মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০
অলোকের ঝর্নাধারায় : আমার টুকরো জীবন
■ অলোকের ঝর্নাধারায়-১
দরলাঘাট, হোটেল বাগেলা
■ সেবার মানালি থেকে সিমলা ফিরবো ৩০/১২/০৭। ৩১.১২.০৭- এ আগে সিমলাতে গিয়ে ওখান থেকে কুফরির একটা গ্রামে গেলে তবেই জানতে পারবো ৩১.১২.২০০৭-এর ফেরার ট্রেনের টিকিট জুটেছে কিনা। ওখানে একটি ট্যুর পার্টির এজেন্টের কাছে সিমলা থেকে হাওড়ার আমাদের ফেরার ট্রেনের টিকিট আছে। হিমালয় ক্যুইনে কালকায় বদলিয়ে ফেরার টিকিট স্পিডে পৌঁছে গেছে জানতে পারলাম ২৯.১২.২০০৭-এর রাতে। বহু কষ্টে শেষে ফোনে খবর পেলাম। হঠাৎ করে দেরিতে মানালি আসার সিদ্ধান্তে, আমাদের ফেরার টিকিট কেটে নিয়ে আসতে পারিনি। শুধুমাত্র আসার টিকিট পেয়েছি। ইতিমধ্যে দুবার মানালি আসা হয়ে হয়ে গেছে। এইবার মানালি এসেছিলাম ২৭/১২/০৮-এ। আগের দিন মানালিতে স্নোফল হয়ে গেছে। ভাগ্য এমন খারাপ যে পরে আর তা পাওয়া গেল না। তবে সোলানভ্যালিতে প্রচুর বরফ পড়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে চলে আসার জন্যে মানালিতে কালীঘাটের ভিড় যেন। থিক থিক করছে বাঙালি এমনকি আমার পাড়ার তিনটে পরিবারের সঙ্গে পর্যন্ত দেখা হয়ে গেল। সকলেই ভয় দেখাচ্ছে সিমলাতে ৩০.১২-তে কোনও ঘর নেই। একটা বাথরুমে থাকলে তার ভাড়া ২০০৭-এই ৪০০০/৫০০০ এক রাত। মহাসমস্যায় পড়লাম। ৩১.১২-তে প্রতিবছর সারারাতের ফ্যাংশন হয় ম্যালেতে, অন্তত একদিনে একলক্ষ লোক দিল্লি চন্ডিগড় ও নিচ থেকে হুল্লোড় করতে উপস্থিত হয়। সে যে কি হুলুস্থুল কান্ড চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা মুস্কিল। দলে দলে ছেলেরা পোর্টেবল মাইক মিউজিক সেট, ব্যান্ডপার্টি আরো কত কি সঙ্গে চলেছে। কালীবাড়িতে চেনা থাকলেও মেঝেতে কম্বল মুড়ি দিয়ে কতজন পড়ে থাকবে তার কোনও ঠিক নেই। চার কিমি দূর পর্যন্ত আশেপাশের সব বাড়ি হোটেল ভর্তি ৩০ ও ৩১ তারিখ প্রতিবছরে। এটাই হয়ে আসছে। ২৯.১২তে গিয়ে পড়লাম মানালির ট্যুরিস্ট অফিসে। কি হবে আমাদের? অনেক কথার পর একজন স্টাফ দিশা দিলেন একটা। তবে সেটা মানালি সিমলা রোড থেকে ফেরার পথে একটু ঢুকে দরলাঘাটে ( সোলান জেলার মধ্যে পড়ে) ওদেরই ( hptdc) ট্যুরিজমের হোটেল ও অ্যাকোমোডেশন, "হোটেল বাগেলা।" সোলান জেলা তে পড়ে জায়গাটা হলো- দরলাঘাট। ওখান থেকে ওরা মানালি থেকে সিমলা ফেরার একটা গাড়ি ভাড়া ও বুক করেদিল। তবে গাড়ি আমাদের ৪৫ কিমি দূরে আগেই নামিয়ে দিয়ে চলে যাবে। খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা ভালো। সিমলা মানালি হাইওয়েতে না হলেও একটু ঢুকলে এদের রেস্টুরেন্টের নামডাক আছে। থাকাও এলাহি। কিন্তু ধারেকাছে সিমলা ফেরার গাড়ি পাওয়া মুস্কিল। সিমলা ফিরতে গাড়ির ড্রাইভারকে দু তরফের ভাড়া গুনে দিতে হবে। ৪৫ কিমি দূর যদিও খুব একটা দূর নয় কিন্তু আমাদের সিমলা পেরিয়ে কুফরির গ্রামে একবার যেতে হবে টিকিট সংগ্রহ করতে। যাইহোক ওইখানে নির্জনতা একেবারে পেয়ে বসেছে জায়গাটায়। শীতে বরফও পড়ে। হোটেলের পেছনে বাগান আছে তবে ইয়া উঁচু মোটা জালের পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। বন্যজন্তু বিশেষ করে শিয়াল,হনুমান বন্য কুকুর ভাল্লুক সাপ খড়গোস, বেঁজি পাখিদের কচিৎ দেখাও মিলে যায়। বড় বড় ঢালা কাঁচের জানলা হোটেলের ঘরের পেছেনের বাগানের দোলনাজুড়ে রোদে দোল খাচ্ছে সেখানে। কিন্তু আশেপাশে কোনও দোকান বাজার স্কুল হাট কোনও কিছুই নেই। কাছাকাছি ছোট গ্রাম থাকলেও দু একটা মাত্র গাড়ি তাদের আছে। তবে হোটেলের ম্যানেজার বুক করে গাড়ি আনিয়ে দেবে সে বিষয়ে খুব একটা চিন্তা নেই। কিন্তু ৩১ তারিখ সকাল সকাল না বের হলে বিশাল জ্যামে পড়ে যাবো আমরা, দুপুরে ফেরার ট্রেন। একেবারে হনিমুন পারপাস জায়গা বটে। হোটেলে লোকও খুব কম। অনেক সময় মিটিং পারপাস গ্রুপ বুকিং এখানে আসে। রেস্টুরেন্টে বিলিতি মদ পাওয়া যায়। লাউঞ্জে বসে দু একজনকে খেতে দেখলাম। এদিকটা একেবারেই অচেনা জায়গা আমাদের ড্রাইভারেরও। কোনও ভাবে গাড়ি পৌঁছলে খাওয়া ও থাকার জন্যে বুকিং হয়। সিমলায় হোটেল না পেয়ে hptdc-র কয়েকজন বোর্ডার এখানে উঠেছেন দেখলাম। বেঁচে গেছি দলে দলে এই ৪৫ কিমি দূরে আর কেউ উড়ে আসেনি। হোটেলটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং পরিবেশ সুন্দর হলেও দৃশ্যপট খুব একটা এখান থেকে দেখা যায়না। পাইন-ফার বা শীতের গাছপালার সেই পরিবেশ ওইখানে নেই। দূরের পাহাড়টা এখান থেকে বহুদূরে। অস্পষ্ট মায়াবী। হোটেলটা একটা উঁচু পাহাড়ের মাঝখানে যার ফলে পেছনের জঙ্গল ও পাহাড়ের উঁচুটা কতদূর বোঝা যায়না। সাধারণত হোটেলটি বিয়ের মরসুমে সেই পারপাসে সরগরম হয়ে ওঠে। বাইরেটা কিছুটা পুরনো আমলের হলুদ এলা রঙের ছিল তখন কিন্তু বর্তমানে রঙটঙ পাল্টেছে। উঁচুও হয়েছে। হোটেলের ভেতরটায় ডাইনিং হল ও ঘরগুলোকে বেশ কয়েক বছর আগে আধুনিক করা হয়েছে। সাদা ধবধবে চাদরে মোড়া বিছানা দেড়ফুট উঁচু ও নরম। রাতে বেশ ঠান্ডা এক্সট্রা কম্বল আলমারিতে দেওয়া আছে। টিভি আছে। গরম ঠান্ডা জলের কোনও প্রবলেম নেই দোতলায় থাকার ব্যবস্থা। সার সার ঘর। বেশ বড় ঘর। একতলায় কিচেন, বড় ডাইনিং, পোর্টিকো, বাগান, অফিস লাউঞ্জ। হোটেলের সামনে পরিষ্কার পিচেমোড়া রাস্তা সারাদিনে সিমলা থেকে অন্য কোথাও বাস যাতায়াত করে গোটা ৬-য়েক। এত কিছুই মানালি থেকে জানা যায়নি। বাকিটা এসে দেখা গেল। কিন্তু ওরা মানালি থেকে আমাদের জন্য ফোন করে বলে দিল আর বুক করে দিল। হাতে আকাশের চাঁদ পাওয়া কেন তা পরে বলতে থাকবো। সিমলায় গ্যারেজওলা গাড়ির এক ড্রাইভার পেয়ে গেলাম তবে অ্যাম্বাসাডার। আমাদের পৌঁছনোর কথা। গাড়ির কার্যকারিতা দেখবার জন্য নয়। ওই ড্রাইভার বাগেলাতে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল যখন তখন বিকাল এবং তারিখ হলো গত ৩০-শে ডিসেম্বর ২০০৭। সাধারণত বিদেশীরা এইসব হোটেলে এসে থাকে। কারণ সিমলা আর মানালির সরকারি হোটেলের থেকে এখানে রেট অনেকটাই মডারেট।
গাড়িটা চলে যেতে যেন মন খারাপ হয়ে গেল। সে মন খারাপ বুঝি বিয়ের পর মেয়েদের প্রথমদিকে বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছনোর মতো। কেউ কোথাও নেই। এমনকি একটা রাস্তার এমন বাঁকে হোটেলটা এমন একটা এল টাইপের জায়গায় যে রাস্তার দুটো প্রান্ত কোথায় যে পৌঁছলো তা বোঝার ঠিক উপায় নেই। যেন সারা পৃথিবী থেকে একে লুকিয়ে রেখেছে। পৌঁছে গরম জলে গা ধুয়ে ডাইনিং-এ গরম গরম মশলা চায়ের সঙ্গে রোস্ট করা লম্বা লম্বা আলু ভাজা আর বাঙালি টাইপ পরটা আর মাখনে ভাজা টোস্ট ও ওমলেট মিলিয়ে মিশিয়ে মুখে মিলিয়ে যেতে থাকলো। গাড়ির সামান্য ধকল ও সারাদিনের কি হয় কি হয় অবস্থা ততক্ষণে চলে গেছে। মহিলা রাঁধুনিরা অতিরিক্ত চায়ের আব্দার মিটিয়ে হাসিমুখে জেনে নিয়েছে তাদের তৈরি খাবারের গুণগত মান ঠিক মতো ছিল কিনা? পরের দিন বাসে করে যাবো বলে মনস্ত করেছি সিমলা। কিন্তু ঠিক সকাল ৯.২০ নাগাদ মানালির দিক থেকে একজন একটা মারুতি ভ্যানে করে এসে হোটেলের সামনে নামতেই ধরলাম। রাজিও হয়ে গেলো ড্রাইভার সাহেব আমাদের সিমলা নিয়ে যেতে। কিন্তু বললো জলদি বেরিয়ে পড়ুন মুস্কিল হয়ে যাবে দেরি হলে। আমাদের রেডি হওয়াই ছিল। তড়িঘড়ি একটা হোটেল বয়কে দিয়ে লাগেজ নামিয়ে গাড়িতে তুলেতে গাড়ি দুদ্দাড়িয়ে ছেড়ে দিল। পথের সৌন্দর্য বেশ মনোরম কেননা এ যেন বেশ পয়সাওয়ালাদের পাড়া দিয়ে গাড়ি যাচ্ছে বলে মনে হয়। বাড়িঘর সব বেড়া বা গ্রীল ও পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। ঘ্যারেজে প্রত্যেকের গাড়ি ছিমছাম বাংলো প্যাটার্নের বাড়ি বোগেনভেলিয়া গেটের মাথায়। ফুলের টব দিয়ে সাজানো। আবার পাহাড় উৎরাই চড়াই। দূরে কাছে কোনও কোনও জায়গাটা অনেকটা সমতল চোখ বুজলে পুরনো নিউ আলিপুরের ওপর দিয়ে চলেছি মনে হচ্ছে। ভেতরের পথ। আবার পাহাড় অনেক অনেক খোপ খোপ বাড়ি দূর থেকে মনে হয়। সবুজের ভেতর সবুজ। মিলিটারি চৌকি। ড্রাইভার আঙুল দিয়ে দেখালো, এখানে কোন একটা হিন্দি সিনেমার স্যুটিং হয়েছিল। নাচগানের স্পট মেলাতে মেলাতে চেনা সিমলার রেলস্টেশন পেরিয়ে উঁচু নিচু করে করতে করতে গাড়ি পৌঁছলো কুফরির একটা গ্রামে। তখনও স্মার্টফোন ফোন হয়নি। পাতি ফোন। সেই দিয়ে ধরলাম এজেন্টকে। রোদ খাচ্ছিল দলবেঁধে একদল। গাড়ির নম্বর বলে দিয়েছিলাম। একটা চকে কয়েকজন গাড়ি থামালো। ওদের মুখস্থ কোন নম্বরের গাড়ির কি তার চেহারা। হাতবাড়িয়ে স্পিডপোস্টের খামটা নিয়ে নমস্কার সেরে ধন্যবাদ দিতে দিতে আমাদের গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়েছে। ধীরে ধীরে বেলা ১১.০০ তেই জ্যামজটে হাজার হাজার লোকে সিমলা তখন বড় অচেনা। দলে দলে চলেছে ম্যাল। মাথা আর মাথা। কোনরকমে ড্রাইভারের পেমেন্ট মিটিয়ে টিকিটের জেরক্স করে লকার রুমে তল্পিতল্পা রেখে কালীবাড়িতে তড়িঘড়ি গিয়ে একটু খেয়েই
আমরাও ম্যালেতে। একঘন্টা থেকে কোনরকমে দৌড়তে দৌড়তে হাঁপিয়ে ট্রেনে। তখনও দেরি আছে ছাড়তে। ইঞ্জিন শব্দ করে হুইসেল দিয়ে ছেড়ে দিল। ততক্ষণে ম্যালে জায়গায় জায়গায় অর্কেস্ট্রাপার্টি তাসাপার্টি গীটার নাচের দল হাজির দলে দলে আইসক্রিম খাচ্ছে আমরাও আইসক্রিম হাতে নিয়ে নেমে এসেছি। পোশাক যেমন ঝলমল করছে সকলের, তেমনি বেলা ১ টাতেই আলো জ্বলে উঠেছে চতুর্দিকে। জায়গা দখল করতে রেলিং ধরে বসা শুরু হয়ে গেছে। শুনছি সারারাত নাচ গানে হুল্লোড় হবে। দলে দলে ভাগ ভাগ হয়ে হবে আবার কেন্দ্রীয়ভাবে হবে। এক এক বছর বরফ পড়েছে তারওপর চলেছে নাচগানের আসর। ঠান্ডাকে দুহাত দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেবে সবাই। ট্রেন যত নিচে নামছে তত ভিড় অন্য দিক থেকে আসছে। ফিরতি ট্রেনের মাথায় জানলায় ঠাসাঠাসি ভিড়। ছেলেমেয়ে কে যে কার ঘাড়ে বসে আছে বোঝার উপায় নেই। মাঝেমধ্যে রাস্তায় রাস্তায় গাড়ির লাইন মিডিবাস গাড়ি সব ভিড়েভিড়। উপচে পড়ছে। এমনকি ওই অন্ধকারে ট্রেনের মাথায় বসে ছেলেমেয়েরা কীভাবে কতগুলো সুড়ঙ্গ পার হচ্ছে তা ঠিক বোধগম্য হলোনা।
অক্সিজেন : অলোক কুন্ডু
#অক্সিজেন_ক্লিনিক_গড়ো_হৃদয়ে_আমার
এই পোস্ট আসলে গতবছরে আজকের দিন করেছিলাম। অক্সিজেন নিয়ে লিখেছিলাম। ফেসবুক সাক্ষী। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর অসুস্থতার জন্য এই লেখা। অক্সিজেন ক্লিনিক খুলতে বলেছিলাম যার পরিকাঠামো খরচ খুব সামান্য। আমার একটা রাষ্ট্রপতি বা রত্ন পুরস্কার জুটতো কি না না হা হা হা...
----------------------------------------------------------
#বুদ্ধদেববাবু_দ্রুত_সুস্থ_হয়ে_উঠুন (১০.৯.১৯)
বর্ষা ও শীতকালে দরজা জানলা বন্ধ থাকার কারণে বয়স্ক ও শিশুদের অক্সিজেনের অভাব বোধ খুব বাস্তবিক । অক্সিজেনের
অভাব থেকে সর্দি কাশি জ্বর ও মারণ অসুখ
নিউমোনিয়া ধরে নিতে পারে হার্ট অ্যাটাকও
হতে পারে তাই সরকারের কাছে আবেদন প্রতিটি শহরে অক্সিজেন ক্লিনিক খোলা আবশ্যিক এবং অবিলম্বে তা করা হোক।
অক্সিজেনের ঘাটতির জন্য বুদ্ধবাবুকে
ভর্তি করতে বুদ্ধবাবুকে বিশাল নার্সিংহোমে
ভর্তি করতে হয়েছিল এ বিষয়ে আমার বক্তব্য নেই কারণ তিনি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ।
কিন্তু অক্সিজেনের ঘাটতিতে জ্বর সর্দির থেকেও সামান্য অসুখ হতে পারে মানে হয়েছে। অক্সিজেন নিজেই কন্ট্রোল করা যায় । বসে বসে অক্সিজেন নিলে তা শরীরে তাড়াতাড়ি প্রবেশ করে । অক্সিজেন নাকের কাছে ধরলেই শরীরে প্রবেশ করে । বারান্দায় দশটা ফুলের টব থাকলে একজনের জন্য অক্সিজেন কম
পড়ার কথা নয় । অক্সিজেন ৯০ থাকা মানে ঠিক আছে । তাজা। একটু বাড়াতে হলে অক্সিজেন দেওয়া ছাড়া গতি নেই। কিন্তু বয়স হলে খাওয়াদাওয়ার কারণে অক্সিজেন কমে যায়। ৭০-এও চলে যায়। কিন্তু ৬০ হয়ে গেলে বিপদ অনিবার্য । সর্দি কাশি ধরে
নেবে । চোখের নিচটা ফুলে যাবে হাত পা
ফুলে যাবে । কান নাক দিয়ে রস রক্ত গড়াবে। কিন্তু অক্সিজেন দিলে একঘন্টার মধ্যে মানুষ ঠিক হতে শুরু করবে। ৯০ হয়ে গেলে আর অক্সিজেন দেওয়া ঠিক নয় তাই তিন ঘন্টা অন্তর অক্সিজেন মাপার নিয়ম। একবার অক্সিজেন দিলে এখন শরীর ফিট। আঙুল টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে টেস্ট করা দরকার । তবে অক্সিজেন ক্লিনিক তৈরি করলে অক্সিজেনের খরচ ঘন্টা প্রতি রুগীর কাছ থেকে নেওয়া ছাড়া আর খরচ নেই ।
ক্লিনিক প্রতি একজন ডাক্তারের দিনে ও রাতে দুবার ভিজিটর ব্যবস্থা করা । রোগীর জন্য একটি বাথরুম সহ একটি ১০ শয্যার হল । দু সিফটে দুজন করে চারজন নার্স । একজন হেড নার্স ,যিনি টাকা নেবেন,টিকিট করবেন ও প্রাথমিক পরীক্ষা করবেন । একটি ক্যাশ রেজিস্টার , ক্যাশ মেমো ও রুগীর নাম এন্ট্রি রেজিস্টার রাখলেই চলে যাবে। অক্সিজেন মাপার বড় মেশিন একটি। রোগীর ১২ ঘন্টার বেশি থাকার প্রয়োজন হলে রেফার করে ব্যবস্থা নিতে হবে । একটি আর ও ফিল্টার যুক্ত জলের মেশিন । দুজন হল অ্যাটেনটেন্ডস প্রথমবারের অক্সিজেন পরীক্ষার জন্য ১০/-টাকা ও ভর্তির জন্য বেড ভাড়া বাবদ ১০০/-টাকা প্রতিদিন । অক্সিজেন খরচ বাবদ ১০০/-টাকা প্রতিদিন । সাধারণত নরমাল অক্সিজেন লেভেল ৮০ থাকলে সর্দি কাশি নিউমোনিয়া ধরেনা । মাননীয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অক্সিজেন কমে গিয়েছিল তাই দ্রুত অক্সিজেন বাড়াতে
আইসক্রিমের প্রয়োজন হয়েছে কারণ
ক্যালরি দ্রুত বাড়ালে সর্দি জ্বর ও নিউমোনিয়ার আক্রমণ থেকে বাঁচানো সম্ভব। পেঁপে দেওয়া হয়েছে এই কারণে সম্ভবত তাঁকে ডেক্সোরেঞ্জ ইন্জেকশন
করা হয়েছিল । দ্রুত রক্তে অক্সিজেনের পরিবহন বাড়াতে এবং একই সঙ্গে ডেক্সোরেঞ্জের সাইড এফেক্ট অনুসারে পেট ফাঁপা ও অ্যাসিড তৈরি হতে পারে
তাই পেঁপে খেতে দেওয়া হয়েছে । পেঁপে
সরবিলিনের কাজ করে বিশেষ করে
এইক্ষেত্রে লিভার বেড়ে গেলেও যেতে
পারে তাই হজমশক্তি ঠিক রাখতে পেঁপে
অপরিহার্য এবং পেটও ভরাবে শরীরের
ক্ষতি নেই । ঠিক সময়ে ভর্তি না হলে নিউমোনিয়া ধরে নিলে বড় ক্ষতির সম্ভাবনা
থাকতো । আমি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দ্রুত
আরোগ্য কামনা করি । আমার মনে হয় খুব
বেশি চিকিৎসা ওনাকে করতে হয়নি। যাইহোক যা বলছিলাম তা হলো, মোটামুটি ১২-১৪ ঘন্টা ধরে অক্সিজেন শরীরে
নিলে সামান্য জ্বর-সর্দি থাকলেও তা সেরে
যাবে । তবে ২০০/৫০০ টাকার অক্সিজেন খরচের জন্য নাগরিকদের আইসিইউ
তে ভর্তি হয়ে ৭০/৮০ হাজার টাকা খরচ করে শুধুমাত্র অক্সিজেনের অভাবের চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এলে
সেটা নিশ্চয় গায়ে লাগবে বইকি । এছাড়া
অক্সিজেন নিলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও
কমে যায় সমস্ত স্নায়ুতন্ত্র সজাগ হয়ে ওঠে ।
©® অলোক কুন্ডু
অলোকের ঝর্নাধারায়: আমার টুকরো জীবন
অলোকের ঝর্নাধারায় -২
(আমার টুকরো জীবন)
গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের রাজ্য সম্পাদক ইন্দ্রনাথ দা'কে প্রথম দেখেছিলাম কলকাতার একটা আর্ট ফেয়ারে, কিন্তু উনিই যে ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সেটা পরে বুঝতে পারি। শুনেছিলাম ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় থাকতেন সিপিএমের কম্যিউনে যেরকম বিমান বসু থাকেন। একদিন বন্ধু আবৃত্তিকার নূপুর বসু ওর শিক্ষিকা,মায়ের বিষয়ে আমার হাওড়ার অফিসে এলো তখন কথায় কথায় সেই প্রথম ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম জানতে পারি। ওর সঙ্গে গিয়ে একদিন নিউ সিনেমার ওপর ইন্দ্রনাথ দার সঙ্গে আলাপ করি ( তারিখ মাস সাল পরে দেখেশুনে বসাবো এখনই মনে পড়ছে না ) আমি তখন বর্ধমানের ভাতারে পোস্টিং আর্ট কলেজ ও বি.এড পড়তে গিয়ে পরপর প্রায় আটবছর আমার সঙ্গে তখন আমার আত্মীয়-স্বজন, পরিবার বলতে কারও সঙ্গেই সম্পর্ক রাখতে পারিনি। তার উপর তখন বন্ধুদের সঙ্গে ছুটির দিনে একাডেমির পেছনে বসে একটা আড্ডা দি।ওখানে যে চপ ক্যাটলেটের ক্যান্টিনটা ছিল সেখানে আড্ডাটা হোতো, এখন ওইখানে ছেলেমেরা বসে থাকে। আট বছর বোহেমিয়ান জীবন। সেইসব বন্ধুরা অধিকাংশ বহু আগে কলকাতা ছেড়েছে আর দেখাসাক্ষাত নেই। চয়ন-শুক্তির সঙ্গে আর দেখা হয়না। দুজনেই এখনও ছবি আঁকে প্রদর্শনী করে। দিলীপ ভট্টাচার্যও ছবি আঁকে কাগজে রিভিউ পড়ি। এদের সঙ্গে আর দেখা হয়না। যাইহোক যা বলছিলাম ইন্দ্রনাথ দা বেশ ফর্সা, ধুতি পাঞ্জাবী পরেন সুপুরুষ। বাম আমলে বুদ্ধদেব বাবুর পরের জন। বুদ্ধবাবু তথ্য-সংস্কৃতি মন্ত্রী তখন। আর্ট কলেজ থেকে পাশ করা ইন্দ্রনাথ দা প্রচ্ছদও করেন। খুব ভালো মানুষ। আমার নামও বলতে পারেন। সেই ইন্দ্রনাথ দা আর্ট কলেজের ছাত্রদের আব্দারে একটা বড় সেমিনার ডাকলেন কলকাতায়। তথ্যকেন্দ্রে এলেন বড় বড় মানুষ সকলেই সহমত হলেন যে বিদ্যালয়স্তরে শিল্প শিক্ষা চালু করার বিষয়ে। ইতিমধ্যে কুমোরটুলিতে প্রথম গিয়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু যে বক্তব্য রেখেছিলেন প্রাথমিক স্তরে পুতুল গড়তে হবে, সেই ইতিহাস তুলে ধরে বক্তব্য রাখলেন ইন্দ্রনাথ দা। হাতে সব সময় সিগারেট থাকে ইন্দ্রদার। স্বনামধন্য বিজন চৌধুরী তখন আমাদের ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ, উনিও বক্তব্য রাখলেন। অস্ট্রেলিয়া সরকার তখন বিজন চৌধুরীর উপর তথ্যচিত্র তুলছে। স্যারের বাড়ি বালীর সাহেববাগানে, আমি গেছি অনেকবার। হাজার হাজার ছেলেমেয়েরা গণস্বাক্ষর করলো, বড় বড় দিকপাল শিল্পীরাও স্বাক্ষর করলেন। শিক্ষামন্ত্রী কান্তি বিশ্বাসের কাছেও তা জমা পড়লো। কিন্তু বামফ্রন্ট তা মানলো না। মনটা খারাপ হয়ে গেল।
ইন্দ্রনাথ দা'র কাছে নিউ সিনেমার ওপরে গেলাম একদিন। এক কথায় আমার নাম ধরে একজনকে চা দিতে বললেন। আমি যা দেখেছি ইন্দ্রনাথ দা
একজন চরম বামপন্থী হয়ে এত সাধারণ থাকতেন এবং আজকের দিনে মনে হয় ওইসব নির্লোভ মানুষ গুণি স্বনামধন্য শিল্পী হয়েও এবং ইন্দ্র-দার হাতে বামফ্রন্ট সরকার থাকা সত্বেও কোনও কিছু করেছিলেন বলে কখনও শুনিনি। তিনি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে বুদ্ধ বলে ডাকতেন। কান্তি বিশ্বাসকে কান্তি বলে ডাকতেন। এত ভাব হয়ে গেল যে ইন্দ্রনাথ দা ওর প্রদর্শনীর ইনভিটেশন হাতে দিলেন। আমার দেখা অতি সৌন্দর্যমন্ডিত হাতের লেখা ইন্দ্রদার। আমার সঙ্গে সিপিএমের কোনও সম্পর্ক নেই। তবু লোকটাকে আমার ভালো লেগে গেল। এহেন সৎ নির্লোভ আমি দেখিনি।এমনকি ইন্দ্রদা একদিন বললেন, তোকে মেট্রোচ্যানেলে আর্টক্যাম্পে ঢুকিয়ে দিলাম।
আমার তো মহাআনন্দ, কেননা মহারথীরা দলবেঁধে ছবি আঁকবেন। আমরা জুনিয়ররা ভরাট করবো। এই সুযোগ কখনও হবে আমার জীবনে। ইন্দ্র-দাকে ভগবানের মতো মনে হচ্ছে আমার মতো সামান্যজনের কাছে। এরপর একটা বড় কি একটা মেলা ঠিক ময়দানের কোথাও একটা হয়েছিল। সেখানে নানারকম প্রদর্শনী হয়েছে।
ইন্দ্রনাথ দার কার্ড এলো বাড়ির ঠিকানায় গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের অনুষ্ঠান। বড় বড় আর্টিস্টের নাম। বইয়ের স্টল। পেন্টারদের প্রদর্শনী। আমার কোনও সুযোগ নেই। আমি ওইসব সুবিধা নেওয়ার পক্ষেও নেই। যাইহোক উদ্বোধন একটা শনিবার করে হয়েছিল। আমি বর্ধমানের ভাতার থেকে উপস্থিত হলাম। একটু দেরিতে, ততক্ষণে অনুষ্ঠান শেষ। এক জায়গায় মাঠের মধ্যে ইন্দ্রনাথ দা বসে গুণমুগ্ধরা দু চারজন
আছেন। আমি বসলাম গিয়ে একটু দূরে। বললেন এত দেরি হলো কেন রে ? খুব আন্তরিক কন্ঠস্বর।
একটু দূরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বসে আছেন। ইন্দ্রনাথ দা হঠাৎ আমার হাতে একটা লাইটার ও সিগারেটের প্যাকেট দিয়ে বললেন, এটা দিয়ে আয়, বুদ্ধকে। আমি আগেই দেখেছি বসে আছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, তার কাছে একজন পুলিশ অফিসার দাঁড়িয়ে, দুজন ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে, কিছু আলোচনা করছেন। আমি তো হকচকিয়ে গেছি, কি বলছেন ইন্দ্র দা। প্রথমটা বুঝতে পারিনি। আমি বুদ্ধবাবুর কাছে গেলাম হাতে দিলাম আমার দিকে তাকালেন না। সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা নিয়ে আমার হাতে প্যাকেট ফিরিয়ে দিলেন, অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। দুবারেই আলো জ্বালিয়ে সিগারেট ধরালেন। ওটাও ফিরিয়ে দিলেন। সেই প্রথম শুনলাম জলদগম্ভীর স্বর বুদ্ধবাবুর। আমাকে বললেন ওনাকে দিয়ে দাও। আমি চলে এলাম ইন্দ্রদার কাছে। ©® অলোক কুন্ডু
অলোকের ঝর্নাধারায়: আমার ঠুকরো জীবন
অলোকের ঝর্নাধারায় -২
(আমার টুকরো জীবন)
গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের রাজ্য সম্পাদক ইন্দ্রনাথ দা'কে প্রথম দেখেছিলাম কলকাতার একটা আর্ট ফেয়ারে, কিন্তু উনিই যে ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সেটা পরে বুঝতে পারি। শুনেছিলাম ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় থাকতেন সিপিএমের কম্যিউনে যেরকম বিমান বসু থাকেন। একদিন বন্ধু আবৃত্তিকার নূপুর বসু ওর শিক্ষিকা,মায়ের বিষয়ে আমার হাওড়ার অফিসে এলো তখন কথায় কথায় সেই প্রথম ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম জানতে পারি। ওর সঙ্গে গিয়ে একদিন নিউ সিনেমার ওপর ইন্দ্রনাথ দার সঙ্গে আলাপ করি ( তারিখ মাস সাল পরে দেখেশুনে বসাবো এখনই মনে পড়ছে না ) আমি তখন বর্ধমানের ভাতারে পোস্টিং আর্ট কলেজ ও বি.এড পড়তে গিয়ে পরপর প্রায় আটবছর আমার সঙ্গে তখন আমার আত্মীয়-স্বজন, পরিবার বলতে কারও সঙ্গেই সম্পর্ক রাখতে পারিনি। তার উপর তখন বন্ধুদের সঙ্গে ছুটির দিনে একাডেমির পেছনে বসে একটা আড্ডা দি।ওখানে যে চপ ক্যাটলেটের ক্যান্টিনটা ছিল সেখানে আড্ডাটা হোতো, এখন ওইখানে ছেলেমেরা বসে থাকে। আট বছর বোহেমিয়ান জীবন। সেইসব বন্ধুরা অধিকাংশ বহু আগে কলকাতা ছেড়েছে আর দেখাসাক্ষাত নেই। চয়ন-শুক্তির সঙ্গে আর দেখা হয়না। দুজনেই এখনও ছবি আঁকে প্রদর্শনী করে। দিলীপ ভট্টাচার্যও ছবি আঁকে কাগজে রিভিউ পড়ি। এদের সঙ্গে আর দেখা হয়না। যাইহোক যা বলছিলাম ইন্দ্রনাথ দা বেশ ফর্সা, ধুতি পাঞ্জাবী পরেন সুপুরুষ। বাম আমলে বুদ্ধদেব বাবুর পরের জন। বুদ্ধবাবু তথ্য-সংস্কৃতি মন্ত্রী তখন। আর্ট কলেজ থেকে পাশ করা ইন্দ্রনাথ দা প্রচ্ছদও করেন। খুব ভালো মানুষ। আমার নামও বলতে পারেন। সেই ইন্দ্রনাথ দা আর্ট কলেজের ছাত্রদের আব্দারে একটা বড় সেমিনার ডাকলেন কলকাতায়। তথ্যকেন্দ্রে এলেন বড় বড় মানুষ সকলেই সহমত হলেন যে বিদ্যালয়স্তরে শিল্প শিক্ষা চালু করার বিষয়ে। ইতিমধ্যে কুমোরটুলিতে প্রথম গিয়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু যে বক্তব্য রেখেছিলেন প্রাথমিক স্তরে পুতুল গড়তে হবে, সেই ইতিহাস তুলে ধরে বক্তব্য রাখলেন ইন্দ্রনাথ দা। হাতে সব সময় সিগারেট থাকে ইন্দ্রদার। স্বনামধন্য বিজন চৌধুরী তখন আমাদের ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ, উনিও বক্তব্য রাখলেন। অস্ট্রেলিয়া সরকার তখন বিজন চৌধুরীর উপর তথ্যচিত্র তুলছে। স্যারের বাড়ি বালীর সাহেববাগানে, আমি গেছি অনেকবার। হাজার হাজার ছেলেমেয়েরা গণস্বাক্ষর করলো, বড় বড় দিকপাল শিল্পীরাও স্বাক্ষর করলেন। শিক্ষামন্ত্রী কান্তি বিশ্বাসের কাছেও তা জমা পড়লো। কিন্তু বামফ্রন্ট তা মানলো না। মনটা খারাপ হয়ে গেল।
ইন্দ্রনাথ দা'র কাছে নিউ সিনেমার ওপরে গেলাম একদিন। এক কথায় আমার নাম ধরে একজনকে চা দিতে বললেন। আমি যা দেখেছি ইন্দ্রনাথ দা
একজন চরম বামপন্থী হয়ে এত সাধারণ থাকতেন এবং আজকের দিনে মনে হয় ওইসব নির্লোভ মানুষ গুণি স্বনামধন্য শিল্পী হয়েও এবং ইন্দ্র-দার হাতে বামফ্রন্ট সরকার থাকা সত্বেও কোনও কিছু করেছিলেন বলে কখনও শুনিনি। তিনি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে বুদ্ধ বলে ডাকতেন। কান্তি বিশ্বাসকে কান্তি বলে ডাকতেন। এত ভাব হয়ে গেল যে ইন্দ্রনাথ দা ওর প্রদর্শনীর ইনভিটেশন হাতে দিলেন। আমার দেখা অতি সৌন্দর্যমন্ডিত হাতের লেখা ইন্দ্রদার। আমার সঙ্গে সিপিএমের কোনও সম্পর্ক নেই। তবু লোকটাকে আমার ভালো লেগে গেল। এহেন সৎ নির্লোভ আমি দেখিনি।এমনকি ইন্দ্রদা একদিন বললেন, তোকে মেট্রোচ্যানেলে আর্টক্যাম্পে ঢুকিয়ে দিলাম।
আমার তো মহাআনন্দ, কেননা মহারথীরা দলবেঁধে ছবি আঁকবেন। আমরা জুনিয়ররা ভরাট করবো। এই সুযোগ কখনও হবে আমার জীবনে। ইন্দ্র-দাকে ভগবানের মতো মনে হচ্ছে আমার মতো সামান্যজনের কাছে। এরপর একটা বড় কি একটা মেলা ঠিক ময়দানের কোথাও একটা হয়েছিল। সেখানে নানারকম প্রদর্শনী হয়েছে।
ইন্দ্রনাথ দার কার্ড এলো বাড়ির ঠিকানায় গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের অনুষ্ঠান। বড় বড় আর্টিস্টের নাম। বইয়ের স্টল। পেন্টারদের প্রদর্শনী। আমার কোনও সুযোগ নেই। আমি ওইসব সুবিধা নেওয়ার পক্ষেও নেই। যাইহোক উদ্বোধন একটা শনিবার করে হয়েছিল। আমি বর্ধমানের ভাতার থেকে উপস্থিত হলাম। একটু দেরিতে, ততক্ষণে অনুষ্ঠান শেষ। এক জায়গায় মাঠের মধ্যে ইন্দ্রনাথ দা বসে গুণমুগ্ধরা দু চারজন
আছেন। আমি বসলাম গিয়ে একটু দূরে। বললেন এত দেরি হলো কেন রে ? খুব আন্তরিক কন্ঠস্বর।
একটু দূরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বসে আছেন। ইন্দ্রনাথ দা হঠাৎ আমার হাতে একটা লাইটার ও সিগারেটের প্যাকেট দিয়ে বললেন, এটা দিয়ে আয়, বুদ্ধকে। আমি আগেই দেখেছি বসে আছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, তার কাছে একজন পুলিশ অফিসার দাঁড়িয়ে, দুজন ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে, কিছু আলোচনা করছেন। আমি তো হকচকিয়ে গেছি, কি বলছেন ইন্দ্র দা। প্রথমটা বুঝতে পারিনি। আমি বুদ্ধবাবুর কাছে গেলাম হাতে দিলাম আমার দিকে তাকালেন না। সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা নিয়ে আমার হাতে প্যাকেট ফিরিয়ে দিলেন, অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। দুবারেই আলো জ্বালিয়ে সিগারেট ধরালেন। ওটাও ফিরিয়ে দিলেন। সেই প্রথম শুনলাম জলদগম্ভীর স্বর বুদ্ধবাবুর। আমাকে বললেন ওনাকে দিয়ে দাও। আমি চলে এলাম ইন্দ্রদার কাছে। ©® অলোক কুন্ডু
অলোকের ঝর্নাধারায়: টুকরো জীবন
অলোকের ঝর্নাধারায়
(আমার টুকরো জীবন)
পর্ব-৩
প্রথমেই বলে নেওয়া ভালো যে আমার মামারবাড়ি মধ্যবিত্ত হলেও খাওয়াপরায় কখনও কোনও অভাব দেখিনি। আমার ছেলেবেলার অনেকটা এবং পরেও যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি তখনও অন্তত গ্রীষ্মের ও পুজোর ছুটিটা কলকাতার-৬, জোড়াসাঁকোর ৫৯ নং বলরাম দে স্ট্রীটে আমার কাটতো বেশিরভাগ। সেখানে ভাগ্নাভাগ্নির সমস্ত আদর-যত্ন আমি একাই ভোগ করেছি। মামাতো ও মাসতুতো ভাইরা তখনও জন্মগ্রহণ করেনি এবং আমার নিজের ভাইবোনেরাও খুব কম গিয়ে থেকেছে । আমি সেখানে একাই রাজা ছিলাম। একতলা থেকে তিনতলা পর্যন্ত নিজের একটা রাজত্ব ছিল। তবে মামা মাসিদের শাসন ছিল খুব। আমার বড় মাসিমা ১৪ বছর বেলায় বিধবা হয়ে চিরকাল মামার বাড়ি ছিলেন শুনেছি মাত্র একবছর তাঁর দাম্পত্য জীবন কেটেছিল। হাওড়ার শিবপুরে তখন পাল ফার্মেসীর ওষুধের দোকান মানে বিশাল টাকা পয়সা, বেশ ধনী পরিবার। তখনকার দিনে শিবপুরের গন্ধবণিক ওই পরিবারের ছেলের যে টিবি ছিল এটাও খুব আশ্চর্যের। ওদের কাছ থেকে মাসিমার মাসোহারা পেতে অনেক কোর্টঘর করে পাওয়া গিয়েছিল মাসে ১৯/২০ টাকার মতো। কারণ ওদের ওষুধের দোকানটি ছিল সারা জেলার মধ্যে সবচেয়ে বড় ওষুধের দোকান এবং আইনত আমার মাসিমার চার আনা শেয়ার ছিল প্রচুর জায়গা জমিও ছিল কিন্তু আমার মাসিমা ওই টাকাটা ছাড়া আর কিছুই পেতেন না। আমি যখন যেতাম, মাসিমা সেখান থেকে আমাকে তখন রোজ সকালে ২ টো জিলিপির পয়সা দিতো। মামার বাড়িতে সকালে কিন্তু ফিরপো কোম্পানীর পাঁউরুটি দেড় পাউন্ড সঙ্গে আমার বড়মামা আনতো কাঁচের বোতলের হরিণঘাটার দূধ। ছোট থেকেই চা খাওয়ার বায়না ছিল আমার। মামার বাড়িতে একপিস পাঁউরুটি কলাইয়ের গ্লাসে চা। ( কলকাতায় নিত্য প্রয়োজনে কলাইয়ের বাসন ব্যবহার হোতো) তারপর একছুটে দু একটা সরু গলির ভেতর দিয় দে ছুট মামার বাড়ির একেবারে পেছন দিকে। নোপানী স্কুলের ভেতর দিয়ে সতীমায়ের মন্দির হয়ে সুন্দর চন্দনের গন্ধ ও পুজোর ঘন্টার আওয়াজ আর স্কুলের দারোয়ানের ফাঁক গলে বিখ্যাত রামবাগানে। ওখানে হিন্দুস্তানীদের দোকানে ঝুরিভাজা,জিলিপি সিঙাড়া খুব বিক্রি হতো। উত্তর কলকাতা মানে গায়ের ওপর গায়ে বাড়ি। চোর একটা ছাদে উঠতে পারলে আর রক্ষা নাই, দশটা বাড়ি গায়ে গায়ে। তাই কোনও ভাবেই কোনও বাড়ির সামনেটা ছাড়া তিনদিকে দেখা যেতনা। সতীমায়ের মন্দির স্কুলের একতলায়। বড় মাসিমা পই পই করে বলে দিত, দাঁড়িয়ে থাকা মেয়েগুলো ডাকলে একদম যাবিনা। সাজাগোজা ঘরে ঘরে মেয়েরা কেন, সাত সকালে দাঁড়িয়ে থাকে, তখন কিছুতেই মাথায় ঢুকতো না। এখন ভাবি ওইটুকু ছেলেকেই বা ওরা কেন ডাকবে! আসলে মাসিমার ভয় করতো আমি যেন হারিয়ে না যাই। ওই জিলিপির দোকান থেকেই বেশ্যাপাড়ার শুরু হয়ে যেত। কিন্তু তখন থেকেই বাঙালিরা ক্রমশ ওইসব জায়গায় কোনঠাসা হয়ে পড়ছিল। একচেটিয়া মাড়োয়াড়ি পাড়া হয়ে উঠছিল। এখন তো বাঙালি দুচার ঘর আছে। মামার বাড়িতে মজার একটা জিনিস ছিল সেটা হলো উত্তর কলকাতার ওই ঘিঞ্জি বাড়িগুলিতে একতলায় আলো আসার জন্যে উঠোনের মাথায় দোতালার মেঝেতে কিছুটা জায়গা চৌকোনো ফাঁকা রেখে বড় বড় লোহার রড মেঝেতে গাঁথা থাকতো। কোনও কোনও হিন্দি সিনেমায় এইরকম বাড়িঘরের পরিবেশ আমরা দেখেছি। বেশ মজার এই জন্য আমরা ওর ওপর সাবধানে দাঁড়িয়ে বসে নীচটা সম্পূর্ণ দেখতে পেতাম। আবার মাসিরা অনেকে জড় হলে ওখানে উপুড় হয়ে দোতলায় শুয়ে একতলার লোকেদের সঙ্গে গল্প করতে পারতো। রডগুলো লম্বা ও চওড়া দিকে মেঝেতে পেতে চতুর্দিকে মেঝের ভেতর গাঁথা থাকতো। এমনকি টাকা পয়সা বই টুকটাক জিনিস ওপর থেকে নীচে মামিয়ে দেওয়া যেত। নীচ থেকে তোলার জন্যে একটা দড়িতে একটা আঁকশি ঝুলতো। খবর কাগজ বেঁধে দোতালায় তুলে নিয়েছি কতবার। আর সিঁড়িগুলোর সাইজ ছিল ছোট ছোট তিনতলা পর্যন্ত। উঠোনের পাশে বিশাল চৌবাচ্চায় জল উপচে পড়তো। দিদিমা মুখে দোক্তা নিয়ে সকাল ছটা থেকে রান্নায় বসতো দুবেলার রান্না করে উঠতো সেই দুটোয়। সে রান্না কোনও শেফের দ্বারাও সম্ভব ছিলনা এত তার স্বাদ। মাটির হাঁড়িতে ভাত হতো। শাকের ঘন্টটায় ঘরের পোস্তর বড়ি গুঁড়িয়ে দেওয়া থাকতো। শেষে বিশ্বেশ্বর ঘি দিয়ে নামানো। মাছের তেলঝাল। একটা কপি বা পটলের তরকারি, আলু বেগুন ভাজা। ভাজা মুগের লাউ দিয়ে ডাল। প্রতিদিন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই মেনু। রাতে গরমজলে মাখা রুটি নয়তো বিশ্বেশ্বর ঘিয়ের গরম গরম লুচি ছোলার ডাল নারকেল দিয়ে নয়তো ফুলকপি/ ধোঁকার ডানলা বেগুন ভাজা ছোলা দিয়ে কুমড়োর ডানলা। লুচি ছাড়া সমস্ত রান্না দিদিমা একা করতো সকালে। জোগাড় দিত ছোট ও বড় মাসি।
আমার ছোটমাসির কুটনো কোটার শুনেছি শ্বশুরবাড়িতেও তারিফ হতো। অনেক বড় হয়ে মামার বাড়িতে মাংস ডিম ঢুকেছে, মুরগীর মাংস দিদিমা কখনও রাঁধেনি। আর রান্নাঘরের পাশ দিয়ে উঠে গিয়েছিল সিঁড়ি। ঠিক ওখানটাতে বসে আমার কথা হোতো দিদিমার সঙ্গে। মামা বাড়ির দাদুর ছিল মান্টেলসের হোলসেল ব্যবসা। তবে আমি দাদুকে দেখিনি। দাদু বড়বাজারে মাল দিয়ে আসতো আর তাগাদায় যেত এছাড়া আর তেমন কাজ নেই শুনেছি দাদু খুব কম বয়সেই ৬০ হওয়ার অনেক আগেই মারা যান। ওই সময়েই ব্যবসায় এত আয় করেছিলেন যে মৃত্যুর পরও সেই সুদের পয়সায় আরও ভালোভাবে ২০ বছর মামাদের চলে যেত। বেঁচে থাকতে এক বড়লোক বন্ধুকে বিশাল অঙ্কের টাকা ধার দেন। সেকথা পরে বলবো। ছোটমামা তখন ডাক্তারি পড়ে ও বড়মামার ম্যানেনজাইটিস হয়ে শরীরের এক দিকটা সম্পূর্ণ পড়ে যায়। বিধানচন্দ্র রায়কে দেখানো হয়েছিল। উনি বলেছিলেন ব্রেন অপারেশন করলে ভালো হয়ে যাবে। বিধানচন্দ্র রায়ের কাছে অ্যাপয়ন্টমেন্ট নেওয়া হয়েছে। যখন মাত্র ১২০/- টাকায় মামাদের সংসার চলে যেত তখন বিধানচন্দ্র রায়কে স্পেশালভাবে দেখাতে চাইলে উনি নিতেন ৬৪/- টাকা। দেখাতে আমার দুইমাসি ও ছোটমামা ও দাদুর এক বন্ধু গেছেন। আমার মামাকে ধরে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিধানচন্দ্র রায় দূর থেকে বলে দিলেন ব্রেন অপারেশন করলে ঠিক হয়ে যাবে। এই ছিলেন বিধান চন্দ্র রায়ের দূরদৃষ্টি। যাইহোক, ভয়েতে আমার দিদিমা ব্রেন অপারেশনে রাজি হলেন না। আমার বড়মামা ওইভাবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে দোতলা বাস, ট্রামে লাঠি নিয়ে যাতায়াত করতেন কষ্টকরভাবে। বড় মামার শখ ছিল ছবি তোলো। বড় বড় দুতিনটে কাঠের বক্স ক্যামেরা ছিল। যাকে দাঁড় করাবার তিনটি অ্যাডজাস্টেবল পায়া ছিল। ক্যামেরায় কালো কাপড় চাপা দিয়ে প্লেট ভরে ছবি তোলা হোতো। লেন্সের ঢাকনা কতক্ষণ খুলে রাখলে কতটা আলো ছবি নেবে ছবি তুলে তুলে তা পরীক্ষা করে প্র্যাকটিস করে বুঝে নিতে হোতো। ক্যামেরায় ফিল্ম লোড করে কালো ঢাকা দেওয়া বাক্সো থেকে নিমিষে বার করে ক্যামেরায় লাগাতে হোতো কালো কাপড় ঢেকে। বাড়িতেই সে কারণে স্টুডিও ডার্করুম করতে হয়েছিল। মেটাল কেমিকেল, ফিল্ম, ব্রোমাইড, সলিউশন, পেপার সব সাজানো থাকতো। ডার্করুমে লাল আলো জ্বলতো। ছবি উঠতো শুধুমাত্র বাড়ির লোকেদের। বাইরের জন্য ছিল একটা ছোট হ্যান্ডি বিলিতি ডবল লেন্সের আগফা কালো রঙের ক্যামেরাও। ভূবনেশ্বরে মামাদের বাড়ি মধুপুরে দাদুর বন্ধুর বাড়িতে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে যাওয়া হোতো। (ক্রমশ)
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)
প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু
#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...
-
বড় চমক, বাংলা থেকে এনডিএর-র উপরাষ্ট্রপতি প্রার্থী ●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●●● গত তিন বছর বিভিন্ন ইস্যুতে মমতা সরকারকে নিশানা করেছেন ব...
-
⛔ এটা ২৮ ডিসেম্বর, ১৯৯৭-এর 'বর্তমান' খবর কাগজ। বরুণ সেনগুপ্ত'র আগাগোড়া ১০০% সমর্থন তখন। জিতেন্দ্রপ্রসাদ এসে সোমেন মিত্রকে নিয়ে...
-
#অলোক_কুন্ডুর_লেখালিখি_ও_কবিতা #CoronavirusLockdown #COVID19PH #COVID19 #CoronavirusPandemic #coronavirus #ভিটামিন_সি ■ বিজ্ঞানী ইন্দুভূষণ ...