দুচার ঘর আছে। মামার বাড়িতে মজার একটা জিনিস ছিল সেটা হলো উত্তর কলকাতার ওই ঘিঞ্জি বাড়িগুলিতে একতলায় আলো আসার জন্যে উঠোনের মাথায় দোতালার মেঝেতে কিছুটা জায়গা চৌকোনো ফাঁকা রেখে বড় বড় লোহার রড মেঝেতে গাঁথা থাকতো। কোনও কোনও হিন্দি সিনেমায় এইরকম বাড়িঘরের পরিবেশ আমরা দেখেছি। বেশ মজার এই জন্য আমরা ওর ওপর সাবধানে দাঁড়িয়ে বসে নীচটা সম্পূর্ণ দেখতে পেতাম। আবার মাসিরা অনেকে জড় হলে ওখানে উপুড় হয়ে দোতলায় শুয়ে একতলার লোকেদের সঙ্গে গল্প করতে পারতো। রডগুলো লম্বা ও চওড়া দিকে মেঝেতে পেতে চতুর্দিকে মেঝের ভেতর গাঁথা থাকতো। এমনকি টাকা পয়সা বই টুকটাক জিনিস ওপর থেকে নীচে মামিয়ে দেওয়া যেত। নীচ থেকে তোলার জন্যে একটা দড়িতে একটা আঁকশি ঝুলতো। খবর কাগজ বেঁধে দোতালায় তুলে নিয়েছি কতবার। আর সিঁড়িগুলোর সাইজ ছিল ছোট ছোট তিনতলা পর্যন্ত। উঠোনের পাশে বিশাল চৌবাচ্চায় জল উপচে পড়তো। দিদিমা মুখে দোক্তা নিয়ে সকাল ছটা থেকে রান্নায় বসতো দুবেলার রান্না করে উঠতো সেই দুটোয়। সে রান্না কোনও শেফের দ্বারাও সম্ভব ছিলনা এত তার স্বাদ। মাটির হাঁড়িতে ভাত হতো। শাকের ঘন্টটায় ঘরের পোস্তর বড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া থাকতো। শেষে বিশ্বেশ্বর ঘি দিয়ে নামানো। মাছের তেলঝাল। একটা কপি বা পটলের তরকারি, আলু বেগুন ভাজা। ভাজা মুগের লাউ দিয়ে ডাল। প্রতিদিন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই মেনু। রাতে গরমজলে মাখা রুটি নয়তো বিশ্বেশ্বর ঘিয়ের গরম গরম লুচি ছোলার ডাল নারকেল দিয়ে নয়তো ফুলকপি/ ধোঁকার ডানলা বেগুন ভাজা ছোলা দিয়ে কুমড়োর ডানলা। লুচি ছাড়া সমস্ত রান্না দিদিমা একা করতো সকালে। জোগাড় দিত ছোট ও বড় মাসি।
আমার ছোটমাসির কুটনো কোটার শুনেছি শ্বশুরবাড়িতেও তারিফ হতো। অনেক বড় হয়ে মামার বাড়িতে মাংস ডিম ঢুকেছে, মুরগীর মাংস দিদিমা কখনও রাঁধেনি। আর রান্নাঘরের পাশ দিয়ে উঠে গিয়েছিল সিঁড়ি। ঠিক ওখানটাতে বসে আমার কথা হোতো দিদিমার সঙ্গে। মামা বাড়ির দাদুর ছিল মান্টেলসের হোলসেল ব্যবসা। তবে আমি দাদুকে দেখিনি। দাদু বড়বাজারে মাল দিয়ে আসতো আর তাগাদায় যেত এছাড়া আর তেমন কাজ নেই শুনেছি দাদু খুব কম বয়সেই ৬০ হওয়ার অনেক আগেই মারা যান। ওই সময়েই ব্যবসায় এত আয় করেছিলেন যে মৃত্যুর পরও সেই সুদের পয়সায় আরও ভালোভাবে ২০ বছর মামাদের চলে যেত। বেঁচে থাকতে এক বড়লোক বন্ধুকে বিশাল অঙ্কের টাকা ধার দেন। সেকথা পরে বলবো। ছোটমামা তখন ডাক্তারি পড়ে ও বড়মামার ম্যানেনজাইটিস হয়ে শরীরের এক দিকটা সম্পূর্ণ পড়ে যায়। বিধানচন্দ্র রায়কে দেখানো হয়েছিল। উনি বলেছিলেন ব্রেন অপারেশন করলে ভালো হয়ে যাবে। বিধানচন্দ্র রায়ের কাছে অ্যাপয়ন্টমেন্ট নেওয়া হয়েছে। যখন মাত্র ১২০/- টাকায় মামাদের সংসার চলে যেত তখন বিধানচন্দ্র রায়কে স্পেশালভাবে দেখাতে চাইলে উনি নিতেন ৬৪/- টাকা। দেখাতে আমার দুইমাসি ও ছোটমামা ও দাদুর এক বন্ধু গেছেন। আমার মামাকে ধরে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিধানচন্দ্র রায় দূর থেকে বলে দিলেন ব্রেন অপারেশন করলে ঠিক হয়ে যাবে। এই ছিলেন বিধান চন্দ্র রায়ের দূরদৃষ্টি। যাইহোক, ভয়েতে আমার দিদিমা ব্রেন অপারেশনে রাজি হলেন না। আমার বড়মামা ওইভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দোতলা বাস, ট্রামে লাঠি নিয়ে যাতায়াত করতেন কষ্টকরভাবে। বড় মামার শখ ছিল ছবি তোলো। বড় বড় দুতিনটে কাঠের বক্স ক্যামেরা ছিল। যাকে দাঁড় করাবার তিনটি অ্যাডজাস্টেবল পায়া ছিল। ক্যামেরায় কালো কাপড় চাপা দিয়ে প্লেট ভরে ছবি তোলা হোতো। লেন্সের ঢাকনা কতক্ষণ খুলে রাখলে কতটা আলো ছবি নেবে ছবি তুলে তুলে তা পরীক্ষা করে প্র্যাকটিস করে বুঝে নিতে হোতো। ক্যামেরায় ফিল্ম লোড করে কালো ঢাকা দেওয়া বাক্সো থেকে নিমিষে বার করে ক্যামেরায় লাগাতে হোতো কালো কাপড় ঢেকে। বাড়িতেই সে কারণে স্টুডিও ডার্করুম করতে হয়েছিল। মেটাল কেমিকেল, ফিল্ম, ব্রোমাইড, সলিউশন, পেপার সব সাজানো থাকতো। ডার্করুমে লাল আলো জ্বলতো। ছবি উঠতো শুধুমাত্র বাড়ির লোকেদের। বাইরের জন্য ছিল একটা ছোট হ্যান্ডি বিলিতি ডবল লেন্সের আগফা কালো রঙের ক্যামেরাও। ভূবনেশ্বরে মামাদের বাড়ি মধুপুরে দাদুর বন্ধুর বাড়িতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যাওয়া হোতো। (ক্রমশ)
শুক্রবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০
মহালয়া ও মহিষাসুরমর্দিনী প্রসঙ্গ: অলোক কুন্ডু
রেডিওর প্রাক্কালে প্রদীপের সলতে পাকানো থেকে আলো জ্বালানোর দেবদূত : অবহেলিত বাণীকুমার ও মহিষাসুরমর্দিনী প্রসঙ্গ একটি
ঐতিহাসিক দলিল ও তার সম্ভার...
©® অলোক কুন্ডু
শাহজাহানকে কে আর অতটা মনে রেখেছেন
যতটা উদ্ভাসিত তাজমহল । তেমনি বাণীকুমার
হয়ে গেছেন শাহজাহান । আর তাজমহলের রূপ
পেয়েছেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র । ১৮৯৫ সালে
বঙ্গের কৃতী সন্তান আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু
প্রথম বেতার তরঙ্গ সম্প্রসারণ করে দেখালেন।
১৯২২ ইংল্যান্ডের রেডিও জগতে দেখা দিল বিবিসি । ১৯২৪ এদেশে প্রাইভেট রেডিও ক্লাব চালু হলে কানে হেডফোন লাগিয়ে একজন সেই রেডিও শুনতে পারতেন। মূলত ধনীদের মধ্যেই এই ধরনের রেডিও চালু ছিল --অনেককাল
ধরেই । প্রথমে মাদ্রাজ-পন্ডিচেরির পর ২৩.৭.১৯২৭ বম্বেতে এই রেডিও হাউসের
পত্তন হলো । পরে ২৬.৮.১৯২৭ হলো ওদের
শাখা কলকাতায়। নাম হয় -ইন্ডিয়ান স্টেটস্ ব্রডকাস্ট সার্ভিস । Reits Microphone এ তখন সম্প্রচার হতো , দু-ফুট দূরে বসতে
হতো মাইককে ছেড়ে । ১ এপ্রিল ১৯৩০ এই কোম্পানিকে পুরোপুরি অধিগ্রহণ করে নাম পরিবর্তন করলেন ব্রিটিশরা , হলো - ইন্ডিয়া ব্রডকাস্টিং কোম্পানি । হেড অফিস বম্বের (মুম্বাই) ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং সার্ভিস যেটা
ছিল । তার নামও পরিবর্তন হয়ে গেছে ।
বাড়ি ভাড়া নিয়ে ১ নং গার্স্টিন প্লেসে
কলকাতায় তাদের নতুন সংস্থার শাখা ।
অধিকর্তা হিসেবে আসেন- স্টেপলটন সাহেব । ভারতীয় অনুষ্ঠানের তত্বাবধায়ক হন ক্ল্যারিনেট শিল্পী - নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ মজুমদার , সহচর হিসেবে
যোগ দেন সঙ্গীতজ্ঞ রাইচাঁদ বড়াল
( বুড়োদা)। ১৯৩০ এ যখন বৃটিশ সরকার ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং কোম্পানি অধিগ্রহণ
করে নেয় এবং কর্মসূচি বর্ধিত করার কাজ
শুরু করে তখন নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ মজুমদার
সহকারী প্রোগ্রাম ডিরেক্টর হন । সাহিত্যিক প্রেমাঙ্কুর আতর্থী অন্যতম অধিকর্তা হিসেবে
যুক্ত হন এই বেতার ব্যবস্থার সঙ্গে ।
অ্যানাউন্সার ছিলেন মোহনবাগানের রাজেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ওরফে রাজেন সেন । তখনও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র যোগ দেননি । তিনি তখন এদিকে সেদিকে নাটক করে বেড়াচ্ছেন ।
স্তোত্রপাঠে তেমন করে নিমগ্ন হননি ।
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের জন্ম হয় ৪.৮.১৯০৫ ও
তিনি প্রয়াত হন ৩.১১.১৯৯১ । জীবনে নাটক
বেতার নাটক ছাড়াও বিরুপাক্ষ ছদ্মনামে
তার অনেক ছোট ফিচার ও নাটকের বই
আছে । জীবদ্দশায় তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ
নাটক ও বই লিখেছেন । ছোট থেকেই
কলকাতার তেলিপাড়া লেনের রাজেন্দ্রনাথ দে নামক এক পন্ডিত ব্যক্তির কাছে তিনি
অল্পস্বল্প চন্ডীপাঠে তাঁর হাতেখড়ি নেন ।
তখনকার দিনের আবৃত্তিকার হিসেবে বীরেন
ভদ্র মশাইয়ের নামডাক হতে থাকে । নাটকের দিকেই তাঁর বেশি মোহ ছিল । পরে আকাশবাণীর
নাট্য বিভাগের দায়িত্বও সামলে ছিলেন ।
বীরুপাক্ষ ছদ্মনাম নিয়ে মঞ্চে ও রেডিওতে
মজার অনুষ্ঠান ও নাটক সম্প্রচারে তিনি বাঙালির মন জয় করে নিয়েছিলেন । পরে
রেলের ও সওদাগরি অফিসের চাকরি ছেড়ে
রেডিওর সঙ্গে যুক্ত হলেও সরকার তাকে পেনশন
দেয়নি বলে শোনা যায় । ১৯৩১ রেডিওতে একটা
নতুন কিছু করার তাগিদে নৃপেন বাবু ও অন্যান্যদের অনুরোধে বাণীকুমারের পুরনো
লেখা বসন্তেশ্বরীতে গদ্য পাঠে যৎসামান্য অংশ নিয়েছিলেন বীরেন ভদ্র কিন্তু তখনই তিনি তার জাত চিনিয়ে দেন রেডিওর কর্তাদের কাছে ।
১৯০৭ সালের ২৩ নভেম্বরে হাওড়ার কানপুর
গ্রামে মামারবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন বেতারের মহিষাসুরমর্দিনীর শ্রষ্ঠা বাণীকুমার ওরফে বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য । পিতা সংস্কৃত-পন্ডিত ও ঐতিহাসিক, বিধুভূষণ ভট্টাচার্য যিনি ঐতিহাসিক " রায় বাঘিনী"র ইতিহাসকার । বাণীকুমারের মাতা ছিলেন-অপর্ণা ভট্টাচার্য । বাণীকুমারদের আসল বাড়ি ছিল হুগলির আঁটপুরে । দুই ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে থাকতেন বিধুভূষণবাবু । কার্যকারণে বাণীকুমারের পিতা একসময়
উঠে এলেন মধ্য হাওড়ার খুরুট ধর্মতলায় । নিলেন ভাড়া বাড়িও । এখানে পিতার টোলেই বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্যের প্রাথমিক শিক্ষা হয় ।
এরপর হাওড়া জেলা স্কুলে ভর্তি হন বৈদ্যনাথ ওরফে বাণীকুমার । কিন্তু ভাড়া বাড়ি ছেড়ে অবশেষে তাঁরা হাওড়ার রামরাজাতলা-সাত্রাগাছি অঞ্চলে বট গাছের মোড়ে সান্যালদের বাড়ি যেখানে সেই বাড়িতে উঠে যান । বাণীকুমারের পিতা ও পিতামহ দুজনেই ছিলেন সংস্কৃত পন্ডিত, বাড়িতে তাই সংস্কৃতের বরাবরই চর্চা ছিল ।
কিন্তু সংস্কৃত কলেজের সঙ্গে পন্ডিত
বিধুভূষণ ভট্টাচার্য যুক্ত থাকায় ম্যাট্রিক পাশ করার পর ছেলেকে তিনি প্রেসিডেন্সিতে প্রথমে আই.এ
এবং তারপরে সেখানেই ইংরেজিতে বি.এ.
অনার্সে ভর্তি করে দেন । একে তো সংস্কৃত ঘরাণায় বাণীকুমারের বড় হয়ে ওঠা সেই সঙ্গে ইংরেজিতে নাটক নভেল জানায় তিনি কাব্যচর্চায় ও সাহিত্যে অতি দক্ষ হয়ে ওঠেন । হাওড়া
জেলা স্কুলে তাঁর শিক্ষক কবি করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়, তাঁরই উৎসাহে বৈদ্যনাথ লিখতে শুরু করে দেন। কবিতা ও অনুবাদ সাহিত্য ছাড়াও ছোট নাটিকা লেখায় তিনি একপ্রকার কিছু দিনের মধ্যেই সিদ্ধহস্ত হয়ে উঠলেন । কলেজে পড়ার সময়ই সংস্কৃতে ব্যুৎপত্তির জন্য কলেজের সস্কৃতের অধ্যাপক বাগবাজারের পন্ডিত অশোকনাথ শাস্ত্রীর সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে । কলেজ সমাপ্তির পর পিতার উৎসাহে সংস্কৃত বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ পড়াশোনা শুরু করে দেন এবং শাস্ত্রীমশাইয়ের টোল থেকে সরকারের দেওয়া কাব্য সরস্বতী উপাধি লাভ করেন । এর কিছুদিন পর তিনি চাকরি পান টাকশালে । পিতা আর দেরি না করে হাওড়ার সান্ত্রাগাছিতে থাকার সময়ই তাঁর বিয়ে দিয়ে
দেন গৌরীদেবীর সঙ্গে । বানীকুমার লিখে
গেছেন - "মহিষাসুরমর্দিনী আমার প্রথম
যৌবনের রচনা ।" মূল রূপটির বিশেষ
পরিবর্তন না ঘটলেও বেতারের মহিষাসুরমর্দিনীর মধ্যে শাশ্বত সত্য এক অতিথিবৎসল ভারতের শান্তিময় জীবনের মর্মকথা ধরা আছে ।
১৯২৮ সাল থেকেই বেতারের সঙ্গে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে । কলকাতার বেতার তখন আধুনিক
যুগের মনোরঞ্জনের একটি অতি আবশ্যিক ও উচ্চতর মাধ্যম । ইংরেজি ১৯২৮ সালের
২৬ শে আগষ্ট বেতারের আমন্ত্রণে বেতারজগৎ-এ
প্রকাশ পায় রবীন্দ্রনাথের কবিতা । --"ধরার আঙিনা হ'তে ওই শোনো উঠিল আকাশবাণী" পরে যখন ইডেন গার্ডেনে ১৫.৯.১৯৫৮ তে রেডিও অফিস উঠে এলো তখন তার নাম
হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দেওয়া সেই- আকাশবাণী । অবশ্য বৃটিশদের প্রশাসনের
সুবিধার জন্য তারা ১৯৩৬-এ গার্স্টিঙ প্লেসে
থাকার সময়ই রেডিও কোম্পানির নাম
পরিবর্তন করে সরাসরি শাসনে নিয়ে আসেন
ও নাম হয়- অল ইন্ডিয়া রেডিও । রেডিও
তখন ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে বাণীকুমারের
ভাবনায় এলো কীভাবে রবীন্দ্রনাথের নাটক
ও ছোটগল্প শ্রুতিমধুরভাবে সম্প্রচার করা
যায় । এখানে বলে রাখা ভালো শুধু মহিষাসুরমর্দিনীতেই বাণীকুমার মেতে থাকলেন না অথবা ছিলেন না । রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্প ও নাটক থেকে একের পর এক শ্রুতিনাটক তৈরি করতে শুরু করলেন তিনি। বেতারেই হলো তার ঘরবাড়ি । টাকশালে চাকরি শুরুর আগেই বন্ধুদের নিয়ে যৌথ ভাবে গড়ে তুলেছেন ,"চিত্রা সংসদ" নামে একটি ছোট নাট্যদল । সেখানেই রাজেন্দ্র সেন বীরেন্দ্র ভদ্রকে দেখতে পান বেতারের কর্মাধ্যক্ষ শ্রী নৃপেন্দ্রচন্দ্র মজুমদার মহাশয় । ইতিপূর্বে টাকশাল থেকে ১ নং গ্রাস্টিন প্লেসে অফিসের পর প্রোগ্রামের আশায় আসতে শুরু করেছেন । ছোট ছোট কাজ পাচ্ছেন ।
খোদ বৃটিশ সরকারের কর্মচারী । পার্টটাইম কাজে তাই ছদ্মনামে মিন্ট অফিসের বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য পরিচিত হলেন বাণীকুমারে । শেষ পর্যন্ত নাট্য প্রেমিক, স্ক্রিপ্ট রাইটার ,কবি গীতিকার,
তিনটি ভাষায় পন্ডিত বাণীকুমার আকাশবাণীতে , "চিফ প্রোগ্রাম এক্সিকিউটিভ"হিসেবে কর্মরত ছিলেন । ওইখানে ঘোষক হিসেবে আগেই যোগদেন রাজেন সেন । আর এক ঘোষক ও পাঠক বিজন বসু , গল্প দাদুর আসর চালাতে এলেন ১৯২৮-এ । এলেন সঙ্গীত শিল্পী সাগির
খাঁ, পাঞ্জাবি গাইয়ে হরিশ্চন্দ্র বালি । সঙ্গীতজ্ঞ রাইচাঁদ বড়াল । রেডিও স্টেশন চালানোর
মতো সমাজের গণ্যমান্য শিল্পী-সাহিত্যিকের
দল , এলেন শিশির কুমার মিত্র, নলিনীকান্ত
সরকারের মতো প্রশাসকরা । ড. ইন্দিরা বিশ্বাস বসু যিনি বেতারজগৎ ও অল ইন্ডিয়া রেডিও নিয়ে ডক্টরেট করেছেন বাস্তব তথ্য খানিকটা
তার থিসিস পেপারের সঙ্গে মেনে নিতে হয় ।
তিনি বলেছেন- বেতারে বাণীকুমার প্লে-আর্টিস্ট
হিসেবে প্রথম যোগদান করেন । মুন্ডক উপনিষদ ও মার্কন্ডেয় পুরাণের দেবীস্তুতি অর্থাৎ চন্ডীপাঠটি বাণীকুমারের হুবহু মুখস্থ ছিল । পাঠও করতে পারতেন । ১৯৭৮ সালে বহু বছর পরে প্রথম এইচএমভি কর্তৃক ভূবনভোলানো মহিষাসুরমর্দিনীর রেকর্ড বের হলো , কপিরাইট রইলো AIR -এর হাতে । ১৯৬৫ সালেও মহিষাসুরযর্দিনীর শো-গুলি লাইভ প্রোগ্রামে
হতো । গানের শিল্পীরা ছিলেন- সুপ্রীতি ঘোষ,কৃষ্ণা দাশগুপ্ত, শিপ্রা বসু , মানবেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, বিমলভূষণ, রবীন বন্দ্যোপাধ্যায়,অরুণকৃষ্ণ ঘোষ, তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, ইলা বসু , আরতি মুখোপাধ্যায়, সুমিত্রা সেন, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, উৎপলা সেন ,ধীরেন
বসু, অসীমা ভট্টাচার্য । শিল্পী ও সহকারী মিলিয়ে প্রায় ৫০ জনের বঙ্গ বিজয়ী একটা দল তৈরি হয়েছিল সেই সময় এবং সেই দলের তিন
তারকা ছিলেন বাণীকুমার, পঙ্কজ কুমার মল্লিক ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র । শ্লোকের উচ্চারণ ও তার তর্জমাগুলি বাণীকুমার প্রস্তাবিত স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী হুবহু তুলে নিয়ে তাকে আরও মাধুর্যতর করে এবং স্বরক্ষেপণকে ব্যঞ্জনাময় করে তোলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র । যে কারণে প্রথমবার বাণীকুমার নিজেই যে চন্ডিস্তুতিগুলি বসন্তেশ্বরীতে
পাঠ করেছিলেন পরে সেগুলির সম্পূর্ণ দায়িত্ব দেন বয়সে বড় ও পদাধিকারে নীচে থাকা
বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে । এই অসাধারণ আয়োজনের রচনা ও প্রবর্তনা ছিল - বাণীকুমারের । বাঙালি
জাতি এমনকি হালের উইকিপিডিয়া পর্যন্ত বাণী কুমারের কাজকে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের কাজ বলে
অনেক জায়গায় উল্লেখ করেছে । যখন প্রথম
এই ধরনের প্রোগ্রাম রেডিও নিতে চলেছে সেই
আসরে রাইচাঁদ বড়াল সাগির খাঁ নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ মজুমদার প্রেমাঙ্কুর আতর্থীদের সঙ্গে বাণী কুমারের যুক্ত ছিলেন । বিকেলের দিকে চা-সিঙ্গাড়া সহযোগে ১৯৩১ এই বেতারের আড্ডায় এক নম্বর গার্স্টিন প্লেসে আসর
বসতো কখনো কখনো বীরেন্দ্র কৃষ্ণও সেখানে
থাকতেন সেই সময় যদিও তিনি রেডিওতে
মহিলা মজলিসে যুক্ত হয়েছেন-১৯২৮এ।
কিন্তু চাকরি করতেন না এবং সারাদিন
রেডিওতে থাকতেনও না । যাইহোক মহিষাসুরমর্দিনীর সঙ্গীত সর্জনা ছিল
স্বনামধন্য মিউজিক কম্পোজার পঙ্কজকুমার মল্লিকের এবং শুরু করেছিলেন মালকোষ
রাগ দিয়ে । সেই সুরকে আজও কারও ছাপিয়ে
যাওয়ার সাধ্য হলনা । গ্রন্থনা ও স্তোত্রপাঠের
ক্যারিস্মা ছিল - বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের ।
ইন্সট্রুমেন্ট বা বাজনাগুলি ছিল- হারমোনিয়াম,তানপুরা, চেলো, ভাওলিন, ভাইওলা, বাঁশি । পাঞ্জাবি গায়ক হরিশ্চন্দ্র বালি একটি গানে সুর সংযোগ করে ছিলেন । আর
একটি গানে সুর দিয়েছিলেন সাগির খাঁ সাহেব। খুশি মহম্মদ বাজিয়েছিলেন- হারমোনিয়াম,
আলী ছিলেন চেলোতে । বাঁশি বাজিয়ে ছিলেন একজন বিখ্যাত মুসলমান বাজনদার । ইন্সট্রুমেন্ট অধিকাংশই ছিলেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। যার ফলে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ
ভদ্রের সংস্কৃত উচ্চারণ ঠিক মতো তাঁরা প্রথম প্রথম ধরতে পারতেন না । অসুবিধা হচ্ছিল
কিন্তু বারবার অনুশীলনের ফলেও লাইভ প্রোগ্রামেও সেই ভুল হয়ে গিয়েছিল কিন্তু একবারও কেউ তা বুঝতে পারেননি যে
কোথায় সেই ভুল-ত্রুটিটি হয়েছিল ?!
লাইভ অনুষ্ঠানে শঙ্খ, বাঁশি ও স্লোক-স্তোত্র
পাঠ পরপর থাকায় কিছু ভুল বোঝাবুঝি
হয়েছিল কিন্তু কাঁচের ঘর থেকে বাণীকুমার
তা চালিয়ে যেতে বলেছিলেন এবং সেই
সুরের মূর্ছনায় ততক্ষণে বাঙালির হৃদয় জয়
করা হয়ে গেছে । পরে তাই কোনো ভাবেই
বাঁশির সুরের সেই মুহূর্তকে আর বদল
করেননি পঙ্কজকুমার মল্লিক ও বাণীকুমার ।
তবে পরে অনেকবার স্ক্রিপ্টের সামান্য বদল করলেও বাণীকুমার অগ্রজ-বন্ধু বীরেন্দ্র
কৃষ্ণ ভদ্রের সঙ্গে আলোচনা করে পঙ্কজকুমার মল্লিকের মতামত নিয়ে তা নতুনভাবে রিয়ার্সালে ঠিক করে নিতেন । বাণীকুমার ১৯২৮ এ
তার ২১ বছর বয়সে টাকশালের চাকরি
ছেড়ে দিয়ে স্ক্রিপ্ট রাইটার ও স্টাফ আর্টিস্ট
পদে যোগ দিয়েছিলেন কিন্তু বীরেন্দ্রকৃষ্ণ
ভদ্র চিরকাল তার মূল চাকরির সঙ্গে রেডিওর
দপ্তর সমানে চালিয়ে গেছেন । চাকরি ছেড়েছিলেন অনেক পরে এবং বেতারে
অনেক পরে যোগদান করার জন্য তিনি সরকারের পেনশন পাননি । বীরেন্দ্রকৃষ্ণ
ভদ্রকে সরকারের এই অবহেলার জন্য
পরে সমালোচনার মুখে পড়তে হয় । বীরেন ভদ্র বেশ কয়েকবছর রেডিওর মহিলা মজলিস বিভাগটি চালিয়েও ছিলেন কিন্তু এই নিয়ে অমৃতবাজার পত্রিকায় বিস্তর
চিঠি লেখা হয় । এক প্রকার স্ক্যান্ডাল ছড়ায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে নিয়ে ,তারপর তিনি সরে যান ১৯৩৪ সালে । আর ১৯৩৬ নাগাদ
শুরু হয় মহিলা মহল বেলা
দে-র তত্ত্বাবধানে ।
পাকাপাকি ফর্মেশন নেওয়ার আগে রেডিওর বিভিন্ন আড্ডা থেকে উঠে আসা বাঙালির
হৃদয়ের আসুমদ্রহিমাচল বিজয়ী ,
মহিষাসুরমর্দিনী সঙ্গীতালেখ্যটি বিভিন্ন ভাবে পরিবেশিত হয় , কখনও বসন্তেশ্বরী নামেও ।
তাই মহিষাশুরমর্দিনীকে সম্পূর্ণ রূপে জানতে আমাদের চলে যেতে হবে সত্তরের দশকের বাঙালি সমাজে । সেই মধ্যবর্তী সময় থেকেই টেলিভিশন যখন বিভিন্ন বাড়িতে স্থান পেতে
শুরু করলো । এখন এরকম বাড়ি খুঁজে পাওয়া খুব শক্ত যেখানে টিভি নেই । কিন্তু রেডিওর আদিকালে কিন্তু রেডিওকে ঘরে ঘরে পাওয়া
তো দূরের কথা সমস্ত বাড়িতেও পাওয়া মুস্কিল ছিল । যদিও আগে এক সময়ে রেডিওই ছিল খবর ও অন্যান্য অনুষ্ঠান সম্প্রচারের একমাত্র গণ ও মনোরঞ্জনকর মাধ্যম । এখন সে দায়িত্ব পালন করছে টেলিভিশন। রেডিও বলতে
নতুন প্রজন্ম বোঝে এফএমকে । কোন অনুষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দৃশ্যের উপস্থিতি দর্শকমনকে আকৃষ্ট করে অনেক বেশি ।
সেজন্যই রেডিওর জৌলুষ এখন অনেকটাই স্তিমিত। হয়ত এর একমাত্র ব্যতিক্রম ঘটে
যায় মহালয়ার ভোরে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’
শোনার আগ্রহে ঝাড়পোছ হতে শুরু করে
দেয় অপোড়ো রেডিও । টেলিভিশনের চেয়ে আকাশবাণীর এই অনুষ্ঠানটি এখনও যে
লোকের কাছে অনেক বেশি জনপ্রিয় তা মহালয়ার ভোরেই স্পষ্ট বোঝা যায় ।
অনুষ্ঠানের শুরুটি - “আজ দেবীপক্ষের প্রাক-প্রত্যুষে জ্যোতির্ম্ময়ী জগন্মাতা মহাশক্তির শুভ আগমন-বার্ত্তা আকাশ-বাতাসে বিঘোষিত। মহাদেবীর পুণ্য স্তবনমন্ত্রে মানবলোকে জাগরিত হোক ভূমানন্দের অপূর্ব্ব প্রেরণা। আজ শারদ গগনে-গগনে দেবী ঊষা ঘোষণা করছেন মহাশক্তির শুভ আবির্ভাব-ক্ষণ।”
এরপর তিনবার শঙ্খধ্বনির পর শুরু হয় অনুষ্ঠান। সুপ্রীতি ঘোষের পরিশীলিত কন্ঠে গাওয়া সেই গান – “বাজল তোমার আলোর বেণু”। সাধারণ মানুষের কাছে পঙ্কজকুমার
ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ যেভাবে এই ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র
সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত, সেই তুলনায়
একটু হয়তো আড়ালেই থেকে গেছেন
বাণীকুমার । অথচ মূল অনুষ্ঠানটির পরিকল্পনা
রচনা-প্রস্তাবনা এবং বারবার সংযোজন বিয়োজনের অধিকার দেখিয়েছেন সবই বাণীকুমার । ১৩৩৯ বঙ্গাব্দের আশ্বিনে প্রথম প্রচারিত হয় অনুষ্ঠানটি, কিন্তু তখন এর নাম
ছিল ‘শারদ বন্দনা’। ১৯৩৪-এর ৮ ই অক্টোবর ( ১৩৪১ বঙ্গাব্দ ) মহালয়ার সকাল ছয়টা থেকে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত প্রচারিত হয়েছিল
অনুষ্ঠানটি। কিন্তু এটি ঘিরে তীব্র আপত্তি
ওঠে – রক্ষণশীল দলের কাছ থেকে থেকে। প্রতিবাদের মূল কারণ ছিল – এক অব্রাহ্মণ ব্যক্তির কন্ঠে কেন চণ্ডীপাঠ শোনা যাবে ?
রুখে দাঁড়ালেন বাণীকুমার স্বয়ং । গ্রন্থনা ও চণ্ডীপাঠ বীরেন্দ্রকৃষ্ণই করবেন এই সিদ্ধান্তে অটল থাকেন তিনি এবং এও বললেন তাহলে তিনিও এই অনুষ্ঠান থেকে নিজেকে
মুক্ত করে নেবেন । আরও একটি আপত্তি
ছিল মহালয়ার সকালে পিতৃপক্ষের সময়ই
কেন চণ্ডীপাঠ হবে ? যখন প্রতিমার বোধনই
হয়না । অথচ ওই স্রোত্রগুলি সবই দুর্গা মন্ত্র ।
এতেও তৎকালীন সময়ে ব্রাহ্মণরা আপত্তি তুলেছিলেন । সেই জন্য ১৯৩৫ ও ১৯৩৬ সালে অনুষ্ঠানটি ষষ্ঠীর ভোরে প্রচারিত হয়েছিল ।
কিন্তু পরিশেষে বাণীকুমারের সিদ্ধান্ত মেনেই ১৯৩৭ সাল থেকেই মহালয়ার ভোরে প্রচারিত
হয় – ‘মহিষাসুরমর্দিনী। ’ । প্রভাতী বিশেষ
এই অনুষ্ঠানের সময় বিভিন্ন সময় পরিবর্তিত
হয়েছে। কখনও ৬.০০ থেকে ৭.৩০ । পরে শুরুর
সময়ে পরিবর্তন আনা হয় ৫.৩০ ও শেষে ৪.০০ থেকেই নির্দিষ্ট থেকে যায় সময় ১৯৫০ সালে । অনুষ্ঠানটি সফল ও আকর্ষণীয় করে তুলতে বাণীকুমারের সঙ্গে পঙ্কজকুমার মল্লিক ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের নাম অবশ্যই একই সারিতে স্মরণীয় হয়ে থাকার কথা । বীরেন্দ্রকৃষ্ণ
ভদ্র, পঙ্কজকুমার মল্লিক ও বাণীকুমার ছিলেন একই বৃন্তের তিনটি কুসুম । ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ গীতি আলেখ্যটি পরে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয় ।
এ প্রসঙ্গে একটি নিবন্ধে বাণীকুমার নিজেই লিখেছেন –“মহিষাসুরমর্দিনী” আমার প্রথম যৌবনের রচনা । কিন্তু মূল রূপটির বিশেষ পরিবর্তন না ঘটলেও এই গ্রন্থের বর্তমান রূপ বহুতর তথ্য ভাবগর্ভ বিষয় এবং বেদ-পুরাণাদি-বিধৃত শ্লোকাবলী সংযোজনায় সমলংকৃত। প্রকৃতপক্ষে এই গ্রন্থ মার্কন্ডেয় সপ্তশতী চন্ডীর সংক্ষিপ্তসার বললেও অত্যুক্তি
হয় না, তদুপরি এর মধ্যে আছে মহাশক্তি-সম্বন্ধে বৈদিক ও তান্ত্রিক তত্ত্বের ব্যঞ্জনা এবং এর
অন্তরে নিহিত রয়েছে শাশ্বত ভারতের
মর্মকথা..." মূল রচনাটি লেখা শুরু হয়েছিল হাওড়ার খুরুটের বাড়িতে --১৯ সেপ্টেম্বর ১৯১৭ । পরে হাওড়ার সাঁতরাগাছির বাড়িতেই ১৯৩১
থেকে ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত খসড়াটি চন্ডীপাঠ থেকে
বসন্তেশ্বরী ও তারপর ‘মহিষাসুরমর্দিনী’তে
পরিপূর্ণ রূপ পায় । এরপর বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য
ওরফে বাণীকুমার বাগবাজারে উঠে চলে যান।
দেশে জরুরী অবস্থা থাকাকালীন ১৯৭৬-এর ২৩ শে সেপ্টেম্বর মহালয়ার ভোরে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’কে সরিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের প্রধান ড. গোবিন্দগোপাল মুখোপাধ্যায়ের
রচনা-‘দেবীঙ দুর্গতিহারিণীম্ 'কে বিকল্প হিসেবে মহালয়ার অনুষ্ঠানে প্রচারিত করা হয় । রূপদান করেছিলেন পাঠে অভিনেতা মধ্যগগণের উত্তমকুমার ও বসন্ত চৌধুরী ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী লতা মঙ্গেশকর ও আশা ভোঁসলে এবং পরিচালনা করেছিলেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায় । এছাড়া প্রভৃতি স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ এই
অনুষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন । অনেকে
মনে করেন দেশের এমার্জেন্সির সুযোগে
কংগ্রেস নেতা প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সির মৃদু প্রভাব ছিল এই প্রোগ্রাম চেঞ্জের ব্যাপারে । যদিও এই বিষয়ে কাগজে প্রিয়রঞ্জনের নামে কোনোদিন কিছু বের হয়নি । কিন্তু ততদিনে বাণীকুমার রেডিও থেকে অবসর নিয়ে প্রয়াত হয়েছেন ।
বরং বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে আগের দিন পর্যন্ত
কিছু জানতে দেওয়া হয়নি । ১৯৬৬ থেকে রেকর্ডেড প্রোগ্রাম হলেও যে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র বরাবরের মতো শেষ ট্রামে আকাশবাণী
ভবনে , রাতেই বালিশ-বিছানা নিয়ে চলে আসতেন , তিনি কিন্তু ১৯৭৬ সালের মহালয়া বাড়িতে বসেই নতুন আলেখ্যটি শুনেছিলেন
এবং তাঁর পুত্রকে -"আক্ষেপ করে বলেছিলেন লোকে যদি নেয় নেবে তার কি বলার আছে ।" বাস্তবিক তিনি খুব দুঃখ পেয়েছিলেন কিন্তু ততদিনে বাণীকুমারও প্রয়াত হয়েছিলেন
( ১৫ আগষ্ট ১৯৭৪) তাই সমস্ত দুঃখ একলাই ভোগ করেছিলেন । কিন্তু '' মহিষাসুরমর্দিনী '' স্থানচ্যুত হওয়ায় জনরোষ ফেটে পড়ে মানুষ-জনতা । পত্র-পত্রিকায় সমালোচনার
ঝড় বয়ে যায়। পোস্টকার্ডে এবং সরাসরি হাতে করে প্রতিবাদ পত্র আকাশবাণী ভবনে ও আনন্দবাজার অফিসে লোকে সেদিনই পৌঁছে দিয়েছিল । এমনকি একদল মানুষ রেডিও অফিস ঘেরাও করে স্টেশন ডিরেক্টরের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করতে শুধু বাকি রেখেছিল । বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র বরাবরই আগের দিন একা রাত্রিবেলাতেই বেতারকেন্দ্রে চলে আসতেন
এবং ‘মহিষাসুরমর্দিনী ’ শুরু থেকে শেষ
পর্যন্ত উপস্থিত থেকে তারপরে যেতেন ।
টেপ রেকর্ডারে অনুষ্ঠান চললেও এ অভ্যাস
তিনি চালিয়ে গেছেন দীর্ঘকাল । কিন্তু ১৯৭৬
সালের পর থেকে তিনি কখনও রাত্রি বেলা
আর কখনও যাননি । ওই জরুরী অবস্থার সময়েই অপসারিত হন পঙ্কজকুমার মল্লিক ‘সঙ্গীত শিক্ষার আসর’ থেকে । অবশ্য জনসাধারণের চাহিদাকে মর্যাদা দিতে সেবছর ষষ্ঠীর দিন পুণরায় বাণীকুমারের রচনার সম্প্রচারিত হয় পুরনো এবং চিরদিনের ‘মহিষাসুরমর্দিনী ।’ আর ১৯৭৭ থেকে স্বমহিমায় মহালয়ার ভোরে আবার ফিরে আসে সেই আদি অকৃত্রিম ‘মহিষাসুরমর্দিনী।’ ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ অনুষ্ঠানটি রচনা ও তরঙ্গায়িত করে বাণীকুমার যে আসাধারণ কাজটি করেছিলেন পরবর্তীতে স্টেশন ডিরেক্টর দিলীপকুমার সেনগুপ্ত সে
প্রসঙ্গে বলেছেন – –“বাণীকুমার যদি আর
কোনো কাজ নাও করতেন, তাহলেও শুধু - ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র জন্য মহালয়ার ‘নেপথ্য নায়ক’ হিসেবে চিরকাল অমর হয়ে থাকতেন ,
তাঁর কলম থেকে নিঃসৃত ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ বাঙালি সংস্কৃতির মজ্জায় মজ্জায় থেকে গেছে"।
যে বাণীকুমারের মহিষাসুরমর্দিনীর বেতার সংস্করণ বঙ্গবাসী শুনতে পেয়েছিলেন এক অপ্রত্যাশিতভাবেই সেইতুল্য খ্যাতি স্বনামধন্য বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য ওরফে বাণীকুমারকে আজও
দেওয়া হয়নি । সবচেয়ে বিস্ময়কর অনেকেই আর তাঁকে মনে পর্যন্ত রাখেননি ,চেনা তো
দূরের কথা । এর একটি বিশেষ কারণ তিনি ছিলেন আকাশবাণীর একটি বিভাগের প্রযোজক
তাই বেতার জগৎ পত্রিকা ও অন্যান্য পত্রিকায় বাণীকুমার সম্পর্কে তেমন কোনো আর্টিকেল
না বেরনোর ফলে তিনি চিরকাল পর্দার পেছনে রয়ে গেছেন। নবীন প্রজন্মের কেউই তাঁর
সম্পর্কে কিছুই জানেন না । এমনকি তার
একক ও সম্মিলিত কোনো ভালো ফটোগ্রাফও কোথাও এখন পাওয়া যায় না । বাণী কুমারের ডায়রিতে ১৯৩২ সাল থেকে ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত মহিষাসুরমর্দিনীকে নানাভাবে ভাঙাগড়ার ইতিহাস যা ছিল তা আজ কোথায় আছে ঠিকমতো কারো জানা নেই এবং ওই প্রারম্ভিক সময়ে অজস্রবার বাণীকুমার তার স্ক্রিপ্ট ও গানের সময়ের কিছু পরিবর্তন করেছিলেন
যেটা বঙ্গীয় সমাজ কখনও ধরতে পারেনি । বাণীকুমারের সাহিত্যিক নাতি চন্দ্রিল ভট্টাচার্য এক জায়গায় বলেছেন-" তার ঠাকুরদা কখনও কম্প্রোমাইজ করেননি,তার ডায়রিতে প্রতিবারই কিছু পরিবর্তন করতেন তাঁর সাধের মহিষাসুরমর্দিনীর । আসলে ওটা তিনি একটি মিথ তৈরি করে গেছেন প্রায় যা টানা ২৮ বছর লাইভ প্রোগ্রাম চলেছিল।" সত্যি এটা ভাবলে আমাদের অবাক লাগে --সরস্বতী সঙ্গীত বিচিত্রা দিয়ে "বেতার বিচিত্রা" নামের অনুষ্ঠানটি বাণীকুমার প্রোডিউসারের ভূমিকায় ১৯৩১
থেকে টানা ২১ বছর তিনি চালিয়ে গেছেন ।
ইতিমধ্যে হাওড়ার সাত্রাগাছি থেকে বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য একসময় নতুন বাড়ি করে উঠে গিয়েছেন সেকথা বলেছি,কলকাতার বাগবাজার স্ট্রিটের কাছে ৪৭/১ বোসপাড়া লেনে ।
বর্তমানকে চেনাতেই হয়তো গত ২০১৭ সালে
ওই চৌমাথার মোড়ে কলকাতা কর্পোরেশনের স্থানীয় কাউন্সিলর বাপি ঘোষ ও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে একটি স্মৃতিরক্ষা কমিটি গড়ে মর্মর মূর্তি বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয় । অথচ ওই এলাকায়
এতদিন তাঁর নামে কোনও স্মারক পর্যন্ত ছিল
না বলেই স্থানীয় বাসিন্দাদের মত । আপামর বাঙালির কাছে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ বলতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের নামই সর্বাগ্রে উঠে আসে , হয়তো তাই নেপথ্যে চলে যান বাণীকুমার
ওরফে বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য । ২০১৭-তে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্যর জন্য ওই মূর্তি বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছিল গত বছর তার বাগবাজারের বাড়ির কাছে । প্রসঙ্গত জানা
যায় যে বাণীকুমারের পুত্র নৃসিংহকুমার
ভট্টাচার্য বর্তমানে কেষ্টপুরের বাসিন্দা ।
তাঁর নাতি স্বনামধন্য লেখক চন্দ্রিল ভট্টাচার্যের কথা আগেই বলা হয়েছে । গত মহালয়ার
দিনই ওই মূর্তি বসানো সম্পূর্ণ হয়েছে বলে
বাপি ঘোষ কাউন্সিলর সংবাদপত্রে জানিয়েছিলেন । এই সঙ্গে আরও জানা
যায় স্কুল বয়সে বাণীকুমার যেখানে থাকতেন , মধ্য হাওড়ার খুরুট ধর্মতলাতেও বাণীকুমারের পূর্ণাবয়ব একটি মূর্তি বসানো হয় গত
সেপ্টেম্বর ১৯১৭তে । মধ্য হাওড়ার খুরুট
ধর্মতলা বারোয়ারী তলায় ওই মূর্তির আবরণ উন্মোচন করেন স্বনামধন্য সঙ্গীত শিল্পী
শ্রী দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় ও প:ব: সরকারের
ভারপ্রাপ্ত সমবায় রাষ্ট্রমন্ত্রী শ্রী অরূপ রায়
মহাশয় । উপস্থিত ছিলেন হাওড়া কর্পোরেশনের মেয়র ও মেয়র পারিষদ যথাক্রমে
ডা: রথীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ও শ্যামল মিত্র
মহাশয় , এঁদের উদ্যোগেই হাওড়ার মূর্তিটি
স্থাপিত হয়েছে বলে শোনা যায় । ইতিমধ্যে
গঙ্গার অনেক জল গড়িয়েছে অবশেষে
১৯৭৯ বের হলো বাণীকুমারের জীবনের
সেরা কাজের সিডি । এইখানে একটু জানানো
দরকার "দেবিঙ দুর্গতিহারিনিম্ " কিন্তু কিছু
দিন আগে পর্যন্ত রেডিওতে ১৯৭৭ সাল
থেকে মহা ষষ্ঠীর সকালে আকাশবাণী থেকে
সম্প্রচার করা হতো , কারণ মহিষাশুরমর্দিনীর
কাছেপিঠে না আসতে পারলেও সেটির
সঙ্গে উত্তমকুমার হেমন্ত লতা এবং এইচএমভির
সত্ত্বা জড়িয়ে ছিল লঙ-প্লেইঙ রেকর্ডও ছিল ।
আবার ফিরে আসি আমার মূল আলোচ্য
বিষয় বাণীকুমারের প্রসঙ্গে । যদি আরও
কিছু পিছিয়ে যাই তাহলে দেখতে পাই ,
কলেজে পড়তে পড়তে তিনি জড়িয়ে পড়েন তৎকালীন সাহিত্য জগতের সঙ্গে ।
প্রেসিডেন্সী কলেজ ম্যাগাজিনে, প্রকাশিত
হয় মহাকবি ভাস রচিত "শোণিত পারণা" নাটকের বঙ্গানুবাদ । অধ্যাপক অশোকনাথ
শাস্ত্রী কৃত এই বঙ্গানুবাদ নাটকের রূপারোপ করেছিলেন বাণীকুমার। এই রূপারোপ সম্বন্ধে অশোকনাথ শাস্ত্রী , এই নাটকের মুখবন্ধে লিখেছিলেন- " সংস্কৃত দৃশ্যকাব্যে কেবল অঙ্কবিভাগ আছে---দৃশ্যবিভাগ নাই । কিন্তু সাধারণের বোঝার জন্য , বাণীকুমার
দৃশ্যবিভাগ তৈরি করে দিয়েছিলেন ।
কলেজে পড়ার সময়ই এই সম্মান
বাণীকুমারকে সাহিত্যে আরও আগ্রহী করে তোলে । নাটকের panorama scene এর
দর্শনীয় প্রেক্ষিতটি বাণী কুমারের ওই সময়েই তৈরি হয়ে যায় । পিতা নিজে পণ্ডিত-সাহিত্যিক হলেও ছেলের সাহিত্যচর্চাকে খুব একটা সুনজরে দেখেননি । তাই স্নাতক হবার পরই সংসারের দিকে মন ফেরাতে বিবাহ সম্পন্ন করে দেন পুত্র বাণী কুমারের । বৈদ্যনাথ ছদ্মনামেই যাবতীয়
সাহিত্য রচনা করে গেছেন। সংসারের
প্রয়োজনে মহিষাশুরমর্দিনীর লেখককে
চাকরি নিতেও হয় কলকাতার টাকশালে
একথাও জানানো হয়েছে । ১৯২৭ সাল ১নং গাস্টিং প্লেসের যখন ইংরেজদের নতুন গণমাধ্যমের কর্তারা তখন নিত্যনতুন অনুষ্ঠান নির্মাণের জন্য লোক খুঁজছিলেন
আর তখনই এই সূত্রেই ওই সময়ে একটি বেতারনাটকের সূত্রে কলকাতার বেতার
কেন্দ্রের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ হয়ে যায়। বাণীকুমার তার লোভনীয় টাকশালের চাকরি ছেড়ে ১৯২৮ সালে যোগ দেন ভবিষ্যতহীন রেডিওতে । টাকশালের স্থায়ী সরকারি চাকরি ছেড়ে, রেডিওর চাকরির অনিশ্চয়তার পথে পা বাড়ানো বিফলে যায়নি বাণীকুমারের । সেই যুগের রেডিওর প্রায় সমস্ত অনুষ্ঠান-বিভাগেই ছিল তাঁর ঐকান্তিক উদ্ভাবনার পরিচয় । ১৯৩১-এর জানুয়ারিতে “সরস্বতী সঙ্গীত বিচিত্রা” দিয়ে “বেতার বিচিত্রা” অনুষ্ঠানের সূচনা। এই বিভাগেই বসন্তেশ্বরী অনুষ্ঠানের রচনা ও চন্ডীপাঠ করেছিলেন বাণীকুমার নিজেই ।
রাইচাঁদ বড়াল ছিলেন তার সুরকার ও
বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র ছিলেন গদ্যাংশ কিছু
শ্লোক পাঠে এবং সংযোজনায় ।
তা ছাড়াও তাঁর প্রযোজনায় সম্প্রচার করা
হয়েছে আরও বহু জনপ্রিয় বেতার অনুষ্ঠান। ১৯৩২ সালে রচিত হয় শারদ-আগমনী গীতি-আলেখ্য দেবীপক্ষের সূচনার বার্তা বহন করতেই করা হয়েছিল । কলকাতা বেতার কেন্দ্রে অসংখ্য অনুষ্ঠান করলেও বাণীকুমার ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রকে মানুষ মনে রেখেছে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-র জন্য। পঙ্কজ মল্লিক
অবশ্য বহুমূখী প্রতিভাধর ব্যক্তি ছিলেন,
যিনি বম্বে-বাংলা সিনেমার জনপ্রিয় সুরকার গায়ক নায়কও ছিলেন । কিন্তু তবু যেন ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-র জন্য এখনও এই ত্রয়ীকে একই ফ্রেমে আমাদের মনে পড়ে যায় । কিন্তু তবুও বাণীকুমার ওই দুজনের থেকে অনেকটাই আজ অবহেলিত। বাণীকুমার নিজের লেখাতেই জানিয়েছেন,‘‘এ-কথা বলা বাহুল্য যে,
আমাদের কয়জনের আন্তরিক সাধন-দ্বারা
এই মহিমাময় চণ্ডী-গাথা সকল শ্রেণীর
জনবর্গের প্রশংসনীয় হয়েছে ।...
‘মহিষাসুরমর্দিনী’ কলিকাতা বেতারের তথা বাঙালায় একটা কীর্তি-স্থাপন করেছে । ’’
বলাই যায় বেতার সম্প্রচারের ৯০ বছরের ইতিহাসে এই রকম অনুষ্ঠান আর
দ্বিতীয় নির্মিত হয়নি, যার জনপ্রিয়তার ধারে কাছে আজ পর্যন্ত কোনো অনুষ্ঠান আসতে পারেনি । ইতিপূর্বে বলেছি ১৯৭৬-এ আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ একবার ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ বাতিল
করে দিয়ে মহানায়ক উত্তমকুমারকে দিয়ে
ভাষ্য পাঠ করিয়ে নতুনভাবে এই অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন যার নাম ছিল “ দেবীঙ দুর্গতিহারিণী”, কিন্তু সেই পরিবর্তন বাঙালী
মেনে নেয়নি। অনুষ্ঠান শেষে ব্যাপক জনরোষ দেখা দেয়। মজার ব্যাপার ছিল এই যে এই
নতুন অনুষ্ঠানের নেতৃত্বে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা সকলেই সেই সময়কার সাংস্কৃতিক-জগতের
অতি নমস্য ও জনপ্রিয় ব্যক্তি! তা সত্ত্বেও প্রত্যাখ্যানের সুর এতটাই চড়া ছিল যে
খ্যাতির মধ্যগগনে থাকা মহানায়ক
উত্তমকুমারকে ব্যাপক তিরষ্কার হজম
করতে হয় তার অগণিত ভক্তের কাছ থেকে।
শেষে উত্তমকুমারকেও ক্ষমা চাইতে হয় ।
সেই ‘জরুরী অবস্থা’-র জমানাতেও জনগণের প্রবল প্রতিবাদে মহাষষ্ঠীর সকালে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ সম্প্রচার করতে বাধ্য
হয়েছিল সরকারি প্রচার মাধ্যম ‘আকাশবাণী’। পরের বছর থেকে আবার ফিরে আসে বাণীকুমার-পঙ্কজকুমার মল্লিক-বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। বাঙালি প্রজন্মের পর প্রজন্ম বিনা বিজ্ঞাপনেই এই অনুষ্ঠান শুনে চলেছেন ! এটা একটা বিস্ময়কর ও অভাবনীয় ব্যাপার । ১৯৭৬ এর সেই মহালয়ার সকালে
ক্ষুব্ধ রেলকর্মীরা যাত্রিদের জন্য হাওড়া স্টেশনেরর মাইকে ওল্ড ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-
তাদের ক্যাসেট চালিয়ে দিয়েছিলেন এবং
হাওড়া স্টেশনের উপস্থিত যাত্রীরা যেন প্রাণে
বেঁচেছিলেন । প্রতি বছর গঙ্গায় তর্পন করতে আসা অগণিত যাত্রীর জন্য রেল কর্তৃপক্ষ
বরাবর ওই মহিষাসুরমর্দিনী চালিয়ে থাকেন সরাসরি রেডিও থেকে । বিভিন্ন সংবাদপত্র
থেকে জানা যাচ্ছে যে গতবছর ২০১৭ তে
আকাশবাণী থেকে যে মহিষাসুরমর্দিনী
অনুষ্ঠানটি শোনা গিয়েছিল সেটি ছিল ১৯৬৬
সালে সম্প্রচারিত হওয়ার আগের রিয়ার্সালের
খসড়া । যা আকাশবাণীর বর্তমান অধিকর্তা
ও অন্যান্যদের মনে হয়েছে বাণীকুমারের
নানা সময়ের খসড়া ও বহুলাংশে প্রচারিত এবং
এটাই সবচেয়ে সৌন্দর্যমন্ডিত (১৯৭৩ এর সংস্করণ যা থেকে রেকর্ড,সিডি ইত্যাদি
হয়েছে এবং যেটি শুনে থাকি আমরা ) ।
১৯৬৬ সালের খসড়াটি বাণীকুমারের
সবথেকে সুন্দর রচনা । তাই এবছরও ওই খসড়াটিই ভোর চারটার ৮/১০/১৮ সোমবার
সম্প্রচার করা হয় । আকাশবাণীর তথ্যসংগ্রহকারী নিখিলরঞ্জন প্রামাণিক এবং বর্তমান (২০১৮) স্টেশন ডিরেক্টর শ্রী সৌমেন
বসু ওই খসড়াটিকেই সর্বশ্রেষ্ঠ বলেছেন ।
তবে সেই ১৯৩২-৩৩ এ মহিষাসুরমর্দিনীর রেডিওর যিনি কপিয়েস্ট ছিলেন তিনি তিরিশের দশকের থেকেই (শ্রীধর ভট্টাচার্য ) প্রতিটি লাইভ প্রোগ্রামের কপি প্রতিটি শিল্পীকেই সরবরাহ করতেন বলে অনেক কপি করতেন ।
একইসঙ্গে তিনি খসড়া গুলিও নিজের কাছে রাখতেন । তার পুত্র সনৎ ভট্টাচার্যের কাছ
থেকে এই মহামূল্যবান খসড়াটি গত দু'বছর আগে পাওয়া গেছে যা বাণীকুমারের মহিষাসুরমর্দিনীর একটি কিছুটা পরিবর্তিত
( এডিট করা) কপি । ফিল্মের সাহায্যে এই
কপি করা হতো বলে মনে করা হচ্ছে । মহিষাশুরমর্দিনী সম্পর্কে অনেক বাস্তব
কাহিনী লোকমুখে চালু আছে । বীরেন্দ্রকৃষ্ণ
ভদ্র ও বাণীকুমার দুজনেই দুটি ধার্মিক
পরিবার থেকে রেডিওতে এসেছিলেন যার
ফলে মহিষাসুরমর্দিনী সম্পর্কে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ
ভদ্র সকলকে বলতেন আমি ব্রাহ্মণ সন্তান
না হলেও কিন্তু ঐকান্তিক ভাবে ওই সময়ে শ্লোকগুলি যেন আমার কাছে মন্ত্রের স্বরূপে
দেখা দেয় । তিনি সমস্ত শিল্পীকে অত ভোরে
স্নান ও গঙ্গায় স্নান করে গরদ বস্ত্রে
আকাশবাণীতে প্রবেশের একটি প্রথা করে দিয়েছিলেন । অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ও প্রযোজনা বাণীকুমারের হলেও শ্রী বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র
অনেকটা দায়িত্ব নিতেন কারণ তখন বাঙালির
মন আজকের মতো এতটা বিষিয়ে যায়নি ।
ফুল মালা দিয়ে সেদিন রীতিমতো
সাজানো হতো ধুপধূনো জ্বালিয়ে পরিবেশ
আগে থাকতেই একটা শুদ্ধিকরণ প্রক্রিয়ার
মধ্য দিয়ে তৈরি করে তবে আসরে বসতেন
বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র । কোনো অনুষ্ঠানটি যে
একটি পবিত্রতার অঙ্গ হতে পারে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র সেটি সকলকে শিখিয়েছিলেন । কিন্তু এই
আয়োজন না হলেও হয়তো মহিষাশুরমর্দিনীর
কোনো প্রকার ভেদরেখা তৈরি হতো না কারণ সেই হিসেবে বাঙালি এই প্রভাতী অনুষ্ঠানকে কখনও পুজো-অর্চনা করার মতো একটা বিতর্কিত গোঁড়ামির পর্যায়ে নিয়ে যায়নি ।
সে কারণে বীরেন্দ্র ভদ্র মশাই নিজে আকাশবাণীতেই আগের রাতে শেষ ট্রামে
চলে এসে বিশ্রাম নিয়ে , রাত দুটোতেই তৈরি
হতে শুরু করতেন । এমনকি মুসলমান বাজনদাররা পর্যন্ত হাসতে হাসতে অক্ষরে
অক্ষরে সেই নিয়মাবর্তিতা মেনে চলতেন ।
আসলে কাজের প্রতি সম্মান বোধ এত তীব্র
ছিল বলেই আজও এই সম্প্রচার স্রোতস্বিনী ।
বাণীকুমার প্রসঙ্গে আবার ফিরে আসি
তার পুত্র নৃসিংহকুমার ভট্টাচার্য লিখেছেন-
" তাঁর বেতার নাট্য রূপান্তর , পরশুরামের
চিকিৎসা সাধন নাটকটি বেতারস্থ হওয়ার
পরই তৎকালীন বেতার অধিকর্তা তাকে
বেছে নেন সেটা ছিল ১৯২৮ । ১৯৩২-১৯৩৬
এই পাঁচ বছর ছিল আঁতুড়ঘর । ১৯৩৭
প্রথম তার লক্ষ্য স্থির করে কিন্তু যেহেতু
১৯৩২ থেকে এর নানা প্রক্রিয়ায় শুরু তাই
আকাশবাণী কর্তৃপক্ষ ১৯৩২ কে প্রতিষ্ঠা দিবস
হিসেবে ধরে নেন । বসন্তেশ্বরী হিসেবেই ষষ্ঠীর সকালে রেডিওর বিশেষ প্রভাতী অনুষ্ঠান হয়েছিল । পন্ডিত অশোকনাথ শাস্ত্রী মহাশয়ের পরামর্শে ১৯৩৭ সালে বাণীকুমারই নাম
পরিবর্তন করে -মহিষাসুরমর্দিনী নাম দেন
ও সেইসঙ্গে সংস্কৃত উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে
তার অনুবাদ গ্রন্থনার উপর জোর দেওয়া
হয় । শিল্পী ও কলাকুশলীদের বাড়ি থেকে
তুলে নিয়ে আসা হতো , আকাশবাণী গাড়ি পাঠাতো । এক একটি গাড়িতে ৩/৪ কে আনা হোত । এক কথায় বলা যায় বৃটিশ সরকারের পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা ছাড়া যে এরকম অনুষ্ঠান
করা অসম্ভব ছিল সেকথা বলাই বাহুল্য ।
তবে ১৯৩১ সালে প্রাথমিক ভাবে যে চন্ডীপাঠের অনুষ্ঠানটি হয়েছিল সেখানে সুর দিয়েছিলেন রাইচাঁদ বড়াল । রচনা ও তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে বাণীকুমার শ্লোকগুলি উচ্চারণ করেছিলেন
তিনি নিজে আর কিছু গদ্যাংশ ও স্তোত্রপাঠ
এবং সংযোজনা করেছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ
ভদ্র । বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র বলেগেছেন - " বাণীকুমার স্বল্প দৈর্ঘ্যের নাটিকা আলেখ্য ও বেতার উপযোগী সহস্রাধিক রচনা লিখে
গেছেন । বেতারে মহিষাসুরমর্দিনী সম্প্রচার
করার আগে বাণীকুমার লিখেছিলেন-" বসন্তেশ্বরী"যা লিখতে সময় লেগেছিল
দু বছর তখনও তিনি হাওড়ার সাত্রাগাছিতেই থাকতেন যা ১৯৩২ সালে প্রথম সম্প্রচারিত হয়েছিল । মার্কেন্ডেয় পুরাণের দেবীস্তুতি থেকে তিনি পুণরায় মহিষাসুরমর্দিনীও রচনা করেছিলেন। ব্যাসের মার্কেন্ডেয় পুরাণের ৭০০ কাব্যাঞ্জলি থেকে সমস্ত বাঙালির কাছে মা
দুর্গার স্থিতি প্রলয়কে এই অল্প কিছু শ্লোকের মাধ্যমে এবং বঙ্গানুবাদ সহ নির্বাচন করে তার
সঙ্গে উপযুক্তভাবে গীত রচনা করে পরিবেশন
করা খুব একটা সহজ ছিল না । প্রথমে রাইচাঁদ বড়াল পরে পঙ্কজ কুমার মল্লিক ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সঙ্গে বসে একটি মহাকাব্যের নির্যাসটুকু আম জনতার দুর্গার বিশ্বাসের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া মাত্র ৯০ মিনিটে মধ্য সেটাও বোধহয়
খুব কঠিন ছিল , যা কিনা ব্যাসদেব রচনা করেছিলেন আদিযুগে ( ৪০০-৬০০ এ.ডি.-এর মধ্যে) যা ৫.৩০ টায় বদলে ১৯৫০ থেকে
টানা ভোর ৪.০০ তে সম্প্রচারিত হয়ে থাকে
এবং যা সরাসরি ১৯৬৫ পর্যন্ত ২৯ বছর সম্প্রচারিত হতো । মোট গানের সংখ্যা-১৮ ।
তার মধ্যে সংস্কৃতে লেখা গান ৪ খানি ও বাংলা-১৪ । ফোক, ক্লাসিক্যাল ও আধুনিক
সুরের মূর্ছনায় যা চিরজীবী হয়ে ওঠে ।
১৯৩৭ থেকে পাকাপাকি ভাবে এই প্রোগ্রামটি
৯০ মিনিটের গ্রীন সিগন্যাল পেয়ে যায় ।
দেবী পক্ষের শুরুতে স্তবস্তুতির মাধ্যমে
বেতারে দেবীর বোধন করা যায় কিনা সে বিষয়েও কথা উঠেছিল কিন্তু যেহেতু অধ্যাপক অশোকনাথ শাস্ত্রী মহাশয়ের মত ছিল তাই
তখনকার রেডিও কর্তৃপক্ষ সেটি বৈদ্যনাথ
ভট্টাচার্যের উপরই ছেড়ে দিয়েছিলেন ।
একবার অশোকনাথ শাস্ত্রীর অনুরোধে
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের আনন্দমঠের নাট্যরূপ
দিয়েছিলেন বাণীকুমার এবং তার নামকরণ করেছিলেন-" সন্তান ।" বিষয়টি বাণীকুমারকে একই সঙ্গে ব্যথিত করেছিল ও বিখ্যাত
করেছিল। কারণ সেখানে একটি পত্রিকা থেকে
বন্দেমাতরম্ গানটির উপর ও নাটকটির কিছু
সংলাপের উপর তারা আপত্তি তোলেন এবং
বৃটিশ সরকারের নির্দেশে বেশকিছু অংশ
বাণী কুমারকে বাদ দিতে হয়েছিল । এটি
হয়েছিল বাণীকুমারের নাট্যরূপ নির্দেশনায় রঙমহলে । এছাড়াও বাণীকুমার পরবর্তী
সময়ে রেডিওতে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বেঁচে
ছিলেন । সিনেমার গানও লিখেছেন ।
(All rights reserved by Alok Kundu
ছবি বাগবাজারের কাছে যেখানে বানী কুমার থাকতেন । রেডিওতে সেকালের কিছু ছবি । একসঙ্গে বাণীকুমার পঙ্কজকুমার ও বীরেন্দ্র ভদ্র । হাওড়ার খুরুটে ২০১৭ উদ্বোধন করার দিন মন্ত্রী অরূপ রায় ও
দ্বিজেন মুখোপাধ্যায় । হাওড়ার খুরুটের
মূর্তি । রাইচাঁদ বড়াল ও সহশিল্পী।
পঙ্কজকুমার ও সহশিল্পী । মহিষাশুর্দিনীর
টিম । মহালয়া শুনছেন । কয়েকটি প্রামাণ্য
ছবি ।)
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)
প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু
#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...
-
বড় চমক, বাংলা থেকে এনডিএর-র উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী ●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●● গত তিন বছর বিভিন্ন ইস্যুতে মমতা সরকারকে নিশানা করেছেন ব...
-
⛔ এটা ২৮ ডিসেম্বর, ১৯৯৭-এর 'বর্তমান' খবর কাগজ। বরুণ সেনগুপ্ত'র আগাগোড়া ১০০% সমর্থন তখন। জিতেন্দ্রপ্রসাদ এসে সোমেন মিত্রকে নিয়ে...
-
#অলোক_কুন্ডুর_লেখালিখি_ও_কবিতা #CoronavirusLockdown #COVID19PH #COVID19 #CoronavirusPandemic #coronavirus #ভিটামিন_সি ■ বিজ্ঞানী ইন্দুভূষণ ...