বুধবার, ২০ এপ্রিল, ২০২২

মোহন-ইস্টের খেলা ছেড়ে সৌমেন ঠাকুরের বক্তৃতায় ভিড় : অলোক কুন্ডু

🎯 গুণি নেতা ও বক্তব্য গুণের হলে মানুষ মনে রাখবেন।

🎯 দেখতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের থেকে আরও সুন্দর ছিলেন। সত্যজিৎ রায় যখন তাঁকে দেখেছেন তখন তিনি রাজনীতি করেন। দারুন আবৃত্তিকার। গান গাইতে পারেন। কবিতা লিখতেন পারেন। ছবি আঁকতে পারেন।কিন্তু আদ্যোপান্ত একজন কম্যুনিস্ট। কম্যুনিস্ট পার্টি ও লেনিন সম্পর্কে দুটি বই লিখেছিলেন। কলকাতায় সৌমেন ঠাকুর বক্তব্য রাখলে হৈ হৈ পড়ে যেত। তাঁর বক্তব্য এতটাই টানটান, এতটাই তুখোড় এবং কাব্যিক ব্যঞ্জনাময় যে স্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখতো যে আজকের দিনে তা ভাবতে পারা যাবেনা। তাঁর বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে ভাব ও ভাষা বোঝাতে তাঁকে কোনোদিন হোতো না। কখনো শালীনতা ছাড়িয়ে যেতেন না কিন্তু বিরোধীদের চরিত্রগুলিকে ছাল ছাড়িয়ে দিতেন। বিরোধীদের ন্যায় নীতিকে পর্যদুস্ত করে দিতেন। বক্তব্যের মাঝে তাকে এমন কোনও প্রসঙ্গ আনতে কখনও হয়নি যার ফলে তিনি ধিক্কার পান। অথচ তীব্র শ্লেষাত্মক বক্তব্য রাখতে তাঁর জুড়ি ছিলনা। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল সায়েন্সের ছাত্ররা ছুটছেন ডায়রি নিয়ে কী বলেন সৌমেন ঠাকুর, কেমনভাবে বলেন। রবীন্দ্রনাথ, সৌমেন ঠাকুরের অনুরোধে গান লিখেছেন পর্যন্ত। রবীন্দ্রনাথ খুব পছন্দ করতেন ঠাকুরবাড়ির এই সন্তানকে। হাওড়ার প্রাক্তন কংগ্রেস নেতা মৃগেন মুখোপাধ্যায় একদিন বলছিলেন, তখন ফার্স্ট ইয়ারে তিনি পড়েন। তিনি বলছিলেন, শুনলাম সৌমেন ঠাকুর একদিন উত্তর কলকাতায় এক জায়গায় বক্তব্য রাখবেন। তার আগের দিন বাবা একটা ফুল প্যান্ট কিনে দিয়েছেন। সেই সময় ধুতি ছেড়ে ছেলেরা সবে প্যান্ট পরছে। প্যান্টটা লুজ হয়েছে। আবার বাড়ি গিয়ে প্যান্ট পাল্টে ধুতি পরতে গেলে দেরি হয়ে যাবে। তাই কলেজের দরোয়ানের ঘর থেকে নারকেল দড়ি দিয়ে কোমর টাইট করে ছুটলাম বক্তব্য শুনতে। সৌমেন ঠাকুরের বক্তব্য শোনার জন্য সিপিআই, আর. সি.পি.আই, কংগ্রেস, ফরোয়ার্ড ব্লক, এস ইউ সি আই সব দলের লোকেরা জড় হতো। আর আজ নেতাদের মুখ থেকে জঘন্য বক্তব্য শুনলে আমরা বিস্তর হাততালি দিচ্ছি। সত্যি আমাদের কত পরিবর্তন হয়েছে। সংস্কৃতির পরিবর্তও বলা যায়। আগে শুনেছি সাহিত্যক অধ্যাপকদের পড়ানো শুনতে অন্য ক্লাসের ছাত্রেরাও জড় হতেন তাঁদের ক্লাসে। কবি তরুণ সান্যালের ইকনমিক্স পড়ানো শুনতে স্কটিশে চলে আসতেন বাইরের ছেলেরা। আমি একবার কংগ্রেস নেতা দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের একটি সেমিনার শুনতে গিয়ে এতটাই মুগ্ধ হয়েছিলাম যার সঠিক উদাহরণ দেওয়ার ভাষা আমার জানা নেই। তিনি ছিলেন অধ্যাপক এবং ইন্দিরা গান্ধীর প্রিয় পাত্র, কেন্দ্রীয় বাণিজ্যি মন্ত্রী ছিলেন। দেখতে এতটাই সৌম্য দর্শন ছিলেন যে সিনেমার নায়ক হতে পারতেন। আমার হাওড়ার দীনবন্ধু কলেজে যখন সুমন্ত চৌধুরী " লাস্ট রাইড টুগেদার" পড়াতেন আমরা সবাই ভাবতাম স্যার যেন খালি চিরকাল ধরে ওটাই পড়িয়ে যান। ক্লাস ফাঁকির অফুরন্ত সুযোগ সুবিধা ও প্রলোভলনেও তাই ক্লাস ছাড়তাম না। একবার কৃষ্ণনগরে মোহনবাগান ইস্টবেঙ্গলের খেলা। বাজার গরম। আর খেলা ঠিক হওয়ার বহু আগেই ঠিক হয়ে আছে সৌমেন ঠাকুর মশাইদের পার্টির মিটিং। সৌমেন ঠাকুর মুখ্য বক্তা নন। তখন তিনি পরিচিতি ততটা পাননি। আর তখন ইস্টবেঙ্গলে খেলেন বিখ্যাত পঞ্চপাণ্ডব। সকলে ধরেই নিয়েছেন একই সময়ে খেলা ও মিটিং পড়ে যাওয়ায় সভায় আর কেউ থাকবেন না। সভায় তখনও বড় বক্তারা আসেননি। সভার লোকেরাও অনেকেই সভা কিছুটা শুনে মাঠে যাবেন ঠিক করেছেন। তখনকার মাঠ বলতে চট দিয়ে ঘেরা। টিকিট কেটে খেলা। সৌমেন ঠাকুর বিকাল চারটের সময় সভা শুরুর টাইমের আধ ঘন্টা আগেই বক্তব্য রাখতে শুরু করলেন। তার বক্তব্য শেষ হলো দেড় ঘণ্টা পর। ততক্ষণে খেলা শুরু হয়ে শেষ হয়ে গেছে। এদিকে এই সভার ভিড় তো কমেই নি উত্তরোত্তর বাড়তে শুরু করে।

🎯 ©® অলোক কুন্ডু

বানিহাল থেকে শ্রীনগর ডি.এম.ইউ

বানিহাল থেকে গত ১১.৪.২০২২ এসেছিলাম ডিএমইউhttps://m.facebook.com/story.php?story_fbid=956144081760444&id=124001074974753
ট্রেনে চেপে। তার আগে অবশ্য ৩০০ টাকা দিয়ে শেয়ারে প্রাইভেট গাড়ি চেপে শ্রীনগরের নওগা থেকে
পৌঁছে গেলাম বানিহালে। ১১ কিমি বানিহাল জওহর ট্যানেল পেরিয়ে। ফিরলাম ট্রেনে করে ২.৪৫ -এ ট্রেন।
১.২৩ -এ বানিহালে পৌঁছে টিকিট কাটলাম। ৪৫ টাকার টিকিট কাটতে ৫০ টাকা দিতে কাউন্টারের ভেতর থেকে
ওধারে বসা ভদ্রলোক বললেন ৫ টাকা তো ফেরত দিতে
পারবো না। আমি পরের ভদ্রলোককে ওনার ৫+৫=১০
দিয়ে দিচ্ছি। আমি বললাম আপত্তি নেই। ওই ব্যক্তি বললেন, দাদা আপ দশ রুপিয়া লিজিয়ে। এ তো খুব মুস্কিল। তাই আমি বললাম আপ লে লিজিয়ে। এতে বুঝলাম যে কাশ্মীরীরা কত সৎ।

মঙ্গলবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২২

Tulip Garden #IndiraGandhiMemorialTlipGarden on 04.4.2022

দেখা এক খোয়াব তো ইয়ে সিলসিলে হুয়ে 
দূরতক নিগাওঁ মে হ্যায় গুল খিলে হুয়ে...

আমার কাশ্মীর 


ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল টিউলিপ গার্ডেন , পূর্বে ছিল মডেল ফ্লোরিকালচার সেন্টার ছিল। ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে অবস্থিত এটি টিউলিপ বাগান নামে বিখ্যাত। এশিয়ার বৃহত্তম টিউলিপ বাগান যা প্রায় ৩০ হেক্টর (৭৪একর) এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। জাব্রোয়ান রেঞ্জের পাদদেশে অবস্থিত । ২০০৭ সালে কাশ্মীর উপত্যকায় ফুলের চাষ এবং পর্যটনকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বাগানটি খোলা হয়েছিল। পূর্বে এটি সিরাজ বাগ নামে পরিচিত ছিল। আমস্টারডাম থেকে একাধিক রঙের প্রায় ১.৫ মিলিয়ন টিউলিপ বাল্ব এখানকার টিউলিপ বাগানে আনা হয়েছিল তখন। প্রতি বছর কিছু কিছু আনাও হয়ে থাকে। এছাড়া ওখান থেকে আনা ড্যাফোডিল, হায়াসিন্থ এবং রানুনকুলাস সহ ৪৬ রকমের ফুল। এই টিউলিপ গার্ডেনে প্রায় ৬৫ ​​রকমের টিউলিপ রয়েছে। এবছর ঘোষণা হয় ২৫ মার্চ থেকে ২৫ এপ্রিল ২০২২, এই টিউলিপ উৎসব। আসলে টিউলিপ পরিপূর্ণভাবে ফুটেতে শুরু করেছিল এবারে ১ এপ্রিল থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত। সাধারণভাবে তিনটি স্তরে এই ফুল হয়। তাই ৩ ও ৪ এপ্রিল যেগুলো ফুটে ছিল তারা এবং ১ এপ্রিল ফোটা ফুলগুলি মোটামুটি ৮ এপ্রিল পর্যন্ত ছিল। পরে আবার ১১ তারিখে যাই। ৯ , ১০ ও ১১ এপ্রিল প্রায় সিংহভাগ ঝরে যায়। ১২ থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত টিউলিপের কয়েকটি প্রজাতি হয়তো বা বাগানে থাকলেও টিউলিপের অন্য প্রজাতির ফুল বাগানে হয়তো থাকবে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত। তবে কাপ টিউলিপের থাকার সম্ভাবনা হয়তো আর নেই। 

সিলসিলা রিলিজ করে ১৯৮১ সালে। তাই কখনই সিলসিলার বিখ্যাত গানটি কাশ্মীরে স্যুট হয়নি। এটা নিয়ে আমাদের মধ্যে একটা ভুল ধারণা রয়েছে। তা হয়েছিল, হল্যান্ডে। 

টিউলিপের বাগান করার প্রচেষ্টা দিল্লির রাষ্ট্রপতি ভবনেও হয়েছিল এবং লোদী গার্ডেনে ২০১২ সালে এই মহার্ঘ ফুল তৈরি করার প্রচেষ্টা নিলেও তার সেই সৌন্দর্য আসেনি। রাষ্ট্রপতি ভবনের বাগান জনগণের জন্য খুলে দেওয়া হলেও ছবি তোলায় নিষিদ্ধ লেখা ছিল। তবে খরচ ও রক্ষা করার প্রশ্নে টিউলিপের চাষ করা খুব একটা সুখের নয়।

বাস্তবটি হল টিউলিপ একসময়ে পশ্চিম ইউরোপকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল।  ফ্রান্স, ইংল্যান্ড, বেলজিয়াম এবং নেদারল্যান্ডে-এর খ্যাতি বৃদ্ধি পেয়েছে সবচেয়ে বেশি। শিল্পীদের পেইন্টিং, বিশেষ করে ডাচ পেইন্টিংয়ে এবং মোজাইক থেকে সূচের কাছে টিউলিপকে শিল্পীরা মোটিফ হিসেবে বেছে নেয়। এইসব দেশের শিল্পীদের ভালো লেগে যায় এই বিদেশী ফুলটিকে। শিল্পীদের দ্বারাই যে টিউলিপের কদর পৌঁছে যায় বড় লোকেদের ঘরে ঘরে একথা অনস্বীকার্য। শেষে জাপান পর্যন্ত অরিগ্যামি সৃষ্টি করে ফেলে টিউলিপের ( অরিগ্যামি শিক্ষার জন্য এটি আমার করায়ত্ত হয়েছে)

কিন্তু ইতিপূর্বে কখনও টিউলিপের ইতিহাস জানতে ইচ্ছে করেনি। শ্রীনগরে টিউলিপ দেখে ( ৩.৪.২২ -১২.৪.২২) যখন বাড়ি ফিরে এসেছি, তখন আমার থেকে বয়সে ছোট কিন্তু অনেক বিষয়ে খবর রাখেন এবং হাওড়ার বাগনান হাই স্কুলের ইংরেজির শিক্ষক সুপ্রিয় ঘোড়ুইকে ফোন করলাম। সুপ্রিয় মোটামুটি ফোনেই টিউলিপের একটা ইতিহাস শুনিয়ে দিল আমায়। ওইসব শোনার পর টিউলিপ নিয়ে জানার ইচ্ছা আরও বেড়ে গেল আমার। পড়াশোনা শুরু করলাম। নানা জায়গা থেকে পড়তে শুরু করলাম। শেষে অর্থনীতির সঙ্গে টিউলিপের সম্পর্ক জেনে, বঙ্গবাসী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ দেবদাস মুখোপাধ্যায় দা-র সরনাপন্ন হলাম। উনি অর্থনীতির অধ্যাপক।

(Prof D D M : Tulip mania was observed in Netherland during the period 1634 to 1637 when people did involve in betting on tulip prices.ultimately the price crashed in no timedue to various reasons and thus they suffered much. It is, therefore, almost akin to a bubble that got busted and consequently people who   did make high investment on tulip in the hope of high returns, eventually became the worst losers.

In fact, any type of investment which is speculative in nature and which does not have the backing of any solid ground reality, is bound to be crashed after sometime  because bubble will bust in due course. This is often observed in share market;)

ওনার কাছ থেকে একটা ধারণাও পেলাম। কৃতজ্ঞ দুজনের কাছেই। এহেন সুন্দর একটি ফুল যা মানুষকে পাগল করে তোলে, তাকে নিয়ে যে অর্থনীতির একটা টার্ম তৈরি হয়েছে এটা জেনে খুবই আশ্চর্য হলাম। টিউলিপের সঙ্গে যে একটা আর্থ সামাজিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে এটাও জানতে পারলাম। তা থেকে অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের একটা রিলেশন জড়িয়ে গেলেও তা কিন্তু এখন অন্যভাবে নেদারল্যান্ডসের সমৃদ্ধির সূচকও বটে।

ডাচ স্বর্ণযুগের একটি সময় ছিল যখন সম্প্রতি চালু হওয়া এবং ফ্যাশনেবল কিছু টিউলিপ চাষের চুক্তির মূল্য অসাধারণভাবে উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। এতে একটা ধারণার জন্ম হয় যেন টিউলিপ হল সোনাদানার মতো একটি সম্পদ। ১৬৩৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেই ধারণা নাটকীয়ভাবে ভেঙে পড়েছিল নানাকারণে। তার একটি কারণ, চাহিদার তুলনায় দাম বেশি ও অতিরিক্ত ফলন। 

এই ঘটনাটিকে সাধারণত ইতিহাসে প্রথম অনুমানমূলক সম্পদ সৃষ্টির প্রচেষ্টা বলে নথিভুক্ত করা হয়। অনুমান 
তো খানিকটা বুদবুদের মতো। তাই ডাচেদের টিউলিপ ম্যানিয়াকে অনুমানমূলক বুদবুদের সমকক্ষ হিসেবে দেখা হয়েছিল। তখন একটি কাল্পনিক অনুমানের সৃষ্টি করা হয়েছিল টিউলিপকে সম্পদের পর্যায়ে ফেলে দিয়ে। 

আসলে টিউলিপের সৌন্দর্য কিন্তু কখনও দীর্ঘস্থায়ী ছিলনা, সুগন্ধিও কোনও ছিলনা, তবু এক একটা টিউলিপের দাম বেড়ে হয়েছিল সেই সময়ের একজন ডাচ দক্ষ কারিগরের আয়ের দশগুণ। কোনও কোনও প্রজাতির এক গোছ টিউলিপের দাম উঠেছিল একটি প্রাসাদের দামের সমান। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল সেখানে টিউলিপকে কেন্দ্র করে একটি ম্যানিয়ার জন্ম হয়েছিল এবং টিউলিপের দামকে অবাস্তবভাবে শীর্ষে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এটা হয়েছিল ১৯৩৪ থেকে ১৯৩৭ এর মধ্যে। আসলে ম্যানিয়া হল খানিকটা বুদবুদের মতো। সেই সময়ের এটি একটি উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক সংকট যার নাম "টিউলিপ ম্যানিয়া।" এই টিউলিপ ম্যানিয়া শব্দটি এখন প্রায়ই রূপকভাবে ব্যবহৃত হয় যে কোনো বড় অর্থনৈতিক বুদ্বুদের ভঙ্গুরতা বা বিপর্যয় বোঝাতে। যখন সম্পদের দাম অন্তর্নিহিত মূল্য থেকে বিচ্যুত হয়। তখন তাকে টিউলিপ ম্যানিয়া বলা হয়।

এই ঘটনা যখন নেদারল্যান্ডসে ঘটেছিল, একজন দক্ষ কারিগরের বার্ষিক আয়ের ১০ গুণ দরে কোনও কোনও টিউলিপ বিক্রি হলেও শেষ পর্যন্ত বাজার বসে পড়ে। টিউলিপ চাষে হাজার হাজার টাকা যারা ইনভেস্ট করেছিল, যারা বিনিয়োগ করেছিল তারা পথে বসে যায়। ডিলাররা পথে বসে যায়। চুক্তিপত্র, ফুল, ডিভিডেন্ড সব একসঙ্গে জ্বলেপুড়ে খাক হয়ে যায়।

ইউরোপজুড়ে টিউলিপের বাগান করার প্রবণতা বাড়তে থাকলেও ১৬৩০ থেকে ডাচেরা টিউলিপ চাষে ইউরোপের সমস্ত দেশকে ছাপিয়ে যায় এবং ১৬৩৪ সালে টিউলিপকে অর্থনৈতিক ভাবে ভোগবাদী সমাজের দৃষ্টিতে সম্পদ বৃদ্ধির হাতিয়ার করে প্রচার শুরু করে। টিউলিপের উপর টাকা ঢেলে অনেক বিনিয়োগকারী ওইসময় ধ্বংস হয়ে যায়। ডাচ বাণিজ্য পর্যন্ত ধাক্কা খায়।

দেখতে যত সুন্দর ততটাই সুগন্ধিহীন এই টিউলিপ। এমন এই ফুলেকে নিয়ে মানুষের অর্থনৈতিক ইনভেস্টমেন্ট এমন একটা উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল যা অস্বাভাবিক আকারের একটি প্রভাব সৃষ্টি করেছিল যে সে তো জানাই হল। আসলে এইরকম হাই ইনভেস্টমেন্ট যদি অস্থির ও অস্থায়ী ক্ষেত্রে হয় তাকে অর্থনীতিতে বুদবুদের সঙ্গে তুলনা করা হয়। অর্থনীতীতে বুদবুদের ওপর পয়সা ঢেলে কম সময়ে বড়লোক হওয়ার প্রবণতা দীর্ঘদিনের। আমাদের এখানে সঞ্চয়িতা, সারদায় ইনভেস্টমেন্ট ছিল তাই একরকম টিউলিপ ম্যানিয়া। 

মোটামুটি ১৫৫৩ সালে হল্যান্ডে টিউলিপ চাষ প্রবর্তিত হয়েছিল এবং প্রাথমিকভাবে ১৬৩৪ থেকে ব্যবসা বৃদ্ধি হতে শুরু করে এবং ম্যানিয়ার শুরু এবং ১৬৩৭ বুদবুদটি ভেঙে পড়ে। ডাচ টিউলিপ বাল্ব মার্কেটের বাবলের ইতিহাস বলে গোটা কয়েক বিশ্ব বিখ্যাত বই লেখা হয়ে গেছে। 

ষোড়শ শতাব্দীতে ইউরোপজুড়ে বিত্তশালীদের বাগানজুড়ে টিউলিপের আগমন ঘটতে থাকে। মনে করা হয় মশলা ব্যবসায়ীদের হাত ধরে এই ফুল ইউরোপে প্রবেশ করে বহিরাগতদের সঙ্গে। যেহেতু ইউরোপীয় ফুলের জলশায় প্রথম থেকেই টিউলিপ একটা জায়গা করে নেয় তাই উপহার দেওয়া, ড্রইংরুম সাজাতে ও উৎসবে ক্ষণকালের জন্য হলেও ইউরোপীয় বিত্তবানেরা এই ফুলকে আপন করে ফেলে এবং বিলাসবহুল আইটেম হিসেবে আস্কারা ও আদর পেয়ে যায় টিউলিপ। ডাচেরাই এই ধুয়ো তুলেছিল এবং তারাই এই ফুলের মর্যাদা বাড়িয়ে ফেলে। যাদের বাগানে এই ফুল হতো তারা ওইসময় নিজেদের ভাগ্যবান বলে ভাবতেও শুরু করে দেন। মধ্যবিত্তরাও বিত্তশালীদের অনুসরণ করতে শুরু করে দেন। বাড়ির সদর বাগানে টিউলিপের আগ্রহ এতোটাই বেড়ে যায় যে এর বীজের দামও মহার্ঘ হয়ে দাঁড়ায়। প্রাথমিকভাবে, এটি একটি স্ট্যাটাস আইটেম হয়েও দাঁড়িয়ে যায়। যেটি ব্যয়বহুল হতেই একসময় এই ফুল, ব্যবসায়ীদের কাছে তা সম্পদের আকার নেয়।  

কিন্তু এই সময়ে চাষের ক্ষেত্রে, ডাচেদের কাছে অন্যরা মুন্সিয়ানায় হেরে যায়। সাধারণভাবে এখনও টিউলিপ চাষ একটি দীর্ঘ আবিষ্কারের ফসল। কিন্তু টিউলিপের চাষ বহু আগে কুখ্যাত ছিল। কারণ অল্পেই পাপড়ি ভেঙে পড়তো ও ভঙ্গুর ফুল বলে পরিচিতও ছিল এবং সাবধানে চাষ না করতে পারলে টিউলিপ রাখা যেত না।
বিশষ করে টিউলিপের চারাতে বরফ পড়া যে জরুরি এবং প্রয়োজনীয়, সেটা বোঝাও সহজ ছিল না। এছাড়া সহজেই মারা যেত। কিন্তু ডাচেদের হাতে এর বাড়বাড়ন্ত হতে থাকলে টিউলিপের চাষে ও বাগানগুলোতে ইনভেস্টমেন্ট বাড়তে থাকে। এই সুযোগে ব্যবসায়ীরা টিউলিপের দাম আকাশছোঁয়া করে ফেলে। রটে যায় সঠিক টিউলিপ চাষে টাকা ঢাললে বিশগুণ হয়ে ফিরে আসবে। এটাই হচ্ছে বুদবুদ। টিউলিপের পেশাদার চাষীরা স্থানীয়ভাবে ফলন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনে নানা কৌশল নেয়। ফুলের বীজ সংরক্ষণ, রঙ, প্রজনন ও পরিমার্জনে তারা মাষ্টারি শুরু করে দেয়, একটি সমৃদ্ধ ব্যবসায়িক খ্যাতি প্রতিষ্ঠা করে ফেলে। আজও কিন্তু এই খ্যাতি অব্যাহত আছে। নেদারল্যান্ডসে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত যে টিউলিপ উৎসব হয় তা দেখতে, কিনতে, হাতে ধরতে পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষ উপস্থিত হন সেখানে। মোটামুটি নেদারল্যান্ডসে এখন এত রকম রঙের এত রকম প্রজাতির ফুল হয় যে তা ১৫৬ প্রকারকেও ছাড়িয়ে গেছে। 

অন্যদিকে টিউলিপের একটি সমৃদ্ধশালী ও একটি বাইজেন্টাইন গল্প আছে। ইংল্যান্ডে প্রথমে এই ফুল
দেখতে পাওয়া যায় বলে ইউরোপের মধ্যে একটি রটনা আছে। একজন ইংরেজ মালীর হাত ধরে হয়েছিল। এটি ইস্তাম্বুল থেকে সমরখন্দ এবং তিয়েনশান পর্যন্ত বিস্তৃত ঝোপঝাড়ের বুনো ফুল হিসেবে দেখা যেত ১২ শতকের আগেই। ফুলটি অবশেষে অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতানের দৌলতে জাতে উঠতে পারে।

টিউলিপ কিন্তু বসন্তের ফুল। এখন পর্যন্ত ইস্তাম্বুলে,
আমেরিকার কয়েকটি জায়গায়, ইউরোপ ও কানাডায় চিন, জাপান ও কোরিয়ায় টিউলিপের চাষ ভালো হচ্ছে। তবে হল্যান্ডেই এর কদর সবচেয়ে বেশি। সাধারণতঃ মার্চের পনেরো তারিখ থেকে এপ্রিল ও মে পর্যন্ত টিউলিপের মরশুম। একমাত্র নেদারল্যান্ডসেই এই ফুল ১৫ মে পর্যন্ত দেখতে পাওয়া যায়। জানুয়ারির দ্বিতীয় শনিবার গাছের অগ্রগতি বুঝে একটি উৎসবের মধ্য দিয়ে টিউলিপ উৎসবের সরকারি দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয় সেখানে। মোটামুটি তিনটি স্তরের টিউলিপই সেখানে হয়ে থাকে। প্রাথমিক মধ্য ও চূড়ান্ত। তিনটি স্তরের টিউলিপের জন্য তাই নেদারল্যান্ডসে মার্চের ১৫ তারিখ থেকে টিউলিপের ফুল ফুটতে শুরু করে থাকে মে-র দ্বিতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। অবশ্য নেদারল্যান্ডস ড্যাফোডিল ও টিউলিপের ব্যবসায় এখন রীতিমতো শক্তিশালী দেশ।

তুর্কি লোকগাথায় লাল রঙের  টিউলিপ ফুল হলো প্রেমের প্রতীক। পারসীতেও এইরকম লোকগাথা প্রচলিত আছে টিউলিপকে নিয়ে। সেই অনুযায়ী ফারহাদ নামে পারস্যে একজন ভাস্কর ছিল। সে  শিরিন নামে এক রাজকন্যার প্রেমে পড়ে যায়। শেষ পর্যন্ত দুজনের মিলন হয় না। একসময় ফারহাদ নিজেকে শেষ করে দেয়। শিরিন এই সংবাদ পেয়ে হতাশগ্রস্ত হয়ে মৃত্যু বরণ  করে। যেখানে যেখানে শিরিনের রক্ত পড়েছিল সেখানে সেখানে লাল টিউলিপ ফুটে ওটে । এই লোকগাথা অনুযায়ী  লাল টিউলিপকে প্রেমের প্রতীক মনে করা হয়। প্রথমে তুরস্কে টিউলিপ জনপ্রিয় হতে থাকে।  রাজধানীর বাইরে টিউলিপ কেনা বা বিক্রি করা ছিল অপরাধ (নির্বাসিত শাস্তিযোগ্য)। সম্ভবত ক্যারোলাস ক্লুসিয়াস, যিনি ভিয়েনার একজন জীববিজ্ঞানী ছিলেন। ১৫৯০-এর দশকে, ক্লুসিয়াস ইউরোপে এর প্রসার বৃদ্ধি শুরু করেন।

বিশ্বের কোথাও নেদারল্যান্ডসের লিসে-শহরের মতো ফুলের সৌন্দর্য দেখতে পাওয়া যায় না। কয়েক দশক ধরে, কেউকেনহফ পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় টিউলিপ প্যারাডাইস বলে মর্যাদা পেয়েছে( Keukenhof)। মোটামুটি ১৯-২০ মার্চ থেকে ৯-১০ মে পর্যন্ত টিউলিপ পাওয়া যায় এই সব শহরে। হল্যান্ডে মোটামুটি ০৭ মিলিয়ন ফুলের বাল্ব হয় (ড্যাফোডিল এবং হাইসিন্থ সহ) সেখানে বার্ষিক এক মিলিয়নেরও বেশি দর্শককে আকর্ষণ করে এই ফুল। তবে আপনি যদি ইউরোপের বাগানে যেতে না পারেন  তবে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলেও আশ্চর্যজনক দুর্দান্ত টিউলিপের চাষ দেখে নিতে পারেন। টিউলিপ ম্যানিয়ায় মেতে পড়ার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ার শীর্ষস্থানগুলির মধ্যে একটি হল তায়ান। ওয়ার্ল্ড টিউলিপ সামিট সোসাইটি বিশ্বের সেরা পাঁচটি টিউলিপ উৎসবের মধ্যে তায়ান টিউলিপ ফেস্টিভ্যালের মুকুট পেয়েছে। সিউল থেকে ব্যক্তিগত পরিবহনে প্রায় ৩ ঘন্টা ম্যাগেওম্পো সমুদ্র সৈকতের কাছে অবস্থিত, সাইটটিতে ৩০০ প্রজাতির প্রতিনিধিত্বকারী প্রায় ১.২ মিলিয়ন টিউলিপের চাষ হয়।
জাপান ও চিনেও টিউলিপের চাষ হয়ে থাকে। 

আমরা যে কাপ টিউলিপ বা ডিম আকৃতির টিউলিপ দেখতে পাই তা হল্যান্ডের চাষিদের দ্বারা আবিস্কার হয়েছে। তবে ইস্তাম্বুল ও ইরানে যে পার্শিয়ান পার্ল নামের
টিউলিপ দেখতে পাওয়া যায় তার সঙ্গে ডিম্বাকৃতির অনেকটা মিল আছে। মূলত রোমান অথবা ডাচ ব্যবসায়ী অথবা কূটনীতিক প্রতিনিধি যখন তুর্কি সুলেমানের রাজত্বে এসে মালিদের মাথায় থাকা পাগড়ি
দেখে তার নাম জিজ্ঞাসা করেন এবং ডুলব্যান্ড অথবা
তুলবেল্ট শোনেন ( ফার্সি শব্দ) সেখান থেকেই ভুল শোনার জন্য টিউলিপ নামের উদ্ধভ হয়। আসলে এটি
শেষ পর্যন্ত ইংরেজি শব্দের মায়াজালে আবদ্ধ হয়। কিন্তু ফুলটির আসলে নাম ছিল লেলে ( Lah-Leh)। যা আমরা পিন্টারেস্ট বা অন্য অ্যাপে গিয়ে টিউলিপ বলতে একধরনের কাপ বা ডিমফুলকে বুঝে নি। সব ফুল কিন্তু তেমনটা নয়। কাশ্মীরের টিউলিপ বাগানে গিয়ে ( ৪.৪.২২ ও ১১.৪.২২) যা অভিজ্ঞতা হল, তা হল টিউলিপের দেখনভঙ্গি কিন্তু সবটাই কাপের বা ডিমের আকার নয়। যেমন অ্যাপ্রিকট বিউটি যে টিউলিপ তার গায়ের রঙ অ্যাপ্রিকটের রঙে খানিকটা গেরুয়া ও কাপ ভঙ্গিমার। পার্শিয়ান পার্ল খানিকটা ভারতীয় পদ্মের মতো। মুখটা আরও শার্প ও লম্বাটে। টিউবারজেনের হল সোনালী রঙের ও কাপ ভঙ্গিমা। লার্জ লাফ বা চওড়া হাসি একদম ডিম আকৃতির। আবার অ্যাঞ্জেল উইস খানিকটা বড় গোলাপের মতো। আমেরিকাতে টিউলিপের চাষ হয় প্রথমে এটি ব্যক্তিগত বাগানে সীমাবদ্ধ ছিল। আমেরিকায় টিউলিপের সময় হল ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহ। যে ডোরাকাটা টিউলিপের চারা হল্যান্ডে গিয়েছিল তার সঙ্গে অনেক গাছের ফলের সাধারণত পিচ ফলের ভাইরাস সঞ্চার হয় তখন ডাচ মালি ও উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা নানাভাবে টিউলিপকে সংরক্ষণ ও সংস্কার করেন। হল্যান্ডে এখন ১৫৬ রকম রঙের ৩০০০ -এর বেশি প্রজাতির ফুল হয়ে থাকে। আমস্টারডামে উৎসব শুরু হলেও এদের লিসে ও কোকেনহফ ( Kekenhof) - এই দুটি শহরে সর্বাধিক বাগান আছে। মূলত আমাদের কাশ্মীরের বীজ এসেছে Keukenhof থেকে। রান্না করা শুখা টিউলিপের স্বাদ খানিকটা পেঁয়াজের মতো। তবে এর কাঁচা অবস্থায় ও রস পশুপাখি খায়না বিষক্রিয়ায় জন্য। পাখি তাই এর ধারেকাছে আসেনা। রাশিয়ায়ও টিউলিপের বাগান আছে। বিশেষ করে তারা লাল টকটকে ডিম বা কাপ টিউলিপ আমদানি করে, এই ফুল রাশিয়ায় প্রেমের প্রতীকী হিসেবে উপহারের চল আসছে। এই ফুল হাঙ্গেরি, কিরগিজস্তান, তুরস্ক ও হল্যান্ডের জাতীয় ফুল। ইস্তাম্বুলেও টিউলিপের উৎসব হয়। টিউলিপের উচ্চারণ- আসলে TOO-Lih-puh। আমেরিকাতে আকারে ছোট
বেগুনি রঙের টিউলিপের আধিক্য দেখা যায়। মোটামুটি অক্টোবর নভেম্বরে রোপন করার সময় এই ফুল। ভারতে
কয়েকদিনের জন্য দিল্লির লোদি গার্ডেন, বেঙ্গালুরুর লালবাগে, চন্ডীগড়ে এই ফুলের দেখা মেলে। আমরা সাধারণত মেন্টন টিউলিপ যা ডিম্বাকৃতি ও কাপের মতো দেখতে, তাকেই পছন্দ করি। তবে এইগুলো একেবারেই হল্যান্ডে বেড়ে ওঠা তাই এর স্থায়ীত্ব অন্য কোথাও বেশি দিনের নয়। তবে দর্শকদের জন্য অন্য প্রজাতির টিউলিপের চাষ হল্যান্ডেই শুরু হয়েছিল এবং ওইসব প্রজাতির ফুল ১৫ থেকে ২৫ এপ্রিল কাশ্মীরেও দেখতে পাওয়া যাবে। টিউলিপ সাধারণত সিঙ্গল ফ্লাওয়ার হয়। সবচেয়ে বড় ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটটি নেদারল্যান্ডসে।

টিউলিপ  ফুলের আদি বাসস্থান পামীর মালভুমি ,
হিন্দুকুশ পর্বতের পাদদেশে হলেও তা খ্যাতির  শিখর পৌঁছয় পারস্যে এসে।  তুর্কিতে টিউলিপের চাষ  প্রবর্তন  করেন অটোমান সুলতানরা, প্রায় চৌদ্দ রকম নতুন প্রজাতির টিউলিপের জন্মস্থান হলো তুর্কিতে। অটোমান সুলতান তৃতীয় আহমেদ টিউলিপের বাগান করেছিলেন। এখন প্রায় দেড়শো প্রজাতি ও প্রায় হাজার তিনেক রঙের  টিউলিপের খোঁজ  সারা পৃথিবীতে পাওয়া গেছে। 

অটোমান সম্রাট সুলেমানের সময়ে এক রোমান বণিক ইস্তাম্বুলে এসে টিউলিপ ফুলের সৌন্দর্য দেখে বিস্মিত হন। সেই বিস্ময় থেকে আজ সারা বিশ্বে টিউলিপের বিস্ফোরণ। সত্যিই আবার টিউলিপ ম্যানিয়া নতুনভাবে সঞ্চারিত হয়েছে। টিউলিপ ক'দিনেই অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়ন হিসেবে দেখা দিয়েছে।

এত কথার পরও মনে করা হয় প্রথম টিউলিপের বীজ ভিয়েনাতে যায়।  ভিয়েনা থেকে টিউলিপ জার্মানি, বেলজিয়াম ও ইংল্যান্ড হাঙ্গেরি ও হল্যান্ডে দ্রুত ছাড়িয়ে পরে।

©® অলোক কুন্ডু

শুক্রবার, ২৮ জানুয়ারী, ২০২২

পাড়ায় শিক্ষালয়


কেউ যদি ভাবেন যে সরকার বা প্রশাসন দুবছর পরে হলেও প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে কিছু তো ভেবেছে তাদের মতো হীন বুদ্ধির দ্বিতীয় আর কেউ নেই। সরকারের এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া বহু আগে থেকেই উচিত ছিল, গত ২০২০তে এপ্রিল মাসে কার্যকর করা উচিত ছিল। ১০১ টা ডিপার্টমেন্ট আছে সরকারের। বিস্তর পিএইচডি আছে। সরকারের আইএস,বিডিও এসডিও জ্ঞানী মহাজ্ঞানীর কোনও অভাব ছিলনা। তবু কি কেন্দ্র, কি রাজ্য কেউ ভাবেনি শিশু কিশোরদের কি হবে। এর থেকে বড় লজ্জা ঘেন্না আর কিছু হয়না। সরকারের এবং প্রশাসনের এই অনীহা ক্ষমা করা যায় না। আসলে এখানে বিকাশ ভবনের কর্তাব্যক্তিরা যে এক একটা উজবুক ছাড়া আর কিছুই নয় তা আর একবার বোঝা গেল। আমাকে বললে সরকার এতদিন পরেও যা ভাবছে, তার থেকে আরও ভালো প্ল্যান করে দিতাম। সরকারের আইডিয়ায় আসবে না সেইসব। এখন শিক্ষার অ্যাপ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষিত ও উন্নত এবং পয়সাওলাদের শিক্ষা নিয়ে কাউকে না ভাবলেও চলবে। এইসব অ্যাপের যে কত প্রয়োজন ছিল তা বুঝতে আর খানিক সময় দরকার সকলের। অনলাইন শিক্ষা মধ্য মেধা বা নিম্ন মেধাদের বা গরিবগুর্বোদের কিছু হয়তো সুরাহা করতে না পারলেও একটা বড় শ্রেণির নিশ্চিত উপকার করবে, এই বৃহত্তর শ্রেণির মধ্যে অবশ্যই নিম্নবিত্তও বাদ যাবেনা। এখানে সরকারী পর্যায়ে অনলাইন শিক্ষা তৃণমূল স্তরে ঠিকমতো এখনও পৌঁছতে পারেনি দুর্বল প্রশাসনের জন্য। যদিও রাজ্য সরকারগুলির আগেই কেন্দ্র সরকারের পাঠশালা প্রোগ্রাম শুরু করেছে। মোবাইল নেই, ট্যাব ছিলনা অথবা থাকলেও ব্যবহারের অভ্যাস অভিজ্ঞতা ছিলনা এবং অভিভাবকদের তদারকি শূন্য ছিল গড়িমসি ছিল এই সব বিস্তর অভিযোগ অনলাইন শিক্ষা পুষ্টি সঞ্চয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে আর এই বাধাদানের সবচেয়ে বড় ভূমিকা নিয়েছে শিক্ষিতশ্রেণি। এইসব অ্যাপ বা অনলাইন শিক্ষা আগামী দিনে একটা বড় ভূমিকা নেবে। কিন্তু সরকারি পর্যায়ে এই ভূমিকা পালনে ভ্রান্তি ও অযোগ্যতায় পরিচালিত হচ্ছে। যে আকাশছোঁয়া বেতন শিক্ষায় নির্দিষ্ট হয়েছে সেই যোগ্য ভূমিকা সরকারের অফিসার ও শিক্ষকদের কাছ থেকে ফিরে পাওয়া যায়নি। যদিও একমাত্র কলকাতার প্রাথমিক বিভাগের জেলা পরিদর্শক, আমিনুল আহসান সাহেবের নিজস্ব কিছু কৃতিত্ব আছে শিক্ষা প্রসারে। তবে আমি একেবারেই এইসব অ্যাপের বিরুদ্ধে নই। যারা অনলাইন শিক্ষার বিরোধী তারা ১০০ ভাগ ভুল করছেন। শিক্ষা কখনও বদ্ধ জলাশয় নয়। শিক্ষার প্রসার যেভাবেই হবে তাতেই শিক্ষার্থীদের লাভ। এটা বুঝতে হবে যে শিক্ষার মূল বিষয় বর্তমান দিনে মেধার উন্নয়ন ও বিকাশ। কেবলমাত্র এবিসিডি শিখে, মানবিক কিছু শিক্ষা শিখে একজন সমাজের প্রভূত উন্নতি করবে এইসব হাস্যকৌতুক বড় বড় বুকনি অনেক হয়েছে। সমাজসেবক তৈরির বাসনায় খেঁজুরগুড়ে বালি ভর্তি হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। মেধার উন্নয়ন আমাদের একমাত্র বাসনা হতে হবে এবং তার সঙ্গে যারা পারবে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী শিখবে। কিন্তু সিলেবাস বলছে বা যশপাল কমিটি বলছে তারা এমন তেলেঝালে চুবিয়ে শিক্ষার খিচুড়ি তৈরি করেছে যাতে সকলের সামর্থ্য সমান। তাই তাদের বুকনিতে সাজানো সকলের সমান সামর্থ্যের শিক্ষা সকলে চেটেপুটে খেয়ে শিক্ষায় পরস্পরের মধ্যে বিস্তর ফারাক তৈরি হয়ে চলেছে এবং এইসব হচ্ছে বিদ্যে-বুদ্ধিতে। এখন শিক্ষাকে পণ্যিকরণ থেকে বাঁচাতে যে হীন প্রক্রিয়া এখন আবার শুরু হয়েছে তার একটা ৩৪ বছর আমার জীবনের উপর দিয়ে চলে গেল এবং তার কৌতুককর স্লোগান দিতে দিতে আমার শিক্ষা বিভাগের কলিগরা এমনভাবে সিলিপয়েন্ট টপকে ছক্কা হাঁকালো যে ৩৪ বছর শিক্ষার পণ্যিকরণ নিয়ে চেঁচিয়ে পাড়া মাত করে, অফিস না করে, গল্পগুজব করে পার্টিবাজি করে প্রতিবাদের নাটক করে, অফিস টাইমে বাড়িতে ঘুমিয়ে, স্কুল ইন্সপেক্টর গিরি করে বাজি মাত করে দিলো। কেউ কেউ অতিবাম সেজে নেপোর দই খেলো, বাড়ির কাছে চাকরি করলো সারাজীবন। বলতে গেলে শিক্ষার প্রসার করতে এসে বেশ কিছুজন শিক্ষার বারোটা বাজিয়ে ছাড়লো। একজন তো আছেন দিব্যগোপাল ঘটক বলে তিনি শিক্ষার ট্রেনিং দিতে গিয়ে মুড়ি মিছরি ঝোল ঝাল অম্বল এক করে পঞ্চম শ্রেণির বাংলার ভাষা শিক্ষার ফর্মূলা দিয়ে সমস্ত শিক্ষা মাপজোক করেন। এই ধান্দাবাজি দীর্ঘদিন ধরে সহ্য করছে শিক্ষার্থীরা। আমি কিন্তু শিক্ষকদের খুব একটা দোষ দেবো না। এইসব এখনও বিস্তর ফন্দিফিকির রয়ে গেছে মানুষের মনে। তাঁবেদারি করতে করতে আমরা এই দুবছরে কিছুই প্ল্যান নিলাম না। আমরা এঁঢ়ে গুরু দুইতে খালি বলতে থাকলাম স্কুল খোলো গো, স্কুল খোলো গো। ফলে যা হওয়ার তাই হলো, শিক্ষার অপচয় রোখা তো গেলই না পরন্তু শিশু-কিশোরদের চুপচাপ বাড়িতে বসিয়ে রেখে তাদের মাথার বারোটা বাজিয়ে দিলাম। স্কুল খোলা অত সস্তা হবেনা এই কথা পই পই করে বলে এসেছি সকলের বিরোধীতা করেছি আমি একাই। আমি মনে করি এই বিরোধীতার যৌক্তিকতা সমাজ মেনে নিয়েছে। তবে শিক্ষার অনলাইন ব্যবস্থা বা অ্যাপনির্ভর শিক্ষা নিয়ে এই যে হৈচৈ হচ্ছে এই যে বিপরীত করিয়া হচ্ছে এর কোনও সামান্য ভূমিকা ও তাৎপর্য নেই। অ্যাপ শিক্ষা অনিবার্য হয়ে পড়েছে, যা শিক্ষায় পণ্যিকরণ বলছেন সকলে। শিক্ষায় পণ্যিকরণের এই বাক্যটি উচ্চারণে আর কিছুদিন পরে পাপের প্রায়শ্চিত্তের দিক নির্দেশ করবে। দেখা গেছে শিক্ষায় বাণিজ্য ছিল বলেই শিক্ষার্থীদের চাকরিবাকরির চেষ্টা সহজ হয়েছে। প্রথাগত শিক্ষা ধরে রাখা উচিত এবং চতুর্দিকে ফাঁকিবাজি না থাকলে আজ শিক্ষায় পণ্যিকরণের সহজ সুযোগ হতো না। কিন্তু কি করা যাবে। একটি বিদ্যালয়েই তো সকল শিক্ষক সকল শিক্ষার্থীদের কাছে যোগ্য হয়ে উঠতে পারেন না। শিক্ষক নাট্যকার অজিতেশ ও উৎপল দত্ত একেবারেই ব্যতিক্রম। কবি তরুণ সান্যাল এবং অনেক অধ্যাপক সাহিত্যিকদের ক্লাস করার জন্য অন্য কলেজ থেকে ছাত্ররা ক্লাস করতে আসতেন। বিদ্যাসাগরের শিক্ষা ব্যবস্থাও ধরে রাখা এখন সম্ভব নয়। শিক্ষা নিজে তার পরিধি ছাপিয়ে উঠতে চায় এবং এটাই তার চরিত্র, একে রুখে দেবো এই হিম্মত না রাখাই ভালো। ব্যতিক্রমী শিক্ষক আজ সব সময় পাওয়াও মুস্কিল, দূরদূরান্ত থেকে কষ্টকর জার্নি করে কীভাবে একজন ভালো অফিসার হবে এবং শিক্ষক হবে বাম সরকার এটা একেবারেই ভাবেননি। পে-স্কেল ও ডিএ দেওয়ার ব্যাপারে তাদের যত সুনাম অর্জন আছে কিন্তু শিক্ষাকে ঝুলিয়ে দেওয়ায় ব্যাপারে তাদের জুড়ি নেই। এইসব মাঝে মাঝেই বলি কারণ ভেতর থেকে চলে আসে। কিন্তু আমার শক্তি এই বলা ছাড়া তো আর কিছু নয়। আসলে আমি অসহায়ের একটা সিম্বল মাত্র।
এখন করোনাকালে পাড়ায় পাড়ার শিক্ষালয় এই ভাবনার কথা প্রথম আমি ফেসবুকেই তুলেছিলাম। যদিও মুখ্যমন্ত্রী আমার ভাবনা নিয়ে নিয়েছেন একথা বলছি না। পাড়ায় শিক্ষালয় বলতে খানিকটা বোঝায় শিক্ষার্থী যেখানে অবস্থান করবে। এখানে শিক্ষকদের ভূমিকা তার স্কুলে উপস্থিতি দিয়ে স্নানীয় পাড়ায় যাবেন। সাময়িক শিক্ষার এই বিষয়ে প্রশ্ন তোলার অর্থ কাজ করায় অনীহা। এই অনীহা সরকারের বেতন যারা নেন তাদের ক্ষেত্রে ১০০ ভাগ জড়িয়ে গেছে। এই ভাবনায় যদি কোথাও জায়গা না হয় তবে স্থানীয় স্কুলেও ক্লাস হতে পারবে না এমন কোনও কথা নেই। কোনো প্রশ্ন করাই অবান্তর এখানে। সকলে আন্দাজ করছেন মার্চ মাস নাগাদ করোনার প্রকোপ কমে যাবে কিন্তু করোনা সহজে এখনই যাবেনা। ঘুরে ফিরে যাওয়া আসা করবে। এইসব করতে করতে প্রবল গ্রীষ্ম এসে যাবে। তাই জুলাই হচ্ছে স্কুল খুলে দেওয়ার আদর্শ সময়। যদি মার্চ নাগাদ সংক্রমণের হার ১০% এর কমে চলে যায় তবে বড় ক্লাসগুলো অলটারনেটিভ ব্যবস্থায় এপ্রিলে খুললেও খুলতে পারে। কারণ এই সময় স্থানীয় জ্বরজ্বালা কম থাকে। তবে বিধানসভায় এতবড় বিষয়টা নিয়ে কেন কোনও আলোচনা হচ্ছে না তা বোঝা মুস্কিল। এই সাময়িক ক্লাস হলেও সর্বত্র যে খুব হৈ হৈ করে পড়ুয়া এসে যাবে তার নিশ্চয়তা নেই। পাড়ায় পড়ুয়া জমতে জমতে জানুয়ারি শেষ হয়ে তো গেল। ফেব্রুয়ারিতে প্রতিদিন ঘন্টা দুই জমায়েত করে ছেলেমেয়েরা ৩০ জনের মধ্যে গ্রুপ করলে ভালো হয়। প্রথাগত লেখাপড়ার আগে শরীর চর্চা হোক। খেলাধুলা হোক কিছুদিন। পড়ার সময় তো অনেক গেছে, নষ্ট হয়েছে। একে ক্লাস বলবো না। হুল্লোড় করুক ওরা। গল্প বলুক নিজেরা। যেমন খুশি পড়ুক। অক্ষর জ্ঞান, ভাষা ও গণিত আপাতত এই তিনটিতে নির্দিষ্ট থাকুক। একসঙ্গে এখন বহু কিছু করার দরকার নেই। ছাত্র-ছাত্রীদের কোনও মতেই তার ওয়ার্ডের বাইরে না নিয়ে যাওয়া উচিত হবে। মনে রাখতে হবে ওয়ার্ডের মধ্যেই পাড়ার শিক্ষাকেও বহু জায়গায় বিভক্ত করতে হবে। আরও ছোট পরিসরে বসার আয়োজন করতে হবে পাড়ায় শিক্ষালয়কে। শিক্ষকরাও এক একজন এক একটি গ্রুপ তৈরি করে পড়ান না। খানিকটা টিউশনির ধাঁচে। ক্লাসগুলো ফরমেশন করার সময় স্থানীয় বড় ক্লাব, বিয়ে বাড়ি ভাড়া দেয় এমন বাড়ি, গ্রামীণ অফিস, পঞ্চায়েত, বিডিও অফিস, বোরো অফিসগুলিকে তৎপর থাকতে হবে। পার্ক ও সংলগ্ন মাঠ সবখানেই ক্লাস করার পরিবেশ তৈরি করতে সরকারের তৎপরতা থাকতে হবে। এমন কিছু শক্ত কাজ নয়, খুব সহজ এইসব প্রচেষ্টা। এই পাড়ায় শিক্ষালয়কে দয়া করে ভারযুক্ত করার প্রয়াস নেবেন না ভারমুক্ত করুন। শিক্ষকদের ভাবনার সঙ্গে আমার ভাবনার অনেকটা তফাৎ হবে, এর কারণ আমাকে সরকার বুঝিয়ে না দিলেও আমি ছোট ছোট বিষয়গুলি চলচ্চিত্র পরিচালকের দৃষ্টিকোন থেকে বিচার করার চেষ্টা করি সব সময় যদিও আমি কোনো পরিচালক নই। বরং বিদ্যালয় শিক্ষার সঙ্গে দীর্ঘদিনের ঘর আমার। এস.আই. অব স্কুলস ফাঁকিবাজ হলে পাড়ায় শিক্ষা রসাতলে যাবে। তাকেই বুদ্ধি করে প্রোগ্রাম তৈরি করতে হবে। ছাত্র-ছাত্রীদের পাড়ায় স্কুল থাকলে সেখানেও ক্লাস হওয়া অবশ্যই যেতে পারে। ছাত্র-ছাত্রীদের বাড়ির দশ পা দূরত্বে যা থাকবে তাতেই ক্লাস করা উচিত। এখানে যেকোনও একটি স্কুলের ধারণা ভেঙে ফেলা দরকার। শিক্ষকরা এক একদিন ভাগ হয়ে এক একটা জায়গায় যাবেন। আমার ধারণা স্কুল হিসেবে ক্লাস হওয়ার উচিত নয়। স্কুলের দেওয়াল ভেঙে, সাইনবোর্ড হীন স্কুল হোক সাময়িক ভাবে। যার অর্থ কোনো স্কুলের নামে ক্লাস হবে না। এস.আই. অফ স্কুলস ফাঁকিবাজ হলে এই শিক্ষা পথেই পড়ে থাকবে। কিছুতেই কিছু হবে না। কারণ তার হাতেই রয়েছে নেতৃত্ব। ©® অলোক কুন্ডু

মঙ্গলবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২২

নানারূপে স্বামীজি : অলোক কুন্ডু

নানারূপে স্বামীজি / অলোক কুন্ডু

২৩ বছরে ঘর ছেড়েছিলেন ৩৯ বছরে তার
মৃত্যু হয় । বিশ্ব ধর্ম সভা থেকে রামেশ্বরমে
এসে নামার ১০ বছর পর তাঁর ইহোলোক
ছেড়ে যাওয়া । কতকিছু ভেবেছিলেন কিন্তু
অধিকাংশ কাজ , তার লেখা পড়া বাস্তবায়ন
করা যায় নি । শিকাগো এসে আস্তানার
ঠিকানা হারিয়ে ফেলে কনকনে ঠান্ডায় 
তাকে বাইরে অনাথ অবস্থায় কাটাতে হয়েছিল।

বিশ্ব ধর্মসভা থেকে ফিরে রামেশ্বরমে নেমে মাদুরাই থেকে যখন তিনি কখনো গাড়িতে 
কখনো ট্রেনে করে আসছিলেন ,তার আগে 
ও পরে স্বামীজি সম্পূর্ণ অসুস্থ হয়ে 
পড়েছিলেন । আসলে স্বামীজি খুব তাড়াতাড়ি
করেছিলেন তার ঘর ছাড়ার বিষয়টিকে
মজবুত করতে । নিজের জন্য না ভারতবাসীর
জন্য তার কায়িক পরিশ্রম তখন থেকেই হচ্ছিল
কিন্তু নিজের শরীরের কথা তিনি ভাবেননি ।
পরিব্রাজক স্বামীজি যেখানে যেমন পেরেছেন থেকেছেন যা তাকে পাঁচজন এনে দিয়েছেন তাই তিনি
খেয়েছেন । এমনিতে আমেরিকা থেকে ফেরার সময়‌ই তিনি জাহাজ যাত্রায় কাহিল হয়ে পড়েন। পয়সার জন্য আমেরিকা ও ইউরোপের অন্যত্র খাওয়া থাকার জন্য 
তিনি প্রচুর বক্তৃতা দিয়ে উপার্জন করার জন্য কাহিল হয়ে পড়েছিলেন। তবুও দক্ষিণভারতের মাদ্রাজ ও মাদুরাইতে জায়গায় জায়গায় তার জন্য অভাবনীয় উদ্যোগ নিয়ে তোরণ করা হয়েছিল তাঁকে স্বাগত জানাতে । কথা ছিল অন্তত ৫/৬ জায়গায় বক্তব্য রাখবেন, কিন্তু পারেননি । তবু মাদ্রাজিরা তার রথের ঘোড়া খুলে 
দিয়ে যখন তার গাড়িকে মানুষ দিয়ে টানানো হয়েছিল তখন আপত্তি থাকলেও যুবকদের 
এই শক্তির কথাটা তিনি তার ১০ বছর বেঁচে থাকার সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে ভেবেছিলেন । ট্রেন থামিয়ে স্টেশনে মানুষের
আবদার রাখতে স্বামীজি অনেক জায়গায় ট্রেন থেকে নেমে স্টেশনে তৈরি মঞ্চে বক্তব্য রাখতে জায়গা ছেড়ে উঠতে পারেননি । একটু সুস্থ হতেই আবার বেরিয়ে
পড়েছিলেন পরহিতার্থে । 

কিন্তু বিবেকানন্দকে নিয়ে  নিন্দুকেরা তাঁকে কী না বলতে বাকি রেখেছিলেন । তাই স্বামীজি এক সময় দুঃখ করে বলেছেন--" তারা বলতো
বিবেকানন্দ জুয়াচোর , এক আধটি নয় এই
স্বামীর অনেকগুলি স্ত্রী ও একপাল ছেলেপুলে আছে "। স্বামীজি দুঃখ করে বলেছিলেন -
" মানুষের সাহায্য আমি অবজ্ঞাভরে প্রত্যাখ্যান
করি , আমি আমার দেশকে ভালবাসি আর 
বড় একান্তভাবেই ভালবাসি "। স্বামীজির ৩৯
বছরের ঝঞ্ঝাময় জীবন ঘটনা ও বার্তাবহুল হয়ে
আজকেও বেঁচে আছে । 

পুরাণে আছে সন্ন্যাসীর জীবন অতি কঠিন । সে যা পাবে তাই খেয়ে ও পরে এলাকার পর এলাকা ঘুরে দেখবেন । সাধারণ মানুষের জীবনকে দেখাই তার জীবনের আদর্শ হবে । স্বামীজি একরকম অনাহারে তার সন্ন্যাস জীবন কাটিয়ে এই ভারতের আসমুদ্র হিমাচল তিনি ঘুরে ঘুরে অভাবি মানুষের সুখদুঃখকে নিজের জীবনের সঙ্গে নিয়ে তাকে উপলব্ধি করেছিলেন । তখনকার দিনে কোনো মানুষের সাহস ছিল না ৬৩ দিন ধরে বোম্বাই , চীন , ভ্যাঙ্কুভার হয়ে প্রায় সামান্য খরচ সঙ্গে নিয়ে আমেরিকা যাওয়ার কথা । পরে জামেসদজি টাটার সঙ্গে তখন‌ই আলাপ 
হয়েছিল । কিন্তু তাতে স্বামীজির কিছু তখন সুবিধা না হলেও বেলুড় মঠ ও দ্বিতীয়বার 
বিদেশে যেতে তা তাঁকে সাহায্য করেছিল । সিকাগো ধর্ম সভার দশ বছরেই তাঁর মৃত্যু হয় । কোনো সময় তিনি একেবারেই পাননি । যেমন অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের পরমপুরুষ শ্রীরামকৃষ্ণকে থেকে আমরা পাই 
অন্য শ্রীরামকৃষ্ণকে । তেমনি বিবেকানন্দকে 
পুস্তকে সেইভাবে পাইনি । তবে হাতের গোড়ায় পেয়েছি সাহিত্যিক শংকরের কাছ থেকে  স্বামীজিকে অন্যভাবে জানার । দীর্ঘ দিন তিনি
হাওড়ার রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ আশ্রমের সঙ্গে
যুক্ত ছিলেন। তখন থেকেই বিবেকানন্দ চরিত্র চর্চায় নিমগ্ন ছিলেন তিনি । তাই শংকরের থেকে
স্বামীজির সম্পর্কে গভীর ভাবে আমরা কিছুটা 
অধ্যয়ন করতে পেরেছি । কিন্তু শ্রীম"র জন্য
তবু আমরা শ্রীরামকৃষ্ণকে বেশ কিছুটা জানতে
পারলেও স্বামীজি আমাদের সে সুযোগ নিজেই
দেননি । ভগিনী নিবেদিতা ও স্বামীজির গান
তার প্রবন্ধ তার পত্রাবলী তাঁকে কিছুটা জানা যায়। তবু যেন আমাদের মনে সংশয় থেকেই
যায় । মনে হয় বিবেকানন্দ এদেশে এখনও অবহেলিত রয়ে গেছেন । "আমি বিবেকানন্দ বলছি "-স্বামীজির জীবনের দুঃসময়ের ফসল ।

স্বামীজির রচনাবলীতে আছে-" বহুজন হিতায়
বহুজন সুখায় সন্ন্যাসীর জন্ম। পরের জন্য প্রাণ দিতে, জীবনের গগনভেদী ক্রন্দন নিবারণ করতে,
বিধবার অশ্রু মুছাতে,পুত্রবিয়োগ-বিধুরার প্রাণে
শান্তিদান করতে,অজ্ঞ ইতর সাধারণকে জীবন সংগ্রামের উপযোগী করতে, শাস্ত্রোপদেশ বিস্তারের দ্বারা সকলের ঐহিক ও পারমার্থিক
মঙ্গল করতে এবং জ্ঞানলোক দিয়ে সকলের
মধ্যে প্রসুপ্ত ব্রহ্ম-সিংহকে জাগরিত করতে
জগতে সন্ন্যাসীর জন্ম হয়েছে ।" তাই দেখতে পাই পিতার মৃত্যুর পর দিশেহারা ছিলেন তিনি, একদিকে আত্মীয় স্বজনদের স্বার্থপরতা অন্যদিকে মা-দু ভাইয়ের আহার জোগাড় করা , বাসস্থান রক্ষা করার ভাবনা আগে না কি ? শ্রীরামকৃষ্ণের ভাবধারাপ্রচার করা ? কোনটা প্রধান তাঁর কাছে হবে ? সন্ন্যাসীর কঠোরতায় নির্মমভাবে স্বামীজি ভাবলেন যে,  ত্যাগ‌ই হলো
তার জীবনের প্রধান অধ্যায় , বেদনায় কাতর 
হয়ে না পড়ে ভয়ানক দুঃখ কষ্টকেই সহ্য করে
নিয়েছিলেন তিনি । তাই অনেক কষ্টে তার মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছিল -" জীবনে যাকে নিজের পথ নিজেকেই করে নিতে হয় ,সে একটু রুক্ষ হবেই ।" কিন্তু বাস্তবে তো স্বামীজি ছিলেন দিলখোলা সাদাসিধে মানুষ । হাঁস,ছাগল কুকুরদের সঙ্গে তাদের ভাষায় আদান প্রদানের
কথাতো এখন‌ও বেশ রসালো ভাবেই শোনা
যায় । তাদের সঙ্গে কথা বলতেন তাদের মতো করেই । শুনলেই হাসি এসে যাবে এইরকম সব অদ্ভুত তাদের  নামকরণ করেছিলেন । 

স্বামীজি বলেছিলেন-" এই বিশ্বাস আমি দৃঢ়ভাবে পোষণ করে আসছি এবং এখনও করি যে, যদি আমি সংসার ত্যাগ না করতাম ,তবে আমার গুরু পরমহংস শ্রীরামকৃষ্ণদেব যে বিরাট সত্য প্রচার করতে জগতে তিনি অবতীর্ণ হয়েছিলেন ,তা প্রকাশিত হতে পারতো না ।" এখানে আমরা এক
প্রচন্ড শক্তিশালী দৃঢ়চেতা মানুষরূপে পাই ।

স্বামীজি বলেছিলেন এই ভারতে তাকে অনেকে চেনেনা বোঝে না তাতে কি ?!" আমি যুবদলকে সঙ্ঘবদ্ধ করতে নেমেছি,যারা সর্বাপেক্ষা দীনহীন অবহেলিত পদদলিত...তাদের দ্বারে দ্বারে--সুখ স্বাচ্ছন্দ্য, নীতি, শিক্ষা ধর্ম বহন করে নিয়ে যাবে --এটাই আমার আকাঙ্ক্ষা ও ব্রত । এটি আমি সাধন করব অথবা মৃত্যুকে বরণ করব । 

যেমনটি পুরাণে বলা আছে সেই কপর্দকহীন সন্ন্যাসীদের রূপের মধ্যে যে স্বামীজি বিজয়ী হবার স্বপ্ন দেখতেন তা তাঁর রচনায় মেলে ব‌ইকি ।
তিনি বলেছেন-" আমার ভয় নেই, মৃত্যু নেই,
ক্ষুধা নেই, তৃষ্ণা নেই...বিশ্বপ্রকৃতির সাধ্য
নেই যে,আমাকে ধ্বংস করে । প্রকৃতি
আমার দাস । হে পরমাত্মন্, হে পরমেশ্বর
তোমার শক্তি বিস্তার কর ।" কী অভাবনীয়
প্রত্যয়ী তিনি , কে তার সেই পরমেশ্বর ? 
স্বামীজির ধর্ম তো হিন্দু নয় তবু একদিন কী
হলো দুর্গাপূজার রীতিনীতি নিয়ে লেখা ব‌ই
আনালেন । মূর্তি পুজোর বিরোধী স্বামীজি
অনুমতি দিলেন মঠে দুর্গাপুজো হবার । আসলে
একটু আনন্দ হবে ঢাক বাজবে অনেক
মানুষের আগমন হবে তার সঙ্গে তার বানানো
রেসিপি অনুসারে খিচুড়ি ভোগ । তিনি হিন্দুত্বের
পুজো করেননি তাদের আনন্দের পুজো
করেছিলেন । 

শ্রীরামকৃষ্ণকে তিনি দেখেছিলেন কাপড়চোপড়
ছাড়া পঞ্চবটিতে বসে ধ্যানমগ্ন, রাতবিরেতে
উলঙ্গ শ্রীরামকৃষ্ণ ছেড়ে দিয়েছেন তাঁর বেশবাস,
মা মা বলে মন্দিরে ঢুকে গেছেন । পুজো 
করতে করতে মা কালীকে নয় নিজের মাথায় 
ফুল দিয়েছেন শ্রীরামকৃষ্ণ । কালীমূর্তি 
কি তবে তথাকথিত কোনো ভগবানরূপী দেবতা 
ছিলেননা শ্রীরামকৃষ্ণের কাছেও ? সবার
কাছে দক্ষিণেশ্বরের তিনি কালী মূর্তি হলেও
স্বামী বিবেকানন্দ কিন্তু পরবর্তীতে কালীর 
বদলে শ্রীরামকৃষ্ণকেই দেবতার আদলে বসিয়ে
তিনি পুজো করেছেন , যা বেলুড় গিয়ে আমরা
আজকে দেখতে পাই ।  মূর্তির থেকে রক্তমাংসের
মানুষ যাকে তিনি দেখেছেন তাকে পুজোর মধ্যে দিয়ে হিন্দু ধর্মের ধর্মীয় রীতিনীতিতে কষাঘাত
করেছিলেন । হাওড়ার রামকৃষ্ণপুরে ১১০ বছর
আগে এসে শ্রীরামকৃষ্ণকে পুজো করতে গিয়ে
লিখলেন -" শ্রীরামকৃষ্ণায়‌ তে নয়: ।"

স্বামীজি জরথ্রুষ্টের মতবাদ ভালো করে জেনে ছিলেন । তাই ভারতীয় ঋষির সনাতন ধ্যানচিন্তা কে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আহুরা মাজদা সম্প্রদায়ের মাতৃভূমি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার কারণে খুঁজতে তাদের ধ্যানমগ্নতায় আরও বেশি আকৃষ্ট হয়েছিলেন । কখন‌ই ভারতবর্ষের আধ্যাত্মিক চিন্তা চেতনাকে তিনি খারাপ বলেননি অথচ
সেখানে তিনি নিজেকে বিকিয়েও দেননি । 

ভারতবাসীকে ভাইয়ের মতো ভেবে সম্বোধনে বলেছিলেন -"ওঠো জাগো...। " তিনি তাই আমাদের কাছে স্বামী বিবেকানন্দের মতো
এক পরম দয়াময় দৃঢ়চেতা ভাবগম্ভীর মানবপূজারী হতে পেরেছেন । তিনি তো নিজে
দেখেছেন তার গুরুদেব,( লোকেরা তাকে পাগলঠাকুর‌ও ভালোবেসে বলেছেন) তাকে
বার বার বলেছেন--" যা না যা... মায়ের কাছে
যানা একবারটি...এ বার‌ও পারলি নে...যা যা ।"

সত্যি তো শ্রীরামকৃষ্ণ তো মন্ত্রপড়া ঘন্টা বাজানো
চামরদোলানো কোনো সাধারণ পুরুত ছিলেন না ।
কেশবচন্দ্র সেন, বিদ্যাসাগর কেউ তো তাঁর
সঙ্গে দেখা করতে চাননি এমন তো নয় । 
স্বামীজি যখন ভ্যাঙ্কুভারে তখন জামসেদজি টাটার সঙ্গে তাঁর দেখা হয় । ওই একই জাহাজে
স্বামীজি যখন প্রথম আমেরিকা যাচ্ছিলেন । 

পারস্য উপসাগরীয় আহুরা-মাজদার উপাশকদের আগুনের সামনে উপাসনার মধ্যে দিয়ে যে জীবনের শুদ্ধতা খুঁজে পাওয়া যায় সেই ধর্মের উৎসাহ থেকে তিনি যে বেলুড় মঠের ধ্যানমগ্নতা খুঁজে পেয়েছিলেন সে কথা ভাবলে ক্ষতি কি ? বেলুড়ের অলঙ্কার নক্সায় মোটিফে পার্সি,খ্রিষ্টান, মুসলিম, হিন্দু,বৌদ্ধরীতি অবলম্বন
করা হয়েছে । শ্রীরামকৃষ্ণের যত মত তত পথকে
নতুন ভাবে আবিষ্কার করেদিয়েছিলেন । বলেছিলেন - শ্রীরামকৃষ্ণের বাণী আমাকে 
প্রচার করতেই হবে ।

যৌবনে ব্রাহ্মসমাজের আদর্শে প্রভাবিত
নরেন্দ্রনাথ মূর্তি পুজোকে পৌত্তলিক জ্ঞান
করতেন শ্রীরামকৃষ্ণের উদার এবং সমন্বয়ী
চিন্তার সঙ্গে "কালীঘরে যাওয়া " শক্তিকে
প্রাধান্য দেওয়া নরেন্দ্রর চোখে বিসদৃশ্য 
লাগতো । তরুণ,সশয়ী, নরেন্দ্রনাথের এই
ভাব বেশি দিন টিকে ছিল না । 

১৮৮৮ সালে নিজ শিষ্য সদানন্দকে বলেছিলেন
  - " আমার জীবনে একটা মস্ত বড় ব্রত আছে।
 এ ব্রত পরিপূর্ণ করার আদেশ আমি গুরুর
কাছে পেয়েছি ---আর সেটা হচ্ছে মাতৃভূমিকে
পুনরুজ্জীবিত করা । " শ্রীশ্রী মা একদিন গল্পছলে
এক শিষ্যকে বলেছিলেন -" যা সব শুনছি, সাহেব পুলিশরা এসে একদিন না একদিন নরেনকে গারদে পুরে দেয় । " এ থেকে প্রমাণিত হয় স্বামীজির কাছে বিপ্লবীরা আসতেন পরামর্শের
জন্য ।

বিবেকানন্দের আয়ুষ্কাল রবীন্দ্রনাথের অর্ধেক
মাত্র । বিবেকানন্দ নবীন ভারতবর্ষের কোনো
বিষয় ও সংঘাত দেখে যেতে পারেননি তাই
রবীন্দ্রনাথ যতটা পেরেছেন স্বামীজি ততটা করে
যেতেও পারেননি । তাছাড়া স্বামীজির বিপ্লববাদ
ছিল শুধুই মানুষের চরিত্র গঠনের । ধর্ম, শিক্ষা, ও ক্ষুধা সম্পর্কে নিশ্চিত দিগদর্শনের নির্দেশ ।

জার্মান দার্শনিক ফ্রেডরিক নিটশের -" দাজ স্পেক জরাথ্রুষ্ট " ব‌ইয়ে এক সন্তপ্রতিম 
মানুষের বর্ণনা আছে । বিজন পর্বতে তিনি 
দশবছর স্ব-নির্বাসিনে ছিলেন গভীর ধ্যানে । 
তারপর তিনি জনপদে এসেছিলেন মানুষকে 
তার কথা বলতে । সেই জরথ্রুষ্টের ধর্মীয় মতবাদের প্রথমে আছে মহিলাদের অগ্রাধিকার । " যত্র নার্যস্ত পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতা ।" যেখানে নারী সম্মান পান, সেখানে দেবতার অবস্থান ।" কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দ দেখলেন 
তাঁর সময়ে নারীরা সমাজে অবহেলিত , 
বঞ্চিত ও অত্যাচারিত । গভীর দুঃখে ও 
যন্ত্রণায় বিবেকানন্দ ,তিনি বললেন, ভগবানের 
প্রতিমা স্বরূপা নারী এখন শুধুমাত্র সন্তান
ধারণের যন্ত্রে পরিণত । নারীকে তার শিক্ষা
ও স্বাধীনতার অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে ।
যতক্ষণ তা সম্ভব হবে না , ততক্ষণ জাতি
হিসেবে আমরা উঠে দাঁড়াতে পারবোনা ।"
বিবেকানন্দ বললেন-" নারীকে শিক্ষিত করে
গড়ে তুলতে হবে ।" স্বামীজি শিক্ষার সঙ্গে
চরিত্র গঠনের কথা বলতেন । সার্বিক  
ব্যক্তিত্বের বিকাশ চেয়েছিলেন স্বামীজি । 
এইখানে রাজা রামমোহন রায় ও বিদ্যাসাগরের
কাছে সমগ্র নারীজাতি ও বাঙালিরা চিরঋণী । পরবর্তীকালে নারী সমাজের যে অগ্রগতি 
হয়েছে , সেদিন এই দুই মহারথী পাশে এসে 
না দাঁড়ালে তা কোনোভাবেই সম্ভব ছিলনা । 
এই প্রসঙ্গে শ্রীমার সঙ্গে বিবেকানন্দের 
একটি সম্পর্কের কথা বলি ।বিবেকানন্দ 
তাঁর অনুকরণীয় ভাষায় বলেছেন--
শ্রীরামকৃষ্ণ থাকুন বা যান ক্ষতি নেই, 
কিন্তু মা ঠাকরণ না থাকলে সর্বনাশ, তিনি 
শক্তির আধার । মাঝেমধ্যে‌ই তিনি গুরুভাইদের 
বলছেন, "তোরা মাকে চিনতে পারিসনি । 
মাকে চিনতে চেষ্টা কর । "সুভাষচন্দ্রের 
সম্পর্কেও এক‌ই কথা খাটে , সুভাষচন্দ্র তার জীবনে নারীর গুরুত্বপূর্ণ হ‌ওয়ার কথা বলতে গিয়ে,মা প্রভাবতীদেবী ও দেশবন্ধু-পত্নী বাসন্তী দেবী,মেজ-ব‌উদিদি বিভাবতীদেবী ও পত্নী 
এমিলিয়রের কিছু ত্যাগ ও গুণের কথা বলেছিলেন । স্বামীজি আবার একথাও ভেবেছিলেন যদি নারীরা সংসার ত্যাগ করে
সন্ন্যাসীনী হতে চান সে অধিকার তাদের
দিতে হবে । সেই দিশা খুঁজে দিয়েছিলেন 
স্বামীজি নিজেই । 

এত অল্প সময়ের মধ্যে স্বামীজির দৃষ্টি ছিল সবদিকে। তিনি বলেছেন-" আমরা নির্বোধের মতো,জড় সভ্যতার বিরুদ্ধে চিৎকার করিতেছি...
বাহ্য সভ্যতা আবশ্যক , যাহাতে গরীব লোকের
জন্য নূতন নূতন কাজের সৃষ্টি হয় । অন্ন ! অন্ন!
যে ভগবান আমাকে অন্ন দিতে পারেন না,
তিনি যে আমাকে স্বর্গে অনন্ত সুখে রাখিবেন--ইহা
আমি বিশ্বাস করিনা ।" 

এমনকি রাজনীতিকেও তিনি ছেড়ে দেননি-
" এই ঘোর দুর্ভিক্ষ , বন্যা রোগ-মহামারীর দিনে কংগ্রেসওয়ালারা কে কোথায় বলো ? খালি আমাদের হাতে শাসনের ভার দাও, বললে কি চলে ? মানুষ কাজ যদি করে তাকে কি মুখ ফুটে বলতে হয় ? " যা আজ হবে যা হতে যাচ্ছে 
দেখা যাবে অল্প সময়ের মধ্যেই স্বামীজি সব বলে গেছেন । ( কেউ যেন এই প্রসঙ্গে ভারতীয় রাজনীতি না জুড়ে দেন, কংগ্রেসর তৎকালীন অবস্থার প্রেক্ষিতে স্বামীজি ওইসব বলেছিলেন) । তিনি বলেছেন শিক্ষা অর্জনের অধিকার সকলের‌ই থাকা উচিত । আর শিক্ষিত
না হ‌ওয়ার জন্য তিনি আত্মজিজ্ঞাসা করেছেন , এই জন্য কে দায়ী ? উত্তর দিয়েছেন নিজেই, বলেছেন -" ইংরাজরা দায়ী নয় , আমরাই 
দায়ী।" স্বামীজী সবথেকে জোর দিয়েছেন
শিক্ষার অধিকারের উপর যা আমরা ২০০৯ -এ
এসে বুঝতে পেরেছি । স্বামীজিই বলেছেন
  - "দরিদ্র বালক যদি শিক্ষালয়ে আসিতে না পারে তবে শিক্ষাকেই তার কাছে পৌঁছাতে হবে ।"

স্বামীজির কথা কখনো কখনো ঝাঁঝালো হয়েছে
যা এখনকার দিনে তার মূল্যায়ণ অমর হয়ে
আছে বলা যেতে পারে -" দিবারাত্রি ভন্ডামি,
মিথ্যাচার ও প্রতারণার জীবন যাপন কর--
তোমার ক্ষতগুলি যতদূর পারো ঢাকিয়া 
রাখো । তালির উপর তালি দাও , শেষে
প্রকৃত জিনিসটিই যেন নষ্ট হ‌ইয়া যায় , আর 
তুমি কেবল একটি জোড়াতালির সমষ্টিতে
পরিণত হ‌ও । "
আলমোড়া থেকে ১৯ নভেম্বর ১৮৮৮ খ্রীস্টাব্দে স্বামীজি চিঠি লিখলেন প্রমদাদাস মিত্রকে। সেখানেই প্রথম তিনি শ্রীরামকৃষ্ণকে -" ভগববন শ্রীরামকৃষ্ণ" বললেন। ১৮৯৪ খৃষ্টাব্দে স্বামী শিবানন্দকে চিঠিতে লিখেছেন " শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর কাছে ভগবানের বাবা।" ১৮৯৫ এর ফেব্রুয়ারিতে বৈকুণ্ঠ সান্যালকে স্বামীজি লিখলেন, "পরমহংস দেব আমার গুরু ছিলেন।" স্বামী অখণ্ডানন্দকে ১৩ নভেম্বর ১৮৯৫ খৃষ্টাব্দে এক চিঠিতে লিখলেন, " শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস অবতার ইত্যাদি ইত্যাদি সাধারণে প্রচার করিবেন না।" গুরুভাইদের বার বার বলেছেন, " শ্রীরামকৃষ্ণের নাম প্রচার করবার জন্য জেদ করিও না আগে তার ভাব প্রচার করা।" আবার শ্রীরামকৃষ্ণের সম্পর্কে কারও সংসয় প্রকাশ পেলে তার উত্তরও স্বামীজি দিয়েছেন, " দাদা, না হয় রামকৃষ্ণ পরমহংস একটা মিছে বস্তুই ছিল, না হয় তাঁর আশ্রিত হওয়া একটা ভুল কর্মই হয়েছে, কিন্তু এখন উপায় কি ? এ দুনিয়া ঘুরে দেখেছি যে, তাঁর ঘর ছাড়া আর সকল ঘরেই ভাবের ঘরে চুরি...এ জন্ম, এ শরীর, সেই মূর্খ বামুন কিনে নিয়েছে।" স্বামীজি বলেছেন, শ্রীরামকৃষ্ণের প্রচার করতে গিয়ে তোমার গোঁড়ামি দ্বারা লোককে বিরক্ত কোরোনা। 
মঠের গাছতলায় বসে নিবেদিতা একদিন স্বামীজিকে শক্তি, ভয়হীনতা, সাহস দেখে প্রমিথিউসের সঙ্গে কল্পনা করতে পেরেছিলেন। সেদিনই স্বামীজি বললেন, " খুব বেশিদিন বাঁচবো না, চল্লিশও ফেলবে না।" এই কথা বলে স্বামীজি নিবেদিতার এঁটো হাত মুছিয়ে দিয়েছিলেন, বলেছিলেন, যীশু তার শিষ্যদের পা ধুইয়ে দিয়েছিলেন।" 
©® অলোক কুন্ডু

শনিবার, ২১ আগস্ট, ২০২১

লক্ষ্মীর ভান্ডার আসলে মেয়েদের হাত খরচ। স্বামী হাত খরচ না দিলে লাইনে দাঁড়িয়ে যান। অলোক কুন্ডু











যেখানে দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প হবে, সেখানে আগে নাম রেজিস্ট্রেশন করালে তারা একটি নম্বর ফরমের ওপর লিখে দিচ্ছেন এবং একটি সরকারি ছাপ দিচ্ছেন। সরকারি রাবার স্ট্যাম্পের ছাপটি যদি দিতে ভুলেও যান তবে আপনারা তা ওইখানে দিতে অনুরোধ করবেন। তার পাশেই ক্যাম্পের লোকেরা একটি স্বাক্ষর করে দেবেন। আপনিও বাড়ি ফিরে ওই নম্বরটি একটি আলাদা কাগজে যত্ন করে লিখে রাখবেন। "লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্প"-এর নির্দিষ্ট একটি টেবিল বা ক্যাম্প থাকবে, ওইখানে গিয়ে Form-টি চাইতে হবে। এরকম শোনা যাচ্ছে, তা হলো ভিড়ের ঝুঁকি এড়াতে, বহু জায়গায় আগেই থেকে কূপন দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তারিখ অনুযায়ী এসে বা কারও মাধ্যমে তারা পরে ফরম্ তুলে নেবেন। পরে নির্দিষ্ট তারিখে গিয়ে জমা দেবেন। আজ পর্যন্ত এইরকম দীর্ঘ কোনও লাইন কোনও কালেই দেখা যায়নি।

ধরে নেওয়া যেতে পারে গ্রামেগঞ্জে বিডিও অফিসে ও শহরে মিউনিসিপ্যাল বরো অফিস অথবা মিউনিসিপ্যাল অফিসে হবে এই ক্যাম্প। স্থানীয় প্রশাসন মনে করলে এই ক্যাম্প তারা যে কোনও বড় স্কুলেও বসাতে পারে। হচ্ছেও তাই।

শুক্রবার, ২০ আগস্ট, ২০২১

লক্ষ্মীর ভান্ডারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় / অলোক কুন্ডু অলোক কুন্ডু

লক্ষ্মীর ভান্ডার প্রকল্পে, একটি প্রবলেম হতে পারে তা হলো যাদের বয়সের কোনও শংসাপত্রই নেই। কেবলমাত্র ভোটার কার্ড বা রেশন কার্ডের জন্মতারিখ দিয়ে এতদিন চলে যাচ্ছিল। এখনও বহু মানুষ আধার কার্ডে জন্মতারিখ নথিভুক্ত করেননি, এই ধরনের জটিলতার জন্য। এ ছাড়া আর এক ধরনের জন্মতারিখ নিয়ে জটিলতা আছে যা গেঁতোমির জন্য সংশোধন করা হয়নি। কারণ আধার কার্ডের জন্ম তারিখের সঙ্গে তার ভোটার কার্ড ও অন্যান্য জন্মতারিখের কোনও মিল নেই। এই কারণে একবছর বা ছয়মাসের তফাৎ থেকে গেছে তাদের নিজের বয়সের। আমি বলবো সবসময় আধার কার্ডের জন্মতারিখ মেনে নিলে সমস্যার সহজ সমাধান হয়ে যাবে। কারও জন্মতারিখ নেই তার ক্ষেত্রে অ্যাফিডেভিড নিয়ে সমস্যা মেটানো যেতে পারে। টাকার লোভে কেউ যদি দু তিন জায়গায় দু তিন রকম জন্মতারিখ রাখেন, তাহলে ভবিষ্যতে আপনার সমূহ ক্ষতি করতে পারে। অ্যাফিডিভিট সব জায়গায় মানতে না চাওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে, তাই কার্পেট জিজ্ঞাসা করে নেওয়া ভালো। 

পশ্চিমবঙ্গ লক্ষ্মী ভাণ্ডার, প্রকল্পের আওতায় আবেদন করার পদ্ধতি কি? লক্ষ্মীর ভান্ডারের আবেদনটি নিয়ে বাড়িতে আনার পর, সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি অর্থাৎ নিজের কাছে থাকা কাগজপত্রগুলি সংগ্রহ করতে হবে এবং এরপর লক্ষ্মীর ভাান্ডারের আবেদন পত্রের অধীনে থাকা সমস্ত প্রয়োজনীয় বিবরণ পূরণ করা শুরু করুন। দুয়ারে সরকার থেকে দেওয়া নিবন্ধন নম্বর টি পূরণ করুন-- সবার আগে। আবেদন পত্র সংগ্রহ করার দিনে এই নম্বর ফরমে লিখে দিতে পারে, আগে দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প হয়ে তবেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ক্যাম্পে যেতে পারবেন,  এই ব্যবস্থা সকলেই জানেন (রেজিস্ট্রেশন করুন)।

স্বাস্থসাথী কার্ডের নম্বরটি ফরমে লাগবে। আগে থেকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড না থাকলে, এই আওতার অধীনে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড প্রয়োজন হবে। তাই এই কার্ড না থাকলেও আবেদন করা যাবে। ফরম্ জমা দিয়ে আধিকারিককে জানাবেন আপনার স্বাস্থ্য সাথী কার্ড হয়নি। তখন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড হবে এবং ততক্ষণ আপনার লক্ষ্মীর ভান্ডারের আবেদনটি অস্থায়ী ভাবে জমা হবে। কিন্তু স্বাস্থ্যসাথী কার্ড না থাকলেও লক্ষ্মীর ভান্ডারে আবেদন জমা করা যাবে অথবা স্থানীয় প্রশাসন এই বিষয়ে সাহায্য করতে বাধ্য থাকবেন। এই বিষয়ে নিয়ম সরকার প্রতিনিয়ত আপডেট করে সংশোধন করছে।

আবেদনকারীকে তার দেওয়া সমস্তরকম জেরক্স কপিতে নিজেকেই স্বাক্ষর করতে হবে। ফরমেও স্বাক্ষর করতে হবে। স্বাক্ষর না করতে পারলে টিপসই দিতে হবে। জেরক্স কাগজের নীচের সাদা অংশে স্বাক্ষর করবেন। 

ফরমে লাগবেঃ পরিবারের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নম্বর। যাদের নেই ফাঁকা থাকবে। আধার নং। আবেদনকারীর। মোবাইল নম্বর। ই-মেইল আইডি না থাকলে, দেওয়ার দরকার নেই। জন্ম তারিখ। বাবার নাম। মায়ের নাম। স্বামীর নাম ( স্পাউস)। ঠিকানা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিবরণী। এই সমস্ত বিবরণ পূরণ করার পর এখন আপনাকে স্বয়ং ঘোষণা ফর্মমটি ( তৃতীয় ও শেষ পাতা) পূরণ করতে হবে। যাতে বলা আছে সবকিছু তথ্য আপনি সঠিক ও সত্য দিচ্ছেন। সঙ্গে একটি ক্যান্সেল লেখা চেকের ফাঁকা পাতা দিলে ভাল হয়, যেখানে স্বাক্ষরের জায়গাটি ক্রস করে দেবেন, চেকের কোথাও সই-স্বাক্ষর করবেন না। একটি ছবি ফরমে মেরে দেবেন আর একটি ছবি ফরমের বামদিকে স্টেপল্ করে দিন। এইসব হলে আসল ফরম্যাটটি সাবধানে পূরণ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে জমা দিয়ে দিন।

এইবার আপনাদের কয়েকটি কথা পরিষ্কার করে বলছি। ফরম্ পূরণের সময় ধৈর্য ধরে লিখুন, ধীরে ধীরে লিখুন অথবা কাউকে লিখে দিতে বলুন। ফরম্ যেদিন জমা হবে সেইদিন আপনার ফোনে এস.এম.এস আসবে। তাই
ফোনের মেসেজ বাক্স বা ইনবক্স পরিষ্কার করুন।
(১). তাই মেসেজ ভর্তি থাকলে, লক্ষ্মীর ভান্ডার থেকে নোটিফিকেশন পাবেন না। (২). যেদিন ফরম্ জমা দেবেন, সেই দিনই কিন্তু এস.এম.এস নাও পেতে পারেন, কিন্তু ফরম্ জমা হলে এস.এম.এস পাওয়ার কথা। কিন্তু হাজার হাজার ফরম্ নিয়ে মিলিয়ে দেখে নিয়ে কম্পিউটারে তুলতে বহু সময় লাগার কথা, এই কারণে দেরি হতে পারে। (৩).ফরমের প্রথমেই যদি দুয়ারে সরকারের দেওয়া নম্বরটি আপনি ভুল লেখেন অথবা ক্যাম্প থেকে ভুল লিখে দেয় তবে সমস্যা হবে। (৪). ফরমের সঙ্গে দুটি ছবি দেওয়ার কথা, একটি ছবি আঠা দিয়ে ডানদিকের উপরের বক্সে চিটিয়ে দেওয়ার কথা। দ্বিতীয় ছবিটি ফরমের সঙ্গে ভালো করে স্টেপল করে বাম দিকের উপরে না দিয়ে থাকলে হারিয়ে যেতে পারে, সে কারণে এস.এম.এস নাও আসতে পারে। (৫). ফরমের সঙ্গে যে সকল জেরক্স কপি দিয়েছেন, তা বারংবার আসল কপির সঙ্গে মিলিয়ে না নিলে এবং ভুল করে বাড়ির অন্য কারও অথবা নিজের আগের ভুল হওয়া কোনও দ্বিতীয় আধার কার্ড বা অন্য কাগজ জমা দেওয়া হলে এস.এম.এস না আসতেও পারে। (৬). জেরক্স করা কাগজগুলোর মধ্যে ভুল করে কোথাও সই/ স্বাক্ষর করে না দিলে এস.এম.এস না আসতেও পারে। (৭). সব থেকে বড় ভুল হতে পারে যাদের স্কুল-কলেজের শংসাপত্র নেই বা বার্থ সার্টিফিকেট নেই এবং যার ফলে জন্ম তারিখের গন্ডগোল থাকলে এস.এম.এস না আসতেও পারে। তাই যাদের এরকম আছে তারা ভুলেও দুরকম জন্ম তারিখ লেখা কাগজপত্র জমা দেবেন না। এইক্ষেত্রে যদি ভুলও থাকে তবে আধার কার্ডের জন্মতারিখ জমা দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আধার কার্ডে জন্মতারিখ না থাকলে ভোটার কার্ড দিন কিন্তু এই প্রসঙ্গে উল্টোপাল্টা কিছু জমা দিয়ে ফেললে এস.এম.এস আসবে না। (৮). ব্যাঙ্কের যে অ্যাকাউন্টটা চালু আছে সেইরকম কোনও অ্যাকাউন্ট দিয়েছিলেন কিন্তু আই.এফ.এস নম্বরটি অ্যাকাউন্টের সঙ্গে মেলেনি তাতেও এস.এম.এস আসবে না। তাই সঙ্গে একটি ব্ল্যাঙ্ক চেক দিতে হবে যেটিতে সই/ স্বাক্ষর কখনই করবেন না। ক্যানসেল বলে বড় বড় অক্ষরে চেকের উপর লিখে দেবেন। নতুন অ্যাকাউন্ট হলে, এখনই চেক বই পাবেন না, তাই
পাশ বইটি ভালো করে জেরক্স করুন এবং ওইখানে আই.এফ.এস কোড না লেখা থাকলে আপনি ব্যাঙ্ক থেকে জেনে লিখুন। আই.এফ.এস কোডটি সঠিক ছাড়া আপনার ফরম্ কম্পিউটারে ঢুকবে না, তাই এস এম এসও আসবে না। (৯).সাদাকালো ছবি দিলে এস এম এস নাও আসতে পারে। (১০) অঙ্গীকার পত্রে স্বাক্ষর না করলে এস.এম.এস না আসতেও পারে।
(১১). স্পাউস মানে স্বামী এই কলমটি ভুল লিখলে এস.এম.এস না আসতেও পারে। (১২). ফরমে তারকা চিহ্নিত ঘর পূরণ না করে ফাঁকা রেখে দিলে এস.এম.এস নাও আসতেও পারে। ফরমের উপরে দুয়ারে সরকারের দেওয়া কোনও নম্বর না থাকলে এস.এম.এস নাও আসতে পারে। স্পষ্ট করে ফরম্ পূরণ না করলে ( ক্যাপিটাল) এস.এম.এস না আসতেও পারে। 

সমস্ত কিছু বলার পরও একটু রাজনৈতিক আলোচনা সামান্য করা দরকার। যখন লক্ষ্মীর ভান্ডার ঘোষণা হ'ল তখন কিন্তু আদেশের মধ্যে ছিল প্রতিটি পরিবারের একজন পাবেন। ১২.৮.২১-এ মুখ্যমন্ত্রী দ্বিতীয়বার সাংবাদিক সম্মেলনেও সেই কথা বললেনও। তারপরই বিজেপির পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করা হ'ল এবং শুভেন্দু অধিকারী বললেন সন্ধ্যায়। তিনি বললেন তৃণমূল কংগ্রেসের ইস্তাহারে লিখিত আছে সকল মহিলাদের দেওয়ার কথা। ১৮.৮.২১-এ মুখ্যমন্ত্রী পুণরায় ঘোষণা করলেন সকলেই পাবেন। এখন এই সকলের মধ্যে কারা পাবেন আর কারা পাবেন না নতুন করে যদি কিছু আইনি ব্যাখ্যা সরকার দেয় তবে বিরোধীপক্ষ নিশ্চিত মামলাও করতে পারে। তাই ধরে নিতে হবে, এখন সকলেই পাবেন। লক্ষ্মীর ভান্ডারের মোট খরচের বাজেট বরাদ্দ এখন তাই বাড়াতে হবে। অলোক কুন্ডু ©®। 




প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...