শুক্রবার, ২ আগস্ট, ২০১৯

দুটো স্থান থেকে অমরনাথ যাত্রা শুরু হয় (১) পহেলগাম (২) বালতাল । বালতাল থেকে কাছে হলেও খুব চড়া পথ , কষ্টকর । ঘোড়ারা সিধে ওঠে এবং যে বসে থাকে তার অবস্থা প্রাণান্তকর। জম্মু থেকে রেজিস্টার করাতে হয় কোন পথে বাস বা গাড়ি যাবে । প্রায় লক্ষাধিক জ‌ওয়ান পাহারায় একসঙ্গে বাস ও গাড়ি ছাড়ে । ৪/৫ টা গাড়ি প্রতি এসকর্ট ভ্যান । টোটাল বিষয়টি কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয় । জম্মু থেকে পহেলগাম বা বালতালে আলাদা আলাদা করে মোড় পরবে যতগুলো গলি মোড় পরবে সেখানে বাড়ির ছাদ থেকে মোড়ে মোড়ে থিক থিক করছে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র হাতে জ‌ওয়ানরা ২৪ ঘন্টা ডিউটি পাহাড়ের উঁচু থেকে নীচে সর্বত্র ছয়লাপ সামরিক বাহিনীর জ‌ওয়ানে । বড় বড় মোড়ে কাশ্মীরী পুলিশ তার সঙ্গে । পথে হাজার হাজার স্থানীয় লোকজন আটকে , গাড়ি আটকে বাসস্ট্যান্ডে স্টপে শয়ে শয়ে লোক দাঁড়িয়ে । গলির মুখে উল্টোদিকে তাক করে জ‌ওয়ানদের প্রহরা একদম টানটান নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় মোড়া । চোখে দেখে এলাম কারণ আমাদের তিনটি বাস‌ও ওই দলে চশমেশাই থেকে ঢুকে গিয়েছিল তাই নিস্তার পেয়েছিলাম আমরা । কিন্তু যখন মাঝপথে আমাদের তিনটি গাড়ি আমাদের খাওয়াদাওয়া করানোর জন্য একটা ধাবায় স্ট্যান্ড করলো সঙ্গে সঙ্গে জ‌ওয়ানরা এসে আমাদের গাড়ি ঘিরে ফেললো পুলিশ । ড্রাইভারকে অনেক বোঝাতে হলো যে তারা অমরনাথ যাত্রী নয় । শেষে স্থানীয় জনগণ বোঝাতে এবং গাড়িতে কোনও স্টিকার নেই পরীক্ষা করে তারপর ছাড় দিল । সদ্য দেখে এলাম কাশ্মীরকে । প্রথম দেখা অবশ্য যখন কাশ্মীরের সঙ্গে আমার বিয়ের দুবছর বাদে । তখন সবে কাশ্মীরকে দেখছি । ভয়ে কাশ্মীরের হোটেল ফাঁকা । আমরা দুজনে লোকাল বাসে করে ঘুরেছি । যখন যেমন মনে হয়েছে নেমে পড়েছি । চশমেশাইয়ের পথটা ডাল লেকে লোকাল বাসে নেমে হাঁটতে হাঁটতে গেছি । ট্যুরিস্ট বলতে আর‌ও দু চারজন । থেকেছি একেবারে মুসলমান হোটেলে । আন্তরিক ব্যবহার যা কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ দিয়েছিল তা আজ‌ও অম্লান । একমাত্র কাশ্মীরেই এরকমটা হয়েছিল ‌। শীতের জিনিস কিনে ঠকে গিয়ে অন্য দোকানদারদের প্রচেষ্টায় ঠকা টাকা ফেরত পেয়েছি । কোথায় ছিল তখন সিআরপিএফ নিরাপত্তা কেন নিতে হবে বুঝতে পারিনি । তখন সবে শুরু হচ্ছে কাশ্মীরে একটা থমথমে ভাব । ট্যুরপার্টি নেই । ট্যুরিষ্ট নেই । একঘন্টা ধরে হোটেল খুঁজে ফিরে এসে দেখি আমার স্ত্রী কেঁদে ভাসিয়ে ফেলেছে , অনেকটা দেরি করেছি ফিরতে । তার আগে ১২ ঘন্টার জম্মু থেকে শ্রীনগর বাস জার্নি হয়েছে । কিন্তু তার পরেই কদিন আমরা দিব্যি ঘুরেছি । এখনও টুকরো টুকরো কাশ্মীরী খেলনায় ভর্তি হয়ে আছে আমার আলমারি । শিকারাকে যেমন বলেছি তেমনি ঘুরিয়েছে । ডাল লেকের ধারে গিয়ে বসেছি দু তিন দিন । পথের ধারের মার্কেটে। এবারে বহুকাল পরে সেই কাশ্মীরে নিজের দ্বারায় আর যাওয়া সম্ভব হলোনা । গেলাম ডলফিন ট্রাভেলের সঙ্গে , ওদের মালিক তখন রক্তিমবাবু ডাললেকের হোটেল প্যারাডাইসে উপস্থিত ,অমরনাথ যাত্রায় ওনাদের সঙ্গে একটা দল গেছে । আজ দেখলাম আনন্দবাজার ওনাকে উল্লেখ করেছেন । আমি অমরনাথে যাইনি আমাদের যাত্রাপথ তো লাদাখ । লাদাখের পথে অমরনাথের একটি ৩০/৩২ টি বাসযাত্রীদের বিশাল কনভয়ের সঙ্গে আমাদের ড্রাইভাররা ডাললেকের কাছে যে বাইপাস আছে চশমেশাই যেতে ওখান থেকে একেবারে শেষে ঢুকিয়ে দেয় ,ওই দলের মধ্যে যদিও অমরনাথে যাওয়ার গাড়ি আসছে জম্মু থেকে বিভিন্ন ক্যাম্প পেরিয়ে । এইসব যাত্রীদের বাস উত্তর প্রদেশের দক্ষিণ ভারতের । তার মাঝে মাঝে বম ডিজপোজাল ভ্যান,জ্যামার লাগানো গাড়ি , আগেপিছে ১০/১২ খানা জিপে এস‌এল‌আর হাতে আধা সামরিক জ‌ওয়ানরা ও সঙ্গে কাশ্মীরী পুলিশ । দৌড়াদৌড়ি । সংবাদ সংস্থার গাড়ি । কোনও গাড়ি থেমে গেলে তাকে ঘিরে ফেলছে সামরিক বাহিনীর জ‌ওয়ানরা , ওই সময় কয়েকটি বাস টপকে আমাদের ড্রাইভারাও এগিয়ে যেতে থাকে ওভারটেক করে । থামলে তবেই বোঝা যাবে আমাদের গাড়ির সামনে পিছনে স্টিকার নেই , আমাদের পেছনেও ৪/৫ টা গাড়ি ঢুকে গেছে কারণ আগের গাড়ির ড্রাইভাররা চলেছে আধা সামরিক বাহিনীর নির্দেশে । আমরা চলেছি লোকাল ড্রাইভারদের চেনা রাস্তায় । পথে যেতে এই গাড়ির দল থেকে যেই তেল নেওয়ার জন্য একটা গাড়ি পাম্পের ভেতর ঢুকে গেছে তখনই তাকে নিরাপত্তায় মুড়ে দাঁড়িয়ে গেছে গাড়ির সারি । সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতির ভিডিও তুলছে পুলিশের টিম । মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক আটকানো । বাড়ির মাথায় গলির লাগোয়া রাস্তায় থরে থরে অস্ত্র হাতে জ‌ওয়ান , স্যাটেলাইট ফোন , ব্যারিকেড দুধারে সাধারণ পথ চলতি মানুষকে প্রায় বন্দীর মতো করে আটকানো । ছবি ভিডিও তুললেও সেগুলো ভারতের নিরাপত্তার খাতিরে দেওয়া গেলনা । এমনকি আমাদের গাড়িও একবার ঘিরে ফেললো যখন মাঝপথে আমাদের গাড়ি একটা ধাবায় ঢুকলো । এই সব সারি সারি দৃশ্যের সামনাসামনি হ‌ওয়ায় অবাক হ‌ওয়ার মতো বিষয় থাকলেও ভয়ের একটা স্রোতের মধ্যে ততক্ষণ ছিলাম যতক্ষণ ওই অমরনাথ যাত্রীদের বাসের কনভয়ে ছিলাম। তারপরেও আমরা পরে বালতালের আগে পর্যন্ত সোনমার্গের হোটেলে যতক্ষণ পর্যন্ত না ঢুকলাম ততক্ষণ দেখতে দেখতে চলছি পথের দুপাশের নিরাপত্তা । কারণ ধীরে ধীরে ট্রাফিক কমে গেলেও সারসার দাঁড়িয়ে জ‌ওয়ানদের দল । এমনকি সন্ধ্যায় যখন একটু রাস্তায় বেরিয়েছি তখনও জ‌ওয়ানরা দূরে দাঁড়িয়ে । এই গার্ড সারাদিন সারারাত চলবে অমরনাথ যাত্রার জন্যে । ভারতবাসীর ধর্মীয় এহেন মাসাধিক ধরে এই আচরণ আমার খারাপ লেগেছে বৈকি । কারণ এইসব কারণে জ‌ওয়ানদের যে পরিমাণ কষ্টসাধ্য অবস্থায় কাটাতে হয় । পথ থেকে বনবাদাড়, মোড় থেকে বাড়ির মাথায় ২৪ ঘন্টা ধরে এই নিরন্তর পাহারা দিতে হয় তা মেনে নেওয়া যায় না । লক্ষ লক্ষ মানুষ অমরনাথের যাত্রী । এই ধর্মীয় আচরণ জুনের শেষ থেকে শুরু হয়ে মধ্য আগস্ট পর্যন্ত চলে অবশ্যই বড় বড় মঠ মিশনের ক্যাম্পগুলো মাসাধিক সময় শতশত ভলান্টিয়ার দিয়ে বালতাল ও পহেলগামের কাছে ক্যাম্প চালায় । লক্ষ লক্ষ মানুষ যায় হেলিকপ্টারে , ডান্ডিতে হেঁটেও যায় হাজার হাজার মানুষ । ঘোড়ায় যায় । প্রথম একমাস বড় বড় মঠ-মিশন এই যাত্রীদের সেবায় হাজার হাজার ক্যাম্প করে থাকেন । এই উপলক্ষে কাশ্মীরীদের একটা অর্থনৈতিক আয় বাড়ে । হোটেল ব্যবসা এই একটা সময়েই বিশাল লাভ ওঠায় । সত্যি যদি অমরনাথ যাত্রীদের জন্য নিরাপত্তা এক নম্বর কারণ হয়ে ওঠে তাহলে এটা কাশ্মীরের জনগণের কাছে এক বড় অর্থনৈতিক বিপর্যয় নেমে আসবে ।

বৃহস্পতিবার, ১৩ জুন, ২০১৯

বিশ্বকাপ বিশ্বকাপ / আলোক কুন্ডু

বল প্লেয়ার বিশ্বকাপার
দেখতে যদি চাও
সটান একটা এরোপ্লেনে
সেন্ট পিটার্সবার্গ যাও ।
লেভা-লেনা নদীর ধারে
দাঁড়াও যদি গিয়ে
স্বর্গীয় সুখ ব‌ইছে ধারায়
স্বপ্নের মাঝ দিয়ে ।
গিয়ে দেখবে দাঁড়িয়ে আছে
হাজার ইতিহাস
লেনিন-স্টালিন-পুতিন ছাড়াও
সংস্কৃতির চাষ ।
লাগবেনাকো ভিসা-পাশপোর্ট
লাগবে না আধার
সঙ্গে যদি শান্তির বাণী
সদাই থাকে তোমার ।
মাঠের মধ্যে লড়াই তখন
গোলের পর গোল
আসলে তা প্রতিযোগিতা
শান্তির আদল ।
বলের বাউন্স লম্বা পাশের
নয়নাভিরাম কিক
জাতীয় সংগীত উঠবে গেয়ে
বিশ্ব নাগরিক ।
চার তিন তিন, দুই চার চার
এসব জ্যামিতি
কোনো কালে মিলবেনা ভাই
এমন পরিমিতি ।
গেম ট্যাকটিস দারুন দৌড়
হেডিং শেভিং টাচে
মনে রেখো এই খেলাতে
কালো ঘোড়াও আছে ।
ব্যাকভলিতে মেসির বল
ছিঁড়বে যখন জাল
ফ্রিকিকেতে নেইমারের
মাতাবে সাম্বাতাল ।
কখন কোথায় এসব হবে
অঘটন বা চাওয়া
জ্যোতিষরা সব ফেলের দলে
বিফল তাদের গাওয়া ।
কোথায় যাবে কারা নেবে
সোনালী ওই কাপ
সারা বিশ্বের উন্মাদনায়
তেইশ দিনের চাপ ।
বত্রিশ দল পাঁচ মহাদেশ
ঝাপায় কাপের জন্য
ভারতের নাম নেই সেখানে
তবুও ন‌ও নগন্য ।
বিশ্বের কবি রবিঠাকুরের
রাশিয়ার চিঠি পড়ো
বিশ্বকাপের স্বপ্ন বুনে
হীনমন্যতা ছাড়ো ।

বৃহস্পতিবার, ৩০ মে, ২০১৯

১৯৭২ সালে সির্দ্ধাথশঙ্কর রায় সরকার বিপুল ক্ষমতা নিয়ে এসেছিল  পুলিশকে কাজে লাগিয়ে । সরকার পরে পুলিশকে কাজে লাগিয়ে নিজের এম‌এল‌এ-কে অবধি ডেকে ধাতিয় ছিল । ভুষি কেলেঙ্কারি তে কেস দিয়েছিল। দু দল যুব কংগ্রেস ।
দু দল কংগ্রেস ,দু দল আইএনটিইউসি/এন‌এলসিসি এবং দু দল ছাত্র পরিষদ / শিক্ষা বাঁচাও কমিটি নিয়ে কলেজে কলেজে মারপিট, পাড়ায় পাড়ায় মারপিট, খুন-জখম , মিছিল । বামপন্থীরা দলে দলে ভিড়ে ছিল পুলিশের ভয়ে । স্কুল কলেজে মিউনিসিপ্যাল নির্বাচন বন্ধ করে দলীয় শাসন কায়েম হয়েছিল । প্রশাসন ঝুরঝুরে হয়ে গিয়েছিল । আমি তখন যুব কংগ্রেসের একটি গ্রুপে ছিলাম এবং এমারজেন্সির ফলেই যে কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়ে যায়
তা কিন্তু নয় । পশ্চিমবঙ্গে অন্তত কংগ্রেসের কাজকর্ম জনগণের পছন্দের ছিল না ।
তার আগেই ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে ছিল --ব্যাঙ্ক
জাতীয়করণ, কয়লাখনি জাতীয়করণ
এবং গরিবি হঠাও । তবু সারাদেশে কংগ্রেসের ভাঙন দল রুখতে পারেনি ।
সৌগত রায় কংগ্রেস থেকে জোটে গিয়ে
মন্ত্রী হয়েছিলেন ব্যারাকপুর থেকে জিতে ।
বহুগুনা চন্দ্রশেখরের মতো হেভিওয়েট
কংগ্রেস ছেড়েছিলেন । একবছর বাদে
চিকমাগালুর থেকে ইন্দিরা গান্ধী একা
কংগ্রেসের এম পি ছিলেন , হয়তো আর‌ও
দু চারজন থাকতে পারেন কিন্তু তা মনে পড়ছে না। এক প্রকার কংগ্রেস, ধুয়ে মুছে গিয়েছিল । কিন্তু এখানকার নির্বাচন
পদ্ধতি ত্রুটিপূর্ণ হ‌ওয়ার ফলে যার শুরু
বাম আমলে হয়েছিল , ফলে আজ পর্যন্ত কংগ্রেসের অবস্থান এই কারণে এবং কিছু অন্য কারণে রাজীব গান্ধীর সময় ছাড়া পশ্চিমবঙ্গে কংগ্রেস আর ফিরে দাঁড়াতে পারেনি এজন্য ---কংগ্রেসের থেকে বেশি দোষ নির্বাচন কমিশনের । এখন
প্রেক্ষাপট আলাদা প্রত্যন্ত গরিবের কাছেও হোয়াট‌সঅ্যাপ বা ফেসবুক আছে মানুষ এখন অনেক বুঝদার । ট্রোল হ‌ওয়া জিনিস তার পরিবেশনে মানুষ আনন্দ পায় ।
গরীব জানে সে কোনও দিন এসিতে থাকতে পারবে না , তার কোনও দিন ফ্ল্যাট হবে না , রেস্টুরেন্টে সে কোনও দিন ঢুকতে পারবে
না । তার কাছে রাজার হারের আনন্দের থেকে বেশি আনন্দ আর কিছুতেই নেই ।
এই নির্বাচনের যখন তিন মাস আগে বিজেপি ভ্যান পাঠিয়ে প্রতি জেলা শহরে ১৫/২০ মিনিটের -"পোস্টকার্ড ডালো ক্যাম্পেন" করে তাতে আমি দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করি শয়ে শয়ে মানুষ ১৫ মিনিটের মধ্যেই তাদের ভোট বিজেপির বাক্সে দিয়ে দিয়েছিল । এই ক্যাম্পেন এত হঠাৎ ও চুপিসারে হয়েছিল যে আর কোনো দল এর টের‌ই পায়নি । তাতে বিজেপি যেমন জানতো তেমনি আমার মতো সাধারণ
মানুষ‌ও বলেছিলাম এক দেড় মাস আগে
৩০-৯-২-১ । কংগ্রেস ছাড়া আর কোনো
হিসেবে যদিও মেলেনি আমার , কিন্তু আমি আভাস তো নিজের মাথা থেকে বের করিনি , মানুষ চাইছিল। তাতে কেউ
বলছেন ধর্মীয় ভোট, কেউ বলছেন বাম ভোট । আশ্চর্য কেউ কিন্তু বলছে না কংগ্রেসের ভোট ও তৃণমূলের ভোট ।
এখন কিন্তু দিন দিন স্পষ্ট হচ্ছে তৃণমূলের
ভোট‌ও বিজেপিতে গেছে । সকলেই উপলব্ধি করতে পারছে যে ভোট একবারে ফেয়ার হয়নি , কারণ প্রচুর বুথের ভিডিও আসছে সেই মতকে আর‌ও জোরালো করে তুলছে । সে যাই হোক ভোটের হাওয়া পরিষ্কার বোঝা গেছে । আবার এদিকে ভোটের পর এত দ্রুত জায়গা বদল হচ্ছে যে জনগণ ঘাবড়ে যাচ্ছে আর‌ও বেশি । এই সময় একদিকে পুলিশের উপর আর সরকারের মুক্ত অবাধ ক্ষমতা নেই তারাও চাকরি বাঁচাতে তৎপর । প্রশাসনের ব্যাপক বদলি। হঠাৎ এস‌এসসি নিয়োগে তৎপরতা । বিদ্যালয় খুলে দেওয়া এইসব নিয়ে প্রচুর ট্রোল হচ্ছে । তবে উন্নয়ন
কি ? উন্নয়ন ছিলনা ? এইসব জটিল প্রশ্নে
মানুষ দ্বিধান্বিত। গ্রামে গ্রামে এত বিপুল
পরিমাণে ক্যাডার থাকায়‌ও কীভাবে তৃণমূলের অফিস হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে ?অফিস ফিরে পেলেও কেউ কী সাহসের সঙ্গে সেই অফিস রোজ খুলবে ?  এইসব জটিল প্রশ্ন ট্রোল হচ্ছে । ভদ্র পোশাক
পরেও , " মিমি ও নূসরাত" ঠিক এক‌ই কারণে তারা মিছিমিছি ট্রোল হচ্ছেন । দলকে দল একদল থেকে অন্য দলে চলে যাচ্ছেন এবং মুখ্যমন্ত্রীকে ধর্ণায় বসতে হচ্ছে ! সব মিলিয়ে ভোটার, জনগণ, পক্ষ বিপক্ষ সকলেই দিশেহারা । ঠিক এইরকম দিশেহারা অবস্থান হয়েছিল ১৯৭২-৭৭ এ এখানে । কে যে কাকে কী করবে সরকারের এম‌এল‌এরাও তখন বুঝে উঠতে পারতো না ‌।  এখন এইখানে জনগণ ভোটের পরে শান্তি চেয়েছিল । কিন্তু
চতুর্দিকে একটা কী হবে কী হবে ভাব ।
বেশি ভাগ ভোটার শান্তি চায় । প্রশাসনের
গতি প্রকৃতি দুড়দাড়িয়ে ৫ বছরের কাজ
১ বছরে করতে গেলে ভুলভ্রান্তি হতে পারে
এটা শাসকদের মনে রাখা উচিত । হটকারী
সিদ্ধান্ত বিজেপি যা নিচ্ছে এবং তারপর
রাজ্য সরকার‌ও হঠকারী সিদ্ধান্ত নিলে
সবকিছু ট্রোল হবে । ফেসবুক হোয়াটস‌অ্যাপ চলতেই থাকবে এবং নেগেটিভ প্রচার আর‌ও বাড়তে পারে ।
যেকোনও ঘটনা দু মিনিটের মধ্যে উত্তর থেকে দক্ষিণ বঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে । কারণ মানুষ আজ তীক্ষ্ণ বিচার বিবেচনা সে নিজেই করতে পারে , ফেসবুকের দৌলতে। এখনও দু পক্ষের সময় আছে হঠকারী সিদ্ধান্ত সামলে নেওয়ার । তা না হলে জনগণ সেই সিদ্ধান্ত ফেরাবে ব্যালটে ।
এর পরের ভোট আর‌ও টাইট হবে এবং
জনগণ রাজার পরাজয় দেখতে
ভালোবাসে ,এই আপ্তবাক্যটি মনে রাখা
জরুরি ।

শনিবার, ১৮ মে, ২০১৯

Poetry of Alok Kundu

সত্যের আলো ছড়িয়ে পড়বে জীবনে

অলোক কুন্ডু

রকমারি আলো তোমাকে চিনতে হবে
আলোর খেলায় দিশেহারা হতে পারো
বিপদের আলো দিশাহীন বাঁক নেবে
আলোর ভেলকি শুধুই সাজানো শব ।

গোটা আকাশটা যতটুকু আলো দেয়
সেইটুকু আলো চিরকাল এক সত্য
যার তার কাছে খুঁজতে যেওনা আলো
ভন্ডের আলো ঝলমলে রোশনাই ।

কে আছে এমন আলোর ঝর্ণাধারায়
এসে দাঁড়াবে আলোর মানুষ স্বরূপ
সঠিক মানুষকে চিনতে পারো যদি
সত্যের আলো ছড়িয়ে পড়বে জীবনে ।

বুধবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

সোহরাব্রিজ সিনেমার আলোচনা ©®অলোক কুন্ডু

গতকাল নন্দনে বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়-এর (২৬-২-১৬) " সোহরা ব্রিজ " রিলিজ
করলো প্রিমিয়ার-শো । বাংলা চলচ্চিত্রের
অন্যধারার ছবির নির্দেশক বাপ্পাদিত্য দেখে
যেতে পারেননি তাঁর এই ছবির প্রিমিয়ার শো ।
তাই তার বন্ধুরা শোকমগ্নতায় করলেন তারই
আলোচনা । যা করাটাই স্বাভাবিক ছিল ।
উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী ব্রাত্য ব্সু । একালের
প্রখ্যাত নায়ক-অভিনেতা প্রসেনজিৎ
চট্টোপাধ্যায়ও উপস্থিত ছিলেন । কাল একে
বৃষ্টি এবং তার সিনেমার পরিচালক সদ্য প্রয়াত
হয়েছেন । কে প্রিমিয়ারটা প্রেজেন্ট করবেন
সে নিয়ে দ্বিধা থাকলেও জড়তা ছিলনা ।
এই গত নভেম্বরেই ঘুরে এসেছি চেরাপুঞ্জি ।
আসলে চেরাপুঞ্জির আসল নামই--সোহরা ;
এটা জেনেছিলাম ওখানে গিয়ে । মেঘালয়ের
সাব-ডিভিশ্যনাল টাউন " সোহরা " কে ১৮৮৩
তে বৃটিশরা চেরাপুঞ্জি রূপে দখলে নেয় ;
ভারতের ইস্ট খাসি হিলস্ কেই সোহরা নামে
খাসিরা আজও ডেকে থাকে । পৃথিবীর ইতিহাসে এখনও চেরাপুঞ্জির বিশ্ব রেকর্ড বৃষ্টিপাত
( ১৮৬১ এর জুলাই থেকে ১ লা অগস্টের
বৃষ্টিপাত ) । আসলে ( So-har-a  কে )
বৃটিশরা উচ্চারণ করে  ' CHURRA '
তে রূপান্তরিত করেন । চেরাপুঞ্জিকে
Land of Oranges বলা হয় । চেরাপুঞ্জিতে
একঘর বাঙালি থাকে তারা কিন্তু খ্রিস্টান
সম্প্রদায়ের তারা এসেছিলেন বাংলাদেশের
সিলেট । ওপারেই সিলেট । অসম-
মেঘালয়জুড়ে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশ
বৃটিশদের আসার আগে থেকেই হয়ে আসছে ।
আমি গত নভেম্বরে চেরাপুঞ্জির 
" কনিফেরাস রিসর্টে " উঠেছিলাম । ওই রিসর্টে
প্রতি বছর একদল সাহেব-মেম জার্মানী থেকে
১২ চাকার দো-তলা বাস নিয়ে ১২/১৪
জন বিদেশী আসেন বৃষ্টির বিভিষিকা দেখতে ।
সে কথা অন্য ব্যাপার । যদি আপনারা বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের SOHRA BRIDGE দেখতে
গিয়ে বৃষ্টিপাত খুঁজতে চান ,
তাহলে কিন্তু তা পাবেন না । ট্যুরিস্টরা
চেরাপুঞ্জিতে গিয়ে রাত কাটান না । লোকাল
ট্যুর করে চলে আসেন । দেখেন - গুহা , সিলেট ,
পাহাড়ি রাস্তা  , রামকৃষ্ণ মিশন ইত্যাদি ।
কিন্তু চেরাপুঞ্জির আসল বিষয় হলো - এখানে খোলামুখের কয়্লা খনি ;  শিল্পের অন্যতম
অনুঘটক চুনাপাথর বৃটিশরা আবিষ্কার
করেছিল এখানে । বৃটিশদের তৈরি ঘোড়ায়
চড়া পথ এখনও আছে সোহরাতে ;
চেরাপুঞ্জিতে । পথ চলে গেছে সিলেট । 
যেখান থেকে হয়ে আসছে দীর্ঘ অনুপ্রবেশের
কাহিনী । বাপ্পাদিত্য তার এই চলচ্চিত্রে সেই
কাহিনীকে মূল ফোকাস পয়েন্ট করেছেন ।
কিন্তু কাহিনী এখানে চলচ্চিত্রের মেজাজকে
ধরেছেন - অন্যধারার প্রেক্ষাপটে ।
বহুদিন আগে " দ্য মিস্ট " নামের জাপানি
একটি চলচ্চিত্র দেখেছিলাম । কুয়াশা আর
ছবির নায়িকা জুড়ে ছিল সেই চলচ্চিত্রটি ।
এই ছবির পরিচালক সেই বিদেশী ছবিকে
একেবারেই কপি করেননি । চেরাপুঞ্জিতে
বিদেশীরা আসেন ( গোয়াতেও বিদেশীনিরা
আসেন এবং কোটিপতি বিদেশীনিরা তাদের সেক্সচ্যুয়াল স্যাটিসফ্যাকশন-এর জন্য
এদেশের কিছু যুবককে টাকা দিয়ে
একমাসব্যাপি ভাড়া করেন । এমনকি এইরকম
ভাড়া খাটতে বেশ কিছুদিন আগে কলকাতার
একটি ছেলে বেশ ডলার কামিয়েছিলেন ।
এরকম একজনের সঙ্গে আমার বছর কুড়ি
আগে সারারাত রেলের টিকিটের লাইনে
আলাপ হয়েছিল এবং সেই গল্প শুনেছিলাম ।
তখন অবশ্য সেই যুবক বিয়ে থা করে থিতু
হয়েছিলেন ) এরকমটা যে ভারতের আর
কোথাও হয়না তা কে বলতে পারে ? এই
বিষয়টিকেও এই সিনেমার একটি মুখ্য
অবলম্বন হিসেবে দেখা গেছে । যার জন্য
একটু সেক্সচ্যুয়ালিটি এসেছে খুব নগন্যভাবে ।
আর যাই হোক বাপ্পাদিত্য বাঙালিকে সাবালকত্ব শিখিয়ে গেছেন । কিন্তু এই " সোহরা ব্রিজ  "
সিনেমাটি প্রকৃত অর্থে কাহিনী উপ-কাহিনীর
থেকে বড় ব্যাপার আমার মনে হয়েছে এই
ছবিটি যেন সিনেমাটিক পেইন্টিং । আরো
ভালো করে বলি কথাটা । সিনেমা যে একটি
ভিস্যুয়াল আর্ট এবং অ্যাপ্লায়েডআর্টের মতো
-সোহরা ব্রিজ দেখতে দেখতে আমার সে
কথাই মনে হয়েছে । টাইটেল থেকেই যার শুরু
হয়েছে । চিত্রনাট্য ছাড়া সিনেমা হয়না ।
কিন্তু কথা-বার্তা অত্যন্ত কম সেই চিত্রনাট্যের
পরতে পরতে । এতদিনে বাপ্পাদিত্য বুঝি
বোঝাতে চেয়েছিলেন শুধু মুখে ভারতের
অখন্ডতা বললেই তা অখন্ডতা হয়ে যায়না।
এখানে প্রয়োজনে যেখানে অসমিয়া
( অহমিয়া ) ভাষার যেখানে খাসি ভাষার
প্রয়োজন এবং ইংরেজি উচ্চারণ রাখা দরকার
সেখানে সেটাই অবিকল ব্যবহার করেছেন ।
তাই এই সিনেমা অসম ( অহম)  মেঘালয়েও
দর্শক পাবে । সিলেট থেকে কীভাবে রোজ
রাজনীতির হাত ধরে খুল্লামখুল্লা টাকা-ডলারের
হাত ধরে এপারে ( ওদের কথায় বাঙালিরা
আজও বিদেশী) লোক ঢুকছে সেই আগুনের
মতো বিষয়্কেও এই ছুঁয়ে গেছে । ছবিটি মুখ্যত
সিঙ্গল ক্যারেকটরের ফিল্ম । একটি মেয়ে রিয়া । কনভেন্টে পড়া । তার পিতা লেখক সন্দীপ
চট্টোপাধ্যায় কলকাতা ছেড়ে এবং রিয়ার
মাকে ছেড়ে এক অসমিয়া নারীর কাছে চলে
এসেছেন । সময়কাল নকশাল মুভমেন্ট
থেকে সন্ত্রাসবাদের কথা আছে । এমন কিছু
ডায়লগ আছে যা শুনে মনে হতে পারে যারাই
সরকারে ছিল এবং আছে তাদের
প্রত্যেককে বাপ্পাদিত্য বার্তা দিয়ে গেছেন ।
সে বার্তা পড়তে জানলে সরকার ও দলের
রাগ হবে কিন্তু বাপ্পাদিত্যের বলায় তেমন স্পষ্ট
রাজনীতি নেই । কিন্তু ষা আছে যা আমি
ও আমার স্ত্রী গত নভেম্বরে গোটা একদিন ধরে
ঘুরে ঘুরে দেখে এসেছি সেই  মানুষসমান দীর্ঘ
চেনা নভেম্বরের পোড়া ঘাসের জঙ্গল ।
কয়লা-চুনাপাথর শ্রমিকদের ছেড়ে যাওয়া
কালো কালো পোড়া বাড়ি । সরু পিচের রাস্তা ।
ছোটো পাহাড়ের কোল ঘেঁষে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সিম্বলিক এলোমেলো ক্রস যা আসলে খাসি
সম্প্রদায়ের কবরস্থান । যে রকমটি নির্জন
চেরাপুঞ্জিকে বাপ্পাদিত্য দেখিয়েছেন - সোহরা
আসলে সেই রকম একদম । আমিও সেই
চেরাপুঞ্জিকেই দেখে এসেছি । নায়িকা বা মূল
চরিত্র সারা চেরাপুঞ্জির ফাঁকা রাস্তায় ঘুরে
বেড়িয়েছেন কিন্তু তিনি আসলে তার কলকাতা
ত্যাগী লেখক পিতাকে খুঁজতে এসেছিলেন ।
বিশাল ফ্রেমে সেই সব অবাক নিসর্গকেও
বাপ্পাদিত্য দর্শকের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন
ক্যামেরার কারুকাজে । এই ছবির ক্যামেরা
লোয়ার রিয়ার অ্যাঙ্গেলে প্রথমে স্থির থাকে
মিনিটব্যাপি ধীরে ধীরে অনেকটা পরে বাঁক নিতে
থাকে খুব কাছ থেকে । মনে হয় থ্রি ডি মুভি
দেখছি না তো । এই সিনেমার এডিটিং প্রচুর জাম্পকাটের ব্যবহারে ছবির স্পিডকে ধরে
রাখতে সাহায্য করেছে । ছবির মিউজিক
খাসিয়াদের রূপককে কখনও তুলে ধরেছে
তো কখনও তার সুর দক্ষিণ আমেরিকার
লোক সংগীতের আঙ্গিকে । কখনো সুরকার
দু- একটি মাত্র যন্ত্রানুষঙ্গের ব্যবহারে তার
জাত চিনিয়েছেন । এত কম কথা । স্বল্প উপ
কাহিনী । পিতা-পুত্রির এক সামান্য গল্পকে
এই সিনেমার এডিটররা ( সম্পাদনা)
অসামান্য করে তুলেছেন কতক্ষণ কোথায়
কতখানি রাখতে হবে । এই ছবির সেতুর এক
পারে এক যুবতী যে আজকের দিনের মেয়ে
নিজের শরীর ভোগের কথা যার জানা আছে
ইংরেজি কবিতার মানে যে বুঝতে পারে ;
অবলীলায় ধরাতে পারে একটার পর একটা
সিগারেট । যার কাছে প্রয়োজনে যৌনতা
মদ্যপান দোষের নয় । আর তার ব্রিজ অর্থাৎ
তার পিতাকে খোঁজার প্রয়াস তাকে জানার
ইচ্ছে অবশেষে বুঝতে পারা ও পিছিয়ে থাকা
উত্তর-পূর্ব ভারতের সমস্যাকে সম্যক রূপে
উপলব্ধি করার মধ্যে দিয়ে এই গল্পের
প্রয়োজনে এক অন্য ধারার নারী চরিত্র
ফুটিয়ে তুলেছেন যা ভারতীয় সিনেমায়
দ্বিতীয়বার আসেনি । সিনেমাটির প্রধান
অভিনেতা বরুণ চন্দ । তিনি প্রিমিয়ারের
শুরুতেই বলে দিয়ে ছিলেন এই ছবিকে একটু
অন্যভাবে দেখতে হবে । আমি মনোযোগ দিয়ে
দেখিছি - এ ছবি সিনেমার পেইন্টিং ছাড়া
আমি কিছু ভাবতে পারিনি । কারণ গল্পের
থেকে ভিস্যুয়ালাইজেশন রূপান্তরের প্রধান
বিচার্য বিষয় এখানে ক্যামেরা । কীভাবে তা
প্যান করছে কী দৃশ্যপট তুলে ধরছে এই তুলে
ধরার মধ্যে রঙের প্রাচুর্য যা চেরাপুঞ্জির
বাস্তবতা -রুক্ষ প্রাণহীন । বাস্তবিক যেখানে
পানীয় জলের সমস্যা আছে শুষ্কতার মধ্যে
তার নিদর্শন পাই । অথচ এখানেই বৃষ্টিপাত
বেশি । না এটা ছবির বিষয়ে ছিলনা ।
বাপ্পাদিত্য বেঁচে থাকলে তাঁর সব কথা
হয়তো আবারও বলতে পারতেন....
© অলোক কুন্ডু

বুধবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৯

Subhash Bose :Poetry of Alok Kundu

সুভাষ বোস / অলোক কুন্ডু ©®

দেখলেই বোঝা যায় অসময়েও
মুনিম আগর‌ওয়ালার দিন
আজকাল বেশ ভালো যাচ্ছে
তার ক্যানিং স্ট্রিটের দোকানে ভিড় লেগেই আছে ।
ফুটপাতের ছবিঅলা ছাড়াও
ছেলে-ছোকরাদের অনন্ত আনাগোনায়
দেদার বিক্রি হচ্ছে রাজনৈতিক নেতাদের মুখ
আর সঙ্গে সঙ্গে টালমাটাল হতে থাকছে
মুনিমের মুখের হাসিও ।

পাশের দোকানের বঙ্কু পোদ্দারদের
এ তল্লাটে তিন পুরুষের রঙের বেওসা ।
যত‌ই ইলেকশন এগিয়ে আসছে
মুনিমের খরিদ্দারের ভিড়
বঙ্কুর দোকানকে ছাপিয়ে চলে যাচ্ছে যেন
বঙ্কু বললো- তুর বাজারটা খুব জমেছে ভাই
                                                     যো বোল ?
এতো দেখছি সুভাষ বোসকে ভি ছাপিয়ে গেল রে।
মুনিমের হাসির সাউন্ড সিস্টেমের স্পিকারে তখন
ডলবি টেকনোলজির ধুম--
মুনিম পিচ্ আওয়াজ করে একটু দূরে
পানের পিক ফেলে এলো
টাকা গুনতে গুনতে
হাসি তার আর থামতেই চায়না ।

এবছর‌ও ২৩ শে জানুয়ারির আগেই
মুনিমের ব‌উ বলে দিয়েছিল
ইবারে কিন্তু ভালো দুটো শাড়ি দিবে
লড়কির জন্য ভি সিসা ওয়ালা লেহেঙ্গা জরুর চাই।
ফি-বছর ২৩ শে জানুয়ারি এলে
বাড়ির সিঁড়িতে গণেশজির পাশে টাঙানো ছবিটায়
ঝাড়পোচ হয় চন্দন লাগানো হয়
প্রতিদিন মালা লাগাতে লাগাতে
মনে মনে বলে 'বেস্ট সেলার বঙয়ালি বলতে তো
একজন‌ই আছেন ।'
-- প্রণাম করে আসছে কতকাল মনে নেই ।
শুধু জানে ছবিটা মুনিমের বাবার আমলের
বেওসায়ি হলেও ছবিটা কিন্তু
পাল্টানোর কথা ভাবেনি সে ।

একদিন এক সাংবাদিক বাবু এসেছিল
জিজ্ঞেস করেছিল রবীন্দ্রনাথ টেগোর
বিশ্ব কবিকে মুনিম চেনে কি না ?
ফুল দূধের চা খাইয়েছিল বাবুকে
বলেছিল কি যে বলেন রবি ঠাকুরকে কে না চেনে
কিন্তু সুভাষ বোসের কাছে কিছু নয়
সুভাষ বোসের ছবি যত ক্যালেন্ডার হয়
স্কুলের ছেলেমেয়েরা যত কেনে
সত্যি বলছি বাবু
আর কার‌ও ছবির অত বেওসা হয়না
সুভাষ বোস ভগবান আছে ভগবান ।

বঙ্কু মস্করা করে আজ বললো
-'কিন্তু এখন তো তোর দোকানের ভিড় সুভাষ বোসের নয় ?
এত ভিড় তো আগে ছিলনা কোনোদিন
এ ভিড় তো --
সুভাষ বোসকে ভি ছাপিয়ে গেল রে।'
টাকা গুনতে গুনতে আর একবার পানের পিক্ ফেলে মুনিম ।
আগের মতো হাসতে পারলো না
মুখটা এখন গম্ভীর হয়ে এলো
বললো -ভিড় তো বড় জোর ইলেকশন পর্যন্ত
জিতলে ভালো
কিন্তু হেরে গেলে কী হবে ভাব
এইসব ছবি একটাও বিক্রি হবে না রে ভাই
গোডাউনেই পড়ে থাকবে ।

ভিড় একটু পাতলা হয়েছে এখন
ওড়িয়া বামুন জগদীশের লাগানো
সদ্য মালা দেওয়া পিতাজির ছবির পাশে
শ্রীরামকৃষ্ণ শ্রীমা স্বামীজি রবীন্দ্রনাথ 
ওদিকের দেওয়ালে বিশাল সুভাষচন্দ্র
তার দিকে চেয়ে আছেন 
মুনিম অবাক হয়ে দেখলো
ছবিগুলো থেকে আলোর জ্যোতি বেরিয়ে আসছে...

©® অলোক কুন্ডু

রবিবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৮

গুজরাটের পাটোলা
------------------------
৮০০ বছর আগে গুজরাটের সোলাঙ্কিদের রাজবংশের রানীদের শাড়ি তৈরি করতে মহারাষ্ট্রের কোলাপুর থেকে আমেদাবাদের ১৩০ কিমি দূরে পাটনে ( এখানকার দুর্গা মূর্তিও ৮০০ বছরের প্রাচীন ) চলে আসে । চীন থেকে ৮০০ বছর ধরে রেশমি সুতো আসছে পাটোলা শাড়ি তৈরির শিল্পীদের জন্যে সালভি পরিবারের হাতে । মোটামুটি ভালো পাটোলা শাড়ির দাম দেড় থেকে
আড়াই লাখ টাকা দাম লাগে । শোনা যায় সোনিয়া গান্ধীর যে ছবিটি রেগনের সঙ্গে তোলা হয়েছিলো সেখানে যে শাড়িটি তিনি পরে ছিলেন তার দাম অনেকটাই বেশি । শাড়িটি পাঁচ লাখে কিনেছিলেন রাজীব
গান্ধী । একটি শাড়ি আছে সুইজারল্যান্ডের
যাদুঘরে থাকলেও কে সেই ক্রেতা তার নাম
জানা যায়নি । এই শাড়ির শাড়ি একলাখ
থেকে শুরু । বিশেষ সুতো এর জন্যই আসে। আর এই সালভি পরিবার সেই বুনন তা ৮০০ বছর ধরে তাদের পরিবারের মধ্যেই রেখেছে । এই পরিবারের মেয়েদের পর্যন্ত আগে বোনা ঘরে যাওয়া নিষেধ আছে । তবে অনেক দিন ওই ভাবনা উঠে গেছে ।
এই শাড়ি বোনার আগে নকশা কাগজে কেটে নিতে হয় । যেহেতু সুক্ষ্ম কাগজ কাটতে একমাত্র জাপানিদেরই দক্ষতা
আছে তাই তারা কাগজের নকশা কেটেও এই শাড়ি বুনতে তারা পারেনি জাপানিরা।
পাটোলার বিশেষত্ব হচ্ছে এর সুতো আগে
ডিজাইন হয় পরে বোনা হয় এবং দুপিঠই এর সমান যে কারণে এটি ইউনেস্কোর খাতায় স্বীকৃতি লাভ করেছে । পাটোলায়
এদের একটা আস্ত মিউজিয়াম আছে ।

প্রয়াত তরুণ মজুমদার--অলোক কুন্ডু

#তরুণ_মজুমদার_চলেগেলেন অধিকার এই শিরোনামে--কয়লাখনির শ্রমিকদের জন্য ডকুমেন্টারি বানিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত পরিচালক তরুণ মজুমদার। ছিলেন আজীবন বাম...