শুক্রবার, ৫ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

কৃষি আইনের সামাজিক নিষ্পত্তি হোক: অলোক কুন্ডু

🎯 আচ্ছা এখনও আমার মাথায় ঢোকেনি, সত্যিই কৃষকরা সৎ ভাবে না ইচ্ছাকৃতভাবে নাকি জেদের বশে এই কৃষি আন্দোলন করে চলেছেন। একবছর আইন অনুসারে যদি কাজ ওনারা করতে দিতেন, তখন যদি ওনারা বলতে পারতন, দেখলেন তো আমরা গতকাল যা বলেছিলাম, তা আজ সঠিক হলো। তাহলে মনে হয় সারা দেশকে তারা পাশে পেতেন। এর সঙ্গে জিনিসের দাম ওঠাপড়া তো জড়িত, তাই না ? সাধারণ মানুষরা বুঝতেই পারছে না কেন এতদিন ধরে ধর্ণা চলছে। আইনটা যে ফালতু তা তো প্রমাণ করা দরকার। তা না করতে দেওয়াটাও ঠিক নয়। সারা দেশ তাহলে এখনও মানতে পারেনি কেন। এর পেছনে শুধুমাত্র যে রাজনীতি নেই, এটা কে বোঝাবেন ? এই শীতে কৃষকদের কষ্ট যে হচ্ছে তা সকলেই বুঝছেন। সবথেকে ভালো হোতো কৃষি আইনের প্রতিটি ক্লজ ধরে ধরে কৃষি আন্দোলনকারীরা তার উত্তর দিতেন, লিখতেন। তাতে যারা সমর্থন করছেন সকলে স্বাক্ষর করতেন। সেইসব প্রশ্ন-উত্তরগুলি যদি ছেপে বই করে সরকারের পয়সায় ছাপিয়ে প্রতি বাড়িতে বিতরণ করা হোতো, তবে সবাই পড়ে দেখতে পারতেন। আমরা দুটোই পড়ে দেখতাম। তন্নতন্ন করে লিখুন আপনারা। দায় যদি শুধু কৃষকদের হয়, তবে তারাই বই ছাপিয়ে বিতরণ করুন। প্রতিটি ক্লজ এবং সাবক্লজের প্রশ্ন এবং উত্তর তৈরি করে জনগণকে পড়তে দিন। পড়ার পর ওই বই অনুসারে হোয়াটসঅ্যাপে ভোট নিন সকলের কাছে থেকে। যাদের হোয়াটসঅ্যাপ নেই তারা বুথে গিয়ে পক্ষে বিপক্ষে ভোট দিন। একটা পথে তো সকলকে যেতে হবে। ছয়মাস আন্দোলন ও আইন দুটোই বন্ধ থাকে। আমি একজন যুক্তিবাদী হিসেবে নিজেকে দেখি। তাই যুক্তিযুক্ত কারণ সামনে রাখুন। অবশ্যই কৃষকদের সমর্থন করবো যদি বুঝি সরকারের দোষ। এখন যা হচ্ছে তা সেই কারণে সমর্থন করার মন চাইলেও পারছি না। কোথাও একটা
চোর-পুলিশ খেলা চলছে। যা জনগণ ধরতে পারছে না। ©® অলোক কুন্ডু

কৃষি আইনের সামাজিক নিষ্পত্তি হোক: অলোক কুন্ডু

🎯 আচ্ছা এখনও আমার মাথায় ঢোকেনি, সত্যিই কৃষকরা সৎ ভাবে না ইচ্ছাকৃতভাবে নাকি জেদের বশে এই কৃষি আন্দোলন করে চলেছেন। একবছর আইন অনুসারে যদি কাজ ওনারা করতে দিতেন, তখন যদি ওনারা বলতে পারতন, দেখলেন তো আমরা গতকাল যা বলেছিলাম, তা আজ সঠিক হলো। তাহলে মনে হয় সারা দেশকে তারা পাশে পেতেন। এর সঙ্গে জিনিসের দাম ওঠাপড়া তো জড়িত, তাই না ? সাধারণ মানুষরা বুঝতেই পারছে না কেন এতদিন ধরে ধর্ণা চলছে। আইনটা যে ফালতু তা তো প্রমাণ করা দরকার। তা না করতে দেওয়াটাও ঠিক নয়। সারা দেশ তাহলে এখনও মানতে পারেনি কেন। এর পেছনে শুধুমাত্র যে রাজনীতি নেই, এটা কে বোঝাবেন ? এই শীতে কৃষকদের কষ্ট যে হচ্ছে তা সকলেই বুঝছেন। সবথেকে ভালো হোতো কৃষি আইনের প্রতিটি ক্লজ ধরে ধরে কৃষি আন্দোলনকারীরা তার উত্তর দিতেন, লিখতেন। তাতে যারা সমর্থন করছেন সকলে স্বাক্ষর করতেন। সেইসব প্রশ্ন-উত্তরগুলি যদি ছেপে বই করে সরকারের পয়সায় ছাপিয়ে প্রতি বাড়িতে বিতরণ করা হোতো, তবে সবাই পড়ে দেখতে পারতেন। আমরা দুটোই পড়ে দেখতাম। তন্নতন্ন করে লিখুন আপনারা। দায় যদি শুধু কৃষকদের হয়, তবে তারাই বই ছাপিয়ে বিতরণ করুন। প্রতিটি ক্লজ এবং সাবক্লজের প্রশ্ন এবং উত্তর তৈরি করে জনগণকে পড়তে দিন। পড়ার পর ওই বই অনুসারে হোয়াটসঅ্যাপে ভোট নিন সকলের কাছে থেকে। যাদের হোয়াটসঅ্যাপ নেই তারা বুথে গিয়ে পক্ষে বিপক্ষে ভোট দিন। একটা পথে তো সকলকে যেতে হবে। ছয়মাস আন্দোলন ও আইন দুটোই বন্ধ থাকে। আমি একজন যুক্তিবাদী হিসেবে নিজেকে দেখি। তাই যুক্তিযুক্ত কারণ সামনে রাখুন। অবশ্যই কৃষকদের সমর্থন করবো যদি বুঝি সরকারের দোষ। এখন যা হচ্ছে তা সেই কারণে সমর্থন করার মন চাইলেও পারছি না। কোথাও একটা
চোর-পুলিশ খেলা চলছে। যা জনগণ ধরতে পারছে না। ©® অলোক কুন্ডু

সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০২১

ভোটের পর জোট : অলোক কুন্ডু


⛔ এই মূহুর্তে বাম ও কংগ্রেস দল মুখে যতই বলুন না কেন, তারা ইতিমধ্যে বুঝতে পারছেন তাদের মাঠ ময়দানে লোক নিয়ে আসা খুব কষ্টদায়ক। প্রকৃতপক্ষে জনগণকে এই দুটি দল থেকে আর কিছু দেওয়ার নেই। কংগ্রেস ও বাম দল ভালো জানেন, না দিলে কেউ কাছে আসে না। একসময় স্কুল-কলেজের চাকরিতে এদের বহু ছেলেমেয়েরা ঢুকেছিল, তাই তারা মিছিল মিটিংয়ে আসতো ও পেছন থেকে দলকে সংগঠিত করতেও পথে নামতো। এখনও বামেদের কিছু সেখানে পড়ে থাকলেও কংগ্রেসের ময়দান এই মূহুর্তে একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। কিন্তু তারা যৌথভাবে ব্রিগেড করলে মাঠ ভরিয়ে দেখাতে পারবেন যে তাদের ভোটাররা এখনও তাদের সঙ্গে আছে। এই বিগ্রেড ভরানোয় অবশ্যই বামেদের পুরনো সংগঠনের একটা মহিমায় ভিড় হলেও হতে পারে। তবে গ্রামে যখন ওই জনগণ ফিরে যাবে তারা তাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াইটা লড়বে বিজেপিকে ভোট দিয়ে--এই বিষয়টা বামেরা কয়েক বছর ধরেই দেখতে পাচ্ছেন।
তৃণমূল এই বিষয়টাকে নিশ্চিত মাথায় রেখেছে, তাই তারাও চাইবে আগামী ২৮/২-এ ব্রিগেড ভরুক। তারাও তাই সাহায্য করবে, আর এখান থেকেই বাম+কংগ্রেস ও তৃণমূলের একটা যৌথ বুথ ম্যানেজমেন্ট তৈরি হতে শুরু হতে পারে।

⛔ সমস্ত করে-খাওয়া পার্টি, ব্যক্তি, বাম+কংগ্রেস ছেড়ে এখন তৃণমূল কংগ্রেসে যুক্ত হয়েছে। যার ফলে এই নতুন করে-খাওয়া জনগোষ্ঠী চাইবে তৃণমূল কংগ্রেসকে যেভাবেই হোক টিঁকিয়ে রাখতে। এই করে-খাওয়া জনগোষ্ঠী যত না তৃণমূল কংগ্রেসকে রাখতে চান, তার থেকে বেশি রাখতে চান নিজেদের অস্তিত্ব যেন টিঁকে থাকে। কবি থেকে আবৃত্তিকার, সঞ্চালক থেকে পাড়ার গাইয়ে, তোলাবাজ থেকে চাকরির আশায় পড়ে থাকা বেকার সকলেই আছেন এই দলে, তৃণমূল কংগ্রেস থেকে শেষবার দুয়ে নিতে এদের থেকে ভালো আর কেউ জানেন না। এদের সিংহভাগ এসেছেন বাম ও কংগ্রেস থেকে। একদম আনকোরাও এসেছেন। বামেদের কাছে সুবিধা পাওয়া কবি, সাহিত্যিক থেকে কন্ট্রাক্টর পর্যন্ত একেবারে দলবল সহ তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন।এরপর তো আছেন-- বুদ্ধিজীবীরা। সবাই মিলে তৃণমূল কংগ্রেসে, তারা জোটবদ্ধ হয়ে আছে। নতুন এই করে-খাওয়া, ধান্দাবাজ জনগোষ্ঠীরা আর কাউকে কোনও ভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের সংস্কৃতিতে ঢুকতে দেয়নি, কয়েক বছর। যা খেয়েছে, যা করেছে সব নিজেদের ব্যক্তিগত উদ্দেশ্যে। এতে করে তৃণমূলের ভালো থেকে খারাপ হয়েছে। বরং যে কোনও উপায়ে এইদল রটিয়েছে ওরা, তারা এবং এরা তৃণমূলের বিরোধী, চক্রান্ত করছে তৃণমূলের। একদিকে এরা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ গড়েছে নিজেদের মধ্যে এবং কীভাবে বিজেপিকে আটকানো যায় সেই কাজে নিযুক্ত হয়েছে। অন্যদিকে নিজেদের পুরনো বাম ও কংগ্রেস বন্ধুদের সঙ্গেও রীতিমতো যোগাযোগ রেখে চলেছেন। এদের নিরন্তর প্রচেষ্টা চলেছে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার। হঠাৎ এদের কথা লেখার কি এমন দরকার পড়লো ? কারণ এরাই দেশকে, সমাজকে এমনকি তৃণমূল কংগ্রেসকে সর্বনাশের দিকে নিয়ে চলেছে। নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে নিজেদের পছন্দ মতো লোককে তারা বন্ধু করেছে। চাকরি গুছিয়ে নিয়েছে, পাড়ার সংস্কৃতি দখল করে রেখেছে, কবিতা উৎসব থেকে লিটল ম্যাগাজিন উৎসবে এরা আর কাউকে ঢুকতে দেয়নি। এরপর আছে তৃণমূলের নেতাদের কানমানি। এরাই বাম আমলে সমস্ত কিছু দখল করে রেখেছিল। এদের জোটবদ্ধ কার্যক্রম ভেতর ভেতর তৃণমূলে আসার পর আরও বেড়ে উঠছে। কিন্তু বিরোধীরা যে সমস্ত তথ্য দিয়ে প্রতিদিন ময়দান জমাচ্ছে সেইগুলিও
এখানে আলোচনা আর করার দরকার নেই।

⛔ সকলের মনে হতে পারে, এরা তৃণমূলের কি এমন ক্ষতি করছে ? ক্ষতি তো অবশ্যই করেছে, কারণ এরা যেখানে সুবিধা পাচ্ছে সেখানেই ভিড়ে যাচ্ছে। পরন্তু এরা তৃণমূলের সভা-সমিতি থেকে
নিজেদের দূরত্ব বজায় রেখেছে। পোস্টার মার্কিন। তৃণমূলের প্রত্যক্ষ সাহায্য না করেও এরা মৌচাক তৈরি করে ফেলছে। কিন্তু এদের আসল বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজনকে এরা তৃণমূলে নিয়ে যেতে পারেননি। কারণ এদেরকে কখনও প্রকাশ্যে তৃণমূল কংগ্রেস করতে দেখা যায়নি। কারণ ভবিষ্যতে যাতে এরা যেকোনও দলে নাম লেখাতে পারে, সেই পথও সমানভাবে খুলে রেখেছেন। এমনকি এদের অনেকেই গোপনে বিজেপির হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে, ফেসবুক গ্রুপেও নাম লিখিয়েও রেখেছেন। এরা তৃণমূলের তো বটেই অন্য দলের কাছেও রহস্যময় চরিত্র ও ক্ষতিকারক। এরা কিন্তু সবসময় গোপন সলাপরামর্শ করে থাকে, কেবলমাত্র নিজেদের অস্তিত্বরক্ষা করা ছাড়া এই সুবিধাবাদের আর দ্বিতীয় কোনও কাজ নেই। কিন্তু তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্কের রমরমা জন্য তৃণমূল এই দিকটা একেবারেই খেয়াল করেনি। এদের জন্য তৃণমূল কংগ্রেসেও বহু মানুষ যেতে পারেনি কিংবা এদের ঘৃণা করার জন্য ঘেন্নায় তৃণমূল কংগ্রেস থেকে সব সময় তারা সরে থেকেছে। এইসব থার্ড গ্রেডের লোকেরাই বেশি আছে সরকারী দলে। তাই ভালো লোকজন আর যায়নি, গেলে তৃণমূলের নীচ তলায় এত বদনাম হোতো না। এরা না হোমে না যজ্ঞের।

⛔ ভালো লোক, শিক্ষিত মানুষ, সহজ-সরল মানুষ স্বাভাবিক ভাবে বিজেপিতে চলে গেছে,
হিন্দুত্বের সঙ্গে সম্পর্ক না থাকলেও অনেকেই বিজেপিকে সঠিক পার্টি ভেবেছে। এইসব মানুষের কিন্তু এখন কোনও চাহিদা নেই। এই জনগোষ্ঠী কেবলমাত্র মনের স্বাধীনতা চেয়েছে। উচিত চেয়েছে। সম্মাননা চেয়েছে। সততা চেয়েছে। বাঁচতে চেয়েছে। বিজেপির উচিত হবে তাদের সম্মান জানানো। এই যে নীচুতলায় এইসব দীর্ঘদিন হয়ে চলেছে তা কখনোই কিন্তু কোনও দলের নেতারা জানতে পারেননা। কারণ যারাই বামে ছিল তারাই তৃণের লোকবল এবং এইসব রহস্যময় লোকের জন্য একদিকে ক্রমশ বিজেপির লোকবল বেড়েছে। তৃণমূলের আমলে কেউ হয়েছেন ক্লাবের সেক্রেটারি, কেউ মাতব্বর, কেউ কবিতার চর্চায়, কবি হয়ে গেছেন তো কেউ কেউ হয়েছেন গাইয়ে, ছোট সঞ্চালক থেকে বড় সঞ্চালক। কেউ পেয়েছেন সাতলাখ টাকা দিয়ে প্রাইমারির চাকরিও। বাম আমলের বহু অধ্যাপক, লেকচারার ও শিক্ষক কিন্তু গুছিয়ে নিলেও তারা মনেপ্রাণে বাম ছেড়ে চলে যাননি এখনও। আর যারা সম্মান, যত্ন, সততা, সভ্যতা চেয়েছেন তারা পড়েছিলেন একাকি হয়ে। এই ক'বছরে তারা কোনও দলে যাননি। তারা না বাম না তৃণমূলের। বাম ও নব্য তৃণমূলের লপরচপরে এই দল উপেক্ষিত হয়ে আছে অনেক কাল। একদিকে থেকে তাই বিজেপির নেতা-নেতৃত্ব
অন্যান্য দল থেকে এলেও নীচু তলার লোকেরা ৯/১০ বছর চুপচাপ বসে ছিলেন। স্বাভাবিকভাবে
এদের বিজেপিতে যেতে অসুবিধা হয়নি।

⛔ এই যে যারা তৃণমূলে সুবিধা পাচ্ছে কিংবা বামপন্থী দলেতে আছেন তারা সবাই মিলে চাননা কিছুতেই যেন বিজেপি আসতে না পারে। আর সব চেয়ে আশ্চর্যজনক এরাই ফেসবুকে ও হোয়াটসঅ্যাপে রীতিমতো জাঁকিয়ে বসে আছেন। যার ফলে বামেদের ও তৃণমূলের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ও প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়িয়েছে বিজেপি। কংগ্রেস এইসব ঝামেলায় নেই। বিচ্ছিন্ন ভাবে কয়েকটি পকেটে তারা শুধুমাত্র রাজনীতিটুকু করে থাকে।
বিজেপি নেতাদের সঙ্গে কংগ্রেসি নেতাদের যত শত্রুতা থাকুক না কেন নীচু তলার বিজেপি ও অবশিষ্ট কংগ্রেস কর্মীদের কোনও ঝগড়া নেই। সম্ভবত শেষ মুহূর্তে এরা সবাই বিজেপিকে ভোট দিয়ে দেবে।

⛔ বাম নেতারা যতই ভোটে নামুন আর জোট করুন, তারা জানেন তাদের পক্ষে ২০২১-এ জোট গড়লেও রাজ্যের ক্ষমতা অধিকার করা সম্ভব নয়। তাদের অত কষ্ট করে গড়া বাম দলের নেতা-মন্ত্রীরাও হাতে থাকেনি তাদের দলের আনুগত্যের মধ্যে। একটা সদস্য গড়ে তুলতে, পার্টি কর্মী থেকে লোকাল কমিটির মেম্বার হতে, কত কাঠখড় তারা পুড়িয়ে ছিলেন। কিন্তু রাখতে পারেননি তাদের। নেতা করতে বাড়ির একগুষ্টি লোককে চাকরি, প্রফেসরি, পিএইচডি, শিক্ষক, ইউনিভার্সিটির সদস্য কতকিছু করে দিয়েছেন। তবু তারা থাকেননি। তাই বামেদের এখন ভোটারের হিসাব বাড়ানো ছাড়া, দু একটা পঞ্চায়েত দখল রাখা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। পার্টিতে বিমান বসু ছাড়াও এখনও বেশ কয়েকজন খাঁটি মানুষ আছেন যারা ১৯৬৯/৭০-এর মতন দলকে রক্ষা করে চলেছেন ও করে যাবেন। বামদল সবসময় অঙ্ক কষে দল চালনা করে। তারা বিলক্ষণ জানেন পার্টিচিঠি, পার্টিক্লাস, পার্টকর্মী কাকে বলে। এখনও তারা ভাল পার্টিকর্মী জোগাড় করতে পারছেন-- স্কুল, কলেজ ও ইউনিভার্সিটি থেকে। এখনও পর্যন্ত ওরাই যে আসল বামপন্থা টিঁকিয়ে রেখেছেন তা সকলেই জানেন। সংখ্যায় কম হলেও তারাই একমাত্র এখনও দলের সম্পদ। তৃণমূল কংগ্রেস আসার পর গ্রামেগঞ্জে তাদের দলের জনভিত্তি ক্রমশ দুর্বল হয়েছে। তার একটি কারণ হলো গ্রামের শিক্ষিত গোষ্ঠী ভয়ে সিঁটিয়ে চুপ করে বসে গেছেন। এবিটিএ-র সদস্য থাকলেও তারা আর প্রকাশ্যে আসতে ভয় পান। তাদের গাড়ি বাড়ি সচ্ছলতা আসায় তারা সামাজিকভাবে লড়াইয়ের মাটি আঁকড়ে রাখতে পারেননি। এদিকে গ্রামীণ যে আদিবাসী গোষ্ঠী ছিল তাদের ভোট ব্যাঙ্ক সেখানে ফাটল ধরিয়েছে বিজেপি। দেখতে গেলে একমাত্র বিজেপির সঙ্গেই লড়াই চলছে তৃণমূলের। গ্রাম বা শহরে বামেরা তৃণমূলের সঙ্গে আর পাড়ায় পাড়ায় লড়াই করতে চায়নি, কারণ খুনখারাপি থেকে তারা পার্টিকে রক্ষার দায়িত্ব বেশি নিয়েছেন। দলের কর্মীরা খুন হয়ে যাচ্ছিলেন, কিছুটা পিছিয়ে এসে তারা রক্ষা করতে পেরেছেন সদস্যদের বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছেন। প্রয়োজনে তারা লড়বেন ও আত্মরক্ষা করবেন। তাই তাদের প্রধান ও মুখ্য উদ্দেশ্য নীরবতা। সেই লক্ষ্য থেকে তারা নীরবতা বজায় রেখেছিল। সেই পুরস্কার স্বরূপ তৃণমূল কংগ্রেস এখন শহরে-গ্রামে সিপিএম বা বাম নেতাদের ডেকে এনে তাদের পার্টি অফিস খুলিয়েছে ২০২০-তে। কিন্তু শর্ত একটাই ভোট তাদের দিতে হবে। বামপন্থীরা খুনজখমের কেস থেকে, বেআইনি অস্ত্র রাখার কেস থেকে, গাঁজা কেস থেকে এখন অনেকটা মুক্তি পেয়েছে। তৃণমূলের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলতে কয়েকজন এগিয়ে এসেছেন ও সফলতা পেয়েছেন। সফলতা বলতে
পার্টি অফিস খোলা, বাইক রাশি করা অথবা ছোটখাটো সভা করতে পারা। এখন সেইসূত্রে
পার্টি থেকে, গ্রামে-গঞ্জে একটু আধটু মিটিং মিছিল করতে পারছে। গ্রামের কয়েকজন মুসলমান পরিবার এখনও তাদের সঙ্গে রয়েছেন। বামপন্থীরা শ্রমিক, কৃষক ও মুসলমান আদিবাসীদের বন্ধু বলে আজও সমান প্রচার করে থাকেন। এখনও ৭% ভোটার তাদের সঙ্গে রয়েছে বলে মনে করেন। কলেজ ইউনিয়ন, ইউনিভার্সিটি এখনও তারা অনেকটা হাতে রেখেছেন। সঙ্গে কংগ্রেসদলকে তারা পাশে পেয়েছেন।

⛔ যদিও মালদহ, মুর্শিদাবাদ, পুরুলিয়া ছাড়া কংগ্রেসের কোথাও তেমন আর সংগঠন নেই। অফিসগুলো অনেক সময় খোলা হয়না। অধিকাংশ তৃণমূলের দখলে চলে গেছে। তবুও সর্বভারতীয় ধর্ম-নিরপেক্ষ দল হিসেবে কংগ্রেসের গ্রহণযোগ্যতা এখনও আছে। তবে পশ্চিমবঙ্গ রাজনীতিতে এখন সিপিএমের সংগঠনের সাহায্য নিয়েই কংগ্রেসের এখন টিঁকে থাকার মতো অবস্থা। বাম ও কংগ্রেসের জন্য সুখবর যে তারা আব্বাস সিদ্দিকীদের সঙ্গে হয়তো জোট করছেন। যদি তা করেন তবে বিজেপিকে সাম্প্রদায়িক দল হিসেবে চিহ্নিত করতে তাদের আরও সুবিধা হবে এবং ভোটও বাড়াতে পারবেন। বিশেষ করে বিজেপির যেমন একটাই শত্রু তা হলো তৃণমূল কংগ্রেস, কিন্তু বাম ও কংগ্রেসের দু-দুটো করে শত্রু। বাম-কংগ্রেসের প্রধান শত্রু কিন্তু বিজেপি। এখন বিজেপিকে আটকিয়ে তৃণমূলকে জেতানো ছাড়া বাম ও কংগ্রেসের হাতে নতুন কোনও ফর্মূলা নেই। এই গন্ডগোলের পথের জন্য, এই ধোঁয়াশা জিইয়ে রাখার জন্য আজ গ্রামে ও শহরে বিজেপির লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বাম+কংগ্রেসের
অবস্থা দিন কে দিন খারাপ হয়ে চলেছে। তারা যতদিন না তাদের শত্রুপক্ষ চিহ্নিত করতে না পারবেন ততদিন তারা আর মূল প্রতিপক্ষ হয়ে উঠতে পারবেন না। যেহেতু তাদের এটাই নীতি তাই কোনোভাবেই তারা বিজেপিকে ছেড়ে বন্দুকের নল তৃণমূলের দিকে ঘোরাতে পারবে না।

⛔ বহুবার বলেছি শুভেন্দু অধিকারী এখন একাই একশো। ওদিকে সেই ক্ষমতা রাখেন আব্বাস সিদ্দিকীও। স্পষ্টতই ভোটের বাজার এখন দিনকে দিন গরম হয়ে উঠছে এই দুই নেতার আক্রমণাত্মক বক্তব্যের গুণে। এখন পর্যন্ত বিজেপির কোনও সভা ফ্লপ হয়নি। বিশাল লোক সমাগম হচ্ছে তাদের প্রতিটি সভায়। নির্বাচন কমিশন সঠিক ভাবে ভোট করাতে পারলে বিজেপির পাল্লা অনেকটা ভারি এখন পর্যন্ত। কারণ সরকার বিজেপির অগ্রগতি বুঝতে পেরে প্রায় প্রতিটি দিন, একের পর এক দানছত্র ঘোষণা করছে।

⛔ এখন প্রশ্ন বিজেপি কি ঠিক মতো ভোট করাতে পারবে ? যতটা তারা ভাবছেন। কারণ সরকারি কর্মচারীদের বিভিন্ন প্যাঁচপয়জার জানা আছে ভোটের ক্ষেত্রে, তাদের কন্ট্রোল করবে কিন্তু তৃণমূল। বামেরা দীর্ঘদিন সরকারী কর্মচারীদের আদর যত্নে এই কারণে লালনপালন করেছিল। যাতে ভোটের দিন বিপক্ষে রিপোর্ট কিছু না দেন। ভোটের বুথ যদি বাম কংগ্রেস ও তৃণমূল দখল করে রাখে এবং ভোটাররা ভোট স্বাধীনভাবে ২০১১ সালের মতো যদি না দিতে পারে তবে বিজেপির জেতা ছন্নছাড়া হয়ে যাবে। কোথাও জিতবে কোথাও ডাহা হারবে। কারণ বিজেপির বুথে এজেন্ট কিন্তু টার্গেট হবেন পাড়ার পাড়ায়। সংস্কৃতি কর্মী থেকে সরকারী কর্মচারী ও শিক্ষকদের কাছ থেকেই বিজেপির বেশি বাধা আসবে। বুথ এজেন্টকে যদি ভোটের দিন বুথ থেকে বার করে দিতে পারে, নিষ্ক্রিয় করে রাখতে পারে অথবা টাকা দিয়ে কিনে নিতে পারে, তাহলে কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেসকে রোখা মুস্কিল হবে। কারণ তাদের হাতে ভোটের প্রশাসনিক সমস্ত অস্ত্র আছে। আর বিজেপি ভোট করতে যাচ্ছে মানুষের ভালোবাসা নিয়ে। দুটোর মধ্যে কোনও বোঝাপড়া নেই। বুথে বুথে সিপিএম কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের জোটবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ থেকে যাচ্ছে। সিপিএম যদি বিজেপিকে হারিয়ে দিতে পারে তাহলেই তাদের কেল্লাফতে। কংগ্রেস ও তাদের মূল লক্ষ্য বিজেপিকে হারাতে হবে, তৃণমূলকে নয়। কারণ তাদের আক্রমণ বিজেপির দিকে। এর ফলে যা হতে পারে তা হলো আগামী দিনে কংগ্রেস ও বামপন্থীরা আরও দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে যাবে এবং বিজেপির উত্থান ক্রমবর্ধমান হবে। বিজেপিকে জিততে হলে বুথ ম্যানেজমেন্ট করতে হবে নিশ্ছিদ্র। শেষ পর্যন্ত
তৃণমূলকে জেতানোর দায়িত্ব তুলে নিতে পারে বাম ও কংগ্রেস। কারণ এরপর আর তাদের লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে। তবে বিজেপির দিকে এখন সাচ্চা জনগণ জড়ো হয়েছে তাই দেখার শেষ পর্যন্ত কি হয় ? নির্বাচনের পর তৃণমূল কংগ্রেস বাম ও কংগ্রেস কি তবে এক হয়ে নিজেদের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট করতে পারে! সেক্ষেত্রে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। সকলের লক্ষ্য বিজেপিকে হারাও। ©® অলোক কুন্ডু

রবিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০২১

বাংলায় কার ভিড় কোন দিকে: অলোক কুন্ডু

⛔ বাংলায় কার ভিড় কোন দিকে : অলোক কুন্ডু
•৩১জানুয়ারী, ২০২১

⛔ আমি যখন আড়াই মাস আগে ভাঙড়ের একটি ভিডিও ফেসবুকে দেখতে পাই, তখন থেকেই আব্বাস সিদ্দিকীকে ফলো করতে শুরু করলাম। ওর মনমোহনী কথার প্রক্ষেপণে মুগ্ধ হয়ে গেছি। অনেকেই আমাকে আমার পোস্টে বলেছিলেন লোকটা ফালতু, ধান্দাবাজ, অনেকের কাছে থেকে নলেজ সিটি করবো বলে টাকা নিয়ে-- নয় ছয় করেছেন। শিক্ষিত মুসলমানরা এই জোয়ান ছেলেটিকে ধর্তব্যের মধ্যে আনেন না। ঠিকই কথা তারা বলেছিলেন। সত্যি মুসলিমদের বেশিরভাগ মানুষ তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গেই আছেন। বরং পশ্চিমবঙ্গে আব্বাস সিদ্দিকীকে সকলে বিজেপির লোক বলে, বলতে শুরু করেছিল। কিন্তু আমার ধারণা হচ্ছিল এই ছেলেটার বক্তব্য কিন্তু পরিষ্কার। আমি তিনমাস আগে থেকেই বলেছি এবারে পশ্চিমবঙ্গে যদি মুসলিম ভোট অনেকটা কেটে যায় তা যাবে সিপিএম ( বাম) + কংগ্রেসের ভোট থেকেই। তৃণমূলের মুসলিম ভোটও সামান্য কাটবে--আব্বাস সিদ্দিকীরা।

•আর হিন্দু ভোটের যা দশা দেখছি তাহলো, বুদ্ধিজীবী আর কলেজ- ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা, আর সামান্য কিছু বামপন্থী মানুষজন ছাড়া প্রধান হিন্দু ভোটও তৃণমূল এবং বিজেপির দিকে। জনসভা দেখতে ও শুনতে আসা ভোটটুকু ছাড়া বাম+কংগ্রেসের ভোট তাদের নেই বললেই চলে। তার মধ্যে স্বাস্থ্যসাথী ও ট্যাবের জন্য বাম-কংগ্রেসের হিন্দু-মুসলিম ভোট যদি তৃণমূল কিছুটা অধিকার করে নেয় তবে বাম+কংগ্রেসের আরও দৈন্য দশা হবে। বারবার বলতে চাইছি বাম+কংগ্রেস যদি আব্বাস সিদ্দিকীকে দলে নেয় তবে এ যাত্রা তারা বেঁচে গেলেও যেতে পারে। বরং তারা গেন করবে, অনেক ভালো অবস্থায় উঠে আসবে। কোথাও কোথাও বাম-কংগ্রেস-তৃণমূল মিলে লোকাল লেভেলে একটা সমঝোতা হতে পারে। কারণ এটা না করতে পারলে বিজেপি দুর্ভেদ্য হয়ে উঠতে পারে। বিজেপির এজেন্ট তুলে দিতে পারলে কিন্তু ভোট আর নিরপেক্ষ নাও হতে পারে। তখন কিন্তু বিজেপির সমস্ত আয়োজন মাঠে মারা যাবে। একটা কোথাও জিততে পারবে না তারা। ভেতর ভেতর এরকমটা যে হবে না বলা যায় না। বিশেষ করে বামেরা এটা করতেই পারে।

•আমি কদিন আগেই একটা কথা বলেছি সেটা কি ? তা হলো ২০২৬-এ আব্বাস সিদ্দিকী মুখ্যমন্ত্রীর দাবিদার। অনেকে হেসেছেন আমি জানি। কিন্তু আমি সত্যিই বেশ দূর পর্যন্ত দেখার চেষ্টা করি, অবশ্যই ঠিকমত দেখতে পাই না। ২০২৬ না হোক অন্তত ২০৩১-এ এই আব্বাসকে কেউ আর রুখতে পারবে না। এই ধারণা আমিই শুধুমাত্র করতে পারি, আমার নিরেপেক্ষতা থাকার জন্য। আরও একটা কারণ হলো, এদের সঙ্গে একটি বড় আদিবাসী দলও যোগ দিয়েছে। এদের ভালো ভোট ব্যাঙ্ক আছে। এদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, হায়দ্রাবাদের মিম। ব্যারিস্টার ওয়েসি সাহেবের দল। ওঁরা হায়দ্রাবাদে বেশ জনপ্রিয়। তৃণমূল কংগ্রেস যাদের বিজেপির এজেন্ট বলতে কসুর করেনি। এরাও কলকাতা, হাওড়া এবং দুই ২৪ পরগণায় এবারে গোটা ২০ প্রার্থী দিতে পারে। আব্বাস সিদ্দিকীর ভাই যে দলের চেয়ারম্যান, (ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট) তারা আদিবাসীদের নিয়ে গোটা ৫০ প্রার্থী দিতে পারে। শুনেছি তাদের টার্গেট ৪৫ টা। মাত্র তিন মাসের দল যে এইভাবে ভোটে ভাগ বসাতে পারে তা আমি আড়াই মাস আগেই বলে দিয়েছিলাম। এখন যত দিন যাচ্ছে আমি জোর পাচ্ছি আমার বক্তব্যের ব্যাপারে। তারা কটাতে জিতবে ? দু-মাস আগে বলেছিলাম ২০ টা। শুধুমাত্র ৫/৬ টা জনসভার ভিডিও দেখে বলেছিলাম। আমি জানি আমার প্রচুর মুসলিম বন্ধু এই বলা পছন্দ করেননি, এমনকি ভালো চোখেও দেখেননি। আমি কিন্তু এই শ্রেণির ভোটের মধ্যে, উচ্চ-শিক্ষিত ও উদার মুসলিম জনগণকে একদম ধরিনি।

•সমস্ত ভোট ব্যাঙ্কে একটা ধর্মপ্রাণ ও সাদাসিধে ভোটার থাকেন। কি হিন্দু, কি মুসলিম পাড়ায় এরকম ভোটার ১০% আছেই। তবে কি ওই সামান্য ভোটার, কোনও দল বা কাউকে জেতাতে পারে ? সচরাচর পারেনা, কিন্তু যদি কোনও নতুন দল এসেই হুট করে ১০% ভোটার প্রাথমিক ভাবে সঙ্গে পেয়ে যান, আর যদি তাদের রক্ত টগবগ করতে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে এই সংখ্যা ক্রমশই বাড়বে। তার ওপর এদের সঙ্গে আদিবাসী নেতা যিনি আছেন তার ময়দানি বক্তব্য বেশ পায়রা উড়িয়ে দিতে পারে। সবচেয়ে বড় ব্যাপার এরা কখনও কোনও রাজনৈতিক দলে আগে প্রত্যক্ষভাবে ছিলনা। এদের সঙ্গে গরিব শ্রেণি নিঃস্বার্থ ভাবে আছেন। শ্রমিক শ্রেণি আছেন। মজবুত শরীরের ছেলেপিলে আছেন। ওয়েসি-সাহেব যুক্ত হলে অবাঙালি মুসলমানরা অবধারিত চুপচাপভাবে যোগ দেবেন, এদের সঙ্গে। শোনা যাচ্ছে এদের সঙ্গে উকিল, ব্যারিস্টার, অফিসার, ব্যবসায়ী এবং বুদ্ধিজীবীও আছেন। যারাই থাকুন না কেন, তার চাইতে বেশি আছে সোস্যাল মিডিয়ার ফলোয়ার, যদিও এই ফলোয়ার সকলে তার ভোটার নন। একটি জবরদস্ত জনসংখ্যা যে এদের সঙ্গে চলে আসবেন না কিছু বলা যায় না, এই সম্ভাবনাকে কেউ আগাম না বলতে পারবেন না। নিরীহ আনপড় অনেক সংখ্যা দেশে থাকতে পারেন, এমনকি খুব গরিব মানুষ আছেন যারা, কিছুই এখনও পাননি। এই শ্রেণিকে যদি এরা এদের সঙ্গে যুক্ত করতে পারেন তবে এদেরকে দোষ দিতে সহজে কেউ পারবেন না। কদিন আগে হায়দ্রাবাদের প্রাক্তন মেয়র এসে এদের জোর বাড়িয়ে দিয়ে গেছেন। জোরালো বক্তব্য রেখে গেছেন এখানে এসে। এরা যে কিছুতেই বিজেপির বি.টিম নন তা পরিষ্কারভাবে বলে দিয়ে গেছেন।

•আসলে কারা ধর্মনিরপেক্ষ এটাই এইবারের নির্বাচনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট যদি সেই হাওয়া সম্পূর্ণ ইতিমধ্যে কেড়ে নিতে পারেন তাহলে অদূর ভবিষ্যতে এই দলের লেজুড় হয়ে থাকতে হবে অন্যদের। আর এটাই এই দলের মুখ্য উদ্দেশ্য এখন। সরকার যারা গড়বে অন্ততঃ ৪০% মন্ত্রী যে সেক্যুলার ফ্রন্ট থেকে নিতে হবে, তা একরকম পরিষ্কার। তারা আজ বলেছেন, আমরা কোনও ভৃত্যকে দাঁড় করাবো না। বলছেন,দাঁড় করাবো এক-একজন বাঘকে।

•যদি তারা মন্ত্রীসভায় নাও আসতে পারেন, তাহলেও এদের এড়াতে গেলে যেকোনও সরকারকে সাতবার ভাবতে হবে তখন। ধরে নেওয়া গেল ২০ টার বেশি সিটে এই ফ্রন্ট জিততে পারলো না, তাহলেও এরাই এখন থেকে পশ্চিমবঙ্গের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠতে পারে। আজ পর্যন্ত ভারতের কোনও রাজ্যেই মন্ত্রীসভায় মুসলিম বা সংখ্যালঘু প্রাধান্য হয়নি, দেখা যায়নি। এই নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হয়েছে। জগজীবন রাম চেষ্টা করেও প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। সেক্যুলার ফ্রন্ট প্রথম থেকেই তাই তাদের চাকরি, তাদের কর্মে নিযুক্তি, তাদের গরিবি, তাদের না পাওয়া ও অশিক্ষা নিয়ে বলতে শুরু করেছে। যদিও তাদের এই চাওয়ার পেছনেও অনেকেই নানা অভিসন্ধি দেখছেন, নানা স্বার্থ দেখছেন। তবু এদেরকে সঙ্গে চেয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসেও। চেয়েছে কংগ্রেস, চেয়েছে সিপিএম। খানিকটা পরিষ্কার করে দিয়েছে, মিম। যেকোনো অবস্থাতেই তারা কোনও সমঝোতা করবে না। অর্থাৎ মিমকে সঙ্গে নিয়েই আব্বাস সিদ্দিকী এই বাংলায় লড়বেন। তাতে যদি কংগ্রেসে ও বামেরা না আসে, আসুক।

•কিন্তু এদিকে ভেতরে ভেতরে বাম ও কংগ্রেসের সঙ্গে ওই ৪০-৬০ টা আসন ধরেই সমঝোতার কথাবার্তা এগিয়ে চলেছে। তবে বিজেপি এদের কখনও গালাগালি অথবা দুরছাই করেনি। বরং দিলীপ ঘোষ বলেছেন বিজেপি তাদের নিজের জোরেই লড়বেন। বিজেপি শুধুমাত্র হিন্দু ভোটকেই তাদের আদর্শ ভোটার হিসেবে মেনে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে তারা মুসলিম সমাজের, ব্যক্তির সাহায্যও প্রার্থনা করছে। মুসলিমরাও কিছু সংখ্যক তাদের সঙ্গেও আছেন। গতবছর তারা কলকাতার এক বাঙালি প্রধান-শিক্ষককে জাতীয় শিক্ষকের মর্যাদাও দিয়েছেন।

•ইতিমধ্যে এখানে বিজেপির জনপ্রিয়তা বরং বেড়েছে আগের তুলনায়। এখন ভোট ভাগাভাগি নিয়ে কারা এগোবে কারা পিছোবে জনগণ বুঝেও নির্বিকারের ভান তবু করে আছে। কিন্তু যাই হোক না কেন, যেন ভোট শান্তিপূর্ণ হয়। ভোট যেন অশান্তির পরিবেশ না তৈরি করে। যদিও বিনা রক্তপাতে ভোট হওয়া জরুরি বলে রাজনৈতিক দলগুলো মনে করেনা। এখন তো বুদ্ধিজীবীরাও নিরপেক্ষ নন। বামপন্থী বুদ্ধিজীবীদেরও দুর্দিন আসতে চলেছে, কারণ গরুর মাংস খাওয়ার ভয়ঙ্করতা সৃষ্টি করা আর কেন্দ্রের কৃষি বিল বাতিল করা ছাড়া তাদের ভোটে দাঁড়ানোর আর কোনও রাস্তা নেই, দ্বিতীয় চিন্তা নেই। এর মধ্যে বামেদের হাত থেকে রাজনৈতিক অস্ত্র কেড়ে নিয়েছে কিন্তু আব্বাস সিদ্দিকীর দল। অভুক্ত ও গরিব শ্রেণিকে নিয়েই একটি নতুন রাজনৈতিক দল এবার লড়াইয়ের ময়দানে। তাদের কাছে বরং গরুর মাংস নয় ভালো ভাবে বেঁচে থাকার সমস্ত চাহিদা মেটানোর ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে তাদের কথাবার্তায়।

•কিন্তু সিপিএম বা বামেরা জেতার জন্য পথ চেয়ে বসে আছে, সুশান্ত ঘোষ ও লক্ষ্মণ শেঠেদের দিকে। প্রায় সমস্ত হিন্দু ভোট কংগ্রেসের হাত ছাড়া হয়ে গেছে। এখনও আদিবাসী ও মুসলমানরা তবু তাদের ভোট ব্যাঙ্ক। কিন্তু তাদের এমন ভাগ্য যে বহু নেতা কংগ্রেস ছেড়ে দিয়েছেন। এখনও ছাড়বেন অনেকে। কংগ্রেসকে খানিকটা লড়তে হবে সিপিএমের সংগঠনের উপর। স্পষ্ট করে বললে বলা উচিত দক্ষিণ বঙ্গে তাদের ভোট খুব কম তারা ধরে রাখতে পেরেছেন। পুরো দল ও ভোটার এখন তৃণমূলে। কিন্তু গত তিনমাস ধরে তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যাওয়ার বরং ঢল নেমেছে। যাকে তৃণমূল কংগ্রেস বলছে বিশ্বাসঘাতকতা, মীরজাফর। এমনকি সিপিএমের লোকজন এখন বিজেপিতে পর্যন্ত যোগদান করছে। সর্বত্র মেগা যোগদান মেলা এখন বিজেপিই করতে পারছে। প্রচারের আলোর বেশিটাই তারা কেড়ে নিয়েছেন গত ডিসেম্বর ২০২০ থেকে শুভেন্দু অধিকারী তার মধ্যে অন্যতম। শুভেন্দু অধিকারী যেখানে যাচ্ছেন সেখানেই ভিড় আর ভিড়। এমনকি তৃণমূলের কুনাল ঘোষ শুভেন্দুর অনবদ্য সৃষ্টি স্লোগান চুরি করে নিচ্ছেন। কদিন আগে আরামবাগে শুভেন্দুর মিছিলে জনস্রোতের বন্যা হয়ে গেছে একপ্রকার। তৃণমূলের ভিড় তো আগেই ছিল। কিন্তু তাতে সরকারের সাপোর্ট থাকে সবসময়। কিন্তু বিরোধী দলে সেরকম সুবিধা থাকেনা। চাকরি থাকেনা, পুলিশের নিরাপত্তা থাকেনা, ক্লাবের ঠেস থাকেনা, শিক্ষক সংগঠন থাকেনা, বাধ্যতামূলক কোনও কিছু থাকেনা, উপঢৌকন থাকেনা, চাকরি দেওয়া থাকেনা, নাটক-সিনেমার লোক থাকেনা পরন্তু ভয়ভীতি থাকে। তাতে যদি জনস্রোত বিজেপির দিকে চলে যায় তবে বুঝতে হবে সরকারের সাপোর্ট না থাকা সত্ত্বেও কিছু গোলমাল আছে মানুষের চিন্তার মধ্যে। গ্রামে গঞ্জে এইরকম ভিড় হতো সেই ২০১১-তে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে। ভিড়ের এই পরিবর্তন মারাত্মক হতে পারে ধরে নিয়ে যদি বুথে বিজেপির বিরুদ্ধে সকলে একত্রিত হয়, তবে কিছুতেই বিজেপি জিততে পারবে না।

•এই ভিড় আর আছে আব্বাস সিদ্দিকীর সভায়, তারও তো কিছুই নেই। ভিড় ক্রমশ সরে যাচ্ছে বিজেপি ও সেক্যুলার ফ্রন্টের দিকে। আগামী ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ তাকিয়ে থাকবে বাম-কংগ্রেস ব্রিগেডের দিকে। তবে পাড়ায় পাড়ায় ভিড় করাতে না পারলে সেই দলের ভাগ্যে দুর্গতি স্পষ্ট লেখা থাকবে। ©® অলোক কুন্ডু


শনিবার, ৩০ জানুয়ারী, ২০২১

গরুর মাংস অষ্টমীর দিন খেতেই হবে আপনাকে ? অলোক কুন্ডু

⛔ বাসি হলে বউয়ের কথা মিষ্টি হয়/ অলোক কুন্ডু •

• বউরা আগাম তাহলে বুঝতে পারেন ? পই পই করে বউ যখন বারণ করেই ছিলেন, তখন ওই প্রসঙ্গ না বললেই হতো। আগে থাকতেই যে আপনি অসাম্প্রদায়িক, সেটা প্রমাণ করতে আপনার আগের কি কিছু কাজ একেবারেই ছিল না? নিজেকে অসাম্প্রদায়িক দেখানোর জন্য! ওই একটাই বিষয় আছে কি ? গরু না খেলে কি অসাম্প্রদায়িক হওয়া কিছুতেই যায়না ? এর আগে ধান্দাবাজ এক কবিকেও ওই ফর্মূলা লাগাতে দেখেছি। বিকাশ ভট্টাচার্যের রাস্তায় দাঁড়িয়ে গরু খাওয়া তবু অনেকটা মানা যায়, কারণ উনি কাজ করে দেখিয়েছেন। ওনার মধ্যে ভান, ভনিতা কিছু নেই। উনি যা করেছেন বেশ করেছেন। উনি কাজে করে দেখিয়েছেন, আপনার মতো জাহির করতে যাননি। কিন্তু আপনি তো আগেই জানতেন যে আপনার বউ আপনাকে আলফাল বলতে বারণ করেছিলেন। আগেই জানতেন যে আপনি কি বলতে যাচ্ছেন। বউয়ের বারণ হ'ল মহাবারণ। যা আপনি শুনলেন না। এখন কথা হলো আপনার জন্য আমি আর আমার বউকে এড়াতে পারবোনা। মহা মুস্কিলে ফেলে দিলেন মশাই আপনি। এমন কথা বললেন, যা কখনও করতে পরবেন কিনা তা আপনিও জানেন না, অর্থাৎ পালন করবেন না। ইতিপূর্বে কখনও করেননি, তা তো আপনার কথাতেই প্রমাণ হয়ে গেল। আমিও মশাই দু-চারবার গরু টেস্ট করেছি। ছিবড়ে একটু মোটা হয় পিসও মোটা হয়, বড় হয়। আজ পর্যন্ত চারজন মুসলিম শিক্ষকের বাড়িতে, ও বন্ধু সানওয়াজের বাড়িতে, মাংস পরটা, মাংস ভাত খেয়েছি কিন্তু আপনার মতো পোস্টার মারিনি। এবিপি আনন্দে বসে আপনি মশাই এক ধ্যাবড়া আঠা দিয়ে আমাদের সকলের মুখে পোস্টার মেরে দিলেন। আমি মুসলিম বাড়িতে নেমন্তন্ন গিয়ে তাদের দুটো প্যান্ডেলের মধ্যে গরুর দিকে ঢুকে পড়লেও আমাকে তারা জোর করে খাসির মাংসের দিকে টেনে এনেছেন। আবার এও দেখেছি আমার পাশে বসা হিন্দু-বন্ধু মুসলিম বাড়ির বিয়েবাড়িতে গিয়ে, নিরামিষ খেয়ে উঠে পড়েছেন, ঠৈকাঠেকির জন্য। এমনিতেই আমাদের ৮০% হিন্দু বাড়িতেই ঠেকাঠেকি, এঁটো, সকড়ির বাছবিচারে আমরা ছেলেরা, সবাই মা-বৌদের কাছে সবসময়ে ব্যাকফুটে খেলি। তার ওপর আপনি আমাদের একেবারে পরাস্ত করে দিলেন। বৌদের কাছে পরাস্ত বর করে দিলেন, বিচার বিবেচনায় অক্ষম বর এবং স্বামী হয়ে বাকি জীবনটা খালি গঞ্জনা শুনে যেতে হবে এখন। এমন একটা তাজ্জব হিং-দেওয়া কথা ছুঁড়ে দিলেন, যা প্রমাণ করতে এখন আপনাকে গরুর মাংস কিনে এনে রান্না করে বিতরণ করে, একদল হিন্দুকে ভোজন না করাতে পারলে হাসির খোরাক হবেন। এই দুর্বুদ্ধি বংশ পরম্পরায় আপনার পরিবারের সঙ্গে ফেভিকলের মতো চিপকে রয়ে গেল। যদিও আপনি আপনার বক্তব্যে বলেননি যে, আপনি আত্মীয়, স্বজন, বন্ধুদের গরুর মাংস রেঁধে খাওয়াবেন। এত চালাকি করতে গিয়ে আপনি পড়লেন আরও ফাঁদে। যেহেতু আপনি একবারও বলেননি গরুর মাংস কিনে এনে আপনার বউকে দিয়ে রাঁধিয়ে খাবেন, তাই সেই আলটপকা কথা হলেও তা যে দেবলীনারও জানা ছিল এবং দেবলীনা কত চালাক দেখুন, তিনিও বললেন না একদিনের প্রতীকী খাবেন। বললেন আমি নিরামিষভোজী, তাই রান্না করবো, অবাক কান্ড
দুজনেই জলে নামছেন অথচ কেউই আপনারা চুল ভেজাবেন না। আপনার সম্ভবত জানা নেই মুসলমান পরিবারের, কি বিয়ে বাড়িতে, কি ব্যক্তির বাড়িতে অথবা কি ব্যক্তিগত ক্ষেত্রে, যাই হোক না কেন, তারা কিন্তু হিন্দুদের খাদ্য পরিবেশনের ব্যাপারে কখনোই আপনার মতো আহাম্মকি করবেন না। আসলে তারা কিন্তু সম্মান করতে জানে। আপনি একইসঙ্গে মুসলমানদের জাত্যাভিমানেও আঘাত করেছেন। গরু খেলে আপনি যে খুব অধার্মিক হয়ে যাবেন, এইকথা কেউ বিশ্বাস করবে না। কারণ খাদ্য-ধর্মের ব্যক্তি আচার ও রুচিগুলি নিয়ে রাজনীতি করা মানে মানুষ খ্যাপানো ছাড়া আর কিছু লাভ হয়না। এইসব জনসমক্ষে বলা অরুচিকর। কিন্তু আপনার বক্তব্য সঠিক যে, এটা বোঝাতে আপনার সতীর্থ বন্ধুরাও এখন তেতে উঠেছেন। আপনি যে আপনার বক্তব্য জেনেশুনে বলেছিলেন এমনকি যে কাজ কখনও না করলেও বানিয়ে যে বলেছিলেন তা আপনার বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখেই বোঝা যায়। আপনি দেবলীনাকে হাত তুলে দুই বুড়ো আঙুল দেখিয়েছিলেন। চালাকি করতে গিয়ে মস্তবড় মিথ্যা প্রচার করে ফেলেছেন। এইসব শুনতে অবশ্যই খুবই ভালো লাগে। মজাও হয়। আমারও তেমন কিছু মনে হয়নি, কারণ আমিও গরু খেয়ে নিয়েছি। আপনি কবে টিভিতে বলতে আসবেন তার জন্য অপেক্ষা করে থাকিনি। আমি বুঝি আগে কাজ পরে কথা। হিন্দু-মুসলিম বুঝিও না। কারণ আমরা পাশাপাশি টেবিলে, অফিসে চাকরি করেছি। এ ওর টিফিন খেয়েছি। এইসব আবার জাহির করে বলার কি আছে। শুনেছি আমার ঠাকুরদাদা রায়েটের সময়, গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংয়ের সময় দুজন মুসলিম শালকরকে আমাদের বাড়ির একটা ঘরে ১৫ দিন রেখে দিয়েছিলেন। আপনি হলে তো বাড়িতে সাইনবোর্ড লিখে ফেলতেন মশাই। আপনি নজরুল একাডেমিতে নজরুল ইসলামের সম্পর্কিত নাতনি জামিলাকে জিজ্ঞাসা করে দেখতে পারেন। আমি কীভাবে তার হাওড়ায়, বাঁকড়া বাদামতলা গার্লস স্কুলে, চাকরিতে বাধা দেওয়ার ব্যাপারে লড়েছিলাম ও তাকে প্রভূত সাহায্য করেছিলাম। তার জন্য একদিনও ফ্রি-তে গিয়ে ওদের গেস্ট হয়ে বেড়াতে যাইনি, যেতে বলেছে বহুবার। বাঁকড়া দারুল কুরান হাই মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক আলিমুদ্দিনের চাকরিতো আমি না থাকলে হতোই না। একটা পয়সাও তো নিইনি। এরজন্য হিন্দু মুসলমানের দস্তখত কেউ কাউকে দেয়নি। বর্ধমানে আমাকে এত যত্ন করে আমার এক মুসলিম শিক্ষক খাসির মাংস ভাত খাইয়ে ছিলেন যে অত যত্ন করে শ্বশুর বাড়িতে খেতে দেয়নি বোধহয়। কখনও কোনও মুসলিম বন্ধু আমাকে উপযাচক হয়ে বলেননি একটু গরুর মাংস খেয়ে দেখ না ? যখন খেয়েছি তখন শুধুমাত্র গরুই খেয়েছি তাও নিজে যেচে। কিন্তু তারপর থেকে বাড়িতেও এনে রোজ গরু খাবার জন্য রোজ কিনে আনিনি। একটা সময় এতটাই গরীব হয়ে পড়েছিলাম যে রোজ মাছ খাওয়াতে বাবা পারেননি, তখন সস্তার গরুর মাংস এনেও বাবা পুষ্টির সমতা কখনও করেননি। কারণ আমাদের সমাজে কখনও কারও বাড়িতে গরু হয়না। যতটা না জাতপাতের জন্য না হয় তার বেশি একমাত্র কারণ হলো ঘেন্না করে বলে। খেলে বমি করে ফেলবে বলে। খাসি ও মুরগি খেলেও বমি করে খেলবে অনেকে। দেবলীনা যদি নিরামিষ খেতে অভ্যস্ত থাকেন তবে তাকেও এখন ওর নিজের রান্না করা গরুরমাংস জনসম্মুখে নিজেকে খেয়ে দেখাতে হবে, সে কারণে বমি হলেও সম্প্রীতির জন্য ওর এই অবদান সমাজ সম্মান করবে। আসলে রুচিতে বাঁধে বলে আমাদের বাড়িতে গরুর মাংস হয় না। গন্ধ, গা-গুলোতে পারে এইসব মেন ফ্যাক্টর। হ্যাঁ অবশ্যই ধর্মীয় কারণেও হয়না অনেক বাড়িতে। যা হয় না, যা করা যাবেনা, তাই নিয়ে বলতে তো আপনার স্ত্রীও হয়তো বারণ করেছিলেন। আপনি না শুনে দুটো রাস্তা খুলে দিলেন। রাস্তায় বের হলেই এখন আমার স্ত্রীর কাছ থেকে আমাকে শুনতে হবে, কোথায় যাচ্ছো, বলে যাও, কার সঙ্গে কি কথা বলবো তাও স্ত্রীর পরামর্শ শুনতে শুনতে এখন আমার কান ঝালাপালা হয়ে যাবে। আপনার স্ত্রীর বারণ, দেবলীনার সঙ্গে গড়াপেটা, মহড়া দেওয়া, এইসব উচ্চারণ, যদি রাজনৈতিক দলগুলো সাপোর্ট করে তাহলে কিন্তু তাদেরও দুর্গতি, কারণ সকলে অনুধাবন করতে পেরে গেছে বিষয়টাতে ভরপুর রাজনীতি আছে। সঙ্গে সঙ্গে দুর্গাপুজো এলেই, আপনাকে নিয়ে ঝড় ওঠা বন্ধ করতে আপনি কিছুতেই পারবেন না। আগামী অষ্টমীতে ফেসবুকে আপনি বড় খোরাক হবেন এটা মোটেই চাইবো না। এইসব বন্ধ করতে বলবো বরং। এতো গেল আপনার সঙ্গে আমার ব্যাপার। মাঝখান থেকে দেবলীনার কথাটা পুরোপুরি রাজনীতিওলারা খেয়ে নিয়েছে। সেটাও আপনার জন্যই। এখন আপনি, সায়নী, দেবলীনা, সৌমিত্র খাঁ-র রীতিমতো রাজনৈতিক লড়াই লেগে গেছে যার 'ক্যাটালিস্ট' আপনি। অর্থাৎ উদ্যোক্তা এবং অনুঘটক আপনি। এইসঙ্গে তুমুল একটা লড়াইয়ে ইন্ধন দিয়ে চলেছে। হাতজোড় করছি মশাই আপনাদের সকলকে। অবিলম্বে বন্ধ করুন। আপনাদের মধ্যে একটা রাজনৈতিক লড়াই হচ্ছে। এইভাবে মাঠের মধ্যে তা এনে লড়বেন না। কথা দিয়ে গরু খাওয়া যায়না, রোজ খেয়ে প্রমাণ করুন। প্রতি অষ্টমীতে আপনাকে কেউ, গরু খাওয়ার নিমন্ত্রণ করবেন না--তা অশোভন বলে। শিল্পীদের মধ্যে শোভনতা থাকা উচিত বলে আমি মনে করি।
আর একটা কথা আপনাকে উপদেশ দেব কারণ বোধ-বুদ্ধি আপনার সঠিক নেই। আপনার জানা উচিত গ্রামবাংলায় সন্ধ্যায় মাচা হোক আর চায়ের দোকানে হোক একসঙ্গে হিন্দু-মুসলিম যুবক থেকে বয়স্ক বন্ধুরা দীর্ঘ দিন আড্ডা দেয়। সেই মিঠে আড্ডাগুলোকে বিষিয়ে দিয়েছেন পর্যন্ত। এই খেলা খেলবেন না। দয়া করে এই কাজ দ্বিতীয়বার আর কখনও করবেন না। এতে করে অনেকের ক্ষতি হয়। আমাদের হিন্দু-মুসলিমরা এই তরজায় কোনও পক্ষে নেই। বন্ধ করুন এই সস্তা রাজনীতি। এই আলোচনাও বন্ধ করুন দয়া করে। পরিশেষে আমি সরকারের কাছে অনুরোধ করবো যা হয়েছে তা যথেষ্ট হয়েছে। এইসব আলোচনা হিন্দু-মুসলিম সখ্যতা নষ্ট করছে। বন্ধ করা উচিত। এই নিয়ে দুপক্ষের কাদা ছোড়াছুড়িতে দায় এবং দায়িত্ব হিন্দু নেতা-নেত্রীদের। এই নিয়ে ভাষা ছোঁড়াছুড়ি অত্যন্ত কদর্য জায়গায় পৌঁছেছে, জানিনা কীভাবে বন্ধ হবে।
©® অলোক কুন্ডু

শনিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০২১

কারা সরকার গড়বে : অলোক কুন্ডু


🌏 আপনি বুঝে নিন, এইবার কে বা কারা সরকার গড়তে পারেন : অলোক কুন্ডু

⛔ যতক্ষণ না কোনও নতুন দল কোথাও রাজ্য সরকারের আসনে না বসেন, ততক্ষণ যদি কেউ বলেন সেই দলটা খারাপ, সেই দল কিছুই করতে পারবে না এবং ওই নতুন দলের দ্বারা কিছু করা সম্ভবপর নয়। তখন আমরা খানিকটা হতভম্ব হয়ে যাই। রাজনীতি করেন না এরকম মানুষ কিছুতেই ওইরকম চাপানো কথা মানতে পারেন না, চাননা। এইরকম কথা খানিকটা অবান্তর প্রসঙ্গের মনে হলেও রাজনীতি করা লোকেরা ঘুরেফিরে ওটাই প্রমাণ করে ছাড়তে চাইবে যে নতুন দল কোনও কিছু করতে পারবে না। আর এইরকম আনাড়ি কথা অনেকবার শুনতে শুনতে আমাকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়তে হয়েছে। কিন্তু দেখবেন যে কোনও নতুন দল প্রথম ৫ বছর সব সময় ভালো কাজ করবে, এইটা বাম রাজত্বকাল থেকে আমরা দেখে আসছি। 

⛔২০১১ সালে যখন তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছিল তখন আমি বর্ধমানে আছি। সেই সময় একদিন বর্ধমান ডি. আই. অফিসে বসে যে প্রশান্ত মুখার্জী আমাকে বলেছিল তৃণমূল কংগ্রেসের আয়ূষ্কাল মাত্র ছ'মাস পর্যন্ত যাবে, পরে দেখলাম সেই প্রশান্ত মুখার্জী বিদ্যালয় পরিদর্শক সমিতির সম্পাদক হয়ে গেল তৃণমূল কংগ্রেসের সাহায্য নিয়ে, সমিতির প্যাড ছাপালো তেরঙ্গা কালারে। সেই সময় বর্ধমান ডি. আই অফিসে গেলে, মুখে মুখে শুনতে পেতাম, ২০১২-র প্রথমেই পড়ে যাবে তৃণমূল সরকার। যদিও ওইসব রটনা রটিয়েছিল সিপিএমের লোকজনেরাই। পরে রাতারাতি তারা তৃণমূল হয়ে যায়। সে যাই হোক, এখন এ রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের দুটো টার্ম কমপ্লিট হওয়ার মুখে। ২০০৬-এ তো ২৩৫ আর ৩০ এমন কথাও শোনা যেত। ২০০৬-এ কেউ ভাবেনি তৃণমূল কংগ্রেস কখনও ক্ষমতায় আসতে পারবে! তখন কেউই জানতো না।

⛔ বিজেপি সম্পর্কেও সেই এক কথা শুরু হয়েছে। বিজেপি এলে পশ্চিমবঙ্গ শেষ হয়ে যাবে। কারা বলছে ? বলছে মূলত সেই বামপন্থীরাই। যারা ২০১১-তে বলেছিল তৃণমূল ২০১২-তে রাজ্য থেকে পালাবে, তাদের কেউ কেউ আবার বলেছিল তিনমাসও যাবেনা সরকারটা। আগে শুনতাম, বিজেপির একটা মাত্র দোষ ছিল। বিজেপি কম্যুনাল পার্টি। মুসলমান দেখলেই মেরে ফেলবে। এখন তার সঙ্গে জুটেছে বিজেপি তৃণমূল ফেরতদের নিয়ে দল, নিজের বলে কিছু নেই। তাই কি ? আসলে এই বঙ্গে বিজেপি বলে কিছু হয়না এটা একটা প্রচার মাত্র। কিন্তু ইতিপূর্বে আমরা দেখেছি অটলবিহারী বাজপেয়ীর সময়ে বিজেপির জন্যই এখানে তৃণমূলের শক্তি সঞ্চয় হয়েছিল। বিজেপি না থাকলে তৃণমূল হয়তো এইরকম ক্ষমতায় কখনও উঠে আসতে পারতো না। অটলবিহারী বাজপেয়ী নিজে , মমতা ব্যানার্জীর কালীঘাটের বাড়িতে এসে, ওই দলকে কতখানি মানসিক মদত দিয়েছিলেন কতখানি উজ্জীবিত করেছিল তা আজও ভোলা যায়না। তৃণমূলের যত না এম.পি হয়েছিলেন তখন, তার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ বিজেপি করেছিল তৃণমূলের জন্য। মন্ত্রী সভায় শতকরা হিসেবে ৭৫% গুরুত্বপূর্ণ রেলমন্ত্রী ছেড়ে দিয়েছিলেন তারা মমতা ব্যানার্জীকে। রাজনীতির ক্ষেত্রে বিজেপির যে এটা কতবড় আত্মত্যাগ যার কোনও ব্যাখ্যা নেই। এই কয়েক বছরে সারাভারতে বিজেপি দল, নরেন্দ্র মোদীর জন্য যে বড় বড় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলি নিয়েছেন অন্য কোনও দল হলে তা নিতেই পারতো না বোধহয়। তা ছাড়া বিশ্বনাথ প্রতাপ সিংহকে মাঝখানে রেখে জ্যোতিবাবুরা এবং বামপন্থী দল একদিন বিজেপির সঙ্গে ব্রিগেডে হাত মিলিয়ে ছিলেন কংগ্রেসকে কোনঠাসা করতে, এই কথা আজও সকলের মনে আছে। তাই বিজেপি শুধুমাত্র নতুন নয়। সাম্প্রদায়িক দলও নয়। বরং সাম্প্রদায়িক দল এই ছাপ মেরে দিয়ে, অন্যান্য দল তাকে মানুষের মধ্যে থেকে আলাদা করে দিতে চাইছে। এই যুক্তি কিন্তু পাবলিক মোটেই খেতে চায়না। এই কু-যুক্তি কিন্তু জনগণ যে কিছুমাত্র মানছে না তা জনসভায় বিজেপির ভিড় দেখলেই বোঝা যায়। এইসব দেখে ভাবতে হয় যে সেক্ষেত্রে অন্য দলগুলোর চরিত্র ঠিক আছে কিনা !? অবশ্য তা একমাত্র আগামী নির্বাচনেই বোঝা যাবে যে কংগ্রেস+ বাম জোট আব্বাস সিদ্দিকীদের ছাড়া এইবার দাঁড়াতে পারবে কিনা, ভোট পায় কিনা।

⛔ যদিও রাজনৈতিক বিতর্ক একটা আছেই যে বিজেপি হিন্দুত্ববাদী দল। এমন নয় যে এইদেশকে তারা মানে বিজেপি একদম চালাতে পারছেনা। এমনটা কখনও হয়নি। যা বলছিলাম বিজেপির সাহায্য ছাড়া তখন পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের একলা চলো নীতি খুব একটা কার্যকরী করে তুলতে তৃণমূল তখন একদমই পারেনি। সেই সময় বিজেপির সাহায্য সঙ্গে না গেলে কংগ্রেসের সাহায্য ছাড়া এইভাবে তৃণমূলের টিঁকে থাকা তখন মুস্কিল হোতো, অসম্ভব ছিল। তখন কিন্তু কংগ্রেসের ফুল টিম অটুট ছিল। ২০০৭ এ যখন নন্দীগ্রাম আন্দোলন তখন কিন্তু প্রিয়রঞ্জন দাশমুন্সি পর্যন্ত কংগ্রেসকে নন্দীগ্রামে আলাদা লড়তে বলেছিলেন। যদিও এখন সেই করুণ পরিস্থিতি তৃণমূল কংগ্রেসের হয়নি বলে ওইযুক্তি এখন কেউই মানতে চাইবেন না। যদি কংগ্রেস ২০১১-তে একসঙ্গে পথে না নামতো এবং মাত্র ৬৫ সিটে সোনিয়া গান্ধী রাজি না হতেন, তাহলে ২০১১-তে কি হতো, বলা খুব শক্ত ছিল। কারণ কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকার ২০১১-এর নির্বাচনের সময় যেভাবে প্রশাসনিকভাবে সাহায্য করেছিল ও যেভাবে হেলিকপ্টার দিয়ে, বক্তা দিয়ে, সিআরপিএফ দিয়ে, যৌথ মিছিল করে যতখানি সাহায্য করেছিল তা এখন তৃণমূল সম্পূর্ণ ভূলে গেলেও খবর কাগজে সেইসব স্পষ্ট উল্লেখ আছে। এখানে কংগ্রেসের মৃত্যু ঘটানোর জন্য যে তৃণমূল অংশত দায়ী সেকথা সকলেই এখন স্বীকার করতে শুরু করেছেন। এমনকি তৃণমূলের এক সময়ের ঘোর শত্রু সোমেন মিত্র ও তাঁর স্ত্রীর জন্য তৃণমূল এমপি ও এমএলএ বিতরণ করে কংগ্রেসের ঘর ভেঙে দিয়েছিল।

⛔ পশ্চিমবঙ্গে এখন দুটি দল সম্পর্কে নানা বিরোধিতা করে প্রায় প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের কথা উঠে আসছে। তার একটি দল হলো বিজেপি, দ্বিতীয় দলটি হলো আব্বাস সিদ্দিকীর ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট। এখানে দেখার যে বাংলার বিজেপি দলটার পেছনে একটা বৃহত্তম দলের কিন্তু সাপোর্ট আছে। কিন্তু আব্বাসের সেরকম কিছু নাই, পুঁজি নাই, একেবারে নিঃসঙ্গ দল। সবচেয়ে মজার কথা এই দুটি দলকে সাম্প্রদায়িক দল হিসেবে ইদানীং চিহ্নিত করছে সকলে। আবার বলতে গেলে সকলে নয়। করছে মূলত তৃণমূল। নব নির্মিত আব্বাস সিদ্দিকীর ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের সর্বোচ্চ নেতা একজন তরতাজা যুবক। তিনি একজন ধর্মীয় শিক্ষাগুরু হলেও তার বংশ পরিচয়ের কারণে তিনি গুরু হয়েছেন। এমনকি তিনি ডক্টরেট নন, অধ্যাপক নন, কবি-সাহিত্যিক নন। বলতে গেলে কিছুই নন। কিন্তু অসাধারণ ভালো বক্তা। তার সভায় তুমুল ভিড়। ধুলোমাখা কথাবার্তাকে জনতার কাছে অসামান্য করে পরিবেশন করতে পারেন। এই জন্য তার কোনও ভাষাজ্ঞান দরকার পড়েনা। স্বরযন্ত্রের ওঠানামা ও জিজ্ঞাসার ভঙ্গিতে যুক্তিবাদ ছড়িয়ে দেন সভায়। বক্তব্যের মধ্যে কোনও জ্ঞানগর্ভ কথা থাকেনা তার, কোনও এমন উদাহরণ থাকেনা যাতে করে তাকে মণীষাসম্পন্ন বলা চলে। কিন্তু বক্তব্যগুণ তার অসাধারণ। বলার টেকনিক তার একান্তই মৌলিক। সাদামাটা কথাকে কৌশল দ্বারা অনুপ্রাণিত করতে পারেন। জনসভাকে চুপ করিয়ে রাখতে জানেন। ফেসবুকে ফ্যান ফলোয়ার অনেক। মুখটা নির্মল হাসিতে ভরপুর হলেও নিজেকে কঠিন করতেও জানেন। সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হলে আগামী দিনের মুখ্যমন্ত্রীর দাবিদার হবেন।

⛔ পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সম্প্রদায়ের একটা বৃহত্তম অংশ তাকে বিশ্বাস করতে আরম্ভ করেছে তার এই বৃহত্তর অনুগামী হয়েছে মাত্র তিনমাসের মধ্যে। কোনও রাজনৈতিক দল যাতে না, আব্বাস গড়তে পারেন তার জন্য অনেক বাধা এসেছিল, মূলত তৃণমূল কংগ্রেসের কাছ থেকে। তার কাকা পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকী, যিনি মূলত এখন তৃণমূলের লোক। তিনি জনসভা করে আব্বাসকে
আক্রমণ করেছেন কিন্তু কিছু করতে পারেননি। 

⛔ আমরা জানি মমতা ব্যানার্জীর কাছেও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যথেষ্ট পরিমাণে আছে। পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমদের একটা বৃহত্তম অংশ মমতার সঙ্গে এখনও রয়েছে এবং এই কারণে গোঁড়া হিন্দুরা মমতার থেকে সরেও গেছেন। এই তোয়াক্কা তৃণমূল যে করেনা তা খোলসা করে দিয়েছেন তৃণমূলের ভোটকৌশলী পি.কে। তিনি বলেছেন ৩০℅ সংখ্যালঘু অর্থাৎ মুসলিম ভোট তাদের কাছে আছে। মুসলিমদের বেশ কিছু অংশ কংগ্রেস ও সিপিএমকে এখনও চায়। যদিও তার সংখ্যা বেশিয়ঞয়, কমতে শুরু করেছে, সেই সংখ্যা আজ নগন্য। মালদা মুর্শিদাবাদের একচেটিয়া মুসলিম ভোট কংগ্রেসের কাছে আর পুরোপুরি নেই, তা ভাগ হয়ে তৃণমূল কংগ্রেস, সিপিএমেও চলে গেছে। এদিকে আদিবাসী মতুয়া ও বর্ডার এলাকার হিন্দু ভোট বিজেপির প্রতি আসক্তি থাকলেও এন আর সি-র কারণে
( সি.এ.এ) কিছু ভোট বিজেপির ইতমধ্যে ক্ষয় হয়েছে। যদিও বিজেপির হাতে ১৮ টা এম. পি আছে এখন এবং তারা জোটবদ্ধ হয়ে বিজেপির সঙ্গেই আছে। তাদের মধ্যে কোনও দোলাচল নেই। 

⛔ তৃণমূলের এখন সবচেয়ে বড় বিপদ, তাদের নিজ দলটাকে নিয়ে। প্রতিদিন দলটা ভেঙে
বিজেপির দিকে চলে যাচ্ছে। আজ ১০ বছরের বেশি সময় ধরে তৃণমূল দলটি বুদ্ধিজীবী, গায়ক অভিনেতার উপর নির্ভর করে চলছে। আজও টালিগঞ্জ থেকে অভিনেতা অভিনেত্রী এনে দল ভরাট করতে হচ্ছে। এই দলটা মূলত চলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য। এই একমুখী নির্ভরশীলতা কিন্তু রাজনীতির একেবারে ভুলপথ। এখান থেকেই যে স্বৈরতন্ত্র জন্মগ্রহণ করে কংগ্রেস ও বামপন্থীরা এবং বাকি বুদ্ধিজীবীরা তা বারবার সতর্ক করলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তা কখনও শোনেননি। উড়ে আসা লোকেদের দিয়ে শিখিয়ে পড়িয়ে রাজনীতি যে হয়না এই স্বতসিদ্ধতা তৃণমূল বুঝতে চায়না। এমনকি পাড়ায় পাড়ায় মুড়ি মুড়কির মতো কবি ও আবৃত্তিকার যে তৃণমূলের কেউ নন সেটাও তৃণমূল বোঝেনি। কারণ এইসব লোকের অধিকাংশ আবার ২০১২- র পর থেকে তৃণমূলে এসেছেন। যারা ২০১১ থেকে ছিলেন সেই ব্রাত্য বসু যোগেন চৌধুরীদের রাজনীতি না করলেও চলতো কিন্তু এমপি, মন্ত্রী হয়ে তারা রয়ে গেলেও তারা ঠুঁটো একরকম। রাজনৈতিক নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে তারা নিজেদের পারেননি। ৭০/৮০ জন বুদ্ধিজীবীর মধ্যে কুনাল ঘোষ একমাত্র রাজনীতি বোঝেন খানিকটা, যদিও লোকটি চরিত্রগত ভাবে অসৎ এবং পশ্চিমবঙ্গের লোকের কাছে কুনালের কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই। তৃণমূলের বৃহত্তর অংশ এইসব অরাজনৈতিক লোকে ভর্তি। জনগণ এদের খুব একটা পছন্দও করেন না। দেখা গেছে মুনমুন সেন পর্যন্ত অনুকূল সময়েও জিতে আসতে পারেননি। তৃণমূলের রাজনৈতিক নেতারা সকলেই বয়ঃবৃদ্ধ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একক ক্ষমতায়নের ফলেই যে খানিকটা তাদের বিপর্যয় ঘটেছে, হয়তো তারা বোঝেন কিন্তু তাদের শিরদাঁড়া আর সোজা করার মতো পথ তাদের আর জানা নেই। সকলেই তারা নৈবেদ্যর সন্দেশের মতো হয়ে গেছেন। তাদের ধার নষ্ট হয়ে গেছে। সৌগত,সুব্রত সুদীপের দ্বারা আর কিছু করার নেই। কল্যাণ এই দলের পিছিয়ে থাকা অনেক জুনিয়র হলেও জ্ঞানগর্ভ আলোচনা এর দ্বারায় আর হয়না। শুভেন্দুর বিরুদ্ধে হাত-পা নেড়ে ক্যারিকেচার করেও নিজেকে নতুন করে প্রতিষ্ঠিত করতে খুব একটা পারেননি-- কল্যাণ। যদি মিডিয়া বিজেপির ভুলগুলো ধরিয়ে না দিতো তাহলে তৃণমূল কংগ্রেসের এখন লড়াইয়ে তেমন ধার নেই যে বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে পারে। উল্টে গ্রামেগঞ্জে তৃণমূল পতাকা খুলে দেওয়া, ফেস্টুন ছেঁড়া, ঘর ভেঙে দেওয়া, মিছিল ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া এবং ভীতি প্রদর্শনের রাজনীতি বেছে নিয়েছে। আর এখান থেকেই যে তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্কে ফাটল ধরছে ও পতনের সৃষ্টি হয়েছে এই আপ্তবাক্য বোঝার ক্ষমতা তাদের নেই। এখন মূল প্রশ্ন হলো ২০১১-এর পাশে থাকা ভোটারদের তৃণমূলই দুয়োরানি করে সরিয়ে দিয়েছিল আগেই। তাদের টানার নানা প্রচেষ্টা কতটা তারা বলপ্রয়োগ করে করতে পারবে তা ভোটের দিনই বোঝা যাবে। 

⛔ এইসব ক্ষয় হতে পারে জেনেই তা কাটিয়ে উঠে, ধার পড়ে যাওয়ার আগেই শুভেন্দু দল থেকে বেরিয়ে এসেছেন। তার বয়সও অনেক কম সমস্ত নেতাদের চেয়ে। ছেলেমেয়ে, বউবাচ্চা নেই।কোনও পিছুটান না থাকায় শুভেন্দু রাজনীতিটা করেন নেশার মতো করে। সৌগত, সুব্রত ও সুদীপদের দীর্ঘ রাজনৈতিক কার্যক্রমে, একঘেয়েমি থাকলেও শুভেন্দু এদের মধ্যে ছিলেন শক্তিশালী ধনুকের মতো। মাথার ওপর দীর্ঘ দিনের পোড়খাওয়া রাজনীতিক ও পিতা, শিশির অধিকারী আছেন--তার। ভাইরাও আছেন সঙ্গে। যারা রাজনীতি করছেন ছোট থেকে। এতদিন তারা এক-একজন এক-একটা দিক সামলেছেন--তৃণমূলের। এমনটা নয় যে তারা জন্মেই নেতা হয়ে গেছেন। একটি পরিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবার। তাই রাজনীতি কীভাবে করতে হয় অধিকারী পরিবারের ভালোই জানা আছে। আক্রমণ কখন, কোথায় কীভাবে করতে হয় শুভেন্দু তাই ভালোরকম শিক্ষা পরিবারের কর্তার কাছে পেয়েছেন। তৃণমূলের কারখানায় শুধুমাত্র নয়। শুভেন্দু, সোমেন মিত্রের কংগ্রেসের কারখানাতেও কর্মজীবন কাটিয়েছেন। শুভেন্দু যুবক বয়স থেকেই পোড় খাওয়া রাজনীতিক। তৃণমূলের অন্দরমহলে বহু দপ্তর, বহু পদ সামলেছেন--একা। বক্তৃতা করতে ছুটে গেছেন এক-একদিন ৩০০/৪০০ কিমি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সেই তুলনায় যা প্রিভিলেজে থাকেন বক্তা হিসেবে শুভেন্দুর কাছে যেতে বহু পথ এখন যেতে হবে তাকে। হয়তো ভবিষ্যতে অভিষেককে রাজনীতি থেকে বিদায় নিতেও হতে পারে। মাঠে-ময়দানে বক্তব্য রাখেন একেবারে শিশুদের মতো। একা অভিষেক তৃণমূলের বড় নেতা হয়ে উঠবেন এটা কখনও সম্ভব নয়। আর অভিষেকের এই বড় হওয়ার প্রচেষ্টা থেকেই মুকুল ও শুভেন্দুর দল ছাড়া। শুভেন্দুর নিশানা এখন একমুখী এবং পরিষ্কার এবং একটিই তার ফোকাস পয়েন্ট। যারা মঞ্চে নাটক করেন তারা ভেবে দেখুন, মঞ্চে ফোকাসের আলো মুখে ও দেহে না নিতে পারলে অভিনয়কে তুলে ধরা যায়না। শুভেন্দু তার ফোকাস বুঝে গেছেন। 
রাজীব গান্ধীকে একসময় হারানো হয়েছিল
"গলি গলি মে শোর হ্যায় বফর্স কা কমিশন আয়া হ্যায়। " শুভেন্দুর সেই একই রকম আক্রমণের চাতুর্যময় সৃষ্টিতে তৃণমূলের ঘর এখন যে টলমল করতে বসেছে, সকলেই তা টের পাচ্ছেন। ইতিমধ্যে শুভেন্দুর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ চৈতন্য মহাপ্রভুকে নকল করা ভঙ্গিমায় শুধুমাত্র দৃষ্টিগোচর হয়েছে তা নয়, ভক্তিবাদী হিন্দুদের তিনি আপ্লুত করে ফেলেছেন। তিনি যে খোল ঢোল বাজাতেও পটু তাও জনগণ বিশ্বাস করে ফেলেছেন। কিন্তু জনসভায় বক্তৃতা করার কায়দায় তিনি এক মৌলিক ভঙ্গিমা সৃষ্টি করতে চাইছেন। সেটা কি ? দুটি চরিত্রকে ঠেসে ধরা। কখনও মহাপ্রভুর সহজ ভঙ্গিমা থেকে চলে যাচ্ছেন কথার জাদুতে। মন্ত্রের মতো ছড়িয়ে দিচ্ছেন কথা থেকে কথা। পরক্ষণেই তিনি দুটি হাত নামিয়ে এনে তর্জনী ও হাত দিয়ে আক্রমণাত্মক ভঙ্গীমায় একটি নির্দিষ্ট ঘরের দিকে আক্রমণ তুলে আনছেন, মাত্র দুটি লাইনে। বলতে গেলে একটি নির্দিষ্ট চরিত্রকে আক্রমণ করছেন। ভুল বললাম দুটি মানুষকে তিনি একসঙ্গে আক্রমণ করছেন। সকলের মনন যন্ত্রকে নিবন্ধন করে দিচ্ছেন তার বাক্যবাণের 
ব্যবহারিক প্রয়োগ থেকে প্রয়োগে। অঙ্গভঙ্গি দিয়ে সৃষ্টি করছেন মজা। বিদ্রুপগুলি ছুঁড়ে দিয়ে অপেক্ষা করছেন তার তাৎক্ষণিক উত্তর শোনার জন্য। এইসব কথা ধাবিত হচ্ছে তৃণমূল দলের প্রতি। জনগণের মনে একটা রেজিস্ট্রেশন করে দিতে পেরেছেন, ছাপ ফেলে দিতে পারছেন। যেন তিনি যা বলছেন সঠিক বলছেন। বিজেপির জনসভাগুলি যে শুভেন্দুর জন্য আরও বেশি করে প্লাবিত হচ্ছে সেই আন্দাজ এখন সকলেই পেয়ে গেছেন।

⛔ কিন্তু অন্যরা শুভেন্দুকে আক্রমণ করছে নানা দৃষ্টি কোন থেকে। যার ফলে কল্যাণ, মদন, ও কুনালদের, শুভেন্দু-আক্রমণ পেনিট্রেশন করতে পারছে না। শুভেন্দুকে ফালাফালা না করার ফলে বিজেপির দল ক্রমশ ঘন হচ্ছে ফাঁকা জমির জন্য । কুনাল মদন কল্যাণের লক্ষ্যবস্তু ছন্নছাড়া হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া তৃণমূলের একজন অন্তত স্বচ্ছ, নির্ভুল নেতা নেই যিনি শুভেন্দুর সমকক্ষ হতে পারেন। শুভেন্দুকে যদি ইউরোপীয় ফুটবলারদের মতো দক্ষতা সম্পন্ন ভাবা হয় তবে তৃণমূলের ফুটবল প্লেয়াররা কলকাতা মাঠের হবেন। শুভেন্দু একজন খাটিয়ে, লোড নিতে জানেন, ইতিমধ্যে তৃণমূলের হয়ে বিশাল বিশাল দপ্তর, অফিস ও জনসভা সামলেছেন। তার উপর শুভেন্দু এখন জুট করপোরেশনের চেয়ারম্যান ও জেড ক্যাটাগরির সিকিউরিটি ভোগ করছেন। তুলনায় ক্ষমতা এখন মমতার পরেই। ইদানীং শুভেন্দু অধিকারী, বিজেপিতে আসার আগে থেকেই তৃণমূলের মানসিক হৃদকম্পন শুরু যা হয়েছিল তা এখনও অব্যাহত আছে। হাওড়ার ডাঃ রথীন চক্রবর্তী, বৈশালী ডালমিয়া, লক্ষ্মী রতন শুক্লা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বহু ছোটবড় নেতা তৃণমূলের ভেতরের ছিদ্রগুলি প্রতিদিন সাংবাদিক সম্মেলন করে জনগণের কাছে বিতরণ করছেন। এতে জনগণের কাছে তৃণমূলের গ্রহণযোগ্যতা তলানিতে চলে যেতে বসেছে। এদিকে যেখানে বিজেপি মিটিং করছে উত্তরোত্তর ভিড় বাড়ছে তাই। 

⛔ ঠিক আব্বাস সিদ্দিকীর ভিড়ও তীব্র গতিতে ছুটছে। এই আব্বাস সিদ্দিকীকে একমাস আগেও
তৃণমূল দল একদম পাত্তা দেয়নি। এখন তৃণমূলের ভুল তারা নিজেরাই বুঝতে পারছে। এখন প্রশ্ন আব্বাস সিদ্দিকী ও তার ভাইয়ের ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্ট কি করবে এখন ? তৃণমূল কিন্তু তাদের সঙ্গে ফ্রন্ট করতে খানিকটা মরিয়া এখন। আবার অন্যদিকে কংগ্রেস এবং সিপিএম ও বামেরা আব্বাস সিদ্দিকীর সাহায্য চান। কিন্তু একটা বিষয় পরিষ্কার যে ৫০/৬০ টা সিট তাদেরকে ছাড়তে সকলেই নারাজ। আব্বাস সিদ্দিকী এবং হায়দ্রাবাদের মিম মিলে ইতিমধ্যে তারা একটি জোট গড়ার পরিকল্পনা করে ফেলেছেন। কিন্তু যেভাবেই হোক এই জোট গড়তে, কংগ্রেস,সিপিএম ও তৃণমূলের ঘোর আপত্তি আছে। তাই তারা কায়দা করে মিমকে বিজেপির লোক বলে বারবার দেগে দিচ্ছে। 
কিন্তু অবাক কান্ড বিজেপি এই বিষয়ে মাথা ঘামায়নি কখনও। তারা অন্তত আব্বাস সিদ্দিকীর বিষয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেনি, মিমের বিষয়েও নয়। 

⛔ বরং শুভেন্দুকে বলতে শোনা যাচ্ছে ৭০% হিন্দুর ভোটের কথা। দেখতে গেলে তৃণমূল কংগ্রেসের এখন ছন্নছাড়া অবস্থা। সেই কারণে যা খুশি যেমন খুশি তারা জনগণের জন্য বিলিয়ে দিতে চাইছেন সমস্তটাই একটা ব্যাপক ঋণ-ধার করে। ইতিমধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সর্বাধিক ঋণে জর্জরিত দান খয়রাতির রাজ্য। এই দান খয়রাতি কেবলমাত্র নির্বাচনে জিততে যে তা সকলেই বোঝেন। কিন্তু যেভাবে প্রতিদিন ভোটের হাওয়া গরম হতে শুরু করেছে তাতে করে হিন্দু ভোট যদি বিপ্লব ঘটায় তাহলে বিজেপির উত্থান আটকিনো মুশকিল হবে। 

⛔ এখন এইবার পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন জমে যাবে যদি আব্বাস সিদ্দিকীরা মিমকে নিয়ে জোট করেন। যে যাই বলুন মিমকে নিয়ে তারা ফ্রন্ট করলে সর্বোচ্চ সুবিধা অর্জন করতে পারবেনই। এই মূহুর্তে তৃণমূল চেষ্টা চালাচ্ছেন আব্বাসের সঙ্গে বাইরে থেকে বোঝা পড়া করার। মিম ভেতরে থাকলেও তারা এখন খুব জোর একটা আপত্তিতে যাবেনা। কিন্তু তৃণমূলের এখন মহা বিপদ। তারা যদি আব্বাস সিদ্দিকীর সঙ্গে যায় তাহলে তাদের হিন্দু ভোটে ধ্বস নেমে যাবে। এই ভয় তাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে। তবে কংগ্রেস সিপিএমের সেই ভয় নেই। তাদের সঙ্গে খুব একটা ভোটার নেই এখন । একমাত্র মুসলিম ভোটই তাদের বাঁচাতে পারবে। তাই তারা চাইবেন যেভাবেই হোক আব্বাস সিদ্দিকীদের ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের সঙ্গে যেতে। বাঁচার সহজ রাস্তা এটিই। আর যদি কংগ্রেস ও বামেরা আব্বাসের সঙ্গে যেতে পারে তবে পশ্চিমবঙ্গের ভোট বাজার নিঃসন্দেহে জমে যাবে। এইরকম জোট হলে পশ্চিমবঙ্গে এইবার ত্রিশঙ্কু হওয়ার চান্স খুব বেশি। আবার হিন্দু ভোট একদিকে ৪০% চলে গেলে বিজেপির ১৪০/১৪৫ টা বা তার বেশিও পেতে পারে। ১৫০ টি সিটি পাওয়ার সম্ভাবনা বেশ উজ্জ্বল হয়েও উঠতে চলেছে তাদের। 

⛔ মনে রাখতে হবে এইবার নির্বাচন কমিশন অফিসারদের ওপর সাসপেনশন ধরিয়ে দেবেন। যারফলে নির্বাচনের দিন রাস্তায় ভোটার ছাড়া আর কেউ থাকতে পারবেন না। বুথের কাছে যাওয়া তো দূরের কথা। ভোট দিতে আটকানো মনে হয় যাবেনা এইবার। কমিশন মনে করলে যাকে তাকে অ্যারেস্ট করবে বিধিলঙ্ঘন করলেই। অতএব আব্বাস সিদ্দিকীরা মিমকে নিয়ে ৬০ টা আসন চাইলে ৪৫ টা জিতেই যাবেন এবং তারা আগামী মন্ত্রীসভায় নিশ্চিত থাকতে চলেছেন। আর তারা যা চাইছেন তা হলো তাদের অনুমতি ছাড়া নতুন সরকার কোনও নড়াচড়া করতে পারবে না। এইবার আপনি বুঝে নিন কে বা কারা সরকার গড়বে এবারে। 

⛔ বিজেপি ও আব্বাস সিদ্দিকীরা মন্ত্রীসভা গড়লে আশ্চর্য হবো না। সকলেই এই ভয়টাই পাচ্ছেন। অথচ এই দুই দল এখনও পর্যন্ত কখনও রাজ্য চালায়নি। কেউ কাউকে গালাগালি অসম্মান করেনি। ফ্রন্টও করবে না। 
©® অলোক কুন্ডু

সুভাষ বোস ফটোওয়ালা কোং: অলোক কুন্ডু

সুভাষ বোস ফটোওয়ালা কোং / অলোক কুন্ডু ©®

দেখলেই বোঝা যায় অসময়েও
মুনিম আগর‌ওয়ালার দিন
আজকাল বেশ ভালো যাচ্ছে
তার ক্যানিং স্ট্রিটের দোকানে ভিড় লেগেই আছে ।
ফুটপাতের ছবিঅলা ছাড়াও
ছেলে-ছোকরাদের অনন্ত আনাগোনায়
দেদার বিক্রি হচ্ছে রাজনৈতিক নেতাদের মুখ
আর সঙ্গে সঙ্গে টালমাটাল হতে থাকছে
মুনিমের মুখের হাসিও ।

পাশের দোকানের বঙ্কু পোদ্দারদের
এ তল্লাটে তিন পুরুষের রঙের বেওসা ।
যত‌ই ইলেকশন এগিয়ে আসছে
মুনিমের খরিদ্দারের ভিড়
বঙ্কুর দোকানকে ছাপিয়ে চলে যাচ্ছে যেন
বঙ্কু বললো- তুর বাজারটা খুব জমেছে ভাই
       যো বোল ?
এতো দেখছি সুভাষ বোসকে ভি ছাপিয়ে গেল রে।
মুনিমের হাসির সাউন্ড সিস্টেমের স্পিকারে তখন
ডলবি টেকনোলজির ধুম--
মুনিম পিচ্ আওয়াজ করে একটু দূরে
পানের পিক ফেলে এলো 
টাকা গুনতে গুনতে 
হাসি তার আর থামতেই চায়না ।

এবছর‌ও ২৩ শে জানুয়ারির আগেই
মুনিমের ব‌উ বলে দিয়েছিল
ইবারে কিন্তু ভালো দুটো শাড়ি দিবে 
লড়কিকে লিয়ে ভি সিসা ওয়ালা লেহেঙ্গা জরুর চাইয়ে।
ফি-বছর ২৩ শে জানুয়ারি এলে
বাড়ির সিঁড়িতে গণেশজির পাশে টাঙানো ছবিটায়
ঝাড়পোচ হয় চন্দন লাগানো হয়
প্রতিদিন মালা লাগাতে লাগাতে 
মনে মনে বলে 'বেস্ট সেলার বঙয়ালি বলতে তো
একজন‌ই আছেন ।'
-- প্রণাম করে আসছে কতকাল মনে নেই ।
শুধু জানে ছবিটা মুনিমের বাবার আমলের 
বেওসায়ি হলেও ছবিটা কিন্তু 
পাল্টানোর কথা ভাবেনি সে ।

একদিন এক সাংবাদিকবাবু এসেছিলেন
জিজ্ঞেস করেছিল রবীন্দ্রনাথ টেগোর 
বিশ্ব কবিকে মুনিম চেনে কি না ? 
ফুল দূধের চা খাইয়েছিল বাবুকে 
বলেছিল কি যে বলেন রবি ঠাকুরকে কে না চেনে
কিন্তু সুভাষ বোসের কাছে কিছু নয়
সুভাষ বোসের ছবি যত ক্যালেন্ডার হয় 
স্কুলের ছেলেমেয়েরা যত কেনে 
সত্যি বলছি বাবু 
আর কার‌ও ছবির অত বেওসা হয়না 
সুভাষ বোস ভগবান আছে ভগবান ।

বঙ্কু মস্করা করে আজ বললো 
-'কিন্তু এখন তো তোর দোকানের ভিড় সুভাষ বোসের নয় ? 
এত ভিড় তো আগে ছিলনা কোনোদিন 
এ ভিড় তো --
সুভাষ বোসকে ভি ছাপিয়ে গেল রে।' 
টাকা গুনতে গুনতে আর একবার পানের পিক্ ফেলে মুনিম । 
আগের মতো হাসতে পারলো না 
মুখটা এখন গম্ভীর হয়ে এলো
বললো -ভিড় তো বড় জোর ইলেকশন পর্যন্ত
জিতলে ভালো 
কিন্তু হেরে গেলে কী হবে ভাব
এইসব ছবি একটাও বিক্রি হবে না রে ভাই
গোডাউনেই পড়ে থাকবে শেষে কাগজওলা লিয়ে যাবে রে।

ভিড় একটু পাতলা হয়েছে এখন
ওড়িয়াবামুন জগদীশের লাগানো
সদ্য কেনা টাটকা মালা দেওয়া পিতাজির ছবির পাশে 
শ্রীরামকৃষ্ণ শ্রীমা স্বামীজি রবীন্দ্রনাথ  
ওদিকের দেওয়ালে বিশাল সুভাষচন্দ্র একা
নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস তার দিকে চেয়ে আছেন  
কেউ অবাঙালি বললে খুব রাগ হয় তার
ওঁদের প্রণাম করতে বাবার কাছে শিখেছে সে
মুনিম অবাক হয়ে দেখলো 
ছবিগুলো থেকে আলোর জ্যোতি বেরিয়ে আসছে তার মুখময়। 

©® অলোক কুন্ডু

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...