শুক্রবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০

অলোকের ঝর্নাধারায় ( আমার টুকরো জীবন)

#অলোককুন্ডুরলেখালিখিওকবিতা #kolkata #indianwriterscommunity #kolkatadiaries #writer #lekhak #blogger #Facebook #biography

■ অলোকের ঝর্নাধারায়: ( আমার টুকরো জীবন)
●পর্ব-৫
◆ভূবনেশ্বরের রামকৃষ্ণ মিশনের পাঁচ-ছটা বাড়ির পর‌ই ছিল লাল রঙের 'যোগেশনিবাস' আমার মামারবাড়ি। এখন রাস্তার নাম হয়েছে বিবেকানন্দ মার্গ। যেখানে আমার মামাদের ঠাকুরদাদা মাত্র ১৫০/-টাকা দিয়ে ১৬০/১৭০ বছর আগে কিনেছিলেন ওই জমি। যা প্রচুর দামে ২০০৬ -এ বিক্রি হয়ে গেল অন্নপূর্ণা মেমোরিয়াল হসপিটালের মালিকের কাছে। ওদের হসপিটালের রাস্তা ছিল অনেকটা পেছনে, গলির মধ্যে। কিন্তু বড় রাস্তা আটকে বসে ছিল এই জমি। আমার মা মাসি মামা ওঁদের একজন শরিক, সকলে মিলে উপস্থিত হয়েছিল ভূবনেশ্বর কোর্টে বিক্রির দিনে।  ভূবনেশ্বরের দুটো পার্ট। একটা ওল্ড ভূবনেশ্বর, যেখানে অবস্থিত " লিঙ্গরাজ টেম্পল"  অন্যটা হলো নবনির্মিত ক্যাপিটাল, বিজু পট্টনায়ক পত্তন করেছিলেন যে ভূবনেশ্বর তার চেহারা ৭০ দশক থেকে নতুন করে পাল্টাতে শুরু করে। পূর্বভারতের রাজধানীর মতো গৌরবের স্থানে এখন ভূবনেশ্বর। আধুনিক শহর আর‌ও দূরে বেড়ে উঠেছে ১৯৭৫ সাল থেকে দশটা সল্টলেক তৈরি হয়ে গেছে। আগে কটক ছিল উড়িষ্যার রাজধানী। স্বাধীনতার পরবর্তীকালে আমাদের দূর্গাপুর,কল্যাণী হয়েছিল এবং উড়িষ্যা পেয়েছিল ভূবনেশ্বর। পশ্চিমবঙ্গের সেই বাড় হয়নি যা হয়েছে ভূবনেশ্বরকে কেন্দ্র করে। শিল্পকারখানা, হসপিটাল, সরকারের পূর্বাঞ্চলীয় অফিস, আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনা ভূবনেশ্বর কি নেই আজ। যেভাবে তৈরি হয়েছিল বিজু পট্টনায়কের আমলে, তা পুণরায় ভেঙেচুরে একেবারে নতুন হয়ে গেছে। 

আমার ঠাকুরদাদা আমার বাবার বিয়ে দিয়েছিলেন যখন, তখন আমার বাবা চাকরি করতেন না। ভূবনেশ্বরে যখন আমরা প্রথম যাই তখন আমার দিদির, আমার, ছোট বোনের জন্মগ্রহণ হয়ে গেছে। তখনও আমার বাবা চাকরি করেন না। মামাদের সাহায্যে ও বাবার টুকটাক সমাজসেবার কাজের জন্য কেউ হয়তো ২/৫ টাকা গাড়িভাড়া দিতেন সেই থেকে আর কলুটোলা স্ট্রিটে আমাদের বাড়ি ছিল তার ভাড়ার সামান্য অংশ দিয়ে, নিজেদের বাড়িতে ভাড়াটে বসিয়ে যে এক অংশ পাওয়া যেত তাই দিয়ে কোনোক্রমে আমাদের সংসার চলতো, মায়ের বিয়ের গয়নাও ২/১ টা বিক্রি করতে হয়েছিল। আমার ঠাকুরদাদা একটা ব্যাঙ্ক খুলতে গিয়ে তাঁর সমস্ত পৈতৃক জমিজমা,বাড়ি মর্টগেজ দিয়ে দিলেন ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছে, বৃটিশ আমলে, সেটা আমার জন্মের বহু আগের ঘটনা। এই ভূবনেশ্বরে গিয়ে আমার বাবার বিয়ের অনেক পরে কেন্দ্রীয় সরকারি অফিসে চাকরি জোটে, পরে সেইসব আলোচনায় আসবে। গ্রাম ভূবনেশ্বর কীভাবে ধানজমি মাঠঘাট থেকে, একটা অপোড়ো জায়গা থেকে ক্রমশঃ সিটি গড়ে উঠলো ছোট থেকে গিয়ে গিয়ে দেখেছি বারেবারে। একবার ছোটমামার সঙ্গে ১০+১০ মানে ২০ কিমি হেঁটে, ভূবনেশ্বর তৈরি দেখতে গিয়ে বাড়ি ফিরে এসে কোমরের যন্ত্রণায় তিনদিন দিন শুয়ে পড়েছিলাম। আমার ছোটমামা কলকাতা মেডিকেল কলেজের ক্যানসার বোর্ডের ডাক্তার ছিলেন। গাড়ি কেনেন নি। হেঁটে হেঁটে বা ট্রামে করে কলকাতা ঘুরতেন। আমার সে অভ্যাস কখনও ছিলনা। যাইহোক ভূবনেশ্বর বিন্দু সরোবর কথা একটু বলি। লিঙ্গরাজ টেম্পল লাগোয়া জলের কুন্ড বা প্রস্রবণ এবং বিন্দু-সরোবর লেকের কাছে প্রায় ১২ কাঠা জমি ও দু-তলা বাড়ি বিক্রি করে দিতে হলো এই সেদিন, কেয়ারটেকারের আগ্রাসী মনোভাবের জন্য। সামনে দিয়ে দু লেনের স্টেট হাইওয়ে চলে গেছে। জমির দাম ব্যাঙ্কের টাকার থেকেও যে বহুমূল্য সেদিন বুঝতে পারলাম। ওই জমির জন্য কতলোক যে এখানে উৎপাত করতো তার ঠিক নেই। বহুবছর কোর্টকেস চলার পর জবরদস্তি দখলদারি হঠানো গিয়েছিল। যাইহোক জমি বিক্রির ভাগ আনতে আমিও গিয়েছিলাম মা মাসিদের সঙ্গে। বিন্দুসরোবরে ধারে কুন্ড থেকে ঔষধি জল বের হোতো। বৃটিশ আমলে স্বাধীনতার বহু পরেও কলকাতার বড় বড় ওষুধের দোকানে প্রসেসিং করে বিক্রি হতো ওই জল। বিশেষ করে ওই জলের কারণে তখনকার দিনে পেটের অসুখ ও টিবি রোগীও সেরে যেত। খিদে বেড়ে যেত হজম হোতো। এখন তো মনে হয় স্নান করতে ওই কুন্ডে টিকিট কাটতে হয়। জল‌ও লাইন দিয়ে মাপমতো পাওয়া যায়। তখন দেখতাম বিকালবেলা, রোদ পড়ে গেলে দলে দলে স্থানীয় লোকেরা মাথায় করে কুন্ডের জল নিয়ে যাচ্ছে। স্নান করতে, জল খেতে দুবেলা কুন্ডে যেতাম আমরা। একটা চৌবাচ্চায় নেমে স্নান ও অপরটা থেকে পাণীয় জল পাওয়া যেত। অবশ্য অতিরিক্ত ওই জল গিয়ে পড়তো গায়ের বিন্দু সরোবর নামে বড় একটা লেকে। কথিত আছে একবার শিবের সঙ্গে পার্বতী যাচ্ছিলেন তখন পার্বতীর জলতেষ্টা পায়। মহাদেব ওইখানে ত্রিশূল দিয়ে গর্ত করতে, জল বেরিয়ে আসে। আজ পর্যন্ত ওই জলের প্রবাহ খুঁজে পাওয়া যায়নি। কখনও জলের অভাব হয়না ওখানে। তবে বড় বড় বাড়ি হয়ে যাওয়ায় অনেকে বলেন জল আসার প্রবাহ আগের থেকে কম। গ্রীষ্মেও টলটলে জল থাকে। তবে লিঙ্গরাজ মন্দিরের কাছে কুষ্ঠরোগীদের বসে থাকার ফলে কখনও ওখান থেকে আমরা কিছু কিনতাম না। আর ভূবনেশ্বরের লিঙ্গরাজ মন্দির তো হাঁটাপথেই ছিল। ছবিতে বিন্ন্প র্ণা হসপিটাল, যারা আমার মামারবাড়ির জমি কিনে নেয়।(ক্রমশঃ)

মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০

অলোক কুন্ডুর কবিতা

অলোক কুন্ডুর কবিতা

অলোকের ঝর্নাধারায় : আমার টুকরো জীবন

■ অলোকের ঝর্নাধারায়-১
দরলাঘাট, হোটেল বাগেলা

■ সেবার মানালি থেকে সিমলা ফিরবো ৩০/১২/০৭। ৩১.১২.০৭- এ আগে সিমলাতে গিয়ে ওখান থেকে কুফরির একটা গ্রামে গেলে তবেই জানতে পারবো ৩১.১২.২০০৭-এর ফেরার ট্রেনের টিকিট জুটেছে কিনা। ওখানে একটি ট্যুর পার্টির এজেন্টের কাছে সিমলা থেকে হাওড়ার আমাদের ফেরার ট্রেনের টিকিট আছে। হিমালয় ক্যুইনে কালকায় বদলিয়ে ফেরার টিকিট স্পিডে পৌঁছে গেছে জানতে পারলাম ২৯.১২.২০০৭-এর রাতে। বহু কষ্টে শেষে ফোনে খবর পেলাম। হঠাৎ করে দেরিতে মানালি আসার সিদ্ধান্তে, আমাদের ফেরার টিকিট কেটে নিয়ে আসতে পারিনি। শুধুমাত্র আসার টিকিট পেয়েছি। ইতিমধ্যে দুবার মানালি আসা হয়ে হয়ে গেছে। এইবার মানালি এসেছিলাম ২৭/১২/০৮-এ। আগের দিন মানালিতে স্নোফল হয়ে গেছে। ভাগ্য এমন খারাপ যে পরে আর তা পাওয়া গেল না। তবে সোলানভ্যালিতে প্রচুর বরফ পড়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে চলে আসার জন্যে মানালিতে কালীঘাটের ভিড় যেন। থিক থিক করছে বাঙালি এমনকি আমার পাড়ার তিনটে পরিবারের সঙ্গে পর্যন্ত দেখা হয়ে গেল। সকলেই ভয় দেখাচ্ছে সিমলাতে ৩০.১২-তে কোনও ঘর নেই। একটা বাথরুমে থাকলে তার ভাড়া ২০০৭-এই ৪০০০/৫০০০ এক রাত। মহাসমস্যায় পড়লাম। ৩১.১২-তে প্রতিবছর সারারাতের ফ্যাংশন হয় ম্যালেতে, অন্তত একদিনে একলক্ষ লোক দিল্লি চন্ডিগড় ও নিচ থেকে হুল্লোড় করতে উপস্থিত হয়। সে যে কি হুলুস্থুল কান্ড চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা মুস্কিল। দলে দলে ছেলেরা পোর্টেবল মাইক মিউজিক সেট, ব্যান্ডপার্টি আরো কত কি সঙ্গে চলেছে। কালীবাড়িতে চেনা থাকলেও মেঝেতে কম্বল মুড়ি দিয়ে কতজন পড়ে থাকবে তার কোনও ঠিক নেই। চার কিমি দূর পর্যন্ত আশেপাশের সব বাড়ি হোটেল ভর্তি ৩০ ও ৩১ তারিখ প্রতিবছরে। এটাই হয়ে আসছে। ২৯.১২তে গিয়ে পড়লাম মানালির ট্যুরিস্ট অফিসে। কি হবে আমাদের? অনেক কথার পর একজন স্টাফ দিশা দিলেন একটা। তবে সেটা মানালি সিমলা রোড থেকে ফেরার পথে একটু ঢুকে দরলাঘাটে ( সোলান জেলার মধ্যে পড়ে) ওদের‌ই ( hptdc) ট্যুরিজমের হোটেল ও অ্যাকোমোডেশন, "হোটেল বাগেলা।" সোলান জেলা তে পড়ে জায়গাটা হলো- দরলাঘাট। ওখান থেকে ওরা মানালি থেকে সিমলা ফেরার একটা গাড়ি ভাড়া ও বুক করেদিল। তবে গাড়ি আমাদের ৪৫ কিমি দূরে আগেই নামিয়ে দিয়ে চলে যাবে। খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা ভালো। সিমলা মানালি হাইওয়েতে না হলেও একটু ঢুকলে এদের রেস্টুরেন্টের নামডাক আছে। থাকাও এলাহি। কিন্তু ধারেকাছে সিমলা ফেরার গাড়ি পাওয়া মুস্কিল। সিমলা ফিরতে গাড়ির ড্রাইভারকে দু তরফের ভাড়া গুনে দিতে হবে। ৪৫ কিমি দূর যদিও খুব একটা দূর নয় কিন্তু আমাদের সিমলা পেরিয়ে কুফরির গ্রামে একবার যেতে হবে টিকিট সংগ্রহ করতে। যাইহোক ওইখানে নির্জনতা একেবারে পেয়ে বসেছে জায়গাটায়। শীতে বরফ‌ও পড়ে। হোটেলের পেছনে বাগান আছে তবে ইয়া উঁচু মোটা জালের পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। বন্যজন্তু বিশেষ করে শিয়াল,হনুমান বন্য কুকুর ভাল্লুক সাপ খড়গোস, বেঁজি পাখিদের কচিৎ দেখাও মিলে যায়। বড় বড় ঢালা কাঁচের জানলা হোটেলের ঘরের পেছেনের বাগানের দোলনাজুড়ে রোদে দোল খাচ্ছে সেখানে। কিন্তু আশেপাশে কোনও দোকান বাজার স্কুল হাট কোনও কিছুই নেই। কাছাকাছি ছোট গ্রাম থাকলেও দু একটা মাত্র গাড়ি তাদের আছে। তবে হোটেলের ম্যানেজার বুক করে গাড়ি আনিয়ে দেবে সে বিষয়ে খুব একটা চিন্তা নেই। কিন্তু ৩১ তারিখ সকাল সকাল না বের হলে বিশাল জ্যামে পড়ে যাবো আমরা, দুপুরে ফেরার ট্রেন। একেবারে হনিমুন পারপাস জায়গা বটে। হোটেলে লোক‌ও খুব কম। অনেক সময় মিটিং পারপাস গ্রুপ বুকিং এখানে আসে। রেস্টুরেন্টে বিলিতি মদ পাওয়া যায়। লাউঞ্জে বসে দু একজনকে খেতে দেখলাম। এদিকটা একেবারেই অচেনা জায়গা আমাদের ড্রাইভারের‌ও। কোন‌ও ভাবে গাড়ি পৌঁছলে খাওয়া ও থাকার জন্যে বুকিং হয়। সিমলায় হোটেল না পেয়ে hptdc-র কয়েকজন বোর্ডার এখানে উঠেছেন দেখলাম। বেঁচে গেছি দলে দলে এই ৪৫ কিমি দূরে আর কেউ উড়ে আসেনি। হোটেলটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং পরিবেশ সুন্দর হলেও দৃশ্যপট খুব একটা এখান থেকে দেখা যায়না। পাইন-ফার বা শীতের গাছপালার সেই পরিবেশ ওইখানে নেই। দূরের পাহাড়টা এখান থেকে বহুদূরে। অস্পষ্ট মায়াবী। হোটেলটা একটা উঁচু পাহাড়ের মাঝখানে যার ফলে পেছনের জঙ্গল ও পাহাড়ের উঁচুটা কতদূর বোঝা যায়না। সাধারণত হোটেলটি বিয়ের মরসুমে সেই পারপাসে সরগরম হয়ে ওঠে। বাইরেটা কিছুটা পুরনো আমলের হলুদ এলা রঙের ছিল তখন কিন্তু বর্তমানে রঙটঙ পাল্টেছে। উঁচু‌ও হয়েছে। হোটেলের ভেতরটায় ডাইনিং হল ও ঘরগুলোকে বেশ কয়েক বছর আগে আধুনিক করা হয়েছে। সাদা ধবধবে চাদরে মোড়া বিছানা দেড়ফুট উঁচু ও নরম। রাতে বেশ ঠান্ডা এক্সট্রা কম্বল আলমারিতে দেওয়া আছে। টিভি আছে। গরম ঠান্ডা জলের কোনও প্রবলেম নেই দোতলায় থাকার ব্যবস্থা। সার সার ঘর। বেশ বড় ঘর। একতলায় কিচেন, বড় ডাইনিং, পোর্টিকো, বাগান, অফিস লাউঞ্জ। হোটেলের সামনে পরিষ্কার পিচেমোড়া রাস্তা সারাদিনে সিমলা থেকে অন্য কোথাও বাস যাতায়াত করে গোটা ৬-য়েক। এত কিছুই মানালি থেকে জানা যায়নি। বাকিটা এসে দেখা গেল। কিন্তু ওরা মানালি থেকে আমাদের জন্য ফোন করে বলে দিল আর বুক করে দিল। হাতে আকাশের চাঁদ পাওয়া কেন তা পরে বলতে থাকবো। সিমলায় গ্যারেজ‌ওলা গাড়ির এক ড্রাইভার পেয়ে গেলাম তবে অ্যাম্বাসাডার। আমাদের পৌঁছনোর কথা। গাড়ির কার্যকারিতা দেখবার জন্য নয়। ওই ড্রাইভার বাগেলাতে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল যখন তখন বিকাল এবং তারিখ হলো গত ৩০-শে ডিসেম্বর ২০০৭। সাধারণত বিদেশীরা এইসব হোটেলে এসে থাকে। কারণ সিমলা আর মানালির সরকারি হোটেলের থেকে এখানে রেট অনেকটাই মডারেট।
গাড়িটা চলে যেতে যেন মন খারাপ হয়ে গেল। সে মন খারাপ বুঝি বিয়ের পর মেয়েদের প্রথমদিকে বাপের বাড়ি থেকে শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছনোর মতো। কেউ কোথাও নেই। এমনকি একটা রাস্তার এমন বাঁকে হোটেলটা এমন একটা এল টাইপের জায়গায় যে রাস্তার দুটো প্রান্ত কোথায় যে পৌঁছলো তা বোঝার ঠিক উপায় নেই। যেন সারা পৃথিবী থেকে একে লুকিয়ে রেখেছে। পৌঁছে গরম জলে গা ধুয়ে ডাইনিং-এ গরম গরম মশলা চায়ের সঙ্গে রোস্ট করা লম্বা লম্বা আলু ভাজা আর বাঙালি টাইপ পরটা আর মাখনে ভাজা টোস্ট ও ওমলেট মিলিয়ে মিশিয়ে মুখে মিলিয়ে যেতে থাকলো। গাড়ির সামান্য ধকল ও সারাদিনের কি হয় কি হয় অবস্থা ততক্ষণে চলে গেছে। মহিলা রাঁধুনিরা অতিরিক্ত চায়ের আব্দার মিটিয়ে হাসিমুখে জেনে নিয়েছে তাদের তৈরি খাবারের গুণগত মান ঠিক মতো ছিল কিনা? পরের দিন বাসে করে যাবো বলে মনস্ত করেছি সিমলা। কিন্তু ঠিক সকাল ৯.২০ নাগাদ মানালির দিক থেকে একজন একটা মারুতি ভ্যানে করে এসে হোটেলের সামনে নামতেই ধরলাম। রাজিও হয়ে গেলো ড্রাইভার সাহেব আমাদের সিমলা নিয়ে যেতে। কিন্তু বললো জলদি বেরিয়ে পড়ুন মুস্কিল হয়ে যাবে দেরি হলে। আমাদের রেডি হ‌ওয়াই ছিল। তড়িঘড়ি একটা হোটেল বয়কে দিয়ে লাগেজ নামিয়ে গাড়িতে তুলেতে গাড়ি দুদ্দাড়িয়ে ছেড়ে দিল। পথের সৌন্দর্য বেশ মনোরম কেননা এ যেন বেশ পয়সাওয়ালাদের পাড়া দিয়ে গাড়ি যাচ্ছে বলে মনে হয়। বাড়িঘর সব বেড়া বা গ্রীল ও পাঁচিল দিয়ে ঘেরা। ঘ্যারেজে প্রত্যেকের গাড়ি ছিমছাম বাংলো প্যাটার্নের বাড়ি বোগেনভেলিয়া গেটের মাথায়। ফুলের টব দিয়ে সাজানো। আবার পাহাড় উৎরাই চড়াই। দূরে কাছে কোনও কোনও জায়গাটা অনেকটা সমতল চোখ বুজলে পুরনো নিউ আলিপুরের ওপর দিয়ে চলেছি মনে হচ্ছে। ভেতরের পথ। আবার পাহাড় অনেক অনেক খোপ খোপ বাড়ি দূর থেকে মনে হয়। সবুজের ভেতর সবুজ। মিলিটারি চৌকি। ড্রাইভার আঙুল দিয়ে দেখালো, এখানে কোন একটা হিন্দি সিনেমার স্যুটিং হয়েছিল। নাচগানের স্পট মেলাতে মেলাতে চেনা সিমলার রেলস্টেশন পেরিয়ে উঁচু নিচু করে করতে করতে গাড়ি পৌঁছলো কুফরির একটা গ্রামে। তখনও স্মার্টফোন ফোন হয়নি। পাতি ফোন। সেই দিয়ে ধরলাম এজেন্টকে। রোদ খাচ্ছিল দলবেঁধে একদল। গাড়ির নম্বর বলে দিয়েছিলাম। একটা চকে কয়েকজন গাড়ি থামালো। ওদের মুখস্থ কোন নম্বরের গাড়ির কি তার চেহারা। হাতবাড়িয়ে স্পিডপোস্টের খামটা নিয়ে নমস্কার সেরে ধন্যবাদ দিতে দিতে আমাদের গাড়ি ঘুরিয়ে নিয়েছে। ধীরে ধীরে বেলা ১১.০০ তেই জ্যামজটে হাজার হাজার লোকে সিমলা তখন বড় অচেনা। দলে দলে চলেছে ম্যাল। মাথা আর মাথা। কোনরকমে ড্রাইভারের পেমেন্ট মিটিয়ে টিকিটের জেরক্স করে লকার রুমে তল্পিতল্পা রেখে কালীবাড়িতে তড়িঘড়ি গিয়ে একটু খেয়েই
আমরাও ম্যালেতে। একঘন্টা থেকে কোনরকমে দৌড়তে দৌড়তে হাঁপিয়ে ট্রেনে। তখনও দেরি আছে ছাড়তে। ইঞ্জিন শব্দ করে হুইসেল দিয়ে ছেড়ে দিল। ততক্ষণে ম্যালে জায়গায় জায়গায় অর্কেস্ট্রাপার্টি তাসাপার্টি গীটার নাচের দল হাজির দলে দলে আইসক্রিম খাচ্ছে আমরাও আইসক্রিম হাতে নিয়ে নেমে এসেছি। পোশাক যেমন ঝলমল করছে সকলের, তেমনি বেলা ১ টাতেই আলো জ্বলে উঠেছে চতুর্দিকে। জায়গা দখল করতে রেলিং ধরে বসা শুরু হয়ে গেছে। শুনছি সারারাত নাচ গানে হুল্লোড় হবে। দলে দলে ভাগ ভাগ হয়ে হবে আবার কেন্দ্রীয়ভাবে হবে। এক এক বছর বরফ পড়েছে তার‌ওপর চলেছে নাচগানের আসর। ঠান্ডাকে দুহাত দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দেবে সবাই। ট্রেন যত নিচে নামছে তত ভিড় অন্য দিক থেকে আসছে। ফিরতি ট্রেনের মাথায় জানলায় ঠাসাঠাসি ভিড়। ছেলেমেয়ে কে যে কার ঘাড়ে বসে আছে বোঝার উপায় নেই। মাঝেমধ্যে রাস্তায় রাস্তায় গাড়ির লাইন মিডিবাস গাড়ি সব ভিড়েভিড়। উপচে পড়ছে। এমনকি ওই অন্ধকারে ট্রেনের মাথায় বসে ছেলেমেয়েরা কীভাবে কতগুলো সুড়ঙ্গ পার হচ্ছে তা ঠিক বোধগম্য হলোনা।
ততক্ষণে আমাদের ট্রেন অনেক নিচে নেমেছে কিন্তু পার হতে পারছেনা পিচরাস্তার ক্রসিংগুলো। তিনঘন্টা লেটে বহু দৃশ্যের সাক্ষী থাকতে থাকতে, বিস্তর কান মলা খেয়েছিলাম আর কখনও এই সময় সিমলা মানালি আসবোনা। ©® অলোক কুন্ডু

অক্সিজেন : অলোক কুন্ডু

#অক্সিজেন_ক্লিনিক_গড়ো_হৃদয়ে_আমার

এই পোস্ট আসলে গতবছরে আজকের দিন করেছিলাম। অক্সিজেন নিয়ে লিখেছিলাম। ফেসবুক সাক্ষী। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর অসুস্থতার জন্য এই লেখা। অক্সিজেন ক্লিনিক খুলতে বলেছিলাম যার পরিকাঠামো খরচ খুব সামান্য। আমার একটা রাষ্ট্রপতি বা রত্ন পুরস্কার জুটতো কি না না হা হা হা...
----------------------------------------------------------

#বুদ্ধদেববাবু_দ্রুত_সুস্থ_হয়ে_উঠুন (১০.৯.১৯)

বর্ষা ও শীতকালে দরজা জানলা বন্ধ থাকার কারণে বয়স্ক ও শিশুদের অক্সিজেনের অভাব বোধ খুব বাস্তবিক । অক্সিজেনের
অভাব থেকে সর্দি কাশি জ্বর ও মারণ অসুখ
নিউমোনিয়া ধরে নিতে পারে হার্ট অ্যাটাক‌ও
হতে পারে তাই সরকারের কাছে আবেদন প্রতিটি শহরে অক্সিজেন ক্লিনিক খোলা আবশ্যিক এবং অবিলম্বে তা করা হোক। 
অক্সিজেনের ঘাটতির জন্য বুদ্ধবাবুকে
ভর্তি করতে বুদ্ধবাবুকে বিশাল নার্সিংহোমে
ভর্তি করতে হয়েছিল এ বিষয়ে আমার বক্তব্য নেই কারণ তিনি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ।
কিন্তু অক্সিজেনের ঘাটতিতে জ্বর সর্দির থেকেও সামান্য অসুখ হতে পারে মানে হয়েছে। অক্সিজেন নিজেই কন্ট্রোল করা যায় । বসে বসে অক্সিজেন নিলে তা শরীরে তাড়াতাড়ি প্রবেশ করে । অক্সিজেন নাকের কাছে ধরলেই শরীরে প্রবেশ করে । বারান্দায় দশটা ফুলের টব থাকলে একজনের জন্য অক্সিজেন কম
পড়ার কথা নয় । অক্সিজেন ৯০ থাকা মানে ঠিক আছে । তাজা। একটু বাড়াতে হলে অক্সিজেন দেওয়া ছাড়া গতি নেই। কিন্তু বয়স হলে খাওয়াদাওয়ার কারণে অক্সিজেন কমে যায়। ৭০-এও চলে যায়। কিন্তু ৬০ হয়ে গেলে বিপদ অনিবার্য । সর্দি কাশি ধরে
নেবে । চোখের নিচটা ফুলে যাবে হাত পা
ফুলে যাবে । কান নাক দিয়ে রস রক্ত গড়াবে। কিন্তু অক্সিজেন দিলে একঘন্টার মধ্যে মানুষ ঠিক হতে শুরু করবে। ৯০ হয়ে গেলে আর অক্সিজেন দেওয়া ঠিক নয় তাই তিন ঘন্টা অন্তর অক্সিজেন মাপার নিয়ম। একবার অক্সিজেন দিলে এখন শরীর ফিট। আঙুল টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে টেস্ট করা দরকার । তবে অক্সিজেন ক্লিনিক তৈরি করলে অক্সিজেনের খরচ ঘন্টা প্রতি রুগীর কাছ থেকে নেওয়া ছাড়া আর খরচ নেই । 
ক্লিনিক প্রতি একজন ডাক্তারের দিনে ও রাতে দুবার ভিজিটর ব্যবস্থা করা । রোগীর জন্য একটি বাথরুম সহ একটি ১০ শয্যার হল । দু সিফটে দুজন করে চারজন নার্স । একজন হেড নার্স ,যিনি টাকা নেবেন,টিকিট করবেন ও প্রাথমিক পরীক্ষা করবেন । একটি ক্যাশ রেজিস্টার , ক্যাশ মেমো ও রুগীর নাম এন্ট্রি রেজিস্টার রাখলেই চলে যাবে। অক্সিজেন মাপার বড় মেশিন একটি। রোগীর ১২ ঘন্টার বেশি থাকার প্রয়োজন হলে রেফার করে ব্যবস্থা নিতে হবে । একটি আর ও ফিল্টার যুক্ত জলের মেশিন । দুজন হল অ্যাটেনটেন্ডস প্রথমবারের অক্সিজেন পরীক্ষার জন্য ১০/-টাকা ও ভর্তির জন্য বেড ভাড়া বাবদ ১০০/-টাকা প্রতিদিন । অক্সিজেন খরচ বাবদ ১০০/-টাকা প্রতিদিন । সাধারণত নরমাল অক্সিজেন লেভেল ৮০ থাকলে সর্দি কাশি নিউমোনিয়া ধরেনা । মাননীয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের অক্সিজেন কমে গিয়েছিল তাই দ্রুত অক্সিজেন বাড়াতে 
আইসক্রিমের প্রয়োজন হয়েছে কারণ
ক্যালরি দ্রুত বাড়ালে সর্দি জ্বর ও নিউমোনিয়ার আক্রমণ থেকে বাঁচানো সম্ভব। পেঁপে দেওয়া হয়েছে এই কারণে সম্ভবত তাঁকে ডেক্সোরেঞ্জ ইন্জেকশন 
করা হয়েছিল । দ্রুত রক্তে অক্সিজেনের পরিবহন বাড়াতে এবং এক‌ই সঙ্গে ডেক্সোরেঞ্জের সাইড এফেক্ট অনুসারে পেট ফাঁপা ও অ্যাসিড তৈরি হতে পারে
তাই পেঁপে খেতে দেওয়া হয়েছে । পেঁপে
সরবিলিনের কাজ করে বিশেষ করে 
এইক্ষেত্রে লিভার বেড়ে গেলেও যেতে
পারে তাই হজমশক্তি ঠিক রাখতে পেঁপে
অপরিহার্য এবং পেট‌ও ভরাবে শরীরের
ক্ষতি নেই । ঠিক সময়ে ভর্তি না হলে নিউমোনিয়া ধরে নিলে বড় ক্ষতির সম্ভাবনা
থাকতো । আমি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দ্রুত
আরোগ্য কামনা করি । আমার মনে হয় খুব
বেশি চিকিৎসা ওনাকে করতে হয়নি। যাইহোক যা বলছিলাম তা হলো, মোটামুটি ১২-১৪ ঘন্টা ধরে অক্সিজেন শরীরে
নিলে সামান্য জ্বর-সর্দি থাকলেও তা সেরে
যাবে । তবে ২০০/৫০০ টাকার অক্সিজেন খরচের জন্য নাগরিকদের আইসিইউ
তে ভর্তি হয়ে ৭০/৮০ হাজার টাকা খরচ করে শুধুমাত্র অক্সিজেনের অভাবের চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এলে
সেটা নিশ্চয় গায়ে লাগবে ব‌ইকি । এছাড়া
অক্সিজেন নিলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাও
কমে যায় সমস্ত স্নায়ুতন্ত্র সজাগ হয়ে ওঠে ।
©® অলোক কুন্ডু

অলোকের ঝর্নাধারায়: আমার টুকরো জীবন

অলোকের ঝর্নাধারায় -২ 
(আমার টুকরো জীবন)

গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের রাজ্য সম্পাদক ইন্দ্রনাথ দা'কে প্রথম দেখেছিলাম কলকাতার একটা আর্ট ফেয়ারে, কিন্তু উনিই যে ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সেটা পরে বুঝতে পারি। শুনেছিলাম ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় থাকতেন সিপিএমের কম্যিউনে যেরকম বিমান বসু থাকেন। একদিন বন্ধু আবৃত্তিকার নূপুর বসু ওর শিক্ষিকা,মায়ের বিষয়ে আমার হাওড়ার অফিসে এলো তখন কথায় কথায় সেই প্রথম ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম জানতে পারি। ওর সঙ্গে গিয়ে একদিন নিউ সিনেমার ওপর ইন্দ্রনাথ দার সঙ্গে আলাপ করি ( তারিখ মাস সাল পরে দেখেশুনে বসাবো এখনই মনে পড়ছে না ) আমি তখন বর্ধমানের ভাতারে পোস্টিং আর্ট কলেজ ও বি.এড পড়তে গিয়ে পরপর প্রায় আটবছর আমার সঙ্গে তখন আমার আত্মীয়-স্বজন, পরিবার বলতে কার‌ও সঙ্গেই সম্পর্ক রাখতে পারিনি। তার উপর তখন বন্ধুদের সঙ্গে ছুটির দিনে একাডেমির পেছনে বসে একটা আড্ডা দি।ওখানে যে চপ ক্যাটলেটের ক্যান্টিনটা ছিল সেখানে আড্ডাটা হোতো, এখন ওইখানে ছেলেমেরা বসে থাকে। আট বছর বোহেমিয়ান জীবন। সেইসব বন্ধুরা অধিকাংশ বহু আগে কলকাতা ছেড়েছে আর দেখাসাক্ষাত নেই। চয়ন-শুক্তির সঙ্গে আর দেখা হয়না। দুজনেই এখনও ছবি আঁকে প্রদর্শনী করে। দিলীপ ভট্টাচার্য‌ও ছবি আঁকে কাগজে রিভিউ পড়ি। এদের সঙ্গে আর দেখা হয়না। যাইহোক যা বলছিলাম ইন্দ্রনাথ দা বেশ ফর্সা, ধুতি পাঞ্জাবী পরেন সুপুরুষ। বাম আমলে বুদ্ধদেব বাবুর পরের জন। বুদ্ধবাবু তথ্য-সংস্কৃতি মন্ত্রী তখন। আর্ট কলেজ থেকে পাশ করা ইন্দ্রনাথ দা প্রচ্ছদ‌ও করেন। খুব ভালো মানুষ। আমার নাম‌ও বলতে পারেন। সেই ইন্দ্রনাথ দা আর্ট কলেজের ছাত্রদের আব্দারে একটা বড় সেমিনার ডাকলেন কলকাতায়। তথ্যকেন্দ্রে এলেন বড় বড় মানুষ সকলেই সহমত হলেন যে বিদ্যালয়স্তরে শিল্প শিক্ষা চালু করার বিষয়ে। ইতিমধ্যে কুমোরটুলিতে প্রথম গিয়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু যে বক্তব্য রেখেছিলেন প্রাথমিক স্তরে পুতুল গড়তে হবে, সেই ইতিহাস তুলে ধরে বক্তব্য রাখলেন ইন্দ্রনাথ দা। হাতে সব সময় সিগারেট থাকে ইন্দ্রদার। স্বনামধন্য বিজন চৌধুরী তখন আমাদের ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ, উনিও বক্তব্য রাখলেন। অস্ট্রেলিয়া সরকার তখন বিজন চৌধুরীর উপর তথ্যচিত্র তুলছে। স্যারের বাড়ি বালীর সাহেববাগানে, আমি গেছি অনেকবার। হাজার হাজার ছেলেমেয়েরা গণস্বাক্ষর করলো, বড় বড় দিকপাল শিল্পীরাও স্বাক্ষর করলেন। শিক্ষামন্ত্রী কান্তি বিশ্বাসের কাছেও তা জমা পড়লো। কিন্তু বামফ্রন্ট তা মানলো না। মনটা খারাপ হয়ে গেল।
ইন্দ্রনাথ দা'র কাছে নিউ সিনেমার ওপরে গেলাম একদিন। এক কথায় আমার নাম ধরে একজনকে চা দিতে বললেন। আমি যা দেখেছি ইন্দ্রনাথ দা 
একজন চরম বামপন্থী হয়ে এত সাধারণ থাকতেন এবং আজকের দিনে মনে হয় ওইসব নির্লোভ মানুষ গুণি স্বনামধন্য শিল্পী হয়েও এবং ইন্দ্র-দার হাতে বামফ্রন্ট সরকার থাকা সত্বেও কোনও কিছু করেছিলেন বলে কখনও শুনিনি। তিনি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে বুদ্ধ বলে ডাকতেন। কান্তি বিশ্বাসকে কান্তি বলে ডাকতেন। এত ভাব হয়ে গেল যে ইন্দ্রনাথ দা ওর প্রদর্শনীর ইনভিটেশন হাতে দিলেন। আমার দেখা অতি সৌন্দর্যমন্ডিত হাতের লেখা ইন্দ্রদার। আমার সঙ্গে সিপিএমের কোনও সম্পর্ক নেই। তবু লোকটাকে আমার ভালো লেগে গেল। এহেন সৎ নির্লোভ আমি দেখিনি।এমনকি ইন্দ্রদা একদিন বললেন, তোকে মেট্রোচ্যানেলে আর্টক্যাম্পে ঢুকিয়ে দিলাম।
আমার তো মহাআনন্দ, কেননা মহারথীরা দলবেঁধে ছবি আঁকবেন। আমরা জুনিয়ররা ভরাট করবো। এই সুযোগ কখনও হবে আমার জীবনে। ইন্দ্র-দাকে ভগবানের মতো মনে হচ্ছে আমার মতো সামান্যজনের কাছে। এরপর একটা বড় কি একটা মেলা ঠিক ময়দানের কোথাও একটা হয়েছিল। সেখানে নানারকম প্রদর্শনী হয়েছে।
ইন্দ্রনাথ দার কার্ড এলো বাড়ির ঠিকানায় গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের অনুষ্ঠান। বড় বড় আর্টিস্টের নাম। ব‌ইয়ের স্টল। পেন্টারদের প্রদর্শনী। আমার কোনও সুযোগ নেই। আমি ওইসব সুবিধা নেওয়ার পক্ষেও নেই। যাইহোক উদ্বোধন একটা শনিবার করে হয়েছিল। আমি বর্ধমানের ভাতার থেকে উপস্থিত হলাম। একটু দেরিতে, ততক্ষণে অনুষ্ঠান শেষ। এক জায়গায় মাঠের মধ্যে ইন্দ্রনাথ দা বসে গুণমুগ্ধরা দু চারজন 
আছেন। আমি বসলাম গিয়ে একটু দূরে। বললেন এত দেরি হলো কেন রে ? খুব আন্তরিক কন্ঠস্বর।
একটু দূরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বসে আছেন। ইন্দ্রনাথ দা হঠাৎ আমার হাতে একটা লাইটার ও সিগারেটের প্যাকেট দিয়ে বললেন, এটা দিয়ে আয়, বুদ্ধকে। আমি আগেই দেখেছি বসে আছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, তার কাছে একজন পুলিশ অফিসার দাঁড়িয়ে, দুজন ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে, কিছু আলোচনা করছেন। আমি তো হকচকিয়ে গেছি, কি বলছেন ইন্দ্র দা। প্রথমটা বুঝতে পারিনি। আমি বুদ্ধবাবুর কাছে গেলাম হাতে দিলাম আমার দিকে তাকালেন না। সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা নিয়ে আমার হাতে প্যাকেট ফিরিয়ে দিলেন, অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। দুবারেই আলো জ্বালিয়ে সিগারেট ধরালেন। ওটাও ফিরিয়ে  দিলেন। সেই প্রথম শুনলাম জলদগম্ভীর স্বর বুদ্ধবাবুর। আমাকে বললেন ওনাকে দিয়ে দাও। আমি চলে এলাম ইন্দ্রদার কাছে। ©® অলোক কুন্ডু

অলোকের ঝর্নাধারায়: আমার ঠুকরো জীবন

অলোকের ঝর্নাধারায় -২ 
(আমার টুকরো জীবন)

গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের রাজ্য সম্পাদক ইন্দ্রনাথ দা'কে প্রথম দেখেছিলাম কলকাতার একটা আর্ট ফেয়ারে, কিন্তু উনিই যে ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় সেটা পরে বুঝতে পারি। শুনেছিলাম ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় থাকতেন সিপিএমের কম্যিউনে যেরকম বিমান বসু থাকেন। একদিন বন্ধু আবৃত্তিকার নূপুর বসু ওর শিক্ষিকা,মায়ের বিষয়ে আমার হাওড়ার অফিসে এলো তখন কথায় কথায় সেই প্রথম ইন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম জানতে পারি। ওর সঙ্গে গিয়ে একদিন নিউ সিনেমার ওপর ইন্দ্রনাথ দার সঙ্গে আলাপ করি ( তারিখ মাস সাল পরে দেখেশুনে বসাবো এখনই মনে পড়ছে না ) আমি তখন বর্ধমানের ভাতারে পোস্টিং আর্ট কলেজ ও বি.এড পড়তে গিয়ে পরপর প্রায় আটবছর আমার সঙ্গে তখন আমার আত্মীয়-স্বজন, পরিবার বলতে কার‌ও সঙ্গেই সম্পর্ক রাখতে পারিনি। তার উপর তখন বন্ধুদের সঙ্গে ছুটির দিনে একাডেমির পেছনে বসে একটা আড্ডা দি।ওখানে যে চপ ক্যাটলেটের ক্যান্টিনটা ছিল সেখানে আড্ডাটা হোতো, এখন ওইখানে ছেলেমেরা বসে থাকে। আট বছর বোহেমিয়ান জীবন। সেইসব বন্ধুরা অধিকাংশ বহু আগে কলকাতা ছেড়েছে আর দেখাসাক্ষাত নেই। চয়ন-শুক্তির সঙ্গে আর দেখা হয়না। দুজনেই এখনও ছবি আঁকে প্রদর্শনী করে। দিলীপ ভট্টাচার্য‌ও ছবি আঁকে কাগজে রিভিউ পড়ি। এদের সঙ্গে আর দেখা হয়না। যাইহোক যা বলছিলাম ইন্দ্রনাথ দা বেশ ফর্সা, ধুতি পাঞ্জাবী পরেন সুপুরুষ। বাম আমলে বুদ্ধদেব বাবুর পরের জন। বুদ্ধবাবু তথ্য-সংস্কৃতি মন্ত্রী তখন। আর্ট কলেজ থেকে পাশ করা ইন্দ্রনাথ দা প্রচ্ছদ‌ও করেন। খুব ভালো মানুষ। আমার নাম‌ও বলতে পারেন। সেই ইন্দ্রনাথ দা আর্ট কলেজের ছাত্রদের আব্দারে একটা বড় সেমিনার ডাকলেন কলকাতায়। তথ্যকেন্দ্রে এলেন বড় বড় মানুষ সকলেই সহমত হলেন যে বিদ্যালয়স্তরে শিল্প শিক্ষা চালু করার বিষয়ে। ইতিমধ্যে কুমোরটুলিতে প্রথম গিয়ে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু যে বক্তব্য রেখেছিলেন প্রাথমিক স্তরে পুতুল গড়তে হবে, সেই ইতিহাস তুলে ধরে বক্তব্য রাখলেন ইন্দ্রনাথ দা। হাতে সব সময় সিগারেট থাকে ইন্দ্রদার। স্বনামধন্য বিজন চৌধুরী তখন আমাদের ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজের অধ্যক্ষ, উনিও বক্তব্য রাখলেন। অস্ট্রেলিয়া সরকার তখন বিজন চৌধুরীর উপর তথ্যচিত্র তুলছে। স্যারের বাড়ি বালীর সাহেববাগানে, আমি গেছি অনেকবার। হাজার হাজার ছেলেমেয়েরা গণস্বাক্ষর করলো, বড় বড় দিকপাল শিল্পীরাও স্বাক্ষর করলেন। শিক্ষামন্ত্রী কান্তি বিশ্বাসের কাছেও তা জমা পড়লো। কিন্তু বামফ্রন্ট তা মানলো না। মনটা খারাপ হয়ে গেল।
ইন্দ্রনাথ দা'র কাছে নিউ সিনেমার ওপরে গেলাম একদিন। এক কথায় আমার নাম ধরে একজনকে চা দিতে বললেন। আমি যা দেখেছি ইন্দ্রনাথ দা 
একজন চরম বামপন্থী হয়ে এত সাধারণ থাকতেন এবং আজকের দিনে মনে হয় ওইসব নির্লোভ মানুষ গুণি স্বনামধন্য শিল্পী হয়েও এবং ইন্দ্র-দার হাতে বামফ্রন্ট সরকার থাকা সত্বেও কোনও কিছু করেছিলেন বলে কখনও শুনিনি। তিনি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে বুদ্ধ বলে ডাকতেন। কান্তি বিশ্বাসকে কান্তি বলে ডাকতেন। এত ভাব হয়ে গেল যে ইন্দ্রনাথ দা ওর প্রদর্শনীর ইনভিটেশন হাতে দিলেন। আমার দেখা অতি সৌন্দর্যমন্ডিত হাতের লেখা ইন্দ্রদার। আমার সঙ্গে সিপিএমের কোনও সম্পর্ক নেই। তবু লোকটাকে আমার ভালো লেগে গেল। এহেন সৎ নির্লোভ আমি দেখিনি।এমনকি ইন্দ্রদা একদিন বললেন, তোকে মেট্রোচ্যানেলে আর্টক্যাম্পে ঢুকিয়ে দিলাম।
আমার তো মহাআনন্দ, কেননা মহারথীরা দলবেঁধে ছবি আঁকবেন। আমরা জুনিয়ররা ভরাট করবো। এই সুযোগ কখনও হবে আমার জীবনে। ইন্দ্র-দাকে ভগবানের মতো মনে হচ্ছে আমার মতো সামান্যজনের কাছে। এরপর একটা বড় কি একটা মেলা ঠিক ময়দানের কোথাও একটা হয়েছিল। সেখানে নানারকম প্রদর্শনী হয়েছে।
ইন্দ্রনাথ দার কার্ড এলো বাড়ির ঠিকানায় গণতান্ত্রিক লেখক শিল্পী সংঘের অনুষ্ঠান। বড় বড় আর্টিস্টের নাম। ব‌ইয়ের স্টল। পেন্টারদের প্রদর্শনী। আমার কোনও সুযোগ নেই। আমি ওইসব সুবিধা নেওয়ার পক্ষেও নেই। যাইহোক উদ্বোধন একটা শনিবার করে হয়েছিল। আমি বর্ধমানের ভাতার থেকে উপস্থিত হলাম। একটু দেরিতে, ততক্ষণে অনুষ্ঠান শেষ। এক জায়গায় মাঠের মধ্যে ইন্দ্রনাথ দা বসে গুণমুগ্ধরা দু চারজন 
আছেন। আমি বসলাম গিয়ে একটু দূরে। বললেন এত দেরি হলো কেন রে ? খুব আন্তরিক কন্ঠস্বর।
একটু দূরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বসে আছেন। ইন্দ্রনাথ দা হঠাৎ আমার হাতে একটা লাইটার ও সিগারেটের প্যাকেট দিয়ে বললেন, এটা দিয়ে আয়, বুদ্ধকে। আমি আগেই দেখেছি বসে আছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, তার কাছে একজন পুলিশ অফিসার দাঁড়িয়ে, দুজন ভদ্রলোক দাঁড়িয়ে, কিছু আলোচনা করছেন। আমি তো হকচকিয়ে গেছি, কি বলছেন ইন্দ্র দা। প্রথমটা বুঝতে পারিনি। আমি বুদ্ধবাবুর কাছে গেলাম হাতে দিলাম আমার দিকে তাকালেন না। সিগারেটের প্যাকেট থেকে একটা নিয়ে আমার হাতে প্যাকেট ফিরিয়ে দিলেন, অন্যদের সঙ্গে আলোচনা করছেন। দুবারেই আলো জ্বালিয়ে সিগারেট ধরালেন। ওটাও ফিরিয়ে  দিলেন। সেই প্রথম শুনলাম জলদগম্ভীর স্বর বুদ্ধবাবুর। আমাকে বললেন ওনাকে দিয়ে দাও। আমি চলে এলাম ইন্দ্রদার কাছে। ©® অলোক কুন্ডু

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...