বৃহস্পতিবার, ২ জুন, ২০২২

কে কে বাংলা তোমাকে নিশ্চিত মনে রাখবে

কপিলের শোয়ে এসে কপিলের মস্করার জবাবে কে.কে জানিয়েছিলেন তার নামকে ক্ষুদ্রতম দুটি অক্ষরে সীমাবদ্ধতায় কেন তিনি বেঁধে ছিলেন। কপিলের শোয়ে অনেক হাসিমস্করা হয়। ভীষণ একটা ভালো প্রোগ্রাম
এই টিভি শোটিতে হয়ে থাকে। কিন্তু কপিল কখনও কাউকে জড়িয়ে ধরে কাঁধে হাত রেখে ইয়ার্কি খুব একটা করেনা। ব্যতিক্রম কে কে। এত সরলতা মাখা মুখ যেন কোনও নাক উঁচু ভাব তার মধ্যে থাকতে একদমই নেই।
তার মধ্যে যেন আড়ালের মগডাল নেই। সেলিব্রেটির ছুঁতমার্গ নেই কোনও। তাই হয়তো গান গাইতে গাইতে যখন তিনি অস্বস্তি বোধ করছেন, তার শরীর বিপন্ন মনে হয়েছে তখন তিনি জল খেয়ে ঘাম মুছে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন নিজেকে, ম্যানেজ করেছেন নিজেকে নিজেই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। ভক্ত থেকে উদ্যোক্তা কাউকেই তিনি ব্যতিব্যস্ত করে তুলতে চাননি।  আসলে এই গুণাবলী সকলের থাকেনা। তার ওপর তার ছিল মার্জিত ব্যবহার। হয়তো এইরকম বড় পেমেন্টের প্রোগ্রামে এসে তাদের কিছু ফিরিয়ে দিতেও তিনি চেয়েছিলেন। নব্বইয়ের ছেলেমেয়েরাই তো তার বিশেষ গুণগ্রাহী, তাদের আব্দার অনুরোধের বন্যায় কতবার তো ভেসে বেড়িয়েছেন তিনি। আসলে মানুষটার মধ্যে কর্তব্যবোধ, একটা যেন ঋণী হয়ে থাকার কুন্ঠাবোধ বড় বিষয় ছিল। ভক্তদের কাছে তাদের মনোরঞ্জনের দাবী যে থাকে তাকে তিনি অপূর্ণ রেখে কখনোই চলে যেতে চাননি। পয়সা উসুল নয়, তাদের মনোবাঞ্ঝা পূরণ করতে তাকে হবেই, এই নাছোড়বান্দা মনোভাব তাকে উজ্জীবিত করেছে সন্দেহ নাই। তার এই কনর্সাটের পাওয়ারফুল শো-কে তাই তিনি তুঙ্গে নিয়ে গেছেন। জানতেন না এত লোক হবে। আবার হলে ঢোকার মুখে তিনি এত সংখ্যায় বিপুল ছাত্রদের উপচেপড়া ভিড় দেখে গাড়ি থেকে নামতেও চাননি। তাঁর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কি তবে বুঝতে পেরেছিল আজ এখানে ভয় আছে। বড় শিল্পীরা সঙ্গে লোকলস্কর নিয়ে পথে ঘোরেন। সঙ্গে থাকে তাবড় তাবড় শরীরের লোকজন। এইসব কেকে-র সঙ্গে ছিলনা একদম। দমদম বিমানবন্দরে নামার সময় কোনও ভিড়ের সামনাসামনি তাকে হতে হয়নি। ভক্তদের উন্মাদনায় তাকে পড়তে হয়নি। হোটেলে এসে নিজের গানের চর্চা করেছেন, সময়েই পৌঁছে গিয়েছিলেন নজরুল মঞ্চে। ভেবেছিলেন রাজ্য সরকারের হল, সেখানে সমস্ত ব্যবস্থাপনা দারুণ থাকবে। কোনও কিছুই গাঁয়ের মতো নয়-- এই নজরুল মঞ্চ। এক সময়ে কলকাতা ও মফস্বলের বিশাল বিশাল মাঠে মহম্মদ রফি থেকে কিশোর লতাকে সামলে দিয়েছে উদ্যোক্তারা। বহুকালের সংস্কৃতির জায়গা। কিন্তু যে আশাবাদী হয়ে এসেছিলেন তা তাসের ঘরের মতো এমন যে ভেঙে পড়তে পারে, তা কখনও তিনি ভাবেননি হয়তো। অত প্রবল ভিড়কে তাই প্রাথমিক ভাবে ম্যানেজ করতে চেয়েছিলেন গানের প্লাবন দিয়ে। উপচে পড়া ভিড়কে সামাল দিতে এবং তাদের মন জয় করার বাসনা তখন তাকে তন্ময় করে রেখেছিল শুধুমাত্র এমনটা নয়। গানের তালিকা ও অনুরোধগুলি তাকে শেষ করতেও তো হবে। শিল্পী যে একজন মানুষ তার যে ভেতর ভেতর টেনশন হয় তা আর কবে কে জানতে চেয়েছে। টেনশন মুক্ত হতে তাই নিজেকে যতদূর পেরেছেন উদ্দাম করেছেন। চূড়ান্ত স্থানে এমন করে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন যাতে চিরকাল তাকে মনে রাখে, কলকাতা।
সারা পৃথিবীজুড়ে এর থেকে বড় বড় অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকেছেন। সব সামলে নিয়েছেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু বুঝতে পারেননি কলকাতাতেই হবে তার শেষ কনসার্ট। চোখের জলে সাজানো গানগুলো যে তার মৃত্যুর পরেও সারা কলকাতার নিস্প্রদীপ ঘরে ঘরে একদা বেজে উঠবে, স্বপ্নেও কখনও ভাবেননি। তিনি ফাঁকি দিতে চাননি। কোনও ফাঁকি দেওয়া তার পক্ষে সম্ভবও ছিলনা সেদিন। তিনি ভাবেননি কলকাতার কনর্সাটে তার জন্য আর এক ডবল " কে অক্ষর" এমন ভাবে লুকিয়ে আছে যা তার নামের মধ্যেই বিদ্যমান। মঙ্গলবার গভীর রাতে কলকাতার নজরুল মঞ্চের কলঙ্কিত কনসার্টের পরই যে তিনি হঠাৎ করে মারা যাবেন একথা সেদিন কেউই ভাবেননি। কিন্তু ভেবেছিলেন বুঝি অন্তর্জামী। কি অব্যবস্থাপনার মধ্যে তাকে গাইতে হয়েছিল তার পরবর্তীতে প্রকাশিত ভিডিওগুলি দেখে সকলে আঁতকে উঠছেন। একটা অতিরিক্ত বিশৃঙ্খলা বললেও ভুল হবে।
গড়িয়াহাটের মৌচাক থেকে থিক থিক করছে ভিড়। হলের সামনে চলছে ধস্তাধস্তি, ইঁট-পাটকেল ছোঁড়া। হলের ভেতর ফায়ারএস্টেটুইঙ্গারের ধোঁয়া, প্রায় ৭ হাজার ফোন থেকে ভিডিও হওয়ার সময় যে তাপ বিকিরণ হয় তার একটা প্রবল অস্বাস্থ্যকর শক্তি। এ.সি নিভিয়ে দেওয়া, হাজার হাজার ওয়ার্ডের দৈত্যাকার লাইটের ঝনঝনানি যা শিল্পীর শারীরিক অস্বস্তি বাড়িয়ে ছিল শতগুণ। স্টেজের চারিদিক ও হলের সমস্ত মেঝে ভর্তি করে যুবক যুবতীদের বসে থাকা, উইং ঘিরে শতশত ছেলেমেয়েদের দাঁড়িয়ে থাকা। এইসব তো ছিল। তার সঙ্গে ছিল ছেলেমেয়েরা এপাশ ওপাশ দিয়ে ঢুকে পড়তে চাইছে, চরম অব্যবস্থাপনা। এইসব থেকে কখন বেরিয়ে যাবেন তাই শিল্পীর উদ্বেগের শেষ ছিল না। তার মনের অন্দলমহল মাপতে যাওয়ার কারও তখন ইচ্ছা নেই। এইসব কেউ জানতে চায়নি। একটা চক্রব্যুহে তিনি আটকে পড়েছেন, সম্পূর্ণ তিনি একা। একেবারে একা। ওদিকে সকলে তারা চাইছে আরও চাইছে। বাঙালি আজ লজ্জায় মর্মাহত লজ্জিত। বাঙালিদের মধ্যে যারা সুস্থ তারা সকলেই আজ ভীষণ ক্ষোভে, মর্মবেদনায় চোখের জল ফেলছেন। কে.কের বাড়িতে হয়তো আজ সকাল সকাল আলো নিভে গেছে। দিল দে চুকে সনম সেই কবেই তো দেখে ফেলেছিল বাঙালির এই প্রজন্ম। তবু আজ বন্ধুরা পাঠিয়ে দিচ্ছে পুরনো সেই গানটাও। কেকের গানে গানে হোয়াটসঅ্যাপ ভর্তি হয়ে গেলেও আজ কারও উপর কারও অভিযোগ নেই। নব্বইয়ে বড় হওয়া প্রজন্মের কাছে কেকের এই হঠাৎ হারিয়ে যাওয়ার আফসোসগুলি যেন বুকফাটা কান্নার মতো। কোনও কৈফিয়ত নেই। কৃষ্ণকুমার কুন্নাথকে তার মালয়ালী পিতামাতা যে নামকরণ করেছিলেন, আজ তাকে সংক্ষিপ্ত আকারে কে.কে করেছিল তার গানের জগতের স্টুডিওর প্রোডাকশন হাউস ও কতিপয় উৎসাহী ভক্ত। সত্যি সত্যি যে তার জীবনটাও অতি ক্ষণস্থায়ী হয়ে হঠাৎ কেকে-র মতো ছোট হয়ে যাবে, একটা অনিশ্চয়তা এসে শেষ করে দিয়ে যাবে তারাও তা কেউই জানতো না। 
১৯৬৮ -তে যে দিল্লিতে তার জন্মগ্রহণ ও গায়ক হয়ে ওঠা সেখানে তিনি আর কখনও ফিরতে পারবেন না। কালের বিচার কেন যে এত বেদনাদায়ক হয় কেউ তার উত্তর দেবে না আজ। দিল্লির মাউন্ট সেন্ট মেরি স্কুলে পড়াশোনা করার সময়ও কেউ জানতেন না যে এই ছেলেটাই একদিন বিরাট গায়ক হয়ে উঠবে। কিশোর কুমার এবং সঙ্গীত পরিচালক আর ডি বর্মনের মতো গায়কদের দ্বারা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়ে তাদের মতোই পঞ্চাশের কোঠায় চলে গেলেন এক নিরুদ্দেশের যাত্রী হয়ে। কখনও কোনো সঙ্গীত প্রশিক্ষণ নেননি যে মানুষটি ভবিতব্য তাকে যে একদিন গানের জগতে নিয়ে গিয়ে ফেলবে এবং সেখান থেকেই যে  তিনি একদিন অদৃশ্য হয়ে যাবেন এই কথা কখনও কেউ ভাবেননি। একটার পর একটা প্রবাহের মধ্য দিয়ে তার যাত্রাপথের
উত্তরণ ঘটেছে। যুবক যুবতীরাই হয়ে উঠেছিলেন তার প্রধান ভক্তকূল। কিরোরি মাল কলেজ থেকে বাণিজ্যে স্নাতক করার সময় , তিনি 'হরাইজন' ব্যান্ডের প্রধান গায়ক ছিলেন। একদা টাইপরাইটার বিক্রি করতে করতে চাকরি ছেড়ে একদিন গানকেই বেছে ছিলেন বাস্তবে বেঁচে থাকতে। আশ্রয় নিয়ে ছিলেন হোটেলে গান গেয়ে বেঁচেবর্তে থাকবেন। সেই গানই কি তবে তার জীবনের কাল হল। জিঙ্গেল গেয়ে সামান্য নাম করেছিলেন একসময়ে, সেখান থেকে প্লেব্যাক করতে করতেই তিনি
তারকা হয়ে উঠেছিলেন। কলকাতা মঙ্গলবার দেখলো সেই তারকার একক শোয়ে নজরুল মঞ্চের এধার থেকে ওধারে ছুটে বেড়াতে বেড়াতে হাততালির আদরগুলো
তিনি সারা শরীরে মেখে নিচ্ছেন। আর তা তিনি যত কুড়োতে লাগলেন তত তার কর্তব্যবোধ তাকে বের হতে দিল না সেই চক্রব্যুহ থেকে। শিল্পীর শারীরিক বিপর্যয়ের কথা কেউ সামান্য ভেবেও দেখলো না। যেন আগের জন্মে তিনি নজরুল মঞ্চের কাছে দায়বদ্ধ ছিলেন। সমস্ত ঘাম রক্তের ঋণ স্বীকার করে গেলেন। কাউকে এতটুকু বলতে পারলেন না, অথবা বললেন না যে তিনিও মানুষ, তার শরীরটা আজ ভালো নেই। যদি বলতে পারতেন তবে এই জঙ্গি জনতার রায়ে, অচিরেই ফুৎকারে কে.কে হয়ে যেতেন একজন ভিলেন। আর ফাটকা খেলোয়াড় রূপঙ্কর দুনিয়ার সমস্ত আলো কেড়ে নিতেন। যেভাবে একা একা কে.কে বিমানবন্দরে নেমে ছিলেন তেমনি নিঃশব্দে তাকে কলকাতা ছাড়তে হতো। কেকে একজন ভালো মানুষ। সরল নিষ্পাপ তাই তাকে এই নিষ্ঠুর পরিণতির শিকার হতে হল। ©® অলোক কুন্ডু

শ্রদ্ধাঞ্জলি কে.কে

শ্রদ্ধাঞ্জলি কেকে / অলোক কুন্ডু

মন্দ্র সপ্তক মধ্য সপ্তক তার সপ্তকের মাধুর্যতায়
হাততালিতে ভরে যাচ্ছে হল ভর্তি ইচ্ছেগুলো
উদারা মুদারা তারা থেকে উঠে আসছে চিত্রকল্পগুলি
কোনও অজ্ঞাতনামা সুরের সৌন্দর্য সম্ভার
হলভর্তি হাততালি তার প্রাপ্তি কুড়োতে ব্যস্ত
ওদিকে হাঁসফাঁস করছে শিল্পীর হৃদস্পন্দন
কথাগুলো গুলজারের কখনও কওসর মুনিরের
প্রিতম থেকে জিৎকে নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন শিল্পী
হাততালির মায়াকে শিল্পী কিছুতেই ছেড়ে যাবেন না
জীবন বাজি রেখে গাইছেন একের পর এক গান।
উত্তেজনার পারদ উপচে পড়ছে উন্মাদনায় মত্ততায়
দমবন্ধ করা নজরুল মঞ্চের ভেতর মানবস্রোত
তিল ধারণের জায়গা নেই শুধু আরও চাই আরও চাই
উদারা মুদারা তারার সঙ্গে লাবডাব করছে স্পন্দন
আরও চাই আরও চাই শিল্পী তখন বড় একা
বড় করুণ দেখাচ্ছে তার মুখমন্ডলের নক্ষত্রবলয়
বারংবার তার শরীরের অস্বস্তিগুলি প্রকট হচ্ছে
সপ্তকগুলি তবুও শিল্পীকে ছেড়ে যেতে চায়নি
ধীরে ধীরে মঞ্চে তাকে ঘিরে ধরলো অতি উৎসাহীরা
উইং ক্লোজ করে দাঁড়িয়ে পড়া শত শত মোবাইল
আলোর উত্তাপগুলি তার হৃৎপিন্ডকে চেপে ধরতে চায়
তার চারপাশে অক্সিজেন কমে আসছে ধীরে ধীরে
তখন কারও মনে পড়লো না অভিমন্যু বধের কথা
কেকে-র গলা শুকিয়ে আসছে আর বুঝি পারছেন না

শ্রোতারা যদি জানতো গান মুখ দিয়ে গাওয়া হয়না
তাহলে তোমাকে এমন করে বেঘোরে মরতে হত না।
©® অলোক কুন্ডু

কেকে-কে আমার শ্রদ্ধা/ অলোক কুন্ডু


শ্রদ্ধাঞ্জলি কেকে / অলোক কুন্ডু

মন্দ্র সপ্তক মধ্য সপ্তক তার সপ্তকের মাধুর্যতায়
হাততালিতে ভরে যাচ্ছে হল ভর্তি ইচ্ছেগুলো
উদারা মুদারা তারা থেকে উঠে আসছে চিত্রকল্পগুলি
কোনও অজ্ঞাতনামা সুরের সৌন্দর্য সম্ভার
হলভর্তি হাততালি তার প্রাপ্তি কুড়োতে ব্যস্ত
ওদিকে হাঁসফাঁস করছে শিল্পীর হৃদস্পন্দন।
কথাগুলো গুলজারের কখনও কওসর মুনিরের
প্রিতম থেকে জিৎকে নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন শিল্পী
হাততালির মায়াকে শিল্পী কিছুতেই ছেড়ে যাবেন না
জীবন বাজি রেখে গাইছেন একের পর এক গান।
উত্তেজনার পারদ উপচে পড়ছে উন্মাদনায় মত্ততায়
দমবন্ধ করা নজরুল মঞ্চের ভেতর মানবস্রোত
তিল ধারণের জায়গা নেই শুধু আরও চাই আরও চাই
উদারা মুদারা তারার সঙ্গে লাবডাব করছে স্পন্দন
আরও চাই আরও চাই শিল্পী তখন বড় একা
বড় করুণ দেখাচ্ছে তার মুখমন্ডলের নক্ষত্রবলয়
বারংবার তার শরীরের অস্বস্তিগুলি প্রকট হচ্ছে
সপ্তকগুলি তবুও শিল্পীকে ছেড়ে যেতে চায়নি
শ্রোতারা যদি জানতো গান মুখ দিয়ে গাওয়া হয়না
তাহলে তোমাকে এমন করে বেঘোরে মরতে হত না।
©® অলোক কুন্ডু

বুধবার, ১ জুন, ২০২২

সৌরভ কি রাজনীতি থেকে ফয়দা তুলবেন/ অলোক কুন্ডু


যদি সৌরভ রাজ্যসভায় যায় তাহলে মন্ত্রী হবেন ডাইরেক্ট। এটা আমার ধারণা। এছাড়া সৌরভ কিছু প্রজেক্ট নিয়ে যাবেন। সৌরভ গেলে তার প্রজেক্ট প্রধানমন্ত্রী মেনে নেবেন। আমার ধারণা তিনি যদি বিজেপি যানই তবে তিনি নির্ঘাত হবেন দেশের ক্রীড়া মন্ত্রী। এই কারণে সৌরভ রাজ্যের খেলনগরী ডুমুরজলাকে পরিত্যাগ করে দিয়েছে আগেই। হাওড়ায় খেলনগরী হলে যে উন্নয়ন হতো সামান্য কজন পরিবেশবাদীদের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবেন কেন?
তা পরিবেশ দপ্তরের অনুমতি নিয়েই আজ সবকিছু করতে হয়। হাওড়ার উন্নয়ন না হলে আমার কষ্ট হয় তাই আমি এখানে পরিবেশ উদ্ধারের নামে ওই আন্দোলন আমি কখনও সমর্থন করিনি। আমি ব্যক্তিগত ভাবে সৌরভের ভক্ত। রাজনীতিও করিনা। তাই এই বক্তব্য আমার স্পষ্টভাষণ। কারণ আমি ছাড়া আর সকলের ধান্দা আছে, এটা আমার কাছে পরিষ্কার। সৌরভ বিজেপিতে যাবে কি না জানিনা। তবে সৌরভ কোনও প্রজেক্ট দিয়েছে কিনা তাও জানা নেই আমার। তবে কেন্দ্রের কাছে প্রজেক্ট দিয়েছে বলেই আমার ধারণা। প্রজেক্টটা পেলে তবেই সৌরভ কোথাও যাবেন। বিসিসিআই থেকে এখনও ইস্তফা দেননি। দেবেন না কি দেবেন না এইসব রটনা মাত্র। তবে আমি জানতাম ডোনা শিল্পীদের কোটায় রাজ্যসভায় যাবে। সৌরভ ডাইরেক্ট পলিটিক্স করবে বলে আমিই দোটানায় আছি। কারণ সৌরভ দুমদাম সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাবলিক মোটেও নন‌। তবে সৌরভ যদি বিজেপিতে যান তবে এখানে এখন বিজেপির যে খুব লাভ হবে তা মনে করি না। কারণ এখানে ভোট কিন্তু অন্যভাবে হয়। সৌরভকে দেখে ভোট দিতে চাইলেও বিজেপি বাংলায় সেই ভোট জোগাড় করতে কখনোই পারবে না। কারণ বিজেপিতে পুরনো যেসব সদস্য আছেন তারা এত অহংকারী যে তারা কীভাবে সংগঠন তৈরি করতে হয়, সেটাই জানেন না। তারা সব সময় নতুন পুরনো এই আলোচনায় ব্যস্ত থেকেছেন গত পুরো নির্বাচনজুড়ে এবং ফেসবুকে রাজনীতি করেছেন। আদতে তৃণমূল থেকে যারা গিয়েছিল তারাই রাজনীতি বুঝতো যেমন তেমনি আবার তাদের বিশ্বাস যোগ্যতা একেবারেই ছিলনা। তবে সৌরভ একটা প্রজেক্ট নিয়েছেন এই বিষয়ে আমি একমত। হয়তো তা আগামী দিনের যুবক সম্প্রদায়ের কাছে আনন্দের হবে। সৌরভ মন্ত্রী এবং এমপি হবেন না এটা আমার বিশ্বাস। তবে বামেরা হচ্ছে সৌরভের আসল শত্রু, তারা কিছু করতেও পারবে না কিন্তু সমালোচনায় দেশ উদ্ধার করে দেবে। আমার ধারণা সৌরভ ভারতবর্ষে খেলাধুলোর বিষয়ে একটা আন্তর্জাতিক এমন কিছু করতে চলেছেন যা অনন্য বিষয় এবং তা হবে অন্য স্টেটে অথবা দিল্লিতে হবে এবং স্কুল শিক্ষায় খেলাধুলোও ডাইরেক্ট ঢুকতে পারে। খেলাধুলোর প্রভূত উন্নয়নের জন্যে সৌরভের এই প্রজেক্ট হতে যাচ্ছে। যা ইতিপূর্বে কখনও হয়নি। দেশের খেলাধুলোর খোলনলচে বদলে দিতে চান সৌরভ, এটা তার উদ্যোগ থেকে বোঝা যায়। আর এই জন্যে তার একটা পদ সৃষ্টি হতে পারে নয়াদিল্লি বা অন্য কোনও রাজ্যে। উত্তর প্রদেশেও হতে পারে তার সদর দপ্তর। সেই জন্য মধ্য কলকাতায় সৌরভের নতুন ফ্ল্যাট যাতে যখন তখন তিনি উড়ে যাবেন তিনি দিল্লিতে। মন্ত্রী নয় খেলরত্ন তুলে আনার জন্য তার প্রজেক্ট হবে হয়তো যা সরকারি এবং যা তার বর্তমান পদ থেকেও আরও বড়। সৌরভের প্রজেক্টে শিলমোহর পড়েছে বলেই সৌরভ হাওড়ার ডুমুরজলাটা তিনি ছেড়ে দিয়েছেন আগেই। যা হতে পারতো হাওড়ার উন্নয়নের এক দিগদর্শন, পশ্চিমবঙ্গেরও হলে আনন্দ পেতাম। সৌরভ কোনও ফালতু একটা চরিত্রের নাম নয়। আমার বিশ্বাস বিজেপি সরকার তার কোনও বৃহত্তম প্রজেক্ট অনুমোদন করেছেন যা আন্তর্জাতিক মানের। হয়তো বা স্কুল কলেজ থেকেই তৈরি হবে খেলোয়াড় যা ৭৬ বছরে ভারতে অবহেলিত। অথবা এমন কিছু যা যুবকদের উন্নয়নে কাজে লাগবে। কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদন প্রাপ্ত ভারতের কোনও বৃহত্তম অর্থনৈতিক কর্মসূচি। সৌরভ থাকবেন রাজ্যপাল পদমর্যাদার একজন নাগরিক হয়ে। খেলা বা যুবকদের উন্নয়ন করা ছাড়া বিজেপিরও কিন্তু গতি নেই। এইসব হতে যাচ্ছে বলেই দিলীপ ঘোষকে সেনসর করা হয়েছে। কারণ এই রাজ্যে যতটুকু বিজেপি উঠেছে তা দিলীপ ঘোষের জন্য। পড়েছেও দিলীপ ঘোষের জন্য। এইরকম একটা সৎ ও বোকা লোক ভারতে দ্বিতীয়টি নেই।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দেখেছে এখানে বিজেপির নিচুতলার সদস্যদের দিয়ে কখনও একখানা ভোট জোগাড় করা সম্ভব নয়। নেতাদের মধ্যে একমাত্র টিঁকে গেছেন একজন মাত্র, তিনি তৃণমূলে ফিরছেন না শুভেন্দু। বিজেপির সদস্যদের এটিকেটের জ্ঞানে দিশেহারা হয়েছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী, ভিক্টোরিয়ায়। তাতেই বঙ্গের বিজেপি ভোট অর্ধেক সরে গিয়েছিল। বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাই ভালো করেই জানেন এখানকার বড় বড় বুকনির বিজেপি সদস্যদের হিম্মত। তাই তাদের এই সংগঠন নিয়েই কোনও বড় কাজ করে দেখাতে হবে। তাদেরও আগামী লোকসভায় সিট দরকার জিতে আসার জন্য। পশ্চিমবঙ্গের জন্যে নয়, ভারতের জন্য দরকার সৌরভকে। সত্যিই তো যদি যোগ্য একটা সম্মান সৌরভ পান তবে তিনি তা ছাড়বেন কেন।
সৌরভ বিজেপির সদস্য পদ নিচ্ছেন না কিন্তু সরকারের কোনও প্রজেক্টের সফলতায় যুক্ত হলে তাকে বিজেপির লোক বলে শুনতে হতে পারে। এই জ্ঞানটুকু মনে হয় সৌরভের আছে। আমি বলবো সৌরভ বড় কিছু করতে চলেছে। যদি পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে হয় তবে বিজেপির সামান্য টিঁকে থাকা হবে এখানে। তবে ১৮ টা সিট আর ফিরে পাওয়া হবে না কখনও। কারণ বিজেপির লোকেরা ওই ১৮ টা সিট ধরে রাখার মতো ভোটের রাজনীতি করতে পারবে না। যারা মার খেয়েছে তাদের জন্য বিজেপি বাংলায় উঠেছিল, তারাই তো এখন তাদের এলাকায় ভালো করে থাকতে পারেন না। তাই সৌরভের প্রজেক্টের সঙ্গে বঙ্গের বিজেপির কোনও সম্পর্ক না থাকলেও সরকারের সঙ্গে অবশ্যই একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে। ©® অলোক কুন্ডু

মঙ্গলবার, ৩১ মে, ২০২২

হাওড়ার শঙ্কর ও অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়

#অলোক_কুন্ডুর_কলম

আজ আনন্দবাজারে শঙ্করের অসিতকুমার
-------------------------------------------------------------
■ ব‌ইমেলায় গত তিনবছর আগে,শঙ্কর অর্থাৎ মণিশঙ্কর মুখোপাধ্যায়কে জিজ্ঞেস করেছিলাম আপনার মনে আছে চৌধুরী বাগানের কথা ? আমার বাড়ি কোথায় উনি জিজ্ঞেস করাতে বলেছিলাম আমার বাড়ির ঠিকানা। আসলে পাশের লেন বিহারী চক্রবর্তী লেনে ছিল ওনার বাসা। খুব জোর ১০/১২ টা বাড়ি দূরে হবে শঙ্করের পুরনো ভাড়াবাড়ি। হেসে বলেছিলেন তুমি তো তাহলে আমার পাড়ার ছেলে ন‌ও। হাওড়া জেলা স্কুলের ফার্স্ট বয় ছিলেন অসিতবাবু । শঙ্কর হাওড়ার বিবেকানন্দ ইন্সটিটিউশনের ছাত্র ছিলেন। দুজনেই প্রায় আমাদের পাড়ায়, মধ্য হাওড়ার চৌধুরীবাগান ও যোগমায়াদেবী লেনে থাকতেন আর শঙ্কর ওখানে বসেই লিখেছিলেন, "কত অজানারে", "চৌরঙ্গী"র মতো উপন্যাস। কত অজানারে-তে হাওড়ার ঘুঘনীওলা থেকে বিভিন্ন রাস্তার নাম উল্লেখ করতে ভোলেননি। স্বাধীনতার দিন যোগমায়া সিনেমায় দুবার পর পর ফ্রিতে সিনেমা দেখার লোভে সেদিন বিভিন্ন ক্লাব থেকে খাওয়া দাওয়ার যে আয়োজন করেছিল বিভিন্নজন, ইচ্ছে থাকলেও সেইসব জায়গায় খেতে যেতে পারেননি, শঙ্কর। যখনই সুযোগ পান হাওড়ার কথা লিখতে ভোলেন না। শিবপুরে মায়াপুরী সিনেমার পাশে জায়গা কিনে বাড়ি করেছিলেন। আমি একবার সেই বাড়িতে ওনার কাছে গিয়েছিলাম। একটা গাউন পরতে পরতে সদর ঘরে ঢুকেই আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, " কোথা থেকে আসছো" আমি উঠে দা‍ঁড়িয়ে বলেছিলাম চৌধুরী বাগানের পাশে কালী কুন্ডু লেন থেকে আসছি। বলেছিলেন, "বসো বসো, হ্যাঁ তোমাদের অনুষ্ঠানে যেতে পারছিনা ভাই, আমি নিমাইদাকে বলে দিয়েছি ( নিমাইসাধন বসু)।" আমার বন্ধু সুধীরকুমার দে-র পত্রিকা নৈবেদ্য-র একটি সভায় নিমাইসাধন বসু এলেও শঙ্কর আসতে পারেননি তখন। এখন আর হাওড়ায় থাকেন না মণিশঙ্কর। আজ শঙ্কর, রবিবাসরীয়তে, আনন্দবাজার পত্রিকায় লিখেছেন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের স্বনামধন্য প্রয়াত অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে ( যিনি এক‌ই পাড়ায় শঙ্করের ভাড়া বাড়ি থেকে তিনটে বাড়ি দূরে থাকতেন, হাওড়ার যোগমায়াদেবী লেনে।) আর শঙ্করের সিনিয়র ছিলেন অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শঙ্করকে জবরদস্তি পরে গ্র্যাজুয়েট‌ও করেছিলেন। অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় পরে হাওড়ার সাঁত্রাগাছিতে আমৃত্যু থেকে গেছেন, হাওড়া করপোরেশনের উদ্যোগে মূলত বর্তমান সরকারের চেষ্টায় হাওড়ার ক্যানেল ইস্ট রোডের একাংশের নাম হয়েছে তার নামে, সেই হিসেবে অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়ের এখন শতবর্ষ হয়ে গেল। শঙ্কর কতরকম ভাবে তার বাল্যকাল ও যৌবনের হাওড়া শহরকে সাহিত্যে তুলে ধরেছেন আজ লিখলেন হাওড়ার বরেণ্য মানুষ অসিতবাবুকে নিয়ে। বাংলা সাহিত্যের দিকপাল, যাকে শঙ্কর বলেছেন "বিদ্যের জাহাজ"।আজ আবার অসিতবাবুর জন্য আমাদের সকলের কাছে শঙ্কর তুলে ধরলেন হাওড়াকে। ধন্যবাদ আপনাকে, শঙ্কর।
©® অলোক কুন্ডু

শুক্রবার, ২৭ মে, ২০২২

ফরম্ জমা করে ফোনের ইনবক্স পরিষ্কার করুন। অলোক কুন্ডু



(১).জেরক্স সহ আধার কার্ড (২). জেরক্স সহ জাতি সনদ শংসাপত্র এবং তপশিলি জাতি উপজাতিদের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর নিজের নামে এস.সি/ এস.টি সার্টিফিকেট থাকতে হবে। আবেদনকারী জেনারেল কাস্টে বিয়ে করলেও নিজে এস.সি/ এস. এস.টির সুবিধা পাবেন। (৩) জেরক্স সহ নিজের একই নামের রেশন কার্ড (পদবী পরিবর্তন না হলেও চলবে) (৪). জেরক্স সহ স্থায়ী আবাসিক সার্টিফিকেট। (৫).জেরক্স সহ বয়সের প্রমাণপত্র। (৬). ব্যাংক অ্কাউন্টের বিবরণী পৃষ্ঠার জেরক্স ও পাশবই, যেমন ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট বিবরণের পৃষ্ঠা যাতে আই.এফ.এস কোড ও অ্যাকাউন্ট নম্বর আছে। (৭). পাসপোর্ট সাইজ রঙিন ছবি দুই কপি। (৮) নিজের বা পরিবারের কারও চালু মোবাইল নম্বর। যাদের স্কুলের পড়াশোনা নেই তাদের ক্ষেত্রে আধার কার্ডের জন্মতারিখটি গ্রহণ করা হতে পারে, ভ্যালিড। (৯) বয়সের প্রমাণ হিসেবে অ্যাফিডেভিট চলবে কিনা তা ক্যাম্প অফিস বলতে পারবে।

ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট করা নিয়ে একটু সমস্যা হয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে স্কুল কলেজের ছেলেমেয়েদের অ্যাকাউন্ট আছে। বাবার অ্যাকাউন্ট আছে। লক্ষ লক্ষ মহিলাদের নিজেদের কোনও অ্যাকাউন্ট নেই। তাই বিরাট সমস্যা যে এই কদিনের মধ্যে ব্যাঙ্ক পারবে কিনা এত এত মহিলাদের সিঙ্গল অ্যাকাউন্ট তৈরি করে দিতে। এই সমস্যা রাজ্য সরকারও বুঝেছে। মনে হচ্ছে এই নির্দিষ্ট বিষয়টি সরকার বিবেচনা করবে। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যেখানে সিঙ্গল থাকবে না, সেখানে জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট চলতে পারে। আরও কয়েকটি সমস্যা হবে। যেরকম জয়েন্ট ফ্যামিলিগুলো স্বাস্থ্যসাথী কার্ড করিয়েছে একজন বয়স্কা মহিলার নামে কিন্তু আদতে সেখানে একই বাড়িতে দুটি বা তিনটি হাঁড়ি আছে এই ক্ষেত্রে দুই বৌমা আবেদন কীভাবে করবে ? কারণ বড় ছেলে সরকারি কর্মী। মেজ ও ছোট ছেলে কিছুই করে না। এইরকম জয়েন্ট ফ্যামিলির কি হবে ? এইক্ষেত্রে দুই বউমাই পাবেন।

আর একটি প্রবলেম হতে পারে তা হলো যাদের বয়সের কোনও শংসাপত্রই নেই। কেবলমাত্র ভোটার কার্ড বা রেশন কার্ডের জন্ম তারিখ দিয়ে চলে যাচ্ছিল এতদিন। এখনও বহু মানুষ আধার কার্ডে জন্মতারিখ নথিভুক্ত করেননি, এই ধরনের জটিলতার জন্য। এ ছাড়া আর এক ধরনের জন্মতারিখ নিয়ে জটিলতা আছে যা গেঁতোমির জন্য সংশোধন করা হয়নি। কারণ আধার কার্ডের জন্ম তারিখের সঙ্গে তার ভোটার কার্ড ও অন্যান্য জন্ম তারিখের কোনও মিল নেই। এই কারণে একবছর বা ছয়মাসের তফাৎ থেকে গেছে নিজের বয়সের। আমি বলবো সব সময় আধার কার্ডের জন্মতারিখ মেনে নিলে সমস্যার সহজ সমাধান হয়ে যাবে। কারও জন্মতারিখ নেই তার ক্ষেত্রে অ্যাফিডেভিড নিয়ে সমস্যা মেটানো যেতে পারে। টাকার লোভে কেউ যদি দু তিন জায়গায় দু তিন রকম জন্মতারিখ রাখেন, তাহলে ভবিষ্যতে আপনার সমূহ ক্ষতি করতে পারে।

পশ্চিমবঙ্গ লক্ষ্মী ভাণ্ডার প্রকল্পের আওতায় আবেদন করার পদ্ধতি:- লক্ষ্মীর ভান্ডারের আবেদনটি নিয়ে বাড়িতে আনার পর সমস্ত প্রয়োজনীয় নথি অর্থাৎ নিজের কাছে থাকা কাগজপত্রগুলি সংগ্রহ করতে হবে এবং এরপর লক্ষ্মীর ভাণ্ডার আবেদন ফর্মের অধীনে থাকা সমস্ত প্রয়োজনীয় বিবরণ পূরণ করা শুরু করুন। দয়া করে দুয়ারে সরকার থেকে দেওয়া নিবন্ধন নম্বর টি পূরণ করুন সবার আগে। আবেদন পত্র সংগ্রহ করার দিনে এই নম্বর ফরমে লিখে দিতে পারে, আগে দুয়ারে সরকারের ক্যাম্প হয়ে তবেই লক্ষ্মীর ভাণ্ডার ক্যাম্পে যেতে পারবেন (রেজিস্ট্রেশন করুন)।

স্বাস্থসাথী কার্ডের নম্বরটি ফরমে লাগবে। আগে থেকে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড না থাকলে, এই আওতার অধীনে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড প্রয়োজন হবে। তাই এই কার্ড না থাকলেও আবেদন করা যাবে। ফরম্ জমা দিয়ে আধিকারিককে জানাবেন আপনার স্বাস্থ্য সাথী কার্ড হয়নি। তখন অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড হবে এবং ততক্ষণ আপনার লক্ষ্মীর ভান্ডারের আবেদনটি অস্থায়ী ভাবে জমা হয়ে পড়ে থাকবে। কিন্তু স্বাস্থ্যসাথী কার্ড না থাকলেও লক্ষ্মীর ভান্ডারে আবেদন জমা করা যাবে অথবা স্থানীয় প্রশাসন এই বিষয়ে সাহায্য করতে বাধ্য থাকবেন। এই বিষয়ে নিয়ম সরকার প্রতিনিয়ত আপডেট করে সংশোধন করছে।

আবেদনকারীকে তার দেওয়া সমস্ত জেরক্স কপিতে নিজেকে স্বাক্ষর করতে হবে। ফরমে স্বাক্ষর করতে হবে। স্বাক্ষর না করতে পারলে টিপসই দিতে হবে।

ফরমে লাগবেঃ পরিবারের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নম্বর। যাদের নেই ফাঁকা থাকবে। আধার নং। আবেদনকারী সুবিধা প্রাপ্তের নাম। মোবাইল নম্বর। ইমেইল আইডি না থাকলে দেওয়ার দরকার নেই)। জন্ম তারিখ। বাবার নাম। মায়ের নাম। স্বামীর নাম। ঠিকানা। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বিবরণী। এই সমস্ত বিবরণ পূরণ করার পর এখন আপনাকে স্বয়ং ঘোষণা ফর্ম পূরণ করতে হবে। যাতে বলা আছে সবকিছু তথ্য আপনি সঠিক ও সত্য দিচ্ছেন। সঙ্গে একটি ক্যান্সেল লেখা চেকের ফাঁকা পাতা, যেখানে স্বাক্ষরের জায়গাটি ক্রস করে দেবেন, চেকের কোথাও সই-স্বাক্ষর করবেন না। একটি ছবি ফরমে মেরে দেবেন আর একটি ছবি ফরমের বামদিকে স্টেপল্ করে দিন। এইসব হলে আসল ফরম্যাট সাবধানে পূরণ করে সংশ্লিষ্ট বিভাগে জমা দিন।

এইবার আপনাদের কয়েকটি কথা পরিষ্কার করে বলছি। ফরম্ পূরণের সময় ধৈর্য ধরে লিখুন অথবা কাউকে লিখে দিতে বলুন। ফরম্ যেদিন জমা হবে সেইদিন আপনার ফোনে এস.এম.এস আসবে। তাই
ফোনের মেসেজ বাক্স বা ইনবক্স পরিষ্কার করুন।

আমার জীবনের কথা


■ অলোকের ঝর্নাধারায়
◆ (আমার টুকরো জীবন) পর্ব-১১

● মূর্তি সাহেবের কোনও পুত্র ছিলনা। আমার বাবা ও উনি দুজনে দুজনকেই স্নেহ ও শ্রদ্ধায় এতটাই কাছাকাছি করে নিলেন যে কলকাতা এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জ থেকে আমার বাবার নাম রেকমেন্ড করে তিনি আনালেন, এখনও ওই নিয়ম এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জে আছে, কারণ এটা সংবিধানে আছে। যতদিন মূর্তি সাহেব অবসর নেননি, আমার বাবা পিতার মতো তাঁকে মনে করতেন। এমনকি অফিসের বাইরে তাঁর ব্যক্তিগত কাজ পর্যন্ত করে দিতেন। ব্যাঙ্কের কাজ রেলের টিকিট কাটা এগুলো করতে পারলে আমার বাবাও আনন্দ পেতেন। ল্যাবরেটরিতে কাজ করতে গিয়ে ছেলেখেলা করলে কি ধরনের ভয়ঙ্কর বিপদ হয়
তা অন্যদিন বলবো। যাইহোক চাকরি একটা হলেও কেন্দ্রীয় সরকারের বেতন কিন্তু ভালো ছিল না তখন। তাই স্বাভাবিক ভাবেই কেন্দ্রীয় অফিসগুলোতে বামপন্থী ছাড়া কংগ্রেসের আই.এন.টি.ইউ.সি পাত্তা পেত না। অনেকেই নেহরু নীতির সুখ্যাতি করলেও নেহরু ইন্দিরার ব্যাপারে কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীরা প্রবল ক্ষিপ্ত ছিলেন। খবর কাগজগুলো কখনও তাদের সেই বেদনা তুলে ধরেনি। যাইহোক একদম যাদের খাওয়াপরা জুটতো না তাদের একটা সুরাহা হলো ব‌ইকি। আমাদের অল্প স্বচ্ছলতা এলো। সকালে বাসি রুটির বদলে এলো পাঁউরুটি। সন্ধ্যায় এলো মায়ের তৈরি সাদা ময়দার পাতলা পাতলা পরটা আর আলুর দম। এটাই আমাদের সংসারের পেটেন্ট জলখাবার হলো। আমার মায়ের রান্না তখন তেলে ঝালে গরগরে। তিনবেলা ভালোভাবে খাওয়া জুটতো না যাদের তাদের কাছে এছিল চরম পাওয়া। প্রথমেই বলেছি আমরা জমিদার ছিলাম। প্রজাদের আনা বিলে তখন বছরে পাওয়া যেত তিনটাকা, তাও অনেকেই খাজনা দিতেন না। সেইসব জড় করে ৫ ভাগ আর কটাকা। অন্যরা প্রজাদের জমি বিক্রি করতে পারলেও আমাদের যারা প্রজা ছিল তাদের স্বত্ব না থাকলেও সরকারি কর্মচারি ও অফিসাররা কয়েকলক্ষ টাকা ঘুষ চাওয়ায় আমাদের ওইজমি পড়ে আছে প্রজাদের কাছে। আমাদের নয়, সরকারের নয় ভোগদখলকারীদের‌ও নয়। যা আইন তাতে আমরা কিছু না পেলেও ভবিষ্যতে কারা ওই জমি পাবে সরকার জানেনা। আমরা আশা করিও না। যাইহোক বাবার চাকরির ফলে কিন্তু আমাদের তখন আনন্দের দিন। প্রতিদিন সন্ধ্যায় মূর্তি সাহেবের গল্প শোনা আমাদের সংসারের একটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। এক অনাত্মীয় যে, এইভাবে একটা সংসারের কাছে দেবতা হয়ে উঠতে পারেন তা শুধুমাত্র আমরাই জানতাম। কাছের রক্তমাংসের মানুষের থেকেও যে দূরের একজন প্রকৃত আপনজন হয়ে উঠতে পারেন তার প্রমাণ আমরা পেয়ে গেলাম। জন্মদাতা পিতার উপেক্ষিত সন্তান মধ্য বয়সে এসে তার বাবা খুঁজে পেয়েছিলেন। একজন অপরিচিত দক্ষিণ ভারতীয় আমাদের কাছে হয়ে উঠেছিলেন মহাদেবতা। তবে উনি কখনও আমাদের বাড়ি আসেননি। আমার মা, লক্ষ্মী-ঘিয়ের পরটা ও আলুরদম পাঠাতেন ড.মূর্তির জন্য। নিরামিষ ভালো রান্না হলে আমার বাবার এই পিতার জন্যে তাও প্রায়ই যেত। তার সঙ্গে অন্যান্যদের জন্যে সেই যে পরটা আলুরদম লুচি পাঠানো শুরু হয়েছিল তা বাবার চাকরি জীবনে কখনও ছেদ পড়েনি। যতদিন না আমার বাবা অবসর নিয়েছেন ততদিন আমার মায়ের হাতের সাদা ময়দার পরটা আর আলুরদম, ধোঁকার ডানলা, ঘুঘনি জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার অনেকেই খেয়েছেন। স্বনামধন্য শৈলেন মান্না অন্য ডিপার্টমেন্টে চাকরি করতেন এবং হাওড়ায় আমাদের বাড়ির কাছে তাঁর বাড়ি হ‌ওয়ায় আমার বাবাকে শৈলেন মান্না চিনতেন। মাঠে ঢোকার জন্য তখন বড় বড় খেলোয়াড়রা সাদা কাগজে স্বাক্ষর করে মাঠে ঢোকার পাশ করে দিতে পারতেন। কত বিশ্বাসযোগ্যতার ওপর চলতো দুনিয়া। শৈলেন মান্নার কাছ থেকে সেই পাশ নিতে বাবা বাড়িতে এবং অফিসের টেবিলে প্রায় যেতেন। একদিন ইয়ার্কি করে তিনি বললেন, ''কি রে কুন্ডু, খালি মাঠে ঢোকার স্লিপ দাও মান্নাদা, আর পরটা খাবে অন্যরা সবাই।" এরপর এক দুদিন শৈলেন মান্নার জন্যেও ওই খাবার গিয়েছিল। পরে শৈলেন মান্না বারণ করেছিলেন। মোহনবাগানের আর এক ফুটবলার কম্পটন দত্তরাও ওই অফিসে কাজ করতেন। বয়সে অনেক জুনিয়র, কম্পটন দত্তর জন্য তো প্রায় রোজ টিফিন যেত। শেষে মা আর অত পারতো না। রাগারাগি হয়ে যেত। তারপর ঠিক হলো সপ্তাহে এক‌আধ দিন ৩০/৪০ টা করে পরটা যাবে সঙ্গে ১৫ জনের আলুর দম। তবে আপনারা যারা নেহরু ও ইন্দিরাগান্ধীর অর্থনৈতিক উন্নয়নের কথা বলে পাগল হয়ে যান। ওই দুজনকে আমার বাবা কিন্তু রীতিমতো ঘেন্না করতেন। ১৯৮৩ সালে আমার বাবা অবসর নিয়েছিলেন তখন‌ও কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারিদের বেতন খুব একটা ভালো ছিলনা। যারা টি.এ পেতেন বা ট্যুর করতেন তবু তারা ভালোভাবে সংসার চালাতে পারতেন। বাবা মাইনের সমস্ত টাকাটাই মার হাতে তুলে দিতেন। নরসিমা রাও ও মনমোহন সিং না এলে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারিরা দীনদরিদ্র হয়ে চিরকাল থাকতেন। তবে পরে আমার বাবা ও মা ভালো পেনশন ও পারিবারিক পেনশন পেতেন। ( ক্রমশ:) অলোক কুন্ডু । ২৯/৯/২০।।

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...